লেখকঃ নুমান আবুল বাশার | সম্পাদনা: চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
হে আমার সন্তানেরা! আমি তোমাদেরকে প্রশ্ন করব, তোমরা উত্তর দেবে। এ ব্যাপারে কি তোমাদের কারো কোনো সন্দেহ আছে যে, তোমরা প্রত্যেকেই আমার অন্তরের একটি অংশ দখল করে আছো?
তোমাদের জবাব হবে: অবশ্যই এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।
তবে জেনে রেখো, এ মুহূর্তে তোমাদের প্রত্যেককে বিদায় জানাতে গিয়ে আমার অন্তরের এক একটি অংশ উপড়ে যাচ্ছে। সুতরাং, যার অন্তর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হচ্ছে, অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, যাকে কলজে ছেড়া টুকরোগুলোকে বিদায় জানাতে হচ্ছে, তাকে কি কোনো অপবাদ দেয়া যায়, দোষ ধরা চলে ?
হে আমার সন্তানেরা ! তোমাদের পিতার অন্তরে তোমাদেরকে বিদায় জানানো কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে, তা কীভাবে আমি বর্ণনা করব? কী করে এই রক্তক্ষরণের বেদনা তোমাদেরকে বোঝাবো ?
আমার অন্তরের রক্তক্ষরণের যন্ত্রণাগুলো যদি শব্দেচিত্রায়নকরি, তাহলে হয়তো ভাববে, আমি অতিরঞ্জনের আশ্রয় নিচ্ছি। কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলবো, সন্তানের জগত থেকে তোমরা পিতার আসনে এসে কিছুটা সময় অতিবাহিত করো।তাহলে কলজেছেড়া টুকরোগুলোকে বিদায় জানানো পিতারঅন্তরেকী প্রতিক্রিয়া তৈরী করে, তার কিছুমুহূর্ত তোমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে।
সুতরাং হে আমার সন্তানেরা, আমার এ অসিয়তের প্রতিটি শব্দের ভিতরে ও বাহিরে মিশে আছে আন্তরিক ও স্বচ্ছ ভালোবাসা।জীবিত কারো প্রতি ভালোবাসই একে অতিক্রম করতে পারবেনা।
হ্যা, এ হচ্ছে কথা ও কলম থেকে উৎসারিত ফোটা ফোটা বিন্দু। কিন্তু মনে রেখ, এ বিন্দুগুলোর উৎস হচ্ছে হৃদয়ের গভীরতর ভালোবাসার সফেদ ঝর্নাধারা। এগুলো আমি তোমাদের শ্রবণে ফোটায় ফোটায় ঢেলে দিচ্ছি। অন্তর থেকে উৎসারিত ফোটাগুলো কি তোমাদের অন্তরের গভীরে স্থান দেয়াই কাম্য না?
