কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ১০

7
3097

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

এই আর্টিকেল ইংলিশ ওয়েবসাইট SuhaibWeb থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।

ওযু

আমরা সবাই জানি, যথাযথ ভাবে ওযু করা নামাজের একটি পূর্বশর্ত। এ কারনে আমরা ওযুকে কেবল নামাজে দাঁড়ানোর আগের একটি প্রয়োজনীয় কাজ মনে করি। আমরা ভাবি, ঠিকভাবে ওযু না হলে নামাজে দাড়াতে পারব না, তাই আমরা এই নিয়তেই ওযু করি। কিন্তু ওযুর মহত্ত্ব এর চেয়ে অনেক বেশি। এটা দুঃখজনক যে আমরা ওযু থেকে কোনরকম উজ্জীবিত না হয়েই এতো বছর নামায পড়ে চলছি। ওযুর মধ্যেও কিছু গুপ্তধন আছে। কিন্তু এই গুপ্তধনের স্বাদ আস্বাদন করতে আগে আমাদের নিজেদেরকে একটু পরিবর্তন করতে হবে।

নিয়ত

আব্দুল্লাহ বিন মোবারক বলেছেন, “এমন কত কাজ আছে যা ছোট মনে করে করা হলেও তা হয় বেশি সম্মানিত; আবার এমন কত কাজ আছে যা অনেক বড় মনে করে করা হলেও তা হয়ে যায় সামান্য; নিয়তের কারনে।”

প্রথমে আমরা ওযুতে যে পরিবর্তন আনতে পারি তা হল এ থেকে প্রাপ্ত সওয়াবের পরিমান। কেউ কেউ বলতে পারে – ‘আমি তো ওযুর সমস্ত সুন্নাত পালন করি, পানির অপচয় করি না, শুরুতে শেষে দোয়া করি।’ তাহলে আর কিভাবে সওয়াব এর পরিমান বাড়ানো যাবে? লক্ষ্য করলে দেখবেন, ওযুতে আমরা যা যা করছি তা হল বাহ্যিক। যা বাকি রয়ে গেল তা হল – অন্তর। ইবনে আল কায়্যিম বলেছেন, যে বেক্তি অল্প আমল করল সে আল্লাহর নিকট বেশি আমলকারীর চেয়ে প্রিয় হতে পারে, যদি অল্প আমলকারীর অন্তর তার আমলে যুক্ত থাকে। এটা বোঝাতে তিনি একটি গল্প বর্ণনা করেন- এক লোক দেখল শয়তান মসজিদের দরজায় দাড়িয়ে আছে, ভেতরে ঢুকতে পারছে না। লোকটি ভেতরে তাকিয়ে দেখল, একজন লোক শুয়ে আছে আরেকজন দাড়িয়ে নামায পড়ছে। তখন সে শয়তান কে জিজ্ঞেস করল, যে লোকটি নামায পড়ছে তার কারনে কি তুমি মসজিদে ঢুকতে পারছনা? শয়তান উত্তর দিল- যে লোকটি শুয়ে আছে তার কারনে। কেন? তার মনের অবস্থার কারনে।

নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি যখন ওযু করছেন আপনার মনের উদ্দেশ্য বা নিয়ত টি কি? আমরা বেশির ভাগ বলব নিজেকে নামাজের জন্য প্রস্তুত করা। কিন্তু আমাদের অন্তর কে এখানে আরেকটু গভীরে প্রবেশ করাতে হবে এবং আরেকটি উদ্দেশ্য যোগ করতে হবে- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এটা অনেকটা কিছু দান করার মত। আপনি যখন বাড়ি ফেরার পথে ভিখারিকে কিছু টাকা দিলেন, আপনি হয়ত তা নিয়ে আর তেমন কোন চিন্তা ই করবেন না। কিন্তু যখন আপনি এই নিয়তে টাকাটা দিবেন, যে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একজন অভাবীকে সাহায্য করছেন, তখন আপনার মনে অন্যরকম এক অনুভূতি আসবে, আপনি আরও অনুপ্রাণিত বোধ করবেন। আপনি নিজেকে সৃষ্টিকর্তার আরও নিকটে বোধ করবেন, তা ৫ টাকা দিয়েই হোক অথবা ৫০ টাকা।

আরেকটি উদ্দেশ্য যোগ করুন, সেটি হল আমাদের প্রিয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সুন্নাহর অনুসরণ। আমাদের আরও নিখুঁতভাবে ওযু করার আগ্রহ জাগবে যখন আমরা চিন্তা করব আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কিভাবে ওযু করতেন। আমার মনে পড়ছে তখনকার কথা যখন আমি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুসরণের উদ্দেশ্যে ছোট একটি পাত্রে ওযুর পানি নেই, এটি আসলেই আমাকে আরও উদ্দিপ্ত করে এবং আমি বুঝতে পারি ওযু করতে আমাদের কতই না অল্প পানির প্রয়োজন হয়।

পরিশেষে আমরা আরেকটি মাত্রা যুক্ত করতে পারি যাতে ওযুর ব্যাপারে আমরা আন্তরিক হতে পারি এবং একে আল্লাহর কাছে পছন্দনীও করতে পারি। তা হল- আমাদের কিছু গুনাহ মুছে ফেলার নিয়ত। ওযু হল পবিত্রতা আনয়নকারী কারন এটি আমাদের ছোট গুনাহ গুলকে ধুয়ে ফেলে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন – ‘যে বেক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে তার শরীরের গুনাহগুলি ধুয়ে যাবে, এমনকি তার আঙ্গুলের নখের নীচ থেকেও।‘ [মুসলিম]

ওয়াসওয়াসা

অনেকে নিখুঁতভাবে তাদের ওযু এবং নামায করার সময় এক কঠিন সমস্যার মুখমুখি হয়- ওয়াসওয়াসা; যা একধরনের মনের ফিসফিসানি, এখানে এটি একধরনের সন্দেহবাতিক বোঝায়। উদাহরনস্বরূপ, এমন বেক্তি যে নিখুঁত করার জন্য সন্দেহবশতঃ একাধিকবার ওযু করে এবং ঠিক হল কি হল না এই সন্দেহে একাধিক বার নামায ও পড়তে চায়।

আপনার যদি এই সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তার সমাধান ও আছে ইনশাল্লাহ। অনেকে এটি প্রয়োগ করেছেন এবং বলেছেন তারা আল্লাহর রহমতে আরোগ্য লাভ করেছেন। আলেমরা বলেন, যারা এরকম তীব্র সন্দেহে ভগেন তারা যেন তাদের কাজগুলোর ব্যাপারে উত্তমটাই ধরে নেয়। যেমন কারো যদি সন্দেহ হয় আমার ওযু আছে কি নেই, তবে যেন তারা ধরে নেয় তাদের ওযু আছে। যদি কারো মনে হয় আমি কি তিন রাকাত পরলাম না চার রাকাত, সে যেন চার রাকাত ধরে নেয়। কেউ কেউ এতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। আসুন তাহলে এ ব্যাপারে মনে জাগা কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই। প্রথমত, আমরা কেন বারবার ওযু করব? আমাদের ভয় আমরা ঠিক মত ওযু করিনি বা আমাদের ওযু নেই এবং আল্লাহ হয়ত তা কবুল করবেন না। যেহেতু আপনি এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করছেন, জেনে রাখুন- আল্লাহ চান না আপনি বারংবার ওযু করবেন। কিভাবে বুঝবেন? মহানবী (সাঃ) বলেনঃ “কেউ যদি পেটের অস্বস্তিতে ভোগে এবং নিশ্চিত হতে না পারে যে সে বায়ু ত্যাগ করেছে কিনা, সে যেন মসজিদ ত্যাগ না করে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে শব্দ বা গন্ধ পায়।” [মুসলিম]

এভাবে সে যেন ১০০% নিশ্চিত হয়।ওযুর পরের কিছু দোয়াকিছু দোয়া আছে যা ওযুর করে পড়া উচিত। আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুল্লাহি ওয়া রাসুলুহ” (আমি সাক্ষ্য দিছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল।) তাহলে তাঁর জন্য বেহেস্তের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোন দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।[মুসলিম]

আবার, “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা লা ইলাহা ইল্লা আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক” এটি তাঁর জন্য শ্রেষ্ঠতম কাগজে লিপিবদ্ধ করে সীলমোহর দিয়ে বন্ধ করে রাখা হবে, যা কেয়ামত দিবসের আগে খোলা হবে না। (সহিহ আল জামিই)

আল্লাহ আমাদের হৃদয় দিয়ে ওযু করার তৌফিক দিন।

আমীন!!

আগের পর্ব গুলো এই লিংক থেকে  পড়ুনঃ

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

7 COMMENTS

  1. Salat is the most important spiritual component & one of the central criteria of Islam. So if any one offer salat properly, become a good candidate for mercy & hidaah from ALLAH. 

  2. sir  ami  ak  jon  muslim…
    amar  shomossha    hocha   ami  jokon  salat    jamata  aday  kori    tokhon 
    salata  khushu    khuja  pai na….  karon  khub  druto  salat   aday  kora .
     ami  ki  korta pari?

আপনার মন্তব্য লিখুন