লেখকঃ ড. আয়িদ আল করনী | অনুবাদঃ ডা. হাফেজ মাওলানা মােহাম্মদ নূর হােছাইন
নিজেকে অন্য মানুষে রূপান্তরিত করবেন না, অন্যের অনুকরণ করবেন না। অনেকেই অন্যরা যেভাবে কাজ করে সেভাবে কাজ করার জন্য তাদের নিজেদের কণ্ঠস্বর, চালচলন, আচার-আচারণ, স্বভাব ও অভ্যাসকে ভুলে যাওয়ার ভান করে। এর যে সমস্ত কুফল দেখা দেয় তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল- কৃত্রিমতা, অশান্তি ও নিজের স্বতন্ত্র সত্তার বিনাশ।
আদম (আ) থেকে সর্বশেষ জন্মগ্রহণকারী শিশু পর্যন্ত কোন দুটি মানুষই দেখতে হুবহু একই রকম নয়। তবে কেন তাদেরকে অভ্যাস ও রুচিতে একই রকম হতে হবে?
আপনি অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ- অতীতে কেউই আপনার মতাে হয়নি আর ভবিষ্যতেও কেউই আপনার মতাে হবেন না। যদু বা মধু থেকে আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। সুতরাং অন্যকে অনুকরণ ও নকল করার প্রবণতা নিজের উপর জোর করে চাপিয়ে দিবেন না। নিজের স্বভাব ও ঝোঁক অনুসারেই সামনে এগিয়ে চলুন। (এখানে নিজের স্বভাব ও ঝোঁক বলতে নিজের সৎ স্বভাব ও ভাললা ঝোঁকের কথাই বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে অনুকরণ না করা বলতে অন্যের কৃত্রিম ও কপট আচরণ তথা যেগুলাে স্বভাবজাত না হওয়ার কারণে অনুকরণ করতে কষ্ট হয় সেগুলাে অনুকরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা ইসলামের নীতি ও আদর্শের অনুকরণ ও অনুসরণ জরুরী -অনুবাদক।)
“প্রতিটি (দলের) লােকই নিজ নিজ পানির ঘাট চিনে নিয়েছিল।” [২-সূরা বাক্বারা : আয়াত-৬০]
“প্রত্যেক জাতিরই একটি কেবলা আছে, যে দিকে সে অভিমুখী হয়, সুতরাং সকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন।” [২-সূরা বাক্বারা : আয়াত-১৪৮]
আপনাকে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে সেভাবেই থাকুন এবং আপনার কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করবেন না অথবা আপনাকে বদলাবেন না। কুরআন হাদীসে যা পাওয়া যায় তার অনুসরণ করে আপনার ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন করুন।
অন্যদেরকে অনুকরণ করে ও নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের অধিকার বঞ্চিত করে নিজের অস্তিত্বকে শূন্য করে দিবেন না। আপনার রুচি ও পছন্দ একান্ত আপনারই এবং আমরাও চাই যে আপনি যেমন আছেন তেমনই থাকুন, বিশেষ করে এজন্য যে, ওভাবেই আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আমরাও আপনাকে ওরকম বলেই জানি।
নবী করীম (সাঃ) বলেছেন: আর তােমাদের কেউ যেন অন্যের অনুকরণকারী না হয়।
চরিত্র, ধর্ম ও গুণের সংজ্ঞায় (পরিচয় দিতে গেলে) বলতে হয় যে, মানুষেরা গাছ-পালার মতাে : টক-মিষ্টি, লম্বা-খাটো ইত্যাদি। {অর্থাৎ গাছ-পালা যেমন কোনটি লম্বা হয় আবার কোনটি খাট হয়, মানুষও কেউ লম্বা হয় কেউ খাট হয়। গাছপালা (এর ফল-পাতা, ছাল-বাকল বা শিকড়) যেমন কোনটি মিষ্টি আবার কোনটি টক। মানুষও কেউ মিষ্টি পছন্দ করে আবার কেউ টক পছন্দ করে। সুতরাং আপনি খাট তাই লম্বা হওয়ার চেষ্টা করা অস্বাভাবিক ও তাই কষ্টকর। অনুরূপভাবে আপনি মিষ্টি খেতে ভালােবাসেন কিন্তু অন্যের অনুকরণে টক খেতে অভ্যস্ত হতে চাওয়া অস্বাভাবিক ও আপনার জন্য কষ্টদায়ক।} (অনুবাদ)
আপনার সৌন্দর্য ও ব্যঞ্জনা আপনার স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখছে। (সুতরাং অন্যের অনুকরণ করে অন্যের মতাে হতে চেয়ে এগুলাের বিকৃতি সাধন করে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। -অনুবাদক। আমাদের বিভিন্ন বর্ণ, ভাষা, মেধা ও যােগ্যতা আমাদের শক্তিমান মহান স্রষ্টারই নিদর্শন; তাই ঐগুলােকে অস্বীকার করবেন না (অর্থাৎ ঐগুলাের স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করে অন্যের মতাে হওয়ার জন্য অন্যের অনুকরণ করে নিজের ক্ষতি করবেন না। (অনুবাদক)
উৎসঃ লা তাহযান [হতাশ হবেন না], ক্রমিক নংঃ ১০, পৃষ্ঠা: ৪৬ – ৪৭
'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]