আন্দালুসের ছাত্র পর্ব: ২

0
347

লেখক: ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী | অনুবাদক: রাশেদুল আলম

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

নাকি ইবনে মাখলাদ রহিমাহুল্লাহ দেখলেন আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ থেকে ইলম হাসিলের অন্য এটা ব্যতীত অন্য কোনাে পথ নেই। তাই তিনি কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে, হাতে লাঠি ও থালা নিয়ে জীর্ণশীর্ণ পােশাকে ফকিরের বেশে প্রতিদিন আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহর নিকট আসতেন এবং বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডাকতেন- আমাকে কিছু সাহায্য দিন, আমাকে কিছু খাবার দিন, আল্লাহ তাআলা আপনার উপর রহম করবেন।

আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ তখন দরজা খুলে তাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে খাবার দিতেন এবং হাদিস বর্ণনা করতেন। তিনি চার পাঁচটা হাদিস বর্ণনা করতেন আর নাকি রহিমাহুল্লাহ তখনই তা মুখস্থ করে নিতেন। লেখার মত কোনাে সুযােগ ছিলাে না। হাদিস মুখস্থ শেষ হলে সেখান থেকে বের হয়ে যেতেন। এই অবস্থায় অনেক দিন কেটে গেল। অতঃপর খলিফা ওয়াসিক আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহকে গৃহবন্দি থেকে মুক্তি দিল এবং তার কাছে হাদিয়া পাঠাল। আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ তার হাদিয়া গ্রহণ করলেন না। বন্দি জীবন থেকে মুক্তির পর আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ আবারও দরস শুরু করলেন। নাকি ইবনে মাখলাদ রহিমাহুল্লাহও তার দরসে উপস্থিত হতেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ তাকে চিনতেন এবং তাঁর কদর জানতেন। তিনি তাে জানতেন এই ছেলেটি ইলম-পাগল, ইলমের জন্যে প্রাণােৎসর্গকারী, তাই তিনি দরসে তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব ও বিশেষ মর্যাদা দিতেন।

একদিন ইমাম আহমদ রহিমাহুল্লাহ দেখলেন তাঁর প্রিয় ছাত্র নাকি দরসে উপস্থিত নেই। তখন তিনি অন্যান্য ছাত্রদেরকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞে করলেন। তারা বললাে, সে অসুস্থ। নাকি ইবনে মিলাদ রহ. সত্যি অনেক অসুস্থ ছিলেন, তাই তিনি হােটেলের একটি কামরা ভাড়া করে সেখানে অবস্থান করছিলেন। নাকি রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি যখন অসুস্থ অবস্থায় হােটেলে অবস্থান করছিলাম তখন হঠাৎ একদিন হােটেলের ভিতর অনেক শােরগােলের আওয়ায শুনতে পেলাম। কেউ বলছে, হ তিনি এসেছেন, তিনি এখানে আছেন, এই দিকে আসেন, এই তােমরা এমন কর ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের আওয়ায। আমি কামরার ভিতর থেকে । ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে, বাহিরে কী হচ্ছে ? তারা কাকে নিয়ে কথা বলছে, আর কে এসেছে? একটু পর দেখি আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ আমাকে দেখতে এসেছেন।

তিনি বলেন, আহমদ রহিমাহুল্লাহ আমাকে দেখতে এসেছেন এবং তার সাথে অনেক ছাত্র এসেছে। তিনি কামরায় প্রবেশ করে আমার কাছে আসলেন এবং আমার মাথায় হাত রাখলেন আর ছাত্ররা এই দৃশ্য দেখছে এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহকে দেখে রােগী দেখার সুন্নত ও আদব শিখে নিচ্ছে। ইবনে জাওযি রহিমাহুল্লাহ বলেন, আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহর দরসে পনের হাজার ছাত্র উপস্থিত হত। তাদের মধ্যে পাঁচ হাজার হাদিস লিখতাে আর দশ হাজার তার নিকট থেকে উসলুব-পদ্ধতি শিখত। অর্থাৎ কীভাবে হাদিস বর্ণনা করতে হয়, কীভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তারা তাঁর আখলাক, চলাফেরা দেখতাে ও অনুসরণ করার চেষ্টা করতাে। তারা তার হাদিসের হাফেয ছিল। নাকি ইবনে মাখলাদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, আহমদ রহিমাহুল্লাহ আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, তুমি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ কর এবং সাওয়াবের আশা কর, হয়তাে আল্লাহ তাআলা তােমাকে অনেক সাওয়াব দান করবেন। তিনি আমার সাথে কথা বলছেন আর ছাত্ররা সবকিছু লিখে রাখল। তিনি চলে যাওয়ার পর হােটেলের মালিক আমার কাছে আসল এবং আমাকে বললাে, আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক কী? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ তার সাথে আমার কোনাে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই; কিন্তু আমি তার একজন ছাত্র। তিনি আমাকে অনেক মুহাব্বত করেন। হােটেলের মালিক বললাে, তাহলে আপনি আজ থেকে আমার হােটেলে ফ্রি থাকবেন। এরপর একজন আমার নিকট বিছানা নিয়ে এলাে, একজন খাবার নিয়ে এলাে, একজন পানি নিয়ে আসলাে। আল্লাহর শপথ, এরপর থেকে তারা আমার পরিবারের চেয়েবেশি সেবা-যত্ন করতে লাগল। আমি যদি আমার পরিবারের নিকটও থাকতাম তারা আমাকে নিয়ে এতটা ব্যস্ত হতাে না। হা এটাই হল ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহর মর্যাদা আর এই হল তার কাছ থেকে ইলম অর্জনেনাকি ইবনে মাখলাদ রহিমাহুল্লাহরমর্যাদা।

আমাদের সালাফগণ ইলম অর্জনের পথে সব ধরনের কষ্ট ও ক্লান্তি হাসিমুখে মেনে নিতেন। আর মানুষও তালেবে ইলমদের যথাযথ মর্যাদা। ও কদর করতাে; কিন্তু বর্তমানে সমস্যা হল অনেক মানুষ তালেবে ইলমদের ইলম অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং শরয়ি ইলম অর্জন করার ব্যাপারে তাদের নিরুৎসাহিত করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছেন বিষয়টি যেনাে ঠিক তেমনই হয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন – ‘নিশ্চয় কিয়ামতের পূর্বে এমন দিন আসবে যখন ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং জাহালাত (মুখ) নামিয়ে দেওয়া হবে।’

বুখারিতে হাদিসটি এভাবে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ‘নিশ্চয় কিয়ামতের পূর্বে এমন দিন আসবে যখন ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং জাহালাত (মূখ) ছাড়িয়ে দেওয়া হবে।’

অর্থাৎ কিয়ামতের পূর্বে মানুষের মধ্যে জাহালাত ছড়িয়ে যাবে। এখন তাে মানুষ এমনসব বিষয়ে প্রশ্ন করে যা শুনে আশ্চর্য হতে হয় যে, এমন বিষয়ও কারাে অজানা থাকতে পারে? তুমি দেখবে যে, তােমাকে তাহারাত বা ওযুর মাসআলা জিজ্ঞেস করছে অথচ সে একজন বয়স্ক লােক, এই মাসআলাগুলাে তার এমনেই জানা থাকা দরকার ছিল। তােমাকে সালাতের এমন একটা মাসআলা জিজ্ঞেস করবে যে, তুমি আশ্চর্য হয়ে তাকে বলবে, আরে ভাই আপনার চল্লিশ বছর হয়ে গেল এখনও এই মাসআলাটা জানেন না, এটা জানেন না যে, সালাতে এই বিষয়টা ভুল, এটা সুন্নত আর এটা সঠিক!!

আর আফসােসের সাথে বলতে হয়, বর্তমানে মানুষ ইলমে শরয়ি থেকে সম্পূর্ণভাবে বিমুখ থাকছে। বর্তমানে দীনের ইলম ব্যতীত মানুষকে তুমি অন্যসব বিষয়ে দক্ষ দেখতে পাবে। তারা কম্পিউটার শিখে এবং তার খুঁটিনাটি সব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে। তারা গাড়ি চালানাে শিখে ও তার অন্যান্য সব বিষয় সম্পর্কে জানে। মােবাইল সংক্রান্ত যেকোনাে সমস্যা তােমার পাশের কাউকে জিজ্ঞেস করলে সে তােমাকে এর সমাধান দিবে। অতঃপর তুমি যদি তাকে বল মা-শা-আল্লাহ! তােমার তাে দেখছি অনেক জ্ঞান। তুমি কম্পিউটারের সব বিষয় সম্পর্কে জান, মুবাইলের সব বিষয় সম্পর্কে জান; আচ্ছা তুমি কি আল্লাহুস সামাদ’-এর অর্থ জান? তুমি কি গাসিকিন ইযা ওয়াকাব’-এর অর্থ জান? তুমি কি জানাে চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতে কেউ যদি শেষ রাকাতে না বসে দাড়িয়ে যায় তাহলে সে কী করবে? সাহু সিজদা কখন দিতে হয়? সালামের আগে না পরে? তুমি দেখবে সে বলছে আমি জানি না!!

আমাদের সালাফদের নিকট ইলম অর্জন এত সহজ ছিলাে না, ইলম অর্জন ছিলাে অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তা সত্যেও তারা ইলম অর্জন করেছেন। তারা ইলমের জন্যে সারা দুনিয়া সফর করেছেন। অতঃপর ইলমের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হয়েছেন। তারা ইলম অর্জনের জন্যে দীর্ঘপথ সফর করতেন, অনেক মরুভূমি ও উপত্যকা পাড়ি দিতেন। কখনাে কখনাে মরুভূমিতে পথ হারিয়ে এদিক সেদিক ঘােরাঘুরি করতেন। কখনাে ক্লান্তিতে যমিনের উপর পড়ে যেতেন। কেউ কেউ তাে ইলম অর্জনের জন্যে বের হয়ে পথিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করতেন। এবিষয়ে তাে একটি কিতাবই রচিত হয়েছে, “আর রিহলাতু ফি তালাবিল হাদিস ও ফি তালাবিল ইলম”।তারা এটাকে কোনাে সমস্যাই মনে করেননি বরং তাঁরা ইলম অর্জনের জন্যে নিজের সবকিছুই বিলিয়ে দিতেন।

বর্তমানে আমাদের জন্যে ইলম অর্জন করা অনেক সহজ। ইলমে শরয়ি অর্জন করা আরাে বেশি সহজ। বর্তমানে অনেক কম দামে কিতাব পাওয়া যায়। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে তাে এগুলাে ফ্রি বিতরণ করা হয়। ইন্টারনেটে খুব সহজে দীনি বই পাওয়া যায়। অনেক লাইব্রেরি রয়েছে। অনেক এলাকায় পাবলিক পাঠাগার আছে। মানুষ চাইলে খুব সহজেই ইলম অর্জন করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে ইলম শিক্ষার মজলিস হয়, ইলম শিক্ষার কোর্স হয়। এর মাধ্যমে মানুষ খুব সহজে ইলম অর্জন করতে পারে। মােটকথা বর্তমানে ইলম অর্জন না করার ক্ষেত্রে কোনাে ধরনের বাধা নেই, কোনাে প্রতিবন্ধকতা বা ওজর নেই। হাঁ এটা পূর্বে ছিলাে; কিন্তু এখন নেই, কারণ পুর্বে তাঁরা অনেকেই লিখতে জানতাে না, তাদের কাছে ইলম অর্জনের জন্যে কিতাব ছিলাে। না; কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি অনেক সহজ হয়েছে, এর চেয়ে আর সহজ হয় না; কিন্তু মানুষ এখন ইলম থেকে বিমুখ থাকছে। বাবারা ছেলেদেরকে শরয়ি ইলম শিখাচ্ছে না, মায়েরা ছেলে-মেয়েদের ইলমে দীন শিখার উপর উদ্বুদ্ধ করছে না।

একটি মজার ঘটনা বলে আজকের আলােচনা শেষ করছি। ঘটনাটি ঘটেছিলাে আ’মাশ রহিমাহুল্লাহ ও তাঁর এক ছাত্রের মধ্যে। আ’মাশ রহিমাহুল্লাহর নিকট দূর দেশ থেকে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এক ছাত্র হাদিস শিখার জন্যে আসলাে। সে এসে আমাশ রহিমাহুল্লাহর সাথে মসজিদে মাগরিবের সালাত আদায় করল, অতঃপর দরসে বসার ইচ্ছা করল। তখন আ’মাশ রহিমাহুল্লাহর এক ছাত্র তাঁকে বললাে, আজ দরস হবে না। সে বললাে, কেনাে? আমি আমার পরিবার পরিজন ছেড়ে এত দূর দেশে থেকে এসেছি অথচ আজ তিনি হাদিস বর্ণনা করবে না, আজ তার দরস হবে না এর কারণ কী? তারা বললাে, আজ শায়খ অত্যন্ত রাগান্বিত, আমরা তাঁকে এক অনুচিত প্রশ্ন করেছিলাম। ফলে সে কসম করেছে যে, আমাদেরকে এক মাস পর্যন্ত হাদিস বর্ণনা করবেন না। তখন সে বললাে, এক মাস হাদিস শুনা ছাড়া এমনি এমনি কাটিয়ে দিতে হবে? তারা বললাে হাঁ, আমরা এই সময়ে হাদিস লিখে বাড়িতে গিয়ে নিজ নিজ পরিবারের সাথে দেখা করে আসতে চাচ্ছি। তিনি তাে এক মাস পর্যন্ত হাদিস বর্ণনা করা বন্ধ রাখবেন। এই সুযোেগে আমরা আমাদের পরিবারের নিকট যাব।

তখন ছেলেটি আমাশ রহ.-এর নিকট গেল। আমাশ রহিমাহুল্লাহ চোখে কম দেখতেন, বিশেষ করে রাতে চোখে দেখতেন না। ছেলেটি তার নিকট গিয়ে বললেন, শায়খ! আমি অনেক দূর থেকে সফর করে এসেছি, সুতরাং আপনি আমার প্রতি একটু লক্ষ করুন। তখন তিনি বললেন, না এক মাস কোনাে হাদিস বর্ণনা করা হবে না, আমি কসম করেছি। অতঃপর আ’মাশ রা. লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। ছেলেটি তখন তাকে বললাে, শায়েখ আমি আপনাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আসি। তিনি বললেন, ঠিক আছে ভাল, আল্লাহ তাআলা তােমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। ছেলেটি তার হাত ধরে মসজিদ থেকে বের হল এবং তাঁকে নিয়ে বামে তার বাড়ির দিকে না নিয়ে ডানে মরুভূমির দিকে নিয়ে গেল। আমাশ রহিমাহুল্লাহ ছেলেটির সাথে হাঁটছে কিন্তু তিনি জানেন না যে, ছেলেটি তাঁকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? অনেক্ষণ হাঁটার পর আ’মাশ রহিমাহুল্লাহ ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা এখন কোথায় আসলাম? ছেলেটি তখন তাকে বলল, শায়খ! আমরা এখন মরুভূমিতে আছি। আপনি যদি আমাকে এই মুহূর্তে একশত হাদিস বর্ণনা না করেন তাহলে আমি আপনাকে এই মরুভূমির মধ্যে একা ফেলে চলে যাব। আপনি মরুভূমিতে একা একা থাকলে মৃত্যুবরণ করবেন। অতঃপর আগামীকাল আমরা আপনাকে হয়তাে কোনাে বাঘ অথবা সাপের পেট থেকে উদ্ধার করবাে। আপনি কি আমাকে একশত হাদিস বর্ণনা করবেন না-কি আমি আপনাকে এই মরুভূমিতে একা ফেলে চলে যাব? আমাশ রহিমাহুল্লাহ বললেন, তুমি আমার সাথে এমনটি করতে পার না, এটা হারাম। ছেলেটি তখন বললাে; বরং আপনি নিজেই নিজের উপর হারাম। আমি এত দূর দেশ থেকে কত কষ্ট করে আসলাম, আমি তাে আপনার সাথে কোনাে সমস্যা করিনি। অথচ আপনি আমাকে হাদিস থেকে বঞ্চিত রাখছেন? আমাশ রহিমাহুল্লাহ যখন দেখলেন তিনি এখন অপারগ, হাদিস বর্ণনা ছাড়া তাঁর সামনে আর কোনাে পথ নেই তখন বললেন, ঠিক আছে লিখাে, আমি হাদিস বর্ণনা করছি। এরপর ছেলেটি লিখতে লাগল আর শায়খ আ’মাশ রহিমাহুল্লাহ হাদিস বর্ণনা করলেন। এরপর ছেলেটি কাগজগুলাে সাথে নিয়ে শায়খকে তাঁর বাড়িতে পৌছে দিতে গেলেন।

তারা যখন শহরে প্রবেশ করল তখন ছেলেটি কাগজগুলাে তার এক সাথীর কাছে দিয়ে দিল। অতঃপর শায়খকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিল। তিনি যখন বাড়িতে পৌছলেন তখন বললেন, হে লােকেরা! তােমরা একে ধরাে, এই ছেলেটি চোর, দেখাে তার সাথে খাতা আছে। ছেলেটি তখন বললাে, শায়খ! আমার কাছে কোনাে খাতা নেই, আমি শহরে ঢুকেই তা এক সাথীর কাছে দিয়ে দিয়েছি। আ’মাশ রহিমাহুল্লাহ তখন বললেন, আমি তােমাকে যতগুলাে হাদিস বর্ণনা করেছি তার সবগুলােই যইফ (দুর্বল)। ছেলেটি তখন বলল, শায়খ আপনি এভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরব্যাপরে মিথ্যা কথা বর্ণনা করতে পারেন না। আ’মাশ রহিমাহুল্লাহ বললেন, হাঁ তুমি সত্য বলেছাে; কিন্তু আমি এখন তােমাকে বলছি তুমি হাদিসগুলাে মুছে ফেল, এগুলাে যইফ হাদিস। এরপর তিনি তাকে বললেন, এখন তােমার অন্তরও জ্বলতে থাক যেভাবে খানিক পূর্বে আমি কষ্ট পেয়েছি। বিভিন্ন কারণে তারা ছাত্রদের সাথে কখনাে কখনাে কৌশল করতেন।

আল্লাহ তাআলার নিকট আমার জন্যে এবং আপনাদের জন্যে প্রার্থনা করি, তিনি যেনাে আমাদের সকলকে উপকারী ইলম ও আমলে সালিহা (সৎকর্ম) করার তাওফিক দান করুন। আমিন!!

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

উৎস: আত্মবিশ্বাস, পৃষ্ঠা: ২২৮ – ২৩৪

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন