লেখক: শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল-আরিফী | অনুবাদক: কাজী মুহাম্মদ হানিফ
বর্তমানে আমাদের আচরণ কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের মতাে সব কিছুতেই আমরা লাভ খুঁজি। আমাদের সদাচরণ যেন কেবল ধনীদের জন্যই। ধনীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের মুখ থেকে হাসি ঝরে। ধনীদের বড় বড় অন্যায়ও আমাদের দৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হয় এমনকি দেখেও না দেখার ভান করি। ওভারলুক করার চেষ্টা করি। পক্ষান্তরে গরিব লোেকদের সঙ্গে আমাদের আচরণ স্বাভাবিকের চেয়ে কঠিন। তাদের হাসির কথা শুনলেও আমাদের মুখে হাসি আসে না। গরিবরা তুচ্ছ কোনাে অপরাধ করলেও তা আমাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় হয়ে ধরা দেয়। শােনামাত্রই সমালােচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু রাসূলুল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আচরণ ধনী-গরিব সবার প্রতি ছিল একরকম। আনাস দিলে বলেন, যাহির বিন হারাম নামক জনৈক বেদুঈন সাহাবী ছিলেন। তিনি কখনাে মরু এলাকা থেকে মদিনায় এলে রাসূলের জন্য পনির বা ঘি হাদিয়া নিয়ে আসতেন। ফিরে যাবার সময় রাসূলে একা তাকে খেজুর ইত্যাদি হাদিয়া দিয়ে দিতেন। রাসূল তাকে খুব ভালােবাসতেন। তার সম্পর্কে বলতেন – ‘যাহির আমাদের মরুপ্রান্তর, আর আমরা তার শহর।’
যাহির রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দেখতে তেমন সুশ্রী ছিলেন না। একদিন তিনি মরু এলাকা থেকে রাসূলের কাছে এলেন। কিন্তু রাসূলকে বাড়িতে পেলেন না। তার সঙ্গে কিছু পণ্যদ্রব্য ছিল। বিক্রির জন্য সেগুলাে নিয়ে তিনি বাজারে চলে গেলেন। এদিকে রাসূল বাড়ি ফিরে যাহিরের কথা জানতে পেরে তার খোঁজে নিজেই বের হয়ে পড়লেন। বাজারে গিয়ে দেখলেন, যাহির একমনে তার পণ্যদ্রব্য বিক্রি করছে। তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। সে ঘামে শরীরের কাপড়চোপড় ভিজে জবজব করছে। গ্রাম্য লােকদের কাপড়-চোপড়ের মতােই তার কাপড় থেকে ঘামের গন্ধ ভেসে আসছে। রাসূল তাকে দেখছিলেন। কিন্তু সে রাসূলকে দেখতে পেল না। রাসূল ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে তাকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলেন। যাহির চমকে ওঠলেন। তিনি বুঝতে পারলেন না, কে তাকে এভাবে ধরেছে। তিনি ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলেন, আমাকে ছেড়ে দিন বলছি। কে আপনি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্বাক থাকলেন।
যাহির নিজেকে ছাড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলেন। হঠাৎ পেছনের দিকে ফিরে তাকালেন। রাসূলকে একপলক দেখেই তার হৃদয়রাজ্যে প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেল। এরপর তিনি নিজের পিঠটিকে রাসূলের পবিত্র বুকের সঙ্গে মিলিয়ে রাখলেন। রাসূল যাহিরের সঙ্গে আরেকটু রসিকতা করতে চাইলেন। তিনি জোরে জোরে বলতে লাগলেন, এ গােলামটিকে কে কিনবে? কে কিনবে এ গােলামটিকে? রাসূলের কথা শুনে যাহির নিজেকে নিয়ে একটু ভাবল । চোখ বন্ধ করে যাহির দেখতে পেল সে একজন গরিব ও গ্রাম্য বেদুঈন। ধন দৌলত বলতে কিছু নেই। চেহারায়ও নেই কোনাে শ্রী । তাই নিজেকে খুব মূল্যহীন মনে হলাে তার। এরপর তিনি বলে ওঠলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ গােলামটাকে তাে অনেক সস্তায় বিক্রি করতে হবে। রাসূল বললেন – ‘কিন্তু আল্লাহর কাছে তাে তুমি সস্তা নও। আল্লাহ রাব্বল আলামিনের কাছে তুমি অনেক মূল্যবান। (ইবনে হিব্বান)। এমন আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ পেলে গরিব-দুঃখীদের মন রাসূলের জন্য যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে এতে আশ্চর্যের কী আছে?
অনেক গরিব মানুষ আছেন, যারা ধনীদের কাছে টাকা পয়সা না পেলে কোনাে অভিযােগ করে না। কিন্তু তাদের কাছে সুন্দর আচরণ ও মানবিক ব্যবহার না পেলে তাদের ক্ষোভের অন্ত থাকে না। একটু চিন্তা করে দেখুন… কয়জন গরিব মানুষ দেখে আপনি মুচকি হেসে তাকে বরণ করে নিয়েছেন? কয়জন গরিব মানুষকে মূল্যায়ন করেছেন? তাহলে তাে সে রাতের নির্জন মুহূর্তে আপনার জন্য তার হাতদুটো তুলে দোয়া করত। আপনার জন্য আসমানী রহমত কামনা করে মহান প্রভুর দরবারে রােদন করত। এলােমেলাে চুল, জীর্ণ দেহ আর ছিন্ন বস্ত্রের এমন অনেক মানুষ আছেন দুনিয়ার মানুষের কাছে তাদের কোনাে মূল্য না থাকলেও আল্লাহর কাছে। তারা অনেক মূল্যবান। তারা আল্লাহর নামে শপথ করে কিছু বলে ফেললে আল্লাহ অবশ্যই তা পূর্ণ করে দেন। তাই এধরনের গরিব ও দুর্বল মানুষদের সঙ্গে সবসময় হাস্যোজ্জ্বল থাকুন।
এক ঝলক… কোনাে গরিব ব্যক্তির প্রতি আপনার এক টুকরা মধুর হাসি আল্লাহর কাছে আপনার মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
উৎসঃ Enjoy Your Life (Bangla Version) , অধ্যায়ঃ ৯, পৃষ্ঠা: ৪৪ – ৪৬
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]