লেখক: ড. খালিদ আবু শাদি | অনুবাদক: হাসান মাসরুর
১. আজকের আলোচ্য বিষয়ের ফায়দা
- নিজেকে রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখা: কারণ, নবিজি (সা:) ইরশাদ করেছেন: ‘রাতের সালাত শরীর থেকে রোগব্যাধি দূরকারী।‘ [সুনানুত তিরমিজি: ৩৫৪৯]
- চেহারা আলোকিত হওয়া: কারণ, প্রতিদান কর্মের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। রাতে সালাত আদায়কারীগণ রাতের অন্ধকার সহ্য করে নেওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা প্রতিদান হিসেবে তাদের চেহারাগুলো আলোকিত করে দেবেন। সাইদ বিন মুসাইয়িব বলেন, ‘মানুষ রাতের সালাত আদায় করলে আল্লাহ তাআলা তার চেহারায় নুর ঢেলে দেন; ফলে সকল মুসলিম তাকে মহব্বত করে। যে কোনো দিন তাকে দেখেনি, সেও তাকে দেখে বলে, ‘আমি এই লোকটিকে ভালোবাসি।’
- রিজিক বৃদ্ধি পাওয়া: আল্লাহ তাআলা রিজিক বৃদ্ধির বিষয়টি সালাতের সাথে একত্রিত করে দিয়েছেন । আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে সালাতের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না । আমিই আপনাকে রিজিক দিই এবং আল্লাহভীরুতার পরিণাম শুভ।” [সুরা তহা, ২০ : ১৩২]
- কোথায় সাড়া প্রদানকারীগণ?!
যারা আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেবে! আল্লাহ তাআলা রাতের শেষ- তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে এসে বলতে থাকেন: ‘কে আছে যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেবো; কে আছে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব এবং কে আছে যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো।’ [সহিহুল বুখারি: ১১৪৫]
- সামান্য সাধনায় বিশাল প্রতিদান: আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবিজি (সা:) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি রাতের সালাতে দশটি আয়াত তিলাওয়াত করবে, তার নাম গাফিলদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে না। আর যে ব্যক্তি রাতের সালাতে একশ আয়াত পাঠ করবে, তার নাম অনুগত বান্দাদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। যে ব্যক্তি রাতের সালাতে এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করবে, তাকে মুকানতিরিন তথা অফুরন্ত পুরস্কার- প্রাপ্তদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে।‘ [সুনানু আবি দাউদ: ১৩৯৮]
হাদিসে বর্ণিত আছে: ‘আল-কিনতার দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম।‘ [তাবারানি (রা:) কৃত আল-মুজামুল কাবির : ১২৫৩]
২. কুরআনের আলো
আল্লাহ তাআলা বলেন: “তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে।” [সুরা আস-সাজদা, ৩১ : ১৬]
ইবনে কাসির (রা:) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এভাবে তারা রাতের সালাত আদায় করে এবং নিদ্রাগ্রহণ ও কোমল বিছানায় শায়িত হওয়া পরিত্যাগ করে।’
আব্দুল হক ইশবিলি (রা:) বলেন, ‘অর্থাৎ তাদের পার্শ্ব বিছানা থেকে পৃথক থাকে; ফলে বিছানায় তা স্থির ও অবিচল থাকে না। কারণ, তারা আল্লাহর ধমকের ভয়ে থাকে এবং তাঁর প্রতিশ্রুত পুরস্কারের আশায় থাকে।
এ কারণেই জান্নাতিদের গুণাবলিতে বর্ণিত হয়েছে:
“তারা রাতের কম সময়ই ঘুমাত।” [সুরা আজ-জারিয়াত, ৫১ : ১৭]
“শেষ রাতে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।” [সুরা আজ-জারিয়াত, ৫১ : ১৮]
হাসান বসরি (রা:) বলেন, ‘তারা রাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং সাহরির সময় পর্যন্ত সালাতকে দীর্ঘায়ত করে। এরপর দুআয় বসে যায় এবং অনুনয় ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।
৩. রাসুল (সা:) আমাদের আদর্শ
- রাসুল (সা:) সালাতকে দীর্ঘায়ত করতেন। ইবনে মাসউদ (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক রাতে আমি রাসুল (সা:)-এর সাথে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করেছিলাম।’ বলা হলো, ‘আপনি কী কাজের ইচ্ছা করেছিলেন?’ তিনি বললেন, “ইচ্ছা করেছিলাম বসে পড়ি এবং নবিজি (সা:)-এর ইকতিদা ছেড়ে দিই।’ [সহিহুল বুখারি: ১১৩৫, সহিহু মুসলিম: ৭৭৩]
ইবনে হাজার (রা:) বলেন, ‘হাদিসটিতে এ ব্যাপারে দলিল রয়েছে নবিজি (সা:)- রাতের সালাতকে লম্বা করে আদায় করতে পছন্দ করতেন। ইবনে মাসউদ (রা:) ছিলেন নবিজি (সা:)-এর আমলের সর্বাধিক অনুসরণকারী এবং তাঁর মতো আমল করার প্রতি খুব যত্নশীল। তিনি তখনই বসার ইচ্ছা করেছিলেন, যখন তাঁর স্বাভাবিক অভ্যাসের বিপরীত দীর্ঘ সালাত আদায় হচ্ছিল।’
- রাসুল (সা:) যতই অসুস্থ হতেন বা অবস্থা তাঁকে যতই ব্যস্ত করে রাখত, তিনি রাতের সালাত আদায় পরিত্যাগ করতেন না। আয়িশা আব্দুল্লাহ বিন কাইসকে বললেন, ‘রাতের সালাত পরিত্যাগ করো না । কেননা, রাসুল কখনো তা পরিত্যাগ করেননি। তিনি যখন অসুস্থ হয়ে যেতেন বা অলসতা অনুভব করতেন, তখন বসে বসে সালাত আদায় করতেন।’
- রাতের সালাত হলো শোকর। নবিজি (সা:) আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে. রাতের সালাত হলো নিয়ামতের শোকরসমূহ থেকে এক প্রকার শোকর। আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবিজির (সা:) পা ফুলে যাওয়া পর্যন্ত রাতের সালাত আদায় করতে থাকতেন। আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসুল, আপনি এমনটি কেন করছেন? অথচ আল্লাহ তাআলা আপনার আগের ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন?” তিনি বললেন, “হে আয়িশা, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?” [ সহিহু মুসলিম: ২৮২০]
হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, শোকর শুধু জবানেই হয় না; বরং হৃদয়, জবান ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্বারা তা সম্পন্ন হয়। নবিজি ছিলেন সর্বোত্তম আদর্শ এবং সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। তিনি আল্লাহর গোলামির হক পরিপূর্ণভাবেই আদায় করেছেন এবং সর্বোত্তমভাবে তাঁর শোকর আদায় করেছেন।
তিনি যাদেরকে ভালোবাসতেন, তাদেরকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগিয়ে দিতেন:
- হাসান বিন আলি বিন আবু তালিব (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর পিতা তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন: “রাসুল (সা:) এক রাতে তাঁর ও নবির মেয়ে ফাতিমার কাছে আগমন করলেন এবং তাঁদের বললেন, “তোমরা কি সালাত আদায় করবে না?” আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের আত্মাগুলো তো আল্লাহ তাআলার হাতে। তিনি যখন আমাদেরকে জাগাতে ইচ্ছা করবেন, জাগিয়ে দেবেন।” আমরা যখন এ কথা বললাম, তখন তিনি চলে গেলেন। আমার কথার কোনো জবাব দিলেন না। পরে আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ফিরে যেতে যেতে আপন উরুতে আঘাত করছিলেন আর কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন: “মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়।” [সুরা আল-কাহফ, ১৮ : ৫৪ । সহিহুল বুখারি: ১১২৭, সহিহু মুসলিম: ৭৭৫]
- ইমাম তাবারি, এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যদি নবিজি রাতের সালাতকে অধিক ফজিলতময় মনে না করতেন, তাহলে নিজের কন্যা ও চাচাতো ভাইকে এমন সময়ে বিরক্ত করতেন না, যে সময়টিকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির জন্য প্রশান্তিদায়ক বানিয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রকৃতি শান্ত হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁদেরকে এই সালাতের ফজিলত অর্জন করানোকে পছন্দ করলেন। কারণ, তিনি এর মাধ্যমে আল্লাহর এই আদেশ পালন করতে চাইলেন: ‘‘আপনি আপনার পরিবার-পরিজনকে সালাতের আদেশ দিন।” [সুরা তহা, ২০ : ১৩২]
৪. অমূল্য বাণী
প্রিয় ভাই, ভালোবাসার দাবি হলো, প্রেমিকের সাক্ষাৎকে পছন্দ করা। আর কতই না উত্তম হয়, যদি এই সাক্ষাৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে হয়! যখন সাক্ষাতের সময় হয়, তখন এক ঘোষক ভালোবাসার পাত্রদের গোপনে ডাকতে থাকেন, ‘অমুককে জাগিয়ে দাও এবং অমুককে নিদ্রায় বিভোর রাখো।’ সুতরাং এখানে সফলদের নামগুলো বের হয়ে আসে এবং প্রেমিকদের চক্ষুগুলো শীতলতা লাভ করে। সুতরাং দীর্ঘ নিদ্রা ও নিদ্রার স্বাদ আপনার কী ফায়দা বয়ে এনেছে? আহ, যদি আপনি তাদের সঙ্গী হতেন!
