ইসলাম কি শুধু তরবারির মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে?

0
517

লেখক: ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী | অনুবাদক: রাশেদুল আলম

মানুষের মধ্যে সর্বদা একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায় আর তা হল ইসলাম কি শুধুমাত্র তরবারির মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে? মানুষ কি বাধ্য হয়ে দীনে ইসলামে প্রবেশ করেছে? না-কি তারা এই দীনের ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়ে এই দীনকে ভালবেসে তা গ্রহণ করেছে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবিভিন্ন অঞ্চলে সাহাবায়ে কেরামের প্রেরণ করেছেন, তাঁরা সেখানে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করেছেন, তাদেরকে হত্যা করেছেন, অনেককে বন্দি করেছেন, সুতরাং ইসলাম কি এভাবেই শুধুমাত্র রক্তপাতের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে?

আমরা ইতিহাসের পাতায় পড়ি, মুসলমানগণ বিভিন্ন দুর্গে আক্রমণ করেছেন, তা অবরােধ করে রেখেছেন এক মাস, দুই মাস, তিনি মাস বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে। যেমন মুসলমান কর্তৃক বাইতুল মাকদিস অবরােধ করে রাখা, এছাড়া স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক খায়বার অবরােধ করে রাখা। এ সকল অবরােধের সময় বিভিন্নভাবে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে, যেমন কেউ দূর্গ থেকে পড়ে, কেউ আগুনে পুড়ে, কেউ নিক্ষিপ্ত তীরে আক্রান্ত হয়ে, এছাড়াও বিভিন্নভাবে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে, সুতরাং ইসলাম কি এভাবেই তরবারির মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে?

আমরা সামনের আলােচনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা করবাে ইনশা-আল্লাহ। আমি এখানে একটা তালিকা পেশ করবাে যার মাধ্যমে প্রমাণ হবে যে, ইসলাম কি শুধুমাত্র তরবারির মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে না-কি এখানে অন্য আরাে কোনাে পদ্ধতি রয়েছে যার সাহায্যেও ইসলাম প্রচারিত হয়েছে?

ইসলাম কি শুধুমাত্র তরবারির মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে? না-কি অন্য কোনাে পদ্ধতিও রয়েছে যার সাহায্যেও ইসলাম প্রচারিত হয়েছে? এটা অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। আমি জানি এটা মানুষের মধ্যে বারবার উচ্চারিত হওয়া একটি প্রশ্ন; কিন্তু কিছু প্রশ্ন এমন রয়েছে যা বারবারই করা হয়ে থাকে, সুতরাং আমাদেরও উচিত তা নিয়ে আলােচনা করা এবং তা নিয়ে কথা বলা। অর্থাৎ কিছু বিষয় থাকে যতবারই তা উচ্চারিত হােক না কেননা প্রজন্ম তার উত্তরের মুখাপেক্ষী, সুতরাং তাদেরকে তা জানাতে হবে এবং সে সম্পর্কে তাদের সতর্ক করতে হবে। যেমন আমি প্রতি বছর বা দের/দুই বছরের মধ্যে একবার মাতা-পিতার সাথে সদাচার সম্পর্কে জুমআর দিন একটি খুৎবা দেই। মাঝে মাঝে। কেউ কেউ আমার কাছে আসে, আমাকে বলে, শায়খ এ-বিষয়ে তাে এক দেড় বছর পূর্বে খুবাহ দিয়েছেন! আমি তাে তখনাে আপনার পিছনে সালাত আদায় করেছি, তাহলে কেনাে এ-সম্পর্কে আবারও খুবাহ দিলেন?

আমি তখন তাকে বলি দুই কারণে একই বিষয়ে বারবার খুবা দেই। প্রথম কারণ: বিষয় বস্তু এক হলেও খুবার মধ্যে নতুনত্ব থাকে, অনেকটাই ভিন্নতা থাকে, যেমন ভিন্নভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করি, এ বিষয়ের অন্যান্য আরাে হাদিস নিয়ে আসি যা পূর্বে বলা হয়নি। দ্বিতীয় কারণ: বিষয়টা এমন যা নিয়ে সমাজ ও জাতির মঝে বেশি বেশি আলােচনা হওয়া উচিত। এছাড়াও এক দুই বছর পূর্বে যেনাে ছেলেটির বয়স ছিলাে ১৪ বছর এখন তার বয়স ১৫/১৬ বছর অর্থাৎ এরই মধ্যে তার জীবনে অনেকটা পরিবর্তন ঘটেছে, তার উপর একটি দায়িত্ব এসে গেছে। তাই তার জন্যে মাতা-পিতার সাথে সদাচারের আলােচনা করা প্রয়ােজন।

এরকম আরাে অনেক বিষয় রয়েছে যা বারবার আলােচনা হওয়া প্রয়ােজন, যেমন ‘মন্দ লােকের সাহচর্য গ্রহণ’, কারণ সমাজে মন্দ লােকদের সংখ্যা অনেক, তাদের সাহচর্যে অনেক ভাল মানুষ মন্দ স্বভাবের হয়ে যায়। এরকমই সকল মানুষ যদি মা-বাবার সাথে ভাল ব্যবহার করতাে তাহলে এ বিষয়ে নিয়ে আলােচনা করার প্রয়ােজন হতাে ; কিন্তু পরিবার ও সমাজের চিত্র তাে ভিন্ন। তাই এসকল বিষয় নিয়ে বারবার আলােচনার প্রয়ােজন পড়ে। এই দীর্ঘ ভূমিকার পর আমরা আমাদের মূল আলােচনায় ফিরে আসি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবি হিসেবে প্রেরিত হলেন, তিনি মানুষের মাঝে দীনে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন, মক্কার কুরাইশরা তাঁকে বাধা দিল, তাঁকে কষ্ট দিতে শুরু করলাে এবং তার মাঝে এবং দীন প্রচারের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালাে, এমনকি মক্কায় তার চলাচল ও বেঁচে থাকাটাই সংকীর্ণ হয়ে গেল।

এভাবেই একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করলেন। তিনি মদিনায় গিয়ে কিছু কাল অবস্থান করার পরই সেটাকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুললেন। মদিনায় তখন মুসলমানগণ ব্যতীত অন্য আরাে কিছু অধিবাসীরাও ছিল, তারা হল ইহুদি ও মুনাফিক সম্প্রদায়। সুতরাং মদিনা একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের আকার ধারণ করার পর তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়ােজন দেখা দিল, তাই সাহাবায়ে কেরাম রা. মদিনার সীমান্তে পাহারা দেওয়া শুরু করলেন, যেনাে বহিরাগত সন্দেহভাজন কেউ মদিনায় প্রবেশ করতে না পারে। অথবা কোনাে দিক থেকে যেনাে হঠাৎ করে কেউ মদিনায় আক্রমণ করতে না পারে। সন্দেহভাজন কাউকে মদিনার আশপাশে দেখলে তাকে ধরে মদিনায় নিয়ে আসতে হবে, কারণ হতে পারে সে কোনাে বাহিনীর অগ্রগামী দলের কেউ।

প্রহরী সীমান্তরক্ষীরা একদিন মদিনা-সীমান্ত দিয়ে ইহরাম পরিহিত এক লােককে পাড় হতে দেখল। তখন তারা লােকটির নিকটে গিয়ে পরিচয় জানতে চাইল ও এ দিক দিয়ে চলাচলের উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলাে; সে বললাে, আমি ছুমামা ইবনে উসাল, বনি হানিফার সরদার (বনু হানিফা নাজদ-বর্তমানে রিয়াদ-বসবাসকারী একটি গােত্র) তখন সীমান্তরক্ষী সাহাবিরা তাকে বলল, এখান দিয়ে কোথায় যাচ্ছ? সে বললাে, আমি মক্কায় যাবাে। সাহাবায়ে কেরাম রা. জানতেন যে, মক্কা হল রিয়াদের পশ্চিমে অবস্থিত, সুতরাং কেউ রিয়াদ থেকে মক্কায় যেতে চাইলেমদিনার এই পাশ দিয়ে আসার কথা নয়। তাই তাঁরা মনে করলাে যে, অবশ্যই লােকটা কোনাে বাহিনীর অগ্রগামী দলের সদস্য হবে। অন্যথায় সে এখান দিয়ে হাঁটাহাটি করবে কেনাে? তাই তারা তাকে ধরে মদিনায় নিয়ে এলাে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তাই তারা তাকে মসজিদের পিলারের সাথে বেঁধে রাখলাে।

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এসে সালাত আদায় করার পর তাঁরা তাঁকে বলল, আমরা সীমান্ত থেকে এই লােকটাকে ধরে এনেছি, সে সীমান্তের আশপাশে হাঁটাহাঁটি করছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অত্যন্ত কোমলতা ও সহানুভূতির সাথে বললেন, কে তুমি? সে বললাে, আমি ছুমামা ইবনে উসাল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে বললেন তুমি কি নাজদের বনি হানিফের সরদার? সে বললাে, হাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে রেখে সাহাবায়ে কেরাম রা.এর নিকট গেলেন এবং তাদের বললেন তােমরা কি জানাে তােমরা কাকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছাে? তারা বললাে, না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নাজদের বনি হানিফের সরদার ছুমামা ইবনে উসালকে গ্রেফতার করেছাে। মক্কা যত গম ও যব আমদানি করে তা এই লােকটির নিকট থেকেই আসে। এমন একজন লােককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যে নাজদের বনি হানিফের সরদার এবং মক্কা যত গম ও যব আমদানি করে তা এই লােকটির নিকট থেকেই আসে!!

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসলেন এবং তাকে বললেন, হে ছুমামা! ইসলাম গ্রহণ করাে। সে বলল, না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছুমামা তােমার সাথে কী আচরণ করা হবে বলে তুমি মনে করাে? সে বলল, আপনি হত্যা করতে চাইলে একজন রক্ত-মাংসের মানুষকে হত্যা করুন (এটা একজন দৃঢ়চিত্তসম্পন্ন বাদশার মতােই কথা)। তিনি বললেন, আপনি হত্যা করতে চাইলে একজন রক্ত-মাংসের মানুষকে হত্যা করবেন, আর যদি অনুগ্রহ করতে চান তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করবেন। অর্থাৎ আপনি যদি আমার উপর দয়া করে আমাকে মুক্ত করে দেন তাহলে আপনি একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করলেন। আর যদি আপনি সম্পদ চান তাহলে আপনার যা ইচ্ছা তা চাইতে পারেন, আমার সম্প্রদায়ের লােকেরা আপনাকে তা দিয়ে দিবে। তারা আপনাকে মিলিয়ন দেরহাম দিতেও প্রস্তুত আছে; কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনােটাই চাচ্ছিলেন না। তিনি তাকে হত্যাও করতে চাচ্ছিলেন না, আবার তার কাছ থেকে ফিদয়া নিয়ে তাকে কাফের অবস্থায়ও ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলেন না। তিনি চাচ্ছিলেন যে, সে ইসলামের প্রতি প্রভাবিত হয়ে এখান থেকে ফিরে যাক।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ঐ অবস্থাতে রেখে আজকের মতাে বিদায় নিলেন এবং সাহাবয়ে কেরামকে নির্দেশ দিলেন, তারা যেনাে তার সাথে উত্তম ব্যবহার করে, ভাল ভাল খাবার পরিবেশন করে, এবং তার বাহনটিকে প্রতিদিন সকাল বিকেল তার সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে যায়, কারণ মানুষ তার বাহনকে অনেক ভালবাসে। বর্তমানে যেমন অনেকের পছন্দের মডেলের গাড়ি থাকে, কোথাও গেলে পছন্দের সেই গাড়ি নিয়ে যায়। কোনাে কারণে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার পরিবর্তে একই মডেলের আরেকটি গাড়ি কিনে নেয়; কিন্তু আগে মানুষের নিকট গাড়ি ছিলাে না; তারা পশুর উপর আরােহণ করতাে, তাই তাদের নিকট বাহনের কদর ছিলাে অনেক বেশি, কারণ অনেক কষ্ট করে একটি পশুকে বহনের উপযুক্ত করে প্রশিক্ষিত করতে হত।

আর একটি প্রশিক্ষিত পশু তার মালিকের মেজায ও অনুভূতি বুঝতাে ও সে অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করতাে। সুতরাং সেকালে মানুষের কাছে বহনউপযােগী পশুর কদর ছিলাে অনেক বেশি। বিশেষ করে দূরদূরান্তে সফরউপযােগী প্রশিক্ষিত পশুর। আর একারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুমামা ইবনে উছালের সামনে দিয়ে সকাল বিকেল তার বাহনটি ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন, যাতে সে আশ্বস্ত থাকতে পারে যে, তার বাহনটির কোনাে ক্ষয়ক্ষতি করা হয়নি। বর্তমানে অসংখ্য উট রয়েছে যেগুলাে ভ্রমনের উপযােগী নয়। সেগুলাে খাওয়ার উপযুক্ত। তুমি সেগুলাে জাবাই করে তার গােশত খেতে পারবে; কিন্তু সেগুলােতে আরােহণ করে কোথাও ভ্রমণ করতে পারবে না। এখন তাে ভ্রমণের উপযােগী পশু খুবই কম বরং একশ’র মধ্যে একটি পাওয়াও কঠিন।

সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুমামা ইবনে উছালের সামনে দিয়ে সকাল-বিকেল তার বাহনটি ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন, যাতে সে আশ্বস্ত থাকতে পারে যে, তার বাহনটির কোনাে ক্ষতি করা হয়নি, তাকে হত্যা করা হয়নি বরং সেটা এখনও জীবিত রয়েছে এবং আগের মতই অক্ষত রয়েছে। পর দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। ছমামা ইবনে উসাল নামাযে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুরআন তেলাওয়াত শুনলেন। এরপর সারা দিন তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর আচরণ দেখলেন। অতঃপর দ্বিতীয় দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে বললেন, ছুমামা! তােমার সাথে কী আচরণ করা হবে বলে তুমি মনে করাে?

আমি গতকাল যা বলেছি তাই, আপনিহত্যা করতে চাইলে একজন রক্ত-মাংসের মানুষকে হত্যা করবেন,আর যদি অনুগ্রহ করতে চান তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরঅনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি সম্পদ চান তাহলে আপনার যা ইচ্ছা তা চাইতে পারেন, আমার সম্প্রদায়ের লােকেরা আপনাকে তা দিয়ে দিবে। তারা আপনাকে মিলিয়ন দেরহাম দিতেও প্রস্তুত আছে; কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তিনটি প্রস্তাবের কোনােটিই পছন্দ করলেন না। তিনি তাে চান ছুমামা ইসলামের সুশীতল হাওয়ায় মােহিত হােক।

তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ রইলেন এবং তার কাছ থেকে চলে গেলেন। আর ছুমামা সাহাবায়ে কেরামের সাথে মসজিদে রয়ে গেল, তিনি সাহাবায়ে কেরামের আচার-আচরণ দেখছিলেন আর মুগ্ধ হচ্ছিলেন। তিনি দেখছিলেন সাহাবায়ে কেরামের কেউ সালাত আদায় করছেন, কেউ আল্লাহ তাআলার দরবারে কান্নাকাটি করছেন, কেউ কুরআন তেলাওয়াত করছেন। এই দৃশ্যগুলাে তার মধ্যে ধীরেধীরে প্রভাব বিস্তার করতে থাকলাে। এর পরের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ছুমামা তােমার সিদ্ধান্ত কী? সে বললাে, আমি আগে যা বলেছি তাই।

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে কী করলেন? তিনি কি তার মাথার উপর তরবারি ধরে তাকে বললেন যে, ইসলাম গ্রহণ করাে, না হলে হত্যা করবাে!! না তিনি এটা করলেন না, কারণ জোর করে ভয় দেখিয়ে কাউকে ইসলাম গ্রহণ করানাে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন : দীনের ব্যাপারে কোনাে জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত (সত্য-সঠিক পথ) ভ্রষ্টতা থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যে পথভ্রষ্ট তাগুতকে না মেনে আল্লাহতে বিশ্বাস করবে সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ়-মজবুত হাতল যা ভাঙ্গবার নয়। আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।‘ [সুরা বাকারা, আয়াত : ২৫৬]

অন্য আয়াতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন: অতএব, যার ইচ্ছা বিশ্বাস স্থাপন করুন এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক।‘ [সুরা কাহাফ, আয়াত : ২৯]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম গ্রহণ করার জন্যে কারাে উপর চাপ সৃষ্টি করেন নি এবং ইসলাম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কাউকে বাধ্যও করেননি। তিনি বলেন : হে মানুষ! তােমরা ‘লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহু’ বলাে, সফল হবে, নাজাত পাবে।

এমনকি তিনি মক্কার মানুষদেরও ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করেন নি, যারা তাকে নির্যাতন করে মক্কা থেকে বের করে দিয়েছিল।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দেখলেন ছুমামা ইসলাম গ্রহণ করছে না এবং তার ইসলাম গ্রহণের কোনাে সম্ভাবনাও নেই; সে ইসলাম গ্রহণের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছে, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে কীধরনের আচরণ করলেন?

ছুমামা ইবনে উসাল ছিলেন সম্মানিত মানুষ। তাই তার সাথে তিনি সেই ব্যবহারই করলেন যা তার জন্যে উপযুক্ত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তৃতীয়বার তার কাছে আসলেন এবং তার সিদ্ধান্ত জানতে চাইলেন এবং সে আগের মতই তার উত্তর দিল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সাহাবায়ে কেরাম রা.কে বললেন, তােমরা ছুমামাকে ছেড়ে দাও। সাহাবায়ে কেরাম রা. বললেন, আমরা তার কাছ থেকে কোনােধরনের মুক্তিপন আদায় না করেই তাকে ছেড়ে দিব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ তাকে ছেড়ে দাও।

অথচ ছুমামা ছিলাে এমন এক কওমের সরদার যে কওমের কাছে রয়েছে প্রচুর সম্পদ, গম-যবের ভান্ডার। তা সত্ত্বেও তিনি বললেন, তােমরা তাকে ছেড়ে দাও। আর ছুমামা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানদের এই আচরণ ও কোমল ব্যবহার দেখে সেখান থেকে বের হলেন।

ছুমামা ইবনে উসাল মসজিদ থেকে বের হয়ে নিকটের একটি পানির স্থানে গেলেন এবং গােসল করে দ্বিতীয়বার ইহরাম পরিধান করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন:

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনাে মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল। এরপর ছামামা ইবনে উসাল রা. বললেন, আল্লাহর শপথ! আপনার চেহারার চেয়ে ঘৃণিত চেহারা আমার কাছে আর একটাও ছিলাে না। আর এখন আপনার চেহারা আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় চেহারা। আল্লাহর শপথ আপনার শহরের চেয়ে ঘৃণিত শহর আমার কাছে আর একটাও ছিলাে না, আর এখন আপনার শহরই আমার কাছে সব চেয়ে প্রিয় শহর। আপনার ধর্মের চেয়ে ঘৃণিত আর কোনাে ধর্ম আমার কাছে ছিলাে না, আর এখন আপনার ধর্মই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ধর্ম। হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে কিছুর নির্দেশ দিন। আমি এখন মুহরিম (ইহরাম পরিহিত) অবস্থায় আছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি তােমার ওমরাহ পূর্ণ করাে।

ছুমামা ইবনে উসালা রা, মক্কার দিকে যাত্রা করলেন, তিনি যখন মক্কায় গেলেন তখন তাঁর তালবিয়া পাল্টে গেল।

তখন কুরাইশরা তার নিকট জড়াে হয়ে তাঁকে বলল, নতুন তালবিয়া!! তিনি বললেন হাঁ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনাে মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। তখন মক্কার লােকেরা তার উপর ঝাপিয়ে পড়লাে এবং তাঁকে প্রহার করতে শুরু করলাে, যাতে করে তারা তাকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। হাঁ এটাই হচ্ছে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের সাথে পার্থক্য, ইসলাম কাউকে তরবারি উঁচিয়ে জোরপূর্বক ইসলামে প্রবেশের কথা বলে না বরং কাফেররাই মানুষকে ইসলাম থেকে বের করার জন্যে শক্তি ও তরবারি উভয়টাই ব্যবহার করে। আমরা দেখেছি এবং একথা আমরা কখনাে ভুলতে পারবাে যে, ক্রুসেডাররা বাইতুল মাকদিস দখলের পর সেখানকার মুসলমানদের সাথে তারা কীধরনের আচরণ করেছিলাে, তারা সেখানে নির্বিচারে নিরিহ মুসলমানদের হত্যা করেছে, এমনকি শিশুরাও পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহায় পায়নি, মসলমানদের রক্তে তাদের ঘােড়ার হাঁটু পর্যন্ত তলিয়ে গিয়েছিলাে।

মুসলমানদের দীর্ঘ ইতিহাসে এমন একটি ঘটনাও নেই। যাই হােক পূর্বের ঘটনায় ফিরে আসি, ছুমামা রা.কে প্রহার করতে দেখে আব্বাস রা. চিৎকার করে বললেন, হে লােকেরা! তােমরা কাকে মারছাে? এ-তাে বনি হানিফার সরদার! এ-তাে ছুমামা ইবনে উসাল। আল্লাহর শপথ তােমরা যদি ছুমামাকে প্রহার করাে তাহলে তােমাদের নিকট বনি হানিফা থেকে গমের একটি দানও আসবে না। তােমরা তাে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করতে চাচ্ছাে। সে তাে তােমাদের উপর অর্থনৈতিক অবরােধ আরােপ করবে, তােমাদের নিকট খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিবে। আব্বাস রা.-এর কথা শুনে লােকেরা তাঁকে প্রহার করা বন্ধ করলাে। ছুমামা রা.তখন বললেন, আল্লাহ শপথ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি না দিলে তােমাদের নিকট গমের একটি দানাও আসবে না।

অতঃপর কুরাইশরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একজন দূত পাঠিয়ে তাকে অনুরােধ করে বললেন, হে মুহাম্মদ! এই লােকটি আমাদের খাদ্যের উপর অবরােধ আরােপ করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ তাঁকে কুরাইশদের নিকট খাদ্য রপ্তানি করতে বললেন।

হাঁ, এভাবেই ইসলাম প্রচারিত হয়েছে। এভাবেই উত্তম আখলাকের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচার করেছেন। মানুষ তার উত্তম চরিত্র দেখে মুগ্ধ হয়ে ইসলামগ্রহণ করেছেন। আর যুদ্ধ ও জিহাদের মাধ্যমে ঐসকল অপশক্তিকেই রুখে দেওয়া হয়েছে যারা মানুষকে সত্য দীন ইসলাম গ্রহণ করাথেকে বাধা দিচ্ছিলাে। যারা মানুষের মাঝে ও ইসলামের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন এখানে আমি আপনাদের সামনে একটি পরিসংখ্যান পেশ করছি যা আমি ড, রাগেব আস-সিরজানির একটি বইয়ে পড়েছি, তিনি তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে যতগুলাে যুদ্ধ হয়েছে এবং তাতে মুসলমানদের থেকে যত জন শহিদ হয়েছেন তার সংখ্যা এবং কাফেরদের থেকে যারা নিহত হয়েছে তার একটা তালিকা উল্লেখ করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় সর্বমােট যুদ্ধ হয়েছে ৬৩ টি। এর মধ্যে গাযওয়া হচ্ছে ২৭টি। আর সারিয়্যা হচ্ছে। ৩৮টি। আর সবগুলাে যুদ্ধ মিলিয়ে মুসলমানদের থেকে সর্বমােট শহীদের সংখ্যা হল ২৬২ জন। আর কাফেরদের থেকে নিহতের সংখ্যা হল সর্বমােট ১০২২ জন। এবার তুমি যদি অনুসন্ধান করাে দেখতে পাবে যে, যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মুসলিম মুজাহিদদের মােট সৈন্যের মাত্র ১% যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। আর কাফেরদের থেকে যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মােট সৈন্যের মাত্র ১.৫% যুদ্ধে নিহত হয়েছে। এর অর্থ কী?

এর অর্থ কি এটা দাঁড়ায় না যে, ইসলাম ও মুসলমানরা কখনাে করাে রক্ত চায় না, অযথা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করতে চায় না। এবার এসাে কাফেরদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি যুদ্ধের পরিসংখানের দিকে দৃষ্টি দেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মােট নিহতের সংখ্যা হল ৫৪.৮ মিলিয়ন। কি অবাক লাগছে? তুমি এর চেয়েও বেশি অবাক হবে যদি তুমি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যদের সংখ্যা দেখাে। হাঁ সেটি অবাক হওয়ারই বিষয়, কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মােট সৈন্যের সংখ্যা ১৫.৬ মিলিয়ন। অর্থাৎ যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সৈন্যদের চেয়ে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৪ গুণ বেশি। সুতরাং বুঝায় যায় যে, নিহতের বেশিরভাগ মানুষই হল নিরপরাধ সাধারণ জনগণ। সৈন্যরা বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে নির্বিচারে সেখানকার সাধারণ মানুষদেরকে হত্যা করেছে।

সেখানকার নারী, শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ সকলকেই হত্যা করেছে। তারা বিভিন্ন জনবসতিতে প্রবেশ করে সেখানে নির্বিচারে গুলি করে, বােম্বিং করে, পারমাণবিক বােমা ফেলে মানুষ হত্যা করেছে। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের আমিরদের কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন, তারা যেনাে কোনাে আহতকে হত্যা না করে। কোনাে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি এমন সাধারণ মানুষদের হত্যা না করে। এমনকি তিনি গির্জার পাদ্রিদেরও হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর একারণেই আমরা দেখতে পাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে ঘটে যাওয়া যুদ্ধে শহিদ ও নিহতের সংখ্যা মােট যােদ্ধার ১% বা ২% অথবা এর চেয়েও কম।

বদরের বন্দিদের একত্র করা হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। তিনি সাহাবাদের বলে দেন যে, তারা যেনাে যুদ্ধবন্দিদের সাথে ভাল ব্যবহার করে, তাদের সামনে ভাল খাবার পরিবেশন করে। মুসআব ইবনে উমায়ের রা. বলেন, আমার এক ভাই বন্দি ছিলাে। আমরা ছিলাম পাহারাদারির দায়িত্বে। বন্দিদের জন্যে রুটি আর পানি দেওয়া হলে, আমরা তাদেরকে খেজুর আর পানি দিয়ে আমরা নিজেরা শুকনাে রুটি খেয়েছি। এই আচরণ দেখে কাফের বন্দিরা পর্যন্ত লজ্জিত হয়ে বলেছে, তােমরাও খেজুর নাও। তখন আমরা বলেছি, না রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তােমাদের প্রতি সদাচারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ কারণেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন: তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতিম-অনাথ ও বন্দিকে আহার্য দান করে।‘ [সুরা ইনসান, আয়াত : ৮]

ইসলাম যদি শুধু মাত্র তরবরির মাধ্যমেই বিজয় অর্জন করতাে তাহলে যখন তাঁদের উপর থেকে তরবারি উঠে যেতাে তখন তারা আবার তাঁদের কুফরিতে ফিরে যেতাে। বর্তমান রাশিয়াতে কি এটাই ঘটেনি? রাশিয়াতে ৭৩ বছর সমাজতন্ত্রের শাসন চলেছে। সমাজতন্ত্রিরা মানুষকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক কমিউনিস্ট বানিয়েছে। এরপর যখনই সমাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছে। তখন মানুষ আবার তাদের আগের ধর্মে ফিরে গেছে, খৃস্টানরা খৃস্টধর্মে ফিরে গেছে আর মুসলমানগণ ইসলাম ধর্মে ফিরে এসেছে। সুতরাং কোমলতা ছাড়া শুধু অস্ত্র তােমার কোনাে কল্যাণ বয়ে আনবে না।

কিন্তু একবার ইসলাম গ্রহণের পর মানুষ আর তাঁদের আগের কুফরি ধর্মে ফিরে যায়নি। বরং ইসলাম তাদের অন্তরে চিরদিনের জন্যে গেঁথে গেছে, সকল ঝড়ঝাপটা ও বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা ইসলামকে আঁকড়ে ধরেছে। আর একারণেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন: আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও সদুপদেশ শুনিয়ে এবং (যদি কখনাে বিতর্কের প্রয়ােজন পড়ে তাহলে) তাদের সাথে বিতর্ক করুন উৎকৃষ্ট পন্থায়।‘ [সুরা নাহল, আয়াত : ১২৫]

ইন্দোনেশিয়া, যেখানে বর্তমান মুসলমানের সংখ্যা ২৩০ মিলিয়ন। সেখানে ইসলাম প্রচারের জন্যে কোনাে তরবারি ব্যবহার হয়নি। মুসলিম ব্যবসায়ীরা সেখানে গিয়েছেন স্থানীয় লােকেরা মুসলমানদের ব্যবাহার দেখে মুসলমান হয়েছেন। ব্যবসায়ীরা প্রথমে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন, অতঃপর মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন তারা এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আরাে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন, এভাবে পূরাে ইন্দোনেশিয়াতে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে। এবং বর্তমানেও যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন তাঁদের কেউ তরবারির মাধ্যমে ইসলামে প্রবেশ করতে বাধ্য করছে না। বরং তারা ইসলামের মূল সৌন্দর্য দেখে স্বেচ্ছায় ইসলামে প্রবেশ করছেন। উদাহরণস্বরূপ জার্মানির কথাই বলা যাক, সেখানকার সরকার বলছে, জার্মানিতে দিন দিন ইসলাম গ্রহণকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জার্মান সরকার বলছে, বর্তমানে জার্মানে প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। এই পরিসংখ্যানটা হল ২০০৬ থেকে ২০১০ পর্যন্ত।

এরা কি তরবারির ভয়ে মুসলমান হয়েছেন? এ-তাে তােমার সামনে জার্মান সরকারের হিসেব। আমার যেসকল বন্ধু জার্মানে থাকে, আমি তাদের বিষয়টি সম্পর্কে জেজ্ঞেস করেছি, তাদের বলেছি সত্যিই কি এই সংখ্যক মানুষ মুসলমান হচ্ছে? তখন তারা আমাকে বলেছে, না এটা সঠিক সংখ্যা নয়; বরং সঠিক সংখ্যাটা আরাে বেশি। এটা সরকারি হিসেব, সরকার সঠিক সংখ্যাটা প্রকাশ করতে চাচ্ছে না।

ইসলাম স্রতা ও কোমলতার মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। অনুরূপভাবে ইসলাম জিহাদের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছে। একথা বলা ভুল যে, ইসলাম তরবারির মাধ্যমে প্রসারিত হয়নি। আবার একথা বলাও ভুল যে, ইসলাম শুধু মাত্র তরাবারির মাধ্যমেই প্রসারিত হয়েছে। বরং ইসলাম এই দুইটার সমন্বয়ে প্রসারিত হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের মাধ্যমে জবরদখলকারীদের জুলুম নির্যাতন দূর হয়েছে এবং মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য দেখার সুযােগ পেয়েছে, ফলে তারা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করেছে। অনুরূপভাবে উত্তম কথা ও কোমল ব্যবহারের মাধ্যমেও ইসলাম প্রসারিত হয়েছে। (সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, ইসলাম প্রসারিত হয়েছে তরবারি বিশিষ্ট আখলাকের মাধ্যমে)।

মহান আল্লাহ তাআলা নিকট প্রার্থনা করি, তিনি আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণ কল্যাণ দান করুন। আমি এবং আপনারা যে যেখানেই থাকি, তিনি আমাদের কল্যাণ ও বরকতের সাথে রাখুন এবং আমাদের সকলকে তার আনুগত্যে লেগে রাখুন। আমিন!!

উৎস: আত্মবিশ্বাসপৃষ্ঠা: ৪৪ -৫৭

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন