যাদু প্রতিরোধের উপায় পর্ব: ২

0
667

লেখক: ওয়াহীদ বিন আব্দুস সালাম বালী

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

দশম উপায়ঃ

শোয়ার পূর্বে আয়াতুল কুরসী পড়া: নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে ওযু করবে, তারপর আয়াতুল কুরসী পড়ে আল্লাহর যিকির করতে করতে ঘুমিয়ে যাবে। বিশুদ্ধ সনদে বর্নিত হয়েছে যে, শয়তান আৰু হুরাইরাকে (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলল যে ব্যক্তিই শুয়ার পূর্বে আয়াতুল কুরসী পড়ে, সেই রাতে তার জন্যে আল্লাহ তায়ালা এক ফেরেশতা নিযুক্ত করেন। আর শয়তান সেই রাতে সেই ব্যক্তির কাছে সকাল পর্যন্ত যেতে পারে না।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার এ বর্ণনা স্বীকার করে বললেনঃ হে আবু হুরাইরা শয়তান তোমাকে সত্যই বলেছে অথচ সে মিথ্যাবাদী। (বুখারীঃ ৪/৪৮৭)

একাদশ উপায়ঃ মাগরিবের নামাযের পর এই আমলগুলো করাঃ

> সূরা বাকারার ১-৫ আয়াত পড়া।
> আয়াতুল কুরসী এবং এর পরের আয়াত।
> সূরা বাকারার শেষ তিন আয়াত।

এই আমলের দ্বারা আপনি ২৪ ঘন্টা শয়তান ও সর্বপ্রকার যাদু থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

দ্বাদশ উপায়ঃ

ফজরের নামাযের পর নিম্নোক্ত কালেমা পড়া: এটাকে ফজরের নামাযের পর ১০০ বার পড়ুন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তিই এমনটি করবে সে দশটি দাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে এবং একশত পুণ্য তার আমলনামায় লেখা হবে এবং একশত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর সেই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। আর এর থেকে অধিক পূণ্যের কাজ আর হতে পারে না; কিন্তু সেই যে এর অধিক আমল করবে।” (বুখারীঃ ৬/৩৩৮ ও মুসলিমঃ ১৭/১৭)

ত্রয়োদশ উপায়ঃ

মসজিদে প্রবেশকালীন সময়ে নিম্নের এই দু’আ পড়া:

أعوذ بالله العظيم وبوجهه الكريم وسلطانه القديم من الشيطان الرجيم

অর্থঃ আমি সুমহান আল্লাহ তায়ালার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং তার মহান চেহারার এবং তার চিরস্থায়ী ক্ষমতার আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত তিনি বলেছেনঃ “যে ব্যক্তিই তা পড়ল শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাটি দিন আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল।” (আবু দাউদঃ ১/১২৭ নববী ও আলবানী সহীহ বলেছেন।

চতুর্দশ উপায়ঃ

সকাল-সন্ধ্যায় নিম্নের দু’আ তিনবার পড়া:

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

অর্থঃ “শুরু করছি আল্লাহর নামে যার নামের সাথে যমীন আসমানের কোন বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সব শুনেন ও জানেন।” (তিরমিয়ীঃ ৫/১৩৩ সঠিক সূত্রে)

পঞ্চদশ উপায়ঃ

বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় নিম্নের দু’আ পড়া:

بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله

অর্থঃ আল্লাহর নামে বের হলাম এবং আল্লাহর উপর ভরসা করলাম । আল্লাহ ব্যতীত কারো শক্তি ও সামর্থ নেই।

যখন আপনি এই দু’আ পড়ে বাড়ি থেকে বের হবেন তখন আপনার জন্য এক সুসংবাদ দেয়া হয় যে, আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্যে যথেষ্ট । আপনি সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পেলেন, সঠিক পথ পেয়েছেন এবং শয়তান আপনার থেকে দূরে চলে গেল। আর এক শয়তান অন্য সার্থী শয়তানকে বলে যে, তুমি এই ব্যক্তিকে কিছুতেই ক্ষতি করতে পারবে না। কেননা সে আজ সঠিক পথপ্রাপ্ত, তার জন্য যথেষ্ট এবং সুরক্ষিত।” (আবৃ দাউদঃ ৪/৩২৫ সনদ সহীহ)

ষষ্ঠদশ উপায়ঃ

ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর নিম্নের দু’আ পড়বে:

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করছি।

সপ্তদশ উপায়ঃ

সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আ পড়া:

أعوذ بكلمات الله التامة من غضبه وعقابه وشر عباده ومن همزات الشياطين وأن يحضرون

অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার আশ্রয় প্রার্থনা করি তার অসম্ভষ্টি ও শাস্তি থেকে এবং তার বান্দার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে ও শয়তানের সংস্পর্শ থেকে।

অষ্টাদশ উপায়ঃ

সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আ পড়া:

اللهم انى اعوذبوجه الكريم وكلماتك التامات من شر ما انت اخذ بناضية اللهم انت تكشف المأثم والمغرم اللهم انه لا يهزم جندك ولا يخلف وعدك سبحانك وبحمدك

অর্থঃ হে আল্লাহ তোমার দয়ালু ও পবিত্র চেহারার মাধ্যমে এবং তোমার পরিপূর্ণ কালেমার মাধ্যমে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যা তোমার আয়ত্বাধীন রয়েছে। হে আল্লাহ তুমি পাপ ও দেনা মুক্ত কর । হে আল্লাহ তোমার সেনাদল পরাস্থ হয় না আর না তোমার ওয়াদা ভঙ্গ হয়। আমরা তোমারই গুণকীর্তন ও প্রশংসা বর্ণনা করি।

