অনুবাদক: শাইখ আখতারুল আমান।
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। শেষ ফলাফল মুত্তাকীদের জন্য নির্ধারিত এবং একমাত্র যালিমদের ক্ষেত্রেই শত্রুতা। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক নবী ও রাসূলদের সর্ব শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব তথা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর।
(ক) মদপান কারীর ইবাদত:
প্রশ্ন: যে ব্যক্তি সদাসর্বদা মদ্যপান করে, যেনা করে এবং নামায এবং ইসলামের অন্যান্য রুকন সমূহও আদায় করে। কিন্ত সে তার উক্ত অপকর্ম থেকে বিরত হয়না। এর ইবাদত কি ছহীহ হবে?
উত্তর: যে ব্যক্তি হালাল মনে করে মদ্যপান করে বা যেনা ব্যভিচার কিংবা যে কোন পাপ সম্পাদন করে তবে সে কাফির বলে গণ্য। আর কুফরীর সাথে কোন আমলই বিশুদ্ধ হবেনা। তবে যদি কেউ পাপের কাজ সম্পাদন করে ওটাকে হারাম জ্ঞান করার পরেও প্রবৃত্তির তাড়নায় এবং এ আশা করে যে আল্লাহ তাকে তা থেকে রক্ষা করবেন। তবে এই ব্যক্তিটি তার ঈমানের কারণে মুমিন এবং পাপের কারণে ফাসেক।
প্রত্যেক পাপী বান্দার উপর ওয়াজিব হল আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা, তার কাছে প্রত্যাবর্তন করা। গুনাহের স্বীকারোক্তি দেয়া, উক্ত পাপ পূণরায় না করার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা এবং কৃতপাপের উপর লজ্জিত হওয়া। আল্লাহর দ্বীন নিয়ে সে খেলা করবেনা, এবং আল্লাহ তার পাপ গোপন করে রেখেছেন এবং ঢিল দিয়ে রেখেছেন একারণ সে ধোকাগ্রস্থ হবেনা। কারণ মহান আল্লাহ শুধুমাত্র একটি পাপের কারণে ইবলীসকে তার রহমত থেকে বের করেছেন এবং চিরতরের জন্য বিতাড়িত করেছেন। আল্লাহ তাকে আদমকে সিজদা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্ত সে তা থেকে বিরত থেকে ছিল। আদম (আঃ)কে আল্লাহ জান্নাত থেকে দুনিয়ায় অবতীর্ণ করেছিলেন মাত্র একটি অপরাধের কারণে (তাহলঃ নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়া)। কিন্ত আদম (আঃ) তাওবাহ করেছিলেন এবং আল্লাহও তার তাওবাহ গ্রহণ করেছিলেন ও তাকে সঠিক পথে পরিচালনা করেছেন। অতএব, কোন বান্দাহর জন্য তার প্রতিপালকের সাথে প্রতারনার পন্থাবলম্বন করা উচিত নয়; বরং তার উপর ওয়াজিব হলঃ আল্লাহকে ভয় করা তাঁর আদেশ বাস্তবায়ন করা এবং নিষেধ থেকে বিরত থাকা।- ফাৎওয়া দানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭৮)
(খ) মদ্যপান কারীকে ধরিয়ে দেয়ার বিধানঃ
প্রশ্ন: মদ্যপান প্রভৃতি হারাম কাজে লিপ্ত এমন ব্যক্তি সম্পর্কে কি প্রশাসন বিভাগকে খবর করা যায়? অথচ তাকে আমি কয়েকবার সতর্কও করেছি। নাকি ইহা করা তাকে বেইয্যত করার নামান্তর? অথচ হক বলা থেকে নিরবতা অবলম্বনকারী বোবা শয়তানের ন্যায়।
উত্তর: প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য অপর মুসলিম ভাইয়ের ক্ষেত্রে ওয়াজিব হল- যদি সে তার ভাইকে কোন হারাম কাজে লিপ্ত দেখে তাহলে তাকে উপদেশ দিবে এবং তাকে পাপ থেকে নিষেধ করবে। তাকে সে পাপের শাস্তির কথা বর্ণনা করে শুনাবে। অন্তর- আত্মায়, অঙ্গ-প্রতঙ্গে, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে, এর কুপ্রভাবের কথা ব্যাখ্যা করবে। হয়তোবা সে বেশী বেশী উপদেশ দেয়ার ফলে পাপ থেকে বিরত হতে পারে এবং সঠিক পথ অবলম্বন করতে পারে। যদি তার সাথে এ পদক্ষেপ ফলপ্রসু না হয়। তবে তাকে পাপ থেকে বিরত রাখার জন্য সব থেকে নিকটতম পথ অবলম্বন করতে হবে। চাই তা দায়িত্বশীল বিভাগকে জানিয়ে দেয়া হোক বা এমন ব্যক্তিকে জানিয়ে হোক যার মর্যাদা তার নিকট উক্ত উপদেশ দাতার চেয়েও তার নিকট বেশী। মোটকথাঃ সব চেয়ে নিকটবর্তী পন্থা অবলম্বন করবে যা দ্বারা উদ্দেশ্য সফল হয়। যদিও সে কারণ প্রশাসন বিভাগ পযর্ন্ত তার বিরুদ্ধে নালিশ করতে হয়- যাতে করে তারা তাকে উক্ত পাপ থেকে বিরত রাখতে পারে।- ফাৎওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭৭)
(গ) বিয়ার পান করার বিধানঃ
প্রশ্ন: বিয়ার পানের বিধান কি? তার অনুরুপ পানীয় পান করার বিধান কি?
উত্তর: যদি বিয়ার নেশা মুক্ত হয় তবে তা পানে কোন অসুবিধা নেই। কিন্ত যদি তা কোন প্রকার নেশা যুক্ত হয় বা তার সাথে এমন বিষয় যুক্ত হয় যার অধিক সেবন মাদকতা নিয়ে আসে তবে তা পান করা জায়েয নয়। অনুরূপ হল বাকী নেশাকারী বস্তুর বিধান। চাই তা খাদ্য দ্রব্য হোক বা পানীয় হোক তা থেকে সতর্ক থাকা ওয়াজিব। উহার কোন কিছু পান করা বা খাওয়া যাবেনা। মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে ঈমান্দারগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তী এবং লটারীর তীর এসব গর্হিত বিষয়, শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণরুপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। শয়তান তো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্র“তা ও হিংসা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও নামায হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে, সুতরাং এখনও কি তোমরা ফিরে আসবে?” [সূরাঃ মায়িদাহ/ ৯০-৯১]
- নবী (সা:) বলেনঃ “সমস্ত নেশাকারী বস্তু মদ আর প্রত্যেক নেশাকারী বস্তু হারাম।” [মুসলিম হা/৩৭৩৩]
- নবী (সা:) থেকে আরো সুপ্রমাণিত যে, তিনিঃ মদ, মদ্যপানকারী, মদ প্রস্তুতকারী, সে ব্যাপারে নির্দেশ প্রদানকারী, বহণকারী, যার নিকট তা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, উহার বিক্রেতা, ক্রেতা এবং তার মূল্য ভক্ষণ কারী সবাইকে অভিশম্পাত করেছেন।
- তিনি (সা:) আরো ফরমিয়েছেনঃ كل شراب أسكر فهو حرام “যে সমস্ত পানীয় নেশাকারী তা হারাম।” [বুখারী হা/২৩৫, মুসলিম হা/৩৭২৭]
- আরো বলেনঃ ماأسكر كثيره فقليله حرام “যার অধিক সেবন নেশা নিয়ে আসে তার অল্পও হারাম।” [আবু দাউদ হা/৩১৯৬ তিরমিযী হা/ ১৭৮৮ ইবনু মাজাহ্ হা/ ৩৩৮৪]
- নবী (সা:) থেকে আরো প্রমাণিত, তিনি সমস্ত নেশাকারী ও মাতলামী সৃষ্টিকারী বস্তু থেকে নিষেধ করেছেন।
অতএব, সমস্ত মুসলিমের উপর ওয়াজিব হলঃ যাবতীয় নেশা জাতীয় বস্তু থেকে নিজে সতর্ক থাকা ও অপরকে তা থেকে সতর্ক করা। এবং যে তাতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে তার কর্তব্য হল উহা পরিত্যাগ করতঃ অতি শীঘ্র আল্লাহর নিকট তাওবাহ করা। মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে মুমিনগণ আল্লাহর নিকট তোমরা তাওবাহ কর তবেই তোমরা সফলকাম হবে।” [সূরা নূরঃ ৩১] তিনি আরো বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধভাবে তাওবা কর।” [সূরা তাহরীমঃ ৮] – মান্যবর মুফতী ইবনু বায-(আলফাতাওয়া ২/ ২৫৭)
(ঘ) মদের ফ্যাক্টরীতে কাজ করার বিধান
প্রশ্ন: যে ফ্যক্টরীতে শুধু মাত্র মদ ও নেশা জাতীয় বস্তু তৈরী করা হয় সেখানে মুসলিম ব্যক্তির কাজ করার বিধান কি?
উত্তর: মদ এবং যাবতীয় নেশাকারী দ্রব্য হারাম। এগুলোর জন্য ফক্টরী নির্মাণ করা এবং এগুলো ব্যবহার করা সবই হারাম।
-ফাৎওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ৩/৩৭২)
(ঙ) প্রশ্ন: ধুমপানের বিধান কি? উহার বেচা-কেনা হারাম না মাকরুহ?
উত্তর: ধুমপান হারাম। কারণ তা খবীস (খারাপ) দ্রব্য এবং অনেক ক্ষয়- ক্ষতির সূত্রস্থল। অথচ আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য শুধু মাত্র পবিত্র পানাহার হালাল করেছেন। এবং তাদের উপর খবীস দ্রব্যাদী হারাম করেছেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ “(হে রাসূল!) তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? আপনি বলে দিন তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করা হয়েছে।” [আল মায়েদাহঃ ৪]
মহান আল্লাহ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ “তিনি (মুহাম্মাদ) তাদেরকে ন্যায়ের আদেশ করেন এবং অন্যায় থেকে নিষেধ করেন। এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং তাদের উপর খারাপ বস্তু হারাম করেন।” [আল্ আরাফঃ ১৫৭]
ধুমপানের যাবতীয় প্রকার পবিত্র বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং তা খবীস বা অপবিত্র বা খারাপ দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। অনুরূপ ভাবে সমস্তু নেশাকারী বস্তু সবই খবীস খারাপ দ্রব্যের অন্তর্ভূক্ত। ধুমপান করা, তা ক্রয়-বিক্রয় করা মদের মতই অবৈধ। যে ব্যক্তি তা পান করে বা তার ব্যবসা করে, তার উপর ওয়াজিব হলঃ অতি শীঘ্র তাওবাহ করা এবং মহান আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসা। অতীতের কৃত কর্মের উপর লজ্জিত হওয়া, তা পুনরায় না করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে তাওবাহ করে আল্লাহ তার তাওবাহ গ্রহণ করেন। এরশাদ হচ্ছেঃ “আর তোমরা আল্লহর নিকট তাওবাহ কর হে মুমিনগণ! যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা আন্ নূরঃ ৩১]
তিনি আরো বলেনঃ “নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির জন্য যে তাওবাহ করে ,ঈমান আনে অতঃপর সঠিক পথে চলে।” [ত্বাহাঃ ৮২]
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
যদি বিয়ার নেশা মুক্ত হয় তবে তা পানে কোন অসুবিধা নেই।
এইটা কি বললেন???? বিয়ার আবার নেশা মুক্ত হয় কিভাবে???? প্রত্যেক বিয়ারে 2~5% alcohol থাকে. ভালো করে খোঁজ নেন. মানুষ তো এটার উপর আমল করবে। সবাই তো সুযোগ নিবে, আপনাদের রেফারেন্স দিবে। ভালো করে খোঁজ নিয়ে correction করুন। যাযাকাল্লাহ্।
Comments are closed.