পর্ব ১।পর্ব ২।পর্ব ৩।পর্ব ৪।পর্ব ৫।পর্ব ৬।পর্ব ৭।পর্ব ৮।পর্ব ৯।পর্ব ১০।পর্ব ১১।পর্ব ১২।পর্ব ১৩।পর্ব ১৪।পর্ব ১৫।পর্ব ১৬।পর্ব ১৭।পর্ব ১৮।পর্ব ১৯।পর্ব ২০।পর্ব ২১।পর্ব ২২।পর্ব ২৩।পর্ব ২৪।পর্ব ২৫।পর্ব ২৬।পর্ব ২৭।পর্ব ২৮
রুকুঃ বাহ্যিক আমল
নিজেদেরকে নামাজের জন্য প্রস্তুত করার মানে হল এটা উপলব্ধি করা যে আমরা কার সামনে দাড়াতে যাচ্ছি- আল্লাহ সুবহানা ওয়াতা’আলার সামনে, আমাদের রবের সামনে, সমস্ত দয়ালুর চেয়েও মহান সেই দয়ালু ও পরম করুনাময়ের সামনে। আমরা বাহ্যিকভাবে নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন করি কারণ আমরা পবিত্রতম সত্তা আল্লাহর সামনে দাঁড়াচ্ছি; আর আমাদের অন্তরকে বিনীত করি কারণ আমরা তাঁর সামনে দাঁড়াচ্ছি যিনি সর্বোচ্চ মহান। আমাদের মন ভয় আর আশার মাঝে অবস্থান করে, কিন্তু পুরো মন জুড়ে থাকে তাঁর প্রতি ভালোবাসা। যখন আমরা সূরা ফাতিহা পড়ি, আমরা প্রতিটি আয়াত একটু থেমে থেমে পড়ি কারণ আল্লাহ স্বয়ং আয়াতগুলোর জবাব দিচ্ছেন এবং আমরাও যেন সেই আয়াত নিয়ে চিন্তা করতে পারি। আর যখন এরপর অন্য একটি ছোট সূরা পড়ি, আমরা বুঝতে পারি এই কালামগুলো আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেছেন।
যখন আমরা সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পাঠ করে শেষ করব; তারপর আমাদের দুইহাত উঠিয়ে বলব “আল্লাহু আকবর”।আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি রুকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন এবং ‘সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন। তবে সিজদার সময় এরূপ করতেন না।” [সহীহ বুখারীঃ ৭০০ ইফা]
মনে রাখবেন, নামাজের মধ্যে প্রায় প্রতিটি ভঙ্গি পরিবর্তনের সময় আমরা ‘আল্লাহু আকবার’ বলি (রুকু থেকে উঠার সময় ছাড়া)। এতে আমরা নিজেদেরকে সজাগ করি এবং এটা স্মরণ করাই যে আমাদের মনের ভেতরের দুনিয়াবি সমস্ত কিছুর চেয়ে আল্লাহ মহান। তারপর রুকুতে আমরা আমাদের মাথা ঝুকাই। আর যখন আমরা মাথা নোয়াবো, তখন তা আমরা আমাদের নবী (সাঃ) অনুকরণে করব। রুকুর সময় হাত দুটিকে হাঁটুর উপর দৃঢ়ভাবে রাখব এবং আঙ্গুলগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে রাখব [সুনানে আবু দাউদঃ ৮৬৮ ইফা]
আমরা অনেকেই রুকু এবং সিজদায় যেয়ে তাড়াহুড়া করি, অথচ এই রোকনগুলোতে যথাযথ সময় পর্যন্ত আমাদের অবস্থান করা খুবই জরুরী।‘বারা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “সালাতে দাঁড়ানো ও বসা অবস্থা ছাড়া নবী (সাঃ) এর রুকু, সিজদা, দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময় এবং রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানো, এগুলো প্রায় সমপরিমান ছিল।” [সহীহ বুখারী ৭৫৬ ইফা]
হাফস ইবনে উমর (রাঃ) যায়িদ ইবনে ওয়াহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “হুযাইফা (রাঃ) এক ব্যাক্তিকে দেখলেন যে, সে রুকু ও সিজদা ঠিকমতো আদায় করছে না। তিনি তাকে বললেন, তোমার সালাত হয়নি। যদি তুমি (এই অবস্থায়) মারা যাও, তা হলে আল্লাহ কর্তৃক মুহাম্মাদ (সাঃ) কে প্রদত্ত আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় তুমি মারা যাবে।” [সহীহ বুখারীঃ ৭৫৫ ইফা]
রুকুর দোয়া
আমরা আগের পর্বগুলোতে উল্লেখ করেছিলাম যে নামাজের শুরুতে বিভিন্ন দোয়া বা সানা আছে (পর্ব ১৩)। ঠিক তেমনি রুকুরও বিভিন্ন দোয়া আছে। আমরা চেষ্টা করব সেই দোয়া গুলো মুখস্থ করে নিতে এবং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একেক সময় একেক দোয়া পড়তে; যাতে দোয়া গুলো আমাদের সচেতন প্রার্থনা হয়, শুধুমাত্র মুখস্থ বুলি না হয়।
১) আমরা তিনবার বলবঃ সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম। অর্থ: “আমার মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।” [সহীহ আত-তিরমিযী ১/৮৩]
যখন আমরা বলি ‘সুবহানাল্লাহ’ বা ‘সুবহানা রব্বিই’, আমরা আল্লাহ যে সমস্ত রকম অপূর্ণতা বা অপবিত্রতা থেকে মুক্ত তা ঘোষণা করছি। আর ‘রব্বিই’ বলতে ‘আমার রব’ বোঝায়, যা দিয়ে আমাদের সাথে আল্লাহর অতি নিকট-সম্পর্ক ও ভালোবাসা অনুভব করি।
২) সুব্বুহুন, ক্কুদ্দুসুন, রব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররুহ। অর্থ: “ফেরেশতাবৃন্দ এবং রুহুল কুদস (জিব্রাঈল আঃ) এর রব প্রতিপালক স্বীয় সত্তায় পূত এবং গুণাবলীতেও পবিত্র।” [মুসলিম ১/৩৫৩, আবু দাউদ ১/২৩০]
৩) সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী। অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাদের রব। তোমার পূত পবিত্রতা ঘোষণা করি, তোমার প্রশংসা সহ। হে আল্লাহ আমাকে তুমি মাফ করে দাও।” [বুখারী ১/৯৯, মুসলিম ১/৩৫০]
৪) আল্লাহুম্মা লাকা রাকা’তু ওয়াবিকা ‘আ-মানতু ওয়ালাকা আসলামতু খশা’আ লাকা সাম’ঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখখী ওয়া ‘আযামী ওয়া ‘আসাবী ওয়া মাতাক্কল্লাবিহী ক্কদামী। অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রুকু (মাথা অবনত) করেছি, একমাত্র তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, আমার কান, আমার চোখ, আমার মস্তিস্ক, আমার হাড়, আমার স্নায়ু, আমার সমগ্র সত্তা তোমার ভয়ে শ্রদ্ধায় বিনয়াবনত।” [মুসলিম ১/৫৩৪]
৫)সুবহানা যীল জাবারু-তি ওয়াল মালাকু-তি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল ‘আযামাতি। অর্থ: “পাক পবিত্র সেই মহান আল্লাহ যিনি বিপুল শক্তির অধিকারী, বিশাল সাম্রাজ্য, বিরাট গৌরব, গরিমা এবং অতুল্য মহত্বের অধিকারী।” [আবু দাউদ ১/২৩০]
পরের পর্বে রুকুর আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
অন্যান্য পর্ব গুলো এই লিংক থেকে পড়ুন:-
পর্ব ১।পর্ব ২।পর্ব ৩।পর্ব ৪।পর্ব ৫।পর্ব ৬।পর্ব ৭।পর্ব ৮।পর্ব ৯।পর্ব ১০।পর্ব ১১।পর্ব ১২।পর্ব ১৩।পর্ব ১৪।পর্ব ১৫।পর্ব ১৬।পর্ব ১৭।পর্ব ১৮।পর্ব ১৯।পর্ব ২০।পর্ব ২১।পর্ব ২২।পর্ব ২৩।পর্ব ২৪।পর্ব ২৫।পর্ব ২৬।পর্ব ২৭।পর্ব ২৮
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]