রমাদ্বানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের তালাশ

0
854

লেখক: উম্মে আব্দ মুনীব, শায়খ মুহাম্মদ বিন সাইদ কাহতানি (রহ) | সম্পাদনা: রাজিব হাসান

৭০৬ হিজরি। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ (রহ) তখন কায়রাের এক কারাগারে বন্দী ছিলেন। তখন তাকে লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

যাবতীয় হামদ ও সানা একমাত্র আল্লাহর জন্য। রমাদ্বানের শেষ দশ রজনীতে রয়েছে লাইলাত্বল কদর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে এরকম বর্ণনাই পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “রমাদ্বানের শেষ দশরাতে তােমরা লাইলাতুল কদরের রাত তালাশ কর।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, “এতএব তােমরা শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতসমুহে তা খোঁজ করবে। [1]

তৎসত্ত্বেও বিজোড় রাত্রিগুলাে গণনা করতে হবে কতটুকু সময় গত হয়েছে তাঁর হিসাবে, যেমন, একুশে রাত্রিতে, তেইশে রাত্রিতে, পঁচিশে রাত্রিতে, সাতাশে রাত্রিতে এবং ঊনত্রিশতম রাত্রিতে। তবে অন্যভাবেও গণনা করা যেতে পারে, কতদিন বাকী আছে তাঁর উপরে হিসাব করে।যেমন,

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) , যখন নয় রাত্রি বাকী থাকে সেই রাত্রিতে, যখন সাত রাত্রি বাকী থাকে সেই রাত্রিতে, যখন পাঁচ রাত্রি বাকী থাকে সেই রাত্রিতে, যখন তিন রাত্রি বাকী থাকে সেই রাত্রিতে তালাশ করতে বলেছেন। [2]

অতএব মাস যদি ত্রিশদিনের হয়, তাহলে বিজোড় রাত্রিগুলােতে তালাশ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাইশতম রাত্রিতে নয় রাত্রি বাকী থাকে, চব্বিশতম রাত্রিতে সাত রাত্রি বাকী থাকে। আর আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এভাবেই তালাশ করেছেন। তবে যদি মাস ঊনত্রিশ দিনের হয় তাহলে গণনা করতে হবে কতদিন গত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে।

সুতরাং, এই হচ্ছে পদ্ধতি। তবে মুমিনের জন্য মানানসই হল শেষের দশ রাত্রির প্রতি রাত্রিতেই তালাশ করা। যেমনটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “শেষের দশ রাত্রিতে তালাশ কর।[3]

আর শেষের সাত রাত্রিতে এটি সংঘটিত হওয়ার ঘাের সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে সাতাশে রাত্রিতে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। যেমনটি উবাই বিন কা’ব (রা:) এর বর্ণনা থেকে জানা যায়। তিনি কসম খেয়ে বলেন, “আল্লাহর কসম আমি এ রাত (লাইলাতুল কদর) সম্পর্কে অধিক জানি। উনাকে যখন প্রশ্ন করা হল, আপনি কিভাবে জানলেন, তখন তিনি বলেছিলেন,“আমার অধিক জ্ঞান হলাে, এটি সে রাত যে রাতে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাদেরকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটি সাতাশ তারিখের রাত। বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে যে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের অবহিত করেছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উঠবে কিন্তু তাতে আলােক রশ্মি থাকবে না।[4]

অতএব, উবাই বিন কা’ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে একটি নির্দিষ্ট দিনের কথা উল্লেখ করেছেন। এবং সে রাতের পরের দিনের সূর্য উঠবে কিন্তু তাতে আলােক রশ্মি খুব একটা থাকবে না, একদম স্নান ও মলিন থাকবে, সূর্য তাঁর তেজস্বীরূপ হারাবে, সেদিনটি খুব গরম হবে না, বরং নাতিশীতােষ্ণ হবে। এই রাতের ব্যাপারে মহান আল্লাহ কাউকে কাউকে স্বপ্নযােগে অথবা জাগ্রত অবস্থায় কোন আলােকরশ্মির মাধ্যমে জানিয়েও দিতে পারেন। অথবা সে দেখবে কেউ তাঁকে বলে দিচ্ছে, “আজকে লাইলাতুল কদর। অথবা কারাে হৃদয় স্বাক্ষ্য দিবে যে, আজকেই সেই মহামান্বিত লাইলাতুল কদরের রাত। আর এ ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।

তথ্যসূত্রঃ মাজমুউল ফাতওয়া, ২৫/২৮৪-২৮৬), ইংরেজী অনুবাদ আবু তালহা দাউদ ইবন। রােনান্ড বারবাঙ্ক (রহ)।

উৎসঃ সালাফদের সিয়ামপৃষ্ঠা: ৯৮ – ৯৯


[1] বুখারীঃ ২০১৬, মুসলিমঃ ১১৬৭/২১৭, আনু সাঈদ খুদরী ও আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
[2] বুখারীঃ ২০২১, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত।
[3] বুখারীঃ ২০২০, মুসলিমঃ ১১৬৯, আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
[4] মুসলিমঃ ৭৬২

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন