আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আত্মসংযম বা রাগ নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা গুন। এটা আমাদের ক্রোধ বা রাগের নানারকম শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে রাখে।আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন: একদিন রসূলাল্লাহ(সা:) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললেন,“হে আল্লাহ্র রসূল, আপনি আমাকে কিছু অসিয়ত করুন।” উত্তরে নবী করিম(সা:) বললেন, “তুমি রাগান্বিত হইয়ো না” সে ব্যাক্তি একথাটি কয়েকবার বলল। তিনি (প্রত্যেকবারই একই কথা) বললেন, “তুমি রাগান্বিত হইয়ো না” [সহীহ বুখারী ৫৬৮৬ ইফা]
নবী করিম(সা:) আরও বলেন: “সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তীতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।” [সহীহ বুখারী ৫৬৮৪ ইফা]
নবী করিম(সা:) এই উপদেশটি দিয়েছিলেন কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কেউ রাগান্বিত হয়ে পড়লে তা তার এবং তার আশেপাশের লোকজনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটা ক্ষতিকর ও বিপদজনক। কিন্তু তিনি এটাও জানতেন যে রাগের মুহূর্তে এই উপদেশটা মেনে চলা এত সহজ নয়, তাই তিনি রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়ও শিখিয়ে দিয়েছেন আমাদেরকে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “হে আল্লাহ্র রসূল(সা:), তাহলে (রাগের) চিকিৎসা কি?” উত্তরে নবী করিম(সা:) বললেন: “কেউ যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে তার উচিত সাথে সাথে বসে পড়া, আর রাগ না কমা পর্যন্ত ওই অবস্থায় থাকা। অন্যথায় তার উচিত শুয়ে পড়া।” [আবু দাউদ ৪৭৬৪]
নবী করিম(সা:) কেন এই উপদেশ দিয়েছেন আমাদের তা সঠিকভাবে বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে আমাদের শরীর ও মনের উপর রাগের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কি কি, আর বসে বা শুয়ে পড়ার সাথে রাগের সম্পর্কটাই বা কি। কেউ যখন রাগান্বিত হয়ে পড়ে তখন তার কিডনির উপরে অবস্থিত অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি থেকে অ্যাড্রেনালিন নামক একপ্রকার হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়। রাগ, ভয়, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া বা এজাতীয় যেকোনো শারীরিক বা মানসিক চাপের কারণে এই হরমোনের নিঃসরণ ঘটতে পারে। আর এই অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি থেকে নরঅ্যাড্রেনালিন নামক আরও একপ্রকার হরমোন নিঃসরণ ঘটে, যদিও কিনা এই হরমোনের প্রধান উৎস হল হৃদপিণ্ডে সিম্পেথেটিক স্নায়ুর প্রান্তভাগে। তবে এই দুই প্রকার হরমোনই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং আর এদের নিঃসরণও ঘটে একই সাথে।
রাগের ফলে আমাদের শরীরে এই দুইপ্রকারের হরমোনই অধিক পরিমাণে নিঃসরিত হতে থাকে। এরমধ্যে একটা হরমোন যেহেতু হৃদপিণ্ড থেকে নিঃসরিত হয়, তাই রাগান্বিত অবস্থায় আমাদের হৃদপিণ্ড অধিকতর সক্রিয় হয়ে পড়ে, ফলে হৃদকম্পন হয়ে উঠে আরও দ্রুত ও অনিয়মিত। শারীরিক বা মানসিক চাপের ফলে হৃদপিণ্ডের এই তীব্র পরিবর্তন আমরা অনেকেই প্রায় সময় অনুভব করতে পারি। তাছাড়াও আমদের রেগে যাবার ফলে হৃদপিণ্ডের অতি-সক্রিয়তার কারণে অতিরিক্ত অক্সিজেনের জোগান দেওয়ার জন্য হৃদপেশীর সংকোচনও বেড়ে যায় কয়েক গুন; ফলে ধমনীতে চাপ পড়ে। আর তাই রাগান্বিত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যঝুকি অনেকগুণ বেড়ে যায়। আর যাদের ধমনীর প্রশস্ততা কম তাদের হার্ট অ্যাটাকের (Cardiac Arrest) সম্ভাবনাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ, কেননা তাদের সংকুচিত ধমনী দিয়ে হঠাৎ অধিক বেগে রক্ত সঞ্চালনের ফলে ধমনীতে সৃষ্ট অতিরিক্ত চাপের কারণে তা ছিঁড়ে যেতে পারে যেকোনো সময়। শরীরে এই দুই হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যাবার ফলে আমাদের রক্তচাপও বৃদ্ধি পায় অনেক, যা ব্লাড প্রেসারের (অধিক বা কম রক্তচাপের) সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য খুবই বিপদজনক ও ক্ষতিকর। তাছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণত রাগ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া হয় কেননা রাগ বা মানসিক চাপের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত অ্যাড্রেনালিন আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা একজন ডায়াবেটিক রোগীর জন্য খুবই বিপদজনক।
এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাগ বা ক্রোধ আমদের পুরো শরীরেই নানারকম মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে। আর একারণেই হয়তো নবী করিম(সা:) বারবার রাগ সংবরণের উপদেশ দিয়েছেন আমাদের। এর গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তিনি পরপর তিনবার বলে উঠেন, “রাগান্বিত হইয়ো না।”
এবার দেখা যাক রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য রসূল(সা:) যে উপায় বলে দিয়েছেন আমাদের তা কতটা বিজ্ঞানসম্মত? চিকিৎসাশাস্ত্রের বিখ্যাত লেখক হ্যারিসন বলেন, “এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, পাঁচ মিনিট শান্তভাবে দাড়িয়ে থাকাকালীন একজন ব্যক্তির রক্তে নরঅ্যাড্রেনালিনের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে। দাড়িয়ে থাকার কারণে অ্যাড্রেনালিনও সামান্য পরিমাণে বেড়ে যায়। কিন্তু বিভিন্ন রকমের মানসিক চাপ রক্তে অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা খুব বাড়িয়ে দিতে পারে।”
সহজ কথায় বলতে হয়, শান্তভাবে পাঁচ মিনিট দাড়িয়ে থাকলেই মানুষের রক্তে নরঅ্যাড্রেনালিনের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়, সাথে সাথে অ্যাড্রেনালিনও সামান্য পরিমাণে বেড়ে যায়। এখানে মনে রাখা উচিত যে অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনটি প্রধানত রাগ বা মানসিক চাপের কারণে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই সুস্পষ্টভাবে এটা প্রতীয়মান হয় যে দাঁড়ানো অবস্থায় রেগে গেলে এই হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ আমাদের শরীরের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। এর থেকেই বুঝা যায় আজ থেকে পনেরোশ বছর আগে যখন বর্তমানের তুলনায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে মানুষের জ্ঞান বা অগ্রগতি ছিল যৎসামান্য তখন রসূল(সা:) এর দিয়ে যাওয়া এই উপদেশ বানীর গুরুত্ব কতটুকু। “কেউ যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে তার উচিত সাথে সাথে বসে পড়া আর রাগ না কমা পর্যন্ত ওই অবস্থায় থাকা। অন্যথায় তার উচিত শুয়ে পড়া।”- এটাই হল সর্বকালের সর্বাধুনিক ডাক্তারি পরামর্শ!
রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার এতসব দুনিয়াবি উপকারিতার পাশাপাশি যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাদেরকে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ইমারানে পরকালে ক্ষমা ও জান্নাতের অধিবাসী করবার ওয়াদা করছেনঃ “যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।” [সূরা আল ইমরান, ৩:১৩৪]
তাছাড়া পূর্বেইতো বলেছি রসূল(সা:)তাকেই প্রকৃত বীর বলেছেন যে নিজের ক্রোধ সংবরণ করতে পারে।
উৎসঃ আল-জূমা ম্যাগাজিন, ভলিউম ১২- ইস্যু ৪- রবিউস সানী ১৪২১ হিজরি
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
এই সম্পর্কে জ্ঞান কম, কিন্তু লেখা ভালো লাগলো। জাজাকাল্লাহ
মাশাআল্লাহ, পড়ে খুবই খুশি হলাম।
Very nice and useful article. May Allah bless us always. Thanks
Fantastic Brother …Its makes me aware of reality …
অসাধারন লেখা…………………।
Samim Khan
It is very nice. Always we are careful on it. All time i remember it.
জাযাকাল্লাহু খায়রান
Amen
Amen
Amin
mashallah…ajke amar onnk rag hoyece ar tai chop kore suye ai status portici, pore onk kicho bojhte parlam r akhn rag o ekto komce