কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ১৫

2
3397

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

আল্লাহ্‌র নামে

আমরা এখন নামাজে একটি সুন্দর জায়গায় এসে পৌঁছেছি, আমরা সবচেয়ে সুন্দর নামটি উচ্চারণ করি – বিসমিল্লাহ। এই রাজসিক নামের উচ্চারণ আমাদের অন্তরে শান্তি আনে, সমস্ত জায়গা ও সব সময় নিরাপত্তার অনুভূতি দেয় – এই নামের স্মরণ ছাড়া আত্মা কি শান্তি পায়? কোন মুসলিমের অন্তরে অবস্থিত তাঁর এই নামটিই সবচেয়ে অসাধারণ বিস্ময়কর ব্যাপার, কারন এমন কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিস নেই যা এই নামের বরকতে বৃদ্ধি না পায়, আবার এমন কোন বড় জিনিষ নেই যা এই নামের বরকতে অনুগ্রহ না পায়। এই নামটি এতই চমকপ্রদ, এটি যেকোনো জায়গার, যে কোন সময়ের ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা দেয়। মহানবী (সাঃ) বলেছেন: “কেউ যখন কোন স্থানে বিশ্রামের জন্য অবতরণ করে সে যেন বলে,  আউযু বিকালিমা তিল্লা হিততা-ম্মা-তি মিন শাররি মা খালাক (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি, তাঁর সৃষ্ট বস্তুর সমুদয় অনিষ্ট হতে), কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আবার তার বাহনে আরোহণ করে।” [মুয়াত্তা ৫৪/১৩৩৪]

এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা আপনাকে হেফাজত করবেন, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, ইনশাল্লাহ। আর সকল সময়ের নিরাপত্তার জন্য মহানবী (সাঃ) বলেছেন: “বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়া দুররু মা’আসমিহি শাইআন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়াহুয়াস সামিউল আলীম’ (আমি সেই আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে শুরু করলে আকাশ ও পৃথিবীর কোন বস্তুই কোনরূপ অনিষ্ট সাধন করতে পারে না। বস্তুত তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা)যে এই দোয়া সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিন বার বলবে, কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।” [আবু দাউদ ৪১/৫০৬৯]

ইবনে আল কাইয়িম বলেন, শুধুমাত্র নামের মহত্ত্বই যদি এমন হয়, তবে সেই নামধারীর মহত্ত্ব কেমন হওয়ার কথা! আপনি যখন কাউকে ভালবাসেন, তখন আপনি তার নামও বার বার নিতে ভালবাসেন। কায়েস আর লায়লার বিখ্যাত কাহিনী লায়লা মজনুর কাহিনী নামে আমরা সবাই জানি। কায়েসের বাবা তাকে হজ্জ এ নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন যাতে তার ছেলের এই ‘ভালবাসার রোগ’ সেরে যায়। হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে করতে কায়েসের অবস্থার উন্নতি হয়ে আসছিল। কিন্তু শেষদিকের এক দিনে তারা যখন মিনায় ছিল, এক লোক তার এক মহিলা সঙ্গীকে হারিয়ে ফেলার পর জোরে জোরে তার নাম ধরে ডাকতে লাগলো – লায়লা! লায়লা! যতবার সেই লোক নামটি ধরে ডাকতে লাগলো, সেই নামটি শুনেই কায়েসের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হতে লাগলো, তার ‘ভালবাসার রোগ’ আরও তীব্র হয়ে ফিরে এলো। আমাদের সবারই যদি এমন ভালবাসা আমাদের সৃষ্টিকর্তার জন্য থাকতো!

কুরআনের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন বাহিনীর সাথে প্রত্যক্ষ মুকাবিলায় অবতীর্ণ হবে তখন দৃঢ় ও স্থির থাকবে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমানে স্মরন করবে, আশা করা যায় তোমরাই সাফল্য লাভ করবে।” [সুরা আনফালঃ৪৫]

ইবনে তাইমিয়্যাহ এই প্রসঙ্গে বলেন, মুমিন বান্দারা এমন যুদ্ধরত অবস্থাতেও আল্লাহর নাম নিতে, তাঁকে স্মরন করতে ভালবাসে। আনতারা নামক একজন ইসলাম পূর্বের যোদ্ধা ও কবি তার এক কবিতায় বর্ণনা করেছিল কিভাবে সে তীরবিদ্ধ হয়েও তার প্রেমিকা আবলা কে মনে করছিল। যুদ্ধের ময়দানেও যেমন করে এরা তাদের ভালবাসার জনকে স্মরন করে, আল্লাহও আমাদেরকে সংগ্রামের সময় বেশি করে তাঁকে স্মরন করতে বলেছেন।

ইবনে আল কাইয়্যিম ভালবাসার জনকে নিয়ে নির্জনতার আনন্দের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ইবনে তায়মিয়্যা তার শহর ছেড়ে মরুভূমিতে চলে যেতেন যাতে তিনি আল্লাহর সাথে নির্জনতা উপভোগ করতে পারেন। আগের সেই কবিরা যেমন তাদের ভালবাসার মানুষের স্মরনে শান্তি পেত, আমাদের উচিত আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার স্মরনে তার চেয়েও অনেক বেশি প্রশান্তি অনুভব করা। আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কি কেউ আছে? তিনি ছাড়া আর কে আছে যে আমাদের প্রার্থনার জবাব দেন? তাঁর চেয়ে বেশি কে আর আছে আমাদের প্রতি এত দয়ালু?

কাজেই, যখন নামাজে আমরা বলি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”, এটি আল্লাহর সাথে আমাদের কথোপকথনের শুরু হওয়া নির্দেশ করে। আপনি যখন কুরআনের প্রথম সুরা ‘সুরা ফাতিহা’ তেলাওয়াত করা শুরু করেন, আল্লাহ তায়ালা তখন আপনার তেলাওাতের সাথে সাথে জবাব দেন। ইবনে জারীর বলেন, তিনি এটা ভেবে আশ্চর্য হন যারা কোন কিছু না বুঝেই কুরআন পড়ে যায় তারা কি করে এর মাধুর্য আস্বাদন করবে? আমাদের জানা মতে সুরা ফাতিহাই হচ্ছে একমাত্র সুরা যার তেলাওয়াতের সাথে সাথে আল্লাহ জবাব দেন। এর আর কি কি রহস্য আছে?

আল ফাতিহা

বিসমিল্লাহ বলার পর প্রথমেই আমরা যে আয়াত পড়ি তা হলঃ “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতসমূহের রব।” [সুরা ফাতিহাঃ১]

আল-হামদ হল একই সাথে আল্লাহর প্রশংসা আর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা। আর হামদ হল ভালবাসা আর সম্মান এর উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি অনেক গভীর একটি শব্দ, যার আরও বিস্তারিত আলোচনা আমরা আগামী পর্বগুলোতে করব ইনশাআল্লাহ। এর গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (সাঃ) বলেছেন: “আলহামদুলিল্লাহ’ ওজন দণ্ডের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দেবে।” [সহিহ মুসলিম ২য় খণ্ড, হাদিস ৪৪১]

আমরা যা কিছু অনুগ্রহ আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছি তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলব; এটাও মনে রাখব যে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারাটাও আল্লাহ্‌রই আরেক অনুগ্রহ, কারণ এমন বহু মানুষ আছে যারা আল্লাহর এত অনুগ্রহ অনুধাবনও করতে না পেরে তা অস্বীকার করএই কথাটি দ্বারা বোঝায় – ‘সৃষ্টি জগতসমূহের রব’। রব তিনিই যার সমস্ত কিছুর উপর কর্তৃত্ব আছে, যিনি সমস্ত কিছুর পালনকর্তা, সমস্ত মানুষের এবং সমস্ত জিনিসের মালিক। “জগতসমূহ” বলতে বোঝায় সমস্ত সৃষ্টিকুল যার মধ্যে রয়েছে মানুষ, জ্বিন, ফেরেশতা, পশুপাখি ও আন্যান্য সবকিছু; যার প্রতিটিকে একেকটি জগত বলা যেতে পারে, যেমন ‘ফেরেশতাদের জগত’, ‘পশুজগত’, ‘মানব জগত’ বা ‘জ্বিন জগত’। এটা ছোট বড় সব ধরনের সৃষ্টির ব্যাপারেই বলা যায়; যেমন ব্যাকটেরিয়া বা কোষের ও নিজস্ব জগত আছে। বেশির ভাগ সময়ই আমরা আল্লাহর সৃষ্টির এই বিশালতা ও ব্যপকতা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হই, এবং আল্লাহর সৃষ্টির উপর তাঁর ক্ষমতার ব্যপারে অজ্ঞ থেকে যাই।

যে কোন একটি জগতের জটিলতা কিছুটা আন্দাজ করার জন্য আমরা শ্বেতকনিকার উদাহরন নিতে পারি। মাত্র একফোঁটা রক্তের মধ্যে প্রায় সাত হাজার থেকে পঁচিশ হাজার শ্বেতকনিকা থাকতে পারে। এখন একটি কথাই বলার থাকে: যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতসমূহের রব।

 ইনশাল্লাহ, পরবর্তী পর্বে আমরা সুরা ফাতিহার অর্থ আরও গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

আগের পর্ব গুলো এই লিংক থেকে  পড়ুনঃ

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

2 COMMENTS

আপনার মন্তব্য লিখুন