পৃথিবীতে যত পাপ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা। পৃথিবীতে শির্কের চেয়ে জঘণ্য আর গুনাহ নেই। যে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া আমাদের একটি মুহূর্তও কাটে না, কাউকে তাঁর সমকক্ষ, সমতুল্য বা সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে? তাই আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।” {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৪৮}
আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বললেন, ‘তুমি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করবে; অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” [বুখারী : ৬০০১; মুসলিম : ৮৬]
আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করার অর্থ আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি অন্য কারও ইবাদত করা। তাঁর দাসত্বের স্বীকৃতির পাশাপাশি অন্য কারও দাসত্বও মেনে নেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না।” {সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬}। আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন: “বল, আমাকে কেবল আদেশ দেয়া হয়েছে, যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত করি এবং তাঁর সাথে শরীক না করি।” {সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ৩৬}। আরেক আয়াতে তিনি ইরশাদ করেন: “সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।” {সূরা আল-কাহফ, আয়াত : ১১০}
শির্ক যে সবচেয়ে বড় জুলুম ও নিকৃষ্টতম পাপ তা কতভাবেই না আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শির্ক করো না; নিশ্চয় শির্ক হল বড় জুলুম।” {সূরা লুকমান, আয়াত : ১৩}
যে শির্ক করে সে যালিম। কারণ আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন আর সে ইবাদত করছে অন্য কারও। সে তো নিমকহারাম; অকৃতজ্ঞ। আল্লাহ ইরশাদ করেন: “তারা কি এমন কিছুকে শরীক করে, যারা কোনো কিছু সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়? আর তারা তাদেরকে কোনো সাহায্য করতে পারে না এবং তারা নিজদেরকেও সাহায্য করতে পারে না।” {সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ১৯১-১৯২}। তিনি তাকে রিযিক দেন আর সে অন্য কারও শুকরিয়া আদায় করে। সে নুন খায় একজনের আর গুণ গায় আরেকজনের। আল্লাহ বলেন: “আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর উপসনা করে, যারা আসমানসমূহ ও যমীনে তাদের কোনো রিযকের মালিক নয় এবং হতেও পারবে না।” {সূরা আন-নাহল, আয়াত : ৭৩}
মুশরিকের শাস্তি:
শির্ক যেহেতু বড় গুনাহ, তাই আল্লাহ শির্ককারী তথা মুশরিককে শাস্তিও দেবেন বড় মর্মন্তুদ।
প্রথম শাস্তি: আল্লাহ মুশরিকের সিয়াম, সালাত, হজ বা যাকাত- কোনো কিছুই কবুল করেন না, যাবৎ সে তাওবা করে ফিরে আসে। আল্লাহ বলেন: “আর যদি তারা শির্ক করত, তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত।” {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ৮৮}। আল্লাহ আরও বলেন: “আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” {সূরা আয-যুমার, আয়াত : ৬৫}
দ্বিতীয় শাস্তি: তাওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ কোনো শির্ককারীকে ক্ষমা করবেন না, যদিও সে সিয়াম, সালাত, হজ ও যাকাত আদায় করে এবং নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করে। আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।” {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৪৮}
অতএব সব গুনাহই আল্লাহ মাফ করতে পারেন যা পরিত্যাগ না করেই সে মৃত্যু বরণ করেছে, কেবল শির্ক ছাড়া। শির্ক থেকে তাওবা না করে মারা গেলে তার নিস্তার নেই। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেন: “তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান।” {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ৪৮}
হাদীসেও দেখুন সেই একই কথার পুনর্ধ্বনি। শির্ক না করে শত পাপ করেও নিস্তারের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু শির্কের ক্ষমা নেই। সাহাবী আবূ যর (গিফারী) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার সামনে জিবরীল আবির্ভূত হলেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার উম্মতদের সুসংবাদ দিন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে দাখিল হবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে থাকে? তিনি বললেন, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে থাকে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং চুরি করে থাকে? তিনি বললেন, যদিও সে মদ পান করে।” [বুখারী : ৬৪৪৩; মুসলিম : ৯৪]
তৃতীয় শাস্তি: আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তার সঙ্গে কাফেরের অনুরূপ আচরণ করবেন। যদিও সে সিয়াম পালন করে, সালাত আদায় করে, হজ সম্পাদন করে এবং যাকাত প্রদান আর নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করে। আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।” {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৭২}
পক্ষান্তরে অন্তত শির্ক না করে কেউ যদি মারা যায় তাহলে তার জন্য পরিত্রাণের বার্তা রয়েছে। জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার না করে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে কোনো অংশীদার সাব্যস্ত করে সাক্ষাৎ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” [মুসলিম : ৯৩]
চতুর্থ শাস্তি: মুশরিকের ক্ষেত্রে ফেরেশতা, নবী বা মুমিন তথা কোনো সুপারিশকারীই কাজে আসবে না। পীরের কথা তো বলাই বাহুল্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “অতএব সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকার করবে না।” {সূরা আল-মুদ্দাস্সির, আয়াত: ৪৮}
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন আল্লাহ বান্দাদের বিচারকার্য সম্পাদন সম্পন্ন করবেন এবং জাহান্নামীদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দেবেন যে যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করেনি, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। যাদের প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। জাহান্নামে ফেরেশতারা সিজদার চিহ্ন দেখে তাদের চিনতে পারবেন। আগুন বনী আদমের সবই ভষ্ম করতে পারবে কিন্তু সিজদার চিহ্ন ভক্ষণ করতে পারবে না। কেননা, আল্লাহ জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে।” [বুখারী : ৭৪৩৭]
পঞ্চম শাস্তি: শির্ককারীদের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ করবেন না। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “প্রত্যেক নবীর জন্য একটি করে কবুল দো‘আ রয়েছে। প্রত্যেক নবীই আগেভাগে দো‘আ করে ফেলেছেন। আর আমি আমার দো‘আকে গোপন রেখেছে কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফায়াতের জন্য। অতএব সেটি আমার প্রত্যেক উম্মতই ইনশাআল্লাহ পাবে যে আল্লাহর সঙ্গে শির্ক না করে মারা যাবে।” [মুসলিম : ১৯৯]
কখনো মুশরিকদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞতা হেতু কোনো কোনো মুসলিম শির্কে লিপ্ত হন। যেমন মূসা আলাইহিস সালামের সগোত্রীয় সুনির্বাচিত লোকেরা সমুদ্রডুবি ও ফেরাউনের কবল থেকে পরিত্রাণ লাভের পর শির্কে বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহ তাদের ঘটনা তুলে ধরে বলেন: “আর বনী ইসরাঈলকে আমি সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম। অতঃপর তারা আসল এমন এক কওমের কাছে যারা নিজদের মূর্তিগুলোর পূজায় রত ছিল। তারা বলল, ‘হে মূসা, তাদের যেমন উপাস্য আছে আমাদের জন্য তেমনি উপাস্য নির্ধারণ করে দাও। সে বলল, ‘নিশ্চয় তোমরা এমন এক কওম যারা মূর্খ। নিশ্চয় এরা যাতে আছে, তা ধ্বংসশীল এবং তারা যা করত তা বাতিল। সে বলল, ‘আল্লাহ ছাড়া আমি কি তোমাদের জন্য অন্য ইলাহ সন্ধান করব অথচ তিনি তোমাদেরকে সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?” {সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৩৮-১৪০}
একইভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় দেখা যায়, মুসলিমরা হুনায়নের যুদ্ধে বের হলে অজ্ঞানতবশত তারাও নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একই ধরনের আবেদন করে বসেন। যেমন সাহাবী আবূ ওয়াকেদ লাইছী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হুনায়নের (যুদ্ধের) উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি (নওমুসলিম)। একস্থানে পৌত্তলিকদের একটি কুলগাছ ছিল যার চারপাশে তারা একান্তভাবে বসত এবং তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। গাছটিকে তারা ‘যাত আনওয়াত’ বলত। আমরা একদিন একটি কুলগাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমরা তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল, মুশরিকদের যেমন ‘যাতু আনওয়াত’ আছে আমাদের জন্যও অনুরূপ ‘যাতু আনওয়াত’ (একটি গাছ) নির্ধারণ করে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহু আকবার’, তোমাদের এ দাবিটি পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথাই বলেছ যা বনী ইসরাঈল মূসা ‘আলাইহিস-সালামকে বলেছিল। তারা বলেছিল, ‘হে মূসা, মুশরিকদের যেমন মা‘বুদ আছে আমাদের জন্য তেমন মা‘বুদ বানিয়ে দাও। মূসা ‘আলাইহিস-সালাম বললেন, তোমরা মূর্খের মতো কথাবার্তা বলছ’ {সূরা আল-আরাফ : ১৩৮}। তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতিই অবলম্বন করছ।” [তিরমিযী : ২১৮; তাবরানী : ৩২৯১; আহমাদ : ২১৯০০; তিরমিযী এ হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।]
শির্কের রয়েছে নানা ধরন ও প্রকরণ। আল্লাহ তা‘আলা সবগুলোই স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেন: “অথচ তিনি তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, যা তোমাদের উপর হারাম করেছেন।” {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১১৯}। আল্লাহ যা দ্ব্যর্থহীনভাবে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন, শির্ক করা তার অন্যতম। আল্লাহ বলেন: “বল, ‘এসো, তোমাদের উপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা তিলাওয়াত করি যে, তোমরা তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি ইহসান করবে আর দারিদ্র্যের কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে রিযক দেই এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না- তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। এগুলো আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার।” {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত : ১৫১}
শির্কের প্রথম প্রকার: আল্লাহর সঙ্গে বা তাঁকে ছাড়াই ফেরেশতা বা নবীদের উদ্দেশে ইবাদত করা। যে তাদের ইবাদত করবে সে আল্লাহর সঙ্গে কুফুরী করবে এবং নিজ মুনিবের সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্তকারী হিসেবে গন্য হবে। আল্লাহ বলেন: “আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে রব রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর নির্দেশ দিবেন?” {সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮০}
শির্কের দ্বিতীয় প্রকার: আল্লাহর সঙ্গে বা তাঁকে ছাড়াই ওলী-বুযুর্গানের উদ্দেশে ইবাদত করা। যে তাদের ইবাদত করবে সে নিজ মুনিবের সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করবে। আল্লাহ বলেন: “তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগী বুযুর্গদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোনো (হক) ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তিনি তা থেকে পবিত্র।” {সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩১}। আর তারা বলে,”তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে।” {সূরা নূহ, আয়াত: ২৩}
ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসর- এদের প্রত্যেকেই ছিলেন একেকজন পুণ্যবান মানব ও বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব। আল্লাহর সন্তুষ্টির সঙ্গে তারা এসব ব্যক্তির সন্তুষ্টিও খুঁজত ইবাদতে। তাই বুযুর্গকে খুশী করতে কোনো ইবাদতের অবকাশ নেই।
শির্কের তৃতীয় প্রকার: আল্লাহর সঙ্গে বা তাঁকে ছাড়াই বৃক্ষরাজি বা ইট-পাথরের উদ্দেশে ইবাদত তথা ভক্তি নিবেদন করা। যে এসবের উদ্দেশে ভক্তি নিবেদন করবে সে নিজ মুনিবের সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্ত করবে। আল্লাহ বলেন: “তোমরা লাত ও ‘উয্যা সম্পর্কে আমাকে বল’? আর মানাত সম্পর্কে, যা তৃতীয় আরেকটি?” {সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১৯-২০}
শির্কের চতুর্থ প্রকার: শয়তানের উদ্দেশে ইবাদত তথা ভক্তি নিবেদন করা। আল্লাহ বলেন: “হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, ‘তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই ইবাদাত কর। এটিই সরল পথ।” {সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৬০-৬১}
এককথায় রহমান আল্লাহ ছাড়া যার উদ্দেশেই ভক্তি-ইবাদত নিবেদন করা হবে তা শয়তানের জন্য বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “আল্লাহ ছাড়া তারা শুধু নারীমূর্তিকে ডাকে এবং কেবল অবাধ্য শয়তানকে ডাকে। আল্লাহ তাকে লা‘নত করেছেন এবং সে বলেছে, ‘অবশ্যই আমি তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (অনুসারী হিসেবে) গ্রহণ করব।” {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১১৭-১১৮}
আবূ তোফায়েল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালেদ ইবন ওলীদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-কে নাখলাহ নামক স্থানে পাঠালেন। সেখানে উজ্জা নামের মূর্তি ছিল। খালেদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) সেখানে গেলেন। সেটি ছিল তিনটি গাছের উপর স্থাপিত। তিনি গাছগুলো কেটে ফেললেন এবং তার ওপরের ঘর ভেঙ্গে দিলেন। পরবর্তীতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং এ ব্যাপারটি অবহিত করলেন। তিনি বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে দেখ, কোনো কাজই করোনি তুমি। তখন খালেদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) সেখানে পুনরায় গেলেন। খালেদ ফিরে গেলেন। তাকে দেখে (ওই আশ্রমের) প্রহরীরা, হে উজ্জা হে উজ্জা বলে পাহাড়ের আড়ালে পলায়ন করল। খালেদ তার সামনে পৌঁছামাত্র এক চুল খোলা উলঙ্গ নারীকে দেখলেন সে নিজের মাথায় মাটি নিক্ষেপ করছে। তিনি তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এসে বৃত্তান্ত তুলে ধরলেন। শুনে তিনি বললেন, সে ছিল উজ্জা।” [নাসায়ী, সুনান আল-কুবরা : ১১৪৮৩]
আর যে শয়তানের অনুসরণ-ইবাদত করে, শয়তান তাকে রহমান আল্লাহর সঙ্গে শির্ক, কুফর ও বিদআত শেখায়। আল্লাহ বলেন: “আর তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা সীমালঙ্ঘন এবং শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্ররোচনা দেয়, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তবে নিশ্চয় তোমরা মুশরিক।” {সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২১}
শয়তান মানুষের সঙ্গে কথা বলে স্বর ও সুরতে এবং স্বরূপে ও ভিন্নরূপে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: “তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পারো প্ররোচিত কর, তাদের উপর ঝাপিয়ে পড় তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে এবং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হও এবং তাদেরকে ওয়াদা দাও’। আর শয়তান প্রতারণা ছাড়া তাদেরকে কোনো ওয়াদাই দেয় না।” {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত: ৬৪}
আবূ তোফায়ল থেকে বর্ণিত হয়েছে যে জাহেলী যুগের দেবী উজ্জার সম্মুখে শয়তান আত্মপ্রকাশ করেছিল। তখন খালেদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে হত্যা করে ফেলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এসে বৃত্তান্ত তুলে ধরলে তিনি বললেন, সে ছিল উজ্জা। [নাসায়ী : প্রাগুক্ত]। ইমাম বুখারী দীর্ঘ এক হাদীসে ঘটনা তুলে ধরেন যে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে শয়তান এসেছিল এবং তিন রাত অবস্থান করেছিল। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি কি জানো তিন রাত তুমি কার সঙ্গে কথা বলেছ হে আবূ হুরায়রা? তিনি বললেন, জী না। নবীজী বললেন, সে ছিল শয়তান।” [বুখারী : ২৩১১]
মোটকথা, শয়তান তার কণ্ঠ ও কর্ম দিয়ে মুশরিকদের বিভ্রান্ত করেছে। অথচ তারা ভেবেছে এ বুঝি কেবল একটি চিত্র বা কবরস্থ কেউ। কিয়ামত পর্যন্তই সে এভাবে ছলে-বলে-কৌশলে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে যাবে। আমাদের কর্তব্য হবে, সর্বদা শয়তানের চক্রান্ত ও প্ররোচনা সম্পর্কে সতর্ক থাকা। আল্লাহর কাছে দিবারাত্র শয়তানের কুমন্ত্রণা ও কূটচাল থেকে বাঁচার জন্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের শির্ক থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে শির্কমুক্ত ঈমান নিয়ে কবরের যাত্রী বানান।
আমীন!!
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
Alhamdulilh
সুবহানআল্লাহ
Subhan allah-ha allah apni amak rokkha koron?
Ya allah forgive us…
gaja baba ,, khaja babar name utsorgo kora ,, shirk
আল্লাহ আমাদের সকল পাপ কাজ থেকে ক্ষমা করেন
Right, ALLAHU AKBAR…!
আল্লাহ্ পাক আমাদের শিরক এর মতো ভয়ানক পাপ হতে হেফাজত করুন
ALLAHU AKBAR
ALLAH amake shirk pap thheke rokhkha koro.jodi srikh rotethhaki khoma koredio.amin.
Allaho akbar :)
Fogive me my Allah
সুবহান।
allah amader ay pap theke rokkha korun,,,,,,,,,,,,
Subhanallah……………….
right
Allahu Akbaar