গাধা-চালক থেকে খলিফা

0
675

লেখক: ড. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী | অনুবাদক: রাশেদুল আলম

পৃথিবীতে মানুষ বিচিত্র ধরনের স্বপ্ন দেখে। মানুষের স্বপ্ন যেমন হয় বিভিন্ন ধরনের এবং তা বাস্তবায়নের পন্থাও হয় একেক জনের একেক রকম। একেক জন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে একেক ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিছু মানুষ আছে যারা স্বপ্ন দেখে কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে না নেয় কোনাে উদ্যোগ কিংবা কোনাে পরিকল্পনা। সুতরাং তারা শুধু স্বপ্নই দেখে, তাদের স্বপ্ন কখনাে পূর্ণ হয় না; বাস্তবতার মুখ দেখে না। সুতরাং আমাদের এই লেখা তাদের জন্যে নয়। বরং আমাদের এই লেখা তাদের জন্যে যারা স্বপ্ন দেখে এবং তা বাস্তবায়নেরও ইচ্ছা রাখে।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন: তােমাদের আশার উপর কোনাে ভিত্তি নেই এবং নেই আহলে কিতাবেবর আশার উপর কোনাে ভিত্তি। যে মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোনাে সমর্থক ও সাহায্যকারী পাবে না।‘ [সুরা নিসা, আয়াত : ১২৩]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই আয়াতে বলেন, কাফের-মুশরিকরা শুধু স্বপ্ন আর আশা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, কারণ জান্নাত স্বপ্ন আর আশা দিয়ে পাওয়া যায় না। জান্নাত পেতে হলে ইমান ও আমল উভয়টাই লাগবে। যারা খারাপ আমল করবে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। একটি প্রবাদ আছে, শুধু স্বপ্ন ও আশা মানুষকে সম্মানিত করতে পারে না, শত্রুকে পরাজিত করতে পারে না এবং শিকারী শিকার ধরতে পারে না। মানুষ উড়ন্ত পাখির দিকে তাকিয়ে যতই কল্পনা করুক কেননা সেটা কখনই তার সামনে ভুনা হয়ে আসবে না। কেউ যদি একটা সুন্দর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভাবে, সে এমন একটা বাড়িতে রাত কাটাবে, অতঃপর এর জন্যে কোনাে পরিশ্রম না করে এবং কোনাে পরিকল্পনা গ্রহণ না করে তাহলে এমন বাড়ি সে শুধু কল্পনাতেই দেখতে পাবে; বাস্তবে কখনাে এমন বাড়িতে থাকা হবে না।

সুতরাং যারা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে কষ্ট পরিশ্রম করে এবং এর জন্যে ঝুঁকি নেয়, তারাই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সফল হয় এবং তাদের স্বপ্নই বাস্তবতার মুখ দেখে। এখন এ বিষয়ে একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা বর্ণনা করবাে।

এক গাধা-চালক গাধা চালিয়ে তার উপর মানুষ ও মানুষের পণ্য বহন করতাে। নিজের ও পরিবারের জন্যে উপার্জন করতাে; কিন্তু তার স্বপ্ন ছিলাে অনেক বড়; তার স্বপ্ন ছিলাে দেশের খলিফা হওয়া, দেশের শাসক হওয়া। লােকটি শুধুমাত্র স্বপ্ন দেখেই বসে থাকেনি বরং সে তার স্বপ্ন বাস্তবয়নের জন্যে সঠিক পরিকল্পন গ্রহণ করেছে, অতঃপর সে অনুযায়ী কঠোর পরিশ্রমও করেছে, ফলে সে একদিন তার কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌছতে পেরেছে। সে একদিন সাধারণ গাধা-চালক থেকে জনগণের চালক তথা শাসকের রূপান্তরিত।

অনেক দিন আগের কথা, যখন স্পেন শাসন করতাে মুসলিম শাসকগণ। তখন স্পেনে মুহাম্মদ ইবনে আবু আমের নামের এক লােক ছিলাে। সে ছিলাে গাধা-চালক। গাধা চালিয়েই নিজের ও পরিবারের খরচ উপার্জন করতাে।আবু আমেরের দুই জন বন্ধু ছিলাে, তাদেরও একটি করে গাধা ছিলাে এবং তারাও ছিলাে গাধা-চালক। সারা দিন গাধা চালিয়ে, তাতে মানুষ ও মানুষের পণ্য বহন করে ক্লান্ত হয়ে তিন বন্ধু একত্রে একটি ঘরে ঘুমাতে আসতাে। তারা একই বাড়িতে থাকত এবং একসাথে খাবার খেতাে ও রাতে ঘুমাতাে।

একদিন রাতে বাসায় ফিরে সকলে খাবার খেতে বসলাে এবং গল্পগুজবে মেতে উঠলাে, গল্পের এক ফাঁকে মুহাম্মদ ইবনে আবু আমের তার অপর দুই বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাে, তােমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী: তােমরা ভবিষ্যতে কী হতে চাও?

অর্থাৎ ভবিষ্যৎ নিয়ে তােমরা কী স্বপ্ন দেখাে? তখন তাদের একজন বললাে, আমি চাই আমার পাঁচটি গাধা হবে এবং আমি সবগুলাে ভারা দিয়ে অরাে অনেক বেশি ইনকাম করতে পারবাে এবং এখনকার চেয়ে আরাে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতে পারবাে। অপর জন বললাে, আমার গাধা চালাতে ভাল লাগে না, আমি চাই গাধা। চালানাে বাদ দিয়েএই বাজারে একটি দোকান নিয়ে দোকান চালাবাে। অতঃপর সাথীরা আবু আমেরকে জিজ্ঞেস করলাে তােমার স্বপ্ন কী, তুমি ভবিষ্যতে কী হতে চাও? মুহাম্মদ ইবনে আবু আমের তখন বললাে, আমি ভবিষ্যতে খলিফা হতে চায়। একথা শুনে তার সাথীরা বললাে, কী…?? একটি গাধা ব্যতীত তাে তােমার কাছে আর কিছুই নেই। এই গাধাটিই তাে তােমার দুনিয়া। আর তুমি কি-না খলিফা হতে চাও?? সে বললাে, হাঁ আমি খলিফা হতে চাই। আমি ভবিষ্যতে খলিফা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। এরপর লােকটি তার বন্ধুদের বললাে, আচ্ছা আমি যদি খলিফা হই তাহলে তােমরা আমার কাছে কী চাইবে?

অর্থাৎ আমি কী দিলে তােমরা খুশি হবে? তখন তাদের একজন বললাে, আমি চাই তুমি আমাকে থাকার জন্যে একটি প্রসাদ দিবে। লােকটি তাকে বললাে, আর কী চাও? সে বললাে, প্রাসাদের সাথে একটি বাগান। লােকটি বললাে, আরাে কিছু কী লাগবে? লােকটি বললাে, আমার চারটা স্ত্রী থাকবে। এরপর আবু আমের অপর সাথীকে প্রশ্ন করলাে, আমি খলিফা হলে তুমি আমার কাছে কী চাইবে? সে বললাে, আমি চাই তুমি খলিফা হলে আমাকে একটি গাধার উপর উল্টো করে বসিয়ে বাজারে ঘুরাবে আর বলবে এই লােকটি বড় মিথ্যাবাদী এবং সবচেয়ে বড় দাজ্জাল। সে তাকে বললাে, অন্য কিছু কি চাও? সে বললাে, আমাকে গাধার পিঠে ঘুরানাের সময় আমার মুখে কালিও মেখে নিবে। এরপর তারা সকলে বিছানায় যার যার মত ঘুমিয়ে পড়লাে।

