পর্ব:১ | পর্ব:২
জ্যোতিষশাস্ত্র, ভাগ্যগণনা:
ভাগ্যগণনার ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। আল্লার রাসূল (সা:) বলেছেন: “কেউ যদি কোন ভাগ্যগণনাকারীর কাছে যায় এবং তার নিকট কোন কিছু জানতে চায়, তবে ঐ ব্যাক্তির সালাত ৪০ দিন এবং রাত পর্যন্ত কবুল হবে না।” (মুসলিম) এ বিধান শুধুমাত্র একজন ভাগ্যগণনাকারীর নিকট কৌতুহলবশতঃ যাওয়ার জন্য। অবশ্য এরপরও ঐ ব্যক্তিকে ৪০ দিন পর্যন্ত সালাত আদায় করে যেতে হবে, যদিও সে এর সওয়াব পাবে না, তবে সে সালাত আদায় করে ফরয আদায় করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তা না করলে সালাত আদায় না করার অপরাধে অপরাধী হতে হবে। কেউ যদি এ কথা বিশ্বাস করে যে ভাগ্যগণনাকারীর নিকট ভবিষ্যতের জ্ঞান রয়েছে, কিংবা অতীন্দ্রিয় (গায়েব) জ্ঞান রয়েছে, তবে সে কাফিরে পরিণত হবে। আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন: “যে কোন ভাগ্যগণনাকারীর নিকট যায়, এবং যা সে বলে, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে, সে মুহাম্মদের নিকট যা নাযিল হয়েছে, তাকে অস্বীকার করল।”
এটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আসমা ওয়া সিফাতের ক্ষেত্রে শিরক কেননা ভবিষ্যতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ পাকই রাখেন, আর গায়েবের খবরও আছে কেবল তাঁরই নিকট। ভাগ্যগণনার এই বিধান একই ভাবে প্রযোজ্য হবে ভাগ্যগণনাকারীদের বইপত্র পড়া, এরূপ কোন অনুষ্ঠান দেখা, পত্রিকার রাশিচক্র পড়ার ক্ষেত্রে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে স্পষ্টতঃ ঘোষণা করেছেন: “তাঁর নিকট রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, এবং এক তিনি ছাড়া এ সম্পর্কে কারও জ্ঞান নেই।” [সূরা আল আনআম, ৬ : ৫৯] তেমনি জ্যোতির্বিদ্যার দ্বারা যে ভবিষ্যত গণনা, ভাল-মন্দ নির্ধারণ করা হয়, তাও একই কারণে কুফর এবং শিরকের পর্যায়ভুক্ত।
আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ভাগ্যগণনাকারী তাঁর বিজ্ঞাপন প্রচার করেন এভাবে:
এ বিজ্ঞাপনে তিনি স্পষ্টতঃ দাবী করছেন যে তিনি ভবিষ্যতের খবর রাখেন – যা কিনা পরিষ্কার শিরক। তাছাড়া তিনি রত্ন-পাথরের সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নাম যুক্ত করে একে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা চালিয়েছেন। অথচ রত্ন-পাথরকে ভাগ্য নিয়ন্তা মনে করলে তাও পরিষ্কার শিরক হবে।
তাবিজ, কবচ, ঝাড়ফুঁক, বশীকরণ
সৌভাগ্য লাভের আশায় এবং মন্দভাগ্য দূর করার জন্য প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বহু মানুষ তাবিজ, লোহা-পিতল-তামার চুড়ি, মালা, ঝিনুক পরে, গাড়ীতে বা বাড়ীর দরজায় বা চাবির রিঙে বিভিন্ন আয়াত লেখা ফলক ঝুলায়, বা কুনজর থেকে বাঁচার জন্য ছেলেমেয়ের গায়ে মুক্তা বা হাড়ের তৈরী মালা, বা কালো সূতা বাঁধে। এ সম্পর্কে মুসলিম উলেমার মতামত দুভাগে বিভক্ত।
১) কুরআনের আয়াত লিখিত তাবিজ ছাড়া আর সব ধরনের তাবিজ জাতীয় জিনিস হারাম – এ ব্যাপারে সকলেই একমত।
২) কুরআনের আয়াত লিখিত তাবিজ কারো কারো মতে জায়েজ, কারো কারো মতে না-জায়েজ। এইসব জিনিসকে (তাবিজ জাতীয়) আরবীতে তামা’ইম (একবচনে তামীমা) বলা হয়। এসম্পর্কে যে সব হাদীস পাওয়া যায় সেগুলি হচ্ছে:
- আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের (রাঃ) স্ত্রী যায়নাব আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের (রাঃ) কাছ থেকে বর্ণনা করেন: “আমি রাসূল (স) কে বলতে শুনেছি যে ঝাড়ফুঁক তাবিজ ও কবচ হচ্ছে শিরক।” আমি বললাম, ‘আপনি কেন একথা বললেন? আল্লাহর কসম, আমার চোখ দিয়ে অসুখের কারণে পানি ঝরছিল এবং আমি অমুক ইহুদীর কাছে গিয়েছিলাম, সে ঝাড়ফুঁক করতেই পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেল।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘এটা শয়তানের কারসাজি ছিল, সে তার হাত দিয়ে তোমার চোখে খোঁচা দিচ্ছিল, ইহুদীটি মন্ত্র উচ্চারণ করতেই সে থেমে গেল। কারণ যখন তুমি তাকে মেনে নিচ্ছিলে সে থেমে যাচ্ছিল আর যখন তুমি তার অনুগত হচ্ছিলে না তখন সে খোঁচা দিচ্ছিল। তোমার যা বলা উটিত ছিল তা হচ্ছে এই দু’আ: ইযহাবিল বা’স রাব্বান নাস ওয়া আশফি আনতা আশ শাফি’ লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা, শিফা’ আল লা ইউঘাদিরু সাকামান।’ (অর্থ: মন্দ দূর কর, হে মানবজাতির রব, এবং সুস্থতা দাও, তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া কোন আরোগ্য নেই, এমন আরোগ্য যা রোগের কোন চিহ্ন রাখে না।)“ (আবু দাউদ ৩৮৮৩; ইবন মাজাহ ৩৫৩০, মুহাদ্দিস শাইখ নাসরুদ্দিন আলবানী এই হাদীসকে সহীহ্ বলেছেন)
- উকবা ইবন আমির (রাঃ) বলেছেন: আমি আল্লাহর রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছি: “যে তাবিজ পরবে, আল্লাহ যেন তার কোন অভাব পূরণ না করেন, এবং যে ঝিনুক পরবে, আল্লাহ যেন তাকে শান্তি না দেন।” (আহমাদ ১৬৯৫১, মুহাদ্দিস শাইখ নাসরুদ্দিন আলবানী এই হাদীসকে যয়ীফ বলেছেন)
- উকবা ইবন আমির আল জুহানী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, “রাসূল (সা) এর কাছে দশজনের একটি দল বাইয়াত হতে এসেছিল। রাসূল (সা) তাদের মধ্যে নয়জনের বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করলেন, একজন বাদে। তারা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি একজন বাদে আর নয়জনের বাইয়াত গ্রহণ করলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘সে তাবিজ পরে আছে।’ লোকটি তখন তার শার্টের ভিতর হাত ঢুকিয়ে তাবিজ বের করে ভেঙ্গে ফেলল, তখন রাসূল (সা) তার বাইয়াত নিলেন। তিনি বললেন, ‘যে তাবিজ পরে, সে শিরক করেছে।” (আহমাদ; তিরমিযী, মুহাদ্দিস শাইখ নাসরুদ্দিন আলবানী এই হাদীসকে সহীহ্ বলেছেন)
- ইমরান ইবন হুসাইন (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যখন রাসূল (সা) এক ব্যক্তির বাহুতে পিতলের বালা দেখতে পেলেন, জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার ধ্বংস হোক! এটা কি?” সে বলল, “এটা তাকে একটা রোগ যার নাম আল-ওয়াহিনা (দুর্বলতা, সম্ভবত: বাত), তা থেকে রক্ষা করবে।” রাসূল (সা) তখন বললেন “ওটা ছুঁড়ে ফেলে দাও, কারণ এটা তোমার দুর্বলতাই বৃদ্ধি করবে এবং যদি তুমি এটা পরা অবস্থায় মারা যাও, তুমি কখনও সফল হবে না।” (আহমাদ; ইবন মাজাহ; ইবন হিব্বান)
- সুস্থ বা অসুস্থ লোকেরা তামা, পিতল বা লোহার চুড়ি, বালা বা আংটি পরবে এই বিশ্বাসে যে সেগুলি রোগ সারাতে পারে – এটা নিষিদ্ধ। রাসূল (সা) বলেন “তোমরা অসুস্থতার চিকিৎসা কর, কিন্তু হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করো না।” (আবু দাউদ, বায়হাকী)
- ঈসা ইবন হামযা (রাঃ) বলেন: “আমি আব্দুল্লাহ ইবন আকিমকে (রাঃ) দেখতে গিয়েছিলাম, তাঁর মুখ জ্বরে লাল হয়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, ‘আপনি কেন তাবিজ ব্যবহার করছেন না?’ তিনি বললেন, ‘আমরা এ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। রাসূল (সা) বলেছেন: যে কোন ধরনের তাবিজ পরবে সে সেটার অধীনে আছে বলে বিবেচিত হবে… ’ ”(অর্থাৎ সে তারই উপর নির্ভরশীল) (আবু দাউদ)
- আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) একদিন তাঁর স্ত্রীকে দেখলেন একটি গিঁট দেয়া সূতা গলায় পরতে। তিনি সেটা টেনে ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “আব্দুল্লাহর পরিবার আল্লাহর সাথে অন্য কোন কিছুকে শরীক করা থেকে মুক্ত।” তারপর তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছি: ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ও বশীকরণ এগুলি হচ্ছে শিরক।”
হাদীসগুলির ব্যাখ্যা থেকে যা পাওয়া যায়:
তামাঈম হারাম হওয়ার কারণ হচ্ছে এতে আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুসমূহের উপর সৌভাগ্য প্রদানের বা দুর্ভাগ্য দূরীকরণের ক্ষমতা আরোপ করা হয়, যা হচ্ছে শিরক। এর ফলে আল্লাহর রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করা হয়। ভাগ্যের ভাল-মন্দ আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। আল্লাহ যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তামাঈম ব্যবহার করে তা ফিরানো যায়, এমন বিশ্বাস থেকেই শিরকের উৎপত্তি হয়। কুরআনের আয়াত পাঠ করে বা সূরা পড়ে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে রাসূল (সা) বলেছেন। দু’আর মাধ্যমেই আমরা সব ধরণের মন্দভাগ্য, কুনজর ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকতে পারি। সাহাবা, তাবেয়ীগণের মাঝে দ্বিমত রয়েছে কুরআনের আয়াত লেখা তাবিজ ব্যবহার করার ব্যাপারে। যাঁরা একে জায়েজ বলেছেন তাঁরা হচ্ছেন:
উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা), আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবন আলী, ইবনুল কায়্যিম প্রমুখ। তাঁদের মতে এটা দু’আ পড়ার সমতুল্য। আবদুল্লাহ ইবন আকিম, আবদুল্লাহ ইবন আমর, উকবা ইবন আমির, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ, আল আসওয়াদ, আলকামাহ, ইবরাহীম নাখয়ী প্রমুখের মতে কুরআনের আয়াত লেখা তাবিজ ব্যবহার করা নাজায়েজ এবং মাকরুহ। তাঁরা উপরোল্লিখিত হাদীসগুলির ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে কোন ধরণের তাবিজ সম্পর্কেই নিষেধ করা হয়েছে, কুরআনের আয়াত লিখিত তাবিজের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই। রাসূল (সা) তাঁর জীবদ্দশাতে কখনও কুরআনের আয়াত লিখিত তাবিজ ব্যবহার করেননি, বরং তাঁর রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর আদেশে সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে শরীরে ফুঁ দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেছেন, “বল! ‘দিনে ও রাত্রিতে কে তোমাদেরকে পরম করুণাময় আল্লাহ’র শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে?’ কিন্তু না, তারা তাদের রবের স্মরণ থেকে গাফিল।” (সূরা আল আম্বিয়া, ২১ : ৪২)
যারা কুরআনকে ছোট আকারে তাবিজ হিসেবে ব্যবহার করে, বা কুরআনের আয়াতকে তাবিজ হিসেবে ব্যবহার করে, তারা খুব সহজেই শিরকের শিকার হতে পারে। এর ফলে তাবিজের উপর নির্ভরতা এসে পড়ে, যা শিরক। কেউ যদি গহনা হিসেবে আয়াতুল কুরসী লেখা লকেট ইত্যাদি পরে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। শিরকমুক্ত থাকার জন্য যা অনেকের মতে জায়েজ, তাতেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
যে সব আলেমরা সবধরনের তাবিজ ব্যবহার নাজায়েজ বলেন তাঁদের মতামত:
১) কুরআন ছাড়া অন্য যে কোন ধরণের চিহ্ন, নকশা, মন্ত্র সম্বলিত তাবিজ ব্যবহার হারাম, এ ব্যাপারে আলেমরা একমত। কুরআনের আয়াত লেখা তাবিজের ব্যাপারে কেউ সেটাকে জায়েজ বলছেন, কেউ নাজায়েজ বলছেন। শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বায, শাইখ আবদুল্লাহ বিন ঘাদিয়ান, শাইখ আবদুল্লাহ বিন ক্বা’উদ সকল প্রকার তাবিজকে নাজায়েজ বলেছেন।
২) শাইখ নাসরুদ্দিন আলবানী বলেন: “বেদুইন, কৃষক ও শহরবাসীদের মাঝে এই ভুল ধারণা এখনও বহুল প্রচলিত। উদাহরণ হিসাবে আমরা নিতে পারি গাড়ীতে ঝুলানো মুক্তা (ড্রাইভার কর্তৃক), কেউ কেউ গাড়ীর সামনে বা পিছনে পুরনো জুতা ঝুলায়, কেউ কেউ তাদের বাসা বা দোকানের সামনে অশ্বক্ষুরাকৃতি লোহা ঝুলায়। এসবই কুনজর থেকে বাঁচার জন্য, অন্ততঃ তারা তাই দাবী করে। এবং আরো অনেক কিছুই আছে যা তাওহীদ সর্ম্পকে অজ্ঞতার জন্য প্রসার পেয়েছে, যে তাওহীদ শিরক ও মূর্তিপূজাকে উৎখাত করার জন্য এসেছে, রাসূলগণ ও কিতাবসমূহের মাধ্যমে। আমরা বর্তমানের মুসলিমদের অজ্ঞতা ও তাদের ধর্ম থেকে বহুদূরে সরে যাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছেই শুধু অভিযোগ আনতে পারি। (সিলসিলাত আল আহাদীস আস-সহীহা ১/৮৯০, ৪৯২)
রিয়া:
হাদীস: মাহমুদ ইবন লুবাইদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন: “রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য আমি যা সবচেয়ে বেশী ভয় করি, তা হল ছোট শিরক বা শিরক আল আসগার।’ সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, ছোট শিরক কি?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘রিয়া (লোক দেখানোর জন্য কাজ করা), নিশ্চয়ই আল্লাহ পুনরুত্থান দিবসে প্রতিদান দেওয়ার সময় লোকদের বলবেন, ”পার্থিব জীবনে যাদেরকে দেখানোর জন্য তোমরা কাজ করেছিলে, তাদের কাছে যাও এবং দেখ তাদের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে পার কিনা।’ ” (আহমাদ, বায়হাকী) আরেকটি হাদীসে মাহমুদ ইবন লুবাইদ (রাঃ) বলেন, “রাসূল (সা) বের হয়ে এলেন এবং ঘোষণা করলেন, ‘হে জনগণ, গোপন শিরক সম্বন্ধে সাবধান!’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ, গোপন শিরক কি?’ তিনি বললেন, ‘যখন কেউ সালাতে দাঁড়ায় এবং লোকে তাকিয়ে দেখছে জেনে তার সালাত সুন্দরভাবে আদায়ের চেষ্টা করে; এটাই গোপন শিরক।’ ” (ইবন খুযাইমা)
লোকের প্রশংসা পাওয়ার জন্য এবং লোক দেখানোর জন্য কোন ইবাদত করাকেই রিয়া বলা হয়। রিয়ার কারণে সমস্ত সৎকর্ম ধ্বংস হয়ে যায় এবং রিয়াকারী শাস্তির যোগ্য হয়। কোন কাজের জন্য মানুষের প্রশংসা পাওয়া ও সমাজে মর্যাদা ও খ্যাতি লাভের বাসনা মানুষের স্বভাবজাত। তাই নিজের ব্যাপারে অন্যকে ভাল ধারণা দেওয়ার চেষ্টা স্বাভাবিক ভাবেই ধর্মীয় কাজ বা সৎকাজ করার সময় মনে আসতে পারে – সেজন্য সতর্কতা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে যারা তাদের জীবন আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে অতিবাহিত করতে চান, তাদের জন্য তা আরও জরুরী। বড় শিরক থেকে বাঁচা সহজ, কিন্তু রিয়া অত্যন্ত গোপন বলেই তা থেকে বেঁচে থাকা কষ্টকর, কেননা একজন মানুষের নিয়ত খুব সহজেই পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। ইবন আব্বাস (রা) এ সম্পর্কে বলেন, “কোন চন্দ্রবিহীন মধ্যরাতের অন্ধকারে কালো পাথরের উপর কালো পিঁপড়ার চুপিসারে চলার চেয়েও গোপন হচ্ছে শিরক।” (ইবন আবী হাতিম)
এ কারণে সৎকর্ম করার শুরুতে এবং করার সময় নিয়তের বিশুদ্ধতার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। এটা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামে সব কাজ আল্লাহর নামে শুরু করাকে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও দৈনন্দিন জীবনের সব কাজ যেমন খাওয়া, পরা ঘুমানো ইত্যাদি সবকিছুর জন্য বিভিন্ন দু’আ আল্লাহর রাসূল (সা) শিখিয়েছেন, যাতে আমাদের সব কাজই আল্লাহর ইবাদত হয়ে যায় এবং আমরা সর্বক্ষণ আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সম্পর্কে এই সচেতনতাই হচ্ছে তাকওয়া, যা আমাদের নিয়তের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে। অনিবার্য শিরকের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য রাসূল (সা) দু’আ শিখিয়েছেন। আবু মুসা বলেন, “একদিন আল্লাহর রাসূল (সা) এক ভাষণে বললেন ‘হে লোকসকল, শিরককে ভয় কর, কারণ এটি পিঁপড়ার চুপিসারে চলার চেয়েও গুপ্ত।’ যারা আল্লাহ চেয়েছিলেন জিজ্ঞাসা করল, ‘আমরা কিভাবে এ থেকে বেঁচে থাকব যদি তা পিঁপড়ার চলার চেয়েও গুপ্ত হয়, ইয়া রাসূলুল্লাহ?’ তিনি বললেন, ‘বল! আল্লাহুম্মা ইন্না নাউযুবিকা আন নুশরিকা বিকা শাইআন না’লামুহু, ওয়া নাসতাগফিরুকা লিমা লা না’লামুহু।’ ” ‘হে আল্লাহ, আমরা জেনে বুঝে শিরকে লিপ্ত হওয়া থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, আর আমরা না জেনে শিরকে পতিত হওয়ার ব্যাপারে আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি।’
একটি হাদীস কুদসীতে আবু হুরায়রা (রা) আল্লাহর রাসূল (সা) থেকে বর্ণনা করেন: “পুনরুত্থান দিবসে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে সে হচ্ছে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর সম্মুখে আনা হবে, আল্লাহ তাকে প্রদত্ত তাঁর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন, সে স্বীকার করবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তখন বলবেন: ‘তুমি আমার অনুগ্রহের কি প্রতিদান দিয়েছো?’ সে বলবে: আমি আপনার জন্য জিহাদ করে শহীদ হয়েছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তখন বলবেন: তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি এজন্য জিহাদ করেছ যে লোকে যেন তোমাকে বীর বলে। সাহসী বলে। তা তো বলা হয়েছে। আজ আমার কাছে তোমার কোন প্রতিদান নেই। তখন তাকে তার মুখের উপর টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামে। আরেকজন হবে কুরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী, সে অন্যকে শিক্ষা দিত, কুরআন তিলাওয়াত করত। তাকে আল্লাহর সম্মুখে আনা হবে এবং আল্লাহ তাকে প্রদত্ত স্বীয় অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। সে স্বীকার করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন; ‘তুমি কিভাবে আমার অনুগ্রহের হক আদায় করেছো? সে বলবে: আমি জ্ঞান অর্জনের জন্য চেষ্টা করেছি, তা শিক্ষা দিয়েছি এবং কুরআন তিলাওয়াত করেছি আপনারই জন্য। আল্লাহ তখন বলবেন: তুমি মিথ্যাবাদী – তুমি এজন্যই এগুলো করেছিলে যে লোকে তোমাকে বলবে তুমি জ্ঞানী, ক্বারী। লোকে তাই বলেছে, তুমি তোমার প্রাপ্য পেয়ে গেছ। আজ তোমার কোন পাওনা নেই। তখন তাকে উল্টো করে ধরে টেনে নিয়ে জাহান্নামে ফেলে দেওয়ার হুকুম করা হবে। আরেকজন ধনী ব্যক্তিকে আনা হবে, যাকে আল্লাহ তাঁর সমস্ত অনুগ্রহ স্মরণ করিয়ে দেবেন এবং সে স্বীকার করবে। আল্লাহ বলবেন, আমার দেওয়া ধন সম্পদ তুমি কি কজে লাগিয়েছো। সে উত্তর দেবে: আমি আপনার জন্য ধনসম্পদ ব্যয়ের কোন রাস্তাই বাকী রাখিনি অর্থাৎ সকল প্রকার সৎকাজে অর্থ ব্যয় করেছি। আল্লাহ তখন বলবেন: তুমি মিথ্যাবাদী – তুমি এজন্য সম্পদ দান করেছ যাতে লোকে তোমাকে দানবীর বলে। সেই খ্যাতি তো তুমি পেয়েছ। আজ তোমার আর কিছুই পাওনা নেই। তারপর তাকে উল্টোভাবে ধরে টেনে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেয়ার হুকুম করা হবে।” (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ)
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
ماذا فعل يا مستفيض
May Allah(s.w.t) Save us from SHIRK and from all kind of evil deed !!!
Ameeen !
Many things to learn form here.
ameen
Amin
AMIN
Ameen
Ameen
https://www.facebook.com/oppobangladesh check this…
Good process
Good process4 spread islam
Good process for spread islam this website
ameen
Ameen
ammeeeen
Ameen
ameen
#Ameen
আল্লাহুম্মামিন ৷
Ameen
ameen
ameen……….
Ameen ya allah
Ameen
আমিন।
Ameen
SUMMA-AMEEN!
Ameen
Ameen..
Ameen
alla humma amin
ameen
Ameen
ALLAH APNI amader ke siroki hoyte rokkha korun ….AMEEN
AMEEN
Allah s.wt save all of us Aminn
Ameen
Ameen
ameen
Ameen
Aameen ya Rabbal’alameen.
yA ALLAH…..
ammen
Ameen
আমীন
আমীন, সুম্মা আমীন
Ameen.
Aameen
Aameen ………………….
Ameen
Ameen
ameen
Amin.
Amen
Ameen
Amin
SubhanAllah