যে রোগী দাঁড়ালে বসতে পারেন না, বসলে দাঁড়াতে পারেন না তার নামায পড়ার পদ্ধতি

0
1802

লেখক: শাইখ মোহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ

প্রশ্ন:

যে রোগী দাঁড়ালে বসতে পারেন না, বসলে দাঁড়াতে পারেন না তিনি কিভাবে নামায আদায় করবেন? তিনি কি তার সম্পূর্ণ নামাযে বসে থাকবেন; নাকি সম্পূর্ণ নামাযে দাঁড়িয়ে থাকবেন?

উত্তর:

এক:

আলহামদু লিল্লাহ। নামাযের ওয়াজিব ও রুকনসমূহের ক্ষেত্রে ফিকহী সূত্র হল: নামাযী ব্যক্তি তার সাধ্যানুযায়ী এগুলো পালন করবেন; আর যা পালন করতে তিনি অক্ষম সেটা তার জন্য মওকুফ হবে।

এর ভিত্তিতে: যে নামাযী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায শুরু করতে সক্ষম তাহলে সেটাই তার উপর আবশ্যক। এরপর তিনি সক্ষম হলে পরিপূর্ণ পদ্ধতিতে রুকু করবেন; যদি না পারেন তাহলে তার সাধ্যানুযায়ী ঝুঁকবেন। যদি তিনি মাটি নুয়ে পড়ে সেজদা দিতে সক্ষম হন তাহলে সেটাই তার উপরে ওয়াজিব। যদি তিনি সেটা না পারেন তাহলে (মাটিতে বা চেয়ারে) বসে সেজদার জন্য মাথা নোয়াবেন।

যদি তিনি পুনরায় আর দাঁড়াতে না পারেন সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট নামায তিনি বসে বসেই আদায় করবেন। রুকুর জন্য মাথা নোয়াবেন এবং সক্ষম হলে মাটির উপর সেজদা দিবেন। সক্ষম না হলে সেজদার জন্য মাথা নোয়াবেন এবং সেজদার জন্য রুকুর চেয়ে বেশি মাথা নোয়াবেন।

এভাবে করলে তিনি আল্লাহ্‌ তাআলার এ বাণীর অনুসরণ করলেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় কর।” [সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬] এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীর অনুসরণ করলেন: “আমি যখন তোমাদেরকে কোন কিছু নির্দেশ করি, তখন সাধ্যানুযায়ী সেটা পালন কর।” [সহিহ বুখারী (৭২৮৮) ও সহিহ মুসলিম (১৩৩৭)]

মালেকি মাযহাবের আলেম ‘খলিল’ রচিত “মুখতাসার” গ্রন্থে এসেছে—“যদি নামাযী ব্যক্তি সব করতে সক্ষম হয়; কিন্তু বসলে আর উঠতে পারে না: তাহলে এক রাকাত পূর্ণ করবে; এরপর বসে যাবে।”

গ্রন্থটির ব্যাখ্যাকার ‘খিরাশি’ তার ব্যাখ্যায় বলেন: “অর্থাৎ যদি নামাযী ব্যক্তি নামাযের কিয়াম বা দাঁড়ানো, ক্বিরাত, রুকু, সেজদা, রুকু-সেজদা থেকে উঠা ও বসা ইত্যাদি সকল রুকন আদায়ে সক্ষম হয়; কিন্তু বসলে আর দাঁড়ানোর জন্য উঠতে পারে না: তাহলে এমন ব্যক্তি প্রথম রাকাত পরিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আদায় করবে এবং অবশিষ্ট নামায বসে বসে আদায় করবে। লাখমি, তিউনিসি ও ইবনে ইউনুস এ মতের প্রতি ঝুঁকেছেন।

কারো কারো মতে, গোটা নামায দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইশারা করে আদায় করবে; তবে শেষ রাকাত ছাড়া; শেষ রাকাতে তিনি রুকু-সেজদা করবেন।”

দুই:

আর যদি নামাযী ব্যক্তি দাঁড়াতে ও শুয়ে থাকতে সক্ষম হন; কিন্তু বসতে অক্ষম হন; তাহলে তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায পড়বেন এবং ইশারা করে রুকু-সেজদা করবেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাশাহুদ পড়বেন ও সালাম ফিরাবেন।

শাফেয়ি মাযহাবের আলেম যাকারিয়া আল-আনসারী “আসনাল মাতালিব” গ্রন্থে (১/১৪৬) বলেন: “যে ব্যক্তি কেবল দাঁড়াতে ও শুয়ে থাকতে সক্ষম সে ব্যক্তি বসার পরিবর্তে দাঁড়াবে…। কেননা দাঁড়ানোটা বসার চেয়েও বেশি কিছু। রুকু-সেজদার স্থানে ইশারা করবে। দাঁড়িয়ে তাশাহুদ পড়বে; শুয়ে পড়বে না।”

আল-ইবাদি রচিত ‘তুহফাতুল মুহতাজ’ গ্রন্থের হাশিয়াতে (২/২৩) এসেছে: “যদি কেউ শুধু দাঁড়াতে ও শুয়ে থাকতে সক্ষম হন অর্থাৎ বসতে না পারেন: তিনি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা ওয়াজিব। কেননা দাঁড়ানোটা বসার চেয়েও বেশি কিছু। তিনি সাধ্যানুযায়ী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইশারা করে রুকু-সেজদা আদায় করবেন…। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাশাহুদ ও সালাম আদায় করবেন; শুয়ে আদায় করবেন না।”

আল-খিরাশি আল-মালেকি (১/২৯৭) বলেন: “যে ব্যক্তি নামাযের কিয়াম ছাড়া অন্য সকল রুকন পালনে অক্ষম; কিন্তু কিয়াম পালনে সক্ষম তার কর্তব্য হল: সে তার গোটা নামায দাঁড়িয়ে থেকে আদায় করবেন। সেজদার জন্য রুকুর চেয়ে নীচু হয়ে ইশারা করবেন।”

আর যদি কেউ দাঁড়াতে অক্ষম হয় তাহলে সে ব্যক্তি বসে বসে নামায আদায় করবেন, রুকু-সেজদা ইশারা করে আদায় করবেন। যদি মাটির উপর সেজদা দিতে সক্ষম হয় তাহলে মাটির উপর সেজদা দেওয়াই তার উপর ফরয।

ইবনে কুদামা তাঁর “আল-মুগনী”  গ্রন্থে (২/৫৭০) বলেন: “আলেমগণ এই মর্মে ইজমা করেছেন যে, যে ব্যক্তি দাঁড়াতে পারে না সে ব্যক্তি বসে বসে নামায আদায় করবেন।”

মালেকি মাযহাবের ইমাম “আদ-দুসুকি” এর হাশিয়াতে (২/৪৭৫) এসেছে: “দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তি বসে বসে নামায আদায় করবেন; রুকু-সেজদাও বসে বসে করবেন।”

তিন:

যদি কোন অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা এমন হয় যে, সে ব্যক্তিকে হয় গোটা নামায দাঁড়িয়ে পড়তে হয় কিংবা গোটা নামায বসে পড়তে হয়; তাহলে এমন ব্যক্তি গোটা নামায বসে বসে পড়বেন।

এর দলিল হল: শরিয়ত কিছু কিছু অবস্থায় কিয়ামের আমলকে মওকুফ করেছেন; যেমন- নফল নামাযের ক্ষেত্রে, দাঁড়াতে সক্ষম যে ব্যক্তি এমন কোন ইমামের পিছনে নামায পড়ছেন যিনি অসুস্থতার কারনে বসে বসে নামায পড়াচ্ছেন; সে ক্ষেত্রে তিনি কিয়াম বাদ দিয়ে তার ইমামের মত বসে বসে নামায পড়বেন।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: “কিয়ামটা একটি হালকা রুকন; যা সব ধরণের নফল নামাযের ক্ষেত্রে বাদ পড়ে যায় এবং ফরয নামাযেরও কিছু কিছু জায়গায় বাদ পড়ে যায়।” [শারহুল উমদা থেকে (৪/৫১৫)]

যদি দাঁড়ানো ও বসা দুটো সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে তাহলে বসাটা আদায় করা অগ্রগণ্যতা পাবে। বিশেষতঃ সে ব্যক্তি বসার মাধ্যমে নামাযের আরও অন্যান্য রুকন আদায় করতে পারে; যেমন- সেজদা, সেজদার জন্য বসা, দুই সেজদার মাঝখানে বসা এবং তাশাহুদের জন্য বসা। এজন্য বসে নামায পড়া দাঁড়িয়ে নামায পড়ার উপর অগ্রগণ্য পেয়েছে।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন