অনুবাদ: মুহা: আবদুল্লাহ্ আল কাফী | সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী
প্রিয় ভাই! পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতে তাকওয়ার আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাকওয়ার ফলাফল এবং আল্লাহ্ ভীরু হওয়ার উপায়-উপকরণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। একারণেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই খুতবা শুরু করতেন, তাকওয়া সম্বলিত আয়াত সমূহ প্রথমে পাঠ করতেন। এথেকে বুঝা যায় মুসলিম ব্যক্তির জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব কতটুকু।
তাকওয়ার অর্থ:
- ইবনে রজব (রহ:) বলেন, “তাকওয়া মানে আনুগত্য শীল কর্মের মাধ্যমে এবং নাফরমানি মূলক বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ্র ক্রোধ এবং শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা।”
- কুশাইরী (রহ:) বলেন, “প্রকৃত তাকওয়া হল, শিরক থেকে বেঁচে থাকা, তারপর অন্যায় ও অশ্লীল বিষয় পরিত্যাগ করা, অতঃপর সংশয়পূর্ণ বিষয় থেকে বিরত থাকা, এরপর অনর্থক আজেবাজে বিষয় বর্জন করা।”
- আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রা:) বলেন, “তাকওয়া হচ্ছে: আল্লাহ্র আনুগত্য করা- নাফরমানি না করা, তাঁকে স্মরণ করা- ভুলে না যাওয়া, তাঁর কৃতজ্ঞতা করা- কুফরী না করা।”
- সাহ্ল বিন আবদুল্লাহ্ বলেন, “বিশুদ্ধ তাকওয়া হল- ছোট-বড় সব ধরণের গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করা।”
- যওবানী বলেন, “আল্লাহ্ থেকে দূরে রাখবে (তাঁর ক্রোধ ডেকে নিয়ে আসবে) এমন সকল বিষয় বর্জন করার নামই তাকওয়া।”
- হাসান বাছরী বলেন, “এই প্রকার (পশমের) ছেঁড়া-ফাটা পোষাকে তাকওয়ার কিছু নেই। তাকওয়া হচ্ছে এমন বিষয় যা হৃদয়ে গ্রথিত হয়; আর কর্মের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন হয়।”
ওমর বিন আবদুল আযীয বলেন: “দিনে ছিয়াম আদায় এবং রাতে নফল ছালাত আদায়ই আল্লাহ্র ভয় নয়; বরং প্রকৃত আল্লাহ্র ভয় হচ্ছে, আল্লাহ্ যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ করা, তিনি যা ফরয করেছেন তা বাস-বায়ন করা। কেউ যদি এর অতিরিক্ত কিছু করতে পারে তবে সোনায় সোহাগা।”
প্রকাশ্যে পাপের কাজ পরিত্যাগ করার নাম তাকওয়া নয়; বরং গোপন-প্রকাশ্য সবধরনের পাপের কাজ পরিত্যাগ করার নামই আসল তাকওয়া। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তুমি যেখানেই থাকনা কেন আল্লাহকে ভয় কর।” [তিরমিযী]
কোন ব্যক্তির তাকওয়া আছে কি না তা তিনটি বিষয় দ্বারা সুস্পষ্ট হয়:
ক) যা এখনো অর্জিত হয়নি সে বিষয়ে আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখা।
খ) যা পাওয়া গেছে তাতে পূর্ণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করা এবং
গ) যা পাওয়া যায়নি তার প্রতি পূর্ণ।
ছাওরী বলেন, প্রকৃত তাকওয়া হল- “পাপ ছোট হোক আর বড় হোক তা পরিত্যাগ কর; এটাই আসল তাকওয়া। সতর্ক হও সেই ব্যক্তির ন্যায় যে কাঁটা বিছানো পথে সাবধানতার সাথে চলে।”
পাপ ছোট তাই তাকে তুচ্ছ মনে কর না; কেননা ছোট ছোট কঙ্কর দ্বারাই গঠিত হয়েছে বিশাল পাহাড়।
তাক্বওয়াশীল হওয়ার উপায়:
ফরয-নফল সবধরনের ইবাদত অধিকহারে করা। আল্লাহ্ বলেন: “হে লোক সকল তোমরা ইবাদত কর তোমাদের রবের যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তোমরা তাক্বওয়াবান হতে পার।” [সূরা বাক্বারা- ২১]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা‘যীম করা, তাঁর সুন্নতকে বাস্তবায়ন করা, তা প্রচার-প্রসারের জন্য প্রচেষ্টা চালানো, শুধু তাঁর নির্ধারিত পদ্ধতিতেই আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর নৈকট্য কামনা করা। তাঁর দ্বীনের মাঝে কোন বিদআতের অনুপ্রবেশ না ঘটানো। আর সেই সাথে যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকা। যেমনটি ত্বলক বিন হাবীব বলেন, ‘তাকওয়া হল- তুমি আল্লাহ্র আনুগত্যের কাজ করবে তাঁর নির্দেশিত পথে এবং আশা করবে আল্লাহ্র প্রতিদানের। তুমি আল্লাহ্র নাফরমানি ছেড়ে দিবে তাঁর নূরের ভিত্তিতে এবং আল্লাহ্র শাস্তির ভয় করবে।
