কুর’আন কিভাবে পড়বো ও বুঝবো – ৪

2
2591


কুর’আনের বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতি আমাদের কর্তব্য

কোন মুসলিমই সম্ভবত কখনো এই সত্যটা ভুলে যান না যে, কুর’আন হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর বাণী যা তিনি তাঁর শেষ রাসূল মুহাম্মাদ (সা.)-এঁর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, একজন মুসলিম এই সত্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পূর্ণরূপে নাও বুঝতে পারেন। কুর’আনে আল্লাহ্ যেসব চমৎকার বিষয়াবলী বর্ণনা করেছেন, তার কিয়দংশ তিনি ভুলে থাকতে পারেন – অথবা রাসূল (সা.) কুর’আন সম্বন্ধে যা বলেছেন, সে ব্যাপারটাকেও হয়তো তিনি অবহেলা করে থাকতে পারেন। এই অধ্যায়ে তাই আমরা প্রথমে চেষ্টা করবো কুর’আন আসলে কি, তা পাঠককে মনে করিয়ে দিতে। নিঃসন্দেহে একজন বিশ্বাসী কুর’আন সম্বন্ধে যত জানবেন – কুর’আনের কাছ থেকে তিনি তত বেশি নিতে চাইবেন। কোন ব্যক্তি কুর’আনকে যত বেশি উপলব্ধি করবেন, তত বেশি তিনি সেটাকে তার হৃদয় ও মনের কাছাকাছি রাখতে চাইবেন। অবশ্যই যিনি কুর’আনকে সবচেয়ে ভাল জানেন, তিনি হচ্ছেন এর বক্তা – স্বয়ং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। তাই প্রথমে আমরা কুর’আনের কিছু নির্বাচিত আয়াত আলোচনা করবো, যেসব আয়াতে কুর’আন নিজের সম্বন্ধে কথা বলে। কুর’আনের উপলব্ধিতে যাঁর স্থান দ্বিতীয়, তিনি হচ্ছেন নবী মুহাম্মাদ (সা.), যাঁর কাছে এই কুর’আনের বাণী প্রেরণ করা হয়েছিল। আমরা তাই কুর’আন সম্পর্কে তাঁর কিছু নির্বাচিত বাণী আলোচনা করবো। এরপর আসছে ঐ সব মহান ব্যক্তিদের কথা, যাঁরা আল্লাহর রাসূলের (সা.) কাছ থেকে সরাসরি কুর’আন শিখেছিলেন এবং জীবনে তা প্রয়োগ করেছিলেন। আমরা কুর’আনের ব্যাপারে সাহাবীদের বক্তব্য তাই উপস্থাপন করব। এই বষিয়ে আলোচনার শেষের দিকে এই মহান গ্রন্থের প্রতি একজন মুসলিমের কর্তব্য কি – আমরা তা নিয়ে এক সাধারণ আলোচনা করব, ইনশা’আল্লাহ্!

আল্লাহ্ কুর’আন সম্বন্ধে কি বলেন

সূরা বাক্বারার শুরুতেই আল্লাহ্ বলেন: “এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা আল্লাহ্্কে যারা ভয় করে তাদের জন্য এক পথ-নির্দেশক।” [সূরা বাক্বারা, ২:২]

গতানুগতিক অনুবাদে কারো মনে হতে পারে যে, এই আয়াতে কুর’আন সম্বন্ধে এমন বিশেষ কিছু বলা হয়নি। যদিও বাস্তবে আল্লাহ্ এই একটি আয়াতে কুর’আন সম্বন্ধে অনেক কয়টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এই বর্ণনায় লক্ষ্য করার ম।

প্রথম, বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্ কুর’আনকে ‘নির্দেশক সর্বনাম’ ذَلِكَ সহকারে নির্দেশ করেছেন – সাধারণভাবে যার অনুবাদ হবে ‘ঐটা’ (কিন্তু ‘এটা’ নয়)। এখানে ‘এটা’র পরিবর্তে ‘ঐটা’ ব্যবহার করার কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। আবদুল হামিদ সিদ্দিকী তাঁর কুর’আনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় এ সম্বন্ধে বলেছেন: “নির্দেশক সর্বনাম’ ذَلِكَ (that) অবস্থানের দূরত্ব নির্দেশ করে, কিন্তু সময় বিশেষে কোন বস্তুর প্রতি সম্মান ও সম্ভ্রম/সমীহ প্রদর্শন করতেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে, যেমনটি আমরা কুর’আনে হতে দেখি।”

দ্বিতীয়ত, বাক্যাংশটি অনেকটা “এই সেই কিতাব” এমন একটা অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। যার নিহিতার্থ হচ্ছে এরকম যে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ এবং আর কোন গ্রন্থকেই, কুর’আনকে যেভাবে একটি ‘গ্রন্থ’ বলা যায় সেই বিচারে গ্রন্থ বলা যাবে না। এই গ্রন্থ হচ্ছে সেই বাস্তব গ্রন্থ, যা এমন সব বিষয়বস্তু ধারণ করে যা পূর্ববর্তী কোন কিতাবে ছিল না। অন্য কথায়, আল্লাহ্ এই কিতাবের পূর্ণতা ও নির্ভুলতার দিকে ইঙ্গিত করে, অন্য সকল কিতাবের উপর এর শ্রেষ্ঠত্বের দিকে ইঙ্গিত করছেন।

তৃতীয়ত, আল্লাহ্ বলছেন যে, এটা এমন একখানি গ্রন্থ যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। অথচ অনেক অবিশ্বাসী বা সন্দেহবাদী কিতাবখানিকে সন্দেহের চোখে দেখে। আমাদের তাই বুঝতে হবে যে, আলোচ্য আয়াতে কেউ কখনো কুর’আনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে না এমন কথা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, কুর’আন যে আল্লাহর তরফ থেকে নাযিলকৃত একখানা সত্য ও নির্ভুল গ্রন্থ, তার পক্ষে সাক্ষ্যাপ্রমাণ এতই বিশাল ও স্পষ্ট যে, এই গ্রন্থে কারো সন্দেহ পোষণ করার কোন কারণ বা অবকাশ নেই। এই কথাটা গোটা কিতাব এবং এর দিক নির্দেশনার প্রতিটি অংশবিশেষের বেলায়ও একই রকম প্রযোজ্য। এই বইয়ে আল্লাহ্ যা বলেছেন, তার কোন কিছু সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আবদুর রহমান আল সাদী যেমন বলেন যে, আলোচ্য আয়াতে কোন সন্দেহ নেই বলে এটাই বোঝানো হচ্ছে যে, একজন বিশ্বাসীর এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক যে, এই কিতাবে বর্ণিত সবকিছু সত্য।

চতুর্থত, আল্লাহ্ এই কিতাবকে এক দিক নির্দেশনা(বা হুদা) বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ কিসের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা সে কথাটা উল্লেখ করা হয়নি – ফলে একটা সাধারণ দিক নির্দেশনার ধারণা এখানে বলবৎ রয়েছে। দুনিয়া ও আখিরাতের সকল প্রয়োজন ও সকল লাভের ব্যাপারেই কুর’আন হচ্ছে এক পথ-প্রদর্শক। অত্যাবশ্যকীয় মৌলিক অথবা স্বল্প আবশ্যকীয় গৌণ – সকল বিষয়েই কুর’আন হচ্ছে মানুষের জন্য পথ নির্দেশকারী। তা সত্যকে মিথ্যা থেকে আলাদা করে দেখায় – আর পূর্ণতাকে অসম্পূর্ণতা থেকে স্পষ্টত আলাদা করে দেখায়। এছাড়া মানুষের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত, উভয় জীবনের জন্য লাভজনক একটা পথ ধরে কিভাবে চলতে হবে – তাও এই কিতাব পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দেয়।

এই আয়াত তাই আমাদের বলে দিচ্ছে যে, কুর’আন হচ্ছে সর্বোপরি পথ-নির্দেশনার একখানি গ্রন্থ। সবশেষে এই আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন, যারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে সচেতন, তাদের জন্য কিতাবখানি হচ্ছে পথ-নির্দেশনা। কুর’আনের অন্যত্র আল্লাহ্ বলেছেন: 
…মানবজাতির জন্য এক পথ-নির্দেশনা ও যাচাইয়ের (সত্য-মিথ্যা) জন্য এক স্পষ্ট প্রমাণ…।” [সূরা বাক্বারা, ২:১৮৫]

কুর’আনের এই দুইটি আয়াত (২:২, ২:১৮৫) আমাদের বলে দিচ্ছে যে, কুর’আনের দিক-নির্দেশনা ও তা থেকে লাভবান হবার সম্ভাবনা সবার জন্য উন্মুক্ত।অথচ, সবাই এই চমৎকার দিক নির্দেশনা থেকে লাভবান হবে না। কেবল মাত্র তারা, যারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করে কুর’আনকে মেনে চলার ও জীবনে প্রয়োগ করার ইচ্ছা নিয়ে এর নিকটবর্তী হবে, তারাই এ থেকে সত্যিকার অর্থে লাভবান হবে।

(চলবে …………..ইনশা’আল্লাহ্!)

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

2 COMMENTS

  1. Walaykum Assalaaam… 
    apni Quran category te search koren – https://quraneralo.net/category/%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%86%e0%a6%a8-%e0%a6%93-%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ab%e0%a6%b8%e0%a7%80%e0%a6%b0/

আপনার মন্তব্য লিখুন