প্রশ্ন:
দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক নেক আমলগুলো কি কি?
উত্তর:
আলহামদুলিল্লাহ। এক: নেক আমল বা ইবাদতের পরিধি অতি বিস্তৃত। এখানে সব ইবাদত উল্লেখ করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য প্রশ্নকারী ভাই নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করতে পারেন: ইমাম মুনযিরির লিখিত ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’। এ গ্রন্থের হাদিসগুলো ‘সহিহ’ না ‘যয়িফ’ এই মান জানার জন্য এর সাথে শাইখ আলবানীর রচিত ‘সহিহুত তারগীব ওয়াত তারহীব’ এবং ‘যয়িফুত তারগীব ওয়াত তারহীব’ পড়তে পারেন।
ইমাম নববীর রচিত ‘রিয়াদুস সালেহীন’। বিশেষত রিয়াদুস সালেহীন এর ‘ফাযায়েল অধ্যায়’।
দুই: দৈনিক পালনীয় নেক আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে: পাঁচ ওয়াক্ত নামায, নামাযের জন্য ওযু করা, ওযু ও নামাযের সময় মিসওয়াক করা, জামাতের সাথে নামায আদায় করা, সুন্নত নামাযগুলো আদায় করা (ইশরাকের নামায, তাহাজ্জুদের নামায, বিতিরের নামায) সকাল-সন্ধ্যার যিকির-আযকার, দিবানিশির যিকির-আযকার (ঘরে প্রবেশের দোয়া, ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া, মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়া, টয়লেটে প্রবেশ ও টয়লেট থেকে বের হওয়ার দোয়া, পানাহারের দোয়া, ফরয নামাযের শেষে পঠিতব্য দোয়া), ইমামের সাথে আযানের শব্দাবলি উচ্চারণ।
সাপ্তাহিক নেক আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে: জুমার নামায আদায়, জুমাবার দিনে বা রাতে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা, জুমাবার দিনে বা রাতে বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পড়া, সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখা।
মাসিক নেক আমলের মধ্যে রয়েছে: প্রত্যেক মাসের তিনদিন রোযা রাখা (উত্তম হচ্ছে- বীযের দিনগুলোতে তথা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখা)।
বাৎসরিক বা মৌসুমি নেক আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে: রমযানের রোযা রাখা, মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে তারাবীর নামায আদায় করা, দুই ঈদের নামায আদায় করা, সামর্থ্য থাকলে হজ্জ আদায় করা, সামর্থ্যবান হলে যাকাত আদায় করা, রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করা, শাওয়ালের ছয় রোযা রাখা, আশুরার রোযা রাখা এবং সাথে একদিন আগে বা পরে আরও একটি রোযা রাখা, আরাফার দিন রোযা রাখা এবং যিলহজ্জের প্রথম দশদিন বেশি বেশি নেক আমল করা।
এছাড়াও কিছু আমল আছে যেগুলো বিশেষ কোন সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়; যে কোন সময় সে আমলগুলো করা যায়। এগুলোর মধ্যে কিছু আমল অন্তরের আমল; আর কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল। যেমন- মাকরুহ ওয়াক্ত ছাড়া অন্য যে কোন সময়ে নফল নামায আদায় করা, নফল রোযা রাখা, নফল উমরা আদায় করা, আল্লাহ্র যিকির করা, কুরআন তেলাওয়াত করা, দুরুদ পড়া, দোয়া করা, ইস্তিগফার করা, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, দান-সদকা করা, মুসলমানদের মাঝে সালামের প্রচলন করা, সচ্চরিত্র হওয়া, জিহ্বাকে পবিত্র রাখা, আল্লাহ্কে ভালবাসা, তাঁকে ভয় করা, তাঁর কাছে আশা করা, তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করা, তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, তাঁর প্রতি একীন রাখা এবং তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া।
এছাড়াও এমন কিছু আমল আছে যে গুলো বিশেষ কোন প্রেক্ষাপট কেন্দ্রিক; প্রেক্ষাপট পাওয়া গেলে সেসব আমল পালন করা শরিয়তসম্মত। যেমন- রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযার নামায আদায় করা, হাঁচির উত্তর দেয়া, সালামের উত্তর দেয়া, দাওয়াত দিলে গ্রহণ করা, ইস্তিখারার নামায আদায় করা, তওবার নামায আদায় করা, সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের নামায আদায় করা, বৃষ্টির নামায আদায় করা, বিবদমান দুইপক্ষের মাঝে মীমাংসা করা, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্টদায়ক জিনিস দূর করা, কষ্ট ও বিপদ-মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করা ইত্যাদি।
সলফে সালেহীন একদিনে চারটি ইবাদত পালন করাকে মুস্তাহাব জ্ঞান করতেন। সেগুলো হচ্ছে- রোযা রাখা, মিসকীন খাওয়ানো (সদকা করা), জানাযার নামায আদায় করা ও রোগী দেখতে যাওয়া। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “এগুলো যে ব্যক্তির মাঝে একত্রিত হবে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহিহ মুসলিম (১০২৮)]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]