তাকওয়ার ফলাফল:
আল্লাহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনে তাঁর বান্দাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সুসংবাদ দিয়েছেন। নির্ধারণ করেছেন তাকওয়ার জন্য সুন্দর ফলাফল এবং সম্মান জনক পরিণতি। তম্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
১) দুনিয়া এবং আখেরাতে আনন্দের সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন: “যারা ঈমান এনেছে এবং তাওক্বওয়া অর্জন করেছে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়া এবং আখেরাতে।” [সূরা ইউনুস- ৬৩-৬৪]
২) সাহায্য ও সহযোগিতার সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাদের সাথে থাকেন, যারা আল্লাহ্কে ভয় করে এবং যারা সৎকর্ম করে।” [সূরা নাহাল- ১২৮]
৩) জ্ঞানার্জনের সুযোগ লাভ: আল্লাহ্ বলেন: “এবং আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ্ তোমাদেরকে জ্ঞান দান করবেন।” [সূরা বাক্বারা ২৮২]
৪) সত্যের পথ পাওয়া এবং হক্ব ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য বুঝতে পারা: আল্লাহ্ বলেন: “তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে; তবে তিনি তোমাদেরকে (হক ও বাতিলের মাঝে) পার্থক্য করার তাওফীক দিবেন।” [সূরা আনফাল- ২৯]
৫) গুনাহ মাফ এবং বিরাট প্রতিদানের সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, তিনি তার পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং বিরাট প্রতিদানে ভূষিত করবেন।” [সূরা ত্বালাক- ৫]
তিনি আরও বলেন: “আর তোমরা যদি নিজেদেরকে সংশোধন করে নাও এবং আল্লাহকে ভয় কর, তবে তো আল্লাহ্ ক্ষমাশীল দয়াময়।” [সূরা নিসা- ১২৯]
৬) প্রত্যেক বিষয়ে সহজতা লাভ: আল্লাহ্ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার প্রতিটি বিষয়কে সহজ করে দিবেন।” [সূরা ত্বালাক- ৪]
৭) দুশ্চিন্তা ও বিপদ থেকে মুক্তি লাভ: আল্লাহ্ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন।” [সূরা ত্বালাক- ২]
৮) কষ্ট ও পরিশ্রম ছাড়া জীবিকা লাভ: আল্লাহ্ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তিনি তার জন্য মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন। এবং এমনভাবে রিজিক দান করবেন, যা সে ভাবতেও পারে নি।” [সূরা ত্বালাক- ২-৩]
৯) আযাব এবং শাস্তি থেকে মুক্তি: আল্লাহ্ বলেন: “যারা তাকওয়া অর্জন করবে, তাদেরকে আমি মুক্তি দিব।” [সূরা মারইয়াম- ৭২]
১০) সম্মানিত হওয়ার সনদ: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্র নিকট সর্বাধিক সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে বেশী ভয় করে।” [সূরা হুজুরাত- ১৩]
রাসূল (সাঃ)কে প্রশ্ন করা হল, মানুষের মাঝে কে সবচাইতে বেশী সম্মানিত? তিনি বললেন, তাদের মাঝে আল্লাহকে যে বেশী ভয় করে…।” [বুখারী ও মুসলিম]
১১) ভালবাসার সুসংবাদ: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ পরহেযগারদের ভালবাসেন।” [সূরা তওবা- ৪]
১২) প্রতিদান পাওয়া এবং আমল বিনষ্ট না হওয়া: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করবে এবং ধৈর্য অবলম্বন করবে; নি:সন্দেহে আল্লাহ্ সৎকর্ম শীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করবেন না।” [সূরা ইউসুফ- ৯০]
১৩) আমল কবুল হওয়া এবং তা প্রত্যাখ্যান না হওয়া: আল্লাহ্ বলেন: “আল্লাহ্ তো তাক্বওয়াবানদের থেকেই কবুল করেন।” [সূরা মায়েদা ২৭]
১৪) সফলকাম হওয়া: আল্লাহ্ বলেন: “তোমরা আল্লাহ কে ভয় কর, তবে তোমরা সফলকাম হবে।” [সূরা বাক্বারা- ১৮৯]
১৫) জান্নাত লাভে কামিয়াবী: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় মুত্তাকীরা জান্নাত এবং ঝর্ণাধারার মধ্যে থাকবে।” [সূরা যারিয়াত- ১৫]
রাসূল (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হল, সর্বাধিক কোন জিনিস মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, “আল্লাহ্ ভীতি এবং সচ্চরিত্র।” [তিরমিযী]
১৬) নিরাপত্তা এবং সুউচ্চ মর্যাদা: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় মুত্তাক্বীগণ সুউচ্চ নিরাপদ স্থানে থাকবে।” [সূরা দুখান- ৫১]
১৭) সৃষ্টিকুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ: আল্লাহ্ বলেন: “এবং যারা তাকওয়া অর্জন করেছে তারা কিয়ামত দিবসে তাদের (কাফেরদের) উপরে অবস্থান করবে।” [সূরা বাক্বারা- ২১২]
১৮) কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ এবং তাঁর সাথে সাক্ষাত ও দর্শন লাভের সৌভাগ্য অর্জন করা: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্ ভীরুগণ জান্নাত এবং নহরের মধ্যে থাকবে। সত্য ও সন্তোষটির আবাস স্থলে পরাক্রমশালী বাদশাহর দরবারে।” [সূরা ক্বামার ৫৪/৫৫]
১৯) অন্তর বিশুদ্ধ হওয়া: আল্লাহ্ বলেন: “সেদিন (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ ভীরুগণ ব্যতীত (দুনিয়ার) বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে।” [সূরা যুখরুফ- ৬৭]
২০) দ্রুত সতর্ক হওয়া: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় যারা তাকওয়া অর্জন করেছে- যখন তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটে ততক্ষণাৎ তারা (সতর্ক হয়ে আল্লাহ্কে) স্মরণ করে, তারপর তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়।” [সূরা আ’রাফ- ২০১]
২১) সুমহান প্রতিদান: আল্লাহ্ বলেন: “তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে এবং তাকওয়া অর্জন করে, তাদের জন্য রয়েছে সুমহান প্রতিদান।” [সূরা আল ইমরান- ১৭২]
২২) চিন্তা-ভাবনা এবং গবেষণা করা: আল্লাহ্ বলেন: “নিশ্চয় রাত-দিনের পরিবর্তন এবং আসমান ও জমিনের মধ্যে আল্লাহ্ যা সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন জাতির জন্য যারা আল্লাহ্কে ভয় করে।” [সূরা ইউনুস- ৬]
২৩) জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ: আল্লাহ্ বলেন: “এবং অচিরেই জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবে আল্লাহ্ ভীরুগণ।” [সূরা লাইল- ১৭]
২৪) অফুরান্ত কল্যাণ লাভে ধন্য হওয়া: আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর; কেননা সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ পাথেয় হল তাকওয়া বা আল্লাহ্ ভীতি।” [সূরা বাক্বারা- ১৯৭]
২৫) পরিণতি সুন্দর হওয়া: আল্লাহ্ বলেন, “অতএব তুমি ধৈর্য অবলম্বন কর, নিশ্চয় শেষ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্য।” [সূরা হূদ- ৪৯]
২৬) আল্লাহ্র বন্ধুত্ব লাভ: আল্লাহ্ বলেন, “আর আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বন্ধু।” [সূরা জাছিয়া- ১৯]
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
SubhanALLAH
allhamdulilah
Subhanallah
সুবাহান আল্লাহ
subhanaallah
Subhanallah
subahanallah
সুবহান আল্লাহ্
সুবাহান আল্লাহ্। আমরা যেন সেই পথে চলতে পারি, যে পথে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) চলেছেন। হে আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে আপনার হেফাজতে রাখুন। অামিন।
Subhanallah
subahanallah
subahanallah
আমি আল্লাহকে ভয় করি|
Mohan Allah Aponi amader Hedahet koron.
Subahanallah
Subhan Allah
All-hamdu lillah
Subhan allah.
Yes
Subhan allah
subahanallah!
” Subhanallah “
allaha amadar protakka takoa orgonar tofiq dayn ameen
like
AMEEN
Subhan ALLAH ALLAHU AKBAR Ahamdulillah Ameen
আল্লাহ্ হু আকবার
Subhanallah…
সুবাহান আল্লাহ্
Subhanallah.
subhanALLAH
সুবাহান আল্লাহ
amin
MassaAllah valo post
Ami 5 bocorpor comment korlam……. amare kew nobel porosker deooo………..