মানুষ কোনাে স্বপ্ন দেখলে তাকে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যে পরিকল্পনা করতে হয় এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে অগ্রসর হতে হয়, কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। লােকটিও ভাবতে লাগলাে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে তাকে কী করতে হবে তা নিয়ে। সে কি এই গাধা নিয়েই বসে থাকবে? না-কি খলিফা হতে হলে তাকে অন্য কোনাে পথে হাঁটতে হবে,যে পথে হাঁটলে সে খলিফা হতে পারবে? হােকনা আজ থেকে দশ বছর, বিশ বছর বা ত্রিশ বছর পরে, কারণ মানুষ তাে প্রতিটি বড় কাজ ছােট থেকেই শুরু করে, হাজার মাইল দূরের গন্তব্যও তাে এক পা দুই পা করেই সামনে এগুতে হয়। এই যে, আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর উপর ওহি নাযিল হয়েছে, তাও তাে অল্প একটু তথা ‘ইকরা’-এর মাধ্যমেই শুরু হয়েছে।

সুতরাং তুমি কোনাে কিছুকেই ছােট মনে করাে না। তুমি তােমার গন্তব্যে পৌছার পদক্ষেপ শুরু করে দাও আল্লাহ তােমাকে সাহায্য করবেন। সুতরাং আবু আমের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাে এবং সিদ্ধান্ত নিল যে, সে গাধাটা বিক্রি করে দিয়ে পুলিশে ভর্তি হবে এবং নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে খলিফার দেহরক্ষী বা কাছের কেউ হবে। সুতরাং আপাতত লক্ষ্যে পৌছার জন্যে তার প্রথম পদক্ষেপ এটাই হবে।

পরদিন সকালে সে তার গাধাটা বিক্রি করে দিল। তখন তার সাথীরা তাকে বললাে, আরে তুমি গাধাটা বিক্রি করে দিলে? এখন খাবে কি? কীভাবে দিন কাটাবে? তুমি তাে ক্ষুধা-পিপাসায় মারা যাবে!! তখন সে বললাে, আমার টার্গেট অনেক বড়, আমাকে এখানে গাধা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌছতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাকে সঠিক পদক্ষেপে সামনে এগুতে হবে। সুতরাং সে চাইলে পুলিশে ভর্তি হবে। তাই বাজারে গিয়ে পুলিশের পােশাক এবং অস্ত্র ক্রয় করলাে এবং পুলিশে ভর্তি হয়ে গেল। এরপর মেধা-দক্ষতা ও কাজের প্রতি নিষ্ঠার মাধ্যমে ধীরে ধীরে পুলিশে তার পদোন্নতি হতে থাকলাে এবং উপরে উঠতে উঠতে একসময় সে খলিফার বিশেষ লােকে পরিণত হয়ে গেল।

এর কিছুদিন পর খলিফার ইন্তেকাল হল। খলিফার ইন্তেকালের পর তার। দশ বছরের ছেলে খেলাফতের দায়িত্ব পেল। তখন তার মা তথা পূর্বের খলিফার স্ত্রী তার পরামর্শক হিসেবে মুহাম্মাদ ইবনে আবু আমেরসহ আরাে দুই জনকে নিযুক্ত করল। অপর দুই জন হচ্ছে, ইবনে আবু গালেব এবং ইবনে তুমাইহি। খলিফার মা তাদের তিন জনকে বললাে, তােমরা তিনজন আমার ছেলেকে পরামর্শ দিয়ে খেলাফত পরিচালনার কাজে সাহায্য করবে। এরপর আবু আমের, ইবনে তুমাইহির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করলাে এবং এক পর্যায়ে খলিফার মা ইবনে তুমাইহিকে এই বলে সরিয়ে দিলাে যে, তুমি আমার ছেলেকে পরামর্শ দেওয়ার যােগ্য নও। এখন তার লক্ষ্যে পৌছার রাস্তা আরাে পরিস্কার হল; কিন্তু এখনাে মূল লক্ষ্যে পৌছার অনেক পথ বাকি। এখনাে আবু গালিব তার পথের বাধা, তাই সে আবু গালিবের মেয়ের সাথে নিজ ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিল। আবু গালিবের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ের পর আবু গালিবকেও সে তার কথামতাে চালাতে শুরু করলাে।

অন্য দিকে খলিফার বয়স মাত্র দশ বছর সুতরাং খেলাফতের ক্ষেত্রে এখন ইবনে আমেরর কথাই একক ভাবে কার্যকর হতে শুরু করলাে। বর্ণিত আছে বালক ছেলেটি তার কামরা থেকে খুব একটা বের হতাে না এবং সে তার খেলাফতের সিংহাসনে বসতাে না। আর ইবনে আমেরের অনুমতি ব্যতীত কেউ তার সাথে দেখাও করতে পারতাে না। সুতরাং উজির-নাজির ও মন্ত্রীরা শুধু মাত্র আবু আমেরের সাথেই পরামর্শ করার সুযােগ পেত এবং তারা তার আদেশে চলতাে। সুতরাং উজির-নাজির ও মন্ত্রীরা, অন্যান্য লােকেরা আবু আমেরের সন্তুষ্টি অর্জন করে চলতে শুরু করলাে। আবু আমেরের এই পর্যন্ত পৌছাটা একদিনে বা একরাতে হয়ে যায়নি বরং তার এই পর্যন্ত পৌঁছতে দীর্ঘ বিশ বছর লেগেছে। এভাবে আরাে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর একটা সময় সে নিজেই প্রকৃত খলিফা হয়ে গেল। একারণেই স্পেনের খলিফাদের নামের পরিবর্তে তার নামের দিকে নিসবত করে তার শাসন কালকে ‘আদ্দাওলাতুল আমেরিয়্যা’ নাম করণ করা হয়।

শুরুর সেই অবস্থান থেকে তিরিশ বছর পর সে যখন এই অবস্থানে পৌছে তখন তার সেই গাধা-চালক দুই বন্ধুর কথা মনে পড়ে যায়। সুতরাং সে এক লােককে ডেকে বলে, যাও অমুক বাজারে গিয়ে এই এই নামের দুইলােককে খোজ করে আমার কাছে নিয়ে এসাে। 

অতঃপর লােকটি উক্ত বাজারে গেল এবং খলিফার বলে দেওয়া লােক দুটিকে খুঁজে বের করলাে। তারা তখনও তাদের আগের অবস্থাতেই ছিলাে অর্থাৎ তারা তখনও সেই গাধা-চালকই ছিল, তাদের অবস্থার কোনােই উন্নতি হয়নি। সে তাদেরকে বাদশার নিকট নিয়ে এলাে। তারা যখন বাদশাহর সামনে দাঁড়াল, বাদশাহ তাদের জিজ্ঞেস করলাে, তােমরা কি আমাকে চিনতে পেরেছাে? তারা বললাে, হাঁ আমরা আপনাকে চিনতে পেরেছি এবং আমরা আপনার ব্যাপারে আগেই শুনতে পেরেছিলাম; কিন্তু আমরা সাধারণ গাধা-চালক হয়ে আপনার সাথে দেখা করি কীভাবে? বাদশাহ তখন তাদেরকে বললাে, তােমাদের কি মনে আছে সেই রাতের কথা যে রাতে আমরা আমাদের স্বপ্নের কথা বলেছিলাম এবং আমি খলিফা হলে তােমরা আমার কাছে কী চাইবে? তারা বললাে, হাঁ আমাদের মনে আছে। তখন সে তাদের একজনকে উদ্দেশ্য করে বললাে, তুমি তখন কি কামনা করেছিলে? সে বললাে, বাগানসহ একটি বাড়ি এবং চারজন নারী বিয়ে করার বিষয়।

বাদশাহ তাকে বললাে, এই নাও তােমার বাড়ি, এই যে বাগান এবং এই নাও তােমর চারজন মেয়েকে বিয়ের মহরের টাকা। এরপর সে বললাে, তুমি যদি এর চেয়েও বেশি কিছু চাইতে তাহলে আমি তােমাকে তা দিতাম। অতঃপর সে অপর জনের দিকে তাকিয়ে বললাে, তােমার আশা যেনাে কি ছিল? তখন সে বলল, হে খলিফা আমাকে ক্ষমা করে দিন। বাদশাহ বললাে, তােমার চাহিদাটা ছিলাে কী সেটা আগে বল। সে বলল, আপনি খলিফা হলে আমাকে উল্টো করে গাধার পিছনে চড়িয়ে চেহারায় কালি মাখিয়ে পুরাে শহর ঘুরাবেন আর বলবেন এ হল সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী এবং সবচেয়ে বড় দাজ্জাল। তখন একজনকে আদেশ দিয়ে তার আশা বাস্তবায়ন করানাে হল।

প্রিয় পাঠক! এই ঘটনাটা সত্য হােক বা মিথ্যে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না, তবে এটা সত্য হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি, কারণ এই ঘটনাটি ইতিহাসের কিতাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে; কিন্তু এখানে আমাদের এটা বুঝানাে উদ্দেশ্য যে, মানুষের হিম্মত ও কঠোর পরিশ্রম তাকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে দেয়, লক্ষ্যটা যত বড়ই হােকনা কেনাে। সঠিক পন্থায় পরিশ্রম ও দৃঢ় সঙ্কল্প থাকলে সে একদিন তার কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌছবেই। বান্দা আল্লাহ তাআলার সাথে যেমন ধারণা করে আল্লাহ তাআলাও তাকে সে অনুযায়ী ফলাফল দিয়ে থাকেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ বলেন: আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমার সাথে বান্দা যে ধারণা করে, আমি তাকে সে অনুযায়ী প্রতিদান দিয়ে থাকি।

অর্থাৎ, বান্দা আমার সাথে যে ধারণা করে, আমি তাকে সে অনুযায়ী প্রতিদান দিয়ে থাকি। সুতরাং বান্দার উচিত তার রবের কাছে ভাল ধারণা করবে এবং ভাল জিনিস চাইবে, তার কাছে মাগফিরাত চাইবে, পরীক্ষার সফলতা চাইবে, ঋণ মুক্তি চাইবে। তােমার রাবের কাছে কখনাে খারাপ ধারণা করাে না। আল্লাহ তাআলা বলেন: তােমরা মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়েছিলে। তােমারা ছিলে ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়।‘ [সুরা আল আরাফ, আয়াত : ১২]

সুতরাং মানুষ কীভাবে আল্লাহ তাআলার সাথে ভাল ধারণা করবে? এবং সে কীভাবে তার ধারণাকে বাস্তবায়ন করবে? এবং কীভাবে সে তার স্বপ্নের চূড়ায় পৌছবে? বিষয়টি নিয়ে এখন আমরা আলােচনা করবাে।

যে ব্যক্তি তার স্বপ্নের চূড়ায় পৌছতে চায় অবশ্যই এর জন্যে তাকে সর্বপ্রথম সুন্দর একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং তার স্বপ্নবাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। সাথে সাথে তাকে আরেকটি কাজ করতে হবে, তাহল তাকে এমন মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে যারা তাকে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করবে। যে বলে আরে তােমার দ্বারা এমন কাজ করা সম্ভব না, তুমি এটা ছেড়ে বরং অন্য কাজ শুরু কর ইত্যাদি ইত্যাদি… বিভিন্ন নিরুৎসাহিতকরণমূলক কথা। বরং তােমাকে এমন বন্ধু গ্রহণ করতে হবে যারা তােমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তােমাকে উৎসাহিত করবে, কখনাে তােমাকেহীনবল হতে দিবে না। এ বিষয়ে এখানে আরাে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাত ভাই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যখন ইন্তেকাল হল তখন তিনি ছিলেন বালক। রাসুলের ইন্তেকালের পর তিনি অপর এক আনসারি বালককে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাে ইন্তেকাল হয়ে গেছে, এখন তাে আর আমরা তার কাছে থেকে ইলম শিখতে পারবাে না। সুতরাং এসাে আমরা তাঁর যেসকল সাহাবি এখনও জীবিত আছেন তাদের থেকে ইলম অর্জন করি। ছেলেটি তখন তাকে বললাে, আমরা ইলম শিখবাে ভাল কথা। ধরাে তুমি ইলম শিখলে, আলেম হলে এখন কি তুমি রাসুলের বড় বড় সাহাবি যারা এখনাে জীবিত তাঁদের কাতারে যেতে পারবে? মানুষ কি আবু বকর, উমর রা.-এর মত বড় বড় অলেমদের রেখে তােমার কাছে এসে ইলমের জন্যে ভিড় করবে? এর চেয়ে ভাল পছন্দ মত কোনাে একটা কাজ শিখে সেই কাজে লেগে যাও। লক্ষ করুন মানুষের চিন্তার ফারাক কতটুকু!! অনেক মানুষ তাে এমন আছে যাদের চিন্তা-চেতনা এর চেয়েও নিম্নমানের।

ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ছেলেটি যখন এমন কথা বললাে, তখন আমি তার থেকে দূরে সরে আসি এবং ইলম অর্জন শুরু করি। অন্য দিকে ছেলেটিও তার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়, সে কামারের কাজ শিখে এবং ধীরে ধীরে সে কাজে দক্ষ হতে থাকে, সে কামারের হাফরের পাশে বসে তার আগুনের তাপ নিতে থাকে এবং তার দুর্গন্ধকে সুঘ্রাণ মনে করতে থাকে। অন্যদিকে ইবনে আব্বাস রা. ইলম অর্জনের জন্যে হাটু গেড়ে বসে পড়েন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস শুনার জন্যে তার এক সাহাবির বাড়িতে আসলাম, তখন তার দরজা বন্ধ ছিলাে আমি দরজায় টোকা দিয়ে দেখলাম তিনি ঘুমাচ্ছেন, আমি আর দরজায় টোকা দিলাম না, কারণ এতে তার ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে এবং তাঁর মেজায নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে তিনি এমন অবস্থায় হাদিস বর্ণনা করবেন যখন তার মন ভাল থাকবে না।

অন্যদিকে আমি যদি এখান থেকে চলে যাই তাহলে হয়তাে তিনি ঘুম থেকে উঠে অন্য কোথাও চলে যাবেন। তখন আমি তার কাছ থেকে ইলম শিখতে পারবাে না। তাই আমি তার দরজার সামনেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আর বাতাসে বালু এসে আমার চেহারা ও কাপড় ভরে দিল। তিনি যখন ঘুম থেকে উঠে দরজা খােললেন তখন তিনি দেখেন আমার চেহারা ও কাপড়ের উপর ধূলাে-বালি পড়ে আছে। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আল্লাহ রাসুলের চাচাত ভাই! আমাকে কেনাে ঘুম থেকে জাগ্রত করলে না? আমি তখন তাকে বললাম, কারণ আমি চাচ্ছিলাম যে, আপনি ফুরফুরে মেজাজের থাকুন আর আমি আপনার কাছ থেকে ইলম অর্জন করি। এরপর তিনি আমাকে হাদিস বর্ণনা করে শুনান।

ইবনে আব্বাস রা. বলেন আমি একবার যায়েদ ইবনে সাবেত রা.-এর সাথে ছিলাম।(আর যায়েদ ইবনে সাবেত রা. ছিলেন ইলমুল মিরাস (উত্তরাধিকার জ্ঞান) সম্পর্কে সবচেয়ে বড় আলেম সাহাবি।) ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি তাঁর উটের লাগাম ধরে তাকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তিনি আমাকে বলেন, এটা ছেড়ে দাও। আমি তখন বললাম, এভাবেই উলামায়ে কেরামের সম্মানের ব্যাপারে আমাদের আদেশ করা হয়েছে। তখন তিনি আমাকে বললেন, তােমার হাতটা আমার কাছে একটু দাও। (ইবনে আব্বাস রা, তখন ছিলেন ছােট বালক) তিনি বলেন, তখন তিনি আমার হাত ধরেন এবং তাতে চুমু খান এবং বলেন নবি-পরিবারের লােকদের সাথে এভাবে আচরণ করার জন্যে। আমাদের আদেশ করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!!

হে ভাই! এর ফলাফল কীহল? ইবনে আব্বাস রা. তাঁর স্বপ্নের কোন চূড়ায় পৌছলেন? আজকের এই বার্তা শুধুমাত্র তাদের জন্যে যারা তাদের জীবনে সফল হতে চায়, যারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চায় এবং যারা তাদের আকাভক্ষার চূড়ায় আরােহণ করতে চায়। হােক সেটা ইলমের চূড়ায় আরােহণ অথবা কুরআনে কারিম হিফযের ক্ষেত্রে, দাওয়াতের ক্ষেত্রে, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে, আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অথবা লেখালেখি ও বয়ান-বক্তৃতার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চূড়ায় আরােহনের আকাক্ষা। ভাই! যদি এমন করতাম তাহলে এমন হতে পারতাম!! এমন পরিতাপ কোনাে কাজে আসবে না। যৌবন চলে যাওয়ার পর এমন আফসােস কি কোনাে কাজে আসবে যে, হায় যদি যৌবন বিক্রি হতাে তাহলে ক্রয় করতাম!!! না ভাই যদি কোনাে কাজে আসবে না বরং চুরান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে লাগবে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং কঠিন পরিশ্রম-সাধনা এবং আল্লাহ তাআলার সাহায্য।

হে ভাই! ইবনে আব্বাস রা. যে চূড়ায় আরােহণ করেছিলেন সে বিষয়ে বলছি। মনােযােগ দিয়ে শুনাে। ইমাম যাহাবি রহিমাহুল্লাহ তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘সিরারু আলামিন নুবালা’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, ইবনে আব্বাস রা.-এর এক শিষ্য আবু সালেহ, তিনি বর্ণনা করেন, একবার হজ্জের সময় আমি ইবনে আব্বাস রা.-এর এমন এক দৃশ্য দেখলাম, সেই দৃশ্য যদি কোনাে ইহুদি খৃস্টান ও বর্বর জাতি দেখতাে তাহলে তারা ইসলাম গ্রহণ করে নিতাে। তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হল আপনি কী দৃশ্য দেখেছেন? তিনি বলেন, একবার হজ্জের সময় মানুষ তাওয়াফ করছিলাে এবং তালবিয়া পড়ছিলাে, এমন সময় ইবনে আব্বাস রা. দাঁড়িযে খুবা দিলেন এবং তিনি তাঁর খুৎবায় সুরা বাকারার তাফসির করলেন, তিনি একের পর এক আয়াত পড়ছিলেন এবং তাঁর তাফসির করছিলেন আর মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার বয়ান শুনছিল। আমি আসলে ভেবে পাচ্ছিলাম যে, আমি কোন বিষয়টি নিয়ে আশ্চর্য হচ্ছি, আমি কি তাঁর এত সুন্দর কুরআন মুখস্তের বিষয়টি নিয়ে আশ্চর্য হচ্ছি? না-কি তাঁর তাফসিরের জ্ঞান দেখে আশ্চর্য হচ্ছি?

তিনি তাফসির করছিলেন আর মানুষ তাঁর তাফসির শুনছিলাে, তাঁদের মধ্যে কেউ তাঁর বয়ান পুরােটা শুনলাে আর কেউ কিছুক্ষণ শুনে চলে যাচ্ছিল। তার ব্যাপারে তার এক সাথী বলেন, আমি একবার ইবনে আব্বাস রা.এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে তার বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম; কিন্তু পথে এসে দেখলাম মানুষের ভিড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে, সামনে এগুনাে মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আমি কোনাে মতে ভিড় ঠেলে তার বাড়ির দিকে অগ্রসর হলাম। আমি যখন ভিড় ঠেলছিলাম তখন আমার মনে হচ্ছিল যেনাে পুরাে মদিনা মানুষের ভিরে ভরে আছে। আমি মানুষের ভিড় ঠেলে তার বাড়ির দরজায় পৌছে দেখি তার ঘরের দরজা বন্ধ, আমি দরজায় আঘাত করলাম এবং ভিতর থেকে দরজা খােলা হলে আর আমি ভিতর গেলাম এবং তাঁকে বললাম, ইবনে আব্বাস! এরা কারা! তােমার বাড়ির সামনে এত মানুষ ভিড় করেছে কেনাে?

তখন তিনি বললেন এরা সকলে তালেবুল ইলম। এরা দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে এখানে ইলম শিখার জন্যে একত্র হয়েছে। এদের কেউ ইরাক, কেউ শাম, কেউ মিসর থেকে এসেছে। এরা আমার কাছে ইলম জিজ্ঞেস করার জন্যে এসেছে। তখন লােকটি বলল, সুবহানাল্লাহ! তাদের কাছে যাও, রােদে তাে তারা পুড়ে যাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, হাঁ আমি এখনই বের হবাে।

এরপর ইবনে আব্বাস রা. ওযু করলেন এবং ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির উঠানে বসে খাদেমকে বললেন, যাও বাইরে গিয়ে বল, যারা কুরআন ও তাফসির সম্পর্কে প্রশ্ন করতে চায় তারা যেনাে ভিতরে প্রবেশ করে। অতঃপর তিনি তাফসির করতে লাগলেন এবং বিভিন্ন জনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলেন, একজন তাঁকে সুরা বাকারা থেকে প্রশ্ন করছে, অপরজন সুরা আলে ইমরান, অপরজন সুরা মাইদা থেকে, কেউ কোনাে আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করছে, কেউ আবার শানে নুযুল, কেউ আবার কোনাে আয়াতের অর্থ এভাবে সকলের উত্তর দেওয়ার পর তিনি বললেন তােমরা তােমাদের অন্য ভাইদের আসার সুযােগ দাও, তােমরা এখন চলে যাও। এরপর খাদেম বাহিরে গিয়ে হাদিসের ছাত্রদের ডাকলেন, তাঁরা আসলাে এবং ইলম অর্জন করে চলে গেল।

তারপর ফিকহ ও আহকামুল ইসলামের ছাত্রদের ডাকলেন তারা আসলাে, এভাবে সকল বিষয়ের ছাত্র একের পর এক আসলাে এবং তাকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করলাে, আল্লাহর কসম করে বলছি যে, তাকে এমন কোনাে প্রশ্ন করা হয় নি যার উত্তরে তিনি বলেছেন যে, আমি জানি না। তাফসির, হাদিস, ফিকহ , ইতিহাস, কবিতা সব বিষয়েই তিনি উত্তর দিচ্ছিলেন। কুরাইশরা যদি তাঁর এই একটা মসলিস নিয়ে গর্ভ করতে চায় তাহলে তারা সারা জীবন গর্ভ করতে পারবে। এদিকে ইবনে আব্বাস রা.-এর প্রথম সাথী অর্থাৎ যাকে নিয়ে সে ইলম অর্জনের সফরে বের হতে চেয়েছিলেন, সে এরই মধ্যে অনেক বড় কামার হয়েছে। একদিন পথের মধ্যে দুইজনের দেখা হয়ে যায়, তখন সেই ছেলেটি ইবনে আব্বাস রা.-এর মাথায় চুমু খায় এবং তাকে একটা ফাতওয়া জিজ্ঞেস করে বলে ইবনে আব্বাস আল্লাহর শপথ করে বলছি তুমি আমার চেয়ে অনেক বুদ্ধিমান ছিলে।

হে ভাই ও বোেনরা! এটাকেই বলে উঁচু মনবল। তুমি কি দেখাে নি দুই জন ছেলে একসাথে পড়া-লেখা শুরু করে, এরপর একজন হয় অনেক বড় আলেম অর অন্যজন সাধারণই থেকে যায়। একজন হয় হাফেযে কুরআন, মসজিদের ইমাম-খতিব আর অন্যজন সাধারণ মানুষই থেকে যায়। এক মহিলা আল্লাহর পথের দায়ি’ হয় আর অন্যজন সাধারণ নারীই থেকে যায়। সবাই বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখে; কিন্তু পার্থক্য হল কর্মপদ্ধতি, সুন্দর পরিকল্পনা, কঠোর সাধনা আর আল্লাহর রহমত। সুতরাং যারা পৃথিবীতে কিছু হতে চায়, তারা যেনাে মনােবল উঁচু রাখে এবং তার জন্যে নিরবচ্ছিন্ন সাধনা করে যায়। ইন-শা-আল্লাহ সে একদিন সফল। হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমিন।!!

উৎস: আত্মবিশ্বাসপৃষ্ঠা: ২৯৫ – ৩০৩


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন