ধূমপানের বিপদ ও তার প্রতিকার

0
2573

লেখকঃ মাফিয়া হক মুনা | সম্পাদনা: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ধূমপানের বিপদ ও তার প্রতিকার

ধূমপান সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি মহাবিপদ। তাই আজ গোটা বিশ্ব জুড়ে  ধূমপানের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ ধূমপানের শিকার হয়ে দিনের পর দিন সুন্দর স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা পুড়িয়ে ছাই করে ফেলছে। লক্ষ লক্ষ লোক ধূমপান জনিত ক্যান্সার সহ অনান্য রোগে মারা যাচ্ছে। কেউ কেউ বিভিন্ন ঘাতক রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অসহায় অবস্থায় অতি কষ্টে মানব সমাজে বেঁচে আছে।

জীবনী শক্তি, মস্তিস্ক, ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হতে শুরু করে ধূমপান বিশ্ব মানবের অসংখ্য ও অগনিত ক্ষতি করে থাকে। শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, আর্থিক এবং ইহলৌকিক ও পরলৌকিক তথা ধূমপান দ্বারা মানুষের সব রকম ক্ষতি হচ্ছে। ধূমপায়ী ক্ষতি করে নিজের, পরিবারবর্গের, সাথী-দর্শকের, সহযাত্রী-সহপাঠীর ও সঙ্গে অবস্থানকারী সকল মানুষের। পার্শ্বস্থ নিষ্পাপ শিশুর, গর্ভস্থ শিশুর ও ভ্রুনের, বীর্যের ভেতরের শুক্রকীটের, ভবিষ্যৎ বংশধরের এবং দেশ ও জাতির। তাই সমগ্র পৃথিবীর সর্বস্তরের জ্ঞাণীগন মানুষকে ধূমপানের করাল গ্রাস হতে বাচাবার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রিয় মুসলিম ভাইসকল:

এ প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে আমরা আপনাদের খেদমতে এ ক্ষুদ্র পরিসরে ধূমপানের ভয়াবহ ক্ষতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পেশ করছি:

স্বাস্থ্যগত ক্ষতি:

ধূমপানের প্রতি টানে মানুষের দেহে যতটুকু ধোঁয়া প্রবেশ করে তাতে রয়েছে দেহের জন্য কতোগুলো বিষাক্ত পদার্থ। এগুলোর প্রভাবে দেহের প্রতিটি তন্ত্রের কার্যক্ষমতা ক্রমশঃ বিপন্ন হয়ে পড়তে থাকে এবং এর ফলে জন্ম নেয় হাজারো রোগ। মানব দেহে এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যেখানে ধূমপান কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। ধূমপানের প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে:

১. অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীরা তেমন সু-স্বাস্থের অধিকারী হয় না এবং আয়ু বেশী পায় না।
২. ধূমপান পঙ্গু ও অসমর্থ করে দেয় এমন কিছু রোগের জন্য দায়ী।
৩. ধূমপানের ফলে মুখের ক্যান্সার সহ সব ধরনের ক্যান্সার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।
৪. ধূমপানের অভ্যাস থেকে ব্রংকাইটিস, এম.কাই.সেমা, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ, স্ট্রোক, মস্তিস্কের রক্তনালী ছিড়ে যওয়া, বার্জাস ডিজিজ, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে।
৫. হজমশক্তি বিনাশ, কিডনী, মুত্রাশয়, চোখ ও প্রজননতন্ত্রের গুরুতর গোলযোগ ও যৌন দুর্বলতার মূলে রয়েছে তামাকের বিষাক্ত ছোবল।
৬. গর্ভাবস্থায় ধূমপান স্বল্প ওজনের শিশু জন্মদান ও সদ্যজাত শিশুর মৃত্যুহার বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
৭. ধান ও কৃষিকাজের মত পেশায় এবং ধোঁয়া নির্গত হয় এমন সব কারখানায় যারা কাজে নিয়োজিত, ধূমপান তাদের অকপেশনাল পালমোনারী দ্রুত ঘটাতে বা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

পরিবেশগত ক্ষতিঃ

১. বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া অফিস-আদালত, দোকান-পাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, রাস্তাঘাট এবং বাড়ীঘরের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দুষণ করে। এতে সার্বিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রোগ বিস্তার ঘটে ব্যাপক হারে।
২. ধূমপানে যেমন পরিবেশ নষ্ট হয় ঘরে, তেমনি গর্ভের পরিবেশও নষ্ট হয়ে ক্ষতি করে গর্ভস্থ শিশুর।

নৈতিক ও সামাজিক ক্ষতিঃ

ধূমপানের সাথে সামাজিক অবক্ষয়ের সংযোগ আছে। নেশা ও নৈতিকতার দ্বন্দ আছে। এক সাথে দুটো চলতে পারে না। নেশার দাসত্ব এক অর্থে মানবিক পরাজয়।

১. বিড়ি সিগারেট একটি নেশা জনিত বাড়তি খরচ। এ খরচ যোগাতে ব্যক্তির পদস্খলন আরম্ভ হয়।
২. প্রশাসনের বিভিন্ন পদে যারা ধূমপান করেন তাদেরকে সিগারেটের মাধ্যমে প্রভাবিত করা খুব সহজ। আপ্যায়নের নামে সিগারেট অনেক সময় উৎকোচের (ঘুষের) পর্যায়ে পড়ে।
৩. শিক্ষক ও ডাক্তারদের জন্য ধূমপান একটি মারাত্মক অবক্ষয়। বয়স্ক ও গুরুজনরা ধূমপান করলে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়। তাদের প্রতি আর শ্রদ্ধাবোধ থাকে না, এতে এক পর্যায়ে পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা ধ্বসে পড়ে।
৪. হুক্কা, শিশা যেমন মূখে মূখে ঘুরে, একই ভাবে বিড়ি সিগারেটও মূখে মূখে জ্বলে। ফলে একজনের মূখের জীবানু অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে সামাজিকভাবে রোগ বিস্তার ঘটায়।
৫. ধূমপানের ফলে অনেকের মূখেই বিশ্রী ও উৎকট দূর্গন্ধ হয়। যা কিনা সভা সমিতি, মসজিদ-মাদ্রাসা, অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই ঘৃণা ও বিরক্তির উদ্রেক করে। অনেক সময় দেখা যায় শিশু ও নারীরা এ দূর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে ধূমপায়ীকে এড়িয়ে চলে এবং পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। ধুমপায়ীর গাড়ী বা ট্যাক্সিক্যাবে উঠে বিড়ি-সিগারেটের গন্ধে অনেকের মাথাব্যথাও শুরু হয়। অনেকে বমি করেও দিয়েছে এমন হাজারো নজির আছে। ধুমপানকারীর টেক্সীতে যাত্রীরা উঠতে চায় না, আর সে ইচ্ছা করেই সবার ঘৃণার পাত্র হচ্ছে।
৬. অনেক পরিবারের কর্তার বিড়ি সিগারেট পান করার বদঅভ্যাস রয়েছে। এতে তার বিড়ি-সিগারেটের দূর্গন্ধে তার শিশু, সন্তান ও নিজ স্ত্রীও তার চাইতেও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ও রোগগ্রস্ত হয়।
৭. বিড়ি সিগারেট নেশার মতো, যারা এটা খায়, তাদের ভাত-তরকারী না খেলেও চলে, কিন্তু বিড়ি-সিগারেট না খেলে তাদের চলে না। এটা তাদের নেশার মতো হয়ে গেছে। তাদের হাতে টাকা-পয়সা না থাকলেও তারা হাওলাত করে এ নেশা মেটাবেই মেটাবে। অনেক বিড়ি সিগারেট পানকারী টাকা হাওলাত নিয়ে আর দেয় না. এজন্য সমাজে মানুষে মানুষে মনোমালিন্য ও দূরত্ব বাড়ে। দেখুন এবার ধূমপান কতো ক্ষতিকারক!!! আরব দেশে আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কোনো কোনো টেক্সী যাত্রীর কাছে ভাড়া না থাকলে, সে তার কাছে পাওনা ভাড়ার পরিবর্তে ড্রাইভারকে বিড়ি – সিগারেট দিয়ে দেয়। এটা খুবই খারাপ কাজ।
৮. একজন ধুমপানকারী ব্যক্তি অশালীন, বদঅভ্যাসওয়ালা, হীন ব্যক্তিও বটে। সে মানুষকে সম্মান না দেখিয়ে বরং মানুষের অধিকারকে খর্ব করে, মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করে ও অবমূল্যায়ন করে মানুষের সামনে হঠাৎ বিড়ি- সিগারেট জ্বালিয়ে থাকে, তার মধ্যে সব সময় একটা ‘ডেম কেয়ার’ ভাব থাকে। এরা সত্যিকারভাবেই অহংকারী ও মানুষকে কষ্ট দিয়ে থাকে। অহংকার করা আর মানুষকে কষ্ট দেওয়া সকল ধর্মেই নিষিদ্ধ। আর যারা অহংকারী এবং মানুষকে কষ্ট দেয় তাদেরকে কেউই ভালোবাসে না।

বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে শুধু তামাকজনিত স্বাস্থ্য ক্ষতি থেকেই নয়, তামাক ব্যবহারজনিত সামাজিক, পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকেও রক্ষা করতে তামাকের ওপর কর বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা। (দৈনিক আমারদেশ ১৯/৫/২০১৪) তারা আরো বলেন, প্রতিবছর নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না তামাকজাত পণ্যের দাম।

আর্থিক ক্ষতিঃ

ধূমপানের ফলে কষ্টার্জিত অর্থের বিরাট অপচয় হয়। আল্লাহর দেওয়া আমানত আগুনে পুড়িয়ে শেষ করা হয়।

১. প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা এ ক্ষতিকর খাতে ব্যয় হচ্ছে।
২. ধূমপানের ফলে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় কত মানুষ সর্বহারা হচ্ছে।
৩. ধূমপান একটি অগ্নিকাণ্ডের মতো, যে অগ্নিকাণ্ডে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও আল্লাহর দেওয়া মানুষের অসংখ্য হার্ট (heart) ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

আমাদের বাংলাদেশে প্রতি বছর বিড়ি-সিগারেটের পেছনে খরচ প্রায় ২৯১২ কোটি টাকা। বার্ষিক এ খরচের টাকা দিয়ে ৪৮৫ কোটি ডিম বা ২৯ কোটি এক কেজি ওজনের মুরগি বা ২৯ লাখ গরু বা ১৪ লাখ টন চাল কেনা সম্ভব বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। (সূত্র: দৈনিক আমারদেশ, ১৯/৫/২০১৪)

ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপানঃ

ধূমপান মানব সমাজের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধন করে। তাই নিঃসন্দেহে ইসলামের দৃষ্টিতে তা হারাম। এই প্রসঙ্গে বর্তমানে যুগের বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ সাউদী আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ডের প্রধান মুফতি আল্লামা শেখ ইবন বায বলেছেন: ‘‘ধূমপান হারাম, যেহেতু তা অপবিত্র ও নিকৃষ্ট জিনিস এবং অসংখ্য ক্ষতির কারণ।’’ আল্লাহ্ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য শুধু পবিত্র পানাহার হালাল করেছেন। আর তাদের উপর অপবিত্র জিনিস হারাম ঘোষণা করেছেন।

পবিত্র কুরআনে আছে: ‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, কোন জিনিস তাদের উপর হালাল করা হয়েছে? আপনি বলুন, তোমাদের জন্য পবিত্র জিনিস গুলোই শুধু হালাল করা হয়েছে।’’ [আল-মায়েদা: ৪]

আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা আল-আ‘রাফে তার নবী মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: ‘‘তিনি তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেন আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করেন এবং তাদের জন্য সর্বপ্রকার পবিত্র জিনিস হালাল করেন ও তাদের উপর সর্বপ্রকার অপবিত্র জিনিস হারাম করেন।’’ [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৫৭]

সকল প্রকারের ধূমপান কখনই পবিত্র জিনিসের অর্ন্তভুক্ত নয়। বরং তা মারাত্মক ক্ষতিকর ও অপবিত্র জিনিস। তাই ধূমপানের ব্যবসাও মাদক দ্রব্যের ব্যবসার মতো নাজায়েয। অতএব, যারা ধূমপান করে ও ধূমপানের ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের জন্য ওয়াজিব দ্রুত তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা এবং অতীত কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হওয়া ও ভবিষ্যতে এ কাজ না করার অঙ্গীকার করা। আর যে ব্যক্তি সত্যিকারভাবে তওবা করে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তওবা কবুল করেন। যেমন: আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন: ‘‘হে মুমিন বান্দারা! তোমরা প্রত্যেকে আল্লাহর নিকট তওবা কর, নিশ্চয়ই তোমরা সফলকাম হবে।’’ আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন: ‘‘এবং নিশ্চয়ই  আমি ক্ষমাশীল ঐ ব্যক্তির জন্য যে তওবা করে ও ঈমান আনে এবং নেক ‘আমল করে অতঃপর সত্য সঠিক পথ অবলম্বন করে।’’ [ত্বাহা: ৮২]

আজ মুসলিম জাহানের ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ মত হলো, ‘‘ধূমপান হারাম, এমনকি তা ক্রয় বিক্রয়ের জন্য দোকান ভাড়া দেওয়াও হারাম।’’ কোনো হারাম কাজের সহযোগিতাও হারাম। ধূমপান হারাম হওয়ার আরেকটা বড় দলীল হলো, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: ‘‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’’ [আল-বাকারা: ১৯৫]

ধূমপায়ী যেমন নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তেমনি সে ধীরে ধীরে নিজের জীবনী শক্তি নষ্ট করে আত্মহত্যার মত অপরাধ করছে। অর্থের অপচয় বা অর্থ নষ্ট ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: ‘‘নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই।’’ [ইসরা: ২৭] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’’ [আল-আ‘রাফ: ৩১]

ধূমপান কেবল অপচয় নয়, সম্পূর্ণ ক্ষতিকর কাজে অর্থ নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখে দূর্গন্ধ হয় এমন সবজি বা কাচা পেয়াজ, রসুন খেয়ে মসজিদে আসতে নিষেধ করেছেন, হাদীসে আছে: “যে ব্যক্তি পিয়াজ, রসুন এবং পিয়াজের মতো গন্ধ হয় এমন কোনো সবজী খাবে, সে  যেন আমাদের মসজিদের ধারে কাছেও না আসে, কেননা; মানুষ যে খারাপ গন্ধ দ্বারা  কষ্ট পায়, ফিরিস্তারাও তদ্রূপ কষ্ট পায়।” (সাহীহ মুসলিম: ১/৩৯৫)

অন্য হাদীসে আছে, ‘‘যে কেউ আল্লাহ্ তা‘আলা ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’’ (বুখারী: ৭/২৬) আরেক হাদীসে আছে, ‘‘ঐ লোক প্রকৃত মুসলিম, যার মুখ ও হাত হতে অন্য মুসলিম নিরাপদে আছে।’’ (বুখারী: ১/১১) আর ধূমপান দ্বারা মুসলিমদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়, নিরপরাধ কোনো মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া হারাম

আল-কুরআনে রয়েছে: “কোনো মুমিন পুরুষ-নারী কোনো অপরাধ না করা সত্বেও যারা তাদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট গুনাহের বোঝা বহন করে।” [আল-আহযাব: ৫৮] বিড়ি- সিগারেটের ধোঁয়া দ্বারা কষ্ট দেওয়াও এমন মিথ্যা অপবাদ এবং একটি স্পষ্ট গুনাহ। জনৈক ব্যক্তি রাস্তার মধ্যে পতিত একটি গাছ কেটে মানুষের কষ্ট দূর করে দেওয়ার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছিল। (আল্লাহু আকবার) (দ্র: সহীহ মুসলিম: ৪/২০২১)।

তাহলে বলুন ধূমপানের অবস্থা কি? বলা হয়: কয়লার কালি ধুলেও ময়লা যায় না। একবার ধূমপান করলে যতই মুখ পরিষ্কার করেন তা সহজে দূর হয় না। এমনকি ধূমপায়ীদের সারা শরীর ও কাপড় পর্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। অধূমপায়ীরা তার অত্যাচার থেকে কমই রেহাই পায়। তার আশেপাশে কিছুসময় থাকলে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কারণে আপনাকেও সবাই ধুমপায়ী বলবে। অতএব আসুন ঐক্যবদ্ধ ভাবে আওয়াজ তুলি—

  • ‘‘ধূমপায়ী, অধূমপায়ী ভাই ভাই, সবাই ধূমপানের বিদায় চাই।’’
  • ‘‘আর করব না ধূমপান, করব এবার দুধপান।’’
  • ‘‘মদপান যেরূপ, ধূমপান সেরূপ।’’
  • ‘‘মদ্যপানে ক্ষতি যা, ধূমপানে ক্ষতি তা।’’
  • ‘‘করব না আর বিষপান, করবই দূর ধূমপান।’’

ধূমপান ছাড়তে সহযোগী বিষয়সমূহ

১. ধূমপান হারাম, তাই ছেড়ে দিতে নিয়্যাত করা।
২. ধূমপানের ভয়াবহ ক্ষতিসমূহ ভালোভাবে বুঝা ও পরিবারের সকল সদস্যকে এ ব্যাপারে অবহিত করানো।
৩. ধূমপান ছাড়তে দৃঢ় অঙ্গীকার করা ও ধূমপায়ীদের সাহচর্য ছেড়ে দেওয়া।
৪. বেশী বেশী কুরআন বুঝে পড়ার চেষ্টা করা ও বেশী বেশী নেক আমল করা।
৫. সবসময় মেসওয়াক ব্যবহার করার চেষ্টা করা।
৬. প্রয়োজনে ধূমপান প্রতিরোধ ক্লিনিকের সহযোগিতা নেওয়া।
৭. সর্বশেষে ভালোভাবে বুঝে নেওয়া দরকার যে, ধূমপান ছেড়ে দিয়ে আবার শুরু করলে বড় বিপদ হবে। বরং ছেড়ে দেয়ার পর একটু খারাপ লাগলেও তা তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

সা‘উদী আরবেও ধুমপায়ী কম নেই, অনেক আরবী ভাইয়ের গাড়ীতে উঠার পর সূন্দরভাবে বিড়ি- সিগারেট ফেলে দেওয়ার নসীহত করলে তারা সাথে সাথে তা ফেলে দেয়, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমাদের দেশের কাউকেও যদি সূন্দর নসিহত করা হয়, সে সিগারেট তো পেলবেই-না বরং আপনাকে ভুল বুঝবে, খারাপ কথা বলবে। আপনি সবর করুন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পালন করার তাওফিক দিন।

আমিন

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন