মুসলিম নারী এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য – পর্ব ৪

0
2612

সংকলন: ফালেহ বিন মুহামাম্মাদ আস-সাগির | অনুবাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ |পর্ব ৫ | পর্ব ৬

মুসলিম নারীর সাংস্কৃতিক ভিত্তির খুঁটিসমূহ:

১. বিশুদ্ধ ইসলামী ধ্যানধারণাকে মৌলিক বিষয় হিসেবে তার মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত করা, যার উপর শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাসাদ নির্মিত হবে।

এই ধ্যানধারণা অন্তর্ভুক্ত করবে:

  • ঈমানের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ, যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
  • মুসলিম নারীর জীবনে আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সুন্নাহর মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে উভয়ের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ।
  • ইসলামের স্তম্ভ ও তার বৈশিষ্ট্যসমূহের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ।
  • আর মানুষের সাথে সম্পর্কিত জগতের বিষয়সমূহ।
  • জীবনের বিভিন্ন স্তর ও স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ
  • এবং স্বয়ং মানুষের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহ।

আর যাতে করে এই ধ্যানধারণাটি বিশুদ্ধ হয়, সেই জন্য মুসলিম নারীর জন্য আবশ্যক হল, সে ঐ ধ্যানধারণাটি ইসলামের মূল দু’টি উৎস আল-কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করবে; আর পূর্ববর্তী সত্যনিষ্ঠ আলেমগণ এই উভয় উৎস থেকে যা অনুধাবন করেছেন, তা থেকে।

২. তাফসীর, হাদিস, ফিকহ ও সীরাতসহ ইসলামের বিভিন্ন শাস্ত্রে উপর প্রতিষ্ঠিত শরী‘আত কর্তৃক অনুমোদিত সংস্কৃতির পূর্ণতা বিধান করা। যা মুসলিম নারীর ব্যক্তিত্বের মধ্যে সুদৃঢ় সাস্কৃতিক ভিত প্রতিষ্ঠিত করবে। আর এই সিলেবাসের পরিমাণ কতটুকু? এখানে তার নির্ধারিত কোন পরিমাণ নেই; কারণ, তা প্রত্যেক নারীর স্বভাব-প্রকৃতির উপর নির্ভর করে; কিন্তু তাকে অবশ্যই নিম্নোক্ত বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত থাকতে হবে:

ক. সে বিভিন্ন শাস্ত্রের ভূমিকাসমূহের ব্যাপারে জানবে, যা ঐ শাস্ত্রের মূলনীতি হিসেবে বিবেচিত; যেমন উসূলে তাফসীরের ভুমিকা, অনুরূপভাবে ‘উলুমুল হাদিসের ভূমিকা …।

খ. ঐসব শাস্ত্রে নারীর ব্যাপারে যে বিশেষ আলোচনা রয়েছে, সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।

গ. অনবরত শরয়ী তথা কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন এবং ইসলামী সংস্কৃতির লালন করতে সচেষ্ট থাকা।

৩. সমসাময়িক আলেমগণ যেসব লেখালেখি করেন, তা পাঠ করা; কেননা তারা যে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বসবাস করে, তার বাস্তব চিত্র তাদের জানা রয়েছে। আর মুসলিম নারীর জন্য পূর্ববর্তী লেখকদের লিখিত মূল গ্রন্থপঞ্জির উপর নির্ভর করাই যথেষ্ট নয়। কারণ, তা বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে এবং তার কার্যকারিতা হ্রাস করবে।

৪. চতুর্থ খুঁটি হল, মুসলিম নারীকে অপরাপর সহযোগী বিদ্যা যেমন ভাষা, ইতিহাস, সাহিত্যের মত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে তার সংস্কৃতিকে লালন করা। কারণ, এটি তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে, নিয়মনীতির প্রচলন করবে এবং চিন্তা-ভাবনার খোরাক বৃদ্ধি করবে।

৫. আরও একটি অন্যতম স্তম্ভ হল মুসলিম নারীকে তার শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভিত নির্মাণে যেসব প্রতিবন্ধকতা বাধা সৃষ্টি করে, সে দিকে মনোযোগ দেয়া; কেননা প্রতিবন্ধকতাসমূহ কোন কোন সময় এই ভীতের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, অথবা তাতে ফাটল দেখা দেবে; আর যেসব বিষয় এই প্রতিবন্ধকতাসমূহ অতিক্রম করতে তাকে সহযোগিতা করবে, তা হল:

ক. সে আকিদা-বিশ্বাস, শরী‘আতের বিধিবিধান, নৈতিকতা, পারিবারিক ইত্যাদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইসলামী জীবনপদ্ধতি এমনভাবে অধ্যয়ন করবে যে, তা একটি পরিপূর্ণ প্রাসাদ, যার একাংশ অপর অংশের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে।

খ. সাংস্কৃতিক ভিত তৈরিতে ভারসাম্য রক্ষা করা, যাতে তার দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-দর্শনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে; সুতরাং সে কোন নির্দিষ্ট সিলেবাসের উপর সীমাবদ্ধ থাকবে না, অথবা সে তার মেধাকে একেবারে উন্মুক্ত করে দেবে না প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে যা ছড়িয়ে পড়েছে, তা গ্রহণ করার জন্য; সুতরাং এমনটি হলে সে পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।

মুসলিম নারীর সাংস্কৃতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য

১. সাংস্কৃতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের উপাদানসমূহ:

 ক) মুসলিম নারীদের ব্যক্তিত্ব গঠনে চিন্তাধারায়, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় ও জ্ঞানগত দিক থেকে স্বভাব-প্রকৃতির ক্রম উন্নতির মধ্য দিয়ে সুস্পষ্ট ও সহজ-সরল শরী‘আতের কারিকুলামের আলোকে একটি প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রের মাধ্যমে একটি পদ্ধতিগত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করা।

খ) তরুণ সমাজের জন্য মাদরাসায় ইসলামী সংস্কৃতি চালু করা এবং সিলেবাস ভিত্তিক শিক্ষাকে যথেষ্ট মনে না করা। কারণ, তা সময়ের সাথে শাসিত ও নিয়ন্ত্রিত; সুতরাং পাঠ পদ্ধতির বহির্ভূত উদ্যম বা কার্যক্রম থেকে ফায়দা হাসিল করতে হবে এবং আরও ফায়দা হাসিল করতে হবে ঐ পাঠ্যক্রম থেকে, যা সে অধ্যয়ন করে।

গ) শিশুর জন্য বিশ্বস্ত শিশু পরিচর্যাকারিনী হওয়া, তার শিশুই সেখানে প্রথম প্রাধান্য পাবে এবং দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে তাদের (শিশুদের) সাথে যার সম্পর্ক ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর একজন মা সাধারণত: (যা অচিরেই বর্ণিত হবে ইনশাআল্লাহ) যার কাছে চাওয়া হয় তার সন্তানদের তত্ত্বাবধান এবং ফাসাদ বা বিপর্যয় থেকে তাদেরকে রক্ষা করা, তখন সত্যিকার মুসলিম নারী থেকে এটাই দাবি করা হয় যে, সে তার তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে উপযুক্ত গবেষক ও প্রশাসকদেরকে বের করে দেবে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের সাথে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য এবং তাদের সমাজে ও মহল্লায় তাদের সমবয়সীদের সাথে তারা যেন হতে পারে সৎ প্রভাবশালী আদর্শ জাতি।

ঘ) একজন নারী কর্তৃক তার আশপাশে, তার ঘরের মধ্যে এবং তার প্রতিবেশী ও বান্ধবীদের সাথে যারা আছে, তাদের মধ্যে ইসলামী পরিবেশ সৃষ্টি করা; সে তাদের মধ্যে আল্লাহর যিকিরের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং দীন শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করবে; আর সে দীন বিরোধিতার পর্যবেক্ষণ করবে এবং সে সব ব্যাপারে সতর্ক করবে।

 ঙ) কাজকর্মে সমন্বয় সাধন এবং তার ব্যক্তিগত আচার-আচরণের উপর এই সংস্কৃতির প্রভাবকে ফুটিয়ে তোলা; সুতরাং বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করাটাই তার জন্য যথেষ্ট নয়; বরং তার জন্য আবশ্যক হল, সে তার সংস্কৃতিকে প্রকাশ করবে তার কথাবার্তায়, নীরব থাকায়, বের হওয়ার সময়, পোষাক-পরিচ্ছদে, সঞ্চয় ও রান্নাবান্না করাসহ তার সার্বিক তৎপরতার মধ্যে; আর তার স্বামী, পরিবার-পরিজন, তার স্বামীর পরিবার-পরিজন ও তার প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তার সংস্কৃতিকে প্রকাশ করবে। কারণ, অনেক সময় কথাবার্তা সেই পরিমাণ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে না, যেই পরিমাণ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে প্রশংসনীয় চরিত্র বা আচার-আচরণ।

চ) তার স্বামীকে সহযোগিতা করা; যখন সে (স্বামী) দা‘ঈ তথা আল্লাহ দীনের পথে আহ্বানকারীর ভূমিকা রাখে, তখন সে হবে তার সর্বোত্তম সাহায্যকারী ও বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষক, সে তার জন্য দো‘আ করবে, তার সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বা আসবাবপত্রসমূহ গুছিয়ে রাখবে, তার কর্মকাণ্ডকে তার জন্য সহজ করে দেবে এবং তার কাঙ্খিত বস্তু দ্বারা যথাসম্ভব তাকে তুষ্ট করবে; সুতরাং সে তাকে (তার স্বামীকে) নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়ন করবে এবং সে প্রতিদান ও কল্যাণের মধ্যে তাকে অংশীদার করবে।

ছ) জ্ঞানসমৃদ্ধ বার্ষিক ম্যাগাজিন বা সাময়িকীতে অংশগ্রহণ করা; উদাহরণস্বরূপ যা বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্র ইত্যাদি থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মৌসুমে প্রকাশিত হয়।

জ) ঐসব আলাপ-আলোচনা ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, যা নারী প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে, আরও বিশেষ করে জটিল সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত করে; উদাহরণস্বরূপ কিছু বিষয় ও সমস্যা হল: শিক্ষা ও বিবাহ; গৃহ ও কাজ; শিশু ও প্রতিবেশীদের সাথে আচার-আচরণ; সমাজ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া; নারী প্রসঙ্গে ধ্যানধারণা ও বিশ্বাসগত প্রভাব; বিনোদন ও পর্যটনের স্পটসমূহ ইত্যাদি। অতএব একজন বিদুষী সংস্কুতিমনা মুসলিম নারীর জন্য উচিত কাজ হল, সে ঐসব বিষয়ে অংশগ্রহণ করা।

২. এই দায়িত্ব ও কর্তব্য বাস্তবায়ন-পদ্ধতি:

আর এই ব্যাপারে যা সহায়তা করবে, তা কার্যকর করবে এবং তা প্রচার-প্রসার ঘটাবে, তা হচ্ছে, মহিলা সাংস্কৃতিক দায়িত্বশীলা এবং কল্যাণ ও হেদায়েতের পথে আহ্বানকারিনীগণের মধ্যে পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা পথ সুগম করা। আর এই পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে নম্র ব্যবহার, উন্মুক্ত হৃদয়, ভালবাসা, ঐক্যমত ও বিভিন্ন শাখার সাংস্কৃতিক দায়িত্ব পালনকারিনীদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের উপর ভিত্তি করে, শুধু বক্তৃতা-বিবৃতির পথে  নয়। তাছাড়া আরও যা এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারে তা হচ্ছে, বুদ্ধিমত্তা ও আবেগ-আন্তরিকতাকে কাজে লাগানো। সুতরাং কেবলমাত্র জ্ঞান হলেই যথেষ্ট নয়; যদিও এই যুগ সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে ‘জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগ’; এমন কথার দ্বারা যেন মুসলিম নারী প্রতারিত না হয়, বরং সে আবেগ-আন্তরিকতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে;  কারণ, আবেগ-সহানুভূতি হল একটি বড় ধরনের প্রভাব বিস্তারকারী পদ্ধতি ও কুরআনিক নিয়মনীতি, যা আল-কুরআন (মানুষকে) আগ্রহীকরণ ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করেছে; আর তা স্বভাবজাত পদ্ধতিও বটে। আর সাংস্কৃতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন-পদ্ধতির বাস্তবায়নের অন্যতম দিক হল: নিজের সমালোচনা করা ও অনবরত নিজের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ণ করা; যাতে সে নিজের উন্নতির চিন্তা ভুলে না যায়; নতুবা সে অলসতা ও শয়তানের ফাঁদে পতিত হবে। -(যুনাইদী যা উল্লেখ করেছেন তা থেকে সংক্ষেপিত)।

৩. মুসলিম মহিলার নিজের ব্যাপারে দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহের অন্যতম আরেকটি দিক হল: সৎকর্ম করা:

আর সৎকর্ম এমন কাজকে বলে, যার সমর্থনে আল-কুরআনুল কারীম অথবা সুন্নাতে নববী তথা হাদিসের দলিল রয়েছে। আর সৎকর্মকে তার হুকুম তথা বিধান অনুযায়ী ফরয ও মুস্তাহাবের মত প্রকারে বিভক্ত করা হয়ে থাকে; আর তার প্রকারের মধ্যে এমন ধরনের সৎকর্ম আছে, যার উপকারিতা ব্যক্তির নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ; আবার এমন ধরনের সৎকাজ আছে, যার উপকারিতা অপরের দিকে ধাবিত হয়। সহজে বোধগম্য ব্যাপার হল ইসলাম যা স্থির করে দিয়েছে, তা হল: নারী তার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে দায়বদ্ধ; তাকে প্রতিদান দেয়া হবে এবং তার কাজের হিসাব নেয়া হবে; এর উপর নির্দেশিত আয়াতসমূহের আলোচনা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে; উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে কর্মনিষ্ঠ কোন নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।” [সূরা আলে ইমরান: ১৯৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎ কাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও যুলুম করা হবে না।”  [সূরা আন-নিসা: ১২৪]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন: “মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।” [সূরা আন-নাহল: ৯৭]

ঈমান ও ইলম (জ্ঞান) অর্জন যেমন একজন মুসলিম নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য, তেমনি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সে এই জ্ঞানের দাবি অনুযায়ী আমল বা কাজ করবে; আর এই আমল ব্যতীত দুনিয়া ও আখেরাতে তার কোন ফলাফল অর্জিত হবে না; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ব; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য— কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।”  [সূরা আল-মুলক: ১ – ২]

কাযী ‘আইয়ায র. বলেন: (উত্তম বা সুন্দর) মানে: তার (কাজের) একনিষ্ঠতা ও বিশুদ্ধতা।সুতরাং আয়াতসমূহ আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দু’টি শর্ত নির্ধারণ করেছে:

  • ঈমান ও ইখলাস তথা একনিষ্ঠতাকে এক আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং তার সকল কর্মকাণ্ডকে তার অধীন করা।
  • সৎকর্ম; আর সৎকর্ম ততক্ষণ পর্যন্ত সৎকর্ম বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মের মত করে না হবে।

অনুরূপভাবে আয়াতসমূহ আমলের (সৎকাজের) জন্য দু’টি প্রতিদান বা পুরস্কারকে নির্ধারণ করে দিয়েছে: দুনিয়াতে পবিত্র জীবন এবং পরকালে জান্নাত। আর মুসলিম নারীর উপর আবশ্যক হল এই কাজ বাস্তবায়ন করা। সুতরাং যদি তা ফরয কাজ হয়, যেমন ফরয সালাত, ফরয যাকাত, রমযান মাসের সাওম, সামর্থ্যবান হলে জীবনে একবার হজ করা এবং অপরাপর আবশ্যকীয় কাজস হয়, তবে তার উপর কর্তব্য হচ্ছে কোন প্রকার ত্রুটিবিচ্যুতি অথবা কমতি অথবা অবহেলা অথবা তুচ্ছ জ্ঞান করা ছাড়াই তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। পক্ষান্তরে যদি তা ফরয কাজ না হয়ে নফল ও মুস্তাহাবের মত কাজ হয়, যার করার অনুমতি দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তার মুমিন বান্দাদেরকে করুণা করেছেন, তাহলে তার উচিত হবে সে কাজগুলো থেকে একটি পূর্ণ অংশ গ্রহণ করা। কারণ,

  • ফরযসমূহ পালনের ক্ষেত্রে যে ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে, এই নফল কাজসমূহ তার ক্ষতিপূরণ করবে।
  • তা ঐসব অপকর্ম ও গুণাহসমূহ ক্ষমা করার ব্যবস্থা করবে, যে অপরাধ তার জীবনে সংঘটিত হয়েছে।
  •  এবং তা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করবে।

আর এর মাধ্যমে সৎকর্মশীল পুরুষ ও নারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে এবং ঈমানের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।আর সেই হল মুসলিম বুদ্ধিমতী নারী, যে তার জন্য এই সালাত, সাওম, দান-সাদকা, হজ, ওমরা, দাওয়াত, সৎকাজের আদেশ করা, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখা, সততা, পরোপকার ইত্যাদি নফল ইবাদতের কিছু অংশ বরাদ্ধ করে রাখে। আর তার উচিত হবে, সে যেন বিভিন্ন প্রকারের নফল কাজ করার ব্যাপারে যত্নবান হয়, সুতরাং সে নফল কর্মসমূহ থেকে এমন কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে, যার ফায়দা বা উপকারিতা তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং এমন কাজ করার উদ্যোগও গ্রহণ করবে, যার ফায়দা অপরাপর ব্যক্তিদের দিকে ধাবিত হবে; আর উভয় শ্রেণীর আমল বা কার্যক্রমের মধ্যে বিরোধের সময় ঐ কাজটিকেই প্রাধান্য দেবে, যার মধ্যে অপরের কল্যাণ বা উপকার নিহিত রয়েছে; আর যখন বিভিন্ন প্রকার নফল কাজ তার সামনে এসে উপস্থিত হবে যেমন, নিজে কুরআন পাঠ অথবা অপরকে কুরআন পাঠ করানো ও তাকে শিক্ষা দেওয়া, এমতাবস্থায় সে ঐ আমলটিকেই প্রাধান্য দেবে, যার উপকারিতা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে; আর তা হল দ্বিতীয় কাজটি (অর্থাৎ অপরকে কুরআন পাঠ করানো ও তাকে শিক্ষা দেওয়া)। আর সেখান থেকেই আমি বলব: মুসলিম নারীর আবশ্যকীয় কাজ হল সে তার দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক কর্মকাণ্ডের জন্য একটি কর্মসূচী তৈরি করবে; অতঃপর তার জন্য একটা সম্ভাব্য ছক তৈরি করবে যাতে সে তার কাজগুলোর অনুশীলন, বাস্তবায়ন ও এগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে; এমনকি সে আল্লাহর ইবাদত করবে তার কার্যক্রমের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। আর এভাবেই তার কার্যক্রম পরিচালিত হবে; যেমন অচিরেই এ গ্রন্থের উপসংহারে তার বিস্তারিত বর্ণনা আসবে ইনশাআল্লাহ।

তাহলে বুঝা গেল যে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সৎ আমলের অন্তর্ভুক্ত হবে:

  • ইসলামের পাঁচটি রুকন বা স্তম্ভকে বাস্তবায়ণ করা: সুতরাং সে পাঁচবার সময়মত সালাত আদায় করবে; তার শর্ত ও ওয়াজিবসমূহ এবং যথাসম্ভব তার মুস্তাহাবসমূহ যথাযথভাবে আদায় করবে।
  • আর সে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে তার সম্পদকে পবিত্র করবে, যদি তার নিকট এমন সম্পদ থাকে, যাতে যাকাত ওয়াজিব হয়।
  • আর সে রমযান মাসে সাওম (রোযা) পালন করবে।
  • আর সে জীবনে একবার হজ পালন করবে, যদি সে হজ পালনের এই পথে সামর্থ্যবান হয়; আর সামর্থ্যের মধ্যে তার সাথে মাহরাম ব্যক্তি বিদ্যমান থাকা অন্যতম।
  • রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:“যখন নারী তার পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে; তার (রমযান) মাসের সাওম পালন করবে; তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা কর, সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর।” – (ইমাম আহমদ হাদিসখানা বর্ণনা করেন)। [1]
  • তার বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ পালন করা: উদাহরণস্বরূপ সে শরী‘আত কর্তৃক ফরযকৃত পর্দা যথাযথভাবে মেনে চলবে; আর তা হল, সে তার অপরিচিত পুরুষদের থেকে তার চেহারা ও দুই হাতসহ সম্পূর্ণ শরীরকে ঢেকে রাখবে; অনুরূপভাবে সে লজ্জা, শরম ও সচ্চরিত্রের হেফাজত করবে। আর এই বক্তব্যের সমর্থনে অনেক দলিল-প্রমাণ রয়েছে; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে নবী-পত্নিগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে তোমরা পর-পুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং প্রচীন (জাহেলী) যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। তোমরা সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাকবে। হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।” [ সূরা আল-আহযাব: ৩২ – ৩৩]
  • আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাবার প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে ভোজনের জন্য নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমাদেরকে আহ্বান করলে তোমরা প্রবেশ কর এবং ভোজনশেষে তোমরা চলে যাও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। কারণ, তোমাদের এই আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়, সে তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করে; কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না। তোমরা তার স্ত্রীদের নিকট কোন কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এই বিধান তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র। তোমাদের কারও পক্ষে আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া সংগত নয় এবং তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা তোমাদের জন্য কখনও বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ।”  [সূরা আল-আহযাব: ৫৩]
  •  আর এই আয়াতটি ‘পর্দার আয়াত’ বলে পরিচিত। সুতরাং যখন এই আয়াত দু‘টি সর্বশ্রেষ্ঠ যুগের মুমিনদের স্ত্রীগণের পবিত্রতার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, তখন তাদের পরবর্তী নারীদের জন্য পর্দা তো আরও অতি উত্তমভাবেই জরুরি হয়ে পড়ে; এই বক্তব্যকে সমর্থন করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের নারীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব: ৫৯]  [2]
  • আর সৎ কাজের মধ্যে আরও যা অন্তর্ভুক্ত, তা হল: নফল ও মুস্তাহাবসমূহ, যা সম্পাদনের জন্য প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও নারী উদ্বুদ্ধ করে, পূর্বে যার বর্ণনা করা হয়েছে; আর তা হল: কুরআন পাঠ, যিকির-আযকার, নফল সালাত, নফল রোযা এবং নফল দান-সাদকা।
  • অনুরূপভাবে আদব-কায়দা, শিষ্টাচারিতা ও নৈতিক চরিত্র, যা আত্মস্থ করা মুসলিম নারীর জন্য আবশ্যক; যেমন: কথায় ও কাজে সত্যবাদিতা, মিথ্যা না বলা, ধৈর্যধারণ করা, অপরের সাথে উত্তম ব্যবহার করা, কথার সময় বিনয় ও নম্রতা প্রদর্শন করা, সাক্ষাতের সময় প্রফুল্ল থাকা এবং চলাফেরায়, পানাহারে, ঘুমানোর সময়, কথাবার্তায়, উঠা-বসা ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাধারণ শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ্য রাখা। সুতরাং মুসলিম নারীর উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল এইসব মর্যদাপূর্ণ নৈতিক চারিত্রিক গুণাবলী অর্জনে আত্মনিবেদন করা এবং এসব উত্তম আচরণ ও শিষ্টাচারের অনুসরণ করা।
  • আর সৎ কর্মসমূহের মধ্য থেকে অন্যতম সৎকাজ হল: আন্তরিকতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড, যেমন আল্লাহ তা‘আলাকে আন্তরিকভাবে ভালবাসা, তাঁকে ভয় করা, তাঁর নিকট প্রত্যাশা করা, তাঁর ধ্যান করা (সর্বক্ষণ তাঁর কথা খেয়াল রাখা) ইত্যাদি।
  • আর সৎ কর্মসমূহের মধ্য থেকে আরও কিছু সৎকাজ হল: এমন কতিপয় কর্মকাণ্ড, যেগুলোর ফায়দা বা উপকারিতা অন্যের প্রতি ধাবিত হয়; যেমন: ইলম বা জ্ঞান শিক্ষা দেয়া, কুরআন পাঠ করানো, উপদেশ দেয়া, দরিদ্রকে দান করা, অভাবীকে সহযোগিতা করা, ইয়াতীম ও বিধবাকে সাহায্য করা, দুঃখ-কষ্ট দূর করা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রশমিত করা, সৎকর্মের আদেশ দেয়া ইত্যাদি; অচিরেই যার বিষদ বর্ণনা আসছে ইনশাআল্লাহ।
  • আর সৎ কর্মসমূহের মধ্য থেকে আরও কিছু সৎকাজ হল: লজ্জাস্থান ও জিহ্বা (ভাষা) কে হেফাজত করা এবং দৃষ্টি অবনমিত করা; আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।” [সূরা আন-নূর: ৩১]
  • আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্বে উল্লেখিত হাদিসে জন্নাতে প্রবেশের কতগুলো শর্ত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: (সে তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে)
  • পরিতাপের বিষয় হল, অধিকাংশ মুসলিম নারী তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহের ব্যাপারে উদার বা ছাড় দেওয়ার নীতি অবলম্বন করেছে; তারা তাদের চোখের লাগাম ছেড়ে দিয়েছে; ফলে তারা জনসমাবেশ, ম্যাগাজিন, হাট-বাজার ইত্যাদিতে হালাল ও হারাম জিনিস প্রত্যক্ষ করতে থাকে; যেমনিভাবে তারা তাদের জিহ্বাকে মুসলিম পুরুষ ও নারীদের মানসম্মান নিয়ে টানাটানির অনুমোদন দিয়ে থাকে এবং তারা গিবত (পরচর্চা), কুৎসা, মিথ্যা ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ে।

আর সৎ কাজের মধ্যে আরও অন্যতম কাজ হল: তার স্বামীর অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠা বা আদায় করা; বস্তুত: এই অধিকারটি বিশেষভাবে আলোচনার দাবী রাখে, তার গুরুত্ব, মহত্ব ও এই ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে দৃঢ় অবস্থান ও গুরুত্ব প্রদানের কারণে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার হক তথা অধিকারসমূহের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হক হল স্বামীর হক; আর তার স্বামীর অধিকারসমূহ হল:

  • তাকে সন্তুষ্ট রাখা এবং তাকে অসন্তুষ্ট বা বিরাগভাজন না করা।
  • তার পোষাক-পরিচ্ছদ ও খাবার প্রস্তুতের মত বিশেষ কাজসমূহ সম্পাদন করা।
  • তার মন-মানষিকতার প্রতি খেয়াল রাখা।
  • বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে তাকে বিব্রত না করা; বিশেষ করে সে যখন স্বল্প আয়ের লোক হয়।
  • ভাল কাজে তাকে উৎসাহিত করা।
  • তাকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা, যখন সে ক্রটিবিচ্যুতি করে অথবা ভাল কাজে অবহেলা করে; আর তাকে কোমল ভাষায় উপদেশ দেওয়া।
  • তাকে তার কর্মকাণ্ডে ও মানসিক অবস্থার উন্নয়নে উৎসাহ প্রদান করা।
  • প্রত্যেক কল্যাণকর পথে তার সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া।
  • তার নির্দেশসমূহ কাজে পরিণত করা; তবে সেই নির্দেশ অন্যায় কাজের হলে তা বাস্তবায়ন করা যাবে না।
  • অন্যায় ও অবাধ্যতার ক্ষেত্রে তার অনুগামী না হওয়া।

চতুর্থত:

একজন মুসলিম নারীর নিজের ব্যাপারে দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহের অধীনে আরও যা অন্তর্ভুক্ত হয়, তা হল তার নিজেকে অন্যায় ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা করা; শয়তানের পথসমূহ বন্ধ করা এবং কামনা-বাসনা ও লোভ-লালসাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। আর এখানে কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্য থেকে যা বর্ণিত হয়েছে, তার আলোকে কিছু বিশেষ দিক উল্লেখ করা হবে:

  • প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সাথে সম্পর্কিত ইবাদতের নির্দেশের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করা থেকে সতর্ক থাকা; যেমন সালাত ও সাওমের ক্ষেত্রে অবহেলা করা; বিশেষ করে সময় মত সালাত আদায় না করা।
  • আত্মার দুর্বলতা ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার প্রতি আস্থাহীনতা থেকে সতর্ক থাকা; আরও সতর্ক থাকা জাদুকর, ভেলকিবাজ, ভণ্ড ও প্রতারক, জ্যোতিষী, ভবিষ্যতবাণী পাঠকারী প্রমুখের মত কাফির, ফাসিক ও পথভ্রষ্টদের থেকে; আর আফসোসের বিষয় হল, ঐসব ব্যক্তিদের নিকট বারবার গমনকারীদের অধিকাংশই হল নারী।
  • সামগ্রিকভাবে ছোট-বড় সকল প্রকার অন্যায় ও অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা এবং তাতে জড়িয়ে পড়া থেকে সতর্ক থাকা; আর এই ব্যাপারে নির্দেশ সংবলিত কুরআন ও সুন্নাহর অনেক বক্তব্য রয়েছে; সুতরাং যেই নস বা বক্তব্যই আনুগত্যের ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করে, ঠিক সেই নস বা বক্তব্যই আবার প্রত্যক্ষভাবে অথবা পরোক্ষভাবে অন্যায় ও অবাধ্যতা থেকে সতর্ক করে।
  • মুসলিম নারীদের মান-সম্মানের মধ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ করা থেকে সতর্ক থাকা, যা অধিকাংশ নারীর মধ্যে ছড়িয়ে আছে; কারণ, গিবত (পরচর্চা) করা, কুৎসা রটনা করা, মিথ্যা কথা বলা এবং অমুক পুরুষ ও অমুক নারীর সমালোচনা করাটা তাদের মজলিস বা বৈঠকসমূহের মধুতে পরিণত হয়।
  • পোষাক-পরিচ্ছদ ও সাধারণ বাহ্যিক দিকের ক্ষেত্রে নমনীয়তা বা ছাড় দেয়ার প্রবণতা থেকে সতর্ক থাকা, যা অধিকাংশ নারীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তারা খাট, খণ্ডিত, হালকা-পাতলা, বাহু নগ্নকারক, দৃষ্টি আকর্ষক ও কাফির নারীদের অনুসরণীয় পোষাক পরিধান করতে শুরু করেছে।
  • বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন সর্বক্ষেত্রে কাফির নারীদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা থেকে সতর্ক থাকা; আর সতর্ক থাকা তাদের (কাফির নারীদের) কর্মকাণ্ডে বিমুগ্ধ হওয়া থেকে। কারণ, মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকাংশ নারী চুল, পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদির আকৃতি ও ধরন-প্রকৃতির ক্ষেত্রে প্রত্যেক (বহিরাগত ও শরী‘আত গর্হিত) হৈচৈ সৃষ্টিকারী নারী-পুরুষের অনুসরণ করতে শুরু করে দিয়েছে।

এই হল এমন কিছু নমুনা, যা থেকে মুসলিম নারীর সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক; আর যেমনিভাবে শরী‘আতের নিয়ম-কানুনের আনুগত্য করলে সাওয়াব দেয়া হয়, ঠিক তেমনিভাবে অন্যায়-অপরাধ পরিত্যাগ করার কারণেও সাওয়াব দেয়া হবে; সুতরাং আনুগত্যের কাজ সম্পাদনের ব্যাপারে তার যেমন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তেমনিভাবে অন্যায়-অপরাধ পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রেও তার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বড়।

দ্বিতীয় ক্ষেত্র: মুসলিম নারীর উপর তার ঘরে দায়িত্ব ও কর্তব্য

ঘর বা আবাসগৃহ হচ্ছে এমন একটি ছোট্ট রাষ্ট্র, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার এই মৌলিক উপাদানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে: স্বামী, স্ত্রী, পিতা ও মাতা এবং সন্তান-সন্তুতি। সুতরাং তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক তাঁর বান্দাদের প্রতি প্রদত্ত নিয়ামতরাজির মধ্যে অন্যতম; তিনি বলেন: “আর আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন তোমাদের আবাসস্থল।” [সূরা আন-নাহল: ৮০]

আর তার (ঘরের) প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে শুধু তারাই অবগত এবং তার কদর বা মর্যাদা শুধু তারাই অনুমান করতে পারবে, যারা বসবাস করে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে, তাঁবুতে, মহাসড়কে, ব্রীজের নীচে ও পথে-ঘাটে। আর ঘরের মধ্যেই  পরিবারের সদস্যগণ তাদের বৈশিষ্ট্য ও পরিপূর্ণ মর্যাদার নিয়ামত ভোগ করেন; এই ঘর তাদেরকে কঠিন গরম এবং ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা করে; আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই মহান নিয়ামত দ্বারা তাদের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন; তিনি বলেন: “আর আল্লাহ তোমাদের গৃহকে করেন তোমাদের আবাসস্থল।” [সূরা আন-নাহল: ৮০]

ইবনু কাছির র. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: “আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি প্রদত্ত পূর্ণ নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, তিনি তাদের জন্য এমন আবাসিক ঘরের ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তার আশ্রয় গ্রহণ করে; যার দ্বারা তারা নিজেদের ঢেঁকে রাখে এবং সকল প্রকার উপকার ভোগ করে।” [3]

আর এই ঘরের গুরুত্ব ও তার মহান মর্যাদার কারণে ইসলাম তার বিষয় ও কার্যক্রমসমূহকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়েছে এবং দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহকে তার মৌলিক উপাদান অনুযায়ী বণ্টন করেছে; বিশেষ করে মৌলিকভাবে মুসলিম নারীর সাথে যা সংশ্লিষ্ট (তা), কেননা সে হচ্ছে ঘরের মধ্যে মা, অনুরূপভাবে স্ত্রী, কন্যা ও বোন; সুতরাং ঘরের মধ্যে তার অনেক বড় করণীয় রয়েছে এবং ঐ ঘর নামক রাষ্ট্রের মধ্যে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যও অনেক বড়, যে রাষ্ট্রের অবকাঠামোকে ধ্বংস করার জন্য ইসলামের শত্রুগণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, এ রাষ্ট্রটি হচ্ছে সমাজের প্রতি প্রসারিত এক বৃহৎ গবাক্ষ। সুতরাং যখন তাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে, তখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। ফলে ইসলামের শত্রুরা সমাজের অন্যতম প্রধান দু’টি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিয়েছে; আর তা হল, যে কোন বয়সের নারী ও শিশু।

১. ঘরের মধ্যে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের শর‘য়ী ভিত্তি:

ঘরে নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহের ব্যাপারে শর‘য়ী ভিত্তি হচ্ছে, তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ ব্যাপক আমানতদারিতা হিসেবে নির্ধারিত হওয়ার উপর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ! জেনে শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ করো না।” [সূরা আল-আনফাল: ২৭]

আর এই দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিরক্ষামূলক দায়িত্বে পরিণত হয়ে যায়, যা পালন করা প্রত্যেক নারীর উপর আবশ্যক, যেমনিভাবে তা পালন করা পুরুষের জন্যও আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।” [সূরা আত-তাহরীম: ৬]

আর শরী‘আত এসব দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি নজর দেয়, যাতে উভয় গৃহকর্তা স্বামী ও স্ত্রীর কল্যাণকর সীমারেখার মধ্যে ব্যাপক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে দায়বদ্ধ থাকে। কারণ, বুখারী ও মুসলিমে আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল (রক্ষণাবেক্ষণকারী), আর তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইমাম বা শাসক হলেন দায়িত্বশীল, আর তাকে তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর পুরুষ তার পরিবার ও সংসারের জন্য দায়িত্বশীল, আর তাকে তার পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর নারী তার স্বামীর ঘর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপর এক বর্ণনায় আছে: ‘নারী তার স্বামীর ঘর ও তার সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তাদের ব্যাপারে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ আর খাদেম (সেবক) তার মনিবের ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ধারণা করি যে, তিনি (রাসূল) আরও বলেছেন: পুরুষ ব্যক্তি তার পিতার ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর তোমাদের সকলেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের সকলকেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [4]