হে আমার সন্তানেরা! অসিয়ত পরিত্যাগ আমাদের জন্য কখনোই যথপোযুক্ত হবে না।ইতিপূর্বে যদিও আমরা অসিয়ত পরিত্যাগ করে থাকি, তাহলে সে অভ্যাস পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।অন্যান্যরাও যদি এ ব্যাপারে উদাসীন থাকে, কিংবা একে তুচ্ছজ্ঞান করে, তাহলে তাদেরকে বোঝানো কর্তব্য।অসিয়ত কিতাব ও সুন্নাহ কর্তৃক স্বীকৃত। নবী ও তাদের অনুসারীগণ ও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছেন।সালফেসালেহীনের হিদায়াত ও বিবেক যৌক্তিক দাবী ও এটি।বিশেষত:মানুষ যখন সফরে যাত্রা করে, একে উপেক্ষা করা কখনোই ঠিক হবে না।
হে আমার সন্তানেরা! এটি তোমাদের জন্য আমার লিখিত অসিয়ত, যা আমি এ খামে ভরে রাখছি। আমার যাবতীয় ঋণ, হক ও দেনা-পাওনা এতে লিপিবদ্ধ আছে। মায়ের প্রতি, বড় ভাইয়ের প্রতি, একে অপরের প্রতি, আত্মীয়, পড়শী, সমাজ এবং সর্বোপরি তোমাদের শত্রুদের প্রতি তোমাদের কী হক, তা এতে সবিস্তারে লিপিবদ্ধ আছে। তোমাদের মায়ের কী কী দায়িত্ব, ইতিপূর্বেই আমি তাকে সে সম্পর্কে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে তিনি ভালোভাবেই জ্ঞাত।
প্রিয় সন্তানেরা! সফর দু ধরনের। দীর্ঘসফর ও সংক্ষিপ্তসফর।এ দু সফরের মধ্যে একটি মৌলিক মিল আছে।সে মিল হচ্ছে বিচ্ছেদ।
দীর্ঘ সফর হচ্ছে আখিরাতের সফর।এর বিচ্ছেদ ও দীর্ঘ।সংক্ষিপ্ত সফর হচ্ছে দুনিয়ার সফর।এর বিচ্ছেদ ও সংক্ষিপ্ত।কিন্তু আমি কায়মনো বাক্যে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছিযে, আমার পার্থিব এ সংক্ষিপ্ত সফর তাঁর প্রতি এবং তাঁর উদ্দেশ্যেই হচ্ছে।আমি তাঁরই ডাকে সাড়া দিতে সফরের নিয়ত করেছি। আগামীকাল- আল্লাহ চাহে তো- আল্লাহর ঘরের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদেরকে বিদায় জানাব। সুতরাং তোমরা এই ধারনার বশবর্তী হয়ে প্রতারিত হয়ো না যে, ইতিপূর্বেও আমরা সফর করেছি এবং ফিরে এসেছি। এ বারও এর ব্যত্যয় হবে না। এ সফরে আমরা ফিরে আসব, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিচ্ছেদ যেমন গায়েব ও তাকদীর সংশ্লিষ্ট বিষয়, তেমনি ফিরে আসাও গায়েবী ও তাকদীর সংশ্লিষ্ট। পার্থিব ঘটনা অনুঘটনায় এর মধ্যে তারতম্য দেখলেও মৌলিকভাবে এর মধ্যে কোনো তারতম্য নেই।
আমি তোমাদেরকে সর্বোত্তম অসিয়ত করছি। তা হচ্ছে: তাকওয়া অর্জন।প্রতিটিবিষয়ে, প্রতিটি কথায় ও কাজে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো।ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের চেয়ে উত্তম কোনো বন্ধন তোমাদের জন্য আমি দেখছি না।সৎ সংসর্গের চেয়ে উত্তম কোনো সম্পর্ক, আল্লাহকে ভালোবেসে একে অপরকে ভালোবাসার চেয়ে ভালো কোনো বন্ধন, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের চেয়ে কল্যাণকর কিছু, শাহাদাতের চেয়ে উত্তম কোনো আকাঙ্ক্ষা, ইল্মের অনুসন্ধানের চেয়ে উত্তম কোনো পথ, একে অপর থেকে উপদেশ গ্রহণের চেয়ে উত্তম কোনো মানসিকতা আমি দেখছিনা।প্রকৃত রূপে যে আল্লাহকে ভয় করে, তার কাছে পিতার উপস্থিতি-অনুপস্থিতি কোনো পার্থক্য তৈরী করবেনা।তাকওয়া হলো সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে উপস্থিত জ্ঞান করা, কোনো সৃষ্টিকে নয়।
হে আমার সন্তানেরা ! দায়িত্বশীল, বন্ধু, পিতা কিংবা এ শ্রেণীর গুরুজনদের বিদায়ে সাধারণত মানুষ অনেক কিছু হারায়। তবে পিতার বিদায়ে সবচেয়ে সমস্যায় আক্রান্ত হন যিনি, তিনি হচ্ছেন পরিবারের মা। কিন্তু মনে রাখবে, পিতার গমনের পর মা যদি সন্তানদের হাতে দুর্ভাগ্যপীড়িত হন, এর চেয়ে মন্দ আর কিছু হতে পারে না। এটি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল এবং তোমাদের পিতার নিকট কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কোনো সুস্থ বিবেকসম্পন্ন, দয়াবান কি এটি কোনোভাবে বরদাশত করতে পারে? তবে এ কথা সত্য যে, আমার বিকল্প হিসেবে তোমরা তোমাদের মায়ের জন্য যথেষ্ট নও।কিন্তু তিনি যদি তোমাদের থেকে সান্ত্বনা টুকুই না পান, তাহলে তার জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দেবে।তোমরা তার জন্য বিপদ হিসেবে আভির্ভূত হওয়া এবং যাবতীয় বিপদাপদের ক্ষেত্রে তিনিই হয়ে যান একক বহনকারী-সন্দেহনেই, এটি তার জন্য আরো কঠিন এক পরিস্থিতির তৈরী করবে।
প্রতিটি কাজে, ঘরে-বাইরে, কথায় ও আচরণে বোনদের সাথে রূঢ় আচরণ, কঠোরতা, সংশয় ও বাঁকা দৃষ্টিতে তাকানো কোনোভাবেই সম্মানজনক কাজ হতে পারে না। বোনদের ক্ষেত্রে ভাইদের জন্য সে আচরণই সর্বোত্তম ও সম্মানজনক, যা তাদেরকে মানসিক ও বাহ্যিক সুরক্ষা দেয়। ভাই-বোনদেরকে ভালোবাসা, সে ভালোবাসার আবহ তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই হচ্ছে তাদের জন্য সর্বোচ্চ সুরক্ষা। ভাই-বোনদের প্রতি স্নেহশীল ভাইয়ের ভূমিকাই তোমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিকা। অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, ভাই-বোনদের পারস্পরিক ভালোবাসা ও প্রীতির সম্পর্ক তাদের জন্য সর্বোত্তম সুরক্ষা বয়ে আনে। শয়তান বোনদের প্রতি অযথা কঠোরতা তৈরির মাধ্যমে সম্পর্কের ফাটল তৈরী করে। ভালোবাসার দাবী হচ্ছে বোনদের অন্তরের এক সহজাত প্রবৃত্তি। প্রয়োজন ও মানবিক ক্ষুধা হিসেবে তাদের অন্তরে এটি সর্বদা বিরাজ করে। যখন এ ভালোবাসা সে তার আপন গৃহে খুঁজে পায় না, তখন তার চোখ বাহিরে নিবদ্ধ হয়। হন্যে হয়ে খুঁজে বেরায় অন্যান্যদের মাঝে। এভাবেই, অধিকাংশ মেয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এক সময় পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে হারিয়ে যায় অন্ধকার জগতে। সুতরাং, তোমরা সতর্ক থেকো, যেনো তোমাদের কেউ পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হওয়ার কারণ না হয়। বোনদের জগতে সুরক্ষা ও প্রতিরোধের দেয়াল হওয়াই তোমাদের জন্য শ্রেয় ও সম্মানজনক।
হে আমার মেয়েরা ! ছেলেদের উদ্দেশ্যে আমি যা যা বলেছি, তোমাদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। এই ক্ষেত্রে তোমরা আলাদা কিছু নও। তোমরা সকলেই আমার সন্তান। তবে আমি তোমাদেরকে বিশেষভাবে উদ্দেশ্য করছি, কারণ, তোমরা আমার বাহ্য প্রতিবিম্ব সম্মান। সুতরাং সে হিসেবে তোমরা তোমাদের মনোভাব, আচরণ গড়তে সচেষ্ট হও। যে কোনো কারণেই হোক না কেন, যখন তোমরা মেয়েরা একে অপরে আলাপচারিতায় বসো, গীবত, কুটচর্চা, উপহাস ইত্যাদি পাপে নিজেদেরকে ও নিজেদের যবানকে কালিমাযুক্ত করো না। এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে আলাপচারিতার গতি তোমরাই নির্ধারণ করো এবং তাকে একটি সুস্থ, কল্যাণময় চিন্তার দিকে ধাবিত করো। এতে সকলেই ভালো কাজে অংশগ্রহণ করবে।
হে আমার মেয়েরা ! নারীদের ক্ষেত্রে মূর্খতা প্রকট আকার ধারন করে থাকে।উপরন্তু নানাবিধ আক্রমণ ও টানা হেচড়ায় তারা ক্রমাগত পর্যদুস্ত হয়ে উঠে।সুতরাং এ ক্ষেত্রে তোমাদেরকে খুবই বিশ্বস্ত হতে হবে, যতটা সম্ভবনারীদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করতে হবে।তোমাদের পক্ষে এ দায়িত্ব পালন তখনই সম্ভব, যদি তোমরা শরীআতের প্রয়োজনীয় ইল্ম অর্জনে সচেষ্ট হও, কুরআন হিফ্য করো এবং এ ব্যাপারে আলিম ও তালিবুল ইল্মদেরকে সহযোগিতা করো।নিশ্চয় এ হচ্ছে প্রজন্মের আমানত, যে আমানত রক্ষার ব্যাপারে বিশ্বস্ততার অভাব রয়েছে।
সুতরাং অনর্থন আলাপ চারিতায় ডুবে থাকা এবং নির্লজ্জ ফ্যাশন… ইত্যাদি থেকে তোমরা বিরত থাকো।এ ধরনের প্রবণতায় আক্রান্ত নারীদের থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকো।কারণ, যে বিভ্রান্ত নারী দেরকে রক্ষা করতে ব্রতী, তাকে অবশ্যই বিভ্রান্তির যাবতীয় কালিমা থেকে বিমুক্ত থেকে নিজেকে একশক্ত ভূমিতে স্থাপন করতে হবে, যেন কোনো কারণে পদস্খ লননা ঘটে।
হে আমার সন্তানেরা !আমি যেমন চেয়েছি, ঠিক তেমন সুন্দর করে যদি আমি তোমাদেরকে শিষ্টাচার শিক্ষা না দিয়ে ও থাকি, তবে আমার প্রতি তোমাদের সর্বোত্তম ইহসান হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে সুন্দর, শোভাময় শিষ্টাচারে ভূষিত করো।এবং তোমাদের ব্যাপারে আমার যেটুকু দূর্বলতা ছিল, তা পুরণ করেনাও।কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সেই ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করো, যে ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: “ওই যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবে না তবে যে আল্লাহর কাছে আসবে সুস্থ অন্তরে।” [সূরা শুআরা : ৮৮-৮৯]
আল্লাহর ওয়াস্তে আমি তোমাদের নিকট এই প্রার্থনাই করবো যে, তোমরা আমার ধ্বংসের কারণ হয়োনা।কারণ, কখনো কখনো আমি নিজেকে আপন নফ্সের প্ররোচনা থেকে সুরক্ষিত মনে করলেও পরিবার থেকে সুরক্ষিত মনে করি না।আমার নাজাতের কারণ না হতে পারলে ও জেনে-বুঝে তোমরা আমার আযাবের কারণ হয়ো না।এমন এক জন সন্তানের জন্য আমার মন-প্রাণ উদ্বেল হয়ে আছে, যার আমল আমার পাল্লাকে ভারি করে তুলবে, আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ কালে যে তার পিতার কথা বিস্মৃত হবে না।যার কারণে আমার কবরের আযাব লঘুক রাহবে এবং যার কারণে পার্থিবে আমার সম্মান ও মর্যাদা প্রভূত বৃদ্ধি পাবে।
