নারীর সঙ্গে আপনার আচরণ যেমন হওয়া উচিত পর্ব ১

1
1017

লেখক: শায়খ মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল-আরিফী | অনুবাদক: কাজী মুহাম্মদ হানিফ

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

নারীর সঙ্গে আপনার আচরণ যেমন হবে আমার দাদা উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রায়ই একটি আরবি প্রবাদ বাক্য বলতেন, ‘কেউ যদি নিজের ছাগীর আবেগ না বােঝে তাহলে ছাগী নিজেই তার সঙ্গী খুঁজে নেয়। অর্থাৎ স্বামী যদি স্ত্রীর আবেগ অনুভূতি বুঝতে চেষ্টা না করে এবং তার জৈবিক চাহিদা না মেটায় তাহলে সে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। নারী-পুরুষকে ছাগল ও ছাগীর সঙ্গে তুলনা করা এ প্রবাদ বাক্যের উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ মাফ করুন। নারী তাে পুরুষেরই অর্ধাঙ্গিনী । জীবনের সহযাত্রী ।

নারী পুরুষ কেউ কারাে চেয়ে খাটো নয়। পুরুষকে যদি আল্লাহ তায়ালা দিয়ে থাকেন দৈহিক শক্তি, তাহলে নারীকে দান করেছেন প্রবল আবেগঅনুভূতি। ইতিহাসের কত রাজা-বাদশাহ, বীর-বাহাদুরকে আমরা দেখেছি, নারীর আবেগ-উচ্ছ্বাসের কাছে হার মেনেছে তাদের সব শৌর্যবীর্য ও বুদ্ধি-সামর্থ্য। নারীর সঙ্গে আচার-আচরণের কৌশলও আয়ত্ত করতে হয়। নারীর মন জয় করার চাবিকাঠি অর্জন করতে হবে। আর নারীর মন জয়ের সে চাবিটি হলাে আবেগ। বস্তুতঃ আবেগ দিয়েই নারীকে কুপােকাত করতে হয়। রাসূল আমাদেরকে নারীর সাথে সদাচরণ করতে আদেশ করেছেন। তার আবেগ ও অনুভূতির মূল্যায়ন করতে বলেছেন। এর মাধ্যমে আপনার জীবন হবে শান্তিময়। ঘর হবে সুখের ঠিকানা। রাসূল পিতাকে তার কন্যাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ করেছেন।

রাসূল বলেছেন: ‘আনাস ইবনে মালেক দিলহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল প্রশ্ন বলেছেন, যে ব্যক্তি সাবালক হওয়া পর্যন্ত দু’টি কন্যা সন্তানকে লালনপালন করবে, হাশরের মাঠে আমি ও সে এভাবে থাকব। এ কথা বলে রাসূল হাতের দুটি আঙ্গুল একত্র করে দেখালেন।‘ (সহীহ মুসলিম: ৪৭৬৫)

নারীর ব্যাপারে সন্তানদেরকেও রাসূল এমন নির্দেশ দিয়েছেন। জনৈক ব্যক্তি রাসূলকে একদিন জিজ্ঞস করলাে, হে আল্লাহর রাসূল! আমার সদাচরণ পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? রাসূল বললেন, তােমার মা। লােকটি বললাে, তারপর? ‘তােমার মা। ‘তারপর? ‘তােমার মা। এভাবে তিনবার বলার পর চতুর্থবার রাসূল বললেন, তারপর তােমার বাবা। শুধু এতটুকুই নয়, স্বামীকেও তিনি স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি স্ত্রীর সঙ্গে রাগারাগি করে কিংবা দুর্ব্যবহার করে, রাসূল তার নিন্দা করেছেন। বিদায় হজ্জের দিন। রাসূল তো জীবনের শেষ খুতবা দিচ্ছেন। রাসূলের সামনে উপস্থিত লক্ষাধিক সাহাবী। সাদা, কালাে, ছেলে, বুড়াে, ধনী-গরিব সবাই উৎকর্ণ হয়ে আছে।

রাসূল তে সবার সামনে সরবে বললেন: ‘হে লােকসকল! তােমরা নারীদের সঙ্গে সদাচারণের ব্যাপারে। আমার অন্তিম উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা, তারা তােমাদের নিকট আবদ্ধ। তােমরা তাদের ব্যাপারে কোনাে মালিকানা রাখাে না। তবে তারা কোনাে প্রকাশ্য অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে ভিন্নকথা। যদি তারা প্রকাশ্যে কোনাে অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের বিছানা আলাদা করে দাও এবং তাদেরকে অল্প প্রহার কর। যদি তারা তােমাদের আনুগত্য স্বীকার করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনাে পন্থা অবলম্বন করতে যেও

নিশ্চয় তাদের উপর তােমাদের কিছু হক, রয়েছে এবং তাদেরও তােমাদের উপর রয়েছে কিছু হক। তােমাদের অধিকার তােমাদের স্ত্রীদের উপর হলাে তারা তােমাদের বিছানায় কাউকে জায়গা দিবে না যাকে, তােমরা অপছন্দ কর। তােমাদের ঘরে এমন কাউকে প্রবেশ করতে দিবে যাদের প্রবেশ করাটা তােমাদের নিকট সন্তোষজনক নয়। তােমরা জেনে রাখ, তাদের অধিকার তােমাদের উপর হলাে তােমরা তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করবে তাদের খাওয়া দাওয়া ও রণপােষণের ব্যবস্থা করবে।‘ (সহীহ মুসলিমঃ ২৬৭১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৮৫১)

একদিন নবীপত্মীগণের কাছে কিছু মহিলা এলাে। তারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযােগ করলাে। রাসূল এ কথা শুনে সাহাবীদের ডেকে বললেন: মুহাম্মদের পরিবারের কাছে অনেক মহিলা এসে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযােগ করেছে। জেনে রাখ, যারা স্ত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করে তারা ভালাে লােক নয়।‘ তিনি আরাে বলেছেন: ‘তােমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালাে সে ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর কাছে। সবচেয়ে ভালাে। স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণের ক্ষেত্রে আমি তােমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালাে।‘ (সুনানে তিরমিযী: ৩৮৩০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৯৬৭)। ইসলাম নারীকে এত মর্যাদা দিয়েছে যে, একজন নারীর মান রক্ষার্থে বিশাল যুদ্ধ হয়েছে। অনেক বীর বাহাদুর তাদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে । রক্তের বন্যা বয়ে গেছে।

মদিনায় কিছু ইহুদিও বসবাস করত। এ জন্য তারা মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিল। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হলে তারা মনে মনে ক্ষুব্ধ হলাে । মুসলিম রমণীরা পর্দা করুক এটা তাদের কাছে ভালাে লাগছিল না। তাই তারা মুসলিম নারীদের মাঝে বিশৃঙ্খলা ও বেপর্দার মনােভাব সৃষ্টি করতে চেষ্টা করলাে। কিন্তু তারা তাতে ব্যর্থ হলাে। একদিন জনৈক মুসলিম নারী বনু কায়নুকার বাজারে গেলেন। তিনি ছিলেন পর্দাবৃত। বাজারে গিয়ে তিনি এক ইহুদি স্বর্ণকারের দোকানে বসলেন। সে নারীর হিজাব এবং তার চারিত্রিক নিষ্কলুষতা দেখে ইহুদিদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হলাে। তারা তার মুখমণ্ডল এক নজর দেখার জন্য ছটফট করতে লাগল। তাকে স্পর্শ করতে এবং তাকে নিয়ে আদিম খেলায় মেতে ওঠার চিন্তায় তারা বিভাের হয়ে গেল।

ইসলামপূর্ব যুগে নারীদের সাথে তারা যে ধরনের আচরণ করত, এ মুসলিম রমণীর সঙ্গেও তারা তাই করতে চাইল। তারা তার চেহারা উন্মােচন করতে পীড়াপীড়ি করলাে এবং হিজাব খুলে ফেলার জন্য তাকে ফুসলাতে লাগল। কিন্তু নারীটি চেহারা খুলতে অস্বীকার করলাে। সে ইহুদি সুযােগে তার পেছন দিক থেকে তার। কাপড়ের নিচের অংশ পিঠের ওপর ঝুলে পড়া ওড়নার অংশবিশেষের সঙ্গে বেঁধে দিল।

মহিলা যখন যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল, তখন তার কাপড়ের পেছন দিক থেকে কিছু অংশ ওপরে উঠে গেল এবং শরীরের কিছু অঙ্গ উন্মােচিত হয়ে পড়ল। এ অবস্থা দেখে ইহুদিরা হাসতে লাগল। মহিলা সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠল। লজ্জায় সে আড় হয়ে গেল। সে মনে মনে কামনা করছিল, এরা যদি আমার পর্দায় আঘাত না করে আমাকে হত্যা করে ফেলত তাহলে ভালাে হতাে। জনৈক মুসলমান বিষয়টি লক্ষ্য করলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তরবারি বের করে সে স্বর্ণকার ইহুদিকে শেষ করে দিলেন।

এঘটনা দেখে সঙ্গী ইহুদিরা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। তারা সবাই মিলে তাকে হত্যা করে ফেললাে। রাসূল যখন জানলেন ইহুদিরা চুক্তি ভঙ্গ করে একজন মুসলিম রমণীর সম্রমহানি করেছে তখন তিনি ইহুদিদের এলাকা অবরােধ করলেন।

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

উৎসঃ Enjoy Your Life (Bangla Version) , অধ্যায়ঃ ১০, পৃষ্ঠা: ৪৭ – ৫৪

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

1 COMMENT

আপনার মন্তব্য লিখুন