মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা পর্ব -৭

0
2738

লেখক: ড. মো: আমিনুল ইসলাম | সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ |পর্ব ৫ পর্ব ৬ | পর্ব ৭ | পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫

মানুষ তথা সৃষ্টির সাথে আদব

(ক) পিতামাতার সাথে আদব: মুসলিম ব্যক্তি তার উপর পিতামাতার অধিকারের ব্যাপারে বিশ্বাস করে, আরও বিশ্বাস করে তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার, তাঁদের আনুগত্য ও তাঁদের প্রতি ইহসান করার আবশ্যকতার প্রশ্নে; এটা শুধু এ জন্য নয় যে, তাঁরা তার অস্তিত্ব ও জন্মের উপলক্ষ, অথবা তাঁরা তার জন্য এমন সুন্দর সুন্দর ও ভালো ভালো অবদান রেখেছেন, যা তাকে প্রতিদান স্বরূপ তাঁদের সাথে সেরূপ উত্তম আচরণ করতে বাধ্য করে, বরং তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করার আবশ্যকতার অন্যতম কারণ হল- আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের আনুগত্য করাকে ওয়াজিব (আবশ্যক) করে দিয়েছেন এবং সন্তানের উপর পিতামাতার আনুগত্য করা ও তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করার বিষয়টিকে তিনি ফরজ করে দিয়েছেন, এমনকি তিনি বান্দা কর্তৃক একমাত্র তাঁর ইবাদত করার আবশ্যকীয় অধিকারের সাথে এ বিষয়টিকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ‘ইবাদত না করতে এবং  পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; আর তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। আর মমতাবেশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করো এবং বলো, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। [1]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “আর আমরা মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে, আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। কাজেই আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। ফিরে আসা তো আমারই কাছে।[2]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক প্রশ্নকারী ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যে প্রশ্নাকারে বলেন: “আমার কাছে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি জিজ্ঞাসা করল: তারপর কে? তিনি বললেন: তারপর তোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল: তারপর কে? তিনি বললেন: তারপর তোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল: তারপর কে? তিনি বললেন: তারপর তোমার পিতা।[3]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলে: “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেওয়া এবং কারও প্রাপ্য আটক করে অন্যায়ভাবে কোন কিছু নেওয়াকে; আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দনীয় করেছেন: অনর্থক বাক্য ব্যয়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা ও সম্পদ বিনষ্ট করাকে।[4]

তিনি আরও বলেন: “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? আমরা বললাম: অবশ্যই সতর্ক করবেন, হে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তখন তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতামাতার নাফরমানী করা— একথা বলার সময় তিনি হেলান দিয়ে বসাছিলেন, এরপর (সোজা হয়ে) বসলেন এবং বললেন: মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া; মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া এবং ক্রমাগত তিনি একথাগুলো বলে চললেন, এমনকি (বর্ণনাকারী আবূ বাকরা রা. বললেন) আমি বললাম: তিনি মনে হয় থামবেন না।[5]

তিনি আরও বলেন: “কোনো সন্তানই তার পিতার প্রতিদান আদায় করতে সক্ষম নয়; তবে সে যদি তাকে (পিতাকে) দাস অবস্থায় পেয়ে থাকে এবং ক্রয় করার পর আযাদ করে দেয় (তবে কিছুটা প্রতিদান আদায় হবে)।[6]

আর আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম: আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? জবাবে তিনি বললেন: সময় মত সালাত আদায় করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।[7]

এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিহাদে অংশগ্রহণের ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করল, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করে বললেন: “তোমার পিতামাতা জীবিত আছে কি? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: তুমি তাঁদের নিকট অবস্থান কর এবং সাধ্যমত তাঁদের সেবা কর।” [8]

আর আনসারদের মধ্য থেকে একজন এসে বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! পিতামাতার মৃত্যুর পরও তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করার দায়িত্ব আমার উপর অবশিষ্ট থাকবে কি এবং তা আমি কিভাবে করব? তিনি বললেন: হ্যাঁ, চারটি কাজ: তাঁদের জন্য দো‘য়া করা, তাঁদের গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাঁদের করা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা এবং তাঁদের বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা; আর তাঁদের এমন সব আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা, যাদের সাথে তোমার আত্মীয়তার সম্পর্ক শুধু তাদেরই কারণে। সুতরাং এটাই হল তোমার উপর তাদের মৃত্যুর পরে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার অবশিষ্ট দায়িত্ব।[9]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “কোনো ব্যক্তির পক্ষে সৎকাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সৎকাজ হল পিতার মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধু-বান্ধবের সাথে সদ্ব্যবহার করা।[10]

আর মুসলিম ব্যক্তি যখন তার পিতামাতার এ অধিকারের স্বীকৃতি দেয় এবং আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য ও নির্দেশের বাস্তবায়ন স্বরূপ তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করে, তখন তার জন্য তার পিতামাতার ব্যাপারে নিম্নোক্ত আদবসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক:

১. তাঁদের দেয়া প্রতিটি আদেশ অথবা নিষেধের আনুগত্য করা, যদি তার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা ও তাঁর দেয়া শরী‘য়তের বিপরীত কিছু না থাকে; কেননা, সৃষ্টার অবাধ্য হয়ে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না; তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে শির্ক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে। [11]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আনুগত্য চলবে শুধু সৎকাজে।[12]
তিনি আরও বলেন: “স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।[13]

২. তাঁদেরকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া এবং মমতাবেশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করা; আর কথা ও কাজের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা; সুতরাং তাঁদেরকে ধমক দিবে না, তাঁদের কথার আওয়াজের উপর স্বীয় আওয়াজকে উঁচু করবে না, তাঁদের সামনে হাঁটবে না, তাঁদের উপর স্ত্রী ও সন্তানকে প্রাধান্য দিবে না, তাঁদেরকে তাঁদের নাম ধরে ডাকবে না, বরং আম্মু আব্বু বলে ডাকবে এবং তাঁদের অনুমতি ও সম্মতি ছাড়া সফরে যাবে না।

৩. তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করা এমন প্রতিটি ক্ষেত্রে, যেখানে তার হাত পৌঁছবে এবং যত রকমের সদ্ব্যবহার ও ইহাসান করার ক্ষমতা তার আছে, যেমন— তাঁদের খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করা, তাঁদের অসুস্থ জনকে চিকিৎসা করা এবং তাঁদের সর্বপ্রকার কষ্ট দূর করা; আর তাঁদের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দেওয়া।

৪. তাঁদের আত্মীয়দের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলা, তাঁদের জন্য দো‘য়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাঁদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা এবং তাঁদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করা।

(খ) সন্তানসন্ততির সাথে আদব: মুসলিম ব্যক্তি স্বীকার করে যে, পিতার উপর তার সন্তানের কতগুলো অধিকার রয়েছে, যা আদায় করা তার উপর ওয়াজিব এবং এমন কতগুলো আদব রয়েছে, যেগুলো তার সন্তানের সাথে রক্ষা করে চলা আবশ্যক; উদাহরণস্বরূপ সেসব অধিকার ও আদব হলো— তার জন্য ভালো মা পছন্দ করা, সুন্দর নাম রাখা, তার জন্মের সপ্তম দিবসে তার পক্ষ থেকে আকীকা করা, খাতনা করা, তাকে স্নেহ করা, তার সাথে কোমল আচরণ করা, তার জন্য ব্যয় করা এবং তাকে উত্তম শিক্ষা দেওয়া; আর তার শিক্ষাদীক্ষা, আদব-কায়দা, ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশাবলী গ্রহণ এবং ইসলামের ফরয, সুন্নাত ও আদবসমূহ পালন ও অনুশীলনের ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করা; এমনকি যখন বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন তার বিয়ের ব্যবস্থা করা; অতঃপর তাকে এ ব্যাপারে স্বাধীনতা দেওয়া— সে কী তার তত্ত্ববধানে থেকে যাবে, না কী পৃথকভাবে জীবনযাপন করবে এবং নিজ হাতে তার মর্যাদাপূর্ণ অবস্থন তৈরি করবে। আর তার জন্য এসব অধিকার ও আদবের প্রশ্নে আল-কুরআন ও সুন্নাহ’র নিম্নোক্ত দলীলসমূহ রয়েছে:

১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর জননীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর স্তন্য পান করাবে, এটা সে ব্যক্তির জন্য, যে স্তন্যপান কাল পূর্ণ করতে চায়। পিতার কর্তব্য যথাবিধি তাদের (মাতাদের) ভরণ-পোষণ করা।[14]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম, কঠোরস্বভাব ফেরেশ্তাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদেশপ্রাপ্ত হয় তা-ই কর। [15]

সুতরাং এ আয়াতের মধ্যে পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার নির্দেশ রয়েছে; আর এটা সম্ভব হবে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার দ্বারা; আর আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করে দেয় কোন্ কোন্ বিষয়ে তাঁর আনুগত্য করা হবে, সে বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া; আর এটা জ্ঞান অর্জন ব্যতীত সম্ভব নয়। আর সন্তান যখন ঐ ব্যক্তির গোটা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একজন সদস্য, তখন উপরিউক্ত আয়াতটি এমন এক দলীল হবে, যা পিতা কর্তৃক তার সন্তানকে শিক্ষা দেওয়া, ভালো পথে পরিচালিত করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা, তাকে কুফর, অবাধ্যতা ও যাবতীয় অন্যায় অনাচার থেকে দূরে রাখার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টি তার উপর ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত করবে, যাতে তিনি এর দ্বারা তার সন্তানকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারেন। যেমনিভাবে প্রথম আয়াত: (আর জননীগণ তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর স্তন্য পান করাবে) -এর মধ্যে দলীল রয়েছে পিতার উপর সন্তানের ব্যয়ভার বহন করা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে; কেননা, তার সন্তানকে দুধ পান করানোর কারণেই স্তন্যদায়ীনীর জন্য খরচ বরাদ্দ করাটা আবশ্যক হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তোমরা দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। [16]

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মহাপাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন: “কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা, অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তোমার সাথে খাবে, এই ভয়ে তোমার সন্তানকে হত্যা করা; অতঃপর তোমার কর্তৃক তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা।[17]

সুতরাং সন্তানদেরকে হত্যা করা থেকে নিষেধ করার বিষয়টিই আবশ্যক করে দেয় তাদের প্রতি স্নেহ ও মমতার বিষয়টিকে এবং আরও জরুরি করে দেয় তাদের শরীর, বুদ্ধি ও মনকে সংরক্ষণ করার বিষয়টিকে। আর সন্তানের জন্য ‘আকীকার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “নবজাতক দায়বদ্ধ তার আকীকার শর্তে, যা তার পক্ষ থেকে যবেহ করা হবে তার জন্মের সপ্তম দিবসে; আর সে দিনে তার নাম রাখা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করা হবে।” [18]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “ফিতরাত (মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাব) পাঁচটি: খাতনা করা, (নাভীর নীচে) খুর ব্যবহার করা, গোঁফ ছোট করা, নখ কাটা ও বগলের পশম উপড়ে ফেলা।[19]

তিনি আরও বলেন: “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে আদর যত্ন কর এবং তাদের আদব-কায়দাকে সুন্দর কর।[20] তিনি

আরও বলেন: “তোমরা উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর; কারণ, আমি যদি কাউকে (এ ক্ষেত্রে) প্রাধান্য দিতাম, তাহলে নারীদেরকে প্রাধান্য দিতাম।[21]

তিনি আরও বলেন: “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতে জন্য নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বছর বয়সে উপনীত হয়; আর তাদেরকে সালাতের জন্য প্রহার কর, যখন তারা দশ বছর বয়সে উপনীত হয় এবং তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও।[22] আর ‘আসার’ -এর মধ্যে এসেছে: পিতার উপর সন্তানের অন্যতম অধিকার হলো তার আদব-কায়দাকে সুন্দর করে দেওয়া এবং তার জন্য সুন্দর নাম রাখা। [23]

আর ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: পিতার উপর সন্তানের অন্যতম অধিকার হলো তাকে লেখাপড়া ও তীর নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তার জন্য শুধু পবিত্র ও হালাল রিযিকের ব্যবস্থা করা[24] তিনি আরও বলেন: তোমরা ভালো বংশে বিয়ে কর; কারণ, বংশের শিরা-উপশিরা গুপ্তচরের মত।[25]

আর এক আরব বেদুইন তার সন্তানদের প্রতি সদয় ইহসান করেছেন তাদের মাকে পছন্দ করার মাধ্যমে; সুতরাং তিনি কবিতার ভাষায় বলেন: (আর তোমাদের প্রতি আমার প্রথম ইহসান হলো আমি বাছাই করেছি তোমাদের মাকে গৌরবময় বংশ থেকে, যার পবিত্রতা বা নিষ্কলুষতা সুস্পষ্ট)। [26]

(গ) ভাই-বোনের সাথে আদব: মুসলিম ব্যক্তি মনে করে যে, ভাই-বোনের সাথে আদব রক্ষা করা চলার বিষয়টি পিতামাতা ও সন্তানসন্তুতির সাথে আদব রক্ষা করে চলার মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ; সুতরাং ছোট ভাইবোনের উপর আবশ্যক হলো তার বড় ভাইবোনদের সাথে এমনভাবে আদব রক্ষা করে চলা, যেমনিভাবে তাদের উপর ওয়াজিব হলো তাদের পিতামাতার সাথে অধিকার আদায়, দায়িত্ব পালন ও আদব রক্ষা করে চলা; আর এর কারণ হলো হাদিসে বর্ণিত আছে: “ছোট ভাই-বোনের উপর বড় ভাই-বোনের অধিকার ঠিক তেমন পর্যায়ের, যেমন অধিকার সন্তানের উপর তার পিতামাতার। [27]

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “তুমি তোমার মাতা ও পিতার সাথে উত্তম ব্যবহার কর; অতঃপর উত্তম ব্যবহার কর তোমার বোন ও ভাইয়ের সাথে; অতঃপর উত্তম ব্যবহার কর একে একে তোমার নিকটাত্মীয়ের সাথে। [28]

(ঘ) স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যকার আদব: মুসলিম ব্যক্তি স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার পরস্পরের জন্য নির্ধারিত আদব তথা অধিকারসমূহকে স্বীকৃতি প্রদান করবে; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের; আর নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা আছে।[29]

সুতরাং আল-কুরআনের এ আয়াতটি স্বামী ও স্ত্রীর প্রত্যেকের জন্য একের উপর অন্যের অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং বিশেষ কিছু কারণে স্বামীকে তার স্ত্রীর উপর বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের ভাষণে বলেন: “জেনে রাখবে, নিশ্চয়ই তোমাদের নারীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, আর তোমাদের উপরও তোমাদের নারীদের অধিকার রয়েছে।[30] তবে এসব অধিকারের মধ্য থেকে কিছু অধিকার আছে এমন, যা স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মাঝে যৌথভাবে প্রযোজ্য এবং কিছু অধিকার আছে এমন, যা তাদের প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথকভাবে নির্দিষ্ট; সুতরাং যেসব অধিকার তাদের উভয়ের জন্য যৌথভাবে প্রযোজ্য, সেগুলো হলো:

১. আমানত তথা বিশ্বস্ততা; কেননা, স্বামী ও স্ত্রী প্রত্যেকের উপর ওয়াজিব হলো একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া; সুতরাং কম হউক বেশি হউক কোনো অবস্থাতেই তারা একে অন্যের খিয়ানত করবে না; কারণ, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী; অতএব কারণে তাদের বিশেষ ও সাধারণ জীবনের প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে পরস্পরের মাঝে বিশ্বস্ততা, কল্যাণ কামনা, সততা ও নিষ্ঠার মত বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করা জরুরি।

২. ভালোবাসা ও সম্প্রীতি; তারা দীর্ঘ জীবনে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য সর্বোচ্চ পরিমাণে নির্ভেজাল ভালোবাসা ও অবারিত সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জোড়া; যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং সৃজন করেছেন তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা।[31]

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি অনুকম্পা প্রদর্শন করবে না, তার প্রতিও অনুকম্পা প্রদর্শন করা হবে না।[32]

৩. পরস্পরের মাঝে আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা; অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকে একে অপরের ব্যাপারে আস্থাশীল হবে এবং তার জন্য তার সততা, আন্তরিকতা ও একনিষ্ঠতার ব্যাপারে তার মনে ন্যূনতম সন্দেহের অনুপ্রবেশ ঘটবে না; আর এটা এ জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই।[33]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, তার ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করবে।[34]

আর দাম্পত্য বন্ধন উভয়ের মাঝে ঈমানী ভ্রাতৃত্ববোধকে আরও বাড়িয়ে শক্তিশালী ও মজবুত করে দেয়। আর এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেকেই অনুভব করে একে অপরের সত্তায় মিশে গিয়ে যেন এক দেহ এক মন; সুতরাং একজন মানুষ কিভাবে তার নিজ সত্তাকে অবিশ্বাস করবে এবং কিভাবে তার নিজের কল্যাণ কামনা করবে না? অথবা কিভাবে সে নিজেকে ধোঁকা দিবে ও প্রতারিত করবে?

৪. সার্বজনীন আদব হলো আচার ব্যাহারে কোমল হওয়া, আনন্দময় অবস্থান, সম্মানজনক কথা বলা এবং শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা; আর এটাই হলো সৎভাবে জীবনযাপন করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বাণীর মধ্যে নির্দেশ প্রদান করেছেন, তিনি বলেন: আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন কর।[35]

আর এটাই হলো কল্যাণ কামনা করা, যার নির্দেশ প্রদান করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাণীর মাধ্যমে, তিনি বলেন: “তোমরা নারীদের কল্যাণ কামনা কর।” [36] আর এসব হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার যৌথ আদব-কায়দা, যেগুলো তারা পরস্পর মেনে চলবে তাদের মধ্যকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন স্বরূপ, যে দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলার বাণীর মধ্যে, তিনি বলেন: “আর কিভাবে তোমরা তা গ্রহণ করবে, যখন তোমরা একে অপরের সাথে সংগত হয়েছ এবং তারা তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছে?।[37]

তাছাড়া তারা এগুলো মেনে চলবে আল্লাহর আনুগত্য করার নিমিত্তে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আর তোমরা নিজেদের মধ্যে অনুগ্রহের কথা ভুলে যেও না। তোমরা যা কর নিশ্চয় আল্লাহ তা সবিশেষ প্রত্যক্ষকারী।[38]

তাছাড়া আরও কিছু বিশেষ অধিকার ও আদব রয়েছে, যেগুলো স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেকেই এককভাবে একে অপরের সাথে রক্ষা করে চলবে; সে বিশেষ আদাব ও অধিকারসমূহ নিম্নরূপ:

প্রথমত: স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার:

স্বামীর উপর ওয়াজিব হলো তার স্ত্রীর সাথে নিম্নোক্ত আদবসমূহ রক্ষা করে চলা:

১. তার সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করা; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন কর। [39]

সুতরাং সে যখন খাবে, তখন সে তাকেও খাওয়াবে এবং যখন সে পোশাক পরিধান করবে, তখন তাকেও পোশাক পরিধান করাবে; আর যখন সে তার স্ত্রীর অবাধ্যতার আশঙ্কা করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে নারীদেরকে আদব শিক্ষা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে তাকে আদব শিক্ষা দিবে; অর্থাৎ তাকে উপদেশ দিবে কোনো প্রকার গালিগালাজ ও মন্দ কথা না বলে, তারপর সে যদি অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তো ভালো, নতুবা তার বিছানা আলাদা করে দিবে; অতঃপর সে যদি অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তো ভালো কথা, নতুবা তাকে প্রহার করবে চেহারা ব্যতীত অন্য যে কোনো স্থানে, তবে প্রচণ্ডভাবে প্রহার করবে না, রক্তাক্ত করবে না, আহত করবে না, অথবা কোনো অঙ্গকে বিকলাঙ্গ বা নষ্ট করবে না; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর, তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না।[40]

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন: আমাদের কারও উপর তার স্ত্রীর কী অধিকার রয়েছে? তখন তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: “যখন তুমি খাবে, তখন তাকেও খাওয়াবে; যখন তুমি পোশাক পরিধান করবে, তখন তাকেও পোশাক পরিধান করাবে; তার মুখমণ্ডলে প্রহার করবে না এবং তাকে মন্দ বলবে না; আর তার বিছানা আলাদা করতে হলে তা ঘরের মধ্যেই করবে। [41]

তিনি আরও বলেন: “জেনে রাখবে, তোমাদের উপর তাদের অধিকার হল— তোমরা তাদের ভরণ-পোষণের ক্ষেত্রে তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।[42]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীর প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ না করে; কেননা, তার কোন একটি দিক তার কাছে খারাপ লাগলেও অন্য একটি দিক তার পছন্দ হবে।[43]

২. দীনের জরুরি বিষয়গুলো তাকে শিক্ষা দিবে, যদি এগুলো তার জানা না থাকে, অথবা এগুলো শিখার জন্য তাকে শিক্ষামূলক বৈঠকসমূহে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুমতি প্রদান করবে; কারণ, তার দীনকে সংশোধন ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তাটা তাকে আবশ্যকীয়ভাবে সরবরাহ করা খাদ্য ও পানীয়’র প্রয়োজনীয়তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর জাহান্নামের আগুন থেকে।[44] আর স্ত্রীও পরিবারের একজন; আর তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে হবে ঈমান ও ভালো কাজোর মাধ্যমে; আর শরী‘য়ত যেভাবে চায়, সেভাবে ভালো কাজ সম্পন্ন করতে হলে শরী‘য়তের বিধানাবলী সম্পর্কে জানতে হবে; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “সাবধান, তোমরা নারীদের মঙ্গল কামনা কর; কারণ, তারা (বন্দীর মত) তোমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।[45] আর নারীর মঙ্গল কামনা করার অন্যতম একটি দিক হলো তাকে এমনভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাতে সে তার দ্বারা তার দীনকে মার্জিত করতে পারে এবং তাকে এমনভাবে আদব শিখানোর ব্যবস্থা করা, যা তাকে যথাযথভাবে মর্যাদা রক্ষা করে চলতে সহযোগিতা করবে।

৩. ইসলামের শিক্ষা, নির্দেশ ও আদবসমূহ তাকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া এবং এগুলোর ব্যাপারে তাকে কঠোরভাবে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা; সুতরাং সে তাকে ভ্রমণ করতে অথবা সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়াতে নিষেধ করবে এবং মাহরাম পুরুষ ব্যতীত অন্যান্য পুরুষদের মাঝে অবাধে বিচরণ করতে বাধা দিবে। অনুরূপভাবে তার দায়িত্ব হলো তার স্ত্রীর সতীত্ব রক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা এবং ভালোভাবে তাকে তত্ত্বাবধান করা; সুতরাং সে তাকে তার চরিত্র বা দীন নষ্ট করার সুযোগ দিবে না এবং তাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশসমূহ অমান্য করার বা পাপকাজে লিপ্ত হওয়ার অবকাশ দিবে না; কারণ, সে তার অভিভাবক এবং তাকে তার (স্ত্রীর) ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে; তাছাড়া তাকে তার রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “পুরুষরা নারীদের কর্তা।[46]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আর পরুষ ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।” <aid=”b47″ href=”#a47″>[47]

৪. সে তার মাঝে ও তার সতীনের মাঝে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করবে, যদি তার সতীন থাকে; তাদের মাঝে খাবার, পানীয়, পোশাক, বাসস্থান ও বিছানায় রাত যাপনের ক্ষেত্রে সমান ও ন্যায় আচরণ করবে; এর কোনো একটির ব্যাপারেও যুলুম ও অন্যায় আচরণ করবে না; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যদি আশঙ্কা কর যে সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর।[48] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের ব্যাপারে উত্তম উপদেশ ও নির্দেশনা প্রদান করেছেন, তিনি বলেন: “তোমাদের মাঝে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে তার পরিবারের নিকট উত্তম; আর আমি তোমাদের মাঝে আমার পরিবারের কাছে সবচেয়ে উত্তম।[49]

৫. তার কোনো গোপন বিষয় প্রকাশ না করা এবং তার মধ্যকার কোনো দোষোর আলোচনা না করা; কেননা, সে তার বিশ্বস্ত তত্ত্বাবধায়ক এবং তাকে দেখাশুনা ও রক্ষা করার ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তি। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদার দিক থেকে নিকৃষ্টতম হবে ঐ ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর সাথে শয্যা গ্রহণ করে এবং তার স্ত্রীও তার সাথে শয্যা গ্রহণ করে; অতঃপর তাদের পরস্পরের গোপন বিষয় লোকদের নিকট প্রকাশ করে দেয়।” [50]

দ্বিতীয়ত: স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার:

স্ত্রীর উপর ওয়াজিব হলো তার স্বামীর সাথে নিম্নোক্ত অধিকার ও আদবসমূহ রক্ষা করে চলা:

১. আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা নেই এমন সকল ক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পথ অন্বেষণ করো না।[51]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে, তারপর সে তার কাছে না আসে এবং স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে ফেরেশ্তাগণ সকাল হওয়া পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। [52]

তিনি আরও বলেন: “আমি যদি কোনো ব্যক্তিকে অপর কোনো ব্যক্তিকে সিদজা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে আমি স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য। [53]

২. স্বামীর মান-সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা এবং তার ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি ও ঘরের সকল বস্তুর রক্ষণা-বেক্ষণ করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “কাজেই পূণ্যশীলা স্ত্রীরা অনুগতা এবং লোকচক্ষুর আড়ালে আল্লাহর হেফাযতে তারা হেফাযত করে।[54]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আর স্ত্রী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের ব্যাপারে দায়িত্বশীল।[55] তিনি আরও বলেন: “আর তাদের উপর তোমাদের অধিকার হল: তারা তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিদের দ্বারা তোমাদের বিছানা কলুষিত করবে না; আর তারা তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিকে তোমাদের বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেবে না।[56]

৩. তার স্বামীর ঘরে অবস্থান করা; সুতরাং সে তার স্বামী কর্তৃক অনুমতি ও সন্তুষ্ট চিত্তে অনুমোদন দেয়া ছাড়া তার ঘর থেকে বের হবে না; তার দৃষ্টিকে নিম্নগামী করবে এবং কণ্ঠস্বরকে নীচু রাখবে; খারাপ কিছু থেকে তার হাতকে বিরত রাখবে এবং অশ্লীল ও মন্দ কথা বলা থেকে স্বীয় জবানকে হেফাযত করবে; আর স্বামীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে, যাদের সাথে তার স্বামী উত্তম আচরণ করে; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।[57]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “সুতরাং পর-পুরুষের সাথে কোমল কন্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, কারণ এতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়।[58]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ পছন্দ করেন না।[59]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে; আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশ থাকে।[60]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “সর্বোত্তম নারী সেই, যার দিকে যখন তুমি তাকাও, তখন সে আনন্দ দেয়; আর যখন তুমি নির্দেশ প্রদান কর, তখন সে তোমার আনুগত্য করে; আর যখন তুমি তার থেকে অনুপস্থিত থাক, তখন সে তার নিজের ব্যাপারে তোমাকে এবং তোমার সম্পদকে হেফাযত করে।[61]

তিনি আরও বলেন: “তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মাসজিদসমূহে যাওয়ার ব্যাপারে বাধা প্রদান করো না; যখন তোমাদের কারও স্ত্রী মাসজিদে যেতে অনুমতি প্রার্থনা করে, তখন সে যেন তাকে নিষেধ না করে।[62]

তিনি আরও বলেন: “তোমরা রাতের বেলায় নারীদেরকে মাসজিদে যাওয়ার অনুমতি দাও। [63]

(ঘ) নিকটাত্মীয়দের সাথে আদব: মুসলিম ব্যক্তি তার নিকটতম আত্মীয়স্বজন ও রক্ত-সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে অবিকল সেসব আদব রক্ষা করে চলবে, যেসব আদব সে তার পিতামাতা, সন্তানসন্ততি ও ভাই-বোনদের সাথে রক্ষা করে চলে; সুতরাং সে তার খালার সাথে তার মায়ের মত ব্যবহার করবে এবং তার ফুফুর সাথে তার বাবার মত ব্যবহার করবে; আর আনুগত্য, সদ্ব্যবহার ও ইহসান করার দিক থেকে মামা ও চাচার সাথে ঠিক তেমনি আচরণ করবে, যেমন আচরণ করবে পিতা ও মাতার সাথে। সুতরাং যার আত্মীয়তার বন্ধনে একই সূত্রে একত্রিত হয়ে গেছে মুমিন ও কাফির, তারা সকলেই তার নিকটতম বা রক্ত-সম্পর্কীয় আত্মীয় বলে বিবেচিত হবে, যাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব এবং যাদের প্রতি ইহসান করা আবশ্যকীয় কর্তব্য।

আর তাদের সাথে অবিকল সেসব আদব ও অধিকার রক্ষা করে চলবে, যেসব আদব সে তার পিতামাতা ও সন্তানসন্ততির সাথে রক্ষা করে চলে; সুতরাং সে তাদের মধ্যকার বড়কে সম্মান করবে, ছোটকে স্নেহ করবে, তাদের অসুস্থজনকে সেবা করবে, ভাগ্যাহতকে শান্তনা দিবে ও দুর্ঘটানায় আহতকে সমবেদনা জ্ঞাপন করবে। তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রেখে চলবে, যদিও তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে; আর তাদের সাথে কোমল আচরণ করবে, যদিও তারা তার সাথে কঠোর আচরণ করে ও তার উপর অত্যাচার করে। আর এর প্রত্যেকটি বিষয়ই আল-কুরআনের আয়াত ও হাদিসে নববী’র সাথে সঙ্গতিপূর্ণ; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক দাবী কর।[64]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “আর আত্মীয়রা আল্লাহর বিধানে একে অন্যের জন্য বেশি হকদার[65]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “সুতরাং অবাধ্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে সম্ভবত তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।[66]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “অতএব আত্মীয়কে দাও তার হক এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদের জন্য এটা উত্তম এবং তারাই তো সফলকাম।[67]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচারণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন।[68]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন: “আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ও কোন কিছুকে তাঁর শরীক করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দুর-প্রতিবেশী, সংগী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো।[69]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “আর সম্পত্তি বন্টনকালে আত্মীয়, ইয়াতীম এবং অভাবগ্রস্ত লোক উপস্থিত থাকলে তাদেরকে তা থেকে কিছু দিবে এবং তাদের সাথে সদালাপ করবে।[70]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি হলাম ‘রাহমান’, আর এটা হলো ‘রাহেম’ (রক্ত-সম্পর্ক বা আত্মীয়তা), তার জন্য আমি আমার নাম থেকে একটি নাম উদ্ভাবন করেছি; যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে, আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখব; আর যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব।[71]

অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন, কে সবচেয়ে বেশি সদ্ব্যবহার পাওয়ার দাবিদার? তখন তিনি বললেন: “তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার পিতা, অতঃপর তোমার নিকটাত্মীয় এবং নিকটাত্মীয়।” [72]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল এমন আমল সম্পর্কে, যা জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে; জবাবে তিনি বললেন: “তুমি আল্লাহর ‘ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না; সালাত আদায় করবে; যাকাত প্রদান করবে; আর আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলবে।[73]

আর তিনি ‘খালা’ সম্পর্কে বলেন: “খালার মর্যাদা তো মায়ের মর্যাদার মতই। [74] তিনি আরও বলেন: “মিসকীনকে দান করলে সাদকার সাওয়াব পাওয়া যাবে; আর আত্মীয়কে দান করলে দু’টি প্রতিদান থাকবে: একটি দান করার, আরেকটি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার।[75]

আসমা বিনতে আবি বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আহুমা’র কাছে যখন তাঁর মা মক্কা থেকে মুশরিক অবস্থায় আগমন করলেন, তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন: তিনি তাঁর মায়ের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবেন কিনা? তখন তিনি তাঁকে বললেন: “হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ।[76]

(ঙ) প্রতিবেশীদের সাথে আদব: এক প্রতিবেশীর জন্য তার আরেক প্রতিবেশীর উপর যেসব অধিকার পুরাপুরিভাবে আদায় করা এবং একে অপরের সাথে যেসব আদব রক্ষা করে চলা ওয়াজিব, মুসলিম ব্যক্তি সেগুলোর যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করে; আর এটা এ জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর তোমরা … পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী ও দুর-প্রতিবেশীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো।[77]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জিব্রাঈল আ. এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকলেন; এমনকি আমার মনে হল, হয়ত তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন।[78]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে।[79]

১. তাকে কথায় বা কাজের দ্বারা কষ্ট না দেওয়া; কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। [80]

তিনি আরও বলেন: “আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়; আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়; আল্লাহর শপথ! সে মুমিন নয়; জিজ্ঞেস করা হল: হে আল্লাহর রাসূল! কে সেই ব্যক্তি? তিনি বললেন: যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।[81]

অপর এক হাদিসে এসেছে, একদল সাহাবী বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল! অমুক ব্যক্তি তো দিনে সাওম পালন করে এবং রাতে সালাত আদায় করে, অথচ তার প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়! তিনি বললেন: সে জাহান্নামে যাবে।[82]

২. তার উপকার করা; আর এটা হবে— যখন সে তার কাছ সাহায্য চাইবে, তখন সে তাকে সাহায্য করবে; যখন সহযোগিতা চাইবে সহযোগিতা করবে; যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তার সেবা করবে; যখন সে আনন্দিত হবে, তখন তার আনন্দের অংশীদার হবে; আর যখন বিপদগ্রস্ত হবে, তখন তাকে সমবেদনা জ্ঞাপন করবে; যখন সে কোনো কিছুর অভাব অনুভব করবে, তখন তাকে সহযোগিতা করবে; তাকে আগে আগে সালাম প্রদান করবে; তার সাথে কোমল ব্যবহার করবে; তার সন্তানের সাথে কথা বলার সময় মমতা দেখাবে; যে পথে তার দীন ও দুনিয়ার কল্যাণ হবে, তাকে সে পথ দেখাবে; তার দিকে খেয়াল রাখবে এবং তার সীমানা সংরক্ষণ করবে; তার ভুল-ভ্রান্তি মার্জনা করবে এবং তার গোপন বিষয় জানার চেষ্টা করবে না; তার ভবন বা চলার পথকে সংকীর্ণ করে দেবে না; ছাদের পানি নিষ্কাশনের নল দ্বারা বা ময়লা দ্বারা অথবা তার বাড়ির সামনে আবর্জনা নিক্ষেপ করার দ্বারা তাকে কষ্ট দেবে না; আর এসব কিছুর মানেই হল তার প্রতি ইহসান বা সদ্ব্যবহার করা, যে ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে নির্দেশ দেয়া হয়েছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমরা … নিকট প্রতিবেশী ও দুর-প্রতিবেশীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো।[83]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করে।[84]

৩. তাকে ভালো ও কল্যাণকর কিছু দেয়ার মাধ্যমে সম্মান করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “হে মুসলিম রমনীগণ! কোনো প্রতিবেশিনী যেন অপর প্রতিবেশিনীকে তুচ্ছজ্ঞান না করে, এমনকি বকরীর একটি ক্ষুর উপঢৌকন পাঠালেও নয়।[85]

তিনি আরও বলেন: “হে আবূ যর! যখন তুমি তরকারি পাকাও, তখন তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তোমার প্রতিবেশিকে পৌঁছাও।[86]

আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে বললেন: আমার তো দুইজন প্রতিবেশী আছে, আমি তাদের কার কাছে উপঢৌকন পৌঁছাবো? তখন তিনি বললেন: “উভয়ের মধ্যে যার ঘর তোমার বেশি কাছে হয়, তার কাছে পাঠাও।[87]

৪. তাকে সম্মান ও কদর করা; সুতরাং সে তাকে খুঁটি গাড়তে নিষেধ করবে না এবং তাকে জিজ্ঞাসা না করে তার সাথে সংযুক্ত বা তার নিকটবর্তী কোনো কিছু বিক্রয় করবে না বা ভাড়া দেবে না; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমাদের কেউ যেন তার দেয়ালের পাশে তার প্রতিবেশীকে খুঁটি গাড়তে নিষেধ না করে। [88]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তির বাগানের প্রতিবেশী আছে, অথবা অংশীদার আছে, সে যেন তাকে না জানিয়ে তা বিক্রি না করে।” [89]

দু’টি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণী:

প্রথমত: মুসলিম ব্যক্তি যখন তার প্রতিবেশীদের কাছে ভালো কিংবা মন্দ হবে, তখন সে নিজেই নিজেকে চিনতে পারবে; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে প্রশ্নকারী ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদেরকে বলতে শুনবে তুমি ভালো, তখন তুমি ভালো; আর যখন তুমি তাদেরকে বলতে শুনবে তুমি মন্দ, তখন তুমি মন্দ।[90]

দ্বিতীয়ত: যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর দ্বারা দুর্ভোগের শিকার হবে, তখন সে যেন ধৈর্যধারণ করে; কারণ, তার ধৈর্যধারণ অচিরেই তার থেকে তার মুক্তির কারণ হবে; কেননা, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: “তুমি ধৈর্যধারণ কর; অতঃপর চতুর্থ অথবা তৃতীয় বারে তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: তুমি তোমার মালমাত্তা রাস্তার মধ্যে ফেলে দাও, তারপর সে তাই করল; অতঃপর জনগণ তার পাশ দিয়ে পথ চলতে গিয়ে বলতে শুরু করল: তোমার কী হয়েছে? তখন সে বলল: তার প্রতিবেশী তাকে কষ্ট দিয়েছে; তারপর তারা বলতে শুরু করল: আল্লাহ তাকে ‘লানত’ করুন; তারপর তার প্রতিবেশী তার নিকট আসল এবং বলল: তুমি তোমার মাল ফিরিয়ে নাও; আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে আর কখনও কষ্ট দেব না।[91]

(চ) মুসলিম জাতির পরস্পরের মধ্যকার আদব ও অধিকারসমূহ: মুসলিম ব্যক্তি তার উপর তার অপর মুসলিম ভাইয়ের অধিকারসমূহ আদায় ও আদবসমূহ মেনে চলার আবশ্যকতার ব্যাপারে বিশ্বাস করে; সুতরাং সে তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে আদবসমূহ রক্ষা করে চলবে এবং তার অধিকারসমূহ যথাযথভাবে আদায় করে দিবে; আর সে এটাও বিশ্বাস করে যে, এসব আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত এবং এর দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়; কেননা, এসব অধিকার ও আদব আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম ব্যক্তির উপর বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন, যাতে সে তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে এগুলো মেনে চলে; সুতরাং কোনো সন্দেহ নেই— তার এ কাজ করাটা আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর নৈকট্য অর্জনের উপায় বলে গণ্য হবে।

আর এসব আদব ও অধিকারের অন্যতম কিছু দিক নিম্নরূপ:

১. যখন তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হবে, তখন তার সাথে কথা বলার পূর্বেই তাকে সালাম প্রদান করবে; সুতরাং সে বলবে:  ” السلام عليكم و رحمة الله “(আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হউক); তারপর সে তার সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করবে এবং সালামের জবাব স্বরূপ বলবে:  ” و عليكم السلام و رحمة الله و بركاته ” (আপনার উপরও শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হউক); আর এটা এ জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর তোমাদেরকে যখন অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তার চেয়ে উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা সেটারই অনুরূপ করবে।[92]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “বাহনে আরোহণকারী ব্যক্তি পদব্রজে আগমনকারী ব্যক্তিকে, পদব্রজে আগমনকারী ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোককে সালাম প্রদান করবে।[93]

তিনি আরও বলেন: “ফেরেশ্তাগণ ঐ মুসলিম ব্যক্তির ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেন, যে আরেক মুসলিম ব্যক্তির পাশ দিয়ে চলে গেল, অথচ সে তাকে সালাম প্রদান করল না।[94]

তিনি আরও বলেন: “আর তুমি তোমার পরিচিত ও অপরিচিত সকল (মুসলিম) ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করবে। [95]

তিনি আরও বলেন: “যখনই দুইজন মুসলিম ব্যক্তি পরস্পর সাক্ষাৎ হওয়ার পর মুসাফাহা করে, তারা পরস্পর থেকে আলাদা হওয়ার আগেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। [96]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি সালাম দেয়ার পূর্বে কথা বলা আরম্ভ করে, তোমরা তার কথায় সায় দেবে না, যতক্ষণ না সে সালামের মাধ্যমে কথার সূচনা করে।” [97]

২. যখন সে হাঁচি দিবে, তখন তার হাঁচির জবাব দিবে; অর্থাৎ সে যখন হাঁচি দেওয়ার পর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (الحَمْدُ للهِ) বলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করবে, তখন সে তাকে উদ্দেশ্য করে বলবে: ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (يَرْحَمُكَ اللهُ) [অর্থাৎ আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন]; আর তখন হাঁচিদাতা তার জবাব স্বরূপ আবার বলবে: ” يَغْفِرُ اللهُ لِيْ و لَكَ ” (আল্লাহ আমাকে ও তোমাকে ক্ষমা করে দিন) অথবা বলবে: ” يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ” (আল্লাহ তোমাদেরকে হিদায়েত করুন এবং তোমাদের অবস্থাকে ভালো করে দিন)। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দেয়, তখন সে যেন বলে: ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (الحَمْدُ للهِ) এবং তার ভাই বা সঙ্গী যেন তাকে বলে: ” يَرْحَمُكَ اللهُ ” (অর্থাৎ আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুন); আর যখন সে তাকে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (يَرْحَمُكَ اللهُ) বলবে, তখন সে যেন বলে: ” يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ” (আল্লাহ তোমাদেরকে হিদায়েত করুন এবং তোমাদের অবস্থাকে ভালো করে দিন)।[98]

আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি তাঁর মুখের উপর হাত বা কাপড় রাখতেন এবং এর দ্বারা হাঁচির আওয়াজ নিম্নগামী করতেন।[99]

৩. যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তার সেবা-যত্ন করা এবং তার জন্য রোগমুক্তির দো‘য়া করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক বা অধিকার রয়েছে: সালামের জবাব দেয়া, রোগীর সেবা করা, জানাযার সালাতে অংশ নেয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেয়া। [100]

আর তাছাড়া বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন রোগীর সেবা করতে, জানাযার অনুসরণ করতে, হাঁচির জবাব দিতে, শপথ বা প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে, মাযলুমকে সাহায্য করতে, দাওয়াত দাতার দাওয়াত কবুল করতে এবং ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করতে।[101]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “তোমারা রোগীকে দেখতে যাও বা সেবা কর, অভুক্তকে খাবার দাও এবং বন্দীদেরকে মুক্তি দাও। [102]

আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পরিবারের কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তার উপর ডান হাত বুলাতেন এবং বলতেন: « اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ ، أذْهِب البَأسَ ، اشْفِ أنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفاؤكَ ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقماً »  (হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রভু! রোগ দূর কর, রোগমুক্তি দাও, তুমিই রোগমুক্তি দানকারী, কোনো রোগমুক্তি নেই তোমার রোগমুক্তি ছাড়া— যা কোনো রোগকে ছাড়ে না)।[103]

৪. সে যখন মারা যাবে, তখন তার জানাযায় হাযির হওয়া; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের পাঁচটি হক বা অধিকার রয়েছে: সালামের জবাব দেয়া, রোগীর সেবা করা, জানাযার সালাতে অংশ নেয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেয়া।[104]

৫. তার শপথ পূরণ করা, যখন সে কোন ব্যাপারে শপথ করে বসে এবং তাতে অবৈধ কোন কিছু না থাকে; সুতরাং সে যে কারণে শপথ করেছে, তা পূরণে সহযোগিতামূলক কাজ করবে, যাতে তার শপথ ভঙ্গ করতে না হয়; কারণ, বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে এসেছে, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন রোগীর সেবা করতে, জানাযার অনুসরণ করতে, হাঁচির জবাব দিতে, শপথ বা প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে, মাযলুমকে সাহায্য করতে, দা‘ওয়াত দাতার দা‘ওয়াত কবুল করতে এবং ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করতে।[105]

৬. তাকে (ভালো) উপদেশ দেওয়া, যখন সে কোনো বিষয় বা ব্যাপারে উপদেশ বা পরামর্শ চায়; অর্থাৎ সে কোনো বিষয় বা ব্যাপারে যা উত্তম ও সঠিক মনে করবে, তা তাকে বলে দেবে; আর এটা এ জন্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কাছে উপদেশ বা পরামর্শ চাইবে, তখন সে যেন তাকে ভালো উপদেশ দেয়।[106]

তিনি আরও বলেন: “দীন হচ্ছে (জনগণের) কল্যাণ কামনা করা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন: আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল, মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও সমস্ত মুসলিমের জন্য।[107]
আর মুসলিম ব্যক্তি তো তাদের সকলের মধ্য থেকে একজন।

৭. নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, তার জন্যও তা পছন্দ করা এবং নিজের জন্য যা অপছন্দ করবে, তার জন্যও তা অপছন্দ করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, তার ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করবে এবং তার নিজের জন্য যা অপছন্দ করবে, তার ভাইয়ের জন্যও তা অপছন্দ করবে।” [108]

তিনি আরও বলেন: “পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে গোটা মুসলিম জাতি একটি দেহের সমতুল্য; যখন তার একটি অঙ্গ ব্যথিত হয়, তখন তার গোটা শরীর তা অনুভব করে— সেটা জাগ্রত অবস্থায়ই হউক, কিংবা জ্বরের অবস্থায়।” [109]

তিনি আরও বলেন: “এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীরস্বরূপ, এর এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে।” [110]

৮. যেখানেই তার সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার দরকার, সেখানেই তাকে সাহায্য করা এবং তাকে হেয় প্রতিপন্ন না করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, চাই সে যালেম হউক অথবা মাযলুম; একথা বলার পর এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল! সে যদি মাযলুম হয়, আমি তাকে সাহায্য করব— এটা বুঝতে পারলাম; সে যালিম হলে আমি তাকে কিভাবে সাহায্য করব— সে ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তখন তিনি বললেন: তাকে যুলুম করা থেকে বিরত রাখ, বাধা দাও; এটাই হল তাকে সাহায্য করা। [111]

তিনি আরও বলেন: “এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই; সে তার প্রতি যুলুম করবে না, তাকে অপমান করবে না এবং তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না।[112]

তিনি আরও বলেন: “যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি অপর কোনো মুসলিমকে সাহায্য করবে এমন কোনো স্থানে, যেখানে তার চরিত্রকে কলুষিত করা হয় এবং তার সম্মানকে নষ্ট করা হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য পাওয়াটাকে পছন্দ করবে। আর যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি অপর কোনো মুসলিমকে অপমান করবে এমন কোনো স্থানে, যেখানে তার সম্মানকে নষ্ট করা হয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন স্থানে অপমানিত করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য পাওয়াটাকে কামনা করবে।” [113]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্মান নষ্ট করা থেকে নিজে বিরত থাকবে বা কাউকে বিরত রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।[114]

৯. তাকে কোনো মন্দ কিছুর দ্বারা আক্রমণ না করা অথবা তাকে কোনো অপছন্দনীয় কিছুতে না জড়ানো; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির রক্ত (জীবন), ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান অপর সব মুসলিমের জন্য হারাম।” [115]

তিনি আরও বলেন: “কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য অপর কোনো মুসলিমকে ভয় দোখানো বৈধ নয়।[116]

তিনি আরও বলেন: “কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকানো বৈধ নয়, যে দৃষ্টি তাকে কষ্ট দেয়।[117]

তিনি আরও বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের কষ্টকে অপছন্দ করেন।[118]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে অন্যান্য মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে।[119]

তিনি আরও বলেন: “মুমিন সেই ব্যক্তি, যার কাছে অন্যান্য মুমিনগণ তাদের জীবন ও সম্পদের ব্যাপারে নিরাপদে থাকে।[120]

১০. তার সাথে বিনয়ী হওয়া এবং তার উপর অহঙ্কার প্রদর্শন না করা; আর নিজে বসার জন্য তাকে তার বৈধ বসার জায়গা থেকে উঠিয়ে না দেওয়া; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আর তুমি মানুষের প্রতি অবজ্ঞাভরে তোমার গাল বাঁকা কর না এবং যমীনে উদ্ধতভাবে বিচরণ কর না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না।[121] 

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী পাঠিয়েছেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, যাতে কেউ কারও উপর অহঙ্কার প্রকাশ না করে।” [122]

তিনি আরও বলেন: “যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিনয় প্রকাশ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করবেন।” [123]

তাছাড়া একথা সর্বজন বিদিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক মুসলিমের সাথে বিনয়ী ছিলেন, অথচ তিনি হলেন নবী-রাসূলগণের সর্দার; তাছাড়া তিনি নিঃস্ব ও মিসকীনদের সাথে হাঁটতে এবং তাদের সমস্যা সমাধান করতে উদ্ধতভাব ও অহঙ্কার প্রদর্শন করতেন না, বরং তিনি বলতেন: “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীন অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখ, মিসকীন অবস্থায় মৃত্যু দান করিও এবং মিসকীনদের মাঝে আমার হাশরের ব্যবস্থা করিও।[124]

তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “তোমাদের কেউ যেন কোনো ব্যক্তিকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে না বসে; বরং তোমরা জায়গা বিস্তৃত করে দাও এবং ছড়িয়ে বসো।#a

১১. তাকে তিন দিনের বেশি বিচ্ছিন্ন করে না রাখা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে তিন দিনের বেশি বিচ্ছিন্ন করে রাখা বৈধ নয়; তাদের উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ হয়, তখন একজন এ দিকে এড়িয়ে যায়, আরেকজন ঐ দিকে এড়িয়ে যায়; আর তাদের উভয়ের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সে-ই উত্তম বলে বিবেচিত হবে।[126]

তিনি আরও বলেন: “আর তোমরা পরস্পর পরস্পরের পিছনে লেগনা; আর তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।[127]

১২. তার গীবত না করা, অথবা তাকে হয়ে প্রতিপন্ন না করা, অথবা তার দোষ বর্ণনা না করা, অথবা তাকে উপহাস না করা, অথবা তাকে বিকৃত নামে না ডাকা, অথবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য তার কোনো কথা ফাঁস না করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। [128]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: হে ঈমানদারগণ! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা, যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদেরকে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তওবা করে না তারাই তো যালিম।[129]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে? সাহাবীগণ বললেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বলেন: তুমি তোমার ভাইয়ের এমন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা কর, যা সে অপছন্দ করে। বলা হল: আপনার কী অভিমত, আমি যা আলোচনা করলাম, তা যদি তার মধ্যে থেকে থাকে? তিনি বললেন: যেসব দোষ তুমি বর্ণনা করেছ তা যদি সত্যিই তার মধ্যে থেকে থাকে, তবেই তো তুমি তার গীবত করলে; যদি সেসব দোষ তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে।[130]

আর তিনি বিদায় হাজ্জের ভাষণে বলেন: “নিশ্চয়ই তোমার পরস্পরের রক্ত (জীবন), ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান পরস্পরের জন্য হারাম ও সম্মানের যোগ্য, তোমাদের আজকের এ দিনের সম্মানের মতই।[131]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির রক্ত (জীবন), ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান অপর সব মুসলিমের জন্য হারাম।[132]

তিনি আরও বলেন: “কোনো ব্যক্তির খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় প্রতিপন্ন করে।” [133]

তিনি আরও বলেন: “চোগলখোর তথা পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।[134]

১৩. অন্যায়ভাবে তাকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় গালি না দেওয়া; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মুসলিম ব্যক্তিকে গালি দেওয়া পাপ এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করা কুফরী।[135]

তিনি আরও বলেন: “কোনো ব্যক্তি যেন অপর কোনো ব্যক্তিকে ফাসেক অথবা কাফির না বলে; কারণ, সে ব্যক্তি যদি প্রকৃতই তা না হয়ে থাকে, তাহলে এ অপবাদ তার নিজের ঘাড়ে এসে পড়বে।[136]

তিনি আরও বলেন: “পরস্পরকে গালি প্রদানকারী দুই ব্যক্তির মধ্যে যে আগে গালি দিয়েছে, সে দোষী বলে গণ্য হবে, যতক্ষণ না নির্যাতিত ব্যক্তি (অর্থাৎ প্রথম যাকে গালি দেয়া হয়েছে) সীমা অতিক্রম করবে। [137]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “তোমরা মৃতদেরকে গালি দিয়ো না; কারণ, তারা যা কিছু করেছে, তার ফলাফলের কাছে পৌঁছে গেছে। [138]

তিনি আরও বলেন: “কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতামাতাকে গালি দেয়া কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত! সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোনো মানুষ কি তার পিতামাতাকে গালি দিতে পারে?! জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে অন্য কোনো মানুষের পিতাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্য ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার মাকে গালি দেয়।[139]

১৪. তাকে হিংসা না করা, অথবা তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ না করা, অথবা তাকে ঘৃণা না করা, অথবা তার পিছনে গোয়েন্দাগিরি না করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোনো কোনো অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না।[140]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “যখন তারা এটা শুনল, তখন মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীগণ তাদের নিজেদের সম্পর্কে কেন ভাল ধারণা করল না।[141]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না, নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতার সামনে পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বলবে না, পরস্পরের প্রতি ঘৃণা পোষণ করো না এবং পরস্পর পরস্পরের পিছনে লেগনা; আর তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। [142]

তিনি আরও বলেন: “সাবধান! তোমরা অযথা ধারণা করা থেকে বিরত থাক; কেননা, অযথা ধারণা পোষণ করা সবচেয়ে বড় ধরনের মিথ্যা।” [143]

১৫. তার সাথে ধোঁকাবাজি বা প্রতারণা না করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয় যা তারা করেনি তার জন্য; নিশ্চয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করলো।[144]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “আর কেউ কোনো দোষ বা পাপ করে পরে সেটা কোনো নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।[145]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়; আর যে ব্যক্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করে, সেও আমাদের দলভুক্ত নয়।[146]

তিনি আরও বলেন: “তুমি যার সাথে ক্রয়-বিক্রয় কর, তাকে বল: কোনোরূপ ধোঁকাবাজি করবে না।[147]

নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দকে প্রজা সাধারণের তত্ত্বাবধায়ক বানাবার পর তাদের সাথে খিয়ানতকারী বা প্রতারণাকারী অবস্থায় যদি সে অবধারিত মৃত্যুর দিন মৃত্যুবরণ করে, তাহলে নিশ্চিতভাবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দেবেন।” [148]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি কারও স্ত্রী অথবা দাসীকে ধোঁকা দিয়ে তার চরিত্র নষ্ট করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।[149]

১৬. তার সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করা, অথবা তার খিয়ানত না করা, অথবা তার সাথে মিথ্যা কথা না বলা, অথবা তার ঋণ পরিশোধ করার ক্ষেত্রে টাল-বাহানা না করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করবে।[150]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “আর তারা যখন প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তা পূর্ণ করে।[151]

তিনি আরও বলেন: “আর প্রতিশ্রুতি পালন কর; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। [152]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকে, সে হবে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর কোনো একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত মুনাফিকের একটি স্বভাব তার মধ্যে থেকে যাবে; স্বভাবগুলো হল: আমানত রাখলে খিয়ানত করে, কথা বললে মিথ্যা বলে, চুক্তি করলে ভঙ্গ করে এবং ঝগড়ায় লিপ্ত হলে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে।[153]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করব: যে ব্যক্তি আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল; যে ব্যক্তি কোনো আযাদ বা স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল; আর যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে নিযুক্ত করে তার কাছ থেকে পুরোপুরি কাজ আদায় করল, কিন্তু তার মজুরী বা পারশ্রমিক পরিশোধ করল না।[154]

তিনি আরও বলেন: “পাওনা আদায়ের ব্যাপারে ধনী ব্যক্তির টাল-বাহানা করাটা যুলুম। আর যদি কারোর ঋণকে অন্য (ধনী) ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা হয়, তাহলে (ঋণ দাতা) এ স্থানান্তরকে ঋণ বলে মেনে নেয়া উচিত। [155]

১৭. তার সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে; সুতরাং তার জন্য ভালো কিছু করবে এবং তাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবে; আর তার সাথে সাক্ষ্যাৎ করবে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে— তার ভালো ব্যবহার গ্রহণ করে নিবে এবং মন্দ আচরণ ক্ষমা করে দিবে; আর তার নিকট যা নেই সে বিষয়ে তার উপর চাপ সৃষ্টি করবে না; সুতরাং জাহেলের নিকট থেকে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করবে না এবং নির্বাক ব্যক্তি থেকে ভাষা শিখবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: মানুষের (চরিত্র ও কর্মের) উৎকৃষ্ট অংশ গ্রহণ করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন।[156]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহকে ভয় কর; আর অসৎকাজ করলে তার পরপরই সৎকাজ কর, তাহলে তা মন্দ কাজকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে; আর মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার কর। [157]

১৮. বড় হলে তাকে সম্মান করা; আর ছোট হলে তাকে স্নেহ করা; কেননা, মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি আমাদের বড়কে সম্মান করে না এবং ছোটকে স্নেহ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।[158]

