প্রশ্ন:
আমরা অফিসে বা কর্মস্থলে ইবাদত-বন্দেগী ও নেককাজের তেমন কোন সময় পাই না। অফিসের পর বাকী যে সামান্য সময় পাই এর মধ্যে আমরা কি কি আমল করতে পারি এবং এ সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি?
উত্তর:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
সময় মানুষের জীবন। সময়কে কখনো অপচয় হতে বা অকাজে নষ্ট হতে দেয়ার মত নয়। প্রজ্ঞাবান ও বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার সময়ের সদ্ব্যবহার করে। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তি সময়কে অহেতুক কাজে বা অর্বাচীন কথায় ব্যয় করে না। বরং তিনি সময়কে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও ভাল কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। যে কাজ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে এবং মানুষের উপকার বয়ে আনে। জীবনের প্রতিটি মিনিটে আপনি একটি করে প্রস্তর স্থাপন করতে পারেন যা আপনার মর্যাদার ভবনকে উচ্চকিত করবে এবং যা দিয়ে আপনার জাতি সৌভাগ্যমণ্ডিত হতে পারবে।
আপনি যদি মর্যাদার শিখরে পৌঁছুতে চান এবং আপন জাতিকে সৌভাগ্যমণ্ডিত করতে চান তবে আরাম-আয়েশকে না-বলুন এবং অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করুন।
এক মিনিট সময়ের মাঝে অনেক ভাল কাজ করা যেতে পারে এবং বিশাল সওয়াব পাওয়া যেতে পারে। শুধু আপনার জীবনের এক মিনিট সময় ব্যয় করে আপনি আপনার দানের পরিধি বাড়াতে পারেন, কোন কিছু উপলব্ধি করতে পারেন, কোন কিছু মুখস্থ করতে পারেন, যে কোন নেককাজ করতে পারেন। শুধু এক মিনিটেই আপনার ভালো কাজের আমলনামায় এই আমলগুলো লেখা হয়ে যাবে যদি আপনি জানেন কিভাবে এক মিনিট সময়কে কাজে লাগাতে হয় এবং বাস্তবে কাজে লাগান।
কবি বলেন:
“প্রতিটি মিনিটে বৃহত্তর কল্যাণে প্রবৃত্ত হও।
যদি তুমি এক মিনিটকে ভুলে যাও তবে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ভুলে যাবে; বরঞ্চ বাস্তবতাকে ভুলে যাবে।”
আল্লাহ্র ইচ্ছায় এক মিনিটে আপনি যে যে আমলগুলো করতে পারেন নিম্নে এর কিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হলো:
(১) এক মিনিটে আপনি সূরা ফাতিহা মনে মনে দ্রুতগতিতে ৩ বার পড়তে পারেন। কেউ কেউ হিসাব কষে দেখিয়েছেন একবার সূরা ফাতিহা পড়লে ৬০০ টিরও বেশি নেকি পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি তিনবার সূরা ফাতিহা পাঠ করেন তবে আল্লাহ্র ইচ্ছায় ১৮০০ এর বেশি নেকি হাসিল করবেন। এত নেকী আপনি এক মিনিটেই পাচ্ছেন।
(২) এক মিনিটে আপনি সূরা ইখলাস (ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) মনে মনে দ্রুতগতিতে ২০ বার পড়তে পারেন। এই সূরা একবার পাঠ করলে কুরআন শরীফের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আপনি যদি এ সূরাটি ২০ বার পাঠ করেন তবে তা ৭ বার কুরআন পড়ার সমতুল্য। অতএব আপনি যদি এ সূরাটি প্রতিদিন এক মিনিটে ২০ বার পাঠ করেন তবে মাসে আপনার ৬০০ বার পাঠ করা হয় এবং বছরে ৭২০০ বার পাঠ করা হয়। যার সওয়াব ২৪০০ বার সম্পূর্ণ কুরআন পড়ার সমতুল্য।
(৩) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কিতাবের এক পৃষ্ঠা পাঠ করতে পারেন।
(৪) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কিতাবের ছোট একটি আয়াত মুখস্থ করতে পারেন।
(৫) এক মিনিটে আপনি নিম্নোক্ত দোয়াটি ২০ বার পড়তে পারেন। এর সওয়াব ইসমাঈল (আঃ) এর বংশের ৮ জন দাসকে আল্লাহর ওয়াস্তে মুক্ত করার সমান।
(৬) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِه) ১০০ বার পড়তে পারেন। যে ব্যক্তি একদিনে এই দোয়াটি ১০০ বার পড়ে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় না কেন।
(৭) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، ) ও (سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ) ৫০ বার পড়তে পারেন। এ দুটি এমন বাক্য যা পড়তে খুব সহজ; আমলের পাল্লাতে অনেক ভারী হবে; রহমানের নিকটে অতি প্রিয়; যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম।
(৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সুব্হানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আক্বার পাঠ করা যা কিছুর উপর সূর্য উদিত হয়েছে সবকিছু থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মুসলিম (২৬৯৫)]আপনি এক মিনিটে বাক্যগুলো ১৮ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যগুলো আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এগুলো সর্বোত্তম কথা এবং আমলের পাল্লাতে এগুলোর ওজন অনেক বেশি হবে। যেমনটি এ মর্মে বর্ণিত সহীহ হাদিসসমূহে এসেছে ।
(৯) এক মিনিটে আপনি (لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ) (অর্থ- কোন উপায়-সামর্থ্য নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া) ৪০ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যটির সওয়াব জান্নাতের জন্য সঞ্চিত অমূল্য রত্ন; যেমনটি বর্ণিত হয়েছে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে। একই ভাবে এটি কষ্টসাধ্য দায়িত্ব বহন ও কঠিন কাজসমূহ আঞ্জাম দেয়ার ক্ষেত্রে এক মহৌষধ।
(১০) এক মিনিটে আপনি (لاَ إِلَهَ إِلاَّ الله) (অর্থ- আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই) প্রায় ৫০ বার পড়তে পারেন। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য ও তাওহীদের বাণী। এটি কালিমায়ে তাইয়্যেবা (উত্তম বাণী) ও সুদৃঢ় বাক্য। যে ব্যক্তির শেষ কথা হবে এই বাক্য তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এছাড়াও এর ফজিলত ও মর্যাদার ব্যাপারে আরও অনেক বর্ণনা রয়েছে।
(১১) এক মিনিটে আপনি (سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَى نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ) (আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমান, তাঁর সন্তুষ্টির সমান, তাঁর আরশের ওজনের সমান, তাঁর বাক্যমালার কালির সমান) এ দোয়াটি ১৫ বারের বেশি পড়তে পারেন। সাধারণ তাসবীহ ও যিকিরের চেয়ে এ বাক্যগুলো পাঠ করার সওয়াব অনেকগুণ বেশি যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহীহ হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে।
(১২) এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কাছে ১০০ বারের বেশি ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন তথা (أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ) পড়তে পারেন। এর ফজিলত আপনার অজানা নয়। এটি ক্ষমা প্রাপ্তি ও জান্নাতে প্রবেশের উপায়। এটি সুখময় জীবন, শক্তি বৃদ্ধি, বিপদ-আপদ রোধ, সকল কাজ সহজীকরণ, বৃষ্টি বর্ষণ, সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি ইত্যাদির মাধ্যম।
(১৩) এক মিনিটে আপনি সংক্ষেপে কিছু কথা বলতে পারেন যা দ্বারা আল্লাহ হয়ত এমন কোন কল্যাণের পথ খুলে দিবেন যা আপনি ভাবতেও পারেননি।
(১৪) এক মিনিটে আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ৫০ বার দরূদ পাঠ করতে পারেন। শুধু পড়বেন “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”। এর প্রতিদানে আল্লাহ আপনার উপর ৫০০ বার সালাত (রহমত) পাঠাবেন। কারণ একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ ১০ বার এর প্রতিদান দেন।
(১৫) এক মিনিটে আপনার মন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা, তাঁর ভালবাসা, তাঁর ভয়, তাঁর প্রতি আশা এবং তাঁর প্রেমে উদ্বেল হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি উবূদিয়্যাহ্ (আল্লাহর দাসত্ব) এর স্তরসমূহ অতিক্রম করতে পারেন; হতে পারে সে সময় আপনি হয়ত আপনার বিছানায় শুয়ে আছেন অথবা কোন পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন।
(১৬) এক মিনিটে আপনি সহজবোধ্য উপকারী কোনো বইয়ের দুই পৃষ্ঠার বেশি পড়তে পারেন।
(১৭) এক মিনিটের টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে আপনি ‘সিলাতুর রাহেম’ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার আমল পালন করতে পারেন।
(১৮) এক মিনিটে আপনি দুই হাত তুলে ব্যাপক অর্থবোধক দোয়াগুলো হতে পছন্দমত যে কোন দোয়া করতে পারেন।
(১৯) এক মিনিটে আপনি কয়েকজন ব্যক্তিকে সালাম দিতে পারেন ও তাদের সাথে মুসাফাহা করতে পারেন।
(২০) এক মিনিটে আপনি কোন ব্যক্তিকে একটি মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে পারেন।
(২১) এক মিনিটে আপনি একটি ভাল কাজের আদেশ করতে পারেন।
(২২) এক মিনিটে আপনি একজন ভাইকে নসিহত করতে পারেন।
(২৩) এক মিনিটে আপনি একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারেন।
(২৪) এক মিনিটে আপনি পথ থেকে ক্ষতিকর কোন বস্তু অপসারণ করতে পারেন।
(২৫) এই এক মিনিটের সদ্ব্যবহার অবহেলায় কাটানো বাকি সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করার অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করতে পারে।
ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “যখন ঘুমন্ত লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে তখন আমি আমার চোখের অশ্রু ফেলি এবং শ্রেষ্ঠ কবিতার একটি চরণ বারবার আওড়াতে থাকি।
কোন জ্ঞান অর্জন ছাড়া রাতগুলো কেটে যাবে এবং আমার জীবন থেকে হিসেব করা হবে- এটি কি সময়ের অপব্যয় নয়? ”
পরিশেষে জানুন আপনার ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও আল্লাহর নজরদারির অনুভূতির ভিত্তিতে আপনার প্রতিদান বাড়বে, আপনার নেকীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
জেনে রাখুন, এই আমলগুলোর বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না। এগুলোর জন্য আপনার পবিত্রতার প্রয়োজন নেই, ক্লান্তি বা কায়িক শ্রম নেই। বরং আপনি এ আমলগুলো করতে পারেন যখন আপনি পায়ে হেঁটে চলছেন অথবা গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন অথবা শুয়ে আছেন অথবা দাঁড়িয়ে আছেন অথবা বসে আছেন অথবা কারও জন্য অপেক্ষা করছেন।
একইভাবে এ আমলগুলো সুখী হওয়ার উপকরণ, আত্মপ্রশান্তির মাধ্যম, চিন্তা ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার উপায়। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দিন। আমাদের নবীর প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।
উৎসঃ সৌদি আরবের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট IslamQA থেকে নেওয়া হয়েছে
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]
KOLEMA SHAHADOT.