যাদের জন্য জান্নাতে বাড়ি বরাদ্দ

50
4603

অনুবাদক : সিরাজুল ইসলাম আলী আকবর

আবু উমামা আল বাহেলী রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের তৃতীয় শ্রেণিতে একটি বাড়ির জিম্মাদার যে কলহ বিবাদ পরিত্যাগ করে; যদিও সত্য তার পক্ষেই হয়। আর ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের দ্বিতীয় শ্রেণিতে একটি বাড়ির জিম্মাদার, যে মিথ্যাকে পরিত্যাগ করে; যদিও তা হাসি-তামাশাচ্ছলে হয়। আর ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের প্রথম শ্রেণিতে একটি বাড়ির জিম্মাদার, যে উত্তম চরিত্রের ধারক।” (আবু দাউদ: ৪৮০০, সনদটি হাসান।)

হাদিস বর্ণনাকারী—: বর্ণনাকারী রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশিষ্ট সাহাবি। নাম সাদি বিন আজলান আল-বাহেলি। উপাধি, আবু উমামা। পিতার নাম আজলান, বাহেল নামক স্থানের অধিবাসী হওয়ার ফলে তাকে বাহেলী বলা হয়। তিনি রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে জ্ঞানের এক বিশাল ভাণ্ডার সংগ্রহ করেছিলেন। ৮১ মতান্তরে ৮৬ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

আভিধানিক ব্যাখ্যা

  • زَعِيْمٌ জিম্মাদার, দায়িত্বভার বহনকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأَنَا بِهِ زَعِيمٌ এবং আমি তার জিম্মাদার। (সুরা ইউসুফ ৭২)

بِبَيْتٍ বালাখানা, জান্নাতের প্রাসাদ।

رَبَضِ الْجَنَّةِ – ر ও ب বর্ণে জবর হবে। অর্থ : নীচের স্তরের বা তৃতীয় শ্রেণির।

الْمِرَاءَ – م বর্ণে যের হবে। অর্থ কলহ বিবাদ।

مُحِقًّا – অর্থ, তার ধারণা সে হকের উপর রয়েছে।

الْكِذْبَ – মিথ্যা, তথা বাস্তবের বিপরীত।

হাদিসের শিক্ষণীয় বিষয়:

(১) সফল আহবায়ক ও অভিভাবক সেই ব্যক্তি যে তার কথাগুলো এমন কৌশলে শ্রোতাদের নিকট উপস্থাপন করে যে, শ্রোতাবৃন্দ তার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে গ্রহণ করে। যেমন এখানে রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু গুণের প্রতি এ বলে অনুপ্রাণিত করেছেন যে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার।

(২) জান্নাত হল প্রত্যাশীদের সর্বোচ্চ প্রত্যাশা এবং প্রতিযোগীদের সর্বাধিক প্রতিযোগিতার বিষয়। সফলকাম সে যে জান্নাত লাভের জন্য সচেষ্ট হয়। ভাগ্যবান সে যে তা অর্জনের জন্য অধিক পরিমাণে নেক আমল করে। জান্নাত অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ, তা অর্জন করা শুধু তার জন্যই সহজ হয়, যার জন্য ঐশীভাবে বিষয়টি সহজ করা হয়।

(৩) জান্নাত—যা আল্লাহ তাআলা মোমিন বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন—বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত। বর্ণিত হাদিসে সে সব লোকদের জন্য জান্নাতের শুভ সংবাদ দেয়া হয়েছে, যারা তিনটি গুণের যে কোন একটি দ্বারা অলংকৃত হয়েছে।

(ক) অনর্থক কলহ বিবাদ থেকে দূরে থাকা। এরূপ ব্যক্তির জন্য জান্নাতের তৃতীয় শ্রেণি বরাদ্দ। কেননা কলহ বিবাদ মানুষকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে বাধ্য করে ও পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। ফলে তাকে মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে অক্ষম করে দেয়। সুতরাং, প্রকৃত মুসলমান সব ধরনের কলহ বিবাদ পরিহার করে চলে।

(খ) মিথ্যা থেকে দূরে থাকা—হোক তা উপহাস মূলক। এ গুণে অলংকৃত ব্যক্তির জন্য জান্নাতের দ্বিতীয় শ্রেণির বাড়ির শুভ সংবাদ রয়েছে। এ ব্যক্তি এহেন সম্মানে ভূষিত হওয়ার কারণ এই যে, সে কথা ও কাজে মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে সর্বদা সত্য ও বাস্তবের উপর স্থির থাকে। যখন কথা বলে তখন সত্যই বলে। আর যখন কোন সংবাদ প্রচার করে তখন সত্য সংবাদই প্রচার করে। মিথ্যা একটি জঘন্য অপরাধ। তাই মিথ্যা কপটতার লক্ষণসমূহের মাঝে অন্যতম। যেমন আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি:(১) মিথ্যা বলা(২) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা ও(৩) আমানতের খেয়ানত করা বা গচ্ছিত বস্তুতে অনধিকার হস্তক্ষেপ করা। (সহীহ বুখারী ৩৩, মুসলিম ৫৯)

মিথ্যা বড় বড় গোনাহ সমূহের অন্যতম। মিথ্যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিরাট ক্ষতির উদ্রেককারী। রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কেননা মিথ্যা অপকর্মের উদগাতা। আর অপকর্মের পরিণাম ফল জাহান্নাম। পৃথিবীতে কিছু লোক আছে, যারা খুব মিথ্যা বলে। মিথ্যা বলায় সদা সচেষ্ট থাকে। পরিশেষে আল্লাহর নিকট মিথ্যুক বলে লিখিত হয়ে যায়। (মুসলিমঃ ৪৭২১, আবু দাঊদঃ ৩৯৭১)

এ মস্ত বড় সতর্ক বাণী, যা প্রতিটি মিথ্যুকের জন্য প্রযোজ্য। যদিও এ মিথ্যা শুধু মজা করার জন্য বলা হয়। রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— ধ্বংস সে ব্যক্তির জন্য, লোক হাসানোর জন্য যে মিথ্যা বলে, তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস ।(আবু দাঊদঃ ৩/৪৯৭২, শাইখ আলবানি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)সবচেয়ে জঘন্য মিথ্যা কথা হল, আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের উপর মিথ্যা বলা। এমনিভাবে সম্পদের জন্য মিথ্যা কথা বলা।

(গ) সৎ চরিত্র ও উত্তম আদর্শ ব্যক্তির জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ গুণে অলংকৃত ব্যক্তির জন্য রয়েছে জান্নাতের প্রথম শ্রেণির বাড়ির শুভ সংবাদ। যেহেতু এই ব্যক্তি এক মহৎ গুণের অধিকারী, আর তা হল সৎ চরিত্র ও উত্তম আদর্শ, যা ছিল নবীকুল শিরোমণি মোহাম্মদ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বিশেষ গুণ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন— “…আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।”(সূরা কলম : ৪)

এই মহান চরিত্রই হল সর্ব উৎকৃষ্ট গুণ, যা মুসলমানদের জন্য জগতবাসীর কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ও পরকালে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উপায়।

রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— “কেয়ামতের দিন যে সব আমল ওজন করা হবে তার মাঝে সবচেয়ে বেশি ওজনী আমল হবে সৎ চরিত্র বা উত্তম আদর্শ। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির উপর অসন্তুষ্ট যে অশালীন ও অসৎ চরিত্রবান।” (তিরমিজিঃ ১৯২৫)

(৪) ইসলামের দাবি হল মুসলিম সমাজের প্রতিটি মানুষের মাঝে বিরাজ করবে মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে সুসম্পর্ক। যেখানে থাকবে না কোন প্রকার হিংসা বিদ্বেষ ও কুরুচিকর কর্মকাণ্ড।

(৫) ইসলামের মূলনীতির অন্যতম হল ভাল বস্তুর উপকার দ্বারা উপকৃত হওয়ার চেয়ে মন্দের অপকারিতা থেকে বাঁচার প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা। সুতরাং যে কলহ বিবাদ মানুষকে সমস্যার সম্মুখীন করবে, তা হতে দূরে থাকাই উচিত।

সমাপ্ত

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

50 COMMENTS

  1. আসসালমু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ ।প্রিয় ভাই ও বোনেরা এই হাদিসটির উপর আমল করে আমরা সহজেই জান্নাতের অধিকারী হতে পারি । এখানে একটি শর্ত আছে অবশ্যই, শিরক মুক্ত ঈমানের অধিকারী হতে হবে । আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন ও হাদিসটির উপর আমল করার তৌফিক দিন । আমিন ।

  2. ভাই হাদিস দেন ভালো কথা।কোন রকম ছবি দেবার চেষ্টা করবেন।জান্নাত কি আপনি দেখেছেন।যে জান্নাতের ব্যঙ্গ চিত্র দিলেন।এই রকম কাজ প্লিজ আর করবেন না

  3. ভাই এখানে কি কোথাও লিখা আছে যে এটা জান্নাতের ছবি ?

  4. আললাহ এ রকম একটা সুন্দর বাড়ী তুমি আমাকে জান্নাতে দিও।আমীন।

  5. allah ami tomar neamot theke bonchito hote chai na.. apni kobol korun amin..

আপনার মন্তব্য লিখুন