উনবিংশ উপায়ঃ

সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আ পড়া: আমি মহান আল্লাহ তায়ালার সুমহান চেহারার আশ্রয় প্রার্থনা করি যার থেকে বড় আর কিছু নেই এবং আল্লাহ তায়ালার পবিত্র কালেমার মাধ্যমে আশ্রয় চাই যাকে ব্যতীত কোন কল্যাণ ও অনিষ্ট অতিক্রম করে না । আর আল্লাহ তায়ালা সুন্দর নামসমূহের মাধ্যমে যা আমি জানি ও যা জানি না আশ্রয় প্রার্থনা করি সৃষ্টি জগতের সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে যা তোমার আয়ত্বাধীন। নিশ্চয় আমার প্রভু সরল সোজা পথে।

বিংশ উপায়ঃ

সকাল-সন্ধ্যায় এই দু’আ পড়া: সেই আল্লাহকে রক্ষা কর্তা মেনেছি যাকে ব্যতীত আমার কোন উপাস্য নেই। তিনি আমার এবং সকল কিছুর উপাস্য। আমি আমার প্রভুকে আঁকড়ে ধরেছি এবং সেই চিরঞ্জীবির উপর ভরসা রাখি যার মৃত্যু নেই। এবং তারই কাছে অনিষ্টকে দমন করার সামর্থ চাই কেননা শক্তি-সামর্থ কেবল আল্লাহ তায়ালার । আল্লাহই আমার জন্যে যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম সাহায্যকারী। আমার প্রভু বান্দাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্যে যথেষ্ট। সৃষ্টি কর্তা আমার জন্য যথেষ্ট সমস্ত সৃষ্টিজগত থেকে রক্ষার জন্যে। রিযিকদাতা হিসেবে আমার জন্যে যথেষ্ট। রিযিক গ্রহণকারীদের থেকে রক্ষা করতে । তার কাছেই আশ্রয় নিতে হয় তার বিরুদ্ধে নয়। আমার আল্লাহ আমার জন্যে যথেষ্ট যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর তার উপরই আমার আস্থা এবং তিনিই মহৎ আরশের প্রভু।

যৌন ক্ষমতা নষ্টকারী যাদুর এক বাস্তব উদাহরণ

এ বিষয়ে অনেক ঘটনা রয়েছে; কিন্তু সংক্ষেপে একটি ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করেছি।

এক যুবক তার যে ভাই নতুন বিবাহ করেছে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসল। তার দাম্পত্য জীবনের ব্যর্থতা নিয়ে অনেক কবিরাজ যাদুকরের কাছে গমন করেছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

আমি যখন তা জানতে পারলাম তখন আমি তাকে প্রথম ইখলাসের সাথে তাওবা করালাম এবং সে যেন সেই সব দাজ্জালদেরকে মিথু্যক বলে বিশ্বাস করে যাতে আমার চিকিৎসায় তার ফায়েদা হয়। সে আমাকে বলল যে, এখন তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, তারা মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। আমি তাকে সাতটি সবুজ ও তাজা বরই পাতা যোগাড় করতে বললাম; কিন্তু তা ব্যবস্থা হল না। এরপর কপুরের সাতটি পাতা ব্যবস্থা করা হয় যা পাথরের শিলপাটা দিয়ে পিষে পানিতে মিশ্রিত করলাম এবং তাতে আয়াতুল কুরসী এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে ফু দিলাম এবং তাকে বললাম, এই পানি সে পান করবে এবং তা দিয়ে গোসল করবে।

আলহামদুলিল্লাহ এই চিকিৎসার পর মুহুর্তেই তার উপর যাদুর প্রভাব ধ্বংস হয়ে গেছে ।

এই প্রকার যাদুর প্রভাবে পাগল হয়ে যায়

এক সচেতন যুবকের বিয়ের পর বাসর রাত থেকে পুরুষত্বহীন হয়ে ধীরে ধীরে কিছুদিন পর সে পাগল হয়ে গেল। তার ঘটনা ছিল যে, তার স্ত্রী যাদুকরের কাছে গিয়েছিল যে সে যেন তার স্বামীকে এমন যাদু করে তাতে, সে অন্য সব নারীকে ঘৃণার চোখে দেখে। যাদুকর এমনটিই করল; কিন্তু সে তার যাদুতে এমন কিছু ভুল পদ্ধতি গ্রহণ করল যেন, পরবর্তীতে যখন মহিলা তার স্বামীকে যাদুর বস্তু খাবারের সাথে মিশিয়ে তার স্বামীকে খাওয়াল তখন থেকে তার স্বামী সকল নারীকে ঘৃণা করতে লাগল এমন কি তার স্ত্রীকেও । মহিলা যাদু নষ্ট করার জন্যে যখন পুনরায় যাদুকরের কাছে যায় তখন যাদুকরের মৃত্যু হয়ে গেছে। এরপর সেই ব্যক্তি পাগল হয়ে যায়; কিন্তু যখন আমি কুলের পাতায় উপরোক্ত পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলাম তখন সে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয় ও তার স্ত্রীর সাথে সহবাসে সক্ষম হয়।

পর্ব: ১ | পর্ব: ২

উৎস (বই) : যাদুকর ও জ্যোতিষীর গলায় ধারালো তরবারি

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন