লিখেছেনঃ মেরিনার
সময়ের সাথে সাথে মুসলিমদের মাঝে ফিক্হের চারটি ধারা জন্ম নেয় এবং বিস্তার লাভ করে ৷ আজ পর্যন্ত ঐ চারটি মাযহাবের প্রচুর প্রভাব পরিলতি হয়৷ এই মাযহাবগুলি হহ্ছে:
১) হনাফী মাযহাব: এই মাযহাবের সূত্রপাত ঘটে কুফায়, যেখানে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) এবংআলী ইবন আবু তালিব (রা.) এর মত সাহাবীরা বসবাস করতেন৷ আবু হানিফা আল নু’মান ইবন সাবিতের (৮০ – ১৫০ হিজরী) নাম অনুসারে এই মাযহাব, হানাফী মাযহাব নামে পরিচিত৷ ইসলামের ইতিহাসে তাঁকে সর্বকালের বৃহত্তম ফিক্হ শাস্ত্রবিদদের একজন বলে সবাই স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন৷ আবু হানিফার সাথে তাঁর শিষ্য আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ আল হাসান এবং জাফর – এঁরা সবাই এই মাযহাবের গঠন ও বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখেন৷ আধুনিক পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক, প্রাক্তন সাভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এবং পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে আজও হানাফী মাযহাব প্রাধান্য বিস্তার করে আছে৷
২) মালিকী মাযহাব: এই মাযহাবের বিকাশ ঘটে নবীর (সা.) শহর মদীনায়, যেখানে তাঁর অনেক সাহাবী বসবাস করতেন৷ এই মাযহাব মালিক বিন আনাসের (৯৫ – ১৭৯ হিজরী) নামানুসারে পরিচিত – যিনি হাদীসের একজন স্কলার ও ফিকাহশাস্ত্রবিদ ছিলেন৷ এই মাযহাব দ্রুত উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে যেখানে আজও এর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়, উপরন্তু মুসলিম স্পেনেও এটাই ছিল প্রধান মাযহাব৷
৩) শফিঈ মাযহাব: এই মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুহাম্মাদ ইবন ইদ্রিস আল শাফি’ঈ (১৫০ – ২০৪ হিজরী) – যাঁর নাম অনুসারে এই মাযহাবের নামকরণ হয়েছে৷ মক্কার একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করা আল শাফি’ঈ মদীনায় গমন করেন৷ তিনি ইরাকেও যান এবং আবু হানিফার ছাত্র মুহাম্মাদ আল হাসানের সাথেও কথাবার্তা বলেন৷ উসূল আল ফিক্হ বা ইসলামী আইনতত্ত্বের উপরে প্রথম পুস্তকের সংকলন ইমাম শাফি‘ঈই করেছিলেন৷ এটা একটা বিশাল কাজ ছিল এবং এতে ইসলামে সুন্নাহর কর্তৃত্ব ও মর্যাদা স্পষ্ট করে নির্দেশিত হয়েছে৷ আজকের দিনে মিশর, সিরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং অন্যান্য স্থানে শাফিঈ মাযহাবের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়৷
৪) হাম্বলী মাযহাব: আহমাদ বিন হাম্বলের (১৬৪ – ২৪১ হিজরী) নামানুসারে এই মাযহাব পরিচিত ৷ ইমাম আহমাদ ছিলেন হাদীসের এক বিশাল পন্ডিত ব্যক্তি৷ মুসনাদ আহ্মাদ নামে এক বিশাল গ্রন্থের তিনি ছিলেন প্রণেতা৷ ফিকাহের ব্যাপারে তিনি তাঁর শিক্ষক ইমাম আল-শাফি’ঈ কর্তৃক গভীরভাবে প্রভাবিত হন৷ আজকের দিনের সৌদী আরবে, হাম্বলী মাযহাবই হচ্ছে প্রধান৷
সুন্নাহ ও হাদীসের গুরুত্ব সম্পর্কে স্কলারদের ধ্যান-ধারণা বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ ৷ কেননা কোন হাদীস যখন তাদের মাযহাবের মতের বিরুদ্ধে যায়, তখন তাদের অনুসারীরা সেই সব হাদীস অনুসরণ করার ব্যাপারে তীব্র বিরোধিতা করে থাকেন ৷ তারা ধরেই নেন যে, তাদের স্কলাররা নিশ্চয়ই হাদীসটি জানতেন এবং জেনে শুনে সঙ্গত কারণেই তারা হাদীসটির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন৷ সুন্নাহ এবং হাদীস সম্বন্ধে চার ইমামের বক্তব্যের ভিতর থেকে আমরা নিম্নলিখিত বক্তব্যগুলো তুলে দিলাম:
ইবন আল মুবারকের বর্ণনায় এসেছে যে, ইমাম আবু হানিফা বলেন, “যদি আল্লাহর রাসূলের (সা.) কাছ থেকে কোন বর্ণনা আসে, তবে সেটাই হচ্ছে মস্তিষ্ক ও চক্ষু (অর্থাৎ সেই ব্যাপারের সবকিছু – সেখানে আর বিতর্ক করার কোন অবকাশ নেই)৷ যদি নবীর (সা.) সাহাবীদের কাছ থেকে বর্ণনা আসে, তবে তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্য থেকে আমরা (কোন একটি) বেছে নিই ৷”
আবু হানিফা বলেন,”আল্লাহ্র দ্বীন সম্পর্কে নিজের মতামতের ভিত্তিতে কথা বলার ব্যাপারে সাবধান থেকো ৷ তোমাদের অবশ্যই সুন্নাহর সাথে লেগে থাকা উচিত ৷ যে এর থেকে দূরে থাকে সেই পথভ্রষ্ট হল (সে সিরাতুল মুস্তাক্বীম থেকে সরে গেল) ৷”
তিনি আরো বলেন, “সুন্নাহ যদি না হতো, তাহলে আমরা কেউই কুর’আন বুঝতে সক্ষম হতাম না ৷” আরেকটি উপলক্ষে তিনি বলেন, “মানুষ ততদিন পর্যন্ত ভালোর মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা হাদীস শিক্ষা ও অনুসন্ধান করতে থাকবে ৷ তারা যদি হাদীস ছাড়া জ্ঞানের অনুসন্ধান করে, তবে তারা পচে যাবে – কারোরই কোন কথা বলা উচিত নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে জানবে না যে, রাসূলের (সা.) আইন ঐ কথাটির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ৷”
ইমাম আবু হানিফাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “আপনি যদি এমন কোন বক্তব্য দেন, যা আল্লাহর কিতাবের সাথে বিরোধপূর্ণ হয় (তাহলে কি করা হবে) ?” তিনি উত্তর দেন, “আল্লাহর কিতাবের পক্ষ অবলম্বন করে আমার বক্তব্য ত্যাগ করবে ৷” তারপর বলা হলো, “যদি ধরুন তা রাসূল (সা.)-এঁর কোন বর্ণনার বিরোধিতা করে?” তিনি বলেন, “রাসূলের (সা.) বর্ণনার পক্ষাবলম্বণ করে আমার বর্ণনা ত্যাগ করবে ৷” আবু হানিফার ছাত্র মুহাম্মাদ ইবন আল হাসানের সূত্রেও উপরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে ৷ আরো বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি বলেন, “হাদীস যদি সহীহ হয় তবে সেটাই আমার মত (মাযহাব)৷”
উসমান ইবন ওমর এর বর্ণনায় এসেছে যে, এক ব্যক্তি একবার ইমাম মালিকের কাছে এলো এবং তাঁকে একটি প্রশ্ন করলো ৷ ইমাম মালিক জবাবে বললেন, “আল্লাহর রাসূল (সা.) এমন এমন বলেছিলেন ৷”লোকটি জিজ্ঞেস করলো, “আপনার মত কি?” মালিক তখন কেবল কুর’আনের একটি আয়াত যেখানে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে সেটি দিয়ে তার জবাব দিলেন-
“সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা সতর্ক হয়ে যাক যে তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি নেমে আসবে৷” [সূরা নূর, ২৪:৬৩]
ইমাম মালিক থেকে আরো উদ্ধৃত করা হয় যে তিনি বলেন, “আমি কেবলই একজন মানুষ ৷ আমি ভুল করি এবং আমি অন্যসময় সঠিকও হই ৷ আমার মতামত পরীক্ষা করে দেখ ৷ আমার মতের যা কিছু আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, তা গ্রহণ কর, আর যা কিছু আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ তা বর্জন কর ৷”
আল রাবীর বর্ণনায় এসেছে যে, ইমাম আস-শাফি‘ঈ বলেন, “আমার বইয়ে যদি তোমরা এমন কিছু পাও, যেটা আল্লাহর রাসূলের (সা.) চেয়ে ভিন্ন হয়, তবে সুন্নাহ অনুযায়ী কথা বলো এবং আমি যা বলেছি সেটা বর্জন কর ৷” আস-শাফিঈ আরো বলেন, “যদি হাদীসটি সহীহ হয় তবে সেটাই আমার মত ৷ ”
আল-হুমাইদি বলেন যে, আস-শাফি‘ঈ একদিন একটি হাদীস বর্ণনা করলেন এবং আল হুমাইদি তখন তাঁকে বললেন, “আপনি কি এটা অনুসরণ করেন?” তিনি উত্তর দিলেন, “তুমি কি আমাকে গির্জা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখ না কি জিনার (বিশেষভাবে নন-মুসলিমদের দ্বারা পরিহিত এক ধরণের কোমরবন্ধ) পরিহিত অবস্থায় দেখ? আমি রাসূল (সা.)-এঁর একটা হাদীস শুনব আর অনুসরণ করবো না?”
তিনি বোঝাতে চাইছিলেন যে, কেবল একজন অমুসলিম – যেমন একজন খৃষ্টান যে কিনা গির্জায় যায় – কেবল সেই ওরকম আচরণ করতে পারে৷
আহমাদকে (রহ.) একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আওজায়ীর মতামত অনুসরণ করা ভাল না মালিকের মতামত অনুসরণ করা ভাল? এবং তিনি বলেন, “তোমাদের দ্বীনে তোমরা তাদের কাউকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করো না ৷ যা কিছু নবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের কাছ থেকে এসেছে তাই গ্রহণ কর …..৷”
ইমাম আহমাদের পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে দীর্ঘ অধ্যায়ের শুরুতে ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, “কোন ব্যাপারে ইমাম আহমাদ যদি একটা দলীল (কুর’আনের আয়াত বা একটি হাদীস) পেতেন, তাহলে তিনি সেই অনুযায়ী ফতোয়া দিতেন এবং এমন কিছু বা কারো ব্যাপারে ভ্রক্ষেপ করতেন না যে সেটার বিরোধিতা করতো – সে যেই হোক না কেন ৷ সেজন্যেই জনৈক মহিলার চূড়ান্ত তালাকের ব্যাপারে তিনি ওমরের (রা.) মতামত বিবেচনা করেননি, বরং তিনি ফাতিমা বিনতে কায়েসের (রা.) হাদীস অনুসরণ করেন …..৷”
এইসব মাযহাবগুলোর সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুসারীরা যুক্তি দেখান যে, তারা যেসব স্কলরদের অনুসরণ করেন তারা কখনোই ইচ্ছে করে রাসূল (সা.)-এঁর কোন হাদীসের বিপক্ষে কোন অবস্থান নেবেন না – যেমনটা আমরা আগেই বলেছি ৷ এ ব্যাপারে একটা ঐক্যমতে পৌঁছানো প্রয়োজন ৷ কারো এই অভিযোগ উত্থাপন করা উচিত নয় যে, এইসব সৎ ও পরহেজগার স্কলারদের কেউ ওরকম একটা কাজ করতে পারেন ৷ এটা একটা স্বীকৃত ব্যাপার যে, কোন কারণ ছাড়া তারা একটা সহীহ হাদীসের বিপক্ষে কখনো কিছু করেন নি ৷ এই যুক্তিতে তাদের অনুসারীরা বলবেন যে, তাদের কোন মতামত যদি একটি হাদীসের বিপক্ষে যায়, তবে সেই হাদীস অবজ্ঞা করার ব্যাপারে তাদের কাছে নিশ্চয়ই অধিকতর গ্রহণযোগ্য কোন যুক্তি ছিল ৷ উদাহরণস্বরূপ, এমন কথা বলা হয় যে, ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটি হয়তো মানসুখ বা বাতিল হয়ে গেছে -অথবা- সেটা হয়তো আসলে সহীহ নয়, বা তা হয়তো সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়৷
এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, এরকম একটা যুক্তির পিছনে হয়তো কিছু গ্রহণযোগ্য কারণও থেকে থাকবে৷ কিন্তু আরো সুচিন্তিত যুক্তিতর্ক এটা প্রতীয়মান করতে পারে যে, এ ব্যাপারে নিরাপদ এবং অধিকতর যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি একদমই ভিন্ন৷
এটা বোঝা উচিত যে, একটা নির্দিষ্ট হাদীস অনুসরণ না করার পিছনে তাদের স্কলারদের পক্ষ হয়ে তারা যে যুক্তি দেখান – সেগুলোই যে কোন নির্দিষ্ট স্কলারের কোন নির্দিষ্ট হাদীস অনুসরণ না করার একমাত্র কারণ, তেমন নয় ৷ আসলে, সেই কারণগুলো হয়তো মোটেই প্রধান কারণ নয়৷ উদাহরণস্বরূপ: এটা সম্ভাব্য যে, একজন স্কলার হয়তো ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটি সম্বন্ধে জ্ঞাতই ছিলেন না৷ এরকম হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয় অথবা এর অর্থ এটাও নয় যে, এমন হলে তা কোন নির্দিষ্ট স্কলারের সামর্থের উপরে কোন কালিমা লেপন করে – এমন কোন সাহাবীই ছিলেন না যিনি রাসূল (সা.)-এঁর সব হাদীসগুলো সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিলেন৷ উপরন্তু এমনও হতে পারে যে, কোন মাযহাবের অনুসারীদের অনুসৃত স্কলার মুহাদ্দিসদের মতো হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ ছিলেন না, আর তাই হয়তো ঐ হাদীসটিকে তিনি দুর্বল ভেবেছেন – সম্ভবত যে উপায়ে তা তার কাছে এসে পৌঁছেছিল সে জন্য৷ অথচ হাদীস বিশেষজ্ঞরা (পরবর্তীতে হয়তো) ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটিকে সহীহ বলে চিহ্নিত করেছেন৷
হাদীস অনুসরণ না করে যে ব্যক্তিটি তার মাযহাব অনুসরণ করার পক্ষে যুক্তি দেখান, সেই যুক্তির চেয়ে আমরা মাত্র যে যুক্তি উপস্থাপন করলাম, তা মোটেই কম গ্রহণযোগ্য নয় ৷ মনে করুন একজন ব্যক্তির কাছে একটা হাদীস উপস্থাপন করা হলো এবং তাকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বলা হলো যে, হাদীসের স্কলাররা ঐ হাদীসটিকে সহীহ বলে নির্ধারণ করেছেন ৷ বাস্তবে এটা হচ্ছে একটা হাদীস যা অন্যান্য মাযহাবগুলো গ্রহণ করে এবং প্রয়োগ করে ৷ এবং ধরে নেয়া যাক যে, ঐ ব্যক্তিটি যে মাযহাবের অনুসরণ করে, হাদীসটি তার বিরোধিতা করে এবং ঐ ব্যক্তিটির কোন ধারণাই নেই যে, তার মাযহাব কেন ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটি প্রয়োগ করছে না৷ এখন ঐ ব্যক্তিটির সামনে দু’টো পথ খোলা রয়েছে:
ক) যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ হাদীসটি অনুসরণ না করার সে কোন কারণ পাচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সে তা অনুসরণ করতে থাকবে ৷
খ) সে ধরে নেবে যে, ঐ হাদীস মেনে না চলার পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে আর সেজন্য সে ঐ হাদীসের বিপক্ষে তার মাযহাবের মত অনুসরণ করবে৷
সে যদি উপরের বর্ণিত ‘ক’ অনুসারে চলে, তবে স্বভাবতই দুইয়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভাল পথটি বেছে নেবে ৷ এটা যে অপেক্ষাকৃত ভাল পথ তা বলার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে ৷ প্রথমত, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলতে পারবে যে, যা কিছু রাসূল (সা.)-এঁর বক্তব্য হিসাবে তার সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল, সে তাই অনুসরণ করেছে ৷ রাসূল (সা.)-এঁর প্রতি আনুগত্যকে ফরজ করে এবং তাঁর আনুগত্যের আদেশ দিয়ে কুর’আনে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ রয়েছে; যদিও আমরা জানি যে, পক্ষান্তরে আবু হানিফা, মালিক, আহমাদ, আস-শাফিঈ বা অন্য কোন ব্যক্তিকে অনুসরণ করার ব্যাপারে কোন আদেশ নেই ৷ সুতরাং এমন যদি দেখা যায় যে, কোন একটা নির্দিষ্ট হাদীস আসলে, উদাহরণস্বরূপ, বাতিল হয়ে গিয়েছিল, তবুও তা অনুসরণ করার ব্যাপারে তার অবস্থান যুক্তিযুক্ত থাকবে এবং ইনশা’আল্লাহ কিয়ামাতের দিন সে নিরাপদ অবস্থানে থাকবে ৷ দ্বিতীয়ত, সেক্ষেত্রে সে তার নিজের ইমামের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে থাকবে৷ যেমনটা আমরা দেখেছি যে, চারজন ইমামই যখন তাঁদের কোন শিক্ষা নবী (সা.) যা বলেছেন, তার সাথে বিরোধপূর্ণ হবে তখন সেই শিক্ষা প্রত্যাখ্যান করা বা বর্জন করার কথা বলে গেছেন ৷ সুতরাং সেক্ষেত্রে সে যে স্কলারের উপর আস্থাশীল, অর্থাৎ তার ইমাম, তাকে তার ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা করে দিয়ে এবং রাসূল (সা.)-এঁর সুন্নাহ অনুসরণ করে সে আসলে ঐ ইমামরে পরামর্শই মেনে চললো৷ কিন্তু যদি ঐ ব্যক্তি ‘খ’ তে বর্ণিত পথ অনুসরণ করে, তবে সে আসলে এক ধরণের অনুমানবশত কাজ করা ছাড়া আর কিছুই করলো না৷ বাস্তবে সে একটা ত্রিমুখী অনুমানের বশবর্তী হয়ে কাজ করলো৷ প্রথমত, সে অনুমান করছে যে, তার ইমাম বা স্কলার আমাদের আলোচ্য নির্দিষ্ট হাদীসটি সম্বন্ধে জানতেন৷ দ্বিতীয়ত, সে ধরে নিচ্ছে যে, তার ইমাম বা স্কলার হাদীসটি কোন শ্রেণীর তা জানতেন অথবা হাদীসটি তার ইমামের কাছে গ্রহণযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে পৌঁছেছে৷ তৃতীয়ত, সে এটা অনুমান করছে যে, তার ইমামের ঐ হাদীস মেনে না চলার জন্য পর্যাপ্ত ও শক্তিশালী যুক্তি বা কারণ ছিল৷
সম্ভাব্যতার সূত্র বলে যে, কোন একটা ঘটনার জন্য যত বেশী বিষয় অনুমান করা হয়, ঘটনাটার সম্ভাব্যতা তত কমে যায়৷ আবার সে যখন জানেনা যে তার মাযহাব কেন ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটি অনুসরণ করে না, তখন তাকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে তা অনুসরণ না করার জন্য তাদের খুব ভাল যুক্তি রয়েছে ৷ এটা সত্যি যে, তার স্কলারদের পারদর্শিতার উপর তার আস্থা থেকেই এমনটা মনে হয়ে থাকবে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যাপারটা তার পক্ষ থেকে স্রেফ একটা অনুমানের চেয়ে বেশী কিছু বলে মনে করার উপায় নেই – একটা অনুমান যার সত্য হওয়ার সম্ভাব্যতা খুবই ক্ষীণ ৷ কোন ব্যক্তির দ্বীন এবং আমল কেবলমাত্র অনুমানের উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয় ৷ এটা এমন একটা ব্যাপার যে সম্বন্ধে কুর’আনের বহু আয়াতে আল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছেন ৷ উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ মূর্তিপূজকদের অনুমানের উপর ভিত্তি করে তাদের ধর্মকর্ম পালনের ব্যাপারে দোষারোপ করেন এবং বলেন: “তাদের অধিকাংশ অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না, তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই বিষয়ে সবিশেষ অবহিত৷” [সূরা ইউনূস, ১০:৩৬] আল্লাহ আরো বলেন: “অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা তো কেবল অনুমানেরই অনুসরণ করে ৷ কিন্তু সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নেই৷” [সূরা আন-নাজম, ৫৩:২৮]
কোন ব্যক্তি যদি এভাবেই নিজের অনুমানের অনুসরণ করেন, তবে তিনি যখন কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন, তখন তার নিজের পক্ষে কোন অজুহাত বা যুক্তি থাকবে না ৷ তার সামনে নবীর (সা.) কথা উপস্থাপন করা হয়েছিল, ওগুলো যে নবীর (সা.) কথা তা সন্দেহ করারও তার কোন কারণ ছিল না, তবু তিনি এজন্য সেগুলো অনুসরণ করেননি যে, তিনি অনুমানবশত ধরে নিয়েছিলেন যে, ঐ কথাগুলো অনুসরণ না করার জন্য তার ইমামের কাছে নিশ্চয়ই কোন কারণ ছিল ৷
সুতরাং, এ ব্যাপারে সঠিক মনোভাব হচ্ছে এই যে, যখন কারো সামনে নবী (সা.)-এঁর একটা সহীহ হাদীস উপস্থাপন করা হয়, তার অবশ্যই সর্বান্তকরণে সেটাকে অনুসরণ করা উচিত, এবং তার সাধ্য অনুযায়ী সর্বতোভাবে তা প্রয়োগ করার আকাঙ্খা হওয়া উচিত৷ যখন সে তা করবে, তখন এই জীবনে সে সবচেয়ে সঠিক রাস্তাটিই এবং আখিরাতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তাটিই অনুসরণ করবে ৷ আল্লাহর রাসূলের (সা.) একটা সহীহ হাদীসকে কেউ কেবল এবং কেবল তখনই পরিত্যাগ করবে, যদি, এর বিপরীতে তার সামনে সমপর্যায়ের শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করা হয় ৷
[সুন্নাহকে মুসলিম জীবন থেকে cut off করা হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী সকল অবিশ্বাসী এবং ইসলামী বিশ্বের আধুনিকতাবাদী তথা প্রগতিশীলদের একটা অন্যতম লক্ষ্য! কারণটা খুব simple: সুন্নাহ্ না থাকলে, ইসলামেরই আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। এই ব্লগেই সুন্নাহর গুরুত্ব নিয়ে অনেক কয়টা লেখা লাগানো রয়েছে। আজ আমরা ইনশা’আল্লাহ্ দেখবো যে, চার ইমাম সুন্নাহকে কি চোখে দেখেছেন! মূল লেখা:Jamaal al-Din M. Zarabozo-র]
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
ALHAMDULILLAH
uddetigolor reference dela bhalo hai
মন্তব্য:ভাল লাগলো