এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে ৩১ দিন স্বাওম হলে

22
1668

ফাতওয়া নং – 45545

প্রশ্নঃ 

আমি যদি কোন দেশে স্বাওম পালন  করি এবং রামাদ্বান মাসেই অন্য দেশে ভ্রমণ করি যেখানে রামাদ্বান এক দিন পর শুরু হয়েছে এবং তারা ৩০ দিন স্বাওম পালন  করেছে, তবে কি আমাকে তাদের সাথে স্বিয়াম পালন করতে হবে? যদিও বা আমার ৩১ দিন স্বিয়াম পালন করতে হয়?

উত্তরঃ

সকল প্রশংসা আল্লাহর। যদি কোন ব্যাক্তি এক দেশে রামাদ্বান শুরু করার পর অন্য দেশে যায় যেখানে ‘ঈদুল ফিত্বর এক দিন দেরিতে আসে তাহলে  সে স্বিয়াম পালন চালিয়ে যাবে যতদিন না দ্বিতীয় দেশের লোকেরা স্বিয়াম পালন শেষ করে।

শাইখ ইবনু বায-রাহিমাহুল্লাহ- এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- আমি পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে এসেছি যেখানে হিজরি মাস সউদি আরব এর চেয়ে একদিন দেরিতে শুরু হয়। রামাদ্বান মাসে আমি আমার দেশে যাব। আমি যদি সউদি আরবে স্বিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি তাহলে আমার ৩১ দিন স্বাওম পালন করা হবে। আমাদের স্বিয়ামের ব্যাপারে হুকমটা কি? আমি কতদিন স্বাওম পালন করব?

তিনি উত্তরে বলেন: আপনি যদি সউদি আরব বা অন্য কোন দেশে স্বিয়াম পালন শুরু করেন কিন্তু নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন তাহলে আপনি নিজের দেশের লোকদের সাথেই স্বিয়াম ভঙ্গ করবেন যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়। কারণ নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ “স্বাওম হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে ) স্বাওম পালন কর, আর ‘ঈদুল ফিত্বর হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে ) ইফত্বার কর।”

কিন্তু আপনি যদি তা করতে গিয়ে ২৯ দিনের কম স্বাওম পালন করেন,তাহলে আপনাকে পরে একটি স্বাওম এর ক্বাদ্বা’(কাযা) আদায় করে নিতে হবে কারণ রামাদ্বান মাস ২৯ দিনের কম হতে পারেনা।” [মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনি বায, (১৫/১৫৫)]

শাইখ মুহাম্মাদ সালিহ আল-‘উসাইমীন-রাহিমাহুল্লাহ-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- এক মুসলিম দেশ থেকে যদি আরেক দেশে যাওয়া হয় যেখানে লোকজন প্রথম দেশের চেয়ে এক দিন দেরিতে রামাদ্বান আরম্ভ করেছে, তবে স্বিয়াম পালনের বিধান কি হবে যখন দ্বিতীয় দেশের লোকজনকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বিয়াম পালন করতে হয় ? এবং এর বিপরীত ক্ষেত্রে কী হবে?

তিনি উত্তরে বলেনঃ “যদি কেউ এক মুসলিম দেশ থেকে  আরেক মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেই দেশে রামাদ্বান দেরিতে শুরু হয়, তবে তিনি ওই দেশের লোকরা স্বাওম ভঙ্গ না করা পর্যন্ত স্বিয়াম পালন করে যাবেন কারণ স্বাওম হল সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে ) স্বাওম পালন করে, আর ‘ঈদুল ফিত্বর হল সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে ) ইফত্বার করে আর ‘ঈদুল ’আদ্বহা (আযহা) হল সেদিন যেদিন লোকেরা তোমাদের আযহা (পশু যবেহ) পালন করে।

সে এই কাজ করবে যদিও বা এজন্য তাকে এক বা এর বেশি দিন স্বিয়াম পালন করতে হয়। এটা সেই পরিস্থিতির অনুরূপ যখন সে এমন দেশে যায় যেখানে সূর্যাস্ত দেরীতে হয়, তবে সে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত স্বাওম পালন করবে যদিও বা এর ফলে দুই বা তিন বা ততোধিক ঘণ্টা স্বাভাবিক দিন (চব্বিশ ঘন্টা) থেকে বেড়ে যায়। একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে যদি সে এমন কোন দেশে যায় যেখানে নতুন চাঁদ এখনও দেখা যায়নি, কারণ নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-আমাদেরকে স্বাওম শুরু করতে বা ইফত্বার করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষন না আমরা তা দেখি। তিনি বলেছেনঃ “তা (নতুন চাঁদ) দেখে স্বাওম শুরু কর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে ইফত্বার (স্বাওম শেষ) কর।”

আর বিপরীত অবস্থার ক্ষেত্রে, যখন একজন ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় যেখানে রামাদ্বান মাস প্রথম দেশের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে, তবে তিনি তাদের সাথেই স্বাওম ভঙ্গ করবেন এবং যেসব স্বাওম বাদ পড়েছে সেগুলো পরে ক্বাদ্বা’ (কাযা) আদায় করে নিবেন।যদি একদিন বাদ পরে, তবে একদিনের ক্বাদ্বা’ (কাযা)করবেন, যদি দুই দিন বাদ পড়ে, তবে দুই দিনের;যদি তিনি ২৮ দিন পর স্বাওম ভঙ্গ করেন,তাহলে দুই দিনের ক্বাদ্বা’(কাযা) করবেন যদি উভয় দেশেই মাস ৩০  দিনে শেষ হয়, আর এক দিনের ক্বাদ্বা’ (কাযা) করবেন যদি উভয় দেশে বা যে কোন একটি দেশে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়।” [মাজমূ‘  ফাতাওয়া আশ-শাইখ  ইবনি ‘উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৪)]

ওনার কাছে আরো জানতে চাওয়া হয়েছিল: কেউ হয়ত বলবে যে, কেন আপনি বলছেন যে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বাওম পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্বাওমের ক্বাদ্বা’(কাযা)  পালন করতে হবে?

তিনি উত্তরে বলেন: “দ্বিতীয় ক্ষেত্রে স্বাওমের ক্বাদ্বা’ (কাযা) স্বাওম পালন করতে হবে কারণ মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না আর সে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি স্বাওম পালন করবে কারণ তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব স্বাওম ভঙ্গ কর যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয়নি কারণ নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে আর নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর স্বাওম ভঙ্গ করা বাধ্যতামূলক, শাউওয়াল মাসের প্রথম দিন স্বাওম পালন করা নিষিদ্ধ। আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম স্বাওম পালন করে থাকে তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে। এটা প্রথম অবস্থার চেয়ে ভিন্ন কারণ যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রামাদ্বান চলছে, নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। যেখানে এখনও রামাদ্বান চলছে সেখানে কিভাবে স্বাওম ভঙ্গ করা যেতে পারে?তাই স্বাওম পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মত।” [মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনি ‘উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৫)]

দেখুন, (38101) নং প্রশ্নের উত্তর।

এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

Print Friendly, PDF & Email
Banner Ad


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

22 COMMENTS

  1. সর্বোচ্চ ৩০ এর যায়গায় আবার ৩১ টাও করা যােব না কি? কিন্তু আল্লাহর রসূল স: যে বললেন ৩০ পূর্ণ করতে । তাহলে আপনার টা মানব না রসূল স: এর টা প্রশ্ন রইল।:

  2. ২০১২ সালের রমজানে আমি আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে যাই। আমার সফরের সময়টা এরূপ ছিল যে, ইফতারের কিছু সময় পরই আমার ফ্লাইট এবং বাংলাদেশে ল্যান্ডের সময়টা ছিল ফজরের সময় (সাহরির সময় আমি আকাশে উড্ডয়ন রত ছিলাম) । এই ক্ষেত্রে আমার সফরে ২ রোজা পেছে গিয়াছিল।
    তো এক্ষেত্রে আমার সফরের রোজার কি হুকুম ছিল? দয়া করে জানাবেন। QuranerAlo.com – কুর’আনের আলো

আপনার মন্তব্য লিখুন