ওহে মিসকিন, তোমার জন্য আফসোস! যদি তুমি আল্লাহর প্রশংসিত এই লোকদের একজন হতে, ‘যারা নিজেদেরকে শয্যা থেকে আলাদা রাখে।’ তুমি আল্লাহর প্রশংসিত ওই লোকদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছ, যারা শেষ রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
- আপনার শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলুন : হাসান বসরি (রা:)-কে বলা হলো, ‘রাতের পড়েছি।’ তিনি বললেন, সালাত আদায় থেকে আমরা অপারগ হয়ে ‘তোমাদের পাপসমূহ তোমাদেরকে বন্দী করে ফেলেছে। যারা নিজেদের আচরণ ও ভালোবাসায় একনিষ্ঠ, তাদেরকে সাথি হিসেবে গ্রহণ ও তাদেরকে সম্বোধনের ব্যাপারে ফেরেশতাগণ অনুমতি পান। কিন্তু যারা এর বিপরীত, তাদের ডাকার ব্যাপারে ফেরেশতারা সন্তুষ্ট থাকে না।
- বঞ্চিত কে?: ফুজাইল বিন ইয়াজ (রা:) বলেন, ‘যখন তুমি রাতের সালাত, আর দিনে রোজা রাখতে পারো না, তখন মনে করো যে, তুমি বঞ্চিত এবং তোমার পাপ অনেক বেড়ে গেছে।’
- সমান সমান ভাগ! আবু উসমান আন-নাহদি বলেন, ‘আমি আবু হুরাইরা (রা:)-কে সাতবার মেহমানদারি করেছি। তিনি, তাঁর স্ত্রী এবং খাদিম রাতকে তিন ভাগ করে নিতেন। একজন সালাত আদায় করতেন এবং পরে অন্যজনকে জাগিয়ে দিতেন।
- কবরে পৌছার আগেই কবরকে আলোকিত করে নিন! আবু দারদা বলেন, ‘কবরের অন্ধকার দূর করতে রাতের অন্ধকারে দুই রাকআত সালাত আদায় করে নাও ৷’
- সর্বোত্তম নফল ইবাদত : জনৈক লোক হাসান (রা:)-কে বললেন, ‘হে আবু সাইদ, কোন আমলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্য অর্জন করতে পারে?’ তিনি বললেন, ‘গভীর রাতে সালাতে দাঁড়ানোর মতো এমন কোনো আমল আমি দেখি না, যা আল্লাহর নৈকট্য দান করবে।’
৫. একটি চমৎকার কাহিনি
আমর বিন উতবা বিন ফারকাদ গভীর রাতে নিজের ঘোড়া নিয়ে বের হয়ে যেতেন এবং কবরস্থানে এসে বলতেন, ‘হে কবরবাসী, আমলনামা ভাঁজ করে নেওয়া হয়েছে এবং কলমগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে।’ কবরবাসীরা কোনো মন্দ থেকে তাওবা করতে পারবে না এবং কোনো কল্যাণকর কাজ বৃদ্ধিও করতে পারবে না। এরপর তিনি কাঁদতে থাকতেন। তারপর ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত সালাত আদায় করতে থাকতেন। যখন ফজরের সময় হতো, তিনি ঘোড়ায় চেপে বসতেন এবং মসজিদে চলে যেতেন। তিনি মসজিদে সকলের সাথে এমনভাবে সালাত আদায় করতেন, যেন রাতে তার কিছুই হয়নি।
কাইস বিন মুসলিম সাহরির সময় পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন। তারপর বসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদতে থাকতেন। আর বলতেন, ‘হায়, যদি আমরা সৃষ্ট না হতাম! যদি আমরা সৃষ্ট না হতাম! যদি আমরা আখিরাতে কোনো কল্যাণ নিয়ে আসতে না পারি, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাব।’
৬. রমাদানে রাতের সালাত
রাসুল (সা:) বলেন: ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ পুণ্যের আশায় রাতের সালাতে দাঁড়াবে, তার পেছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ [সহিহুল বুখারি: ৩৭, সহিহু মুসলিম: ৭৫৯]
রমাদানে রাতের সালাত অন্যান্য সময়ের সালাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও অধিক ফজিলতময়। রাতের সালাতের একটি হলো তারাবিহের সালাত এবং শেষ দশকের তাহাজ্জুদের সালাত। নবিজি (সা:) বলেন, ইমানের সাথে’-এর অর্থ হলো, তার সাওয়াব, শ্রেষ্ঠত্ব এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বিষয়টি সত্যায়ন করা। আর ইখলাসের অর্থ হলো, একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে উদ্দেশ্য করা, কোনো মানুষকে দেখানো উদ্দেশ্য না রাখা। এ ছাড়া ইখলাসের বিপরীত অন্য কোনো জিনিস উদ্দেশ্য না করা।
হাদিসে ইমান ও ইখলাসের মতো দুটি শব্দকে অতিরিক্ত উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, অনেক সময় মানুষ কোনো কাজ করে; কিন্তু সেখানে ইখলাস থাকে না; বরং উদ্দেশ্য হয় লৌকিকতা বা অন্য কিছু। আর কর্মে একনিষ্ঠ ব্যক্তি অনেক সময় সাওয়াবের প্রতি বিশ্বাসী হয় না। সুতরাং রমাদানে যদি কেউ ইখলাস ও বিশ্বাসের সামানে সজ্জিত হয়, তাহলে সে মূল্যবান ক্ষমার সম্পদ অর্জন করতে পারবে।
এই হাদিসসহ অন্যান্য হাদিসে ক্ষমার যে বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে, উলামায়ে কিরাম তা দ্বারা সগিরা গুনাহ উদ্দেশ্য নিয়েছেন। কারণ, কবিরা গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না । কেননা, নবিজি এক রমাদান থেকে অন্য রমাদান পর্যন্ত সকল গুনাহ মাফের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, যতক্ষণ না বান্দা কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়।
হাদিসের প্রতি লক্ষ করলে বুঝতে পারবেন যে, নবিজি (সা:) রাতের সালাতের ব্যাপারে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তবে দৃঢ়ভাবে আদেশ করেননি বা বাধ্যতামূলক করে দেননি। শুধু সাওয়াবের কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রত্যেক মুমিনকে অনুপ্রাণিত করে এবং প্রত্যেক আগ্রহীকে সাওয়াব ও প্রতিদান-প্রত্যাশী করে তোলে।
৭. রাতের সালাতের সূর্য ডুবে গেছে
বরকত ও লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়গুলোতে আজ মানুষ তাদের রবের অবাধ্যতা করছে। আল্লাহ তাআলা তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পরও তারা তাঁর থেকে বিমুখ হয়ে আছে। তারা স্রষ্টার প্রতিদান থেকে পিঠ ঘুরিয়ে নিয়েছে; অথচ তারাই তাঁর প্রতি সর্বাধিক মুখাপেক্ষী।
৮. দুআ
- হে আল্লাহ, আমাদেরকে আপনার সবচেয়ে প্রিয় সময় জাগিয়ে দিন; যেন আপনার কাছে মুনাজাত করতে পারি এবং আপনাকে ডাকতে পারি । আর আপনি এই সময়ে আমাদের প্রতি রহমত ও সন্তুষ্টির দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারেন।
- হে আল্লাহ, আমাদের পার্শ্বসমূহ বিছানা থেকে পৃথক রাখার তাওফিক দিন এবং এর প্রতিদানস্বরূপ জান্নাতে এমন বিছানায় শয়নের তাওফিক দিন, যার ভেতরের অংশ মোটা রেশমি কাপড়ের।
- হে আল্লাহ, আমাদেরকে শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনার তাওফিক দান করুন এবং এর মাধ্যমে আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।
- হে আল্লাহ, দিনের গুনাহের ফলে আমাদেরকে রাতের সালাতের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনার গুনাহগার বান্দাদের হৃদয়ের ভগ্নতাকে জোড়া দিয়ে দিন এবং তাওবাকারী ভগ্নহৃদয়ের বান্দাদের প্রতি দয়া করুন।
৯. স্বার্থপর হবেন না
- আপনার পরিবার ও সন্তানদেরকে রাতের সালাতের জন্য জাগিয়ে তুলুন । তাহাজ্জুদ ও তারাবিহের সালাতে তাদেরকে সঙ্গী করুন।
- আপনার প্রতিবেশীকে পার্শ্ববর্তী এমন কোনো মসজিদে নিয়ে যান, যেখানকার ইমামের তিলাওয়াত সুমধুর।
- কথাগুলো আপনার মসজিদের মুসল্লি ও আপনার সহপাঠী-সহকর্মীদের মাঝে আলোচনা করুন।
- এই বইটি নিজে পাঠ করে অন্যদেরকেও পড়তে দিন; যেন তারা এর থেকে উপকৃত হতে পারে।
- মসজিদের ইমামকেও বইটি হাদিয়া দিতে পারেন; যেন তিনি জুমআর খুতবা বা তারাবিহ-পরবর্তী আলোচনায় এর থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারেন।
১০. যথেষ্ট কথা হয়েছে, এখন আমল দেখার বিষয়
শুধু রমাদানেই তাহাজ্জুদের আমল করলে চলবে না; রমাদানের পরেও আমল করতে হবে। কারণ, টার্গেটকৃত পরিকল্পনার প্রভাব স্থায়ী। এটি সাময়িক কোনো উন্নতি নয়, যা অতি দ্রুত কেটে যাবে। আমরা আপনার সামনে এমন কিছু মাধ্যম তুলে ধরছি, যা আপনার রাত জাগরণে সহযোগী হবে:
আবু হামিদ গাজালি (রা:) বলেন, ‘রাতের সালাতকে সহজ করে তোলে এমন কিছু মাধ্যম হলো বাহ্যিক এবং কিছু হলো অভ্যন্তরীণ:
বাহ্যিক মাধ্যম হলো চারটি:
এক. বেশি পানাহার না করা। বেশি পানাহারে প্রবল নিদ্রা আসে; ফলে রাতে ওঠা মুশকিল হয়ে যায়।
দুই. দিনের বেলা নিজেকে অনর্থক কাজে ক্লান্ত করে তুলবে না।
তিন. দিনের বেলা কাইলুলা পরিত্যাগ করবে না। কেননা, কাইলুলা করা রাত জাগরণে সাহায্য করে।
চার. দিনের বেলা গুনাহে লিপ্ত হবে না। অন্যথায় রাতের সালাত থেকে বঞ্চিত হবে।
আর অভ্যন্তরীণ বিষয়ও চারটি:
এক. মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ থেকে হৃদয়কে মুক্ত রাখবে ।
দুই. দুনিয়ার প্রতি কম আশা রেখে হৃদয়কে প্রবল ভয়ের সাথে রাখবে।
তিন. রাতের সালাতের ফজিলতগুলো জেনে নেবে ।
চার. এটি হলো সর্বোত্তম মাধ্যম: আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং ইমানি শক্তি। আর এটি এভাবে হবে যে, সালাতে উচ্চারিত প্রতিটি হরফে সে চিন্তা করবে যে, সে আল্লাহর সাথে কথা বলছে।
উৎস: রমাদান-আত্মশুদ্ধির বিপ্লব, পৃষ্ঠা: ২৫২ – ২৬৩
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]