মূলঃ মেরিনার
[মূল লেখা: Jamaal al-Din M. Zarabozo-র]
…………..পূর্বে প্রকাশিত লেখার ধারাবাহিকতায়:
যারা কুর’আন জানতেন এবং কুর’আনকে জীবনে ধারণ করেছিলেন, কুর’আন সম্বন্ধে তাঁদের বক্তব্য
কুর’আন সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে, এরপর তাঁদের কাছে যাওয়া উচিত যাঁরা কুর’আনকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং এর পথনির্দেশক আলোর মাঝে জীবন যাপন করেছিলেন। এই শ্রেণীর শীর্ষে থাকবেন রাসূল(সা.)-এঁর সাহাবীগণ – যাঁরা তাদের কুর’আন শিক্ষার সিংহভাগ সরাসরি রাসূল (সা.)-এঁর কাছ থেকে লাভ করেছিলেন। পবিত্র কুর’আন বলতে আসলে কি বোঝায়, তার সবচেয়ে সুন্দর ও যথার্থ বর্ণনার একটি এসেছে চতুর্থ খলীফা হযরত আলী বিন আবু তালিবের (রা.) কাছ থেকে। আলী (রা.) একদা বলেছিলেন :
“আল্লাহর কিতাবের সাথে লেগে থাকো, যা পূর্ববর্তীদের ও ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদের কথা বলে এবং স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ভাষায় ঐ সমস্ত বিষয় সম্বন্ধে সত্য কথা বলে, যা নিয়ে তোমরা ভিন্নমত পোষণ কর। যে কেউ অহমিকাবশত এর অবহেলা করলো, আল্লাহ্ তাকে লাঞ্ছিত করবেন। আর যে কেউ অন্যত্র দিক নির্দেশনা খুঁজে বেড়ালো, আল্লাহ্ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এটা হচ্ছে আল্লাহর সাথের যোগসূত্র, একমাত্র জ্ঞানগর্ভ বাণী এবং একমাত্র সঠিক পথ – যা কখনোই দুষ্ট চিত্ত দ্বারা বিকৃত হবে না অথবা দুষ্ট জিহ্বা দ্বারা পরিবর্তিত হবে না। এর রহস্য কখনোই অনাবৃত হবে না অথবা জ্ঞানীগুণীগণ এ থেকে জ্ঞানলাভ করে পরিতৃপ্ত হবে না। যে কেউ এর অনুযায়ী কথা বলে, সে সত্য কথা বললো ; যে কেউ এর অনুযায়ী কাজ করলো, সে পুরস্কৃত হবে ; যে এর দ্বারা শাসন করে, সে সুবিচার করলো ; এবং যে এর দিকে অন্যকে আহবান করে, সে সরল পথ দেখালো।” [আলবানীর মতে বক্তব্যটি আলী বিন আবু তালিবের (রাঃ)]
রাসূল (সা.)-এঁর সাহাবী এবং কুর’আন বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) একদা বলেন, “কুর’আন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা ছাড়া কাউকে তার নিজের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা উচিত নয়। কেউ যদি কুর’আনকে ভালবাসে, তবে সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে।” অপর সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, “কেউ যখন কুর’আন পড়ে, তখন ব্যাপারটা অনেকটা একরম যেন তার উপর নবুওয়্যত নাযিল হচ্ছে, কেবল এটুকু ছাড়া যে তার কাছে কোন ওহী আসছে না। আর কেউ যখন কুর’আন পড়ে এবং বিশ্বাস করে যে তার কাছে যা রয়েছে তার চেয়ে ভাল কিছু অন্যের কাছে রয়েছে, তখন সে এমন কিছুকে মাহাত্ম্য দান করলো যেটাকে আল্লাহ্ ক্ষুদ্রতা দান করেছেন এবং এমন কিছুকে সে তুচ্ছ জ্ঞান করলো যাকে আল্লাহ্ মর্যাদা দিয়েছেন।”(আবু ইসহাক আল হুয়াইনি)
সহীহ বুখারী এবং মুসলিমে যেমন বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবী, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন যেন তিনি লোকজনকে আল্লাহর কিতাব শিক্ষা দিতে পারেন। সেই ইবনে আব্বাস (রা.) পবিত্র কুর’আন সম্বন্ধে বলেছেন:
“ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত এবং তিনি যে তোমাদের কুর’আনের জনগোষ্ঠী বানিয়েছেন, তা হচ্ছে তোমাদের প্রতি তাঁর করুণা।”
বাস্তবিকই, আর-রাহমান নামক সূরা, যেখানে আল্লাহ্ মানুষকে দান করা তাঁর বহু নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন, সেই সূরার শুরুতে আল্লাহ্ বলেছেন :
“পরম দয়ালু আল্লাহ্(হে মানব তোমাদের) কুর’আন শিক্ষা দিয়েছেন (করুণাবশত)। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রাহমান, ৫৫:১-৩)
এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ্ তাঁর দয়ার বশবর্তী হয়ে করা কাজ হিসেবে মানবতার সৃষ্টির আগে, মানুষকে কুর’আনের শিক্ষা দেওয়ার কাজকে স্থান দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কোন কোন জ্ঞানীজনেরা বলে থাকেন যে, উপরোক্ত আয়াতে এই ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহর কুর’আন শিক্ষাদানের কাজ, তাঁর মানবকুল সৃষ্টির কাজের চেয়ে অধিকতর বড় দয়ার নিদর্শন। এই তাফসীর বা ব্যাখ্যা, উপরে উদ্ধৃত কুর’আন সম্বন্ধে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) উক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
উসমান ইবনে আফফান (রা.) এবং হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) দুজনেই বলে গেছেন :
“হৃদয় যখন পবিত্র হয়, তখন তা কুর’আন পড়তে গিয়ে তৃপ্তি লাভ করে ক্ষান্ত হতে পারে না।(অর্থাৎ সে আরো বেশী বেশী করে কুর’আন পড়তে চাইবে)” সুফিয়ান আস-সাওরী(রহ.), যিনি রাসূলের (সা.) সাহাবীদের শিষ্য ছিলেন – তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তিনি জিহাদ অথবা কুর’আন পড়া – কোনটিকে অগ্রাধিকার দেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, তিনি কুর’আন পড়াকে অগ্রাধিকার দেন এবং তিনি তাঁর পছন্দের দলিল হিসেবে নিম্নলিখিত হাদীসটির উল্লেখ করেন যা আমরা আগেও উদ্ধৃত করেছি :
“তোমাদের ভিতর সেই শ্রেষ্ঠ যে কুর’আন শিক্ষা করে ও অন্যদের তা শিক্ষা দেয়।”(বুখারী)
এ ব্যাপারে সাইয়্যিদ সাঈদ আবদুল গণি, সুফিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গী সমর্থন করে বলেন :
“সুফিয়ান আস-সাওরী যে জিহাদের উপর কুর’আনের তিলাওয়াতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কেননা এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারে, জিহাদে অংশগ্রহণ করার মত প্রয়োজনীয় গুণাবলী মুসলিম উম্মার অনেকের মাঝেই বিদ্যমান। কিন্তু যারা চমৎকার কুর’আন তিলাওয়াত করেন, যারা কুর’আনিক আইনের জ্ঞান রাখেন এবং যারা অন্য মুসলিমদের কুর’আন শিক্ষা দিতে পারেন – এমন ব্যক্তির সংখ্যা কম। সুতরাং তারা পিছনে থেকে মুসলিমদের আল্লাহর কিতাবের শিক্ষা দেবেন – এই ব্যাপারটা তাদের জিহাদে অংশগ্রহণের চেয়ে নিঃসন্দেহে শ্রেয়। বিশেষত যে ক্ষেত্রে জিহাদে যাওয়াটা সম্প্রদায়ভিত্তিক দায়িত্ব (ফরযে কিফায়া) এবং অন্যেরা সে দায়িত্ব পালন করছেন – সে ক্ষেত্রে কুর’আন শেখা ও অন্য মুসলিমকে তা শিক্ষা দেওয়ার কাজটাই এক ধরনের জিহাদ।”
(চলবে…..ইনশা’আল্লাহ্!)
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
আলহামদুলিল্লাহ।