সে সন্তানেই আমার মন ভরে উঠবে, চক্ষু শীতল হবে, কুরআন হিফ্য করার প্রতিদান স্বরূপ কিয়ামত দিবসে আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের সম্মুখে যার পিতাকে মর্যাদার তাজ ও অলংকারে ভূষিত করা হবে।
হে আমার সন্তনেরা ! রাসূলের সেমন্তব্যের চেয়ে ভালো কোনো কর্ম নীতিমালা আমি তোমাদের জন্য দেখছিনা, যাতে তিনি ইরশাদ করেছেন: “যেখানেই সালাতের সময় হবে, সালাত আদায় করে নাও। যমীন তোমার জন্য মসজিদ।” [বুখারী : ৩২৪৩]
আল্লাহকে ভয় করো, সালাতের সময় হওয়া মাত্র তা আদায় করো।মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করো।সালাতের প্রতি যত্নবান হওয়া যদি তোমাদের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়ায়, আরামদায়ক শয্যা ছেড়ে সালাতে দণ্ডায়মান হতে মন বিরুদ্ধ হয়ে উঠে, কাজের চাপ বেড়ে যায়, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে উক্তি স্মরণ করো, যাতে তিনি ইরশাদ করেছেন: “সালাত হচ্ছে সর্বোত্তম বিষয়, সুতরাং যে তা অধিক আদায় করতে পারবে, সে যেন অধিক আদায় করে।“[তাব্রানী : ২৪৩]
হে আমার সন্তানেরা ! আল্লাহর ভালোবাসাকে তোমরা সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করো।প্রতিকূল ও অনুকূল প্রতিটি বিষয়েই একে বিচারের মানদণ্ড হিসেবেগণ্য করো।যখন দুটি বিষয়ের একটি গ্রহণের প্রশ্ন আসে, তখন নিজেকে প্রশ্ন করো, এ দুটির কোন্টি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হওয়ার দাবীদার? এমনো বৃত্তির অনুসরণের ফলে দেখতে পাবে এক সময়ে তোমাদের নিকট আল্লাহর ভালোবাসাই একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে।আল্লাহর ভালোবাসা এবং তাঁর বিধানকে মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করাই তোমার জীবনের সাফল্যের জন্য যথেষ্ট।
হে আমার সন্তানেরা ! সালাত, যিক্র-আযকার এবং মসজিদে অবস্থানের মূল্যবান সময়গুলো বাজারের কোলাহল মুখর পাপবিদ্ধ পরিবেশে বিনষ্ট করো না।মুখ, চোখ এবং দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কে পাপ অর্জনের কারণ বানিয়ো না।পরকালে যে প্রশ্ন গুলোর মুখোমুখি তোমাদের কে দাঁড়াতে হবে, তার সর্বাগ্রেথা কবে সালাতের বিষয়টি।সুতরাং সে প্রশ্নের উত্তরের ব্যাপারে এখনি প্রস্তুতি গ্রহণ করো।কেবল সালাত আদায় সংক্রান্ত প্রশ্নই তোমাদের কে করা হবে না।বরং বিশুদ্ধ ও সঠিক পন্থায় আদায় করেছো কিনা, প্রশ্নের অন্যতম বিষয় হবেএটি।হাদীসে এসেছে: “সুতরাং, সালাত যদি সঠিক হয়, তবে তার সব কর্মই সঠিক হবে। আর যদি তা বিনষ্ট হয়, বিনষ্ট হবে যাবতীয় কর্ম।” [তাব্রানী : ১৮৫৯]
সুতরাং সালাতের পূর্বে যখন অজু-ইস্তেঞ্জা সহ প্রয়োজনীয় কর্ম সমাধা করবে, তখন পবিত্র তার প্রতিপূর্ণ মনোযোগ প্রদান করো।ধীরে-সুস্থে, পূর্ণ ধ্যান নিয়োগ করে অজু করো।সুন্নত ও নফলের প্রতি সজাগ হও।সালাতে খুশু-খুজু রক্ষা করো।সর্বোত্তম উপায়ে সালাত শেষ করো।সালাত শেষে তাসবীহ, তাহলীল এবং তাকবীর সঠিক রূপে আদায় করো।এর প্রভাব তোমাদের পুরো জীবনে ছড়িয়ে দাও।দেখবে, নাজাত তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করে থাকবে। এমন একটি দিন অতিবাহিত হতে দিও না, যেদিন তুমি আল্লাহর রাস্তায় কিছু ব্যয় করোনি। বাড়ীর অভ্যন্তরে আমরা যে বাক্সটি স্থাপন করেছি, দৈনিক আবশ্যকীয় খরচের কিছু রক্ষা করে হলেও তাতে কিছু জমাও। ধন্য সে যুবক, শৈশব থেকেই যে আখিরাতের জন্য কিছু কিছু সঞ্চয় করে। তাই সে ব্যক্তিগত ব্যায়ের কিছু অংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যায় করে। যৌবনের শক্তি ঢেলে দেয় ইবাদাতের জন্য। অবসর সময়গুলো যিকরের আমলে ব্যয় করে, রাতের আধারে আরামদায়ক শয্যা ত্যাগ করে দাঁড়িয়ে যায় আল্লাহর দরবারে। দৈনন্দিন খাদ্যগ্রহণের নিয়মতান্ত্রিকতা পরিহার করে রোযা রাখে। এগুলোই কি সে ভয়ানক সময়ে তার জন্য প্রতিরক্ষা হবে না? আখিরাতের প্রখরতম রৌদ্রে তার জন্য আল্লাহর আরশের ছায়া দেবে না ?
“সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না। …এমন যুবক, যে আল্লাহর ইবাদাতে লালিত হয়।” [বুখারী ১৩৫৭]
আমার আত্মীয় কিংবা অনাত্মীয়- কারো পক্ষ থেকে এমন উক্তি আমাকে কখনো সুখী করবে না যে, অমুক ব্যক্তি মানুষ হিসেবে খুবই ভালো, কিন্তু তার সন্তানরা মন্দ চরিত্রের। সুতরাং, তোমরা একমাত্র আল্লাহর জন্য আত্মীয়তা রক্ষা করো, এমনকি যারা তোমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, তাদের সাথেও। যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আমার কারণে, কিংবা তোমাদের মায়ের কারণে অথবা অন্য কোনো সূত্র ধরে তোমাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, তার সবগুলোর প্রতিই যত্নবান হও। মনে রেখো, আত্মীয়তা রক্ষার মূল বিষয় হচ্ছে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রাখা। বনী ইসরাইলের মজ্জাগত একটি মন্দ স্বভাব এখনকার নেককার ও অভিজাত পরিবারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত: এ রোগে আক্রান্ত এই সব পরিবারের যুবক সন্তানেরা। স্বভাবটি হচ্ছে- যেমন আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেছেন: “তারা পরস্পরকে মন্দ থেকে নিষেধ করত না, যা তারা করত।” [সূরা মায়িদা : ৭৯]
সুতরাং, নিজেদের পরিবারভুক্ত কারো কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণে তোমরা সঙ্কোচ বোধ করবে না।কারণ, নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক উপদেশ প্রদানই তোমাদের কে বাইরের মানুষের নিন্দা-মন্দ থেকে হেফাযত করবে।
হে আমার সন্তানেরা ! একী কখনো যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে যে, কোনো ব্যক্তি আল্লাহ কে প্রাত্যহিক সম্বোধনের সুযোগ লাভ করে ও তা পরিত্যাগ করে? কিংবা প্রতিদিন আল্লাহর সম্বোধন শ্রবণের সুযোগ লাভ করে ও তা এড়িয়ে যায়? প্রতিদিন তোমরা আল্লাহর কালাম পাঠ করো, উপভোগ করো কুরআনের সুশীতল সংসর্গ।তাহিফ্য করার ব্যাপারে যত্নবান হও, তোমাদের সন্তানদের কে তাহিফ্য করাও।কুরআন হিফ্যের আবেগ পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দাও।
কারো পক্ষে কী এমন করা সম্ভব যে, আত্মা, জ্ঞান ও জীবনের খন্ড খন্ড উপসর্গসহ রাসূলের সান্নিধ্যে, পুত:পবিত্র নবীগণের সাথে জীবন যাপন, জান্নাত-জাহান্নাম এবং অদৃশ্য জগতের উন্মোচিত অনেক অলভ্য বিষয় দর্শনের সুযোগ লাভ করেও সে তা পরিত্যাগ করে? যখনি তোমরা রাব্বুল আলামীনের দাসত্বের স্তরে নিজেদেরকে উন্নীত করার সুযোগ লাভ করবে, তখনি ইহসানের স্তরে নিজেকে স্থাপনে সচেষ্ট হবে। ইহসান হচ্ছে সালাতে, কুরআন তিলাওয়াতে, রোযা পালনে সচেতনে ও সজ্ঞানে এমন এক উপলব্ধির বিস্তার ঘটানো, যেন তোমরা আল্লাহকে দেখছো। এমনকি এক সময় আল্লাহ চাহে তো এই অনুভূতি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি পদক্ষেপে বিস্তার লাভ করবে।
সুতরাং, আমি আশা করব, তোমরাই হসানের এই উদ্যান ও লালন ক্ষেত্রে প্রবেশ করবে এবং এর কল্যাণ ও সৌভাগ্যে নিজেদের কে বিধৌত করবে।
আমি তোমাদেরকে যে সকল বিষয়ে অসিয়ত করছি, সেগুলো হচ্ছে অসিয়তের নিদেন পক্ষ।অন্যথায় তোমাদের আসল কাজ হচ্ছে, যে কল্যাণের দিশাতোমরা লাভ করেছো, তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া, তাদেরকে এ পথেনিয়ে আসা।যে রূপ শুদ্ধতা সহ তোমরা সালাত আদায় করো, তা অন্যদেরকে ও করতে উদ্বুদ্ধ করো। তোমাদের সাদাকা গুলোকে অন্যদের জন্য নিদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করো।তোমরা যে ভাবে নিজেদের সম্পদ ও মর্যাদার সংরক্ষণ করো, ঠিক সে ভাবে অন্যদেরকে উম্মতের সম্পদ ও মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলো।কল্যাণের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি অণুও রেণুতে তোমাদের দৃষ্টির বিস্তার করো, যে তোমাদের জীবনে এক ব্যাপকতর কল্যাণ বয়ে আনে।তা হয়ে উঠে স্থায়ী প্রভাব ও সুফল আনয়নকারী।যা তে তোমাদের জন্য, তোমাদের দেশ ও জাতির জন্য অঢেল প্রশান্তি বয়ে আনে।এ সবের মাধ্যমে সে মহান দিবসে আমাদের চোখ শীতল হয়, যে দিন আমরা রব তার দর্শনে অভিভূত হবো।
আল্লাহ যা ফরয করেছেন, যাকে ভালোবাসতে বলেছেন, তার প্রতি ভালোবাসার দায় যদি না থাকত, তবে আমি তোমাদের থেকে কোনো ভাবেই বিচ্ছিন্ন হতাম না। কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা যখন অন্তরে প্রবিষ্ট হয়, তখন তা ভালোবাসার অন্য সব বন্ধন মুহূর্তে বিচূর্ণ করে দেয় এবং অন্য সব প্রিয় ব্যক্তি থেকে তাকে কেড়ে নিয়ে এক আল্লাহর সাথে সংযুক্ত করে।
হে আমার সন্তানেরা ! আমি আমার রবের সান্নিধ্যে গমন করছি এবং তোমাদেরকে সমর্পণ করে যাচ্ছি তাঁর পূর্ণ হিফাযতে। তাঁর প্রেমে ও ভালোবাসায় আমার অন্তর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে, সে চলে গিয়েছে তার পাক দরবারে, যদিও এ দেহ তোমাদের পাশে এখনো পড়ে আছে। সুতরাং হে রব ! পৃথিবীর সুদূরতম কোণে অবস্থানরত কারো সম্মুখে যখন তোমার ভালোবাসার নিশানা চড়ে গিয়েছে, তোমার মোহময় সমপ্রীতির অলঙ্ঘ জাল বিস্তৃত হয়েছে তার আকাশ জুড়ে, তখন অন্য কারো প্রতি ভালোবাসা তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়- এ কী সম্ভব , তোমার সৃষ্টির স্মরণ কি তোমার স্মরণ থেকে ভুলিয়ে রাখতে পারে ?
তোমাকে ভালোবাসার পূর্বে আমার অন্তর ছিল শূণ্যপাত্র। মানুষের স্মরণেই তা মত্ত ও প্রফুল্ল হতো যখন তোমার প্রেম অন্তরকে আহ্বান জানাল, সে সাড়া দিল। আমি মনে করি না, তোমাতে বিলীন হতে তার দ্বিধা হবে যদি আমি মিথ্যাবাদী হই, কিংবা যদি তুমি ব্যতীত এ জগতের কারোতে প্রীত ও উৎফুল্ল হই, তবে নি:সন্দেহে তোমা হতে দূরে সরে যাওয়ার অপবাদে আমি বিদ্ধ হব। যদি আপনি আমার এ চোখের আড়াল হোন, তবে আমার চারপাশ বিস্বাদ লবণাক্ততায় ভরে যাবে। তুমি চাও তো আমার সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পার, কিংবা কেটে দিতে পার সম্পর্কের সুতো। আমি মনে করি না, তুমি ভিন্ন কারোতে এ অন্তর কল্যাণের সন্ধান লাভে ধন্য হবে।
বিদায়ী অসিয়ত
সিঞ্চনকারী ঝর্ণাধারা
আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর এরই উপদেশ দিয়েছে ইবরাহীম তার সন্তানদেরকে এবং ইয়াকূবও (যে,) হে আমার সন্তানেরা, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এই দীনকে চয়ন করেছেন। সুতরাং তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া মারা যেয়ো না।” [সূরা বাক্বারা : ১৩২]
অপর আয়াতে বলেন: “আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর।” [সূরা নিসা : ১৩১]
হাদীসে এসেছে: “ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোনো ব্যক্তির যদি কিছু থাকে এবং সে তাতে অসিয়ত করতে চায়, তবে তার এ অধিকার নেই যে সে তার অসিয়ত নিজের কাছে লিখিত রাখা ব্যতীত দু রাত যাপন করবে।” [বুখারী : ২৫৮৭, মুসলিম : ১৬২৭]
সমাপ্ত
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
kono ponthi na bole nijeke shodho( ami ak jon muslim) bolle amar mone hoy shob chite valo
My friends always come to me for advice. I think im giving good advice. But how can I really make sure it’s good advice?
This siteis excellent
andwonderfulthank you forgivingthe opportunityto writesome ofour ownlinks
For
morenewsaboutsports and healthyoufollowthese links
http://www.fped.bu.edu.eg/fped/media/system/css/modal.css
vhai ata kar..kotha….???
thik bujlam na…
ata kar kotha ki prosonggy bola???????
bujte parlam na.
mane ki?
Sorry…!
Vaiya kothata kar
Ibrahim alahiwasallam. sallahuallaihi wasallam shudhu amader priyo rasul(sw) ar jonno.
i knw tht. Any wy tnx.
এমন কিছু কথা বলবেন না, যা ইসপস্ট না।কি বলছেন কেউ বুঝতে পারে নাই।পারলে বুঝিয়ে বলেন।
(হাদীস) বর্ণনায় হযরত ইব্নু আব্বাস ( রাঃ) জনাব রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ ইসলামের যথার্থ জ্ঞানের অধিকারী ত্রকজন ব্যক্তি শয়তানের কাছে ত্রক হাজার ( মূর্খ ) ইবাদতকারীর চাইতেও শক্তিশালী ৷
What a luck!may Allah give it to all
khub valo ALLAH IS ALL IN ALL.