দাওয়াত [ আপনার ইবাদতের মান উন্নত করুন ]

0
256

dawat

লেখক: ড. খালিদ আবু শাদি | অনুবাদক: হাসান মাসরুর

১. আজকের আলোচ্য বিষয়ের ফায়দা

  • নেক কাজে পথ-প্রদর্শনকারী নেক কাজ সম্পন্নকারীর মতো।
  • যখন কেউ আপনার অনুসরণ করবে এবং আপনি যেদিকে পথ দেখিয়েছেন সেদিকে চলবে, তখন সহজেই একটি সাওয়াব অর্জন করতে পারবেন । ওই লোকটি যতদিন জীবিত অবস্থায় আপনার দেখানো বিষয়টির ওপর আমল করবে, আপনি তার সাওয়াব পেতে থাকবেন। রাসুল (সা:) বলেন: ‘যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে, তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না।‘ [সহিহু মুসলিম: ২৬৭৪, সুনানু আবি দাউদ: ৪৬০৯]
  • মৃত্যুর পরও সাওয়াব অব্যাহত থাকে।

রাসুল (সা:) বলেন: সাতটি আমলের সাওয়াব বান্দার মৃত্যুর পর কবরে থাকা অবস্থায় তার জন্য জারি থাকে । যে ব্যক্তি কাউকে ইলম শেখাবে, অথবা নদী খনন করবে, অথবা কূপ খনন করবে, অথবা খেজুর গাছ লাগিয়ে যাবে, অথবা মসজিদ নির্মাণ করবে, অথবা পবিত্র কুরআনের উত্তরাধিকার রেখে যাবে অথবা এমন সন্তান রেখে যাবে—যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।‘ [মুসনাদুল বাজ্জার: ৭২৮৯]

  • দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা আছে তার চেয়ে উত্তম।

রাসুল (সা:) বলেন: তোমার মাধ্যমে একজন লোকের হিদায়াত পাওয়া তোমার জন্য লাল উটের মালিক হওয়ার চেয়ে উত্তম।‘ [সহিহুল বুখারি: ২৯৪২]

  • আল্লাহর রহমত নাজিল এবং ফেরেশতাদের রহমতের দুআ।

রাসুল (সা:) বলেন: যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণের শিক্ষা দেয় আল্লাহ তার ওপর রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারা তার জন্য মাগফিরাত কামনা করে— এমনকি গর্তের পিপীলিকা এবং সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তার জন্য দুআ করে।‘ [তাবারানি (রা:) কৃত আল-মুজামুল কাবির: ৭৯১২]

  • আপনার ভান্ডার থেকে দান করুন।

নবিজি (সা:) বলেন: ‘যে ব্যক্তি ইলম শিখে তা বর্ণনা করল না, তার উদাহরণ হলো ওই ব্যক্তির মতো যে সম্পদের খনি গড়ে তুলল; কিন্তু তা থেকে খরচ করল না।‘ [আল-মুজামুল আওসাত: ৬৮৯]

  • নবিজি (সা:) আপনার জন্য দুআ করেছেন। তিনি বলেন: আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে তরতাজা রাখুন, যে আমার কথা শুনেছে, অতঃপর তা সংরক্ষণ করেছে এবং যেভাবে তা শ্রবণ করেছে সেভাবে তা পৌছিয়ে দিয়েছে।‘ [মুসনাদুল বাজ্জার: ৩৪১৬]

২. কুরআনের আলো

আল্লাহ তাআলা বলেন: “তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, “আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত?” [সুরা ফুসসিলাত, ৪১ : ৩৩]

হাসান বসরি (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘সে হলো এমন মুমিন ব্যক্তি, যার ডাকে আল্লাহ সাড়া দিয়েছেন এবং আল্লাহ তাআলা তার যে ডাকে সাড়া দিয়েছেন, সেদিকে সে মানুষকে আহ্বান করতে থাকে। আর সে নেক আমলও করতে থাকে। আর এই লোকই হলো আল্লাহর প্রিয় এবং আল্লাহর বন্ধু।

৩. রাসুল (সা:)আমাদের আদর্শ

উসতাজ রশিদ (রা:) বলেন: বাস্তবতা হলো দায়ি যখন নিজের দাওয়াতে সত্যবাদী হয়, তখন সে শুধু দাওয়াত নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এ ছাড়া ভিন্ন কোনো ফিকির করে না । সে শুধু এ উদ্দেশ্যেই ভ্রমণ করে। এ ব্যাপারে সাধনা ও সময় ব্যয় করার ক্ষেত্রে মোটেও কার্পণ্য করে না। অন্য কোনো ব্যস্ততা তাকে দাওয়াত থেকে সরিয়ে রাখতে পারে না। এমনকি সবচেয়ে কঠিন সময়ে সংকীর্ণ অবস্থায়ও সে অবিচল থাকে । আমাদের রাসুল মুহাম্মাদ ও এমনই ছিলেন।

যখন আবু বকর -সহ নবিজি এ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করছিলেন, তখন পথিমধ্যে বুরাইদা ইবনুল হাসিব আল-আসলামিকে তার সম্প্রদায়ের কিছু লোকের সাথে দেখে মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি স্থানে তাকে তাঁরা দাওয়াত দিলেন। ইসলামের দাওয়াত পেয়ে তখন তারা ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। এটি প্রমাণ করে যে, নবিজি আল্লাহর দিকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে কখনোই গাফিল ছিলেন না; এমনকি তিনি মদিনায় হিজরতকালীন সময়েও পথিমধ্যে দাওয়াত দিয়েছেন—যখন তাঁকে মক্কার কাফিররা খুঁজে বেড়াচ্ছিল।

৪. অমূল্য বাণী

  • ইবনুল জাওজি (রা:) বলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চাও না? তাহলে তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর দিকে দাওয়াত দাও। এটি নবিদের কাজ। তুমি কি জানো না যে, নবিগণ মাখলুকের শিক্ষার বিষয়টিকে নির্জনে ইবাদত করার ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন! কারণ, তাঁরা জানতেন যে, এটি তাঁদের প্রিয় প্রতিপালকের নিকট অধিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।’

আলি (রা:) আল্লাহ তাআলার এই আয়াত—”তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।” [সুরা আত-তাহরিম, ৬৬ : ৬]–এর ব্যাপারে বলেন, “তোমাদের পরিবারকে কল্যাণের শিক্ষা দাও।’

  • উসতাজ সাইয়িদ কুতুব (রা:) বলেন, আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তোমাদেরকে দাওয়াতের জন্য নির্বাচন করা মূলত তোমাদেরকে সম্মান প্রদান, তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ ও তাঁর দান। এখন যদি তোমরা এই অনুগ্রহের উপযুক্ত হওয়ার চেষ্টা না করো, এই মহান পথের কষ্টের জন্য উঠে না দাঁড়াও এবং তোমাদেরকে যা দান করা হয়েছে, তার মূল্য উপলব্ধি করতে না পারো, তাহলে অন্যান্য বিষয় তোমাদের জন্য তুচ্ছ হয়ে যাবে। কারণ, আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা ফিরিয়ে নেবেন এবং এই অনুগ্রহের জন্য এমন কাউকে নিযুক্ত করবেন, যে এই অনুগ্রহের উপযুক্ত।
  • ইমাম গাজালি (রা:) বলেন, ‘এই জমানায় ঘরে বসে থাকা প্রতিটি লোক সে যেখানেই থাকুক, কোনো মন্দ কাজ থেকে মুক্ত নয়। কারণ, সে মানুষকে পথ দেখানো, তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া এবং ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা থেকে বিরত রয়েছে। অবস্থা তো এখন এত নাজুক যে, শহরের অধিকাংশ মানুষ সালাতের শর্তসমূহের ব্যাপারে অজ্ঞ। তাহলে চিন্তা করো, গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকদের অবস্থা কেমন! প্রত্যেক শহর বা মসজিদে এমন একজন লোক থাকা আবশ্যক, যিনি লোকদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেবেন।

প্রত্যেক গ্রামেও এমন লোক থাকতে হবে। আর প্রত্যেক ফকিহর জন্য একটি কর্তব্য হলো, নিজের ফরজে আইনের সময় থেকে কিছু সময় বের করে ফরজে কিফায়া পালনে সচেষ্ট হবেন। তার পার্শ্ববর্তী সাদা, কালো, আরব, অনারব, কুর্দিসহ আরও যারা আছে, তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেবেন এবং শরিয়তের বিধিবিধান সকলকে শিখিয়ে দেবেন।

  • মালিক বিন দিনার (রা:) বলেন, ‘যদি আমি ঘুমানো ছাড়া থাকতে পারতাম,’তাহলে ঘুমাতাম না। কেননা, আমার ভয় হয় যে, আমার ঘুমন্ত অবস্থায়ই আজাব নাজিল হবে। যদি আমি কিছু সহযোগী পেতাম, তাহলে সারা দুনিয়ায় তাদেরকে এই ঘোষণাপত্র দিয়ে ছড়িয়ে দিতাম : “হে লোক সকল, জাহান্নাম জাহান্নাম! ”
  • ইবনে মাসউদ(রা:)-কে বলা হলো, ‘জীবিত থেকেও কে মৃত?’ তিনি বলেন, ‘যে ভালো কাজের পরিচয় তুলে ধরে না এবং মন্দ কাজকে ঘৃণিত করে তোলে না।’

৫. চমৎকার কাহিনি

রাসুল (সা:) চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন: যে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে সীমা লঙ্ঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মতো, যারা কুরআনের মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। তাদের কেউ স্থান পেল ওপরতলায় আর কেউ নিচতলায় (পানির ব্যবস্থা ছিল ওপরতলায়)। কাজেই নিচের তলার লোকেরা পানি সংগ্রহকালে ওপরতলার লোকদের ডিঙিয়ে যেত। তখন নিচতলার লোকেরা বলল, “ওপরতলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নিই (তবে ভালো হয়), এমতাবস্থায় ওপরের তলার লোকেরা যদি নিচতলার লোকদের আপন মর্জির ওপর ছেড়ে দেয়, তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে (বিরত রাখে), তবে তারা এবং সকলেই রক্ষা পাবে।‘ [সহিহুল বুখারি: ২৪৯৩]

রাসুল (সা:) স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, তখন বিষয়টি দুটি ফলাফলের যেকোনো একটি অবশ্যই বয়ে আনবে, হয়তো ওপরের তলার লোকেরা এই বিপর্যয়ে বাধা প্রদানের দায়িত্ব পালন করবে এবং এর মাধ্যমে সকলেই মুক্তি পাবে; আর না হয় তারা তাদেরকে ছেড়ে রাখবে এবং দাবি করবে যে, নিচের তলার লোকেরা তাদের অংশে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে, এটা তাদের অধিকার। আর এই অবস্থায় চূড়ান্ত ফলাফল হলো সকলের অনিবার্য ধ্বংস।

হাফিজ ইবনে হাজার (রা:) বলেন, ‘(এভাবেই আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের ফলে বাস্তবায়নকারী এবং যাদের ওপর বাস্তবায়ন করা করেছে, সকলে মুক্তি পেয়েছে। অন্যথায় অবাধ্যরা ধ্বংস হতো অবাধ্যতার ফলে; আর নীরবে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকা ব্যক্তিরা ধ্বংস হতো তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকার কারণে।) আর এটিই এ আয়াতের মিসদাক: ”আর তোমরা এমন ফাসাদ থেকে বেঁচে থাকো, যা বিশেষত শুধু তাদের ওপরই পতিত হবে না, যারা তোমাদের মধ্যে জালিম।” [সুরা আল-আনফাল, ৮ : ২৫]

রাসুল (সা:) বলেন: যখন মানুষ জালিমকে দেখেও তার হাত পাকড়াও করে না, তখন তাদের ব্যাপারে সম্ভাবনা রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ব্যাপকভাবে আজাবে পতিত করবেন।‘ [সুনানু আবি দাউদ: ৪৩৩৮, সুনানুত তিরমিজি: ২১৬৮]

৬. রমাদানে দাওয়াত প্রদান

রমাদানে কত হৃদয়ই না উন্মুক্ত হয়!

কত অদৃশ্য লোকই না রমাদানে ফিরে আসে!

কত কঠিন হৃদয়ই না রমাদানে কোমল হয়!

সুতরাং আপনি কি গনিমতের একটি অংশ বাদ দিয়ে ধনভান্ডার গ্রহণ করতে আগ্রহী নন এবং বিশাল লাভের কাজে অংশগ্রহণে সন্তুষ্ট নন!! যে আপনার ডাকে সাড়া প্রদানে অধিক কাছাকাছি, তাকে দাওয়াত দিন।

৭. দাওয়াতের সূর্য ডুবে গেছে

সিংহ হারিয়ে যাওয়ার ফলে নেকড়ের হাতে ক্ষমতা চলে গেছে এবং সত্য না থাকায় মিথ্যার রাজত্ব চলছে। নেককার লোকেরা তাদের নেক প্রসারে লজ্জিত হয়ে পড়েছে; ফলে মন্দ তাদের ভূমিতে এসেই তাদের সাথে লড়াই করছে।

৮. দুআ

  • হে আল্লাহ, আমাদের বধির কান, বদ্ধ হৃদয় এবং অন্ধ চক্ষু খুলে দিন!
  • হে আল্লাহ, আমাদেরকে হিদায়াত দান করুন এবং আমাদের মাধ্যমে হিদায়াত দান করুন এবং হিদায়াত -প্রত্যাশীদের জন্য হিদায়াত লাভের জন্য আমাদেরকে মাধ্যম বানিয়ে দিন।
  • হে আল্লাহ, আমাদের ও আমাদের জাতির মাঝে সত্যের মাধ্যমে আমাদেরকে বিজয়ী করুন, আর আপনি তো সর্বোত্তম বিজয়দাতা।
  • হে আল্লাহ, আমাদের মাধ্যমে আপনি লোকদেরকে আপনার পথের দিকে হিদায়াত দিন এবং আমাদেরকে আপনার সন্তুষ্টিজনক কাজের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগী বানিয়ে দিন।

৯. স্বার্থপর হবেন না

  • রমাদানে আপনার একটি টার্গেট থাকবে যে, আপনি উদাসীন বা অবাধ্য ব্যক্তিকে ইমানি চেতনায় উজ্জীবিত করবেন।
  • কথাগুলো আপনার মসজিদের মুসল্লি ও আপনার সহপাঠী-সহকর্মীদের মাঝে আলোচনা করুন।
  • এই বইটি নিজে পাঠ করে অন্যদেরকেও পড়তে দিন; যেন তারা এর থেকে উপকৃত হতে পারে।
  • মসজিদের ইমামকেও বইটি হাদিয়া দিতে পারেন; যেন তিনি জুমআর খুতবা বা তারাবিহ-পরবর্তী আলোচনায় এর থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারেন।

১০. যথেষ্ট কথা হয়েছে, এখন আমল দেখার বিষয়

  • যা শুনলাম, তার সব আমি রমাদানে অন্যদের নিকট পৌঁছিয়ে দেবো; যেন রাসুল (সা:)-এর পক্ষ থেকে আদিষ্ট দায়িত্ব আদায় করতে পারি। তিনি বলেন: আমার পক্ষ থেকে একটি বাক্য হলেও পৌছিয়ে দাও।‘ [সহিহুল বুখারি: ৩৪৬১ ]

সুতরাং যদি আমি জুমআর খুতবায় উপস্থিত হয়ে তার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে থাকি, তাহলে তার সারাংশ লিখে রাখব। তারপর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একসাথে বসব; নিজের সহকর্মী কিংবা ব্যবসায়িক-পার্টনারদের সাথে বসব—তাদের সাথে আমি খুতবার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। অথবা আমি আলোচনাটি রেকর্ড করে উপকৃত হবে এমন লোকের কাছে শেয়ার করব।

  • সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদানকারীর জন্য আবশ্যকীয় যে শর্তগুলো রয়েছে, আমি তা পূরণ করব। মন্দ কাজে বাধা প্রদানে কিছু শর্ত :

প্রথমত, যদি বাধা দিতে হয়, তাহলে সে কাজটি মন্দ হতে হবে। আর তার জন্য শর্ত হলো, আমার হালাল ও হারাম সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে । আর যে ব্যাপারে আমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আদেশ বা নিষেধ করার অধিকারও আমার নেই । আল্লাহ তাআলা বলেন: “যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার পেছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” [সুরা আল-ইসরা, ১৭ : ৩৬]

দ্বিতীয়ত, মন্দ কাজটি এখন বিদ্যমান থাকতে হবে। সুতরাং কোনো মুসলিমের ব্যাপারে মন্দ ধারণা করা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, জনৈক লোক মসজিদে এসে বসল। এখন হিকমতের দাবি হলো, আমি তাকে জিজ্ঞেস করব, ‘সে কেন সালাত আদায় না করে বসে রয়েছে?’ আমরা তাকে বাধা দেবো না বা ধমক দেবো না। কারণ, হতে পারে সে সালাত আদায় করেছে বা তার ভিন্ন কোনো ওজর রয়েছে।

যদি আমরা রমাদানে দিনের বেলা কাউকে আহার করতে দেখি বা পান করতে দেখি, তাহলে তাকে জিজ্ঞেস না করে ধমকানো শুরু করব না। আমরা প্রথমে জিজ্ঞেস করে জেনে নেব যে, তার কোনো ওজর আছে কি না। কারণ, সে হয়তো মুসাফির; অথবা অসুস্থও হতে পারে, যার কারণে তার অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হচ্ছে।

যদি আপনি কাউকে গাড়িতে কোনো মহিলার সঙ্গে দেখেন, তাহলে (ভাববেন যে) হতে পারে এই মহিলা তার মাহরাম কেউ, অথবা তার স্ত্রীও তো হতে পারে। সুতরাং তাকে মন্দ বলবেন না, যতক্ষণ না আপনি জেনে নেবেন যে, সে মন্দ কাজ করছে ৷

তৃতীয়ত, মন্দটি প্রকাশ্য হতে হবে, কারও ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরি করে তার মন্দ বের করা যাবে না। কারণ, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মুসলিমদের পদস্খলনগুলো গোয়েন্দাগিরি করে বের করতে নিষেধ করেছেন । তাজাস্সুস বা গোয়েন্দাগিরি করে কারও দোষ বের করা অনেক জঘন্য এক গুনাহ।

চতুর্থত, মন্দটি কোনো গবেষণা ছাড়াই সর্বজনবিদিত হতে হবে। সুতরাং কেউ যদি গবেষণার মাধ্যমে সাওয়াবের আশায় কোনো কাজ করে থাকে, তাহলে সে কাজে বাধা প্রদান করা যাবে না। যেসব বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে, সেগুলোকে মন্দ বলে বারণ করা যাবে না।

পঞ্চমত, সৎ কাজের আদেশ করতে হবে সৎভাবে এবং মন্দ কাজে বারণ করতে হবে নরমভাবে। [অবশ্য যখন নরমভাবে বললে কাজ হবে না, তখন কঠোরভাবেই তা দমন করতে হবে।]

মানুষকে আমরা যে কাজের আদেশ করব, তা নিজে করার বিষয়টি ভুলে যাব না। রাসুল (সা:) বলেন: যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণ শিক্ষা দিয়ে নিজেকে ভুলে থাকে, তার উদাহরণ হলো সে বাতির (ফিতার) মতো, যে মানুষের জন্য আলো ছড়িয়ে নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়।‘ [তাবারানি (রা:) কৃত আল-মুজামুল কাবির: ১৬৮৫]

উৎস: রমাদান-আত্মশুদ্ধির বিপ্লব, পৃষ্ঠা: ২৪১ – ২৫১

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন