কুরআন ও হাদীসের আলোকে যাদু পর্ব: ২

0
831

লেখক: ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বালী

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

হাদীস দ্বারা প্রমাণঃ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ যুৱাইক বংশের লাবীদ ইবনে আ’সাম নামে এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে যাদু করে যার পরিণামে আল্লাহ রাসূলের কাছে মনে হয় যে, কোন কাজ করেছেন অথচ তিনি সেটি করেননি। অতঃপর একদিন অথবা এক রাতে তিনি আমার কাছে ছিলেন তিনি প্রার্থনার পর প্রার্থনা করলেন অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আয়েশা! তুমি কি জান যে, আল্লাহ তায়ালা আমার সেই বিষয় সমস্যার সমাধান করেছেন যে বিষয়ে আমি সমাধান চেয়েছিলাম? আমার কাছে দুই ব্যক্তি আসলেন তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন পায়ের কাছে বসলেন। অতঃপর তাদের একজন অপর জনকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ

লোকটির কিসের ব্যাথা?

দ্বিতীয়জন উত্তরে বললেনঃ লোকটিকে যাদু করা হয়েছে।

প্রথম ব্যক্তি বললেনঃ কে যাদু করেছে?

দ্বিতীয়জন বললেনঃ লাবীদ বিন আসাম।

প্রথমজন জিজ্ঞাসা করলেনঃ কি দিয়ে যাদু করেছে?

দ্বিতীয়জন বললেনঃ চিরুনী, মাথা বা দাড়ির চুল ও পুরুষ খেজুর গাছের মোচার খোসা দ্বারা।

প্রথমজন বলেনঃ তা কোথায়? দ্বিতীয়জন বলেনঃ জারওয়ান কূপে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত কূপে সাহাবাদের কতিপয়কে নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেনঃ ‘হে আয়েশা কূপের পানি যেন মেহদী মিশ্রিত এবং কূপের পার্শ্বের খেজুর গাছের মাথাগুলি যেন শয়তানদের মাথা। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেন আপনি তা বের করে ফেললেন না? তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দিয়েছেন, তাই আমি অপছন্দ করি যে খারাপ বিষয়টি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিব। পরিশেষে উক্ত যাদুকে ঢেকে ফেলার আদেশ হয়।‘ (বুখারীঃ ১০/২২২ ফাতহসহ ও মুসলিমঃ ১৪/১৭৪ নববীসহ)

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ ইয়াহুদী জাতি (আল্লাহ তাদের প্রতি লা’নত করুন) তাদের সর্বশেষ যাদুকর লাবীদ ইবনে আসামের সাথে একমত হয় যে, সে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি যাদু করবে আর তারা তাকে তিন দিনার প্রদান করবে। যার ফলে এই বদবখত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কতিপয় চুলের উপর যাদু করে। বলা হয়ে থাকে একজন ছোট বালিকা যার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরে যাতায়াত ছিল তার মাধ্যমে সে উক্ত চুল অর্জন করে এবং সে চুলগুলিতে তার জন্য যাদু করতঃ গিরা দেয় আর এ যাদু রেখে দেয় জারওয়ান নামক কূপে।

হাদীসের সকল বর্ণনা অনুপাতে বুঝা যায় যে, এ যাদু স্বামী-স্ত্রী কেন্দ্রিক যাদু ছিল, যার ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এমন ধারণা হতে যে, তিনি তার কোন স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হবেন; কিন্তু যখন তার নিকটবতী হতেন তখন তা আর সম্ভব হতো না। এ যাদু তার জ্ঞান, আচার-আচরণ বা তার কার্যক্রমে কোন প্রভাব বিস্তার করেনি; বরং যা উল্লেখ করা হয়েছে সে ক্ষেত্রেই ক্রিয়াশীল ছিল ।

এ যাদু কতদিন ক্রিয়াশীল ছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন ৪০ দিন কেউ অন্যমত পোষণ করেন। (আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত)। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় রবের নিকট কাকুতি মিনতি করে দু’আ করতে থাকেন। যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তার দু’আ কবুল করে দু’জন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। একজন তার শিয়রে বসেন, অন্যজন বসেন তার পায়ের পার্শ্বে। অতঃপর একজন অপরজনকে বলেনঃ তার কি হয়েছে? অপরজন উত্তর দেন তিনি যাদুগ্রস্ত। প্রথমজন বলেনঃ কে যাদু করেছে? দ্বিতীয়জন বলেনঃ লাবীদ ইবনে আ’সাম ইয়াহুদী। অতঃপর তিনি (ফেরেশতা) বর্ণনা দিলেন যে, সে চিরনী ও নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কতিপয চুলে যাদু করে, তা পুরুষ খেজুর গাছের মোচার খোলে রাখে, যেন তা কঠিনভাবে ক্রিয়াশীল হয়। অতঃপর সে তা জারওয়ান নামক কূপে পাথরের নিচে পুতে দেয়। এরপর যখন উভয় ফেরেশতা দ্বারা নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবস্থার রহস্যের উদঘাটন হয়ে গেল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন তা বের করে পুতে ফেলার নির্দেশ দেন। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।

হাদীসের সমস্ত বর্ণনার ভিত্তিতে ফুটে ওঠে যে, উক্ত ইয়াহুদী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে মারাত্মক আকারের যাদুর আশ্রয় নিয়েছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হত্যা করা। আর সর্বজন বিদিত যে, হত্যা করারও যাদু হয়ে থাকে; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে তাদের চক্রান্ত হতে রক্ষা করেন। যার ফলে তাকে সর্ব নিম্নস্তরের যাদুতে পরিণত করে দেন। আর এটিই হলো আল্লাহর হেফাযত।

একটি সংশয় ও তার নিরসন

মাযারী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ (বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত উল্লেখিত যাদুর) এই হাদীসটি বিদআতীরা এই বলে অস্বীকার করে থাকে যে, ঘটনাটি নবুয়ত ও রিসালাতের মর্যাদার অপলাপ ও পরিপন্থি। নবুয়তে সন্দেহ সৃষ্টিকারী। এ ধরণের ঘটনা সাব্যস্ত হওয়া শরীয়তের বিশ্বাস যোগ্যতার পরিপন্থী ইত্যাদি। মাযারী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘তারা যা বলে তা তাদের নিছক ভ্রান্তির বহিঃপ্রকাশ। কেননা রিসালাতের দলীল প্রমাণ হলো মু’জিযা। যা তার আল্লাহর পক্ষ হতে শ্রেষ্ঠ মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার ও তার নিষ্কলুষতার সত্যতার প্রমাণ বহন করে। আর দলীল প্রমাণবিহীন কোন কিছু দাবী বা সাব্যস্ত করা ভ্রান্ততা ছাড়া কিছু নয়।‘ (যাদুল মুসলিমঃ ৪/২২১)

আবু জাকনী ইউসুফী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যাদুর কারণে অসুস্থ হয়ে যাওয়া নবুওয়াতের মর্যাদার পরিপন্থী নয়। কেননা নবীদের অসুস্থ হওয়া পৃথিবীতে তাদের কোন অসম্পূর্ণতা নয়; বরং পরকালে তাদের মর্যাদাই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এমতাবস্থায় যাদুর রোগের কারণে তার এমন ধারণা জন্ম হওয়া যে, তিনি ইহকালীন বিষয়ে কিছু করেছেন অথচ প্রকৃতপক্ষে তা করেননি; এরপর তো আল্লাহ তায়ালা যাদুর বিষয় ও স্থান সম্পর্কে তাকে জানানোর এবং তা নিজে বের করে ফেলার ফলে তা সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়ে যায়। সুতরাং এতে নবুওয়াতের ক্ষেত্রে কোনরূপ অসম্পূর্ণতা আসতে পারে না, কেননা তা অন্যান্য রোগের মতই এক রোগ ছিল।

উক্ত যাদু ক্রিয়ায় তার জ্ঞানে কোন প্রভাব পড়েনি; বরং তার শরীরের বাহ্যিকভাবেই ছিল যেমনঃ দৃষ্টিতে কখনও ধারণা হতো, কোন স্ত্রীকে স্পর্শ করার অথচ তা তিনি করেননি। আর এটা অসুস্থ অবস্থায় কোন দোষনীয় নয় ।

তিনি আরো বলেনঃ আশ্চর্যজনক বিষয়, যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যাদুর কারণে রোগ হওয়াকে রিসালাতের অসম্পূর্ণতার দৃষ্টিতে দেখে, অথচ কুরআনে মূসা (আলাইহিস সালাম)ও মূসা (আলাইহিস সালাম) তাদের যাদু ও লাঠির দৌড়া-দৌড়ি দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছিলেন ও নিজেকে তাদের সামনে তুচ্ছ মনে করেছিলেন; কিন্তু আল্লাহ তাকে দৃঢ় করেন।

যেমন আল্লাহ তার প্রতিই ইঙ্গিত করে বলেনঃ “আমি বললামঃ ভয় করো না, তুমিই প্রবল। তোমার ডান হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করো, এটা তারা যা করেছে তা গ্রাস করে ফেলবে, তারা যা করেছে তা তো শুধু যাদুকরের কৌশল; যাদুকর যেখানেই আসুক সফল হবে না। অতঃপর যাদুকররা সিজদাবনত হলো ও বললোঃ আমরা হারূন (আঃ) ও মূসার (আঃ) প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম।” [সূরা তো-হাঃ ৬৮-৭০]

এর ফলে কোন বিজ্ঞ ও পন্ডিত বলেননি যে, যাদুর লাঠির দৌড়াদৌড়ির ফলে মূসার (আলাইহিস সালাম) ভীতসন্ত্রস্ত হওয়া তার নবুওয়াত ও রিসালাতের পরিপন্থী। বরং এসব বিষয় নবীদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো ঈমান মজবুত ও বৃদ্ধি পায়। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শক্রদের বিরুদ্ধে সাহায্য করে থাকেন এবং শক্রদের কর্মকান্ডকে অকাট্য মু’জিযা দ্বারা নষ্ট করে দেন। যাদুকর কাফেরদেরকে লাঞ্ছিত করেন এবং শেষ শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য সাব্যস্ত করেন। যেমনভাবে তা স্পষ্ট রয়েছে, তার স্পষ্ট কিতাবের আয়াতসমূহে। (যাদুল মুসলিমঃ ৪/২২)

দ্বিতীয় হাদীসঃ আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু হতে বেঁচে থাক। সাহাবাগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেগুলি কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) যাদু করা (৩) হক পন্থা ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা, (৪) সুদ খাওয়া, (৫) ইয়াতীমের মাল খাওয়া, (৬) যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা ও (৭) স্বতী-স্বাধবী, সরলা মুমিন নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া।‘ (বুখারীঃ ৫/৩৯৩ ফাতহ সহ ও মুসলিমঃ ২/৮৩)

সাব্যস্ত বিষয়ঃ হাদীসটি দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে যাদু হতে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেন এবং বর্ণনা করেন যে, এটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ দ্বারা প্রমাণিত হয়, যাদুর বাস্তবতা রয়েছে। এটি একটি উদ্ভট কিছু নয়।

তৃতীয় হাদীসঃ ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তার বর্ণনায় বলেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ জ্যোতিষী বিদ্যা শিক্ষা করল সে যাদু বিদ্যার একটি অংশ শিক্ষা গ্রহণ করল, যে যত বেশি জ্যোতিষী বিদ্যায় অগ্রসর হলো সে যাদু বিদ্যায় যেন ততই অগ্রসর হলো।‘ (আবু দাউদঃ ৩৯০৫, ইবনে মাজাহঃ ৩৭২৬)

সাব্যস্ত বিষয়ঃ হাদীসটি থেকে সাব্যস্ত হয় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বর্ণনা দেন যে জ্যোতিষী বিদ্যা একটি এমন বিদ্যা যা যাদু শিক্ষার পর্যায়ে পৌছিয়ে দেয়। যার কারণে তিনি তা হতে মুসলমানদেরকে সতর্ক করেন। তাই এটি প্রমাণ বহন করে যে, নিশ্চয় যাদু একটি বাস্তব বিদ্যা যা শিক্ষা করা হয়ে থাকে। যা কুরআনের আয়াতেও প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ “অনন্তর যাতে স্বামী ও তদীয় স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করতো।” [সূরা বাকারাঃ ১০২]

এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, নিশ্চয় যাদু একটি বিদ্যা, অন্যান্য বিদ্যার মতই। যার মূলনীতি রয়েছে যার ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। আর আয়াত ও হাদীস এ যাদু শিক্ষারই বিরুদ্ধে উপস্থাপিত হয়েছে।

চতুর্থ হাদীসঃ ইমরান বিন হুসাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার বর্ণনায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কুলক্ষণ নির্ণয় করল আর যার জন্য তা নির্ণয় করা হলো, যে গণকগিরি করল আর যার জন্য করা হলো এবং যে যাদু করল আর যার জন্য যাদু করা হলো সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর যে গণকের নিকট এলো অতঃপর সে যা বলল তা বিশ্বাস করল, সে যা কিছু মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি কুফরী করল।”

সাব্যস্ত বিষয়ঃ হাদীসটি থেকে সাব্যস্ত হয় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাদু থেকে ও যাদুকরের নিকট যাওয়া থেকে নিষেধ করেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন কোন জিনিস থেকে নিষেধ করেননি যার কোন অস্তিত্ব নেই বা ভিত্তি নেই।

পঞ্চম হাদীসঃ আবু মূসা আশআরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ “সর্বদা মদ পানকারী, যাদুতে বিশ্বাসী (অর্থাৎ বিশ্বাস করে যে, যাদুই সরাসরি প্রভাব ফেলে, আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর বা ভাগ্য ও তার ইচ্ছার কারণে নয় ) ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” এই হাদীসটিকে সহীহ ইবনে হিব্বান বর্ণনা করেন, শায়খ আলবানী হাসান বলেছেন।

সাব্যস্ত বিষয়ঃ যাদু নিজেই প্রভাব ফেলে থাকে এমন বিশ্বাস করা হতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করেন। মুমিনদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যাদু বা অন্য কিছুতে কোন ক্ষতি করতে পারেনা; বরং তা আল্লাহর ইচ্ছায় ও তা তার লিখে রাখার কারণে হয়ে থাকে। যেমনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আর তারা তার দ্বারা কোন ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত।” (তবে যাদু বা অন্য কিছু আল্লাহর লিখনীর ফলে কারণ সাব্যস্ত হয়ে থাকে) [সূরা বাকারাঃ ১০২]

ষষ্ঠ হাদীসঃ “যে ব্যক্তি জ্যোতিষী, যাদুকর বা গণকের নিকট আসল তারপর সে যা বলে তা বিশ্বাস করল, তবে অবশ্যই সে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার কুফুরী করল।” (তারগীবঃ ৪/৫৩)

যাদুর অস্তিত্ব সম্পর্কে মনীষীদের উক্তি ও মতামতঃ

(১) খাত্তাবী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রকৃতিবাদীদের একদল যাদুকে অস্বীকার করে ও তার বাস্তবতাকে খন্ডন করে।

এর উত্তরঃ নিশ্চয় যাদু প্রমাণিত ও তার বাস্তবতা রয়েছে। আরব অনারব তথা পারস, ভারত উপমহাদেশীয় দেশসমূহ, রোমানও এরূপ অধিকাংশ জাতিই একমত যে, যাদু প্রমাণিত। অথচ এরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক দিয়ে সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম জাতির অন্তর্ভুক্ত।

আর আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ “তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দেয়।” [বাকারঃ ১০২]

অনুরূপ আল্লাহ তায়ালা যাদু হতে আশ্রয় প্রার্থনার হুকুম দিয়ে বলেনঃ “গ্রন্থিতে ফুৎকার কারিনীদের অনিষ্ট হতে (আশ্রয় চাই)।” [সুরা ফালাকঃ ৪]

তিনি আরোও বলেনঃ এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে আরো এমন অনেক খবর এসেছে, যা কেউ অস্বীকার করে না একমাত্র যারা বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তারা ব্যতীত। আর ইসলামী ফেকাহবিদগণও যাদুকরের কি শাস্তি সে ব্যাপারেও আলোকপাত করেছেন। আর যার ভিত্তি নেই তার এত চর্চা ও প্রসিদ্ধি হওয়ার কথা নয়। সুতরাং যাদুকে (অস্তিত্বকে) অস্বীকার করা একটি অজ্ঞতা ও যাদু অস্বীকার কারীদের প্রতিবাদ একটি অনার্থক বিষয়।” (শারহুস সুন্নাহঃ ১২/১৮৮)

(২) ইমাম নববী বলেনঃ বিশুদ্ধ মত হলো নিশ্চয় যাদুর বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। এটিই জমহুর উলামা ও সাধারণ উলামার মত। এ মত প্রমাণিত হয় কুরআন ও প্রসিদ্ধ বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা। (ফতহুল বারী হতে সংকলিতঃ ১০/২২২)

(৩) আবুল ইযয হানাফী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুর বাস্তবতা ও প্রকারের ক্ষেত্রে অনেকেই মতভেদ করেন; কিন্তু অধিকাংশই বলেনঃ নিশ্চয়ই যাদুগ্রস্তের মৃত্যু ও তার অসুস্থতায় প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কোন কিছুর প্রকাশ্য ক্রিয়া ব্যতীতই—— (শরহুল আকীদা আততাহাবিয়াঃ ৫০৫)

(৪) ইবনে কুদামা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুর প্রভাবে মানুষ শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করে এবং স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছিন্নতা ঘটে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা তাদের কাছ থেকে এমন যাদু শিক্ষা নিত যার দ্বারা তারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করত।” (ফতহুল মজিদ হতে সংকলিতঃ ৩১৪) অতএব যাদু সম্পর্কে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এর অস্তিত্ব অবশ্যই আছে এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাদুকরের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন কোন বস্তু থেকে নিষেধ করতে পারেন না যার অস্তিত্ব নেই। সুতরাং এতে বুঝা যায় যে যাদুর অস্তিত্ব আছে।

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

উৎস (বই) : যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন