লেখক: আলী হাসান তৈয়ব | সম্পাদনা: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
মুমিনকে যেসব আমল আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে তন্মধ্যে আল্লাহর যিকিরসমূহ অন্যতম। এ ছোট্ট নিবন্ধে যিকিরের গুরুত্ব এবং যিকিরই যে সহজতম আমল তা তুলে ধরা হয়েছে।
সহজতম আমল যিকির
মুসলিম মাত্রেই মহান আল্লাহর সন্তোষ অর্জনে বহুমাত্রিক আমল-ইবাদত করে থাকি। সালাত, সিয়াম, হজ, যাকাত, কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিয়ে সৃষ্টির সেবা পর্যন্ত আমরা কত ইবাদতই না করি দয়াময় মা‘বুদের রেযামন্দি হাসিলে। এসবের মধ্যে সহজতম ইবাদতের নাম যিকির। যিকিরের চেয়ে অনায়াসলব্ধ কোনো আমল হয় না।
প্রতিটি ইবাদতের জন্য স্থান, কাল, পাত্র ইত্যাদির বিবেচনা রয়েছে। কেবল যিকিরই এমন জগত যার বেলায় এসব নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো অবস্থায় যে কোনো সময় এবং যে কোনো জায়গায় যিকির করতে পারেন। আপনি ঘরে থাকুন বা বাইরে, পাক থাকুন বা নাপাক আর আপনি শোয়া, বসা বা দাঁড়ানো যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন কোনো না কোনো প্রকার যিকির আপনার জন্য বিধিসম্মত। সর্বাবস্থায় আপনি যিকিরের মাধ্যমে জিহ্বাকে সজীব এবং নিজেকে প্রাণবন্ত রাখতে পারেন।
আপনি যখন যানবাহনে বিরক্তিকর সময় কাটান, যখন একেবারে অলস ও অবসর সময় কাটান, যখন বিছানায় ছটফট করেন যন্ত্রণা বা বিরক্তিতে, যখন অযুহীন থাকায় সালাত আদায় বা কুরআন স্পর্শ করতে পারেন না, যখন মাসিক বা প্রসবোত্তর স্রাব হেতু সালাত সম্পাদন বা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন না, যখন আপনার হাত ব্যস্ত কিন্তু মুখ বা মন ব্যস্ত নয়, তখনও আপনি সময়টিকে যিকিরের মতো আমলে কাটিয়ে অর্থবহ করতে পারেন। পরকালের পাথেয় বাড়িয়ে পরম আরাধ্য মহান রবের নৈকট্য লাভ করতে পারেন।
আসলে যিকিরের মতো আমল না করার ক্ষেত্রে কোনো অজুহাতই ধোপে টিকবার মতো নয়। সর্বদা আল্লাহর যিকির করে যেতে হবে। কুরআনে মাজীদে মহান আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তোমরা তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা কর।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪১]
“আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চস্বরে। আর গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ২০৫]
আল্লাহ আরও বলেন, “অতঃপর যখন তোমরা সালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির কাছে সবচেয়ে় উত্তম ও পবিত্র এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী আর তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও শত্রুর মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে় উত্তম? তারা বলল, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ, তিনি বললেন, আল্লাহর যিকির।” [1]
আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“যে ব্যক্তি তার প্রভুর যিকির করে আর যে ব্যক্তি তার প্রভুর যিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হয়েছে জীবিত ও মৃতের ন্যায়।” [2]
সহীহ বুখারীর সর্বশেষ হাদীসটি হয়তো আপনিও শুনেছেন বহুবার। অতি সংক্ষিপ্ত একটি যিকির কিন্তু আল্লাহর বড়ই প্রিয়। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দু’টি বাক্য আল্লাহর কাছে বড় প্রিয়, উচ্চারণে একেবারে সহজ অথচ মীযানে (আখিরাতে নেকির পাল্লায়) অনেক ভারি: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম।” [3]
এমন সহজ ও সংক্ষিপ্ত আমল হবার পরও যদি আমরা আল্লাহর যিকির না করি তবে তা কেবল আল্লাহর ব্যাপারে আমাদের উদাসীনতারই পরিচায়ক। যা একজন মুমিনের ক্ষেত্রে কাম্য হতে পারে না। আমরা শত ব্যস্ততার মধ্যেও অন্তত যিকিরের মতো সহজ আমল চালিয়ে যেতে পারি। যে কোনো অলস সময়, যানজটে বা নির্ঘুম প্রহরে আল্লাহর যিকির অব্যাহত রেখে সময়টিকে স্বর্ণোজ্জ্বল বানাতে পারি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
[1] তিরমিযী, হাদীস নং ৩২৯৯।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪০৭।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৯৪।
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]