তিনি আরও বলেন: “আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করার অন্যতম একটি উপায় হলো বৃদ্ধ মুসলিম ব্যক্তিকে সম্মান করা।[159]

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন: « كَبِّرْ كَبِّرْ »  অর্থাৎ বয়োজ্যেষ্ঠকে দিয়ে শুরু কর। হাদিসে প্রসিদ্ধ আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শিশুকে নিয়ে আসা হত তার জন্য বরকতের দো‘য়া করার জন্য, অথবা তার নাম রাখার জন্য; তারপর তিনি তাকে তাঁর কোলে নিতেন, ফলে কখনও কখনও শিশু তাঁর কোলে পেশাব করে দিত। হাদিসে আরও বর্ণিত আছে: তিনি যখন সফর থেকে আগমন করতেন, তখন শিশুরা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করত; ফলে তিনি তাদের জন্য থামতেন, তারপর সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিতেন তাদেরকে তাঁর নিকট হাজির করার জন্য; তারপর তিনি তাদের মধ্য থেকে কিছু অংশকে তাঁর সামনে রাখতেন এবং কিছূ অংশকে তাঁর পেছনে রাখতেন; আবার তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিতেন শিশুদের কাউকে কাউকে (তাঁদের কোলে বা কাঁধে) বহন করার জন্য; আর শিশুদের প্রতি স্নেহ ও ভালোবাসার কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব করতেন।

১৯. নিজ থেকে তার প্রতি ইনসাফ করা এবং তার সাথে এমন ব্যবহার করা, যে ব্যবহার সে নিজে অন্যের কাছ থেকে আশা করে; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানকে পরিপূর্ণ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটবে: ১. অভাবগ্রস্ত অবস্থায়ও দান করা, ২. নিজ থেকে ইসনাফ করা, এবং ৩. সালামের প্রচলন করা।” [160]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি মনে প্রাণে জাহান্নাম থেকে মুক্ত হতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে চায়, তার যেন মৃত্যু হয় এমন অবস্থায় যে, সে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করে, যে ব্যবহার সে নিজে অন্যের কাছ থেকে আশা করে।[161]

২০. তার ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করা ও অভ্যন্তরীণ বিষয় গোপন রাখা এবং তার গোপন কথা কান পেতে না শুনা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “কাজেই তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং উপেক্ষা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদেরকে ভালবাসেন।[162]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “তবে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোনো ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার রক্ত-বিনিময় আদায় করা কর্তব্য।[163]

তিনি আরও বলেন: “তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন?।[164]

তিনি আরও বলেন: “নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [165]

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আর আল্লাহ যে বান্দাকে ক্ষমার গুণে সমৃদ্ধ করেন, তাকে অবশ্যই সম্মান দ্বারা ধন্য করেন।[166]

তিনি আরও বলেন: “আর তোমার প্রতি যে যুলুম করে, তাকে তুমি ক্ষমা করা।[167]

তিনি আরও বলেন: “যে কোনো বান্দা দুনিয়াতে অন্য বান্দার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। [168]

তিনি আরও বলেন: “হে যারা মুখে ঈমান এনেছ, অথচ অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি! তোমরা মুসলিমগণের গীবত করো না এবং তাদের গোপন বিষয়ের অনুসরণ করো না; কারণ, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় খোঁজাখুঁজি করবে, আল্লাহ তা‘আলাও তার গোপন বিষয়ের পিছনে লাগবেন; আর আল্লাহ যার গোপন বিষয়ের পিছনে লাগবেন, সে তার ঘরের মধ্যে অবস্থান করলেও তিনি তা ফাঁস করে দিবেন। [169]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “আর যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের কথার দিকে কান লাগাল, অথচ তারা তা অপছন্দ করে, কিয়ামতের দিন তার কানে সীসা ঢেলে দেয়া হবে।[170]

২১. তার কোনো প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করা এবং তার কোনো প্রয়োজন পূরণে সম্ভব হলে তার জন্য সুপারিশ করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর নেককাজ ও তাক্ওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে।[171]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “কেউ কোনো ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে। [172]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির পার্থিব কষ্টসমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তার কিয়ামতের দিনের কষ্টসমূহের মধ্য থেকে একটি কষ্ট দূর করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাবের কষ্ট লাঘব করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবেন; আর বান্দা যতক্ষণ তার মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, আল্লাহও ততক্ষণ তার সাহায্য-সহযোগিতা করতে থাকেন।” [173]

তিনি আরও বলেন: “তোমরা সুপারিশ কর, প্রতিদান পাবে; আর আল্লাহ যা চান, তিনি তাঁর নবীর মুখ দিয়ে তা প্রকাশ করান।[174]

২২. সে যখন আল্লাহর নামে আশ্রয় চাইবে, তখন তাকে আশ্রয় দেওয়া; যখন তার কাছে আল্লাহর নামে সাহায্য চাইবে, তখন তাকে দান করা; তার ভালো কাজের জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া অথবা তার জন্য দো‘য়া করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে আশ্রয় চাইবে, তোমরা তাকে আশ্রয় দাও; আর যে ব্যক্তি তোমাদের কাছে আল্লাহর নামে সাহায্য চাইবে, তোমরা তাকে দান কর; আর যে ব্যক্তি তোমাদেরকে আহ্বান করবে, তোমরা তার ডাকে সাড়া দাও; আর যে ব্যক্তি তোমাদের উপকার করবে, তোমরা তাকে প্রতিদান দাও; আর যদি তাকে পুরস্কার দেওয়ার মত কিছু না পাও, তাহলে তোমরা তার জন্য এমনভাবে দো‘য়া কর, যাতে তোমাদের মনের তৃপ্তি হয় যে, তোমরা তাদের প্রতিদান দিতে পেরেছ। [175]

(ছ) কাফিরের সাথে আচরণ: মুসলিম ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, ইসলাম ছাড়া সকল জাতি, দীন ও ধর্ম বাতিল এবং তার অনুসারীগণ কাফির। আর দীন ইসলাম হলো একমাত্র সত্য দীন এবং তার অনুসারীগণ হলেন মুমিন মুসলিম। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন।[176]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।[177]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নি‘য়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।[178]

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নাযিলকৃত এসব চিরন্তন সত্যবাণীর মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তি জানে যে, ইসলামপূর্ব সকল ধর্ম ইসলামের আগমনে ‘মানসুখ’ বা রহিত হয়ে গেছে; আর ইসলাম হয়ে গেল গোটা মানবজাতির একমাত্র দীন বা জীবনবিধান; সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কারও পক্ষ থেকে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীনকে গ্রহণ করবেন না এবং ইসলাম ছাড়া আর অন্য কোনো শরী‘য়তকে শরী‘য়ত হিসেবে পছন্দ করবেন না; আর সেখান থেকেই মুসলিম ব্যক্তি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই কাফির, যে ব্যক্তি ইসলামকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য দীন হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। আর সে ‘কুফর’ বা কাফিরের সাথে নিম্নোক্ত আদবসমূহ রক্ষা করে চলবে:

১. কুফরীকে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং তাকে পছন্দ না করা; কারণ, ‘কুফর’কে পছন্দ করা কুফরী।

২. আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাকে ঘৃণা করার কারণে তাকে ঘৃণা করা; কেননা, ভালোবাসা হবে আল্লাহর জন্য এবং ঘৃণা করাটাও হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে; আর আল্লাহ তা‘আলাকে অস্বীকার করার কারণেই তিনি তাকে ঘৃণা করেন; সুতরাং মুসলিম ব্যক্তি কাফিরকে ঘৃণা করবে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তাকে ঘৃণা করার কারণেই।

৩. তার সাথে বন্ধত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন না করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে।[179]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “আপনি পাবেন না আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমানদার এমন কোন সম্প্রদায়, যারা ভালবাসে তাদেরকে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে- হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা এদের জ্ঞাতি-গোত্র। [180]

৪. তার সাথে ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার ও ন্যায় আচরণ করা এবং সে যদি বিদ্রোহী না হয়, তাহলে তাকে কল্যাণকর সুযোগ সুবিধা প্রদান করা; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিস্কার করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালবাসেন। [181]

সুতরাং এ সুস্পষ্ট আয়াতটি কাফিরদের সাথে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ আচার-ব্যবাহারকে এবং তাদের উপকার করার বিষয়টিকে বৈধতা দিয়েছে; আর শুধু বিদ্রোহী কাফিরগণ ব্যতীত বাকি সকল কাফিরই এ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে; আর যেসব কাফিরের জন্য বিশেষ রাজনৈতিক দর্শন ও নিয়মনীতির ব্যবস্থা থাকবে, তাদেরকে বিদ্রোহী বলে গণ্য করা হবে এবং তাদের ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের বিধান প্রযোজ্য হবে।

৫. তার প্রতি সাধারণ সহানুভূতির সাথে করুণা করা, যেমন— সে ক্ষুধার্ত হলে তাকে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা, তৃষ্ণার্ত হলে তাকে পানি পান করানো, অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, বিপদ-মুসিবত ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা এবং কষ্টকর বিষয় থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তুমি পৃথিবীতে যারা আছে, তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমার প্রতি দয়া করবেন।[182]

তিনি আরও বলেন: “প্রাণী মাত্রকেই পানি পান করানোর মধ্যে সাওয়াব রয়েছে।[183]

৬. যদি সে বিদ্রোহী না হয়ে থাকে, তাহলে তার সম্পদ, জীবন বা সম্মানের ব্যাপারে তাকে কষ্ট না দেওয়া; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে আমার বান্দারা! আমি নিজের উপর যুলুমকে হারাম করে রেখেছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম করেছি; সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না।” [184]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো যিম্মীকে (অমুসলিম নাগরিককে) কষ্ট দিবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে দাঁড়াবো।” [185]

৭. তাকে হাদিয়া বা উপহার সামগ্রী প্রদান করা, তার দেয়া উপহার গ্রহণ করা এবং সে যদি কিতাবী তথা ইহুদী বা খ্রিষ্টান হয়, তাহলে তার তৈরি করা খাবার খাওয়া বৈধ; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল।[186]

তাছাড়া সহীহভাবে বর্ণিত আছে যে, মদীনাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইহুদীর খাবার গ্রহণের জন্য দাওয়াত করা হয়, তারপর তিনি সে দাওয়াত গ্রহণ করেন এবং তাঁর উদ্দেশ্যে পরিবেশিত তাদের খাবার থেকে তিনি খাবার গ্রহণ করেন।[187]

৮. মুমিন রমনীকে তার নিকট বিয়ে না দেওয়া, যদিও কিতাবী (ইহুদী বা খ্রিষ্টান) রমনীদেরকে বিয়ে করা বৈধ; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা মুমিন রমনীকে কাফিরের সাথে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সাধারণভাবে নিষেধ করে বলেন: “মুমিন নারীগণ কাফিরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফিরগণ মুমিন নারীদের জন্য বৈধ নয়।[188]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “আর ঈমান না আনা পর্যন্ত মুশরিক পুরুষদের সাথে তোমরা বিয়ে দিও না।[189]

তাছাড়া মুসলিম পুরুষ কর্তৃক কিতাবী নারীকে বিয়ে করার বৈধতার ব্যপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল যদি তোমরা তাদের মোহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। [190]

৯. যখন সে হাঁচি দিবে এবং ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (الحَمْدُ للهِ) বলে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করবে, তখন তার হাঁচির জবাব দেবে এই বলে: ” يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ” (আল্লাহ তোমাদেরকে হিদায়েত করুন এবং তোমাদের অবস্থাকে ভালো করে দিন); কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ইহুদীর নিকট হাঁচি দিয়েছিলেন এ প্রত্যাশায় যে, সে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলবে: ‘ইয়ারহামুকুমুল্লাহ’ (يَرْحَمُكُمُ اللهُ) [অর্থাৎ আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন]; তারপর তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলবেন: ” يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ” (আল্লাহ তোমাদেরকে হিদায়েত করুন এবং তোমাদের অবস্থাকে ভালো করে দিন)। [191]

১০. তাকে আগে সালাম না দেওয়া এবং সে যদি সালাম দেয়, তাহলে« وَعَلَيْكُمْ »  (তোমাদের উপরও) বলে তার জবাব দেওয়া; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা তোমাদেরকে সালাম প্রদান করে, তখন তোমরা বল:« وَعَلَيْكُمْ »  (তোমাদের উপরও)। [192]

১১. তার সাথে রাস্তায় চলার সময় তাকে সবচেয়ে সংকীর্ণ রাস্তায় চলতে বাধ্য করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে আগে আগে সালাম দিয়ো না; আর যখন পথে তাদের কারোর সাথে তোমাদের দেখা হবে, তখন তাকে সংকীর্ণ পথের দিকে যেতে বাধ্য করো।[193]

১২. তার বিপরীত কাজ করা এবং তাকে অনুকরণ ও অনুসরণ না করা, যেমন— দাড়ি লম্বা করা, যখন সে তা মুণ্ডন করে ফেলে; দাড়িতে রঙ করা, যখন সে তা রঙ করে না; অনুরূপভাবে পোশাক পরিধানের ব্যাপারেও তার বিপরীত করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুসরণ করে, তবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।[194]

তিনি আরও বলেন: “তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবে, তোমরা গোঁফ ছোট করবে এবং দাড়ি লম্বা রাখবে।” [195]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “নিশ্চয়ই ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানগণ (দাড়ি ও চুলে) রঙ বা খেযাব লাগায় না; অতএব, তোমরা (রঙ বা খেযাব লাগিয়ে) তাদের বিপরীত কাজ কর।[196]

অর্থাৎ দাড়ি অথবা মাথার চুলকে হলুদ অথবা লাল রঙ দ্বারা খেযাব করা; কেননা, কালো রঙ দ্বারা খেযাব করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন; ইমাম মুসলিম রহ. কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা এই সাদা চুলকে কোনো কিছু দ্বারা পরিবর্তন কর এবং কালো রঙ ব্যবহার করা থেকে দূরে থাক।[197]

(জ) জীবজন্তুর সাথে আচরণ: মুসলিম ব্যক্তি অধিকাংশ প্রাণীকেই সম্মানিত সৃষ্টি বলে বিবেচনা করে; সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক তার প্রতি করুণা করার কারণে সেও তার প্রতি দয়া বা করুণা করবে এবং তার প্রতি নিম্নোক্ত আদবসমূহ রক্ষা করে চলবে:

১. যখন তার ক্ষুধা ও পিপাসা হয়, তখন খাবার ও পানীয়’র ব্যবস্থা করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “প্রাণী মাত্রকেই পানি পান করানোর মধ্যে সাওয়াব রয়েছে।[198]

তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি অনুকম্পা প্রদর্শন করবে না, তার প্রতিও অনুকম্পা প্রদর্শন করা হবে না।[199]

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন: “তোমরা পৃথিবীতে যারা আছে, তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” [200]

২. তার প্রতি দয়াপরবশ ও সহানুভূতিশীল হওয়া; কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদেরকে দেখলেন— তারা একটি জীবন্ত পাখিকে ধরে এনে তাদের তীর নিক্ষেপের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে গ্রহণ করে তার প্রতি তীর নিক্ষেপ করছে, তখন তিনি বললেন: “আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির উপর অভিশাপ বর্ষণ করুন, যে জীবন্ত প্রাণীকে (তীর নিক্ষেপের) লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।[201]

তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুষ্পদ জন্তুকে হত্যা করার জন্য আটক করে রাখতে নিষেধ করেছেন। আবার কোনো একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেলেন একটি মা পাখি তার বাচ্চাদের খোঁজে বৃত্তাকারে উড়ছে, যে বাচ্চাগুলো সাহাবীগণ তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে এসেছে, এমতাবস্থায় তিনি বললেন: “কে এ পাখিটিকে তার সন্তান হারোনোর ব্যদনায় কষ্ট দিচ্ছে? তোমরা তার বাচ্চাকে তার নিকট ফিরিয়ে দাও।[202]

৩. তাকে যবেহ বা হত্যা করার সময় দয়া প্রদর্শন করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের উপর ‘ইহসান’ অত্যাবশ্যক করেছেন; সুতরাং তোমরা যখন কতল করবে, দয়ার্দ্রতার সাথে কতল করবে; আর যখন যবেহ করবে, তখন দয়ার্দ্রতার সাথে যবেহ করবে; আর তোমাদের সকলেই যেন তার ছুরি ধার দিয়ে নেয় এবং তার যবেহকৃত প্রাণীকে কষ্ট না দেয়।[203]

৪. তাকে কোনো প্রকার শাস্তি না দেওয়া, চাই সে শাস্তি অভুক্ত রাখার মাধ্যমে হউক, অথবা প্রহার করার মাধ্যমে হউক, অথবা সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপানোর মাধ্যমে হউক, অথবা তার অঙ্গহানির মাধ্যমে হউক, অথবা আগুনে পোড়ানোর মাধ্যমে; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এক মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেয়া হয়েছে— সে বিড়ালটিকে একাধারে বেঁধে রাখায় মারা গিয়েছিল, যার কারণে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। যখন সে তাকে আটকিয়ে রেখেছিল, তখন সে তাকে না খাদ্য ও পানীয় দিয়েছে, না তাকে যমীনের পোকা মাকড় খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছে।[204]

তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক পিঁপড়া অধ্যুষিত অঞ্চল দিয়ে পথ চলার সময় দেখতে পেলেন তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে, তখন তিনি বলেন: “কে এগুলোকে পুড়িয়ে মারছে? আমরা বললাম: আমরা মারছি; তিনি বললেন: আগুনের মালিক (আল্লাহ তা‘আলা) ব্যতীত কারও জন্য আগুন দ্বারা শাস্তি দেয়া সমীচীন নয়।” [205]

৫. ক্ষতিকর প্রাণীকে হত্যা করা বৈধ, যেমন— হিংস্র বা পাগলা কুকুর, বাঘ, সাপ, বিচ্ছু, ইঁদুর ইত্যাদি; কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “পাঁচ প্রকার প্রাণী বেশি অনিষ্টকারী, এদেরকে হারাম শরীফের বাইরে ও ভিতরে হত্যা করা যায়: সাপ, চিত্রা কাক, ইঁদুর, পাগলা কুকুর ও চিল।[206] অনুরূপভাবে বিচ্ছুকে হত্যা ও লা‘নত করার বিষয়টিও নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত হয়েছে।

৬. জনস্বার্থে বা প্রশাসনিক প্রয়োজনে উট, ছাগল ও গরুর মত চতুষ্পদ জন্তুর কানে দাগ বা চিহ্ন দেওয়া বৈধ; কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর নিজ হাতে যাকাতের উটে চিহ্ন দিতে দেখা গেছে। তবে উট, ছাগল ও গরুর মত চতুষ্পদ জন্তু ব্যতীত অন্যান্য জীবজন্তুর গায়ে দাগ বা চিহ্ন দেওয়া বৈধ নয়; কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চেহারায় দাগ দেওয়া একটি গাধাকে দেখে বললেন: “আল্লাহর অভিশাপ ঐ ব্যক্তির প্রতি, যে এ প্রাণীটির চেহারায় দাগ দিয়েছে।[207]

৭. এসব জন্তুতে আল্লাহর ‘হক’ সম্পর্কে জানা, যাতে যখন তা যাকাতযোগ্য হয়, তখন তার যাকাত আদায় করা যায়।

৮. আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য বাদ দিয়ে এগুলো নিয়ে ব্যস্ত না থাকা, অথবা এগুলোর কারণে তাঁর স্মরণে উদাসীন না হওয়া; কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে উদাসীন না করে।[208]

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া প্রসঙ্গে বলেছেন: “ঘোড়া তিন প্রকার: (ঘোড়া পালন) একজনের জন্য পুণ্য, আরেক জনের জন্য (দারিদ্র্য ঢেকে রাখার বা আযাব থেকে) আবরণ স্বরূপ এবং অপর আরেক জনের জন্য পাপের কারণ। সে ব্যক্তির জন্য পুণ্য, যে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদ করার জন্য) ঘোড়াকে সদা প্রস্তুত রাখে এবং সে ব্যক্তি যখন লম্বা দড়ি দিয়ে ঘোড়াটি কোনো চারণভূমি বা বাগানে বেঁধে রাখে, তখন ঐ লম্বা দড়ির মধ্যে চারণভূমি বা বাগানের যে অংশ পড়বে তত পরিমাণ সাওয়াব সে পাবে; যদি ঘোড়াটি দড়ি ছিড়ে ফেলে এবং দুই একটি টিলা পার হয়ে কোথাও চলে যায়, তাহলে তার পদচিহ্ন ও গোবরগুলোও তার জন্য সাওয়াব হিসেবে গণ্য হবে; যদি কোনো নদী-নালায় গিয়ে পানি পান করে, মালিক যদিও পানি পান করানোর ইচ্ছা করে নাই, তাও তার নেক আমল বলে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের স্বচ্ছলতার জন্য দারিদ্র্যের গ্লানি ও পরমুখাপেক্ষীতা থেকে নিজকে রক্ষা করার জন্য ঘোড়া পালন করে এবং তার গর্দান ও পিঠে আল্লাহর যে হক রয়েছে তা ভুলে না যায় (অর্থাৎ যাকাত আদায় করে) তবে এই ঘোড়া তার জন্য আযাব থেকে রক্ষাকারী আবরণ স্বরূপ। আর যে ব্যক্তি অহঙ্কার, লোক দেখানো ও ইসলামের অনুসারীদের সাথে শত্রুতার জন্য ঘোড়া লালন-পালন করে, তাহলে এ ঘোড়া তার জন্য পাপের বোঝা হবে।[209]

সুতরাং মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের কারণেই জীবজন্তুর সাথে এ আদবসমূহ রক্ষা করে চলবে; আর এসব আদব পালন করার দ্বারা নির্দেশ পালন হবে ইসলামী শরী‘য়তের ! পালন হবে দয়া ও করুনার বিধিবিধান ! পালন হবে মানুষ অথবা জীবজন্তুসহ প্রতিটি সৃষ্টির জন্য নির্ধারিত সার্বজনীন কল্যাণকর আইনকানুন !।

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ |পর্ব ৫ পর্ব ৬ | পর্ব ৭ | পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫


[1] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩ – ২৪
[2] সূরা লুকমান, আয়াত: ১৪
[3] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬২৬; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৬৬৪
[4] বুখারী, হাদিস নং- ২২৭৭; মুসলিম, হাদিস নং- ৪৫৮০
[5] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৩১; মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৯
[6] মুসলিম, হাদিস নং- ৩৮৭২
[7] বুখারী, হাদিস নং- ৫০৪ ও ৬৫২৫; মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৪
[8] বুখারী, হাদিস নং- ২৮৪২; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৬৬৮
[9] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫১৪৪; আহমাদ, হাদিস নং- ১৬১০৩
[10] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৬৭৯
[11] সূরা লুকমান, আয়াত: ১৫
[12] বুখারী, হাদিস নং- ৬৮৩০; মুসলিম, হাদিস নং- ৪৮৭১
[13] আহমাদ ও হাকেম রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং হাদিসটিকে সহীহ বলেন।
[14] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৩
[15] সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬
[16] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩১
[17] বুখারী, হাদিস নং- ৬৪২৬; মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৭
[18] বুখারী ও সুনান চতুষ্টয়।
[19] বুখারী, হাদিস নং- ৫৫৫২
[20] ইবনু মাজাহ রহ. হাদিসটি দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ৩৬৭১
[21] বায়হাকী ও ত্ববারানী; আর হাফেয ‘আসকলানী হাদিসের সনদকে ‘হাসান’ বলেছেন।
[22] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৪৯৫
[23] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১২৯
[24] প্রাগুক্ত
[25] আলবানী ও অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে ‘মাউদু‘’ বলেছেন।
[26] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১২৯
[27] বায়হাকী এবং হাদিসটি দুর্বল।
[28] হাকেম রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং তার মূলকথা ‘সহীহ’ ও ‘সুনান’ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে।
[29] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৮
[30] সুনান চতুষ্টয়; ইমাম তিরমিযী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
[31] সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১
[32] ত্ববারনী রহ. হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[33] সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১০
[34] বুখারী ও মুসলিম রহ. প্রমুখ।
[35] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯
[36] মুসলিম, হাদিস নং- ৩৭২০
[37] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২১
[38] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৭
[39] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯
[40] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪
[41] আবূ দাউদ রহ. হাদিসটি ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন, হাদিস নং- ২১৪৪
[42] তিরমিযী, হাদিস নং- ৩০৮৭
[43] মুসলিম, হাদিস নং- ২৭২১
[44] সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ৬
[45] তিরমিযী, হাদিস নং- ৩০৮৭
[46] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪
[47] বুখারী, হাদিস নং- ৮৫৩; মুসলিম, হাদিস নং- ৪৮২৮
[48] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩
[49] ত্ববারানী রহ. হাদিসটি ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[50] মুসলিম, হাদিস নং- ৩৬১৫
[51] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪
[52] বুখারী, হাদিস নং- ৩০৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৩৬১৪
[53] আবূ দাউদ ও হাকেম; আর তিরমিযী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
[54] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪
[55] বুখারী, হাদিস নং- ৪৯০৪; মুসলিম, হাদিস নং- ৪৮২৮
[56] তিরমিযী, হাদিস নং- ৩০৮৭
[57] সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩
[58] সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩২
[59] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪৮
[60] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১
[61] ত্ববারানী রহ. হাদিসটি ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[62] মুসলিম ও আহমাদ।
[63] মুসলিম, আহমাদ, আবূ দাউদ ও তিরমিযী।
[64] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১
[65] সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৭৫
[66] সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২
[67] সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩৮
[68] সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯০
[69] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬
[70] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮
[71] হাকেম ও আবূ দাউদ (হাদিস নং- ১৬৯৬)।
[72] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫১৪১
[73] বুখারী, হাদিস নং- ১৩৩২; মুসলিম, হাদিস নং- ১১৩
[74] বুখারী, হাদিস নং- ৪০০৫; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২২৮২
[75] নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
[76] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৩৪; মুসলিম, হাদিস নং- ২৩৭২
[77] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬
[78] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৬৯; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৮৫২
[79] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৭৩; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮২
[80] বুখারী, হাদিস নং- ৪৮৯০; মুসলিম, হাদিস নং- ১৮৩
[81] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৭০
[82] আহমাদ ও হাকেম এবং হাদিসের সনদ সহীহ।
[83] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬
[84] মুসলিম, হাদিস নং- ১৮৫
[85] বুখারী, হাদিস নং- ২৪২৭
[86] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৮৫৫
[87] বুখারী, হাদিস নং- ২১৪০
[88] বুখারী, হাদিস নং- ২৩৩১; মুসলিম, হাদিস নং- ৪২১৫
[89] হাকেম রহ. এবং তিনি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
[90] আহমাদ রহ. উৎকৃষ্ট সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
[91] ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ, হাদিস নং- ৫২০
[92] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮৬
[93] বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৭৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭৭২
[94] যাইন আল-‘ইরাকী বলেন: তার মূল সনদের ব্যাপারে আমার জানা নেই।
[95] বুখারী ও মুসলিম।
[96] আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ ও তিরমিযী।
[97] ত্ববারানী ও আবূ না‘য়ীম; আর আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
[98] বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৭০
[99] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫০৩১; তিরমিযী, হাদিস নং- ২৭৪৫
[100] বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৭৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭৭২
[101] বুখারী, হাদিস নং- ৪৮৮০
[102] বুখারী, হাদিস নং- ৫০৫৮
[103] বুখারী, হাদিস নং- ৫৪১১; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৮৩৬
[104] বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৭৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭৭২
[105] বুখারী, হাদিস নং- ৪৮৮০
[106] বুখারী, কিতাবুল বুয়ূ‘, বাব নং- ৬৮
[107] মুসলিম, হাদিস নং- ২০৫
[108] বুখারী, মুসলিম ও আহমাদ; তবে « و يكرَهُ لَهُ ما يَكرَهُ لِنَفْسِهِ »  কথাটি বুখারী ও মুসলিমে নেই; বরং তা ইমাম আহমাদ রহ. এর ‘আল-মুসনাদ’ এর মধ্যে রয়েছে, যার শব্দগুলো নিম্নরূপ:

« وَأَنْ تُحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ ، وَتَكْرَهَ لَهُمْ مَا تَكْرَهُ لِنَفْسِكَ »

“তোমার নিজের জন্য তুমি যা পছন্দ করবে, জনগণের জন্যও তা পছন্দ করা এবং তোমার নিজের জন্য তুমি যা অপছন্দ করবে, তাদের জন্যও তা অপছন্দ করা।” — (হাদিস নং- ২২১৮৩)।
[109] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫১
[110] বুখারী, হাদিস নং- ৪৬৭; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫০
[111] বুখারী, হাদিস নং- ৬৫৫২; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৪৭
[112] বুখারী, হাদিস নং- ৬৫৫১; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৬
[113] আহমাদ।
[114] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৯৩১
[115] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৬
[116] আহমাদ ও আবূ দাউদ এবং হাদিসটি সহীহ।
[117] আহমাদ ।
[118] আহমাদ রহ. উৎকৃষ্ট সনদে হাদিসটি বর্ণনা করছেন।
[119] বুখারী, হাদিস নং- ১০; মুসলিম, হাদিস নং- ১৭১
[120] আহমাদ, তিরমিযী ও হাকেম এবং হাদিসটি সহীহ।
[121] সূরা লোকমান, আয়াত: ১৮
[122] আবূ দাউদ ও ইবনু মাজাহ এবং হাদিসটি সহীহ।
[123] তিরমিযী, হাদিস নং- ২০২৯
[124] ইবনু মাজাহ ও হাকেম।
[125] বুখারী, হাদিস নং- ৫৯১৪; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৮১২
[126] বুখারী, হাদিস নং- ৫৮৮৩; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৬৯৭
[127] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০১
[128] সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২
[129] সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১১
[130] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫৮
[131] বুখারী, হাদিস নং- ১০৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৪৪৭৭
[132] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৬
[133] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০৬
[134] বুখারী, হাদিস নং- ৫৭০৯; মুসলিম, হাদিস নং- ৩০৪
[135] বুখারী, হাদিস নং- ৬৬৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ২৩০
[136] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬৯৮
[137] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫৬
[138] বুখারী, হাদিস নং- ১৩২৯
[139] বুখারী, হাদিস নং- ৫৬২৮; মুসলিম, হাদিস নং- ২৭৩; হাদিসের শব্দগুলো ইমাম মুসলিম রহ. এর।
[140] সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২
[141] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৯৭
[142] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০১
[143] বুখারী, হাদিস নং- ৪৮৪৯; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭০১
[144] সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৮
[145] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১২
[146] মুসলিম, হাদিস নং- ২৯৪
[147] বুখারী, হাদিস নং- ২০১১; মুসলিম, হাদিস নং- ৩৯৩৯
[148] মুসলিম, হাদিস নং- ৩৮০
[149] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫১৭২
[150] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ১
[151] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৭
[152] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৪
[153] বুখারী, হাদিস নং- ৩৪; মুসলিম, হাদিস নং- ২১৯
[154] বুখারী, হাদিস নং- ২১১৪
[155] বুখারী, হাদিস নং- ২১৬৬; মুসলিম, হাদিস নং- ৪০৮৫
[156] সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৯৯
[157] আহমাদ, তিরমিযী ও হাকেম।
[158] আবূ দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
[159] আবূ দাউদ রহ. হাদিসটি ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[160] ইমাম বুখারী রহ. হাদিসটি ‘আম্মার ইবন ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে ‘মাওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন; আর আহমাদ রহ. ‘মারফূ‘’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন (এখানে উল্লেখিত শব্দগুলো আহমাদ রহ. এর বর্ণনা)।
[161] খারায়েত্বী ও ত্ববারানী।
[162] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ১৩
[163] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭৮
[164] সূরা আন-নূর, আয়াত: ২২
[165] সূরা আন-নূর, আয়াত: ১৯
[166] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৫৭
[167] হাকেম।
[168] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৬০
[169] তিরমিযী, আহমাদ আবূ দাউদ।
[170] বুখারী, হাদিস নং- ৬৬৩৫
[171] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ২
[172] সূরা আ-নিসা, আয়াত: ৮৫
[173] মুসলিম, হাদিস নং- ৭০২৮
[174] বুখারী, হাদিস নং- ১৩৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৬৮৫৮
[175] আহমাদ, আবূ দাউদ, নাসায়ী ও হাকেম এবং সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।
[176] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯
[177] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫
[178] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৩
[179] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৮
[180] সূরা আল-মুজাদালা, আয়াত: ২২
[181] সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ৮
[182] ত্ববারানী ও হাকেম এবং হাদিসটি সহীহ।
[183] আহমাদ ও ইবনু মাজাহ এবং হাদিসটি সহীহ।
[184] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৭৩৭
[185] খতিব এবং হাদিসটি দুর্বল।
[186] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৫
[187] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৫০
[188] সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ১০
[189] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২১
[190] সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৫
[191] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৫১
[192] বুখারী, হাদিস নং- ৬৫২৭; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৭৮০
[193] মুসলিম (হাদিস নং- ৫৭৮০), আবূ দাউদ (হাদিস নং- ৫২০৫) ও ত্ববারানী।
[194] আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২ / ৫০; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৪০৩৩
[195] বুখারী, হাদিস নং- ৫৫৫৩; মুসলিম, হাদিস নং- ৬২৫
[196] বুখারী, হাদিস নং- ৩২৭৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬৩২
[197] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬৩১
[198] আহমাদ, আল-মুসনাদ, হাদিস নং- ১৭৫৮৪
[199] ত্ববারনী রহ. হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী রহ. ভিন্ন শব্দে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
[200] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৯২৪
[201] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৬৭৭ এবং তিনি হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[202] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৬৭৭ এবং তিনি হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[203] মুসলিম, হাদিস নং- ৫১৬৭
[204] বুখারী, হাদিস নং- ৩২৯৫
[205] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৬৭৭ এবং হাদিসটি সহীহ।
[206] বুখারী, হাদিস নং- ৩১৩৬; মুসলিম, হাদিস নং- ২৯১৯
[207] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬৭৪
[208] সূরা আল-, আয়াত:
[209] বুখারী, হাদিস নং- ২২৪২, ২৭০৫ ও ৩৪৪৬

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন