সালাতের শারীরিক/ স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

6
3837

মুলঃ ডঃ জাকির নায়েক | অনুবাদঃ মোঃ মুনিমুল হক | প্রকাশনায়ঃ কুরআনের আলো পাবলিকেশন্স

আমরা অনেকেই হয়ত জানি সালাত অর্থাৎ নামাজের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল শারীরিক উপকারিতা। আর মুসলিম হিসেবে আপনি এটাও হয়তো জেনে থাকবেন যে, নামাজের শ্রেষ্ঠতম অংশ হল সিজদা।

তাই এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে পবিত্র কোরআনে সিজদা শব্দটি কম করে হলে ও ৯০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। একবার ভেবে দেখুন কিভাবে সিজদা করি আমরা। স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যখন দাড়িয়ে থাকি বা বসে থাকি তখন আমাদের ব্রেইনে রক্ত পৌছায় ঠিকই, কিন্তু তা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু আমরা যখন সিজদায় যাই তখন মস্তিষ্কে/ব্রেইনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্ত সঞ্চালিত হয়, যা একটা স্বাস্থ্যকর ব্রেইনের জন্য খুবই জরুরী। আর আমরা যখন সিজদা করি তখন ব্রেইনের ন্যায় আমাদের মুখমণ্ডলের ত্বকেও অতিরিক্ত রক্তসঞ্চালন হয়, যা আমাদের চিল্বলাইন(chilblain) নামক এক ধরনের চর্মরোগ এবং এজাতীয় আরও অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তাছাড়া সিজদা আমদেরকে সাইনুসাইটিস (sinusitis) থেকেও বাছিয়ে রাখে। কেননা যারা নিয়মিত সিজদা করে অর্থাৎ নামাজ পড়ে তাদের সাইনাসের (sinus) প্রদাহ হবার সম্ভাবনা অনেক কম।

এছাড়াও সিজদার আরও উপকার রয়েছে। যেমন, যারা নিয়মিত সিজদা করে তাদের ব্রঙ্কাইটিস (bronchitis) হবার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কম। একটা লোক যখন স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস ছাড়ে করে তখন আমদের ফুসফুসে থাকা দূষিত বায়ুর কেবল দুই-তৃতীয়াংশ বের হয় বাকি একতৃতীয়াংশ ভিতরেই থেকে যায়। কিন্তু কেউ যখন সিজদায় অবনত হয় তার এবডমিনাল ভিসেরা(abdominal viscera) ডায়াফ্রামের(diaphragm) উপর চাপ প্রয়োগ করে, ফলে ডায়াফ্রাম ফুসফুসের নিছের দিকে (lower lobes) চাপ প্রয়োগ করে। ফলে কেউ যখন সিজদায় অবনত অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস নেয় তখন ফুসফুসের ভিতরে জমে থাকা এক তৃতীয়াংশ দূষিত বাতাসও বের হয়ে যায়, যা একটা সুস্থ ফুসফুসের জন্য খুবই দরকারি। এর ফলে আমদের ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।

যদি কেউ নিয়মিত সিজদা করে তবে সিজদার সময় করা অঙ্গভঙ্গি ও শরীরের বিভিন্নরকমের নাড়াচাড়ার কারণে তার অর্শ(hemorrhoid) বা পাইল্‌স(piles) এবং হার্নিয়া (hernia) হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।

আবার আমরা যখন সিজদা থেকে উঠে দাড়াই তখন শরীরের পুরো ওজন আমদের পায়ের উপর পড়ে এবং আমদের পা আর রানের পেশীতে চাপ পড়ে। তখন সে পেশীগুলু সক্রিয় হয়ে উঠে যা আমাদের নিন্মাঙ্গে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে দে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নামাজে রুখু সিজদা বসা আর উঠে দাঁড়ানোর সময় আমরা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করি যার কারণে আমাদের মেরুদণ্ডে ও বিভিন্ন রকমের নাড়াচাড়া হয়, যা আমদের মেরুদণ্ডের বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

নামাজের এরকম হাজারো উপকারিতা আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু আমরা মুসলিমরা সালাত আদায় করি শুধুমাত্র আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আর তার প্রশংসা করবার জন্য। তাই আমাদের মুসলিমদের জন্য উপরে উল্লেখ করা উপকারগুলু হল এক ধরনের সাইড ডিশ(side dishes)। বলতে পারেন ডেজার্ট(dessert), যা মূল খাবারের পরে সামান্য পরিমাণে খাওয়া হয়। একজন অমুসলিমকে নামাজের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য উপরোক্ত উপকারগুলুর কথা বলতে পারেন আপনি; তা হয়ত তাকে নামাজের দিকে আকৃষ্ট করবে, কিন্তু আমাদের মুসলিমদের জন্য প্রধান বা মূল খাবার অর্থাৎ নামাজের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো এবং আল্লাহ্‌ ও তার রসূলের বিধান মেনে চলা। আর একারণেই সালাত আদায় করি আমরা।

কেন দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায় করি আমরা?

সালাত হল সৎকাজের জন্য একধরনের প্রশিক্ষণ বা প্রোগ্রামিং। আর প্রশিক্ষণের মূল জিনিশটিই হল কোন একটি কাজ বার বার করা বা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তা আয়ত্ত করা। তাই আমদেরকেও সালাত আদায় করতে হয় দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার। উদাহারনস্বরূপ বলা যেতে পারে, আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য অর্থাৎ সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক কমপক্ষে তিন বেলা খাবার খেতে হয় আমাদের। একইভাবে আত্তাকে সুস্থ রাখবার জন্য দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়া দরকার আমাদের। এছাড়াও সমাজে যেহেতু পাপের ছড়াছড়ি তাই নামাজের পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ না নিলে সিরাত-উল-মুস্তাকিম অর্থাৎ সৎপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। তাই দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ বা বাধ্যতামূলক।

সালাত অর্থাৎ নামাজ কি আমাদের কর্ম উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় না?!

ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আপনার ধারনা থাকলে আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, একটা লোক নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে পারেনা। একটা লোক যদি সকাল ৯’টায় অফিসে এসে সন্ধ্যা ৬’টা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে থাকে, তবে তার কর্ম উৎপাদনশীলতা বাড়ার পরিবর্তে কমে যেতে পারে উল্টো। আর একারণেই অফিসের কাজের ফাকে ফাকে সংক্ষিপ্ত বিরতির ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে করে নিজেদের চাঙ্গা করে নিতে পারি আমরা। একইভাবে নামাজও আমাদের চাঙ্গা করে আমাদের কর্ম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এটা আমদের শরীর ও মনকে সতেজ করে তুলে। একজন মুসলমানের জন্য নামাজ হল একপ্রকারের বিনোদন। এখন কেউ যদি বলে যে কাজের ফাকে ১৫ মিনিট একটা লাঞ্চ ব্রেক নিলে সময়ের অপচয় হয়, উৎপাদনশীলতা কমে যায় তবে সেটা হবে অযৌক্তিক। একইভাবে কেউ যদি কাজের ফাকে নামাজটা আদায় করে নেয় নিয়মিত, তবে তার হয়ত অল্প কিছুক্ষণের জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হতে পারে, কিন্তু নামাজ আদায় করে সে যখন চাঙ্গা মন নিয়ে ফিরবে আবার কাজে, তখন মোট উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে তার। তাই একজন যৌক্তিক ও আধুনিক মানুষের এটা মেনে নেওয়া উচিত যে অফিসে কাজের ফাকে ফাকে প্রয়োজনীয় বিরতির ব্যবস্থা রাখা দরকার যাতে করে কর্মীরা চাঙ্গা করে নিতে পারে নিজেদের, আর একজন মুসলমানের জন্য নামাজ হল নিজেকে সতেজ ও চাঙ্গা করে তুলবার সর্বোত্তম মাধ্যম।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

6 COMMENTS

  1. নামায শরীরের জন্য যতই উপকারী হোক না কেন, আমরা কখনও কাউকে ্নামাযের উপকারীতা দেখিয়ে নামাযের জন্য আহবান করতে পারি না,

  2. admin vaiya k boltesi jodio namaz a sastogoto upokarita ache but amra namaj pori ak matro allah k raji korar jonno…..

  3. allah ke raji khushir jonno pori eta jemon shatto tamoni namazer maddhome je boigganik vabe sharirik upokar hoy etao shotti…allah shocheye boro boigganik tai tar nirdesh gulo o biggan shommoto….subhan allah.

  4. আর যাতে আমাদের কল্যান রয়েছে তা-ই আল্লাহ্ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের জন্য ফরয করেছেন।আর আল্লাহ ই সবচেয়ে ভালো জানেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন