লেখক: ড. খালিদ আবু শাদি | অনুবাদক: হাসান মাসরুর
১. আজকেরআলোচ্য বিষয়ের ফায়দা
- সাধারণভাবে তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম ব্যক্তি: রাসুল (সা:) বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যিনি কুরআন মাজিদ শিক্ষা করেন এবং (লোকদের) তা শিক্ষা দেন।‘ [সহিহুল বুখারি: ৫০২৭]
এ কারণটিই সম্ভবত নবিজি (সা:)-এর এই বাণীতে উল্লেখ করা হয়েছে: ‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দেবে, সে তার সাওয়াব পাবে, যতক্ষণ তা তিলাওয়াত করা হবে।‘ [আল-জামিউস সহিহ লিস সুনান ওয়াল মাসানিদ: ৬/৩৪৬]
- তোমার প্রকৃত মর্যাদা: রাসুল (সা:) বলেন: ‘আমার উম্মতের মাঝে সর্বোত্তম হলো কুরআনের বাহকগণ এবং রাতের লোকজন (রাত জেগে ইবাদতকারীগণ)।‘ [শুআবুল ইমান: ২৪৪৭]
- যাদের নিয়ে ঈর্ষা করা যায়: হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল বলেন: ‘দুটি বিষয়ে কেবল ঈর্ষা করা যায়। (একটি হলো) এমন ব্যক্তি, যাকে মহান আল্লাহ কুরআনের জ্ঞান দান করেছেন—সে তদনুযায়ী রাত-দিন আমল করে। (আরেকটি হলো) এমন ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তাআলা অর্থ-সম্পদ দান করেছেন—সে রাত-দিন তা (আল্লাহর পথে) খরচ করে।‘ [সহিহু মুসলিম: ৮১৫]
- কুরআন পরিত্যাগ হৃদয়ে খারাপি তৈরি করে: রাসুল (সা:) বলেন: ‘যার হৃদয়ে কুরআনের কিছুই নেই, সে বিরান ঘরের মতো।‘ [সুনানুত তিরমিজি: ২৯১৩, মুসনাদু আহমাদ: ১৯৪৭]
সে বিরান ঘরের মতো, যাতে কোনো উপকার নেই। তার প্রতি কেউ ফিরেও তাকায় না এবং তার কোনো গুরুত্ব বা ফায়দা কোনোটিই থাকে না।
- দুই সুপারিশকারী: রাসুল (সা:) বলেন: ‘সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, “হে আমার রব, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও কামনাবাসনা (যৌনকর্ম) থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।” আর কুরআন বলবে, “আমি তাকে রাতের বেলা নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।”” নবিজি বলেন, ‘অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।‘ [মুসনাদু আহমাদ: ৬৬২৬]
- আল্লাহর বিশেষ বান্দা: রাসুল (সা:) বলেন: ‘কুরআন তিলাওয়াতকারীগণ আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।‘ [মুসনাদু আহমাদ: ১২২৯২]
২. কুরআনের আলো
আল্লাহ তাআলা বলেন: “এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন উপদেশ গ্রহণ করে।” [সুরা সাদ, ৩৮:২৯]
ইমাম সাদি (রা:) তার তাফসির-গ্রন্থে বলেন: অর্থাৎ এমন কিতাব, যাতে অনেক কল্যাণ ও বিপুল ইলম রয়েছে।
অর্থাৎ তা অবতীর্ণের পেছনে এই হিকমত। মানুষ যেন তার আয়াতগুলো অনুধাবন করে। এরপর তা থেকে ইলম আহরণ করে এবং তার রহস্য ও প্রজ্ঞাসমূহ নিয়ে গবেষণা করে।
কারণ, কুরআনের অর্থসমূহ বেশি বেশি অনুধাবন ও চিন্তাভাবনা এবং বারবার তা নিয়ে ফিকির করার মাধ্যমে তার বরকত ও কল্যাণ উপলব্ধি করতে পারবে । আর এই কারণেই কুরআন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। আর এটিও সর্বোত্তম কাজের অন্তর্ভুক্ত।
এ কারণেই আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ বলেন, “তোমরা কুরআনকে নিম্নমানের খেজুর ঝাড়ার মতো ঝেড়ো না এবং কবিতা আবৃত্তির মতো তা আবৃত্তি করো না। বিস্ময়কর স্থানে থামো এবং তার মাধ্যমে হৃদয়কে নাড়া দাও। আর তোমাদের কারও যেন সুরার শেষ পর্যন্ত (তাড়াতাড়ি করে) পাঠ করার চিন্তা না থাকে।’
মুসনাদে আহমাদে আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণিত, (তাঁকে বলা হলো, কিছু মানুষ একরাতে একবার বা দুবার কুরআন পাঠ করে।) তিনি বললেন, “তারা পাঠ করেও করেনি। আমি রাসুল -এর সাথে পুরো রাত ছিলাম। তিনি সুরা বাকারা, সুরা আলে ইমরান ও সুরা নিসা পাঠ করতেন। আর যখনই কোনো ভয়ের আয়াত পাঠ করতেন, তখন আল্লাহর কাছে দুআ করতেন এবং আশ্রয় প্রার্থনা করতেন । আর যখনই কোনো সুসংবাদ-সম্বলিত আয়াত পাঠ করতেন, তখন আল্লাহর কাছে তার জন্য দুআ করতেন এবং সে ব্যাপারে উৎসুক হতেন।’
৩. রাসুল (সা:) আমাদের আদর্শ
উকবা বিন আমির (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন রাসুল (সা:) আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা সুফফাহ বা মসজিদের চত্বরে অবস্থান করছিলাম। তিনি বললেন: ‘তোমাদের কেউ কি চাও যে, প্রতিদিন বুতহান বা আকিকের বাজারে যাবে এবং সেখান থেকে কোনো পাপ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা ছাড়াই বড় কুঁজ বা চুঁটবিশিষ্ট দুটি উটনী নিয়ে আসবে?” আমরা বললাম, “হে আল্লাহর রাসুল, আমরা তা চাই।” তিনি বললেন, “তাহলে কি তোমাদের কেউ মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দুটি আয়াত শিক্ষা দেবে না, কিংবা পাঠ করবে না? এটি তার জন্য ওইরূপ দুটি উটনীর চেয়েও উত্তম। এরূপ তিনটি আয়াত তিনটি উটনীর চেয়েও উত্তম এবং চারটি আয়াত চারটি উটনীর চেয়েও উত্তম । আর অনুরূপ সমসংখ্যক উটনীর চেয়ে তত সংখ্যক আয়াত উত্তম।‘ [সহিহু মুসলিম: ৮০৩]
- উহুদ যুদ্ধে যখন নবিজি (সা:) স্বাভাবিক হলেন, তখন শহিদ সাহাবিদের দাফনের কাজ শুরু করলেন। তিনি একই কবরে দুজন কিংবা তিনজন করে রাখতেন। যখন তাদেরকে কাছে নিয়ে আসা হতো, তখন জিজ্ঞেস করতেন, ‘তাদের মাঝে কে সবচেয়ে বেশি কুরআন তিলাওয়াতকারী?’ [মুসনাদু আহমাদ : ২৩৬৬০] যার ব্যাপারে বলা হতো, তাকেই আগে কবরে রাখতেন।
৪. অমূল্য বাণী
- আবু উমামা আল-বাহিলি (রা:) বলেন, ‘তোমরা কুরআন পাঠ করো; কুরআনের লিখিত এ কপি যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে (অর্থাৎ কুরআন তো লিখিত আছে, তা মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই)। কারণ, আল্লাহ তাআলা এমন হৃদয়কে শাস্তি দেবেন না, যা কুরআনের সংরক্ষণস্থল।
- ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই যেন নিজেকে কুরআনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। যদি সে কুরআনকে ভালোবাসে এবং কুরআন তাকে মুগ্ধ করে, তাহলে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে। আর যদি সে কুরআনকে অপছন্দ করে, তাহলে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অপছন্দ করে।’
- আবু হুরাইরা (রা:) এ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে বাড়িতে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তার অধিবাসীরা প্রশস্ততা লাভ করে; সেখানে অধিক পরিমাণ কল্যাণ নাজিল হয় এবং সেখানে ফেরেশতারা উপস্থিত হয়; সেখান থেকে শয়তান বের হয়ে যায়। আর যে বাড়িতে আল্লাহর কিতাবের তিলাওয়াত করা হয় না, তার অধিবাসীদের ওপর সংকীর্ণতা নেমে আসে; (সেখানে) কল্যাণ কমে যায়; সে ঘর থেকে ফেরেশতারা বের হয়ে যায় এবং শয়তান সেখানে উপস্থিত হয়।
- আনাস বিন মালিক (রা:) বলেন, ‘অনেক কুরআন তিলাওয়াতকারী আছে,কুরআন যাদেরকে লানত করে।’
- ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, ‘কুরআনের বাহকের জন্য রাতের ব্যাপারে কুরআনকে জানা উচিত, যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে; দিনের ব্যাপারে জানা উচিত, যখন মানুষ সীমালঙ্ঘন করে এবং পেরেশানির ব্যাপারে কুরআনকে জানা উচিত, যখন মানুষ আনন্দিত হয়; কান্নার ব্যাপারে জানা উচিত, যখন মানুষ হাসি-ঠাট্টা করে; নীরবতার ব্যাপারে জানা উচিত, যখন মানুষ শোরগোলে লিপ্ত হয়; তার বিনয়ের ব্যাপারে জানা উচিত, যখন মানুষ গর্ব করে। কুরআনের বাহকের জন্য শান্ত ও স্থির হওয়া উচিত এবং তার জন্য শুষ্ক, তর্কবাজ, শোরগোলকারী এবং পাথরের মতো কঠিন হওয়া উচিত নয়।
- ইমাম আবু হামিদ গাজালি (রা:) বলেন, ‘তুমি কি এ ব্যাপারে লজ্জা করো না যে, তোমার বন্ধুর পক্ষ থেকে তোমার কাছে একটি চিঠি এসেছে। তুমি তখন রাস্তায় ছিলে; তাই রাস্তায় চলাকালীন নিজের যাত্রাবিরতি দিয়ে চিঠি পড়তে বসে গেলে । তুমি খুব গভীরভাবে তা পাঠ করছ এবং অক্ষরে অক্ষরে তা চিন্তা করছ; যেন তার কোনো বিষয় ছুটে না যায়। অথচ এই তো আল্লাহর কিতাব তোমার কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি তোমাকে অবকাশ দিয়েছেন। তোমার জন্য তাঁর কথাগুলো ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। তোমার সামনে তা বারবার পাঠ করা হচ্ছে; যেন তুমি তা নিয়ে চিন্তা-ফিকির করো। কিন্তু এরপরেও তুমি বিমুখ হয়ে আছ!! আল্লাহ তাআলা কি তোমার কাছে তোমার বন্ধুর চেয়েও তুচ্ছ?!
তোমার সাক্ষাতে তোমার সে বন্ধু আগমন করেছে; ফলে তুমি নিজের পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকে সংবর্ধনা জানাচ্ছ এবং তার প্রতিটি কথা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করছ। এমন সময় যদি কেউ তোমার সাথে কথা বলতে চায় বা তোমাকে অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত করতে চায়, তাহলে তাকে হাত দ্বারা ইশারা করে বিরত থাকতে বলো। আর এই তো আল্লাহ তাআলা তোমার দিকে এগিয়ে আসছেন এবং তোমার সাথে কথা বলছেন; কিন্তু তুমি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করছ এবং বিমুখ হয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে আছ ! তিনি কি তোমার কাছে একজন সামান্য সৃষ্টির চেয়ে বেশি তুচ্ছ?
৫. কিছু চমৎকার কাহিনি
- দুনিয়া ও আখিরাতের মর্যাদা: নাফি’ বিন আব্দুল হারিস থেকে বর্ণিত, তিনি উমর (রা:) এ-এর সাথে আসফানে সাক্ষাৎ করলেন। উমর (রা:) কর্মকর্তা নিযুক্ত করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি উপত্যকাবাসীর জন্য কাকে নিযুক্ত করব।’ সে বলল, “ইবনে আবজাকে।’ তিনি বললেন, “ইবনে আবজা কে?” সে বলল, ‘আমাদেরই এক গোলাম।’ তিনি বললেন, ‘আমি তাদের জন্য একজন গোলামকে নিযুক্ত করব!’ সে বলল, ‘নিশ্চয় সে আল্লাহর কিতাবের একজন কারি এবং ফারায়িজ সম্পর্কে জ্ঞাত ।’ উমর (রা:) বলেন, “নিশ্চয় তোমাদের নবি বলেছেন: ‘আল্লাহ তাআলা এই কিতাবের মাধ্যমে একদলকে সম্মানিত করবেন এবং অপর একদলকে অপদস্থ করবেন।’ [সহিহু মুসলিম: ৮১৭, সুনানু ইবনি মাজাহ: ২১৮]
- আল্লাহর সীমানার সামনে থেমে যাও: ইনি হলেন উয়াইনা বিন হাসান আল-ফাজারি। তিনি নিজ ভাই হুর বিন কাইসের কাছে এসে বললেন, ‘এই লোকটির (উমর (রা:)-এর) নিকট তোমার বিশেষ এক মর্যাদা রয়েছে। তাই আমার জন্য তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাও।’ তাকে উমরের কাছে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হলো। উয়াইনা ছিলেন কঠোর ও রূঢ় প্রকৃতির মানুষ। তিনি উমরের (রা:) কাছে প্রবেশ করে বললেন, ‘হে খাত্তাবের বেটা, আল্লাহর শপথ, তুমি আমাদেরকে কিছু দান করছ না এবং আমাদের মাঝে ইনসাফও প্রতিষ্ঠা করছ না।’ এ কথা শুনে উমর রেগে গেলেন এবং তাকে বন্দী করতে চাইলেন। তখন হুর বিন কাইস বললেন, “হে আমিরুল মুমিনিন, আল্লাহ তাআলা তাঁর নবিকে আদেশ করেছেন: “ক্ষমা করো, সৎকাজের আদেশ করো এবং জাহিলদের এড়িয়ে চলো।” [সুরা আল-আরাফ, ৭ : ১৯৯]
আর এই লোকও ছিল জাহিলদের অন্তর্ভুক্ত।’ হুর বিন কাইস বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, উমর (রা:) এই আয়াতের সামনে বাড়েননি। তিনি আল্লাহর কিতাবের এই বাণী শুনে থেমে গিয়েছিলেন।’
- কীভাবে তাদের চেনা যাবে!
সহিহ বুখারিতে আশআরিদের থেকে বর্ণিত আছে, দাউদ (রা:)-এর কণ্ঠস্বরের অধিকারী আবু মুসা আল-আশআরি (রা:)-এর গোত্রের ব্যাপারে বর্ণনাকারী বলেন যে, ‘যখন তারা মদিনায় অবতরণ করত, তখন কুরআনের আওয়াজের মাধ্যমে মানুষ তাদের আগমনের বিষয় জেনে যেত । তিনি বলেন, “আমি মদিনায় আশআরিদের আগমন এবং অবস্থান-স্থল সম্পর্কে জানতে পারি; যদিও তাদেরকে তখনো দেখিনি। যে আলামতের মাধ্যমে আমি আশআরিদের না দেখা সত্ত্বেও মদিনায় তাদের উপস্থিতি বুঝতে পারি, তা হলো মৌমাছির গুনগুন আওয়াজের ন্যায় রাতের বেলায় ক্রন্দনসুরে তাদের কুরআন তিলাওয়াত।”
তারা কুরআনের সাথে রাত জাগরণ করত এবং তাদের রবের ইবাদত করত; কিন্তু বর্তমানে রাতের বেলায় আমাদের পরিচিতির আলামত কী?!
৬. রমাদানে কুরআন
রমাদান হলো সে মাস, যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়েছিল। বরং প্রতিটি আসমানি কিতাবই রমাদানে নাজিল হয়েছিল। এ ব্যাপারে রাসুল (সা:) সংবাদ দিয়ে বলেন: ‘ইবরাহিম -এর সহিফাগুলো রমাদানের প্রথম রাত্রিতে নাজিল হয়েছিল।’ তাওরাত নাজিল হয়েছিল রমাদানের ষষ্ঠ দিনে ৷ ইনজিল নাজিল হয়েছিল রমাদানের তোরোতম রজনীতে। জাবুর নাজিল হয়েছিল রমাদানের আঠারোতম দিবসে আর কুরআন নাজিল হয়েছিল রমাদানের চব্বিশতম দিবসে।‘ [তাবারানি কৃত আল-মুজামুল কাবির: ১৮৫]
সুতরাং রমাদান হলো কুরআনের মাস। জিবরাইল রমাদানের প্রতিরাতে নবিজি (সা:)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তাঁরা পরস্পরকে কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। রমাদানেই মানুষ বেশি বেশি কুরআন পাঠ করে এবং শ্রবণ করে। মসজিদে মসজিদে কুরআনের খতম হয়। রাস্তাঘাট ও যানবাহনগুলো কুরআনের বাহকদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। তারা কুরআন পাঠ করে এবং তা খতম করে। তাদের কেউ এক খতম করে, কেউ দুই খতম করে আর কেউ বা আল্লাহর তাওফিকে আরও বেশি বার খতম করে।
৭. কুরআনের সূর্য ডুবে গেছে
মানুষ কুরআন পরিত্যাগ করেছে। ফলে মানুষ শুধু রমাদান মাসেই কুরআন নিয়ে বসে এবং বাকি পুরো বছর তা ছেড়ে রাখে। তবে কুরআন পরিত্যাগ কয়েক প্রকার হতে পারে। সুতরাং দেখে নিন, আপনি কোন প্রকারে পতিত হয়েছেন; যেন সতর্ক হতে পারেন :
- কুরআন শ্রবণ পরিত্যাগ করা এবং তার প্রতি মনোনিবেশ ছেড়ে দেওয়া।
- কুরআনের ওপর আমল করা এবং তার হালাল ও হারামের ওপর আমল করার বিষয়টি পরিত্যাগ করা।
- দ্বীনের মৌলিক ও শাখাগত বিষয়গুলোতে তার কাছে বিচার পরিত্যাগ করা।
- কুরআন বোঝা ও অনুধাবন পরিত্যাগ করা।
- হৃদয়ের সব রোগ ও তার চিকিৎসায় কুরআনের মাধ্যমে সুস্থতা কামনা করা এবং তার মাধ্যমে চিকিৎসা পরিত্যাগ করা । অন্যের কাছে রোগের চিকিৎসা প্রার্থনা করা আর কুরআনকে পরিত্যাগ করে রাখা।
৮. দুআ
‘হে আল্লাহ, আমি আপনার বান্দা, আপনার বান্দার পুত্র, আপনার দাসীর পুত্র। আমি আপনার নিয়ন্ত্রণে, আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা চূড়ান্ত। আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায়সংগত। আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আপনার সেসব নামের অসিলায়, যে নামে আপনি নিজেকে অভিহিত করেছেন, অথবা আপনি আপনার কিতাবে যা নাজিল করেছেন বা আপনি আপনার সৃষ্টির কাউকে শিক্ষা দিয়েছেন, অথবা আপনি গাইবের পর্দায় তা আপনার কাছে অদৃশ্য রেখেছেন। আপনি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত, সিনার নুর, দুঃখ ও পেরেশানি দূর করার মাধ্যম বানিয়ে দিন।’
৯. স্বার্থপর হবেন না
- আপনার আশপাশের লোকদেরকে পার্শ্ববর্তী সে মসজিদে নিয়ে যান, যেখানকার ইমামের তিলাওয়াত সুন্দর এবং হৃদয়গ্রাহী।
- এই বইটি নিজে পাঠ করে অন্যদেরকেও পড়তে দিন; যেন তারা এর থেকে উপকৃত হতে পারে।
- মসজিদের ইমামকেও বইটি হাদিয়া দিতে পারেন; যেন তিনি জুমআর খুতবা বা তারাবিহ-পরবর্তী আলোচনায় এর থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারেন।
১০. যথেষ্ট কথা হয়েছে, এখন আমল দেখার বিষয়
আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে ইয়াহইয়া, দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ ধারণ করো।” [সুরা মারইয়াম, ১৯:১২]
এই দৃঢ়তার অন্তর্ভুক্ত হলো নিম্নের বিষয়গুলো:
- আমরা রমাদানে নতুন নিয়তে কুরআন খতম করব। নতুন নিয়ত হলো, রমাদানের পর আবার কুরআন পড়ব।
- গভীর অনুধাবনের সাথে কুরআন তিলাওয়াতের ব্যাপারে উৎসুক হব । যেন আমরা জানতে পারি যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন।
- মসজিদে তিলাওয়াতের মজলিশ থেকে আমরা কুরআন তিলাওয়াতের বিধিবিধান শিখব ।
- অন্যদেরকেও আমরা কুরআন তিলাওয়াতের বিধান শিক্ষা দেবো। রমাদানকে আমরা গনিমত মনে করব এবং শেষ দশকে ইতিকাফ করব।
- আপনি কি প্রতিদিন নিজের বিশ্রামের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে রাখেন না? আপনি কি নিজের পরিবারের স্বার্থে প্রতিদিন তাদের সাথে নির্দিষ্ট একটি সময় অতিবাহিত করেন না? আপনি নিজের প্রশান্তির জন্য সাথিদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেন না? আর এসব কিছু থেকে কুরআন ও তার শিক্ষা আপনার কাছে হালকা মনে হচ্ছে? তাহলে আপনার অবস্থান কী? আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন। আমি দুআ করি, আপনি কুরআনের ডাকে সাড়া দিন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি আপনাকে তাঁর পছন্দনীয় ও প্রিয় জিনিসের তাওফিক দান করুন ৷
উৎস: রমাদান-আত্মশুদ্ধির বিপ্লব, পৃষ্ঠা: ৬৪ – ৭৬
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]