তেমনিভাবে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্যের ভারসাম্য রক্ষার করার উপর জোর দেয়। সুনানের বর্ণনাকারীগণ আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিদায় হজে ভাষণ দিতে শুনেছেন; সুতরাং তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী থেকে যা শুনেছেন, তার অংশবিশেষ হল:  “জেনে রাখ! তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, অনুরূপভাবে তোমাদের উপরও তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে; সুতরাং তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে যেতে না দেয়, যাকে তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন তোমাদের ঘরের মধ্যে এমন কাউকে অনুমতি না দেয়, যাকে তোমরা অপছন্দ কর। আরও জেনে রাখ! তোমাদের উপর তাদের অধিকার হল, তোমরা তাদের বস্ত্র ও অন্যের ব্যাপারে তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করবে।” [5]

২. ঐসব দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিস্তারিত বিবরণ:

(ক) আদর্শ স্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য: 

আর এই কর্তব্যের মূল হলো স্বামীর প্রতি তার দায়িত্ব। তার উপর তার স্বামীর অধিকার অনেক বড়, যা তার পিতা-মাতার অধিকারের চেয়েও বেশি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার অধিকারের (হকের) পরেই তার অধিকারের শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থান। আর এই অধিকারের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে এসেছে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন” [সূরা আন-নিসা: ৩৪]

সুতরাং সে তার (স্ত্রীর) ব্যাপারে দায়বদ্ধ ও তার পরিচালক এবং তার সকল বিষয়ের তত্ত্বাবধায়ক। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কোন মানুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা সঠিক নয়; আর কোন মানুষের জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা যদি সঠিক হত, তবে আমি নারীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য; কেননা তার উপর তার স্বামীর বিরাট অধিকার (হক) রয়েছে।” [6]

উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “নারীদের যে কেউ মারা যাবে এমতাবস্থায় যে তার স্বামী তার উপর সন্তুষ্ট, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [7]

আর এই হক বা অধিকারের বিবরণ হচ্ছে:

আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা নেই এমন সকল কাজে সাধারণভাবে তার আনুগত্য করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন নারী তার পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে; তার (রমযান) মাসের সাওম পালন করবে; তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা কর, সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবশে কর।” – (ইমাম আহমদ হাদিসখানা বর্ণনা করেন)। [8]

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল: কোন নারী সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বললেন: ঐ নারীই উত্তম, যে নারী তার স্বামীকে আনন্দ দেয় যখন সে তার দিকে তাকায়; তার আনুগত্য করে, যখন সে নির্দেশ দেয় এবং তার নিজের ও সম্পদের ব্যাপারে সে যা অপছন্দ করে তার বিরুদ্ধাচরণ করে না।” (ইমাম নাসায়ী হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [9]

তার সাথে উত্তম আচরণ করা এবং তার কষ্ট লাঘব করা; আর এর উপরই নির্ভর করে তাকে সন্তুষ্ট করা এবং তার ব্যক্তিত্বকে রক্ষা করা; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “দুনিয়াতে কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দিলেই তার ডাগড় চক্ষুবিশিষ্ট হুরী স্ত্রী বলে উঠে: তুমি তাকে কষ্ট দেবে না; আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুক! কারণ, সে তোর নিকট আগন্তুক, অচিরেই সে তোকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে। ” – ( ইমাম তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন)। [10]

  • তাকে ভালবাসা এবং তার বন্ধুর মতো হওয়া যে, সে তাকে দেখে হাসবে এবং তাকে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে নম্রতা প্রদর্শন করবে। আর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের নারীদের প্রশংসা করেছেন এইভাবে: “সোহাগিনী ও সমবয়স্কা।” [সূরা আল-ওয়াকিয়া: ৩৭]

মানে- তার স্বামীর নিকট সে সোহাগিনী।

সে তার (স্বামীর) অনুপস্থিতিতে নিজেকে ও তার ধন-সম্পদকে রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এই ব্যাপারে পূর্বে আলোচনা হয়েছে।

সে তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল সাওম (রোযা) পালন করবে না; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর জন্য সাওম (নফল রোযা) পালন করা বৈধ নয়; আর স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না …।” – ( ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [11]

স্ত্রী কর্তৃক তার স্বামীর ঘরকে সংরক্ষিত রাখা। সুতরাং সে তার ঘরে কোন অপরিচিত পুরুষ অথবা এমন কোন ব্যক্তির অনুপ্রবেশ ঘটাবে না, যার অনুপ্রবেশকে তার স্বামী অপছন্দ করে, যদিও সেই ব্যক্তিটি তার ভাই হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “জেনে রাখ! তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, অনুরূপভাবে তোমাদের উপরও তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে; সুতরাং তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে যেতে না দেয়, যাকে তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন তোমাদের ঘরের মধ্যে এমন কাউকে অনুমতি না দেয়, যাকে তোমরা অপছন্দ কর। আরও জেনে রাখ! তোমাদের উপর তাদের অধিকার হল, তোমরা তাদের বস্ত্র ও অন্যের ব্যাপারে তাদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করবে।” [12]

সে তার উপর অন্ন ও বস্ত্রসহ এমন ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দেবে না, যার সামর্থ্য তার নেই। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত, সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে।” [সূরা আত-তালাক: ৭]

বিশেষ প্রয়োজনের মুহূর্তে তার চাহিদা পূরণ করা এবং কোন নির্ভরযোগ্য কারণ ছাড়া তাকে নিষেধ না করা। বিশুদ্ধ হাদিসের মধ্যে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যখন কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে তার সাথে একই বিছানায় শোয়ার জন্য আহ্বান করে, আর তার স্ত্রী সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা ঐ মহিলার উপর লা‘নত (অভিশাপ) বর্ষণ করতে থাকে।” – ( ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [13]

স্বামীর জন্য সাজগোছ করা, যাতে নিজের প্রতি তাকে আকৃষ্ট করা যায়। এর ফলে স্বামী তার দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং তাকে হারামের মধ্যে ছেড়ে দেবে না। স্ত্রীর তাই উচিত নিজেকে এমন বস্তুর দ্বারা সুসজ্জিত করার চেষ্টা করা, যাতে স্বামী আকৃষ্ট হয়; ফলে তার চোখ সুন্দরের প্রতি পড়বে এবং তার নাক দ্বারা সে সুন্দর ঘ্রাণই পাবে; যেমনিভাবে সে তাকে কোমল কথা ও উত্তম বক্তব্য ব্যতীত অন্য কোন মন্দ কথা শুনাবে না।

তার অনুগ্রহের স্বীকৃতি প্রদান এবং তার নিয়ামতের অকৃতজ্ঞ না হওয়া; আর তার ভাল আচরণকে অস্বীকার করবে না। বিশেষ করে যখন সে তার কাছ থেকে ব্যয় ও দানশীলতার মানসিকতা লক্ষ্য করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা সাদকা কর। কারণ, তোমাদের অধিকাংশ হবে জাহান্নামের ইন্ধন। অতঃপর মহিলাদের মধ্য থেকে একজন মহিলা দাঁড়াল, যার উভয় গালে কাল দাগ ছিল; সে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! তা কেন? তিনি বললেন: তোমরা বেশি অভিযোগ করে থাক এবং উপকারকারীর উপকার অস্বীকার কর।” – ( ইমাম মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [14]

অপর এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তুমি যদি দীর্ঘকাল তাদের কারও প্রতি ইহসান করতে থাক, অতঃপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখলেই বলে, ‘আমি কখনও তোমার কাছ থেকে ভাল ব্যবহার পাইনি’।” – ( ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [15]

স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার ঘর থেকে বের না হওয়া; যদিও পিতা-মাতার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হোক না কেন। আর এই ব্যাপারে অনেক হাদিস রয়েছে।

খাওয়া-দাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদির মত স্বামীর ঘর-গৃহস্থালির কাজসমূহ সে সম্পাদন করবে। অনুরূপভাবে তার স্বামীর বিশেষ কাজগুলো সম্পাদন করবে; যেমন: তার পোষাক-পরিচ্ছদ প্রস্তুত করা ও তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়া; তার খাবার প্রস্তুত করা ইত্যাদি। ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. আসমা বিনতে আবি বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’র হাদিস থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “যখন যুবায়ের রা. আমাকে বিয়ে করলেন, তখন তার কাছে কোন ধন-সম্পদ ছিল না, এমনকি কোন স্থাবর জমি-জমা, দাস-দাসীও ছিল না; শুধু কুয়ো থেকে পানি উত্তোলনকারী একটি উট ও একটি ঘোড়া ছিল। আমি তাঁর উট ও ঘোড়া চরাতাম, পানি পান করাতাম এবং পানি উত্তোলনকারী মশক ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতাম, আটা পিষতাম; …।” [16]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্য ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা গম পেষার চাক্কি ঘুরানোর কারণে ফোস্কা পড়া হাত নিয়ে তার কষ্টের কথা ব্যক্ত করলেন এবং একজন খাদেম দাবি করলেন, যে এসব কাজে তাঁকে সহযোগিতা করবে; তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কন্যাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: “আমি তোমাদেরকে এমন একটি আমলের কথা বলে দেবনা, যা তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চেয়েও অনেক বেশি উত্তম? যখন তোমরা শয্যা গ্রহণ করতে যাবে, তখন তোমরা “আল্লাহু আকবার” তেত্রিশ বার, “সুবহানাল্লাহ” তেত্রিশ বার এবং “আলহামদু লিল্লাহ” তেত্রিশ বার পড়বে। এটা তোমাদের জন্য একটি খাদেমের চেয়েও অনেক বেশি উত্তম।” – ( ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [17]

(খ) মা হিসেবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য:

মায়ের জন্য রয়েছে বড় রকমের অধিকার; বরং আল্লাহ তা‘আলার অধিকারের পরে সবচেয়ে বড় অধিকার হল মায়ের। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করতে এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল। মমতাবেশে তাদের প্রতি নম্রতার পাখা অবনমিত করবে এবং বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন’।” [সূরা আল-ইসরা: ২৩ -২৪]

এই আয়াতের সাথে অর্থগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ আরও অনেক আয়াত রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি বলল: তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার পিতা।” – ( ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [18]

 

আর এই অধিকারটি বাস্তবায়িত হয় কথা, কাজ ও সম্পদের মাধ্যমে ইহসানকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর এই অধিকারের বিনিময়ে তার উপর আবশ্যক হয়ে পড়ে গুরু দায়িত্ব পালন ও বড় রকমের আমানতের সংরক্ষণ করা। বরং তা এই জীবনে তার মহান দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহের অন্যতম। আর এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের সূচনা হল আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।” [সূরা আত-তাহরীম: ৬]

হাসান র. বলেন: তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের নির্দেশ দাও এবং কল্যাণের প্রশিক্ষণ দাও।

বিশুদ্ধ হাদিসের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল (রক্ষণাবেক্ষণকারী), আর তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” – ( ইমাম বুখারী ও মুসলিম র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [19]

ইমাম ইবনুল কায়্যিম র. বলেন: “পিতা-মাতার প্রতি তাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ সন্তানদের প্রতি তাদের পিতা-মাতার ব্যাপারে নির্দেশের উপর অগ্রগামী; সুতরাং যে ব্যক্তি তার সন্তানকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে অবহেলা করে এবং তাকে অনর্থক ছেড়ে দেয়, তবে সে তার প্রতি চরম খারাপ আচরণ করল। আর অধিকাংশ সন্তানের জীবনে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা নেমে আসে তাদের পিতা-মাতার কারণে; কেননা তারা তাদের প্রতি অযত্ন ও অবহেলা করে এবং তাদেরকে দীনের ফরয ও সুন্নাতসমূহ শিক্ষা দেয়া থেকে বিরত থাকে। তারা তাদেরকে ছোট অবস্থায় নষ্ট করেছে, ফলে বড় হয়ে তারা তাদের নিজেদের ও পিতা-মাতাদের উপকার করবে না। যেমনিভাবে এক ব্যক্তি তার সন্তানের অবাধ্যতার অভিযোগ করলে সন্তান বলে: হে আমার পিতা! আমার ছোট বেলায় তুমি আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছ, আর আমি তোমার বৃদ্ধ বয়সে তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছি; তুমি আমাকে শিশু অবস্থায় নষ্ট করেছ, আর আমি তোমার বৃদ্ধ অবস্থায় তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি।” [20]

পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে এটা একটা মোটামুটি বর্ণনা; তবে মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল নিম্নরূপ:

প্রথমত: তার সন্তানের পিতা নির্বাচন করা:

নারীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্যের সূচনা হল তার শিশু সন্তানদের পিতা গ্রহণের ক্ষেত্রে বর বাছাইয়ের জটিল ধাপ বা স্তরটি। যে কেউ তাকে বিয়ে করতে ইচ্ছা পোষণ করে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করলেই সে তা গ্রহণ করবে না; বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রহণযোগ্য স্বামী নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন: “যখন তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও দীনদারীতে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তোমরা তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। যদি তোমরা তা না কর, তবে তা পৃথিবীর মধ্যে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণ হবে।” – (ইমাম তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [21]

মানদণ্ড হল তিনটি বিষয়: দীন, চরিত্র ও আকল:     

যখন এই তিনটি বিষয় ব্যক্তির মধ্যে পূর্ণতা লাভ করে, তখন সে তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে। বর্তমান দিনের অধিকাংশ মানুষ এর বিপরীতে তার ধন-সম্পদের আধিক্য, অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অথবা তার সরকারি চাকরি, অথবা সামাজিক মর্যাদা, অথবা তার চেহারা-ছবি, অথবা তার যশ-খ্যাতিসহ ইত্যাদি বিচার করে। অথচ এ ধরনের সকল মানদণ্ড রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ডের মোকবিলায় কিছুই নয়।

কেন? তার কারণ হল, সৌভাগ্য, পবিত্র বা উত্তম জীবন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম পরিণতি এই মানদণ্ডের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।সুতরাং বেদীন স্বামীর কারণে স্ত্রী যুলুমের শিকার হবে; আর তার সন্তানগণ হবে ধ্বংস ও বিচ্যুতির শিকার।আর স্বামীর নৈতিকতার অভাবে স্ত্রী তার দুর্ব্যবহারের শিকার হবে এবং তার সন্তানগণ ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে ধ্বংসের শিকার হবে।আর স্বামীর নির্বুদ্ধিতার কারণে স্ত্রী অশান্তি ও দুর্বিসহ জীবনের অধিকারী হবে; আর তার সন্তানগণ হবে অস্থিরতার শিকার। সুতরাং ধার্মিক, চরিত্রবান ও বুদ্ধিমান পিতা হলেন এমন, যিনি তার (স্ত্রীর) সন্তানদেরকে প্রতিপালন করবেন ও শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে যথাযথভাবে লালন-পালন ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করবেন; আর তাদেরকে উত্তম চরিত্র ও আচার-আচরণের ব্যাপারে উৎসাহিত করবেন।

 দ্বিতীয়ত: ভ্রুণ অবস্থায় তার রক্ষণাবেক্ষণ করা:

তার জরায়ুর মধ্যে বীর্য প্রবেশের দিন থেকেই ভ্রণের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা; সুতরাং সে তার সুস্থতা এবং তার জন্য উপকারী বিষয়সমূহের প্রতি যত্নবান হবে; আর তা সম্ভব হবে তার খাওয়া-দাওয়া, পান করা ও নড়াচড়ার মধ্য দিয়ে। সুতরাং জেনে রাখা দরকার যে, গর্ভবতী তার দীর্ঘ গর্ভাকালীন সময়ের মধ্যে অনেকগুলো পরিস্থিতির শিকার হয়; ফলে সে এই দিকে মনোযোগ দেবে, যাতে তার গর্ভস্থিত সন্তান নিরাপদে বের হয়ে আসে; আর এটা তাকে সুস্থ, স্বাস্থ্যসম্মত ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তাকে লালন-পালনে সহযোগিতা করবে।

তৃতীয়ত: প্রসূত সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ করা:

  • তাকে প্রসব করার সময় তার অধিকারসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার পিতার সাথে এই পর্যায়ে নিম্নলিখিতরূপে সহযোগিতা করা:
  • তার ডান কানে আযান দেয়া, যাতে সে প্রথমেই তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের কথা শুনতে পায়।
  • সুন্দর নাম দ্বারা তার নাম রাখা। আর খারাপ নাম দ্বারা নাম রাখা থেকে, অথবা খারাপ অর্থ বহন করে এমন নাম দ্বারা নামকরণ করা, অথবা কাফিরদের নামে নাম রাখা, অথবা শরী‘আত কর্তৃক নিষিদ্ধ নামে নামকরণ করা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা।
  • তার জন্মের সপ্তম দিনে তার নাম রাখার সাথে সাথে তার মাথার চুল মুণ্ডন করা।
  • তার মাথার চুলের ওজন পরিমাণ রৌপ্য দ্বারা সাদকা করা।
  • তার পক্ষ থেকে আকিকা করা; আর তা এইভাবে যে, ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল দ্বারা, আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি ছাগল দ্বারা; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “প্রত্যেক প্রসূত সন্তান স্বীয় আকিকার সাথে আবদ্ধ। তার পক্ষ থেকে তা তার জন্মের সপ্তম দিনে যবাই করতে হবে। সেদিন তার নাম রাখতে হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করতে হবে।” (ইমাম তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [22]

তাওহীদ তথা একত্ববাদের ভিত্তিতে কথা বলার উপর তাকে অভ্যস্ত করানো এবং তার প্রাণে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বিষয়াদির বীজ বপন করা; বিশেষ করে প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যেই তা করতে হবে। সুতরাং গবেষকদের কেউ কেউ উল্লেখ করেন যে, শিশু তার প্রথম বছরগুলোতেই তার পূর্বপুরুষদের অধিকাংশ চিন্তাচেতনার আলোকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে; কারণ, ৯০% শিক্ষা-বিষয়ক কার্যক্রম তার প্রথম বছরগুলোতেই সম্পন্ন হয়। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল এই সময়কালকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো, যা কিছুক্ষণ পূর্বে আলোচিত হয়েছে এবং যার বিস্তারিত আলোচনা অচিরেই আসছে। ইবনুল জাউযী র. বলেন: ছোট বয়সে যা হয়, তাকেই আমি বেশি মূল্যায়ন করি; কেননা যখন সন্তানকে তার স্বভাবের উপর ছেড়ে দেয়া হয়, তখন সে তার উপরই বেড়ে উঠে; আর স্বভাব একটি কঠিন বিষয়, কবি বলেন:

যখন তুমি গাছের ডালকে সোজা করতে চাইবে, তখন তা সোজা হয়ে যাবে
আর যখন তুমি শুকনো কাঠকে সোজা করতে চাইবে, তখন তা নরম হবে না;
আদব-কায়দা তরুণ সমাজকে উপকার করে, যেমনটি ঘটে লোহার মধ্যে
আর বয়স্ক লোকের মধ্যে আদব-কায়দা তেমন কোন উপকার করে না।

আর এখানে যা উল্লেখ করার মত, তা হলো,

 

  • শিশুকে নিম্নোল্লেখিত যিকিরসমূহ উচ্চারণে অভ্যস্ত করা: (আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল ),  (আল্লাহ পবিত্র), (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য),  (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ), ( আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন ক্ষমতা নেই এবং কোন শক্তি নেই ), ইত্যাদি।
  • শিশুর মনে আল্লাহর ভালবাসার বীজ রোপন করা।
  • তার মনে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও তার ভয়ের অপরিহার্যতার বীজ বপন করা।
  • তার মনে মানুষের উপর আল্লাহর নজরদারী ও খবরদারীর বীজ রোপন করা।
  • তাকে ভাল কথা বলার অভ্যাসে অভ্যস্ত করা, যেমন: (তুমি সুন্দর করেছ), (ধন্যবাদ), (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)।
  • তাকে গুরুত্বপূর্ণ দো‘আসমূহ, ঘুম, খাওয়ার (পূর্বাপর) এবং বিভিন্ন স্থানে প্রবেশের যিকির তথা দো‘আসমূহ পাঠ অভ্যস্ত করা।
  • শিশুদেরকে (আল্লাহর) আশ্রয়ে দেয়া, যেমনটি করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হোসাইনের সাথে [23]; যেমন অভিভাবক বলবে: “আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের অসীলায় প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টিসম্পন্ন চোখ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে দিচ্ছি।”

যাতে শয়তান তাদেরকে শিকার করতে পারে না।

  • আরও বিশেষভাবে তিনি যা উল্লেখ্য, -যদিও তা পূর্বে উল্লেখিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে-: তা হল, তাকে শুরুতে ঘরের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার কিতাব (আল-কুরআনুল কারীম) মুখস্থ করাবে এবং তাকে তা শুনাবে। আর অনুরূপভাবে সুন্নাতে নববী তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস থেকে কিছু মুখস্থ করাবে, বিশেষ করে ছোট ছোট হাদিসসমূহ।
  • শিশুদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিচ্ছা-কাহিনীসমূহ থেকে কিছু আলোচনা করা; বিশেষ করে সীরাতে নববী তথা নবীর জীবনী থেকে ঐ পর্যায়ের বিষয়গুলো থেকে আলোচনা করা, যা সে বয়সের যে স্তরে জীবনযাপন করছে, তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কারণ, ঐ কাহিনীসমূহ তার মধ্যে বড় রকমের শিক্ষামূলক প্রভাব ফেলবে এবং তার মনে উন্নত ও শক্তিশালী চরিত্রের বীজ বপন করবে; আর সে প্রত্যাশা করবে, সে যেন ঐসব ব্যক্তিবর্গের মত হতে পারে, যাদের কাহিনী সে শ্রবণ করেছে।
  • শিশুর মধ্যে তার ছোটকাল থেকেই উন্নত মানের ইচ্ছা বা অভিপ্রায়ের ব্যাপারে আশা-আকাঙ্খা জাগিয়ে তোলা এইভাবে যে, সে মনে মনে পরিকল্পনা স্থির করবে যে, সে অমুকের মত আলেম (বিদ্বান) হবে, অথবা অমুকের মত ডাক্তার হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
  • শিশুর আগ্রহ ও ইচ্ছাসমূহ প্রকাশ করতে এবং তার আল্লাহ প্রদত্ত মেধাসমূহের বিকাশে উদ্যোগ গ্রহণ করা; সুতরাং উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: যখন দেখা যায় যে, সে পড়ার প্রতি আগ্রহী, তখন সে তাতেই তাকে নিয়োগ করে দেবে এবং তার জন্য সংশ্লিষ্ট বইপত্রের ব্যবস্থা করে দেবে; আর যখন সে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী হবে, তখন তাকে ঐ খেলাধুলার ব্যবস্থা করে দেবে, যা তার শক্তি ও মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখবে … অনুরূপভাবে আরও অন্যান্য বিষয়ও হতে পারে।
  • আর সাত বছর বয়সের সময় শিশুর সাথে আচার-আচরণের ক্ষেত্রে নতুন আরেক ধাপের সূচনা হয়; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কতগুলো মৌলিক সাইনপোস্ট (Signpost) ঠিক করে দিয়েছেন তাঁর বাণীর মাধ্যমে, তিনি বলেছেন: “তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা সালাতের নির্দেশ দাও, যখন তারা সাত বছর বয়সে উপনীত হয় এবং তার কারণে তাদেরকে প্রহার কর, যখন তারা দশ বছর বয়সে উপনীত হয়। আর তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও।” ( ইমাম আহমদ ও আবূ দাউদ র. হাদিসখানা বর্ণনা করেন) [24]

আর এই সাইনপোস্টগুলো হল:

  • শিশুকে সালাতের নির্দেশের দ্বারা শুরু করা, যা ইবাদতসমূহের মধ্যে প্রধান এবং তাকে এই দিকে মনোযোগী করা ও তার প্রতি উৎসাহিত করা। আর এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হবে সাওমের (রোযার) মত অপরাপর সকল ইবাদতও। আর তাকে এই কাজে অভ্যস্ত করে তোলা। আর সে উপলব্ধি করবে যে, তার সকল কার্যক্রমই ইবাদত, যার মাধ্যমে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করবে।
  • দশম বছরে উপনীত হওয়ার পর বার বার নির্দেশ লঙ্ঘন করলে মৃদু প্রহার করা।
  • ঘুমের সময় নারী-পুরুষদের পরস্পর থেকে দূরে রাখা।

[চলবে]

পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩ | পর্ব ৪ |পর্ব ৫ | পর্ব ৬


[1] আহমদ, মুসানাদ, অধ্যায়: মুসনাদুল ‘আশরাতিল মুবাশশিরীনা বিল জান্নাহ (مسند العشرة المبشرين بالجنة), পরিচ্ছেদ: আবদুর রহমান ইবন ‘আউফ রা. বর্ণিত হাদিস (حديث عبد الرحمن بن عوف الزهري رضي الله عنه), হাদিস নং- ১৬৬১

[2] শাইখ ডক্টর আবূ যায়েদ তার ‘হারাসাতুল ফদিলত’ (حراسة الفضيلة ) নামক অভিনব পুস্তকে আয়াতসমূহকে দলিল হিসেবে পেশ করার কারণসমূহ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

[3] তাফসীরু ইবনে কাছির, সূরা আন-নাহলের তাফসীর, আয়াত: ৮০

[4] বুখারী, কিতাবুল জুম‘আ (كتاب الجمعة ), পরিচ্ছেদ: গ্রাম ও শহরে জুম‘আ প্রসঙ্গে (باب الجمعة في القرى و المدن), বাব নং- ১০, হাদিস নং- ৮৫৩; মুসলিম, ইমারত (الإمارة) অধ্যায়, বাব নং- ৫, হাদিস নং- ৪৮২৮

[5] তিরমিযী, অধ্যায়: দুগ্ধপান ( كتاب الرضاع), পরিচ্ছেদ: স্বামীর উপর তার স্ত্রীর অধিকারের ব্যাপারে যা এসেছে (باب ما جاء في حق المرأة على زوجها), বাব নং- ১১, হাদিস নং- ১১৬৩; ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: বিবাহ ( كتاب النكاح),পরিচ্ছেদ: স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার ( باب حق المرأة على زوجها), বাব নং- ৩, হাদিস নং- ১৪৫১; ইমাম তিরমিযী র. বলেন: এই হাদিসটি হাসান, সহীহ।

[6] আহমদ, মুসানাদ, অধ্যায়: মুসনাদুল মুকছিরীন মিনাস্ সাহাবা (مسند المكثرين من الصحابة), পরিচ্ছেদ: মুসনাদে আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (مسند أنس ابن مالك رضي الله عنه), হাদিস নং- ১২৬৩৫

[7] তিরমিযী, অধ্যায়: দুগ্ধপান (كتاب الرضاع), পরিচ্ছেদ: স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকারের ব্যাপারে যা এসেছে (باب ما جاء في حق الزوج على المرأة), বাব নং- ১০, হাদিস নং- ১১৬১; ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: বিবাহ (كتاب النكاح),পরিচ্ছেদ: স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার (باب حق الزوج على المرأة), বাব নং- ৪, হাদিস নং- ১৪৫৪; ইমাম তিরমিযী র. বলেন: এই হাদিসটি হাসান, গরীব।

[8] আহমদ, মুসানাদ, অধ্যায়: মুসনাদুল ‘আশরাতিল মুবাশশিরীনা বিল জান্নাহ (مسند العشرة المبشرين بالجنة), পরিচ্ছেদ: আবদুর রহমান ইবন ‘আউফ রা. বর্ণিত হাদিস (حديث عبد الرحمن بن عوف الزهري رضي الله عنه), হাদিস নং- ১৬৬১

[9] নাসায়ী, বিবাহ অধ্যায় (كتاب النكاح), পরিচ্ছেদ: কোন নারী সবচেয়ে উত্তম? (أي النساء خير), বাব নং- ১৫, হাদিস নং- ৫৩৪৩

[10] তিরমিযী, অধ্যায়: দুগ্ধপান (كتاب الرضاع), পরিচ্ছেদ: … (باب …), বাব নং- ১৯, হাদিস নং- ১১৭৪; ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: বিবাহ (كتاب النكاح),পরিচ্ছেদ: যে স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তার প্রসঙ্গে (باب في المرأة تؤذي زوجه), বাব নং- ৬২, হাদিস নং- ২০১৪; ইমাম তিরমিযী র. বলেন: এই হাদিসটি হাসান, গরীব; আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

[11] বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ (كتاب النكاح), পরিচ্ছেদ: স্ত্রী কর্তৃক তার ঘরে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া প্রসঙ্গে (باب لا تأذن المرأة في بيتها لأحد إلا بإذنه.), বাব নং- ৮৬, হাদিস নং- ৪৮৯৯; মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত (الزكاة), পরিচ্ছেদ: গোলাম তার মনিবের মাল থেকে যা দান করবে, সে প্রসঙ্গে (باب مَا أَنْفَقَ الْعَبْدُ مِنْ مَالِ مَوْلاَهُ), বাব নং- ২৭, হাদিস নং- ২৪১৭

[12] তিরমিযী, অধ্যায়: দুগ্ধপান (كتاب الرضاع), পরিচ্ছেদ: স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকারের ব্যাপারে যা এসেছে (باب ما جاء في حق الزوج على المرأة), বাব নং- ১০, হাদিস নং- ১১৬১; ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: বিবাহ (كتاب النكاح),পরিচ্ছেদ: স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার (باب حق الزوج على المرأة), বাব নং- ৪, হাদিস নং- ১৪৫৪; ইমাম তিরমিযী র. বলেন: এই হাদিসটি হাসান, গরীব।

[13] বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ (كتاب النكاح), পরিচ্ছেদ: যদি কোন মহিলা তার স্বামীর বিছানা বাদ দিয়ে আলাদা বিছানায় রাত কাটায় (باب إذا باتت المرأة مهاجرة فراش زوجها), বাব নং- ৮৫, হাদিস নং- ৪৮৯৭; মুসলিম, অধ্যায়: বিবাহ (النكاح), পরিচ্ছেদ: স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বিছানায় যেতে বারণ করা হারাম (باب تَحْرِيمِ امْتِنَاعِهَا مِنْ فِرَاشِ زَوْجِهَا ), বাব নং- ২০, হাদিস নং- ৩৬১১

[14] মুসলিম, অধ্যায়: দুই ঈদের সালাত (صلاة العيدين), পরিচ্ছেদ: … (باب … ), বাব নং- ১, হাদিস নং- ২০৮৫

[15] বুখারী, অধ্যায়: ঈমান (كتاب الإيمان), পরিচ্ছেদ: স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা এবং এক কুফর অন্য কুফর থেকে ছোট (باب كفران العشير وكفر دون كفر), বাব নং- ১৯, হাদিস নং- ২৯; মুসলিম, অধ্যায়: কুসূফ (الكسوف), পরিচ্ছেদ: সালাতুল কুসূফের মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয় থেকে যা কিছু পেশ করা হয় (باب مَا عُرِضَ عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فِى صَلاَةِ الْكُسُوفِ مِنْ أَمْرِ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ), বাব নং- ৩, হাদিস নং- ২১৪৭

[16] বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ (كتاب النكاح), পরিচ্ছেদ: আত্মমর্যাদাবোধ (باب الغيرة), বাব নং- ১০৬, হাদিস নং- ৪৯২৬; মুসলিম, অধ্যায়: সালাম (السلام), পরিচ্ছেদ: অপরিচিত নারী পথ-শ্রান্ত হলে তাকে আরোহণে সঙ্গী করার বৈধতা (باب جَوَازِ إِرْدَافِ الْمَرْأَةِ الأَجْنَبِيَّةِ إِذَا أَعْيَتْ فِى الطَّرِيقِِ), বাব নং- ১৪, হাদিস নং- ৫৮২১

[17] বুখারী, অধ্যায়: দো‘আ (كتاب الدعوات), পরিচ্ছেদ: ঘুমানোর সময়ের তাসবীহ ও তাকবীর (باب التكبير والتسبيح عند المنام), বাব নং- ১১, হাদিস নং- ৫৯৫৯; মুসলিম, অধ্যায়: যিকির, দো‘আ ও তাওবা (الذكر والدعاء والتوبة), পরিচ্ছেদ: দিনের প্রথম ভাগে ও ঘুমানোর সময়ের তাসবীহ (باب التَّسْبِيحِ أَوَّلَ النَّهَارِ وَعِنْدَ النَّوْمِ), বাব নং- ১৯, হাদিস নং- ৭০৯০

[18] বুখারী, অধ্যায়: আচার-ব্যবহার (كتاب الأدب), পরিচ্ছেদ: মানুষের মধ্যে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার কে বেশি হকদার? (باب من أحق الناس بحسن الصحبة), বাব নং- ২, হাদিস নং- ৫৬২৬; মুসলিম, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও আচার-ব্যবহার (البروالصلة والآدب), পরিচ্ছেদ: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার এবং তারা উভয়ে এর সবচেয়ে বেশি হকদার (باب بِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَأَنَّهُمَا أَحَقُّ بِهِ), বাব নং- ১, হাদিস নং- ৬৬৬৪

[19] বুখারী, কিতাবুল জুম‘আ (كتاب الجمعة ), পরিচ্ছেদ: গ্রাম ও শহরে জুম‘আ প্রসঙ্গে (باب الجمعة في القرى و المدن), বাব নং- ১০, হাদিস নং- ৮৫৩; মুসলিম, ইমারত (الإمارة) অধ্যায়, বাব নং- ৫, হাদিস নং- ৪৮২৮

[20] তুহফাতুল মাওদুদ (تحفة المودود), পৃ. ৩৮৭

[21] তিরমিযী, অধ্যায়: বিবাহ (كتاب النكاح), পরিচ্ছেদ: যখন তোমাদের নিকট এমন ব্যক্তি আসে যার দীনদারীতে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তোমরা তার বিয়ের ব্যবস্থা কর (باب ما جاء إذا جاءكم من تضرون دينه فزوجوه), বাব নং- ৩, হাদিস নং- ১০৮৪; ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: বিবাহ (كتاب النكاح),পরিচ্ছেদ: সমতা (باب الأكفاء), বাব নং- ৪৬, হাদিস নং- ১৯৬৭

[22] তিরমিযী, অধ্যায়: কুরবানী (كتاب الأضاحي عن رسول الله صلى الله عليه و سلم), পরিচ্ছেদ: আকিকা (باب من العقيقة), বাব নং- ২৩, হাদিস নং- ১৫২২; আবূ দাউদ, অধ্যায়: কুরবানী (الضحايا), পরিচ্ছেদ: আকিকা প্রসঙ্গে (باب فِى الْعَقِيقَةِ), বাব নং- ২১, হাদিস নং- ২৮৩৯; নাসায়ী, অধ্যায়: আকিকা (كتاب العقيقة), পরিচ্ছেদ: কখন আকিকা করা হবে? (متى يعق), বাব নং- ৬, হাদিস নং- ৪৫৪৬; ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: জবেহ (كتاب الذبائح), পরিচ্ছেদ: আকিকা (باب العقيقة), বাব নং- ১, হাদিস নং- ৩১৬৫

[23] বুখারী, অধ্যায়: নবীগণ (كتاب الأنبياء), বাব নং- ১২, হাদিস নং- ৩১৯১, আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

«كان النبي صلى الله عليه و سلم يعوذ الحسن والحسين ويقول: إن أباكما كان يعوذ بها إسماعيل وإسحاق أعوذ بكلمات الله التامة من كل شيطان وهامة ومن كل عين لامة»

(নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হোসাইনের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, তিনি বলতেন: নিশ্চয়ই তোমাদের পিতা ইসমাঈল ও ইসহাক আ. তা দ্বারা প্রার্থনা করতেন: আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহ দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টিসম্পন্ন চোখ থেকে।

[24] আহমদ, মুসানাদ, অধ্যায়: মুসনাদুল মুকছিরীন মিনাস্ সাহাবা (مسند المكثرين من الصحابة), পরিচ্ছেদ: মুসনাদে আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা (مسند عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنهما), হাদিস নং- ৬৭৫৬;  আবূ দাউদ, অধ্যায়: সালাত (الصلاة), পরিচ্ছেদ: কখন সন্তানকে সালাতের নির্দেশ দেয়া হবে (باب مَتَى يُؤْمَرُ الْغُلاَمُ بِالصَّلاَةِ), বাব নং- ২৬, হাদিস নং- ৪৯৫

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন