রামাদানের স্মরণিকা

0
703

লেখকঃ ড. আইদ আল কারণী | সম্পাদনা ও সংযোজনঃ আকরাম হোসাইন

  • মুসলিমদের জন্য রামাদানে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা হলাে—এ মাসে আমাদের জন্য মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন—

রামাদান মাস, এতে মানুষের হেদায়াত এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।[1]

  • সুতরাং, কুরআন অবতীর্ণ হওয়াই রামাদানের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা।
  • কুরআন নাযিল হয়েছে একটি অশিক্ষিত ও অবিশ্বাসী জাতিকে অশিক্ষা ও অবিশ্বাসের অন্ধকার থেকে আলােতে বের করে আনার জন্য।
  • প্রতিবারই রামাদান আমাদের বিজ্ঞানময় কুরআনের সুমহান নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যে-কুরআন সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে—

এতে কোনাে মিথ্যা অনুপ্রবেশ করতে পারে না। সামনে হতেও না, পেছনের দিক থেকেও না। কারণ, তা প্রজ্ঞাময় ও প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।[2]

  • এই রামাদান মাসেই আমারা বদর-প্রান্তরে মহান আল্লাহর সীমাহীন সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছি। বাতিলের ওপর বিজয়ী হয়েছি এবং কুফরীশক্তিকে পরাভূত করেছি।
  • আমাদের রাসূল এবং তার মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণও এ মাসেই বিশেষ সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—

আল্লাহ তােমাদের সাহায্য করেছিলেন বদরের প্রান্তরে যখন তােমরা ছিলে দুর্বল। সুতরাং, তােমরা আল্লাহকে ভয় করাে। তবেই তােমরা সফলকাম হবে।[3]

  • রামাদান মাসেই ইসলাম কুফরীশক্তির ওপর বিজয়ী হয়েছিল। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ’–এর কালিমা সমুন্নত হয়েছিল এবং এ মাসেই আল্লাহদ্রোহী শক্তির পতন ঘটেছিল। মহান আল্লাহ বলেন—
  • যেই দিন দুই দল মুখােমুখি হয়েছিল।[4]
  • ঐতিহাসিক বদরযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এই মাসেরই ১৭ তারিখে। তাই প্রতিবারই এই দিনটি আমাদের বদরের মহিমান্বিত বিজয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
  • ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ও এ মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন—
  • নিশ্চয়ই আমি তােমাকে দান করেছি সুস্পষ্ট বিজয়।[5]
  • আমাদের রাসূল (সাঃ) রামাদান মাসে কুরআন দ্বারা মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। তাওহীদ ও একাত্মবাদের মাধ্যমে মক্কা জয় করেছে। ফলে ঈমান বিজয়ী হয়েছে। কুরআনের বাণী সমুন্নত হয়েছে। আল্লাহর দল অমরত্ব লাভ করেছে। অধিকন্তু ইসলামী ইতিহাসের বড় বড় ঘটনা ও উল্লেখযােগ্য বিজয়সমূহ এ মাসেই সংঘটিত হয়েছে।
  • রামাদানের স্মরণীয় আরেকটি দিক হলাে, এ মাসে ওহী-বাহক জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কাছে অনেক বেশি আসতেন। তাকে পবিত্র কুরআন পড়ে শােনাতেন এবং নিজেও তার তিলাওয়াত শুনতেন। তার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতেন। তার সাথে জ্ঞানগর্ভ কুরআনের আয়াত নিয়ে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হতেন।
  • এ মাসের আরেকটি স্মরণীয় দিক হলাে, ইসলামী ইতিহাসের প্রথম সারির ব্যক্তিগণ এ-মাসে তারাবীহ-সালাতে উপস্থিত হতেন। তারা একজন ইমামের অধীনে সালাতে কুরআন তিলাওয়াত শুনতেন। ইমাম তাদের সামনে মহান রবের বাণী তিলাওয়াত করতেন। এতে তাদের অন্তর বিগলিত হতাে। তারা কান্নায় ভেঙে পড়তেন এবং আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন।

এ মাসে তারা সালাত-ইবাদাতে এতটাই নিমগ্ন থাকতেন যে, সুদীর্ঘ রাতও তাদের কাছে সংক্ষিপ্ত মনে হতাে। রুকু, সিজদা, যিকির, তিলাওয়াত এবং বিনম্র প্রার্থনায় নিমিষেই রাত কেটে যেত। তাদের চোখ দিয়ে অঝােরে অশ্রু ঝরত। হৃদয় বিগলিত হতাে। সারা দেহে শিহরন ছড়িয়ে পড়ত।

রামাদান মাসের আরেকটি স্মরণীয় দিক হলাে, এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। সবচেয়ে আনন্দের কথা হলাে, মুমিন বান্দা অনুভব করতে পারে যে, এই মহান মাসে সে রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় পাচ্ছে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকছে।

এছাড়াও প্রত্যেক সিয়াম পালনকারীর জন্য এই মাসে দুটি আনন্দের বিষয় আছে। একটি হলাে ইফতারের সময়। অপরটি আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার সাথে সাক্ষাতের সময়। তাই যখনই নতুনভাবে এই মাসের আগমন ঘটে, তখনই সাথে করে খুশির এই বার্তা নিয়ে আসে; আনন্দ ও কৃতজ্ঞতায় আমাদের মন ভরিয়ে দেয়।

  • পরবর্তী রামাদান পূর্ববর্তী রামাদানের অন্তর্বর্তী গুনাহের জন্য কাফফারা বা ক্ষমার উপলক্ষ্য হয়। বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা রামাদানের এই ফযীলত প্রমাণিত। সুতরাং, রামাদান হলাে গুনাহ মাফের মাস। গুনাহমুক্ত জীবন-যাপনের প্রশিক্ষণলাভের মাস।
  • রামাদান হলাে ইয়াতীম, অসহায় ও অভাবীদের আনন্দের মাস। কারণ, এ মাসে তারা ধনীদের পক্ষ থেকে সাদাকার হাদিয়া পায়। বিভিন্ন কাজে তাদের সাহায্য পায়। তাই এই মাসে দাতাশ্রেণির হাত ধরে অনেক অভাবী সচ্ছলতার মুখ দেখে।

অধিকন্তু রামাদানে সিয়াম পালনকারীদের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন—

জান্নাতে বিশেষ একটি দরজা আছে, তার নাম ‘রাইয়্যান’। এই দরজা দিয়ে কেবল সিয়াম পালনকারীগণই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশ করা শেষ হয়ে গেলে দারজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেখান দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।[6]

সুতরাং, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আল্লাহর বান্দাদের কাছে রামাদান ও ‘রাইয়্যান ফটকের গুরুত্ব অপরিসীম।। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের জীবনে বারবার রামাদানের আগমন ঘটাও এবং অনবরত পাপমুক্তি ও পুণ্যলাভের সুযােগ দাও।

উৎসঃ ভালোবাসার রামাদান, পৃষ্ঠাঃ ৮৮ – ৯১


[1] সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫
[2] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৪২
[3] সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২৩
[4] সূরা আনফাল, আয়াত : ৪১
[5] সুরা ফাতাহ, আয়াত : ০১
[6] সহীহ বুখারী :১৮১২; সহীহ মুসলিম: ২০৩১

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন