কটু বাক্য শুনেও তা পরিহার করা

16
1805

হযরত ইবন উমর(রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নমনীয় প্রকৃতির লোক ছিলেন। তাঁর বাহির ও ভিতর পরিষ্কার ছিল এবং তাঁর ক্রোধ ও সন্তুষ্টি মুখ মণ্ডল মোবারকেই প্রকাশ পেত। বেশী রাগের সময় তিনি দাড়ি মোবারকে বার বার হাত বুলাতেন। (ইবন হাব্বান)

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো সামনাসামনি তার অপছন্দনীয় কথা বলতেন না। (ইবন হাব্বান)

হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত, একবার হলুদ রঙের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আসলে, উহাতে তিনি অসন্তুষ্ট হয়েও তাকে কিছু বলেননি, সে চলে গেলে বললেন, তাকে বলে দিও সে যেন হলুদ রঙের পোষাক ছেড়ে দেয়। [আবু দাউদ, শামায়েলে তিরমিযি]

হযরত আনাস(রা) হতে বর্ণিত, এক গ্রাম্য ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে মসজিদে (নববীতে) পেশাব করতে শুরু করে। সাহাবায়ে কেরাম (রা:) তাকে মারার জন্য উদ্যত হলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, তাকে কিছু বলো না; পরে তাকে ডেকে এনে বুঝালেন। দেখ! মসজিদ পেশাব পায়খানা করার জায়গা নয়। অপর এক বর্ণনায় এরুপ এসেছে যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামগণকে বললেন যে, তাকে ভয় দেখাইও না। বরং কাছে ডেকে আনো। [বুখারি ও মুসলিম]

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, একদা এক বেদুঈন(গ্রাম্য ব্যক্তি) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট কিছু চাইল। তিনি তা দান করে বললেন, আমি তোমার সাথে উত্তম ব্যবহার করিনি ? সে অস্বীকার করে বলল, উত্তম তো দূরের কথা মধ্যম ধরণের ব্যবহার ও করেননি। তার একথা শুনে সাহাবায়ে কেরামগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে মারার জন্যে প্রস্তুত হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতের ইশারায় নিষেধ করে গৃহে চলে যান এবং পরে সেই গ্রাম্য ব্যক্তিকে ডেকে এনে আরো বেশী দান করে বললেন, কেমন এখনত উত্তম ব্যবহার করেছি ? সে বলল, জি হ্যাঁ, আপনার পরিজনকে এ দানের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি যা ইতিপূর্বে বলেছ তা তোমার মনে আছে, সে জন্য আমার সাহাবাদের অন্তর ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। কাজেই এখন তুমি আমার সম্মুখে যা বললে এ কথাগুলিই আমার সাহাবাদের সামনে বলে তাদের অন্তরের ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি দূর কর, অবশ্য যদি এতে তোমার বিরক্তিবোধ না হয়। সে উহা বলতে অস্বীকার করল।

পরের দিন সন্ধ্যায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাইরে তাশরীফ এনে সাহাবায়ে কেরামদের (রা:) সম্বোধন করে বললেন, এ গ্রাম্য লোকটি গতকাল যা বলেছে তা হয়তো তোমাদের জানা আছে। পরে আমি তাকে আরো দান করলে সে বলেছ যে, আমার উত্তম ব্যবহারে সে সন্তুষ্ট হয়েছে। এ বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রাম্য ব্যক্তিকে বললেন, কি ভাই , ঠিক না ? সে বলল, জি হাঁ। আপনার পরিবারবর্গকে ঐ দানের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে বিনিময় দান করুন।

অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন, আমার আর এ গ্রাম্য লোকটির উদাহরণ এমন, যেমন কোন ব্যক্তির উট ছুটে পালাচ্ছে, আর লোকেরা তাকে ধরার জন্য পিছু ধাওয়া করেছে, এতে ঐ উটটি আরো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আরো দ্রুত বেগে পালাতে শুরু করেছে। তখন সেই উটের মালিক চিৎকার করে বলল, তোমরা আমার উট ধরার এরুপ ব্যর্থ চেষ্টা আর করো না। আমি তাকে ধরার এবং বশীভূত করার ভালো কৌশল জানি। অতঃপর উটওয়ালা কিছু খাদ্য ইত্যাদির প্রলোভন দেখিয়ে উটটিকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করলে উটটি তার কাছে এসে বসে পড়ল। সে তখন তার হাওদা বেঁধে আরোহণ করল। অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেদিন এ ব্যক্তি যে কথাগুলো বলেছে, যদি তখন তোমাদের ঐ অবস্থার উপর ছেড়ে দিতাম তোমরা হয়ত তাকে মেরেই ফেলতে, আর এ অবস্থায় সে দোযখবাসী হয়ে যেত। (বাযযার, ইবন হাব্বান)

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেন, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সময় যদি কোন মুসলমানকে ভর্ৎসনা করতেন , তবে সাথে সাথে তার জন্যে দোয়াও করে দিতেন,যেন তার গোনাহের বদলাও তার জন্যে রহমত এর কারণ হয়। [বুখারি ও মুসলিম]

হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, একদা যুদ্ধ চলাকালীন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র খেদমতে আরজ করা হল যে, এখন শত্রুদের উপর অভিশাপ করাই আপনার জন্যে উপযোগী, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, আমাকে রহমতস্বরুপ প্রেরণ করা হয়েছে, অভিশাপের জন্যে নয়। [মুসলিম]

মূল: আখলাকে মোহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহ)


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

16 COMMENTS

  1. হুজুর এর মানে কি আমাকে কি জানাবেন ?

    send my Email

  2. সাহাবি(রাঃ) রা নবীকরিম (সাঃ) কে হুজুর বলে সম্বধন করতেন,এর ইংরেজি পরিভাষা হল sir.কিন্তু আমাদের দেশে এখন এ শব্দ টিকে তিরস্কার এর নিমিত্তেই ব্যবহার করা হয়।আল্লাহ আমাদের মাফ করুক।@mezan vai

  3. ভাইরে, কোরান হাদিস নিয়ে যা হচ্ছে তাতে কোন কিছু বিশ্বাস করতে ভয় লাগে ৷ আমার নবী যে, কারো পিছনে কথা বলছে এটাও ভীতিকর ৷

আপনার মন্তব্য লিখুন