অবসর সময়

7
17128

Clock

ভাষান্তর : মাসুদ শরীফ | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

মানুষ মাত্রই চায়, ইস! যদি আরেকটু বেশী পেতাম। একজন স্ত্রী এবং সাত সন্তানের মা হিসেবে আমি সবসময়ই ভাবতাম যদি আরেকটু সময় পেতাম, তাহলে …..।  তাহলে কী করতাম? এখানেই নিহিত অবসর সময় সম্পর্কিত একটি বিশ্বজনীন সত্য। অবসর সময় দুইভাবে ব্যয় হতে পারে। এই সময় হয় কোনো কল্যাণকর কাজে ব্যয় হয়, নয়তো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাপ কর্মের মধ্য দিয়ে এই সময়ের অপচয় করা হয়।

নিশ্চিতভাবেই আমাদের সবাই স্বীকার করব যে, অবসর সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার হবে যদি সেই সময়কে কিছু ইবাদত কর্মের মধ্য দিয়ে কাটানো যায়। তবে অধিকাংশ সময় আমাদের মনেই থাকে না যে, আমাদের পার্থিব জীবনের লক্ষ্যই হলো আল্লাহ্‌র ইবাদত করা। আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন: “আমি জিন এবং মানুষকে এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা (শুধু) আমার ইবাদতই করবে।” [সূরা জারিয়াত ৫১: ৫৬]

কোনো উদ্দেশ্য বা কারণ ছাড়াই আল্লাহ্‌ আমাদের সৃষ্টি করেননি। অর্থহীন কাজকর্মে সময় নষ্ট করার জন্যও তিনি মানুষ সৃষ্টি করেননি। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন পরিপূর্ণ অর্থে ইবাদত বলতে যা বুঝায় তা-ই করার জন্য — সমগ্র সৃষ্টি জগতের একমাত্র সর্বশক্তিমান প্রতিপালক হিসেবে শুধু তাঁরই ইবাদত করার জন্য। শুধু ধর্মীয়, শারীরিক কিংবা মানসিক ব্যাপারগুলোই যে ইবাদত তা কিন্তু নয়। সালাত, সাওম, যাকাত এবং হাজ্জ এগুলো হচ্ছে ইবাদতের আরকান বা মূল খুঁটি। তবে ইবাদতের প্রকৃত অর্থ আরও ব্যাপক। ইবনু তাইমিয়্যাহর মতে, ইবাদত “একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলা যা কিছু পছন্দ করেন এবং যা কিছু তাঁকে সন্তুষ্ট করে তার সবই ইবাদত।”

কথা হলো, এতক্ষন যা বললাম তার সাথে একজন নারীর অবসর সময়ের সম্পর্ক কী? একজন নারীর জীবনে ইবাদত কর্মগুলো কীভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে সেদিকে একটু নিবিড়ভাবে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে যে, নারীদের “অবসর সময়” কাটানোর আগ্রহ এক নতুন দিকে মোড় নেবে।আসমা বিনতু ইয়াযীদ ইবনু আস-সাকান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, তিনি একবার নবীর (সা:) কাছে গেলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হউক। আমি নারীদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে এসেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ আপনাকে নারী-পুরুষ সকলের জন্যই পাঠিয়েছেন। আমরা আপনার উপর ঈমান এনেছি। এজন্য আমরা ঘর থেকে বের হই না। আমরা আপনাদের শারীরিক সুখের উৎস।

আমরা আপনাদের সন্তানদের গর্ভে ধারণ করি। একজন পুরুষ বাইরে গিয়ে জুম‘আ এবং জামা‘আতে সালাত আদায় করতে এবং জানাযায় অংশগ্রহণ করতে পারে। আবার আপনারা যখন হাজ্জ, উমরা কিংবা জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হন, আমরা তখন আপনাদের ঘর-বাড়ীর দেখাশোনা করি। আমরা আপনাদের কাপড় ধুয়ে দিই। আমরা আপনাদের সন্তানদের বড় করে তুলি। আমরা কি (আপনাদের উল্লিখিত ইবাদতগুলোর) সাওয়াবের ভাগীদার হবো না?

নবী (সা:) সাহাবাদের উদ্দেশে বললেন: “তোমরা কি আর কখনও কোনো মহিলাকে এর চেয়ে ভালো কিছু বলতে শুনেছ?” এরপর তিনি তাকে বললেন, “হে নারী! ভালো করে শুনে নাও আর অন্য নারীদেরকেও জানিয়ে দাও, স্বামীর সাথে একজন নারীর যথাযথ সম্পর্ক, স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য তার (স্ত্রীর) চেষ্টা করা এবং সে (স্বামী) যা করতে অনুমতি দেয় তা করাই হলো ওই সমস্ত কিছুর (পুরুষদের সকল ইবাদত কর্মের) সমতুল্য।” একথা শুনে আস্‌মা প্রফুল্ল চিত্তে বলে উঠলেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”

উল্লিখিত হাদীসে নবী (সা:) ইবাদতের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথা বলেছেন যা কেবল নারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তিনি আমাদের জানিয়ে দিলেন যে, মেয়েরা কীভাবে সফলতা অর্জন করতে পারবে এবং কীভাবে পুরষদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ইবাদত, যা নিয়ে মেয়েরা সাধারণত অভিযোগ করে থাকে তার মাধ্যমেও তারা সমানভাবে সাওয়াবের ভাগীদার হবে। মেয়েদের এই ইবাদত পুরুষদের জিহাদ, হাজ্জ এবং জুম‘আ, জাম‘আত ও জানাযায় সালাত আদায়ের সমতুল্য।

স্বামীর মন ভালো রাখা, তাকে মান্য করা এবং তার অনুমতি ছাড়া কিছু না করা, ঘর-সংসার এবং নিজের সন্তানের দেখাশোনা করা – এ সকল ইবাদতের মাধ্যমে স্বামীর সাথে স্ত্রীর ভালোবাসার সম্পর্ক পূর্ণতা লাভ করে। পুরুষরা সাধারণত যে সকল কাজ করে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর অসীম দয়ার মাধ্যমে মেয়েদের জন্য অনুরূপ অন্যান্য ইবাদাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যার মাধ্যমে তারাও সমান পরিমাণ সাওয়াব অর্জন করতে পারে।

অনেকেই হয়তো বলবেন, এসব তো নারীদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ, এমনকি অমুসলিম নারীরাও প্রতিদিন এসব কাজই করছে। কিন্তু এসব কাজ করার পেছনে মুসলিম নারীদের উদ্দেশ্য থাকে আর সবার থেকে মহত্তর। প্রতিটি কর্মের প্রতিই একজন মুসলিম নারীর দৃষ্টি থাকে সর্বোচ্চে। তিনি জানেন ইসলামের বিধান অনুযায়ী করা হলে প্রতিটি কর্মই হবে আল্লাহ্‌র (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) প্রতি অনুগত্যের (ইবাদত) বহিঃপ্রকাশ। কোন কোন ক্ষেত্রে একজন নারী অবসর সময় পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন? মানুষ সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে সময় দেওয়ার জন্য কিংবা করতে ভালো লাগে এবং করে আনন্দ পাওয়া যায় এমন কাজ করার জন্যই অবসর সময় প্রত্যাশা করেন। এতে দোষের কিছু নেই; বরং সেই কাজগুলোও যদি বিশুদ্ধ এবং সঠিক নিয়তে করা যায়, তাহলে সেগুলোও ইবাদতের শ্রেণীভুক্ত হয়ে যায়।

তবে সময়ের অপচয় করা একটি গুরুতর দোষ যার শিকার আমরা অনেকেই। সময় নষ্ট করার হাজারো সুযোগ দিয়ে দুনিয়াটা ভরা। আমাদের মনের নিয়ত ভালো থাকলেও, শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকারে পরিণত হই এবং নিয়ত অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হই। আমাদের সবার মধ্যেই সময় নষ্ট করার প্রবণতা রয়েছে এবং সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করার সুযোগকে কাজে লাগাতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।

যেভাবে ব্যর্থ হচ্ছি:

তাস্‌য়ীফ

এটি হলো “পরে” করব বলে কাজ ফেলে রাখা। কোনো আন্তরিক প্রচেষ্টা না করে, কেবল ভালো কাজ করার উচ্চাশা পোষণ করাটা সহজেই অভ্যাস হতে দাঁড়াতে পারে। সাফল্যের সাথে কোনো ভালো কাজ সম্পন্ন করা অনেকটা তাওবা করার মতো। এই ধরণের তাওবা কি আন্তরিক যদি আপনি শুধু তাওবা করার কথা চিন্তা করতে থাকেন, তাওবা করার ইচ্ছা পোষণ করেন আর সময় হলেই বলেন, এই মাসটা যাক, পরের মাসে তাওবা করব?

অনুরূপভাবে, আপনি যদি কুর‘আন মুখস্ত করা কিংবা আরও বেশি জ্ঞানার্জন করার ইচ্ছা পোষণ করেন অথচ অনবরত আপনার প্রচেষ্টাকে পেছনে ঠেলতে থাকেন, তাহলে আপনি তাস্‌য়ীফের শিকার হয়েছেন। কোনো কাজে সফলতা লাভের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের উদ্দেশ্যের পরিশুদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে, আমরা যা করার উচ্চাশা পোষণ করছি তা কুর‘আন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী হচ্ছে। এরপরই আমাদেরকে দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হতে হবে। অঙ্গীকারের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই ঐকান্তিক এবং আন্তরিক হতে হবে।

বাইরে ঘোরাঘুরি

অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি  আমাদের জন্য ক্ষতিকর এবং এমনকি নিষিদ্ধও হতে পারে।  কখনও কি আপনার মনে হয়েছে যে, মার্কেটে কেনাকাটা করতে যাওয়াটাও এর মধ্যে পড়তে পারে? আশ্চর্য হবেন না। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী মেয়েদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে ঘরের ভিতরে। প্রয়োজনে তারা বাইরে আসতে পারে। নারীকে যদি এমন কিছুর জন্য বাইরে আসতেই হয়, যা তার স্বামীকে দিয়ে হয় না, তাহলে শারী‘আতের নিয়ম মেনে বাইরে আসতে তার জন্য দোষের কিছু নেই। তবে অনেক সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক নারী পুরুষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করে। তবে কোন স্বামী তার স্ত্রীকে কিংবা কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে কোনো ব্যাপারে সাহায্য করতে চাইলে তাতে কোন অসুবিধা নেই।

তবে “স্বামীর দায়িত্বের বোঝা হালকা করার জন্য” কোনো নারী স্বামীর দায়দায়িত্বকে নিজের কাঁধে নিতে গেলেই ব্যাপারটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। বিশেষকরে, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে শুধু কেনাকাটার ক্ষেত্রেই এমনটি বেশি ঘটে থাকে। অথচ উত্তম হতো যদি তারা নিজেদেরকে গুছিয়ে রাখতেন, বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, সন্তানসন্ততিদের ভালোমন্দ ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতেন এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলে জীবনযাত্রাকে সহজ করে রাখতেন।

সংসারের জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে বারবার মার্কেটে যাওয়া এবং এমনটি করতে ভালো লাগা একজন মুসলিম নারীর জন্য ভালো লক্ষণ নয়। অনেকেই আবার মার্কেটে যান কেনাকাটার উদ্দেশ্য ছাড়াই। তাদের উদ্দেশ্য থাকে মার্কেট ঘুরে দেখা, বাজারে নতুন কী এলো তার খোঁজ নেওয়া। নতুন ফ্যাশনের, আরও বাহারি নতুন কিছুর আমদানি হয়েছে কিনা তা ঘুরে দেখাই তাদের উদ্দেশ্য। কাজেই এসব নারীদের ক্ষেত্রে বাইরে বের হওয়ার সত্যিকার কোনো গরজ থাকে না। আমরা নবীর (সা:) সেই হাদীসের কথা জানি যাতে তিনি বলেছেন, “নারী বাড়ি থেকে বের হলে শয়তান আর উপস্থিতির দিকে (অন্যদের) মনোযোগ আকৃষ্ট করে।” [আত-তিরমিযী]

অর্থাৎ, শয়তান পুরুষদেরকে নারীর উপস্থিতির দিকে মনোযোগী করবে এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হয় সেই নারীকে নয়তো সেই নারীর মাধ্যমে অন্যদেরকে কুকর্মে প্রলুব্ধ করলে। নারী বাড়িতে থাকলে শয়তান এই কাজটি করতে পারে না। নবী (সা:) আরও বলেছেন, “নারী যখন ঘরের বাইরে যায়, তখন সে শয়তানের রূপ ধরেই আসে এবং শয়তানের রূপ ধরেই বের হয়।” [মুসলিম]

কীভাবে? ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন নারীর সামনে যারা উপস্থিত থাকে তাদের কাছে শয়তান আসে এবং সেই নারীকে তাদের সামনে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে এবং নারী যখন কোনো স্থান থেকে চলে যায়, তখনও শয়তান একইভাবে নারীকে অন্যদের দৃষ্টিতে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরে। এভাবেই সে অন্যদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং তাদের কুপ্রবৃত্তিকে নাড়া দেয়। এজন্যই আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) এবং তাঁর রাসূল (সা:) আমাদেরকে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন।

মু’মিন নারী এবং নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেন, “তোমরা গৃহাভ্যন্তরএ অবস্থান করো।” এই আয়াতে “ক্বর্‌না’’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ, অবস্থান করা এবং অবিচল থাকা। আল্লাহ্‌ নারীদেরকে আদেশ দিয়েছেন তারা যেন বাড়ির বাইরে না যায় এবং নিজেদেরকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করতে অভ্যস্ত করে তোলে। ফলে কোনো কারণে তাকে যদি বাইরে যেতেই হয়, তাহলে বাড়ির বাইরে অবস্থান করাটা যেন তার কাছে অস্বস্তিকর বলে মনে হয়।

একজন সত্যিকার মু’মিন নারীর বৈশিষ্ট্য হলো তার এমন অনুভূতি থাকা যে, গৃহই তার অবস্থানের জায়গা। দূষিত এবং ব্যধিগ্রস্থ হৃদয়ের নারীদের বৈশিষ্ট্য হলো বাড়িতে অবস্থান করা তাদের কাছে কষ্টদায়ক এবং অস্বস্তিকর বলে মনে হবে। আপনি নিজেই নিজেকে আল্লাহ্‌র বিধান অনুযায়ী যাচাই করে দেখুন। আপনার মনেও সেই ব্যধি উঁকিঝুঁকি দেয় কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হউন। আল্লাহ্‌ বিধান অনুযায়ী সেই রোগের চিকিৎসা করুন। হৃদয়ের পরিশুদ্ধির মধ্য দিয়ে মনে প্রশান্তির জন্ম হয় এবং সেই প্রশান্তি উপলব্ধি করা যায়।

মোবাইল ফোন

নিঃসন্দেহে মোবাইল ফোন এই শতাব্দীর অন্যতম বিষ্ময়কর আবিষ্কার। এই আবিষ্কার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ভ্রমণ করা, হাত মারফৎ চিঠি পাঠানো এবং অপ্রত্যাশিত অতিথির আগমনের অবসান ঘটিয়েছে। তবে সেই সাথে এটি আমাদের জন্য সময় নষ্ট করার এক বিশাল সুযোগও তৈরি করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে মোবাইলে আমরা এমন সব কথা বলে পাপে জড়িয়ে পড়ছি যেসব কথা কোনোভাবেই আমাদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এবং বলার দরকারও ছিল না। তবে নারীদের জীবনে মোবাইলের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা অনস্বীকার্য। যেমন এর মাধ্যমে আমরা ঘরে বসেই আমাদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সাথে “সাক্ষাৎ” করে ফেলি।

প্রত্যাহিক কাজের ফাঁকে বিরতি নিয়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে সংক্ষিপ্ত চায়ের আসোরে বসতে পারি। তবে এসব আসোরও জীবন থেকে অনেক মুল্যবান সময় চুরি করে নেয় যা আরও কল্যাণকর কোনো কাজে ব্যয় করা যেতো। যত্নের সাথে মনোযোগী হয়ে সময়কে ব্যবহার করুন, নয়তো সময়ই আপনাকে ব্যবহার করবে।

গান-বাজনা

আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন: “তোমার কণ্ঠ (গান, বাদ্য এবং এমন কোনো আহ্বান যা আল্লাহ্‌র প্রতি বিরুদ্ধাচরণ করতে উৎসাহিত করে) দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত করো, তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ো তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে…।” [আল ইস্‌রা; ১৭:৬৪]

আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহ্‌র পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিরর্থক কথাবার্তা (গান-বাজনা ইত্যাদি) কিনে নেয়…।” [লুক্‌মান; ৩১:৬]

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু মাস’ঊদ বলেছেন : “সেই আল্লাহ্‌র কসম যিনি ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই! এই আয়াত দিয়ে গান-বাজনার কথা বলা হয়েছে।” নবী (সা) বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্যে এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে যারা (পুরষদের জন্য) সিল্কের (রেশম) কাপড় পরিধান, মদ্যপান এবং বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারকে হালাল মনে করবে।” [আল-বুখারী, খণ্ড ৭, অধ্যায় ৬৯, হাদীস ৪৯৪]

এই হাদীস দ্বারা বুঝা সুস্পষ্ট যে, এসব কাজ মৌলিকভাবেই হারাম বা নিষিদ্ধ যা পরবর্তী প্রজন্মের বিপথগামীরা হালাল হিসেবে গ্রহণ করবে। আপনার সবাই একমত হবেন বলেই আমি নিশ্চিত যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা এমন সব জিনিসই হারাম করেছেন, যেগুলো সামগ্রিকভাবে সমাজের ক্ষতি এবং নৈতিক অধঃপতনের বীজ ধারণ করে। এখন অনেক মুসলিমই আছেন যারা হয়তো নিছক বিনোদনের জন্য গান শুনে থাকেন। আপনি নিজেও যদি তাদের একজন হন, তবে গান-বাজনা কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে সে বিষয়ে পড়াশোনা করুন এবং নিজের ঈমানকে মজবুত করার চেষ্টা করুন। এই ধরণের বিনোদনের জন্য একজন প্রকৃত মু’মিন কুর’আন তিলাওয়াতের দ্বারস্থ হয়ে থাকে।

আমার বিশ্বাস, আমাদের অধিকাংশ মুসলিমরাই গানবাদ্য শোনেন না এবং ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এসব তাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। যেমন: রেডিও কিংবা টিভিতে খবর শুনতে গিয়ে, অথবা কম্পিউটারের কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে গিয়ে মিউজিক শুনে থাকেন। রেডিও, টিভি কিংবা কম্পিউটারের ওইসব প্রোগ্রাম থেকে যদি সত্যি উপকৃত হন, তবে ভালো কথা। কিন্তু এসব অনুষ্ঠানে গানবাজনা এসে পড়লে যন্ত্রটা বন্ধ করতে যেন আলস্য না দেখান। এমটি করা একেবারেই সোজা। যদি এমন হয় যে, মিউজিক ছাড়া এটা ব্যবহার করা সম্ভব না, তাহলে আমাদেরকে এর প্রকৃত উপকারিতা সম্পর্কে পুনরায় ভেবে দেখতে হবে।

কারণ বারবার ভলিউম কমাতে গিয়ে একসময় আমরা বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে যাব, তখন হয়তো আমরা আর কমাবই না। বাচ্চাদের কম্পিউটার প্রোগ্রাম এবং ভিডিও গেইমের ক্ষেত্রে এমনটি বেশি হয়ে থাকে। আর এভাবেই মিউজিক আমাদের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাচ্ছে!

পরনিন্দা ও গুজব ছড়ানো

আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো সময়ে অন্যকোনো মানুষের মাংস খেয়েছি। হতে পারে সেটা আমাদেরই কোন শত্রু কিংবা বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, আমাদের বস, কিংবা আমাদের অধীনস্থ কেউ, কিংবা আমাদের নিজেদেরই স্বামী-সন্তানের। পরনিন্দা করা এবং অন্যের নামে গুজব ছড়ানো দুটি মারাত্মক বদভ্যাস। এই বদভ্যাসটি শুধু নারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না হলেও, এর চর্চাটা আমাদের মধ্যেই বেশি। এই আচরণের জন্য আমাদের খ্যাতি(?) রয়েছে। আমরা সহজেই এসবে জড়িয়ে পড়ি। এক্ষেত্রেও সময়টা অবসর সময়, যে সময়ের সদ্ব্যবহার হয় না। এই সময়ের পাতা ফাঁদেই আমাদের অগ্নিময় জিহ্বাটা ধরা পড়ে।

আমরা যখন সাধারণত কারো সাথে আলাপ করতে বসি, এমনটা কতবার হয়েছে যে আমাদের কথোপকথনে অন্যান্য মানুষের পারিবারিক ব্যাপারগুলো ঢুকে গেছে? এসব ক্ষেত্রে কি আমরা ভালো কাজে আদেশ এবং মন্দ কাজে নিষেধের শিক্ষা মেনে চলি? পরামর্শ চাওয়ার নামে আমরা কি এমন কোনো কথা ফাঁস করে দিই না যা অন্য কেউ আপনাকে বিশ্বাস করে বলে রেখেছে? যখন কাউকে ফোন করি কিংবা কারও বাসায় বেড়াতে যাই, তখন আমরা পরিষ্কার মনেই যাই। কিন্তু হঠাৎ আলোচনায় ঢুঁকে পড়ে, “ভাবী শুনেছেন নাকি?” “বললে তো বিশ্বাস করবেন না, জানেন ঐ মেয়ে কী ক্যান্ডটাই না করেছে!” কিংবা “অমুক তো এই কথা বলেছে।”

প্রায়ই আমাদের কথাবার্তা ‘হারাম’ (নিষিদ্ধ) আলোচনার আওতায় চলে আসে। ফলে আমাদের অবসর সময় ব্যয় হয় মারাত্মক ধ্বংসাত্মক কাজের মধ্য দিয়ে। এমনকি কেউ যদি এরকম আলাপ-আলোচনায় শুধুমাত্র নীরব দর্শক হয়েও বসে থাকেন, তথাপি সময়ের অপব্যবহারের জন্য তিনিও সমানভাবে দায়ী।

টিভি এবং চলচ্চিত্র

মানুষকে শিক্ষাদান কিংবা তাদের মাঝে পরিবর্তন সৃষ্টির এক ভয়ানক হাতিয়ার হলো টিভি এবং চলচ্চিত্র। মানুষের মনন এবং চেতনায় সুদূর প্রসারী ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তারে এসব মিডিয়ার রয়েছে অবিশ্বাস্য ক্ষমতা। আচার-আচরণ, নৈতিকতা এবং মানুষের বিশ্বাসের উপর এগুলো মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এসবের সাথে ধারাবাহিক সান্নিধ্য বজায় থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের ধ্যান-ধারণায় এসবের প্রভাব পরিলক্ষিত হবে এবং এসবের পেছনে তারা আরও অধিক পরিমাণ সময় ব্যয় করবে।

বোকার মতো কখনোই ভাববেন না যে, টিভি এবং চলচ্চিত্র শুধুমাত্র শিশুদের ক্ষেত্রেই বেশী প্রভাব ফেলে। বড়রাও এসবের প্রতি সমানভাবে আসক্ত ও এসবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এবার দেখুন, টিভি এবং চলচ্চিত্র সম্পর্কে অধ্যাপক সাঈদ বিন মিসফির আল-ক্বহতানী কী বলেছেন: “চলচ্চিত্র বা নাটক মূলত একটি কাহিনী। লেখক কিংবা প্রযোজক নামক একজন মিথ্যাবাদী এসব লিখে থাকেন। গল্পটি লিখার পর সেটি বাস্তব এবং জীবন্ত করার জন্য তিনি দ্বারস্থ হন আরেকদল মিথ্যাবাদী এবং অভিনয়কারীদের কাছে।

এসব অভিনয়কারীদেরকে গল্পের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ভূমিকায় উপস্থাপন করা হয়। কেউ হয় বাবা, কেউ মা, কেউ ছেলে এবং এভাবে বাকিরাও। তারা টানা কয়েক মাস ধরে একাসাথে বসে চলচিত্র  নির্মাণ করে এবং মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। মানুষেরা এগুলোকেই দিনের পর দিন দেখতে থাকে। তারা এমন মনোযোগ দিয়ে দেখে যেন তারা যা দেখছে তা পুরোপুরি সত্য। অথচ বাস্তবে বাস্তবে এগুলো কল্পকাহিনী ছাড়া কিছুই না। সত্যি বলতে, কোনক্রমেই কোনো মানুষের এসব দেখা উচিৎ নয়…। দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এরা প্রতিটি পর্বেই শেষ করে এক রোমাঞ্চকর টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাতে পরবর্তী পর্ব দেখার জন্য দর্শকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।”

ভিডিও এবং টেলিভিশনকে প্রয়োজনী এবং উপকারী কাজেও ব্যবহার করা সম্ভব। তবে প্রশ্নাতীতভাবেই এটা প্রমাণিত যে, যা কিছু নিষিদ্ধ সেগুলোতেই এসবের দৃষ্টি এবং মনোযোগ নিবদ্ধ থাকে। নিজেক প্রশ্ন করুন, “আমি কি টিভিতে এমন কিছু দেখছি যা ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী দেখা উচিত নয়? এসব দেখার সময়টুকুকে কি সময়ের উত্তম ব্যবহার বলা যায়?

আমাদের সামনে এখন প্রশ্ন হলো আমরা কীভাবে আমাদের সময়কে কল্যাণকর কাজে ব্যয় করতে পারি। এই পৃথিবী বিভিন্ন ধরণের ভালোমন্দ কাজকর্মে পরিপূর্ণ। কীভাবে আমরা ভালোটাকে বেছে নেব? কীভাবে আমরা স্থান, কাল এবং পাত্রকে বেছে নেব? যে কারণে কোনো একটিকে বেছে নেব তার কারণ হিসেবে নিজেকে কি উত্তর দেব? এখানে এমন কিছু নীতিমালা দেয়া হলো যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণে এবং জীবনে স্থিতিশীলতা বয়ে আনতে সহায়ক হবে, ইনশাআল্লাহ্‌।

আল্লাহ্‌কে ভয় করুন

জীবনে যা কিছু করবেন, সবকিছুর মধ্যে আল্লাহ্‌রভীতিকে স্থান দিন। আমাদের দ্বীনের মূল স্তম্ভগুলোকে মাথায় রাখুন – শুধুমাত্র ঈমান ও ইসলামের বিষয়গুলি নয়, ইহসানের ব্যাপারটিও মাথায় রাখুন। অর্থাৎ “এমনভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত করুন যেন আপনি আল্লাহ্‌কে দেখছেন। তবে মনে যদি এমন অনুভূতি সৃষ্টি করতে না পারেন, তবে অন্তত এটুকু অনুভব করুন যে, আল্লাহ্‌ আপনাকে দেখছেন।” [বুখারি, খণ্ড ২, অধ্যায় ১, হাদীস ৪৭ এবং মুসলিম, অধ্যায় ১, হাদীস ১ ও ৪]

কত তাৎপর্যপূর্ণ এবং শক্তিশালী কথা! এই কথাটিকে আপনার জীবনের পাথেয় করে নিন। একথাও মনে রাখুন যে, আমাদের সমগ্র জীবন এবং আমাদের পারিপার্শ্বিকতা সবই আমাদের জন্য পরীক্ষা। ভুলে যাবেন না আপনার সময়, ধনদৌলত, সুস্বাস্থ্য ইত্যদির প্রতিটি কীভাবে ব্যবহার করেছেন সে সম্পর্কে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন। আল্লাহ্‌ তা‘আলা সূরা আল-কাহ্‌ফের মধ্যে বলেছেন: “নিশ্চয়ই পৃথিবীতে যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে ওর জন্য অলংকার হিসেবে বানিয়েছি তাদেরকে (মানুষদের) পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কাজেকর্মে কে শ্রেষ্ঠ।” [সূরা কাহাফ ১৮ : ৭]

আপনার জীবন ও প্রত্যাহিক কাজকর্মের প্রতি নিজের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে মনোযোগী হোন। আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছেন। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত। তার পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে আমাদের বিবেচক হওয়া উচিত এবং তাঁকে স্মরণ করার উপর গুরুত্বারোপ করা উচিত। আমরা যদি আল্লাহ্‌কে ভয় করি এবং সর্বক্ষেত্রে তাঁর সম্পর্কে সচেতন হয়ে জীবন যাপন করি, তাহলে আমরা আমাদের সময়ের ব্যাপারেও দায়িত্বশীল হব এবং এর সদ্ব্যবহার করব।

দায়িত্বশীল এবং স্বতঃস্ফূর্ত হউন

নারী হিসেবে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন ধরণের ঘটনা ও পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, এবং সে অনুযায়ী আমাদের দায়িত্বও পরিবর্তিত হয়। সবার আগে আল্লাহ্‌র কাছে আমরা দায়ী। আমাদের জীবনের সকল দায়দায়িত্ব এর সাথে সংশ্লিষ্ট। শুধু যদি এই কথাটিই আমরা মনে রাখি তবে আর সবকিছু নিয়মানুযায়ীই হবে এবং অধিকাংশ গর্হিত কাজ এড়িয়ে চলা যাবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত কুপ্রবৃত্তিতে এতটাই মশগুল হয়ে ডুবে যাই যে, আমরা আমাদের দায়িত্বের বৈধ গণ্ডিকে মাড়িয়ে নিষিদ্ধ গণ্ডিতে পদার্পণ করি। আঙ্গুলের ছাপের মতো প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ জীবনে স্বতন্ত্র।

আমাদের মাঝে কেউ বিবাহিত, কেউ আবার অবিবাহিত। কেউ একক পরিবারের বাসিন্দা, কেউ আবার যৌথ পরিবারের। কারও সন্তানসন্ততির সংখ্যা দুই তিনটা, কারও আবার বাড়ি ভর্তি, কারও একটিও নেই। যার ফলে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব এবং কর্তব্যের ভার আলাদা, এবং অবসর সময়ের পরিমাণটাও ভিন্ন ভিন্ন। আপনাকে আপনার সকল দায়দায়িত্বের তালিকা করতে বললে আপনি হাঁপিয়ে যাবেন। যাই হোক, ‘কী কী কাজ করছেন’ তার তালিকা করার চেয়ে কাজগুলো সময় মতো হচ্ছে কিনা সেটাই আসল কথা।

উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ্‌ তা‘আলা শিশুর পুষ্টির জন্য মাতৃদুগ্ধে তার অধিকার রেখেছেন। মায়ের দায়িত্ব হলো শিশুকে সেই দুধ পান করানো। কিন্তু শুধু দুধ পান করানো দায়িত্ব হলেও স্বতঃস্ফূর্ততার বহিঃপ্রকাশ অন্যভাবে ঘটে। বাচ্চার প্রতি ভালোবাসা, আন্তরিক পরিচর্যা, কোলে করে ঘুম পাড়ানো, বাচ্চা ভালো মতো দুধ খেতে পারছে কিনা  — এ সবকিছুর প্রতি খেয়াল রাখাই হলো শিশুর প্রতি মায়ের স্বতঃস্ফূর্ত দায়িত্বশীলতা। মায়ের সাথে বাচ্চার শারীরিক ও আন্তরিক যে সম্পর্ক তা ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে এবং এই সম্পর্ক অপরিহার্য। এ সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে সন্তানকে বোতলে দুধ খাওয়ানো একটি অতীব তুচ্ছ বিকল্প পদ্ধতি। বাচ্চা বোতলের দুধের সাথে মায়ের দুধের পুষ্টিগুণের মধ্যে পার্থক্য করতে অক্ষম হলেও মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠতার ফলে যে স্নেহ, স্বস্তি, ভালোবাসা তৈরি হয় এটা সে ঠিকই উপলব্ধি করতে পারে।

আমাদের চলার পথের ‘সঠিক’ আর ‘অত্যাবশ্যকীয়’ এই দুটো কাজকে উর্দ্ধে রেখে, আমরা যদি  কী করলে আরও ভালো হবে, উপকার হবে, সেগুলো খেয়াল করি, তাহলে দেখতে পারব, এসব কাজের মাধ্যমেই আমরা আনন্দ ও তৃপ্তি পাচ্ছি যা হয়তো শুধু নিছক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। আমাদের এই বিচিত্র জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করি, তাহলে বুঝতে পারব যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা আমাদের যা কিছু দিয়েছেন তার সবকিছুর মধ্যেই কোনো না কোনোভাবে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহসমূহকে আমরা যত স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করব, ততই আমরা উত্তরোত্তর কল্যাণ লাভ করব।

আল্লাহ্‌ আপনাকে যেকোনো পরিস্থিতিতেই ফেলুন না কেন, সেগুলোকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করুন। পারিপার্শ্বিকতাকে বিবেচনায় নিয়ে পরিপূর্ণভাবে আপনার কর্তব্য সম্পাদন করুন। নিজের মনকে জিজ্ঞেস করুন আপনার উপর আল্লাহ্‌ তা‘আলার হক্ব আপনি ঠিকমতো আদায় করছেন তো? অন্যের হক্ব এবং নিজের উপর হক্ব আদায় করছেন তো?

সৎ সঙ্গে থাকুন

আমাদের অধিকাংশেরই একজন “সবচেয়ে কাছের বন্ধু” থাকে। তার সাথেই আমরা আমাদের হৃদয়ের গোপন কথাগুলোও ভাগাভাগি করি, সারাদিন কি হচ্ছে না হচ্ছে সব আমরা তার সাথে আলাপ-আলোচনা করি। নবী (সা) বলেছেন: “প্রত্যেকেই তার বন্ধুর বিশ্বাসকে অনুসরণ করে। সুতরাং কাকে বন্ধু বানাচ্ছো ভেবে দেখো।” [আবূ দাঊদ, অধ্যায় : ৪১, হাদীস ৪৮১৫ ও তিরমিযী]

ভালো বন্ধুরা আপনার সব কথাই মনযোগ দিয়ে শুনবে। কিন্তু যেই মূহুর্তে আপনি অন্যের গীবত করা শুরু করবেন, সে আপনাকে থামিয়ে দিবে। আপনি খারাপ দিকে ঝুঁকে গেলে সে আপনাকে ভালো কাজের দিকে টেনে তুলবে। সে আল্লাহ্‌র কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আপনাকে খারাপ কাজের ব্যাপারে সতর্ক করে দিবে। আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা থেকে সে আপনাকে বারণ করবে। বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে সে আপনাকে ওই কথা বলা থেকে বিরত থাকবে না। আপনি যদি এইরকম কোন বন্ধু পাওয়ার মতো যোগ্য হন, তাহলে তার এই কথাগুলো ভালো মনেই গ্রহণ করবেন এবং অবশ্যই আল্লাহ্‌ তা‘আলার প্রশংসা করবেন যে, তিনি আপনাকে এমন একজন ভালো বন্ধু জুটিয়ে দিয়েছেন।

নিজের দুর্বলতা এবং কুপ্রবৃত্তিগুলোকে চিহ্নিত করুন

আমাদের সবার মধ্যেই এসব আছে। কেউ কেউ এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, কেউ আবার সেগুলোতেই গা ভাসাই। যেমন : ফোনে কথা বলা, বন্ধুদের ই-মেইল করা, কেনাকাটা কিংবা বিভিন্ন সামাজিক কাজ ও চাকরির কারণে বাইরে বের হওয়া, এমনকি দা‘ওয়াহ কিংবা শিক্ষার কাজে বের হওয়া। এধরণের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই এমন হতে পারে যে, আমরা হয়তো আমাদের মূল দায়িত্ব বাদ দিয়ে শুধু এগুলো নিয়েই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের অংশ হিসেবে এগুলোর কোনোকিছুই খারাপ নয়, যদি এসবের মধ্যে কোনো হারাম কিছু না থাকে। কিন্তু এসবে অংশগ্রহণ যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য ‘অত্যাবশ্যকীয়’ কাজের উপর প্রভাব ফেলে, তাহলে কিয়ামতের দিন আপনাকে হয়তো অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

একান্তে কিছুক্ষণ বসে একটু চিন্তা করে দেখুন, কোথায় এবং কীভাবে আপনি আপনার সময় ব্যয় করছেন। অনেক সময়ই দেখা যায় আমরা হয়তো এমন সব কাজে আমাদের ব্যস্ত করে রেখেছি যেগুলো আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও, সেগুলো আদৌ কোনো দরকারি কাজ নয়। যেসব কিছু আপনার জীবনকে অধিক পরিমাণে প্রভাবিত করছে, সেগুলো সনাক্ত করুন। সময়ের সাথে ঐ কাজগুলো কতটুকু জরুরী তা মূল্যায়ন করুন। আপনি কি আপনার ‘অত্যাবশ্যকীয়’ কাজগুলো বাদ দিয়ে এগুলোর জন্য সময় বের করে নিচ্ছেন? এগুলো কি আপনার পরিবারের অন্যান্য মানুষদের সাথে আপনার সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলছে? এই কাজগুলো পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই। তবে এসবের মধ্যে একটা ভারসাম্য বিধান করা জরুরী।

অবসর সময় অবশ্যই আনন্দদায়ক। আর এই আনন্দের সময়টা যেন একটু বেশী বেশী হয় এটা সবাই চায়। কিন্তু এর সাথে আমাদের এটাও মনে রাখা উচিৎ যে, প্রতি মূহুর্তে আমরা আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এই সময় আর ফিরে আসবে না। আসুন আল্লাহ্‌ রব্বুল ‘আলামীন যেভাবে বলেছেন ঠিক সেভাবেই আমরা আমাদের সময়কে ব্যবহার করি: “সময়ের কসম, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্থতায় নিপতিত। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।” [সূরা আল-আস্‌র, ১০৩ : ১-৩]

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

7 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুন