Home Blog

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

রামাদান বিষয়ে প্রতিদিন আপডেট করা হবে এই লিস্ট।

এই রামাদান (রমজান মাসকে) পরিনত করুন আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রামাদ্বানে। এই ‘রামাদ্বান রিসোর্সেস পোস্ট’-এ আছে  গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ, লেকচার, বই, অন্যান্য দরকারী তথ্য যা আপনার রামাদ্বান প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে যাতে আপনি কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী অনেক বেশি সৎ আমল করতে পারেন এবং সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারেন এই পবিত্র মাস থেকে। রামাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিজেকে পরিণত করুন মহান আল্লাহর একজন নিবেদিত বান্দা হিসেবে। রামাদানকে ব্যবহার করুন আগের চেয়ে আরও ভালো, আরও বেশি বেশি ইবাদাত চর্চা করার মাধ্যম হিসেবে। হেলা ফেলায় এ মাস যেন চলে না যায় খেয়াল রাখুন। ইনশা’আল্লাহ। আমরা আরো নতুন রিসোর্সেস যোগ করবো এই পোস্ট এর সাথে। 

পোস্টটি সর্বশেষ আপডেট করা হয়েছে ২ / ২ / ২০২৪ তারিখে। আসুন তাহলে এখন থেকেই রামাদ্বানের প্রস্তুতি শুরু করি। Ramadan Productivity Tools [starlist]

  1. রামাদান প্রত্যাহিক কর্ম তালিকা – Ramadan Check List –
  2. রামাদ্বান প্ল্যানার – Download
  3. Ramadan Diary: The diary, in essence, is a day by day guide packed full of practical hints and tips and quotes from the Quran and Sunnah that can help you every step of the way throughout the Holy month. Download

প্রবন্ধ/আর্টিকেল

রামাদ্বানের পর 

বই

বই – রামাদান আল্লাহ’র সাথে সম্পর্ক করুন

বই: রামাদান আল্লাহ’র সাথে সম্পর্ক করুন | লেখক: ড. মুহাম্মাদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এমন কিছু আছে যা তার খুব প্রিয়, যা সে মন থেকে আকাঙ্ক্ষা করে, যাকে ঘিরে সে স্বপ্ন বুনে, দিন রাত যত কল্পনা জল্পনা সব সেই আকাঙ্ক্ষিত বিষয়কে নিয়েই। সর্বাত্মক চেষ্টার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে, ‘হে আল্লাহ! আমাকে মিলিয়ে দাও!’ এরকম খুব প্রিয় একটি বিষয় আমাদের পূর্বসূরীদেরও ছিল।

তাঁরা এ মাসে আল্লাহর রহমত অনুভব করেছিলেন, ইয়াকিনের সাথে বিশ্বাস করেছিলেন, আর তাই এই রামাদানেই তাঁরা জান্নাত কিনে নেয়ার কোমর বেধে প্রতিযোগিতায় নামতেন।

আমরা কি পারি না এই রামাদানকে ভালোবাসতে যেভাবে বেসেছিলেন আমাদের পূর্বসূরীরা? আমরা কি পারি না এই রামাদানকে ব্যবহার করতে যেভাবে করেছিলেন আমাদের পূর্ববসূরীরা?

বই – রামাদান আল্লাহ’র সাথে সম্পর্ক করুন – QA
বই – রামাদান আল্লাহ’র সাথে সম্পর্ক করুন – QA

রামাদ্বান প্ল্যানার

লেখক: শায়খ আহমাদুল্লাহ | প্রকাশনায়: আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পাবলিকেশন্স

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এই প্লানারে রয়েছে রামাদ্বান মাসব্যাপী আত্মশুদ্ধি পূর্ণ পরিকল্পনা। প্ল্যানারটির উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ হলো দিনের আয়াত, দিনের হাদিস, দিনের দুআ, দৈনিক চেকলিস্ট। এছাড়াও রয়েছে আল্লাহর গুণবাচক নাম ও প্রতিদিনের কাজ। ফলে পাঠক খুব সহজেই প্রতিদিন একটি করে কুরআনের আয়াত, একটি হাদিস এবং একটি করে দুআ মুখস্ত করতে পারবেন। কোন কাজটা কখন করবেন, পাঠক তার সময়ানুযায়ী খুব সহজেই তা ভাগ করে নিতে পারবেন। এছাড়া এতে রয়েছে সালাত ট্র্যাকার, কুরআন ট্র্যাকার, প্রতিদিনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিসমূহ ট্রাক করার সুযোগ সহ আরও অনেক কিছু।

বই – রামাদ্বান প্ল্যানার – QA Server
বই – রামাদ্বান প্ল্যানার – QA Server

প্রোডাক্টিভ রামাদান

লেখক: উস্তাদ আলী হাম্মুদা, মোহাম্মাদ ফারিস | প্রকাশনায়: মাকতাবাতুল আসলাফ

অনুবাদক: মুওয়াহহিদ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ, নাফিস নাওয়ার সহ আরও অনেকে | সংকলন ও সম্পাদনা: মুওয়াহহিদ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: রামাদান মাস হচ্ছে মুসলিম জাতির আমলি বসন্ত। প্রত্যেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিম এই মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে। এই মাসে আমলের সওয়াব অন্য মাসগুলোর আমলের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আমাদের সবারই লক্ষ্য থাকে এ মাসে বেশি বেশি আমল করা, আরো বেশি প্রোডাক্টিভ থাকা।

এমাসে আমাদের কাজকর্ম, পড়াশুনা, পারিবারিক চাহিদা পূরণ ইত্যাদির পাশাপাশি অর্ধেক দিন সিয়ামরত অবস্থায় এবং বাকি অর্ধেক সময়ে রাতের ইবাদত এবং কুরআন তিলাওয়াতও করতে হয়। এটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। রামাদান মাসে কীভাবে এত এত চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে আরো বেশি প্রোডাক্টিভ থাকা যায়, সে বিষয়েই কিছু কার্যকর পরামর্শ দেয়া হবে এ বইয়ে। রামাদানের প্রস্তুতি, লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও রুটিন বানাতে এ বই আপনাদের জন্য সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। রামাদানে আমলে মনোযোগী হওয়ার, কুরআন পড়ার ও দুআ করার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে এ বইয়ে। শুধু তাই নয়, রামাদানের খাদ্যাভ্যাস ও ফিটনেস ধরে রাখার উপায়, একাডেমিক পরীক্ষার ব্যস্ততা সামলে আমল করার উপায়ও বাতলে দেয়া হয়েছে এ সংকলনে।

সবশেষে, রামাদানের পরেও কুরআনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ও সুস্থ থাকার পরামর্শ দিয়ে সাজানো হয়েছে এ বই। আশা করি, বইটি রামাদানের প্রস্তুতির জন্য ও প্রোডাক্টিভভাবে রামাদান কাটানোর জন্য কার্যকর একটি গাইডবুক হবে ইনশাআল্লাহ।

বই – প্রোডাক্টিভ রামাদান – QA Server
বই – প্রোডাক্টিভ রামাদান – QA Server

ভালোবাসার রামাদান

লেখক: ড. আইদ আল কারণী | প্রকাশনায়: সমকালীন প্রকাশন

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: রামাদান এতই মাহাত্ম্যপূর্ণ একটি মাস যে, এই মাসে জান্নাতের সবগুলো দরজা উন্মুক্ত রাখা হয় এবং জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এই মাসেই রয়েছে লাইলাতুল ক্বদেরর ন্যায় বরকতময় রজনী যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রামাদানের প্রতিটি দিন ও রাতে আল্লাহর কাছে বান্দার দুআ কবুল হয় এবং অগণিত বান্দা জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে।

এই গ্রন্থে অপেক্ষাকৃত কার্যকরী বহু আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদীসের মাধ্যমে রামাদানের বিভিন্ন আমলের ব্যাপারে নির্ভুল দিক-নির্দেশনা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে।

বই – ভালোবাসার রামাদান – QA Server
বই – ভালোবাসার রামাদান – QA Server

সেরা হোক এবারের রামাদান

লেখক: রৌদ্রময়ী টিম | প্রকাশনায়: সমকালীন প্রকাশন

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: রৌদ্রময়ী একটি প্লাটফর্মের নাম। এখানে আমাদের বোনেরা তাদের মনের কথাগুলো লিখে যান। ইসলামে নারীর অধিকার, নারীদের দ্বীন শিক্ষা, দ্বীন চর্চা, পারিবারিক ব্যবস্থা, সামাজিক বিভিন্ন কুপ্রথা-কুসংস্কার, ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিনিয়ত লিখে চলেছেন। ‘সেরা হোক এবারের রামাদান’ বইটি তাদের রামাদান বিষয়ক লেখাগুলোর সংকলন।

বই – সেরা হোক এবারের রামাদান – QA Server
বই – সেরা হোক এবারের রামাদান – QA Server

সালাফদের সিয়াম

লেখক: সাঈদ ইবনে আলী আল কাহতানী, উম্মে আব্দ মুনীব | প্রকাশনী: আযান প্রকাশনী

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: “সালাফদের সিয়াম” বইটিতে মূলত: সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাঈন), তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈন (রাহিমাহুমুল্লাহ) কীভাবে সিয়াম পালন করতেন, কীভাবে রমাদ্বানের রজনীগুলো অতিবাহিত করতেন, কুরআনের সাথে কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতেন, সাহরী ও ইফতার কীভাবে করতেন, ইতিকাফের দিনগুলো কীভাবে কাটাতেন, লাইলাতুল ক্বদর কীভাবে তালাশ করতেন এগুলো নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে৷ আমরা আশা করছি এই বইটির মাধ্যমে রমাদ্বান মাসকে উত্তমরুপে কাজে লাগানোর একটা নির্দেশনা পাওয়া যাবে এই বইটি থেকে।

বই – সালাফদের সিয়াম – QA Server
বই – সালাফদের সিয়াম – QA Server

রমাদান-আত্মশুদ্ধির বিপ্লব

লেখক: ড. খালিদ আবু শাদি | প্রকাশনায়: রুহামা পাবলিকেশন

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: আমাদের জীবনে প্রতি বছরই রমাদান আসে। সময়ের আবর্তনে আবার তা বিদায় নেয়। কিন্তু আমরা কি এ রমাদানের যথাযথ কদর করি? রমাদানের প্রভাব কি এর পরবর্তী সময়গুলােতে আমাদের মাঝে থাকে? রমাদান থেকে তাকওয়ার সবক নিয়ে সারা বছর কি আমরা তাকওয়ার পথে চলি? হায়, কত রমাদানই তাে আমরা পার করেছি; কিন্তু আমাদের মাঝে পরিবর্তন কোথায়?! আছে কি আমাদের জীবনে তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ?! আসুন, আর গুনাহের সাগরে ডুবে থাকা নয়; আর নয় গাফিলতির মাঝে বিভাের থাকা। নিজেকে শুধরে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে জেগে উঠি। সামনের প্রতিটি রমাদানকে সর্বোত্তমভাবে কাজে লাগানাের ফিকির করি। প্রতিটি রমাদানকে জীবনের শেষ রমাদান ভেবে এর সর্বোচ্চ কদর করি। রমাদান থেকে তাকওয়ার শিক্ষা নিয়ে জীবনের প্রতিটি পদে পদে এর বাস্তবায়ন ঘটাই।…

বই – রমাদান-আত্মশুদ্ধির বিপ্লব – QA Server
বই – রমাদান-আত্মশুদ্ধির বিপ্লব – QA Server

ধূলিমলিন উপহার রামাদান

লেখক: শাইখ আহমাদ মুসা জিবরিল | প্রকাশনায়: সীরাত পাবলিকেশন

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: রামাদানের আগমনধ্বনি শুনলে একজন মুসলিমের মনে আবেগ আর খুশির জোয়ার বয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কথা ছিলো উৎসাহ আর প্রস্তুতি নিয়ে মুসলিমরা উন্মুখ হয়ে বসে থাকবে। রামাদান চলে যাবে, কিন্তু রামাদানের ঔজ্জ্বল্য আমাদের মাঝে ছাপ রেখে যাবে — তাক্বওয়া।

কথা থাকলেও আমরা কথা রাখিনি। যে মাসকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আর সবক’টা মাসের ওপর মর্যাদা দিয়েছিলেন, সেই মাসকে আমরা যথেষ্ট কদর করিনি। যদি কোনো মাসকে ‘বরণ’ করে নেওয়ার থাকে তবে সেটা রামাদান, বৈশাখ নয়। অর্থহীন নাটুকেপনা আর মেকি বাঙ্গালিত্বের দিনভিত্তিক উদযাপনে মুসলিমরা বিশ্বাস করে না। মুসলিমরা বিশ্বাস করে পবিত্র মাসে, যে মাস তাদেরকে আল্লাহ তাআলার কাছাকাছি আসবার সুযোগ করে দেয়।

বই – ধূলিমলিন উপহার রামাদান – QA Server
বই – ধূলিমলিন উপহার রামাদান – QA Server

রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল

 

লেখক: আব্দুল হামিদ ফাইযী আল মাদানী

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সহীহ দলীলকে ভিত্তি করে রমযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল জানার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই। মুসলিমদের জন্য রমযান অত্যন্ত গুরুত্তপুর্ন মাস। এতে একজন মুসলিম রমযান মাসকে কিভাবে ফলপ্রসূ করবে তার মাসআলা-মাসায়েল ও ফাযায়েল সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদির প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলো খুব সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে। এখানে শুধুমাত্র রমযানের মাসায়েল সম্পর্কেই আলোচনা হয়নি রমযান মাস আমাদের জীবনে কেন এত গুরুত্তপুর্ন তারও বর্ননা রয়েছে। মোটকথা, বইটি প্রতিটি মুসলমানের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় এবং অতি গুরুত্বপূর্ন। রোযা ও রমযানের মত একটি মহান উৎদ্দীপনা তথা আনন্দমুখর মৌসুমকে ঘিরে যে সকল জানা ও মানার কথা এখানে পরিবেশিত হয়েছে তা আশা করি সকল মুসলিম ভাই বোনদের জানা প্রয়োজন। এই বইটি লিখেছেন আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী এবং প্রকাশনায় তাওহীদ প্রকাশনী।

বই: রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল – QA
বই: রামযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল – QA

রমযানের ৬০ শিক্ষা ৩০ ফতোয়া

30-fatawa

সংকলন:  ইব্রাহিম ইবনে মোহাম্মদ আল হাকিম | প্রকাশনায়: পিস পাবলিকেশন্স বাংলাদেশ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এই বইটিতে কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে রমযানের ৬০ শিক্ষা এবং ৩০ ফতোয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। Download | Download from Mediafire

বই – রোযার সত্তরটি মাসয়ালা – মাসায়েল

 

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সিয়াম বা রোযা প্রসঙ্গে জ্ঞাতব্য অনেকগুলো জরুরী মাসয়ালা – মাসায়েল, কুরআন – হাদীস ও যুগশ্রেষ্ঠ আলেমগণের ফতওয়ার উপর ভিত্তি করে সৌদী আরবের বিশিষ্ট আলেম সম্মানিত শায়খ মুহাম্মাদ সলেহ আল-মুনাজ্জেদ “সাবাউনা মাসয়া্লা ফিস্ সিয়াম” বইটি আরবি ভাষায় প্রণয়ন করেছেন । এবং এর বাংলা অনুবাদ “রোযার সত্তরটি মাসয়ালা – মাসায়েল” করেছেন – সরদার মুহাম্মাদ জিয়াউল হক। বিস্তারিত জানতে এবং ডাউনলোড করতে এইখানে ক্লিক করুন।

রামাদান নির্বাচিত ফাতাওয়া

আলহামদুলিল্লাহ্‌ জনপ্রিয় ওয়েবসাইট Islam-QA.com এর রামাদান সম্পর্কিত ১১২টি ফাতাওা বাংলায় বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি ডাউনলোড করার এইখানে ক্লিক করুন

লেখক: খোন্দকার আবুল খায়ের ডাউনলোড করুন এই লিংক থেকে।

সিয়াম ও রমজান

ramadanqqqqqq

রহমত,মাগফিরাত ও নারকীয় জীবনের স্পর্শ থেকে মুক্তি লাভের অফুরান সম্ভাবনা নিয়ে ফিরে আসে মাহে রমজান। আসে তাকওয়ার উত্তাপ অনুভব করাতে,যা কিছু অকল্যাণকর, অন্ধকারময় তা থেকে ব্যক্তির অন্তর ও বাহ্য জগৎকে বিমুক্ত করে শুদ্ধ-আলোকিত মানুষের উন্মেষ ঘটাতে। তবে তার জন্য প্রয়োজন মাহে রমজানকে যথার্থভাবে যাপন,সিয়াম পালনের নীতি-বিধান বিষয়ে সম্যক জ্ঞানার্জন,সিয়ামের শিক্ষা ও মাসায়েল বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অর্জন।মাহে রমজান ও সিয়াম সাধনা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ এই রচনাটি ইমাম ও দায়ীদের জন্য একটি অতি-মূল্যবান তথ্য-ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সাধারণ পাঠক সিয়াম সাধনার খুঁটি-নাটি বিষয়ে অজানা বহু তথ্য খুঁজে পাবেন বইটিতে। এই বইটি ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন

ফিকহুস সিয়াম

সংকলক: মুহাম্মাদ নাসীল শাহরুখ | সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী আমাদের জীবনকে বদলে দিয়ে নতুন মানুষ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ রামাদান! কিন্তু আমরা অনেকেই জ্ঞান ও প্রস্তুতি ছাড়াই রামাদানে প্রবেশ করি, ফলে আমাদেরকে চমকে দিয়ে চলে যায় আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয়ের এই মৌসুম। রামাদানের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং রোযার প্রয়োজনীয় মাসায়েল দ্রুত খুঁজে পাওয়ার উপযোগী করে রচিত হয়েছে এই সংকলন। ডাউনলোড করুন 

আল-কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে রামাদান মাসে একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সংকলন: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: আলোচ্য রচনায় আল-কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে রামাদান মাসে একজন মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ডাউনলোড করুন 

রমযান মাসের ৩০ আসর

সংকলন: মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন | অনুবাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া – আলী হাসান তৈয়ব | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এ হচ্ছে ‘মুবারক রমযান মাসের কিছু আসর’; যাতে সিয়াম, কিয়াম, যাকাত ইত্যাদি ও এ উত্তম মাসের উপযোগী কিছু বিধান স্থান পেয়েছে। আমি এটাকে দৈনিক অথবা রাত্রিকালিন আসররূপে সাজিয়েছি। এর অধিকাংশ খুতবা বা আসরের ভূমিকা আমি ‘কুররাতুল ‘উয়ূনিল মুবসিরাহ বি তালখীসে কিতাবিত তাবসিরাহ’ গ্রন্থ থেকে যতটুকু যথা সম্ভব পরিপাটি করে চয়ন করেছি। আর আমি এখানে যত বেশি সম্ভব হুকুম-আহকাম, বিধি-বিধান, ও আদাব নিয়ে নিয়ে এসেছি; কারণ মানুষের এটাই বেশি প্রয়োজন। আর আমি এটাকে ‘মাজালিসু শাহরি রামাদান’ বা ‘রমযান মাসের আসরসমূহ’ নামকরণ করেছি। ডাউনলোড করুন 

রমযান স্বাগতম

সংকলন: আব্দুল হামীদ ফাইযী | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সহীহ দলীলকে ভিত্তি করে রমযানের ফাযায়েল ও রোযার মাসায়েল জানার জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই। মুসলিমদের জন্য রমযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এতে একজন মুসলিম রমযান মাসকে কিভাবে ফলপ্রসূ করবে তার মাসআলা-মাসায়েল ও ফাযায়েল সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদির প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলো খুব সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে। ডাউনলোড করুন 

রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস : শিক্ষা ও মাসায়েল

সংকলন: ইবরাহীম বিন মুহাম্মাদ আল হুকাইল | অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: রমযানের বিষয়ভিত্তিক হাদিস, শিক্ষা ও মাসায়েল: লেখক বলেছেন: “সিয়াম, ইতিকাফ, রমযানের কিয়াম ও লাইলাতুল কদর ইত্যাদি বিষয়ে ষাটটি দরস তৈরি করেছি, যা থেকে বিশেষভাবে দ্বীনের দায়ি ও মসজিদের ইমামগণ এবং সাধারণভাবে সকল মুসলিম উপকৃত হবেন, ইনশাআল্লাহ। প্রত্যেক দরসের ভিত্তি রেখেছি কুরআন ও হাদিসের ওপর, যদি শিরোনামের অনুকূলে কোন আয়াত পেয়েছি, তাহলে তা উল্লেখ করেছি, অতঃপর হাদিস উল্লেখ করেছি। আর শিরোনামের অনুকূলে কোন আয়াত না থাকলে সরাসরি উক্ত বিষয়ের হাদিস উল্লেখ করেছি। হাদিস বাছাই করার ক্ষেত্রে দলিল হিসেবে পেশ করার উপযুক্ত সহিহ ও হাসান হাদিসগুলো নির্বাচন করেছি, দুর্বল হাদিস এড়িয়ে গেছি। আল্লাহ সবাইকে এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার তওফিক দান করুন।” ডাউনলোড করুন 

প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ

সংকলন: অধ্যাপক মোঃ নুরুল ইসলাম  | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: এ বইটিতে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সিয়ামের ফজিলত, বিভিন্ন আহকাম ও মাসায়েল বর্ণনা করা হয়েছে। ডাউনলোড করুন 

ঈদুল ফিতর ও যাকাতুল ফিতর এর সংক্ষিপ্ত বিধি বিধান

অনুবাদক: উমাইর লুৎফর রহমান | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া | সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: গ্রন্থটিতে সংক্ষিপ্তভাবে ঈদুর ফিতরের বিবিধ বিধি-বিধান ও যাকাতুল ফিতরের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। ডাউনলোড করুন  [divider]

রামাযানের সাধনা

লেখক: হাফেজ হুসাইন বিন সোহরাব (অনার্স হাদিস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা, সৌদি আরব) ডাউনলোড করুন 

স্বাস্থ্য বিষয়ক 

  1. Ramadan Health and Spirituality Guide
  2. রমজান ও ডায়াবেটিস

[divider]

দুয়া

  1. Duas to say after Salah – in PDF
  2. Duas to say morning & evening – in PDF
  3. Duas to say when sleeping or waking – in PDF
  4. Duas to say morning & evening one page – in PDF

[divider]

অডিও – ভিডিও লেকচার

 বক্তা: শেইখ মতিউর রহমান মাদানী

রামাদানের ফজিলত

Audio | Video

রামাদানের সৎ আমল

Audio | Video

সিয়াম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

Audio | Video

সিয়াম ও রামজান

Audio Video

জাল জয়ীফ হাদিস রামাদান সম্পর্কে 

Video

রমজান স্বাগতম

বক্তা: Saifuddin Belal Madani Audio

সিয়াম (রোজা) – Video lecture

সিয়াম ও জিজ্ঞাসা

Video

রামাদান

রামাদানে সিয়াম পালন, ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। স্তম্ভ এমন কোন কিছুকে বলা হয় যা সম্পূর্ণ বস্তুকে দাড় করিয়ে রাখে। অথচ আমরা মুসলিমরা কি আজ এর যথার্থ মূল্যায়ন করছি! অথচ এই রামাদানকে ঘিরে সাহাবারা প্রস্তুতি শুরু করতেন মাস শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে। এর কারন হয়তবা আমরা রামাদানের সঠিক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারিনি। রামাদানের গুরুত্ব ও কিছু সংক্ষিপ্ত মাসায়েল নিয়ে শুনুন শাইখ আব্দুর রাজ্জাকের কুরআন ও হাদীসভিত্তিক এই অনন্য বক্তব্যটি। এই অডিওটি ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন

 সিয়ামের ফজিলত ও নফল সিয়াম

সিয়াম সাধনা, ইসলামের এক অনন্য ইবাদাত। এটি এমন এক ইবাদাত যার পুরস্কার দিবেন স্বয়ং আল্লাহ, সিয়াম পালনকারীদের জন্য রয়েছে জান্নাতে একটি স্বতন্ত্র দরজা আর এছাড়াও রয়েছে আরো প্রচুর পুরষ্কার। সিয়াম এমন কোন ইবাদাত নয় যা শুধু রামাদানের সাথে সম্পর্কিত , বরঞ্চ হাদীস ও সাহাবাদের জীবন থেকে আমরা দেখতে পাই প্রচুর নফল সিয়াম। সিয়াম পালনে নিজেকে আগ্রহী করে তুলতে শুনুন প্রখ্যাত ‘আলেমে দ্বীন শাইখ আব্দুর রাজ্জাকের সিয়ামের পুরষ্কার ও নফল সিয়াম সম্পর্কিত এই তথ্যবহুল বক্তব্য। এই অডিওটি ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন

[divider] ইংরেজি ভাষায়ে আরো প্রবন্দ, বই, লেকচার পড়তে এবং ডাউনলোড করতে হলে এই লিংক এ ক্লিক করুন – http://i.iloveallaah.com/qswwe

রমজানের পর ভাল কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার দশটি মাধ্যম

লেখক: আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
রমজানের পর কি? রমজান মাসে আল্লাহর নিকট বেশি প্রার্থনা করেছি, অধিক পরিমাণে নফল আদায় করেছি। ইবাদতে স্বাদ অনুভব করেছি। অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করেছি। জামাতের নামাজ ত্যাগ করিনি। হারাম জিনিস দেখা থেকে বিরত ছিলাম। কিন্তু রমজানের পর ইবাদতের স্বাদ হারিয়ে ফেলেছি যা রমজান মাসে পেতাম। আর আগে যে ইবাদতের প্রতি লোভ ছিল তা আর এখন পাই না। জামাতের সাথে অনেক সময় ফজরের নামাজ ছুটে যায়, অনেক নফল ইবাদত এখন করা হয় না কোরআন তেলাওয়াতও এখন আর আগের মত করা হয় না। এই সমস্যার কোন সমাধান বা চিকিৎসা আছে কি?

আপনাদের নিকট রমজানের পর ভাল কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার দশটি মাধ্যম পেশ করছি।

১) সব কিছুর পূর্বে আল্লাহ তাআলার সাহায্য কামনা করতে হবে হেদায়েত এবং দৃঢ়তার উপর  থাকার জন্য, আল্লাহ তাআলা গভীর জ্ঞানের অধিকারীদের দোয়ার প্রসংশা করেছেন। “হে আমাদের রব, আপনি হেদায়েত দেয়ার আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।” [সূরা আলে-ইমরান ৮ আয়াত]

২) ভাল লোকদের সাথে বেশি উঠা বসা করতে হবে, এবং ওয়াজ নছিহত ও বিভিন্ন ধরণের দ্বীনি আলোচনা যেখানে হয় সেখানে যাতায়াত করতে হবে।

৩) বই পত্র পড়া এবং ক্যাসেট শ্রবনের মাধ্যমে নেক লোকদের জিবনী জানা,  বিশেষ করে সাহাবাদের জীবনী জানা। কেননা এর মাধ্যমে মনের ভিতর সাহস ও আশার সঞ্চার হয়।

৪) বেশি বেশি করে প্রভাব বিস্তারকারী ইসলামি ক্যাসেট শ্রবণ করা: যেমন ভাল ভাল খতীবদের আলোচনা ওয়াজ যেখানে পাওয়া যায় তা সংগ্রহ করা। সময় সময় দোকানে যেয়ে খোজ খবর নেয়া যে নতুন কোন ক্যাসেট বা সিডি বাজারে এসেছে কিনা।

৫) ফরজের প্রতি যত্নশীল থাকা যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ রমজানের রোজা কোন কারণে কাজা হয়ে থাকলে তা দ্রুত আদায় করা। কেননা ফরজের মধ্যে অনেক কল্যাণ রয়েছে।

৬) নফলের প্রতিও যত্নশীল হওয়া যদিও তা কম হয়, কিন্তু অবশ্যই তা এমন নফল কাজ হতে হবে যা আদায় করতে মনে ভাল লাগে, কেননা আল্লাহর নিকট ঐ আমল অধিক প্রিয় যা নিয়মিত হয় যদিও তা পরিমাণে কম হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই বলেছেন।

৭) কোরআন হেফয করতে আরম্ভ করা এবং নিয়মিত তেলাওয়াত করা, আর যা হেফয করবে তা ফরজ নামাজে এবং নফল নমাজে পড়তে অভ্যাস গড়ে তোলা।

৮) বেশি বেশি জিকর ও ইস্তেগফার করা, কেননা এ কাজটি সহজ কিন্তু তার উপকার অনেক বেশি, ঈমান বৃদ্ধি করে এবং মন ও হৃদয়-কে শক্তিশালী করে।

৯) সম্পূর্ণরূপে এমন কিছু থেকে দুরে থাকা যা হৃদয়কে নষ্ট করে দেয়, যেমন অসৎ লোকের সঙ্গ, টেলিভিশন দেখা, ডিশ দেখা, কাম উদ্রেককারী গান শোনা, অশ্লীল অনুষ্ঠানে যাওয়া, অশ্লীল চিত্র দেখা ইত্যাদি।

১০) সর্বশেষ হে বন্ধুগণ! আপনাদের উপদেশ দিচ্ছি দ্রুত তওবা করার জন্য; খালেছ তওবা। যেখান থেকে আর পিছনে ফিরবেন না। আল্লাহ তাআলা বান্দা তওবা করলে অত্যন্ত খুশি হন।  আপনারা ঐ সমস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না যারা আল্লাহকে চিনে না রমজান ছাড়া অন্য সময়ে। তাদের সম্পর্কে পূর্বসূরীরা বলেন: তারা হতভাগ্য যারা রমজান ছাড়া অন্য সময়ে আল্লাহকে চিনে না।

— সমাপ্ত —

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা: সারা বছর রোযার ছোয়াব পাওয়ার একটি সূবর্ণ সূযোগ

97

লেখক: আলী হাসান তাইয়েব

আবু আইয়ুব আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখবে অতপর শাওয়ালে ছয়টি রোজা পালন করবে সে যেন যুগভর রোজা রাখল।” [মুসলিম : ১১৬৪]

সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা। অপর রেওয়ায়েতে আছে: “যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ।” [সূরা আন‘আম-আহমদ : ৫/২৮০, দারেমি : ১৭৫৫]

হাদিস থেকে যা শিখলাম:

এক. শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত জানা গেল যে, যে ব্যক্তি পুরো রমজান সিয়াম পালনের পর এ রোজা ছয়টি করবে সে যেন সারা জীবন রোজা করল। এ এক বিরাট আমল এবং বিশাল অর্জন।

দুই. বান্দার ওপর আল্লাহর কত দয়া যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক বদলা দিবেন।

তিন. কল্যণকাজে প্রতিযোগিতা স্বরূপ এ ছয় রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব। যাতে রোজাগুলো ছুটে না যায়। কোনো ব্যস্ততাই যেন পুণ্য আহরণের এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে।

চার. এ রোজা করা যাবে মাসের শুরু-শেষ-মাঝামাঝি সব সময়। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই করা হোক না কেন রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবে যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয়।

পাঁচ. যার ওপর রমজানের রোজা কাজা আছে সে আগে তার কাজা করবে তারপর শাওয়ালের রোজায় ব্রতী হবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে রমজানের রোজা রাখবে অর্থাৎ পুরোপুরি। আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।” [মুগনি : ৪/৪৪০] তাছাড়া ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে।

ছয়. মহান শরিয়ত প্রণেতা ফরজের আগে-পরে নফল প্রবর্তন করেছেন যেমনঃ ফরজ সালাতের আগে-পরের সুন্নতগুলো এবং রমজানের আগে শাবানের রোজা আর পরে শাওয়ালের রোজা।

সাত. এই নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে। কারণ রোজাদার অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে পারে না যা তার রোজার পুণ্যকে কমিয়ে দেয়।

— সমাপ্ত —

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন –রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

প্রতিবেশীর অধিকার ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব

আমরা আজ যে সমাজ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত তাতে আমাদের অনুভূতিগুলোও দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখাই যেন আজকালকার যুগের সবার চিন্তাধারার একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইট পাথরের দালানে থাকা আমরাও যেন অনুভূতিহীন কলের পুতুল। পাশের দরজার প্রতিবেশীর বিপদে আপদে, তাদের সুখ দুঃখের সঙ্গী হওয়া তো আজকাল দুরের কথা, কেউ কাউকে চিনিই না অনেক সময়। এরপরও কি আমরা দাবী করতে পারি আমরা সত্যিকারের মুসলমান? আসুন দেখি প্রতিবেশীদের অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল আমাদেরকে কি বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না, এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর।” [সূরা নিসা: ৩৬]

এই সম্পর্কিত হাদিস সমূহ-

১) ইবনে উমার ও আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জিব্রাইল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।” [সহীহুল বুখারী ৬০১৪ ও মুসলিম ২৬২৪]

২) আবূ যার (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “হে আবূ যার! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমান বেশী কর। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমত পৌছে দাও।” [মুসলিম ২৬২৫]

৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।” জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না।” [সহীহুল বুখারী ৬০১৬]

৪) মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে  থাকে না। উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হক না কেন।” [সহীহুল বুখারী ২৫৬৬ ও মুসলিম ১০৩০]

৫) উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ ইত্যাদি) গাড়তে নিষেধ না করে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন, কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ)কে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব)।” [সহীহুল বুখারী ২৪৬৩,৫৬২৭ ও মুসলিম ১৬০৯]

৬) উক্ত রাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।” [সহীহুল বুখারী ৬০১৮,৩৩৩১, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮]

৭) আবূ শুরায়হ খু্যায়ী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার কর। যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।” [সহীহুল বুখারী ৬০১৯,৬১৩৫, মুসলিম ৪৮]

৮) আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে।(যদি দু’জনকেই দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে) আমি তাঁদের মধ্যে কার নিকট হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’ তিনি বললেন, “যার দরজা তোমার বেশী নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)।” [সহীহুল বুখারী ৬০২০,২২৫৯, আবূ দাউদ ৫১৫৫]

৯) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার(রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সর্ব উওম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উওম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্ব উওম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উওম।” [তিরমিযী ১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৩০, দারেমী ২৪৩৭]

এখনো কি আমরা আমাদের প্রতিবেশীর ভালমন্দের খবর নেব না?

শাইখ ফকীহ মোল্লা আলী আল-ক্বারী (রহঃ) এর সংশ্লিষ্ট জীবনী

তাঁর নাম হচ্ছে- আলী বিন সুলতান মুহাম্মদ। উপনাম- আবুল হাসান। উপাধি- নুরুদ্দীন। তিনি একাধারে ফিকাহবিদ, মুহাদ্দিস ও ক্বারী। বাসস্থানের বিবেচনা থেকে তাঁকে হারাবি ও মক্কী বলা হয়। তিনি ‘মোল্লা আলী ক্বারী’ নামে সুপরিচিত। তাঁকে ক্বারী উপাধি দেয়া হয়েছে; যেহেতু কুরআনের ভিন্ন ভিন্ন পঠনপদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ ছিলেন। খোরাসানের প্রধান শহর ‘হারাত’ এর বাসিন্দা হিসেবে তাঁকে ‘হারাবী’ বলা হয়। খোরাসান বর্তমানে আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। তাঁকে মক্কী বলা হয় যেহেতু তিনি মক্কায় সফর করেছেন, মক্কার আলেমদের থেকে ইলম অর্জন করেছেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করেছেন।

তিনি ৯৩০ হিজরি সালের দিকে হেরাত শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। সেখানেই বড় হয়েছেন এবং জ্ঞান অর্জন করেছেন। কুরআন মুখস্থ করেছেন। তাজবিদ শিখেছেন শাইখ মঈন উদ্দীন বিন হাফেয যাইন উদ্দীন আল-হারাবী এর নিকট। সে সময়কার আলেমদের কাছ থেকে তিনি ইলমে দ্বীন অর্জন করেছেন। এরপর তিনি মক্কায় সফর করেছেন এবং মক্কাতে থেকে সেখানের আলেমদের কাছে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইলমে দ্বীন অর্জন করেছেন। এভাবে ইলম অর্জনের মাধ্যমে তিনি মশহুর আলেমে পরিণত হয়েছে। তিনি হানাফি মাযহাবের আলেম ছিলেন। তার গ্রন্থাবলি ও জীবনী থেকে সেটাই জানা যায়। হানাফি মাযহাবের অনেক মাসয়ালা নিয়ে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন এবং এর পক্ষে দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

তিনি দ্বীনদার, তাকওয়াবান ও পবিত্র চরিত্রের অধিকারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নিজ হাতে কাজ করে খেতেন। তিনি ছিলেন দুনিয়ার প্রতি মোহহীন, আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও অল্পে তুষ্ট। মানুষের সাথে কম মিশতেন। ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন। তিনি সুন্দর হস্তাক্ষরে প্রতি বছর একটি করে কুরআন লিখতেন। লিখিত কুরআন শরিফের পার্শ্বটীকাতে ক্বিরাআত ও তাফসির লিখতেন। সেটি বিক্রি করে যা পেতেন তা দিয়ে তাঁর বছর চলে যেত। তিনি মনে করতেন শাসকদের নিকটবর্তী হওয়া এবং তাদের উপঢৌকন গ্রহণ করা ইখলাস ও তাকওয়ার পরিপন্থী। তিনি বলতেন: “আল্লাহ আমার পিতার প্রতি রহম করুন। তিনি বলতেন: আমি চাই না যে, তুমি আলেম হও; এই আশংকায় যে, তুমি আমীর-ওমরাদের দরজায় ধরনা দিবে।” [মিরকাতুল মাফাতীহ (১/৩৩১)]

ইলম, আমল ও নেকীর কাজে ভরপুর জীবন কাটিয়ে তিনি ১০১৬ হিজরীতে মতান্তরে ১০১০ হিজরীতে মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন। তবে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী তিনি ১০১৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন এবং মুয়াল্লা নামক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন:-

  • ইবনে হাজার আল-হাইছামী আল-ফকীহ
  • আলী মুত্তাকি আল-হিন্দি
  • আতিয়্যা বিন আলী আল-সুলামি
  • মুহাম্মদ সাঈদ আল-হানাফি আল-খোরাসানি
  • আব্দুল্লাহ আল-সিন্দি
  • কুতুবুদ্দিন আল-মাক্কী

তাঁর প্রসিদ্ধ ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন:-

  • আব্দুল কাদের আল-তাবারী
  • আব্দুর রহমান আল-মুরশিদি
  • মুহাম্মদ বিন ফার্‌রুখ আল-মাওরাবী

লোকেরা তাঁর ভূয়শী প্রশংসা করেছেন:-

  • আল-হামাবি ‘খুলাসাতুল আছার’ গ্রন্থ (৩/১৮৫) এ বলেন: “তিনি ইলমের কর্ণধার, যুগের অনন্য, মতামত বিচার-বিশ্লেষণে অতুলনীয়, তাঁর প্রসিদ্ধি তাঁর গুণ বর্ণনার জন্য যথেষ্ট।”
  • আল-ইসামি ‘সামতুন নুজুম’ গ্রন্থ (৪/৪০২) এ বলেন: “আকলি ও নকলি (বর্ণনানির্ভর ও যুক্তিনির্ভর) উভয় জ্ঞানের ভান্ডার। হাদিসে রাসূলের পূর্ণ সুধা পানকারী। মুখস্থ শক্তি ও বোধশক্তির জন্য প্রসিদ্ধ ও নামকরা একজন ব্যক্তিত্ব।”
  • লাখনাবি তাঁর ‘আত-তালিক আল-মুমাজ্জাদ’ গ্রন্থে বলেন: “অত্যুজ্জ্বল ইলম ও স্বনামধন্য মর্যাদার অধিকারী”

এরপর তিনি তাঁর লিখিত বেশ কিছু গ্রন্থ উল্লেখ করে বলেন: এগুলো ছাড়াও তাঁর লিখিত আরও অগণিত পুস্তিকা রয়েছে; সবগুলো মূল্যবান।

নোমানী তার ‘আল-বিজাতুল মুযজাত’ নামক গ্রন্থ (পৃষ্ঠা-৩০) বলেন: “তিনি ছিলেন সমকালীন আলেমদের মধ্যে সেরা। প্রসিদ্ধ ইমাম, আল্লামা। আকলি ও নকলি অনেক জ্ঞানের আধার ছিলেন তিনি। হাদিস, তাফসির, ক্বিরাআত, উসুলে ফিকহ, আরবী ভাষা, ভাষাবিজ্ঞান ও বালাগাত ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন।”

ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) ও ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) কে তিনি যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। তাঁদের দুজনের উপর আরোপিত অভিযোগগুলো তিনি খণ্ডন করতেন এবং তাঁদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতেন। তাঁর গ্রন্থাবলির অনেক স্থানে তিনি সলফে সালেহিনের আকিদা সাব্যস্ত করেছেন। যদিও তাঁর গ্রন্থাবলির কিছু কিছু স্থানে সলফে সালেহিনের ‘মানহাজ’ (নীতি) এর পরিপন্থী বিষয় পাওয়া যায়। সেসব ক্ষেত্রে তিনি হানাফি-মাতুরিদি আলেমগণের মাযহাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। আল্লাহর গুণাবলি সংক্রান্ত আয়াতগুলোর ক্ষেত্রে তিনি সলফে সালেহিনদের পরবর্তী আলেমদের নীতি গ্রহণ করেছেন অথবা আল্লাহর গুণাবলিকে ভিন্নার্থে ব্যাখ্যার নীতিতে চলেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত প্রত্যেক ব্যক্তির কিছু জিনিস গ্রহণীয় ও কিছু জিনিস বর্জনীয়। [দেখুন: আস-শামস আল-আফগানি লিখিত ‘আল-মাতুরিদিয়্যা’ (১/৩৫০), (১/৫৩৭-৩৪০)]

তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলো হচ্ছে:-

  • তাফসিরুল কুরআন
  • মিরকাতুল মাফাতিহ
  • শারহু নুখবাতুল ফিকার
  • আল-ফুসুল আল-মুহিম্মাহ
  • শারহু মুশকিলাতুল মুয়াত্তা
  • বিদাআতুস সালিক
  • শারহুল হিসনিল হাসিন
  • শারহুল আরবায়িন নাবাবিয়্যা
  • জাওউল মাআলি
  • শাম্মুল আওয়ারিদ ফি যাম্মির রাওয়াফেয
  • ফাইযুল মুয়িন
  • রিসালা ফির্‌ রাদ্দ আলা ইবনে আরাবি ফি কিতাবিহি আল-ফুসুস ওয়া আলাল কায়িলিনা বিল হুলুল ওয়াল ইত্তিহাদ

এছাড়াও আরও অনেক গ্রন্থ। আরও জানতে দেখুন:-

  • যিরিকলি এর ‘আল-আলাম’ (৫/১২-১৩)
  • কান্দালাবি এর ‘আত-তালিক আস-সাবিহ আল মিশকাতিল মাসাবিহ’ (পৃষ্ঠা-৬)
  • লাখনাবি এর ‘আত-তালিকাত আস-সানিয়্যাহ’ (পৃষ্ঠা ৮-৯)
  • মুহাম্মদ আব্দুর রহমান আল-শামা এর ‘আল-মোল্লা আলী আল-ক্বারি ফিহরিস মুআল্লাফাতিহি ওয়ামা কুতিবা আনহু

আল্লাহই ভাল জানেন।

দো‘আ করছেন কিন্তু সাড়া পাচ্ছেন না?

196

লিখেছেন: মনসূর আহমেদ | অনুবাদক: মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ | ওয়েব সম্পাদনা: মো: মাহমুদ ইবনে গাফফার

কিছুলোক অনেক দো‘আ করেন কিন্তু কোনো সাড়া পান না। 

প্রশ্ন:

দো‘আ করলে তার উত্তর পেতে দেরি হয় কেন? কিছুলোক অনেক দো‘আ করেন কিন্তু কোনো সাড়া পান না; তারা দীর্ঘকাল ধরে চাইতে থাকেন। কিন্তু কোনো ফল পান না। এমন ক্ষেত্রগুলোতে আপনি দেখবেন শয়তান এমন লোকের কানে ফিসফিসানি শুরু করছে এবং স্রষ্টা সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক চিন্তা করতে জন্য শিক্ষা দিচ্ছে।

উত্তর:

প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ্‌র জন্য।

প্রথমত: যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটা ঘটে তার বিশ্বাস করা উচিৎ যে, দো‘আ করার পরও সাড়া না পাওয়ার মাঝে একটি কারণ ও বিশাল এক প্রজ্ঞা লুকিয়া আছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সার্বভৌমত্বের মালিক এবং কেউই তাঁর দয়াকে থামিয়ে দিতে বা ক্ষমতাকে নস্যাৎ করতে পারে না। তিনি দয়া করে কাউকে কিছু দিতে চাইলে বা ন্যায় বিচার করে কাউকে দিতে না চাইলে তার ইচ্ছেকে প্রভাবিত করে এমন কোনো শক্তি বা সত্ত্বা নেই। আমরা তাঁর বান্দা আর আমাদের সাথে তাই করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন। “আর তোমাদের প্রভু যা ইচ্ছা ও পছন্দ তা-ই সৃষ্টি করেন, এতে তাদের কোনো পছন্দের অবকাশ নেই।” [আল-কাসাস ২৮:৬৮]

কোন যুক্তিতে একজন কর্মচারী মালিককে তাঁর প্রাপ্য সম্মান না করেই নিজের পাওনা পুরোটাই দাবী করতে পারে?

অবাধ্যতা নয় আনুগত্য, বিস্মরণ নয় স্মরণ, অকৃতজ্ঞতা নয় ধন্যবাদ পাওয়াটাই তাঁর অধিকার। আপনি যদি নিজের দিকে তাকান আর দেখেন কিভাবে নিজ দ্বায়িত্ব পালন করছেন, তবে নিজেকে খুবই নগন্য মনে হবে। আপনি অপমান বোধ করবেন আর উপলব্ধি করবেন যে, তাঁর ক্ষমা ও দয়া ছাড়া কোনো মুক্তিই নেই। তাই সৃষ্টিকর্তা ও নিয়ন্তা আল্লাহ্‌র দাস হিসেবেই নিজেকে দেখুন।

দ্বিতীয়ত: আল্লাহ মহাজ্ঞানী, তিনি কারণ ছাড়া কাউকে কিছু দেন না বা দেওয়া ফেরান না। আপনি কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে সেটাকে খুব ভালো ভাবতে পারেন। কিন্তু তাঁর জ্ঞানে এটা আবশ্যক নয়। একজন ডাক্তার এমন কিছু করতে পারেন যা আপনার কাছে যন্ত্রণা দায়ক মনে হবে যদিও তা রোগীর সর্বোচ্চ স্বার্থেই করা হয়ে থাকে। “আর আল্লাহ্‌ই সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী।” [আল-নাহল ১৬:৬০]

তৃতীয়ত: ব্যক্তি যা চায় তার প্রত্যেকটিই তাকে দেয়া হলে তা তার জন্য অমঙ্গলজনকও হতে পারে। একজন সালাফের বর্ণনানুযায়ী তিনি কোনো সামরিক অভিযানে যাওয়ার জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দো‘আ করতেন। কিন্তু তিনি একটি কণ্ঠ শুনতে পান: “তুমি সামরিক অভিযানে গেলে বন্দী হবে। আর বন্দী হলে তুমি খ্রীস্টান হয়ে যাবে।” [সায়িদ আল-খাতির, ১/১০৯] ইবনুল কায়্যিম বলেন: ‘আল্লাহ তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা রহমত স্বরূপ। যদিও তা প্রদাণ বন্ধ করে হতে পারে; পরীক্ষা হলেও সেটি কল্যাণকর। আর তাঁর নির্ধারিত দূর্যোগও মঙ্গলজনক। যদিও তা পীড়াদায়ক হয়।‘ [মাদারিজ আল-সালেকীন, ৪/২১৫]

কেউ জানেনা তার বিষয়গুলো কিভাবে শেষ হবে। সে এমন কিছু চাইতে পারে যা তাকে পরিচালিত করবে কুফলের দিকে যাতে তার ক্ষতি হয়ে যাবে। তার জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো তা অদৃশ্যের মালিক আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন। “আর এমন হতে পারে তুমি যা অপছন্দ করছো তা তোমার জন্য মঙ্গলকর।” [আল-বাকারা ২:২১৬]

এ আয়াতের একটি অর্থ হতে পারে যে, আমাদের এমন ভাবা উচিৎ নয় যে বিধাতার বিধান অন্যরূপ অথবা তাঁর কাছে এমন কিছু চাওয়া উচিৎ নয় যে বিষয়ে আমাদের জ্ঞান নেই এজন্য যে তা আমাদের অজান্তেই আমাদের ক্ষতি করবে। তাই আমাদের জন্য আমাদের প্রভু যা পছন্দ করেছেন তা ভিন্ন অন্য কিছু আমাদের পছন্দ অরা উচিৎ নয়। বরং তাঁর কাছে আমাদের কোনো শুভ পরিণতি কামনা করা উচিৎ। আর এটা এজন্য যে, এছাড়া অধিকতর উপকারী আমাদের জন্য কিছুই আর নেই।

চতুর্থত: বান্দা নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার চেয়ে আল্লাহ্‌ তার জন্য যা পছন্দ করেন তা-ই শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাকে এতোটাই ভালোবাসেন যতোটা বান্দা নিজেকেই ভালবাসতে পারে না। যদি তার এমন কিছু হয় যা সে অপছন্দ করে, তাহলে সেটা না ঘটার চেয়ে ঘটাই উত্তম; তাই তাঁর বিধান দয়া ও মমতায় ভরপুর। বান্দা যদি আল্লাহ্‌র নিকট আত্মসমর্পণ করে আর বিশ্বাস করে যে, সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ্‌ এবং সবকিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রানাধীন, এবং তার প্রতি তিনি নিজ অপেক্ষা অধিক দয়াশীল, তবেই সে কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি না পেলেও তার মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হবে না। [দেখুন: মাদারিজ আল-সালিকীন, ২/২১৫]

পঞ্চমত: এমন হতে পারে যে, ব্যক্তি এমন কিছু করেছেন যার জন্য তার দো‘আ কবুল হচ্ছে না বা বিলম্ব হচ্ছে। হতে পারে তার খাদ্য হারাম; হতে পারে তিনি যখন দো‘আ করেছেন তার মনে ঐকান্তিকতার অভাব ছিল; হতে পারে তিনি কোনো পাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় দো‘আ করেছেন। তাই দো‘আর সাড়া পেতে দেরি হওয়াটা ব্যক্তির নিজেকে সামলে নিতে, প্রভুর সম্মুখে কিভাবে দাঁড়াতে হবে তা শুধরে নিতে তাগিদ দেয়। যাতে করে সে নিজে সংশোধিত ও অনুতপ্ত হয়; যদি সে দো‘আর সাড়া দ্রুত পেত হয়ত সে বে-খেয়াল হয়ে যেত। যাকিছু করছে তা ঠিক বলে মনে  করে তা করেই যেতো। তারপর তার ভেতর আত্ম-তুষ্টির মনোভাব তৈরি হতো যা তাকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যেতো।

দো‘আর সাড়া পেতে দেরি হওয়া বা কোনো সাড়া পাওয়ার কারণ হতে পারে আল্লাহ্‌ চাচ্ছেন বান্দার পুরষ্কার কিয়ামত পর্যন্ত দেরি করে দিতে। হয়তো তিনি চাচ্ছেন সমপরিমাণ কোনো পাপ মার্জনা করতে যা বান্দা বুঝতে পারে না।

ঘটনা যেটাই হোক, দো‘আর ফল অনিবার্য। যদিও হতে পারে আপনার চোখে আপনি তা দেখেন না। তাই স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন এবং বলুন: সম্ভবত তিনি আমার দো‘আয় এমনভাবে সাড়া দিয়েছেন যা আমি বুঝি না। সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “এমন কোনো মুসলিম নেই যে আল্লাহর কাছে দোআ করে আর তার কোনো পাপ নেই বা পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করেনি, অথচ আল্লাহ্‌ তাকে তিন পদ্ধতির যে কোনোভাবে পুরষ্কার দেবেন: হয়তো আল্লাহ্‌ তার দো‘আয় তাৎক্ষনিকভাবে সাড়া দেবেন, বা তিনি পরকালে প্রতিদান দেয়ার জন্য জমা রাখবেন, অথবা এই কারণে তার সমপরিমান পাপ মোচন করে দেবেন।” সাহাবাগণ (রা:) জানতে চাইলেন: “আমরা যদি অনেক বেশি দোআ করি?” তিনি বললেন, “আল্লাহ্‌ ততোধিক মহান।” [হাদীসটি আহ্‌মাদ সংকলন করেছেন। সহীহুল তারগীব ওয়াত্তারহীব (১০৭৪৯) গ্রন্থে আল-আলবানী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলে রায় দিয়েছেন]

পরিশেষে, দো‘আ করে ফল লাভ না করার বা দেরিতে করার অনেক কারণ রয়েছে; এটা আমাদের অবশ্যই মানতে হবে এবং দো‘আ করা থামিয়ে দিলে চলবে না। কেননা দো‘আ সবসময়ই আমাদের জন্য কল্যাণ এবং মঙ্গল বয়ে আনে।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন সমস্ত বিষয়ে সর্বজ্ঞ।

‘বিসমিল্লাহ্‌’ মানে কি এটা কি আমরা জানি ?

ইসলাম যে কত সুন্দর আর ইসলামের জ্ঞানে যে কত গভীর তাৎপর্য ও সৌন্দর্য আছে এটা আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপলব্ধি করে উঠতে পারিনা।কারণটা অনেকক্ষেত্রেই ইলম শিক্ষায় সময় বের করতে নিজের অনাগ্রহ এবং আগ্রহ থাকলেও দ্বীনের ইলম কার কাছ থেকে নিচ্ছি সেটার উপর নির্ভর করে পুরোপুরি।

শাইখ আহমাদ মুসা জিবরীল তাওহীদ-১ লেকচারে মিনিট পাঁচেক “বিসমিল্লাহ্‌”র অন্তর্নিহিত তাৎপর্য নিয়ে কিছু কথা বলেছেন।এই সামান্য জ্ঞানটাও যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমার বিশ্বাস এটা একটা “Lifetime Achievement”!বাহুল্য কাজ কিংবা ভালো কাজে না চাওয়া সত্ত্বেও লোকদেখানো মনোভাব থেকে মুক্ত হয়ে আমরা বুঝতে পারবো যে সিরাতুল মুস্তাকিমে থাকা আসলেই অনেক সহজ আলহামদুলিল্লাহ্‌ ! তাই শাইখের লেকচার থেকে কিছুটা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করলামঃ বিসমিল্লাহ্‌ এসেছে “বাসমালাহ” থেকে।তাওহীদের সকল দিকই(aspects) এই “বিসমিল্লাহ”র মধ্যে পরিস্ফুটিত হয়।তাওহিদ উল উলুহিয়্যাহ ,তাওহিদ উর রুবুবিয়া এবং তাওহিদ আসমা ওয়াসসিফাত এই তিনটাই।নিচের তিনটা পয়েন্টে আমরা দেখে নিই যে তাওহীদের এই aspect গুলো আসলে কি বোঝাচ্ছে-

প্রথমত, বিসমিল্লাহ্‌ বলে কোন কাজ শুরু করা মানেই এই সাক্ষ্য দেয়া যে আল্লাহ্‌ই আমাকে এই কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন,যদি এই কাজে আল্লাহর সায় না থাকতো আমি কখনোই এ কাজ করতে পারতাম না।হে আল্লাহ্ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টির(Only for your sake) জন্যই এ কাজটা করছি।

কেউ কখনো হারাম কাজ করতে গিয়ে বিসমিল্লাহ্‌ বলতে পারেনা।যদি বলে সে আসলে দ্বিগুণ গুনাহ করছে।কারণ, সে যখন বলে বিসমিল্লাহ্‌ সে তখন সাক্ষ্য দিচ্ছে যে আল্লাহ্‌ই তাকে এ কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন অতচ আল্লাহ্‌ কখনোই সে কাজের বৈধতা দেননি।এটা হল একটা গুনাহ আর দ্বিতীয়টা হল ওই হারাম কাজের গুনাহ ।

এই ধারণাই হল তাওহীদ উল উলুহিয়্যাহ।

দ্বিতীয়ত, যখন আমরা কোন একটা জিনিস লিখি বা করি আমাদের মনে এই প্রশ্নটা আসা উচিৎ যে এই আমি লিখছি কে আমাকে এই লিখার ক্ষমতা দিল?এ কাজ করার ক্ষমতা আমায় কে দিয়েছেন?- আল্লাহ্‌ই আমাকে দিয়েছেন এই ক্ষমতা।তাই যখন আমরা বলি বিসমিল্লাহ্‌ তখন আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি “I couldn’t have done this without the power Allah has given me, Bismillah I am doing this by the power Allah has given it. Bismillah I eat because Allah has given me this provision and had it not been for the power Allah has given me I wouldn’t be able to chew it. Bismillah I write because if it wasn’t for Allah given me the power my hand wouldn’t be able to move”

এটা বলা আসলে “লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”বলার মত মানে “If it was not for his power I wouldn’t have done this act” এজন্যই আল্লাহ্‌ বলছেন “Every provision you have is from Allah”

এটা হল তাওহীদ আররুবুবিয়্যাহ।

তৃতীয়ত, বিসমিল্লাহ্‌ বলা মানে “Seeking Blessing by the name of Allah.You are using the name of Allah to Bless whatever you are doing.” অর্থাৎ আল্লাহ্‌র নামকে ব্যবহার করে যেই কাজটা আমরা করবো সেটার জন্য বরকত চাওয়া।আর এই ধারনাটাই হল তাওহীদ আসমা ওয়াস সিফাত।

[‘বিসমিল্লাহ’র এই ব্যাখ্যাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই সম্ভবহলে অন্যদের কাছেও এই জ্ঞান পৌঁছে দিন:Both Online & Offline] লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে “ঈনসাফ” এর ব্লগ থেকে।

(এ ওয়েব সাইটের সাথে সম্পৃক্ত অন্য ওয়েব সাইট অথবা অন্য ওয়েব সাইটে প্রদত্ত বিষয়-বস্তুর সাথে এ ওয়েব সাইটে প্রদত্ত বিষয়-বস্তুর সম্পৃক্ততা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অন্য ওয়েব সাইটে প্রবেশ করার ব্যাপারে কোনো দায়-দায়িত্ব কুরআনের আলো বহন করে না। তাতে প্রবেশ করবেন নিজ দায়িত্বেই। কারণ, সে সকল ওয়েব সাইট আমাদের দখলে নেই এবং তার বিষয়-বস্তু কিংবা ওয়েব সংক্রান্ত অন্যান্য প্রযুক্তিও আমাদের আয়ত্বে নেই। এবং এটাও মনে করা যাবে না যে, কুরআনের আলোর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য ওয়েব সাইটে উপস্থাপিত জ্ঞান ও তথ্যের ব্যাপারে কুরআনের আলো একমত। কুরআনের আলো সে সব ওয়েবের লিংক দিয়ে শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চায়। তাছাড়া সে সব ওয়েব সাইটে প্রদত্ত তথ্যের কোনো দায়-দায়িত্ব কুরআনের আলো কখনও বহন করে না।)

ঘুষের ভয়াবহতা ও তা থেকে উত্তরণের উপায়

money-bribe-1
লেখক: মো: আব্দুল কাদের | সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

 

ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। ঘুষ হচ্ছে স্বাভাবিক ও বৈধ উপায়ে যা কিছু পাওয়া যায় তার উপর অবৈধ পন্থায় অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করা। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়মিত বেতন/ভাতা পাওয়া সত্ত্বেও যদি বাড়তি কিছু অবৈধ পন্থায় গ্রহণ করে তাহলে তা ঘুষ হিসাবে বিবেচিত। অনেক সময় স্বীয় অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ঘুষ দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় টাকা-পয়সা ছাড়াও উপহারের নামে নানা সমগ্রী প্রদান করা হয়। সুতরাং যেভাবেই হোক, আর যে নামেই হোক তা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত। [1]

সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে থেকে হারাম অর্থ গ্রহণই হচ্ছে ঘুষ। এই ঘুষ যারা দেয় তারাও সমান অপরাধী। বেআইনী ফায়দা হাসিলের জন্য যারা কর্তাব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন সুবিধা বা টাকা পয়সা দিয়ে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করে তারাই এই গুনাহ সংঘটনের অন্যতম শরীক। যারা ঘুষকে একটি অঘোষিত ব্যবস্থা হিসেবে প্রশ্রয় দেয় তারাই অপরাধী। দেখা যায় মাঝে মধ্যে বেড়াই ক্ষেত খায়, রক্ষকই হয় ভক্ষক। ন্যায়কে যাদের লালন করার কথা তারাই অন্যায়কে ধারণ করছে। এভাবে দুর্নীতির ডালপালা সারা দেশে বিস্তার লাভ করে।

ঘুষ বা উৎকোচ আসে নজরানার রূপ ধরে। “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবীকে কর্মচারী নিয়োগ করে যাকাত আদায়ের জন্য পাঠালেন। সে ফিরে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, এটা যাকাতের মাল আর এটা আমাকে উপঢৌকনস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। এতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন- সরকারী কর্মচারীর কি হলো! আমরা যখন তাকে কোনো দায়িত্ব দিয়ে কোথায়ও প্রেরণ করি তখন সে ফিরে এসে বলে এই মাল আপনাদের (সরকারের) এবং এটা আমাকে প্রদত্ত উপহার। সে তার বাড়িতে বসে থেকে দেখুক তাকে উপহার দেওয়া হয় কি-না।[2]

একবার এক সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে কিছু উপহার দিলেন। উপহারগুলো দেখে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন- তুমি যে বললে এগুলো বায়তুলমালের আর এগুলো আমার উপহার! তুমি এই পদ ছেড়ে বাপের ঘরে বসে থাক, দেখ তো কে তোমার জন্য উপহার নিয়ে আসে।” সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করার এই জ্ঞান ও সাহসের জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আল-ফারুক উপাধি দিয়েছিলেন। কবি ফররুখ বলেছেন:

“আজকে উমর পন্থী পথিক দিকে দিকে প্রয়োজন
পিঠে বোঝা নিয়ে পাড়ি দেবে যারা প্রান্তর প্রাণপণ।

কিন্তু হায়! এখন মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের এই সমাজের চিত্র দেখলে প্রশ্ন জাগে ইসলামের সেই মহান শিক্ষার প্রতিফলন কোথায়? এ জন্যেই কবি নজরুল বলেছেন:

“ইসলাম সে তো পরশ মানিক তারে কে পেরেছে খুঁজি,
পরশে তাহার ধন্য যারা তাদেরই আমরা বুঝি।

ইসলামের পরশ আমাদের কলবে পৌঁছেনি বলেই আজ আমরা ঘুষকে উপহার ভাবি। অফিসের ফাইল ঘুষ না পেলে সামনে চলে না। যার ফলে দেশ ও জাতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয় না। কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে মেধাহীনদের রাজত্ব চলে। ঘুষ দিয়ে যে চাকুরী পেতে হয় সেই চাকুরীকে সেবা মনে করার কোনো কারণ নেই। আর তাই ঘুষ দিয়ে শিক্ষকের চাকুরী পাওয়া লোকটির কাছ থেকে তার ছাত্ররা কতটুকু এলেমদার হবে তা নিয়ে মনে অনেক সংশয় থেকে যায়।

এই ঘুষের জামানায় পাকা দড়িবাজরা তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছে দেখে আল্লাহর নেক বান্দারা মাঝে মাঝে ভাবে, যে কি নেক নিয়তের কি কোনো দাম নেই? এটা কি বোকামি? কিন্তু তিতা ফলের চারা লাগিয়ে যেমন সুমিষ্ট ফলের আশা করা যায় না তেমনি দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে উঠা ব্যবস্থাপনার কাছে কোনো কল্যাণ আশা করা যায় না। তাই ঘুষ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন: “এরপর যালিমরা বদলে দিল যা তাদের বলা হয়েছিল। তার পরিবর্তে অন্য কথা। এ কারণে যারা যুলুম করল তাদের উপর নাযিল করলাম আকাশ হতে এক মহাশাস্তি। কারণ, তারা অধর্ম-অন্যায় কাজ করেছিলো।” [আল-কুরআন, ২:৫৯]

এ আয়াতে সত্যকে বদলে দেওয়ার শাস্তির উল্লেখ আছে। ঘুষও সত্যকে বদলে দেয়। পাসকে ফেল দেখিয়ে দেয়। একজন হকদারের হক বদলে দিয়ে অন্যকে অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়। অতীত যামানায় যারা ঘুষ গ্রহণ করত, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ধর্মের বাণীতে জালিয়াতি করত তাদের সম্পর্কে আল-কুরআনে বলা হয়েছে: “সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে- এটি আল্লাহর নিকট হতে এসেছে। তাদের হাত যা রচনা করেছে তার জন্য শাস্তি তাদের এবং যা তরা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি তাদের।” [আল-কুরআন, ২:৭৯]

ঘুষ হচ্ছে একটি হারাম জিনিস। যদিও ঘুষখোর এটাকে হারাম মনে করে না। আয়াতে ঘুষ খেয়ে ধর্মের বাণী বদলে দেওয়ার কথা বলা হলেও সকল জালিয়াতির জন্যই শাস্তি প্রযোজ্য। ঘুষ সব সময় টাকা-পয়সা হয় না। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানান বস্তু ও বিষয় হতে পারে। এ জন্যই হাদীসের ভাষায় এটিকে বলে ‘রিশওয়াহ’ বা দড়ি। দড়ি দিয়ে কুপের ভেতর থেকে বালতি টেনে উঠাবার মত ঘুষ অন্যের হক নিজের ঘরে নিয়ে আসে। এজন্য এই প্রক্রিয়ায় তিনটি পক্ষ থাকে। ১. রাশী راشى যে ঘুষ প্রদান করে, ২. মুরতাশী مرتشى যে ঘুষ গ্রহণ করে এবং ৩. রায়েশ رائش যে অনুঘটক হয়ে কাজ করে। আল্লামা সান‘আনী তার বিখ্যাত গ্রন্থ সুবুলুস সালাম শারহু বুলুগিল মারাম গ্রন্থে বলেন- রায়েশ বা ঘুষের ঘটক হচ্ছে্ ওই ব্যক্তি যে ঘুষখোর ও ঘুষদাতার মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে থাকে। [3]

তবে মূলপক্ষ হচ্ছে দুটি: যে ঘুষ দেয় ও যে ঘুষ খায়। আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ঘুষদাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ওপর আল্লাহর লা’নত।[4]

ইমাম তাবারানী তার আল-মু‘জামুস সগীর গ্রন্থে একটি হাদীস সংকলন করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “রিশওয়াহ বিচারের ক্ষেত্রে কুফরি। লোকেরা নিজেদের মধ্যে এ কাজ করা সুহত।” আগেই বলা হয়েছে রিশওয়াহ অর্থ ঘুষ। তাহলে সুহত অর্থ কি? এ প্রশ্নের উত্তর পাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি হাদীসে: “যে গোশত উদগত হয়েছে সুহত থেকে, তার জন্য জাহান্নামের আগুনই বেশি উপযোগী। একজন জিজ্ঞেস করলো, সুহত কী? তিনি বললেন, বিচার বা শাসনকার্যে ঘুষ গ্রহণ।[5]

তাহলে দেখা যায় যে, ঘুষের অর্থে যে নিজে পানাহার করে এবং তার পোষ্যদের পানাহার করায় সকলের জন্যই তা খুবই মন্দ কাজ। এই ঘুষ-লালিত দেহের ইবাদত আল্লাহ কবুল তো করবেনই না বরং তাদের জন্য লাঞ্ছনা, আখিরাতের আগুণ অপেক্ষা করছে। ইয়াহূদীদের দুর্গতির কারণ হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ (ঘুষ) ভক্ষণে অত্যন্ত আসক্ত।” [আল-কুরআন, ৫:৪২] অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে নবী! আপনি (আহলে কিতাবদের) অনেককেই দেখবেন পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে (ঘুষ খাওয়াতে) তৎপর। তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।” [আল-কুরআন, ৫:৬২]

আয়াতে ‘অবৈধ ভক্ষণ’ তরজমা করা হলেও হাদীসে এই ‘সুহত’ বা অবৈধ আয়কে ঘুষ হিসেবে তাফসীর করে দেওয়া হয়েছে। তবে সকল প্রকার দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত আয়ও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এই ঘুষের বিষয়টি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে স্পষ্টতই এসেছে। বিচারের রায়কে প্রভাবিত করা এবং প্রশাসকদেরকে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়নিষ্ঠতা থেকে আলাদা করাই যে ঘুষের মূখ্য উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তা প্রতিফলিত হয়েছে এই আয়াতে: “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকদের বা প্রশাসকদের কাছে পেশ করো না।” [আল-কুরআন, ২: ১৮৮]

এ আয়াতে ‘হুক্কাম’ অর্থ শাসকগণ, প্রশাসনগণ, বিচারকগণ হতে পারে। আরবী ভাষায় হাকিম বা বহুবচনে হুক্কাম শব্দটি এইসব অর্থে সমানভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কথা বুঝানো হয়েছে যাদের সিদ্ধান্তে একজনের সম্পদে অন্য কেউ অন্যায়ভাবে ভাগ বসাতে পারবে। উপর্যুক্ত আয়াতে وتدلوا بها শব্দটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থ হচ্ছে ‘বালতি কুপে ফেলে তা টেনে উঠানো।’ ঠিক তেমনি ঘুষের রশিতে নিজের প্রত্যাশিত বস্তু টেনে আনা হয়। এটি রুপক অর্থে এসেছে। এজন্যই আল্লামা আলুসী তার তাফসীর রুহুল মা‘আনীতে বলেন: “তোমাদের সম্পদের কিছু অংশ অসাধু বিচারক বা প্রশাসকদেরকে ঘুষ হিসেবে দিও না।” তাফসীরে মাদারেকেও এ আয়াতের ‘বাতেল’ শব্দ দ্বারা ঘুষ বা রিশওয়াহ বুঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[6] এতে প্রমাণিত হলো যে, পবিত্র কুরআনে ঘুষের বিরুদ্ধে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

আজ আমাদের দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে। এই দুর্নীতির নানা রকমের রয়েছে। তবে ঘুষ হচ্ছে প্রধান ও সবচেয়ে ব্যাপক দুর্নীতি। ঘুষের এই ব্যাপকতা কেবল আখিরাতের জন্যই ভয়াবহ নয়; বরং আমাদের এই সামাজিক জীবনেও দুর্ভোগের কারণ। ঘুষের বিষয়টি এখন আর লুকোছাপা নেই; তা এখন সবারই জানা। বাসে, লঞ্চে, পথে-ঘাটে মানুষ ঘুষের আলাপ করছে। আমাদের আশপাশের লোকজন তা শুনেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। এ রকম অবস্থার কারণেই আমরা জাতি হিসেবে ক্রমশ বোধহীন হয়ে পড়েছি এবং ভবিষ্যতের অজানা লা‘নত অথবা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি অথবা সন্ত্রাসের আরও প্রকোপ দেখে এক বিরাট ভয় আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু ধর্মের বাণী আজ আমাদের জীবনে বাস্তব রূপ ধরে আসলেও আল্লাহর হুকুম পালন করার প্রতি আমাদের আগ্রহ নেই, যা দুঃখজনক হলেও সত্য। এ হচ্ছে এক ভয়াবহ অবস্থা।

ঘুষ আমাদের জাতীয় উন্নয়নকে ব্যাহত করছে। ঘুষের কারণে মানুষ যোগ্যতার মূল্যায়ণ পাচ্ছে না। ঘুষের চিন্তায় যখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাথা ঘুরতে থাকে তখন হাতের কলম সিরাতুল মুস্তাকীমে চলে না। ঘুষ হচ্ছে সমাজদেহে নীরব মরণ ব্যাধি। সকল নীতি-নৈতিকতা, সমস্ত আইন-কানুন, বিধি-বিধানকে বিধ্বস্ত করে দেওয়ার জন্য ঘুষ নামক এই নমরুদই দায়ী। এ হচ্ছে এক মরণ ভাইরাস যা আমাদের সমাজের সকল ব্যবস্থাপনাকে নাজেহাল করে দিচ্ছে। এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদের উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবে না এবং আমরাও একটি সময় অতীতের নমরূদ, ফিরাউনদের ন্যায় অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত হব ও আল্লাহর গজবে ধ্বংস হয়ে যাব। কালব- এর পরিশুদ্ধির জন্য দেহ পরিশুদ্ধ থাকতে হয়। হালাল রুজি বা সৎ উপার্জনকারী আল্লাহর বন্ধু বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন। পক্ষান্তরে অসৎ উপার্জন করে অতি তাড়াতাড়ি সুখের সন্ধান করা আসলে বৃথা। অনেকেই অর্থ উপার্জনে সুবিধাজনক বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করেই তার পেশায় এমনভাবে মগ্ন হয় যেন সে পারে তো দু দিনেই বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে যায়। লোকের সেবা করা এবং এজন্য ত্যাগী মনোভাব নিয়ে কাজ করার কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে এই তাড়াহুড়া করে অসৎভাবে উপার্জন করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন: “কোনো প্রাণী তার রিযিক পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কখনও মরবে না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় করো এবং আবেদনে সৌন্দর্য বজায় রাখো। তোমার রিযিক ধীরগতিতে আসার কারণে তা আল্লাহর নাফরমানির মাধ্যমে চেয়ো না। কারণ তাঁর নিকট যা আছে তা লাভ করতে হলে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমেই করতে হবে।” [বাযযার, ইবন মাসউদ রা. হতে]

তবে কেউ যদি অন্যের সম্পদ গ্রাস করে তবে তার পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “যারা ইয়াহূদী ছিল, তাদের যুলুমের কারণে আমরা তাদের ওপর এমন সব পবিত্র বস্তু হারাম করে দিয়েছি, যা ছিল তাদের জন্য হালাল। এছাড়াও আল্লাহর পথে অনেক বাধা দেওয়ার জন্য তা করেছিলাম এবং তারা সুদ গ্রহণের কারণে- যা তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকের ধনসম্পদ গ্রাস করার জন্য। কাফিরদের মর্মন্তুদ শান্তি প্রস্তুত রেখেছি।” [আল-কুরআন, ৪:১৬০-১৬১]

এমনিভাবে অসৎ উপার্জন করে গাড়ি-বাড়ি, বিত্ত-বৈভব, প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভ করার যে তীব্র আকাঙ্খা মানুষের মনে জাগে এবং শয়তান এইসব অপকর্মকে আকর্ষণীয় ও লোভনীয় করে সামনে তুলে ধরে, এর পরিণতি দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ! ইসলামে ঘুষ সম্পূর্ণরূপে হারাম। ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহিতা উভয়ে জাহান্নামী।

তাই আসুন, আমরা তওবা করে ঘুষকে পরিত্যাগ করি, এর বিরুদ্ধাচরণ করি। একে ঘৃণা করি, একে প্রতিরোধ করি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন। আমীন।

বাঁচার উপায়: 

রোগের চিকিৎসার চেয়ে তার প্রতিরোধই হচ্ছে উত্তম ব্যবস্থা। এ জন্য  ঘুষ লেনদেন সংঘটনের পূর্বেই তার সুযোগ ও সম্ভাবনাকে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, শিক্ষা -প্রশিক্ষণ  ও বাস্তব ভিত্তিক সর্মসূচীর মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়াও নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

ক) আখিরাতের চেতনা জাগ্রতকরণ: দুনিয়ার জীবনই মানুষের শেষ নয় বরং মৃত্যুর পর মানুষকে আখিরাতের অনন্ত জীবনে প্রবেশ করতে হবে। সেদিন আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি কর্মের হিসাব দিতে হবে। মূলত আখিরাতের চেতনা মানুষের জীবনে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে থাকে। যে ব্যক্তি আখিরাতে সত্যিকার বিশ্বাস করে সে কখনও ঘুষ গ্রহন করতে পারে না। মানুষের দুনিয়ার জীবন হচ্ছে অতি সংক্ষিপ্ত এবং আখিরাতই হচ্ছে অনন্ত জীবন। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে: “বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে বেশী প্রধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ী।” [সূরা আল আ‘লা: ১৬-১৭]। এ চেতনা যখন মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হবে, তখন সে অবশ্যই এ থেকে বিরত থাকবে।

খ) হালাল হারামের দিক-নির্দেশনা দান: অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে জনগণকে হালাল-হারামের দিক নির্দেশনামূলক শিক্ষা প্রদান করা উচিত। কেননা ইসলাম হালাল বা বৈধ বিষয় উপার্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হারাম উপার্জন বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছে, এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আল্লাহ তোমাদের হালাল এবং পবিত্র যা দিয়েছেন তা হতে তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তারই ইবাদত কর।” [সূরা আন নাহল: ১১৪]। রাজনৈতিক ও ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গ অনেক সময় অর্থ আত্মসাৎ করে থাকেন। অবৈধভাবে যে কোনো প্রকার অর্থ আত্মসাৎকে ইসলাম হারাম  ঘোষণা করেছে।

গ) দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি মুক্ত হওয়া: চাকুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সততা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রদান করা জরুরী। কারণ এ সমস্ত চাকুরি প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের নিকট আমানত। ইসলাম এ সমস্ত আমানত তার যোগ্য প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার যথার্থ মালিককে প্রত্যার্পণ কর।” [সূরা আন-নিসা: ৫৮]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নেতা তার অধীনস্থদের জন্য জবাবদিহী করবেন।[7]

ঘ) উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান: প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বেতনের কারণে মানুষ ঘুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। এজন্য ইসলাম প্রত্যেককে এমন মজুরি বা বেতন প্রদানের কথা বলেছে যে তা দ্বারা সে তার ন্যায়ানুগ ও স্বাভাবিক প্রয়োজন মেটাতে পারে। শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। কারো ভাই তার অধীনে থাকলে তার উচিত নিজে যা খাবে তাই খাওয়াবে। নিজে যা পরবে তাকেও তা পরতে দিবে এবং তাকে দিয়ে এমন কাজ করাবে না যা তার সাধ্যাতীত। কোনভাবে তার উপর আরোপিত বোঝা বেশি হয়ে গেলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহায্য করবে।[8]

ঙ) যোগ্যঅভিজ্ঞ ও সৎ কর্মচারি নিয়োগ দান: প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘুষ ও উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও অসৎ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে এসব কর্মকর্তা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েই তার বিনিয়োগকৃত সমুদয় অর্থ উত্তোলনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অতএব প্রশাসনকে ঘুষের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করার জন্য সৎ, বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন: “তোমার জন্য সর্বোত্তম কর্মচারী হতে পারে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। [সূরা আল কাসাস: ২৬]। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার মালিককে প্রত্যার্পণ কর।” [সূরা আন নিসা: ৫৮]। এভাবে ইসলাম সৎ, যোগ্য ও বিশ্বস্ত কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি সংঘটনের সম্ভাবনা বন্ধ করে দিতে চায়।

চ) গণসচেতনতা সৃষ্টি: ঘুষ গ্রহণ এক ধরণের দুর্নীতি। এ দুর্নীতির ভয়াবহতা এবং এর নেতিবাচক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা সম্পর্কে সকল স্তরের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। যাতে সমাজের প্রতিটি মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়। বিষয়টি কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কেননা এদেশের জনগণ ধর্মভীরু এবং সরল প্রকৃতির। তাদেরকে যদি ঘুষের ক্ষতিকর প্রভাব এবং তার ইহকালীন ও পরকালীন পরিণতির বিষয় বুঝিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তা খুব সহজে  প্রতিরোধ সম্ভব। দেশের সকল প্রচার মাধ্যম জনমত ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এজন্য রেডিও, টেলিভিশনসহ পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যদি জনগণকে এর কুফল ও ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করা যায়, তাহলে তা ঘুষ প্রতিরোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ছ) প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ: শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের জন্য জবাবদিহিতার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত জবাবদিহিতার নিশ্চিতকরণ অফিস আদালতে ঘুষের লেনদেন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। আর তোমরা প্রত্যেকে স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।[9]

জ) ঘুষগ্রহীতাদের  উপযুক্ত শাস্তি প্রদান: সমাজ থেকে ঘুষ-বাণিজ্য চিরতরে উচ্ছেদ করতে হলে শুধুমাত্র উপদেশ, সতর্কবাণী ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা করেই তার দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না বরং কোনো ব্যক্তি যদি এ কাজে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করবে, যেন মানুষ শাস্তির পরিণতির ভয়ে ঘুষের লেনদেন থেকে দূরে থাকে।

ঝ) মানুষের অধিকার আদায়ের ব্যপারে সচেষ্ট হওয়া: ঘুষের মাধ্যমে যে সমস্ত অপরাধ সংঘটিত হয় তার অধিকাংশই মানুষের অধিকার বিষয়ক। যেমন, যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান, প্রমোশন প্রদান, সুযোগ-সুবিধা, স্বজনপ্রীতি ও অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ ইত্যাদি। অধিকারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি ক্ষমা না করলে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।

ঞ) সম্পদ অর্জনে ইসলামী নীতি অবলম্বন: সম্পদের মোহ এবং উচ্চাভিলাষী জীবন-যাপনই ঘুষের লেনদেনের অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষ মৃত্যুর কথা এবং আখিরাতকে ভুলে এসবে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এজন্য আল-কুরআনে বারবার মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” [সূরা আলে ইমরান: ১৮৫]

তাছাড়া হাদীসে এসেছে, “পার্থিব ভোগ-বিলাস পরিত্যাগ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। আর লোকের কাছে যা আছে তার লালসা পরিত্যাগ কর। তাহলে অন্যরা তোমাকে ভালবাসবেন।[10] তাই অর্থ উপার্জনে হালাল-হারামের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।

ট) মানব মর্যাদার মাপকাঠি তাকওয়া: মানুষ দ্রুত বিত্তের অধিকারী হওয়ার জন্য সাধারণত ঘুষ গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিত্তশালীর চেয়ে বিত্তহীনের বেশী গুরুত্ব প্রদান করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে মর্যাদার মাপকাঠি অর্থবিত্ত নয় বরং ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে যে যতবেশী তাকওয়াসম্পন্ন বা আল্লাহভীরু, সে ততবেশী মর্যাদাবান। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে: “নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত যে অধিক আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বনকারী।” [সূরা আল-হুজুরাত:১৩]

বর্তমানে ঘুষ বাণিজ্য এ দেশকে ধ্বংস ও অধঃপতনের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করছে। অথচ সরকার নির্বিকার। আগামী দিনের সুস্থ-সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় এটি অবশ্যই পরিত্যজ্য। এটি যত আলোচিত হবে জনগণ এ বিষয়ে তত সচেতন হবে এবং তার সুফল ভোগে সমর্থ হবে। এ প্রবন্ধে উল্লেখিত পদক্ষেপসমূহ যদি সমাজে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে সমাজ থেকে ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। সরকারের উচিত দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকরী ও অর্থবহ করার মাধ্যমে ঘুষ-বাণিজ্য প্রতিরোধে এগিয়ে আসা।

 


[1] হাদীসটি ইবন মাজাহ সংকলন করেছেন, হাদীস নং ২৩১৩।
[2] আবু দাউদ, সুলাইমান ইবন আশআশ, আস-সুনান, ৩য় খন্ড (সিরিয়া, হিমস: দারুল হাদীস, তা.বি), পৃ. ৩৫৩, হাদীস নং-২৯৪৩।
[3] সুবুলুস সালাম, খ. ৪, পৃ. ১২৪।
[4] আহমদ ইবন হাম্বল, আল-মুসনাদ, ২য় খন্ড, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮৭।
[5] কানযুল উম্মাল, খ. ৩।
[6] খ. ১, পৃ. ৭৬।
[7] ইমাম বুখারী, সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড, বাবুল জুম‘আ ফিল ক্বুরা ওয়াল মুদুন, পৃ. ৫, হাদীস নং- ৮৯৩।
[8] বুখারী, হাদীস নং ২৫৪৫।
[9] ইমাম বুখারী, সহীহুল বুখারী, ২য় খন্ড, বাবুল জুম‘আ ফিল ক্বুরা ওয়াল মুদুন, পৃ. ৫, হাদীস নং- ৮৯৩।
[10] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪১০২।

পরিবার বিষয়ক প্রবন্ধ- স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব পর্ব-২

লেখকঃ ড. সালেহ ইবন আবদিল্লাহ ইবন হুমাইদ | অনুবাদ : মোঃ আমিনুল ইসলাম |  সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

পর্ব – ১ | পর্ব – ২

ভূমিকা:

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টি করেন, অতঃপর সুঠাম করেন, যিনি নির্ধারণ করেন, অতঃপর পথনির্দেশ করেন। আমি তার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তিনি শেষে ও প্রথমে সকল প্রশংসার প্রাপ্য মালিক। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, যাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি নির্বাচিত নবী ও বান্দা; আল্লাহ তাঁর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীগণ এবং যে ব্যক্তি তাঁর দা‘ওয়াতের মাধ্যমে দা‘ওয়াত দান করে ও যে ব্যক্তি তাঁর পদ্ধতির অনুসরণে জীবনযাপন করে, সে ব্যক্তিসহ উল্লেখিত সকলের উপর রহমত, শান্তি ও বরকত বর্ষণ করুন।

অতঃপর:

জেনে রাখুন, আল্লাহ আপনাকে তাওফীক দিন— আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম মহান নিয়ামত ও নিদর্শন হল ঘর-সংসার, যা আশ্রয়স্থল ও শান্তি নিকেতন; তার ছায়াতলে মানবগোষ্ঠী ভালবাসা ও অনুকম্পা, নিরাপত্তা ও পবিত্রতা এবং মহৎ জীবন ও শালীনতা লাভ করবে … তার কোলে শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজ বেড়ে উঠবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিস্তার লাভ করবে এবং পারস্পরিক দায়বদ্ধতা শক্তিশালী হবে। অন্তরের সাথে অন্তর যুক্ত হবে … এবং মনের সাথে মনের আলিঙ্গন হবে; আল-কুরআনের ভাষায়: “তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৭]

এই মজবুত সম্পর্ক ও উন্নত সংসারের মধ্যে উত্তম বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটবে এবং ঐসব পুরুষ ব্যক্তিগণ বেড়ে উঠবে, যাদেরকে আমানতস্বরূপ মহান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; আর ঐসব নারীদেরকে শিক্ষা দেওয়া হবে, যারা বংশমূল তথা জাতির ভবিষ্যতকে দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করে।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্বের কতিপয় কারণ:

জীবনের বাস্তবতা এবং মানুষ (যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; আর যা তিনি সৃষ্টি করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি সবচেয়ে বেশি ভাল জানেন) সে মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিতে কখনও কখনও (জীবনের বাস্তবতায়) এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যাতে দিক-নির্দেশনা কাজ করে না এবং ভালবাসা ও প্রশান্তি সুদৃঢ় হয় না; যার কারণে কখনও কখনও দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট রাখা কষ্টকর ও কঠিন হয়ে যায়। ফলে তাতে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় না এবং তার দ্বারা নবীন সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে সমর্থ হয় না। আর এ বিশৃঙ্ল ও অনৈক্যের অবস্থা বা পরিস্থিতিসমূহের কারণসমূহ কখনও কখনও হয়ে থাকে আভ্যন্তরীণ আবার কখনও কখনও হয় বহিরাগত।

যেমন কখনও কখনও এ সমস্যার উত্থান হয়: স্বামী-স্ত্রীর অভিভাবক অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্য অনভিজ্ঞ ব্যক্তির হস্তক্ষেপ, অথবা স্বামী-স্ত্রীর সকল ছোট বড় কর্মকাণ্ডের পশ্চাদ্ধাবন; আবার কখনও কখনও পরিবারের কোনো কোনো অভিভাবক এবং পরিবারের বড়দের পক্ষ থেকে তাদের অধিনস্থদের উপর এত বেশি নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া হয় যে, তা কখনও কখনও বিচারকের নিকট বিচার নিয়ে যাওয়ার পর্যন্ত গড়ায়; ফলে আড়ালে ঢাকা রহস্যসমূহ প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং গোপন বিষয়সমূহ উম্মোচন হয়ে যায়, আর এগুলো হয় নিছক ছোট-খাট বিষয় অথবা তুচ্ছ কিছু কারণে; যার উৎপত্তি হয়ত অনুপযুক্ত অথবা প্রজ্ঞাশূন্য হস্তক্ষেপ অথবা তাড়াহুড়া ও দ্রুততা অবলম্বন বা গুজব ও আজে-বাজে কথায় কান দেওয়া ও সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা।

আর কখনও কখনও সমস্যার উৎসস্থল হয়: দীনের ব্যাপারে দূরদর্শিতার স্বল্পতা ও মহানুভব শরী‘য়তের বিধিবিধানসমূহের ব্যাপারে অজ্ঞতা এবং পুঞ্জীভূত কুঅভ্যাস ও দুর্বল চিন্তাধারা লালন করা। ফলে কোনো কোন স্বামী বিশ্বাস করে বসে যে, তালাকের দ্বারা হুমকি দেওয়া অথবা তা উচ্চারণ করা হল দাম্পত্য বিরোধ ও পারিবারিক সমস্যার একটি সঠিক সমাধান; সুতরাং সে তার প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় এবং তার নির্দেশ প্রদান ও নিষেধাজ্ঞার সময়ে, এমনকি তার সকল অবস্থায় (স্ত্রীর সাথে) কথাবার্তার ক্ষেত্রে তালাকের শব্দগুলো ব্যতীত অন্য কিছু জানে না বা বুঝে না; আর সে এও জানে না যে, এর দ্বারা সে প্রকারান্তরে আল্লাহর আয়াতসমূহকে উপহাস হিসেবে গ্রহণ করেছে; সে তার কর্মকাণ্ডে অপরাধী বা পাপী হচ্ছে, তার সংসার ধ্বংস করছে এবং তার পরিবার-পরিজন হারাচ্ছে।

হে মুসলিমগণ! এটাই কি দীনের ফিকহ তথা সুক্ষ্ম জ্ঞান হতে পারে?! নিশ্চয়ই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত পদ্ধতি যে তালাকের বিধান রয়েছে তার উদ্দেশ্য দাম্পত্য সম্পর্কের বন্ধন বা রশি কর্তন করা নয়, বরং বলা যায় যে, এ পদ্ধতির তালাক হচ্ছে এই সম্পর্ক সাময়িকভাবে আটকে রাখা এবং প্রতীক্ষা, চিন্তাভাবনা ও সংশোধনের একটি পর্যায়; আল-কুরআনের ভাষায়: “… তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও বের হবে না, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায়। আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা; যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে, সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোনো উপায় করে দেবেন। অতঃপর তাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে তোমরা হয় যথাবিধি তাদেরকে রেখে দেবে, না হয় তাদেরকে যথাবিধি পরিত্যাগ করবে। …” [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১-২]

এটাই হচ্ছে শরী‘য়ত। বরং বিষয়টি এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; নিশ্চয়ই সুন্নাত পদ্ধতিতে তালাক প্রদানের বিধানটি প্রতিকারের সর্বশেষ অস্ত্র এবং এর পূর্বে অনেকগুলো উপায় রয়েছে।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের কতিপয় উপায়:

আমার মুসলিম ভাই ও বোন: যখন বিরোধের আলামত, অবাধ্যতা, মতানৈক্যের লক্ষণ প্রকাশ পাবে, তখন তালাক বা তালাকের হুমকি প্রদান করা তার প্রতিকার নয়। প্রতিকারের জন্য যা দাবি করা হয়, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল: ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, বিবেক ও বুদ্ধির ক্ষেত্রে বিভিন্নতা এবং স্বভাব-প্রকৃতির ক্ষেত্রে ভিন্নতার বিষয়টি অনুধাবন করা; সাথে আরও জরুরি হল অনেক বিষয়ে উদারতার পরিচয় দেওয়া এবং দেখেও না দেখার ভান করা; কারণ সব সময় সে যা পছন্দ ও কামনা করে, তার মধ্যে মঙ্গল ও কল্যাণ হয় না, বরং কখনও কখনও সে যা পছন্দ ও কামনা করে না, তার মধ্যেই কল্যাণ হয়; আল-কুরআনের ভাষায়: “আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]

কিন্তু যখন সমস্যা প্রকাশ পাবে, পারস্পরিক দায়বদ্ধতার বন্ধনে শিথিলতা দেখা দিবে এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে অবাধ্যতা, তার স্বভাব চরিত্রে অহমিকা এবং তার দায়িত্ব থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রকাশ পাবে; যেমন- ঘৃণার প্রকাশ পাওয়া, স্বামীর অধিকারের ব্যাপারে কমতি করার বিষয় এবং স্বামীর মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার বিষয় প্রকাশ করা, তখন ইসলামে এর চিকিৎসা বা প্রতিকার সুস্পষ্ট; তাতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনোভাবেই তালাক প্রসঙ্গ আসবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সুস্পষ্ট কিতাবে বলেন: “… আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]

তাই বুঝা গেল যে, উক্ত অবস্থার প্রতিকার হবে উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে, অধিকারসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে এবং আল্লাহর গজব ও ঘৃণা থেকে ভয় প্রদর্শন করার মাধ্যমে; সাথে আরও প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের পথে চলার জন্য উৎসাহ প্রদান ও ভয় প্রদর্শন করা।

আর কখনও কখনও অহমিকা ও অবাধ্যতার মোকাবিলায় শয্যা বর্জন ও বয়কট করা হচ্ছে এর প্রতিকার; আপনারা লক্ষ্য করুন যে, শয্যা বর্জন করার অর্থ শয়নকক্ষ বর্জন করা নয়; … তা হল শয্যা বর্জন করা, ঘর বয়কট করা নয় … পরিবার বা সন্তান বা অপরিচিত লোকজনের সামনে নয়। উদ্দেশ্য হল প্রতিকার করা, ঘোষণা করা অথবা অপমান করা অথবা গোপন বিষয় প্রকাশ করা নয়; বরং উদ্দেশ্য হল বর্জন ও বয়কটের মাধ্যমে অবাধ্যতা ও অহংকারের মোকাবিলা করা, যা পারস্পরিক ঐক্য, সংহতি ও সমতার দিকে পরিচালিত করে। আর কখনও কখনও কিছু কঠোর ও রূঢ় মনোভাবের মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে; কারণ, কিছু মানুষ এমনও রয়েছে, যাদেরকে সোজা করার ক্ষেত্রে উত্তম ব্যবহার ও ভদ্র কথায় কোনো কাজ হয় না; বরং তারা এমন শ্রেণীর মানুষ যাদেরকে অধিকাংশ সময় নম্র ব্যবহার ও সহিষ্ণুতা অবাধ্য করে তোলে … সুতরাং যখন কঠোরতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে, তখন অবাধ্য ব্যক্তি থেমে যাবে এবং বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি শান্ত হয়ে যাবে।

হ্যাঁ, কখনও কখনও কিছু চাপ প্রয়োগের আশ্রয় নেয়াটাও কার্যকর প্রতিষেধক হতে পারে; আর কেনই বা সে তার আশ্রয় নিবে না, অথচ দায়িত্বের প্রতি বৈরী ভাব ও স্বভাব-প্রকৃতি থেকে বের হওয়ার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে যাচ্ছে? আর সকল বিবেকবান ব্যক্তির নিকট বিদিত যে, কঠোরতা যখন সংসারের জন্য তার শৃঙ্খলা ও মজবুত বন্ধনকে ফিরিয়ে দিবে এবং পরিবারকে ফিরিয়ে দিবে ভালবাসা ও হৃদ্যতা, তখন তা নিঃসন্দেহে তালাক ও বিচ্ছেদের চেয়ে উত্তম; তা হবে ইতিবাচক, শিক্ষামূলক ও অর্থবহ সমাধান; ঘায়েল করা ও প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে নয়; বরং তার দ্বারা অবাধ্যতাকে দমন করা হয় এবং বিশৃঙ্খলাকে সংযত করা করা হয়। আর যখন স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশঙ্কা করবে, তখন আল-কুরআনুল কারীম তার প্রতিকারের দিক নির্দেশনা প্রদান করে তাঁর বাণীর মাধ্যমে, আল-কুরআনের ভাষায়: “আর কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে তারা আপোস-নিষ্পত্তি করতে চাইলে তাদের কোনো গোনাহ নেই এবং আপোস-নিষ্পত্তিই শ্রেয়।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮]

প্রতিকার হবে আপোস-নিষ্পত্তি ও শান্তি স্থাপনের মাধ্যমে, তালাক ও সম্পর্ক বাতিলের মাধ্যমে নয়। আবার কখনও কখনও বিবাহ বন্ধনকে সুরক্ষার জন্য আর্থিক অথবা ব্যক্তিগত অধিকারের কিছু কিছু বিষয় ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে।

﴿ وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ  ﴾ [আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম]। অবাধ্যতা, দুর্ব্যবহার, বিদ্বেষ ও তালাকের চেয়ে আপোস-নিষ্পত্তি উত্তম।

আমার মুসলিম ভাই ও বোন:

এটা একটা গতিশীল আবেদন এবং আল্লাহর দীনের ফিকহের দিক থেকে ও তাঁর বিধিবিধানের উপর ভিত্তি করে আচার-আচরণের একটি সংক্ষিপ্ত স্মারক; সুতরাং তার থেকে মুসলিমগণ কোথায় যাচ্ছে?

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিরোধের ব্যাপারে কেন সালিস নিয়োগ করা হয় না?  এ সমাধান থেকে কেন সংস্কারকগণ বিরত থাকে? সে কি প্রকৃত সংশোধনের ব্যাপারে অমনোযোগী, নাকি পরিবার ভাঙ্গন ও সন্তানদেরকে বিভক্ত করার ব্যাপারে উৎসাহী?

নিশ্চয়ই আপনি তাকে নির্বুদ্ধিতা, বাড়াবাড়ি, আল্লাহর ভয় ও তাঁর নজরদারী থেকে দূরুত্বে অবস্থান, তাঁর বিধিবিধানের অধিকাংশকে প্রত্যাখ্যান এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা রেখার ব্যাপারে ছিনিমিনি খেলা ছাড়া অন্য কিছু মনে করবেন না। ইমাম ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বান প্রমূখ গ্রন্থকারগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: “কিছু লোকের কি হল যে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে; তাদের কেউ কেউ বলে: আমি তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনলাম, আমি তোমাকে তালাক দিলাম? সে কি আল্লার নির্ধারিত সীমানা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, অথচ আমি তোমাদের মাঝেই রয়েছি?[1]

দ্বন্দ্ব নিরসনের সর্বশেষ উপায়:

দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যাপারে যখন সকল উপায় ব্যর্থ হবে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল রাখা যখন কঠিন ও কষ্টকর হয়ে যাবে, এমনকি যখন তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত অভিষ্ট লক্ষ্য ও মহান তাৎপর্য বাস্তবায়ন করা না যায়, তখন শরী‘য়তের উদারতা ও তার বিধানসমূহের পরিপূর্ণতার প্রমাণ হচ্ছে যে, এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য উপায় রাখা হয়েছে। তবে মুসলিমগণের অনেকেই শরী‘য়ত কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত পদ্ধতির তালাকের সম্পর্কে অজ্ঞ এবং আল্লাহর সীমারেখা ও তাঁর শরী‘য়তের প্রতি লক্ষ্য রাখা ছাড়াই তালাক শব্দটি উচ্চারণ করে থাকে।

ঋতুবর্তীকালীন সময়ে তালাক দেয়া হারাম, (একসাথে) তিন তালাক প্রদান করা হারাম এবং এমন ঋতুমুক্তকালীন সময়ে তালাক প্রদান করাও হারাম, যাতে উভয়ের মাঝে মিলন (সহবাস) হয়েছে; সুতরাং এ ধরনের সকল তালাক বিদ‘আত ও হারাম (নিষিদ্ধ)। এ ধরনের তালাকদাতার পাপ হবে; কিন্তু আলেমগণের বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তালাক সংঘটিত হয়ে যাবে। যে সুন্নাত পদ্ধতির তালাক সম্পর্কে অবহিত হওয়া মুসলিমগণের উপর ওয়াজিব, তা হলো:  ঋতুমুক্তকালীন সময়ে মাত্র এক তালাক প্রদান করা যাতে উভয়ের মিলন (সহবাস) হয়নি, অথবা গর্ভকালীন সময়ের মাঝে তালাক প্রদান করা।

এ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক প্রদান করা নিঃসন্দেহে একটি প্রতিকার হিসেবে বিবেচিত। কারণ, এতে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বেশ কিছু সময় পায়, সে সময়ে তারা চিন্তা-ভাবনা কিংবা পর্যালোচনা করতে পারে। আর এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তালাক প্রদানকারীকে ঋতুমুক্তকালীন সময়ের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে; আর হতে পারে যে, তখন তার মন পরিবর্তন হবে, হৃদয় জগ্রত হবে এবং আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের জন্য নতুন কোনো উপায় করে দেবেন, ফলে তাদের সম্পর্ক তালাক পর্যন্ত গড়াবে না। আর ইদ্দতের সময়কাল, — চাই তা মাসিক জনিত ইদ্দত হউক, অথবা নির্দিষ্ট মাসসমূহের ইদ্দত হউক, অথবা গর্ভস্থ সন্তানের প্রসব সংশ্লিষ্ট ইদ্দত হউক— এ সময়ের মধ্যে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা ও আত্মপর্যালোচনার যথেষ্ট সুযোগ থাকে; যা কখনও কখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভালবাসার বন্ধন ও দাম্পত্য সম্পর্ককে মিলিয়ে দিতে পারে।

আর মুসলিমগণ যা জানে না তন্মধ্যে অন্যতম হল: স্ত্রীকে যখন রেজ‘য়ী (প্রত্যাবর্তনযোগ্য) তালাক দেওয়া হবে, তখন তার উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল স্বামীর ঘরে অবস্থান করা; সে বের হবে না এবং তাকে বের করে দেওয়া হবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাকে (স্বামীর ঘরকে) তার (স্ত্রীর) জন্য ঘর হিসেবে বরাদ্দ দিয়ে দিলেন; আল-কুরআনের ভাষায়: “তোমরা তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করো না।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত:১]

এই আয়াতটি (ঘরে) অবস্থান করার বিষয়টিকে দৃঢ়তার সাথে তাদের অধিকার বলে ঘোষণা করেছে। সুতরাং তার স্বামীর ঘরে তার অবস্থান করার মানে তার পুনরায় প্রত্যাবর্তনের একটা পথ, ভালবাসার সহনুভূতি উত্থাপন করার ক্ষেত্রে আশার সূচনা এবং সম্মিলিত জীবনযাপনের বিষয়টি স্মরণ করানো। ফলে এই অবস্থায় তালাকের হুকুমের ক্ষেত্রে স্ত্রীর অবস্থান দূরে প্রতীয়মান হলেও চোখের দৃশ্যপট থেকে তার অবস্থান স্বামীর নিকটে। আর এর দ্বারা মূলত উদ্দেশ্য হল তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া অশান্ত ঝড়কে শান্ত করা, হৃদয়ে নাড়া দেওয়া, অবস্থানসমূহ পুণ পর্যালোচনা এবং ধীরে-সুস্থে নিজ সংসার, শিশু ও পরিবারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ লাভ। আল-কুরআনের ভাষায়: “… আপনি জানেন না, হয়ত আল্লাহ এর পর কোনো উপায় করে দেবেন।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত:১]

সুতরাং হে মুসলিমগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর … এবং তোমাদের ঘর-সংসারসমূহকে হেফাযত কর; আর তোমাদের দীনের বিধানসমূহ জানতে ও বুঝতে শিখ … আর আল্লাহর সীমারেখা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং তা লঙ্ঘন করো না; আর তোমারা তোমাদের নিজেদের মাঝে (সম্পর্কের) সংশোধন ও সংস্কার করে নাও।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দীনের ব্যাপারে সঠিক বুঝ এবং শরী‘য়তের ব্যাপারে দূরদর্শিতা দান করুন; হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার কিতাবের হিদায়াতের মাধ্যমে উপকৃত করুন; আর আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা আচার-আচরণ আমাদেরকে দান করুন।

পর্ব – ১ | পর্ব – ২


[1] সুনানু ইবনে মাজাহ: ২০১৮; সহীহু ইবনে হিব্বান: ৪২৬৫

সালাত ও পবিত্রতা – জামা‘আতে সালাত আদায় করার অপরিহার্যতা

solat1

 শায়খ আল্লামা আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায (রহিমাহুল্লাহ)

অনুবাদ: মোহাম্মদ রকীবুদ্দীন আহমাদ হুসাইন | সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

জামা‘আতে সালাত আদায় করার অপরিহার্যতা

মুসলিম পাঠকবৃন্দের প্রতি আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায (রহিমাহুল্লাহ) এর একটি বিশেষ আহবান। আল্লাহ তা‘আলা  তাঁর সন্তুষ্টির কাজে তাদের তাওফীক দান করুন এবং আমাকেও তাদের সেই সমস্ত লোকের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা তাঁকে ভয় করে তার নির্দেশ মেনে চলে। আমীন!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারলাম যে, অনেক লোক জামা‘আতে সালাত আদায়ে অবহেলা করছেন এবং কোনো কোনো আলেমের ছাড়প্রবণ বক্তব্যকে এর পক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করছেন। তাই, আমার কর্তব্য হলো, সবাইকে এই বিষয়ের গুরুত্ব ও এর ভয়ঙ্কর দিকগুলো স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া এবং এই কথাও বলে দেওয়া যে, কোনো মুসলিমের পক্ষে এমন বিষয়ে অবহেলার আচরণ করা উচিত নয় যে বিষয়কে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মহান কিতাবে এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীসে বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাব কুরআনে কারীমে বহুবার উল্লেখ করে বিষয়টির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন; এই সালাত নিয়মিত পালন করা ও জামা‘আতের সাথে তা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করে একথাও পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন যে, এই সালাতের প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শন করা মুনাফিকদের অন্যতম লক্ষণ। আল্লাহ তা‘আলা তার সুস্পষ্ট গ্রন্থে নির্দেশ প্রদান করে বলেন: “তোমরা সালাতের হেফাযত কর এবং বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের, আর তোমরা আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্তে দাড়াও।” [সূরা বাক্বারাহঃ ২৩৮]

সে বান্দাহ কিভাবে সালাতের হেফাযত বা তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা শিখবে যে তার অপর মুমিন ভাইয়ের সাথে সালাত আদায় না করে তার মর্যাদার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে? আল্লাহ তা‘আলা  বলেন: “আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত প্রদান কর এবং সালাত আদায়কারীদের সাথে সালাত পড়।” [সূরা বাক্বারাহঃ ৪৩]

জামা‘আতে সালাত পড়া এবং অন্যান্য মুসল্লিদের সাথে সালাতে শরীক হওয়া যে ওয়াজিব এ পবিত্র আয়াত তার অকাট্য প্রমাণ। শুধু সালাত কায়েম করা যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে আয়াতের শেষাংশে واركعوا مع الراكعين বলার স্পষ্ট কোনো উপলক্ষ দেখা যায় না। যেহেতু আয়াতের প্রথম অংশেই আল্লাহ তা‘আলা  সালাত কায়েম করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্য একটি আয়াতে বলেন: “এবং তুমি যখন তাদের মধ্যে অবস্থান করবে ও তাদের সাথে সালাত কায়েম করবে তখন তাদের একদল তোমার সাথে যেন দাড়ায় এবং তারা যেন সশস্ত্র থাকে। তাদের সিজদা করা হলে তারা যেন তোমাদের পিছনে অবস্থান করে; আর অপর একদল যারা সালাতে শরীক হয় নাই তারা তোমার সাথে এসে যেন সালাতে শরীক হয় এবং তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে।” [সূরা নিসা – ১০২]

এখানে আল্লাহ তা‘আলা যখন যুদ্ধাবস্থায় জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন, তখন শান্ত অবস্থায় কি তা ওয়াজিব হবে না? কাউকে যদি জামাতে সালাত পড়া থেকে বিরত থাকার অনুমতি দেওয়া হত তাহলে শত্রুর সম্মুখে কাতারবন্দী অবস্থায় এবং হামলার মুখোমুখি মুসলিম সৈন্যগণ জামাতে সালাত পড়া থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকতর যোগ্য হতেন। তাদেরকে যখন এর অনুমতি দেওয়া হয়নি তখন জানা গেল যে জামাতে সালাত আদায় করা অন্যতম ওয়াজিবগুলোর অন্তর্ভুক্ত এবং এথেকে বিরত থাকা কারো পক্ষে জায়েয নয়। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ “আমি মনস্থ করছিলাম যে, আমি সালাতের জন্য নির্দেশ দেই যাতে সালাত কায়েম হয়; এরপর লোকজনকে নির্দেশ দেই যাতে সালাত কায়েম হয়; এরপর একজন লোককে নির্দেশ দেই সে যেন লোকজন নিয়ে জামাতে সালাত পড়ে, আর আমি এমন কিছু লোক নিয়ে যাদের সাথে কাঠের আঁটি থাকবে, ঐসব লোকের দিকে যাই যারা সালাতে হাজির হয় না এবং সেখানে গিয়ে তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেই।” [বুখারী ও মুসলিম]

সহীহ মুসলিম শরীফে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: “অবশ্যই আমরা দেখেছি যে, মুনাফিক, যাদের নিফাক পরিজ্ঞাত এবং অসুস্থ লোক ব্যতীত জামাতে সালাত পড়া থেকে কেউ পিছনে থাকত না। এমনকি, (রোগী হলেও) দু’জন লোকের সাহায্যে চলে এসে সালাতের হাজির হতো।” তিনি আরো বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হেদায়াতের সুন্নাত সমূহ (নিয়ম-পদ্ধতি) শিক্ষা দিয়েছেন। তন্মধ্যে অন্যতম সুন্নাত হলো মসজিদে গিয়ে জামাতে সালাত আদায় করা যেখানে সে জন্য আজান দেওয়া হয়।

মুসলিম শরীফের এ অধ্যায়ে আরেকটি হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “যে ব্যক্তি মুসলিম হয়ে আনন্দের সাথে সাথে আগামী দিন আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করতে চায় সে যেন এই সালাতগুলি নিয়মিত সেখানে আদায় করে যেখানে এগুলোর জন্য আজানের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়াতের অনেক নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করে গেছেন, আর এগুলোই হলো হেদায়াতের সত্যিকার নিয়ম-পদ্ধতি। যদি তোমরা জামাতে না এসে আপন ঘরে ঘরে সালাত পড়, যেমন ঐ পিছে পড়া (ঘরে সালাত আদায়কারী) লোক আপন ঘরে সালাত পড়ে, তা হলে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দিলে। আর যদি তোমাদের নবীর সুন্নাত ছেড়ে দাও তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। যখন কোনো ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করে এবং উত্তমভাবে ওজু সম্পাদন করে, অতঃপর সে কোনো মসজিদের দিকে চলে তখন তার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে নেকী লিখা হয়, তার মর্যাদা এক স্তর উপরে উঠানো হয় এবং এর দ্বারা তার একটি পাপ মোচন করা হয়। আমাদের জানা মতে মুনাফেক, যার নেফাক পরিজ্ঞাত, ব্যতীত আর কেউ জামাতে সালাত পড়া থেকে বিরত থাকতো না। এমনও লোক ছিল যাকে দু’জনের মধ্যে করে মসজিদে আনা হতো এবং সালাতের সারিতে দাঁড় করানো হতো।

মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীসে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে: “একদা একজন অন্ধ লোক এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, হে আল্লাহর রাসূল, আমার কোনো চালক নেই যে সে আমাকে মসজিদে নিয়ে যাবে, আমার জন্য কি অনুমতি আছে আমি ঘরে সালাত পড়তে পারি? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন। তারপর লোকটি প্রর্ত্যাবর্তন করতে লাগলে রাসূল বললেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? সে বলল, হ্যাঁ, তখন তিনি বললেন, “তা হলে সালাতে উপস্থিত হও।

জামাতে সালাত পড়া এবং আল্লাহর ঘরে ঘরে অর্থাৎ মসজিদে মসজিদে যেখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাম সোচ্চার করে জিকির করার অনুমতি দিয়েছেন তা প্রতিষ্ঠা করা যে ওয়াজিব তার প্রমাণে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা অনেক। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উপর ওয়াজিব এই বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা, এর দিকে অগ্রগামী হওয়া, এই সম্পর্কে পরস্পর ওসিয়ত করা এবং সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী ও সকল মুসলিমকে এ জন্য উদ্বুদ্ধ করা। আর এগুলো হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ পালনার্থে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় থেকে সতর্ক থাকার জন্যে এবং আহলে নিফাক থেকে সরে থাকার মানসে, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন দোষে দোষারোপ করেছেন; তন্মধ্যে তাদের নিকৃষ্টতম দোষ হলো সালাতের বেলায় অলসতা প্রদর্শন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “মুনাফিকগণ আল্লাহকে প্রতারিত করতে চেষ্টা করে; বস্তুত তিনিই তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন এবং যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন তারা শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়, কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং তারা আল্লাহকেই অল্পই স্মরণ করে; এরা দো-টানায় দোদুল্যমান, না এদের দিকে, না ওদের দিকে; এবং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি তার জন্য কোনো পথ পাবে না।” [সূরা নিসাঃ ১৪২-১৪৩]

জামাতের সাথে সালাত আদায় থেকে পিছে থাকা সম্পূর্ণভাবে সালাতত্যাগী হওয়ার এক প্রধান কারণ। এটা জানা কথা যে, সালাত ত্যাগ করা কুফরী, চরম ভ্রামিত্ম ও ধর্মত্যাগী কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “মুমিন লোক এবং কুফরী ও শির্ক এর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী কাজ হলো সালাত ত্যাগ করা।” [মুসলিম শরীফে জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এই হাদীস বর্ণিত]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: “আমাদের মধ্যে এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী বৈশিষ্ট্য হলো সালাত, যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করে সে কুফরী করে।” সালাতের মর্যাদা বর্ণনা, তা নিয়মিত আদায়, আল্লাহ তা‘আলা  কর্তৃক নির্দেশিত পদ্ধতিতে তার প্রতিষ্ঠা করা এবং তা ত্যাগকারীর প্রতি ভীতি প্রদর্শন সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদীসের সংখ্যা অনেক, আশা করি তা সকলের জানা রয়েছে।

সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের উপরে কর্তব্য, সে যেন এই সালাতসমূহ তার সঠিক সময়ে নিয়মিতভাবে আদায় করে, আল্লাহর প্রবর্তিত পদ্ধতি অনুসারে সম্পাদন করে এবং অপর মু’মিন ভাইদের সাথে আল্লাহর ঘর মসজিদসমূহে জামাতের সাথে সম্পাদন করে; আর তা হবে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যের ভিত্তিতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভের আশায়। যখন সত্য প্রকাশ পায় এবং তার প্রমাণাদি স্পষ্ট হয়ে উঠে তখন কারো পক্ষে কোনো লোকের কথা বা অভিমতের ভিত্তিতে তা থেকে দূরে থাকা জায়েয নয়। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “হে মু’মিনগন! কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে; যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে থাক। এটাই উত্তম ও পরিণামে প্রকৃষ্টতর।” [সূরা নিসাঃ ৫৯] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, “সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে তারা সতর্ক হয়ে যাক যে, তাদের উপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর কঠিন শাস্তি।” [সূরা নূরঃ ৬৩]

জামাতে সালাত পড়ার মধ্যে যে অনেক উপকার ও বিপুল স্বার্থ নিহিত রয়েছে তা কারো কাছে অবিদিত নয়। তন্মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট বিষয়টি হলো-

  • পারস্পরিক পরিচয় লাভ, নেক ও পরহেজগারীর কাজে সহযোগিতা এবং পরস্পরকে সত্য অবলম্বনের ও তার উপর ধৈর্য্য ধারণের ওছিয়ত প্রদান করা।
  • জামাতে সালাত পড়ার অন্যান্য উপকারের মধ্যে রয়েছে জামাতে অনুপস্থিত লোকদের জামাতের প্রতি উৎসাহিত করা।
  • জামাতে সালাত পড়ার অন্যান্য উপকারের মধ্যে রয়েছে অজ্ঞদের শিক্ষা প্রদান করা, আহলে নিফাকদের বিরাগভাজন করা ও তাদের থেকে দূরবর্তী হওয়া, আল্লাহর নিদর্শনগুলো তাঁর বান্দাহদের মধ্যে প্রকাশ করা এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর পানে লোকদের আহ্বান করা ইত্যাদি।

আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ও সকল মুসলিমদের তাঁর সন্তোষজনক এবং দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষেত্রে মঙ্গলজনক কাজের তাওফীক দান করুন; আমাদের সবাইকে আমাদের নফসের অনিষ্টতা, আমাদের কাজসমূহের অমঙ্গল এবং কাফের ও মুনাফেকদের সাদৃশ্যপনা থেকে মুক্ত রাখুন। তিনিই তো মহান দাতা ও পরম করুণাময়।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের উপর সলাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

আমীন!!

ঈদের পর করণীয়

ঈদের পর করণীয়

প্রিয় পাঠক, আমরা রমজানের সমাপ্তি নিয়ে কয়েকটি ধাপে একটু চিন্তা করি, হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাদের এর থেকে উপকৃত হওয়ার তওফিক দান করবেন।

প্রথম ধাপ : আমরা রমজান থেকে কী উপার্জন করলাম?

আমরা কি রমজানের সুশোভিত দিন ও আনন্দ মুখর রাতগুলো বিদায় জানাচ্ছি?! আমরা কি কুরআনের মাস, তাকওয়ার মাস, ধৈর্যের মাস, জিহাদ, রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস বিদায় জানাচ্ছি?!

এখানে আমাদের একটি বিষয় খুব ভাল করে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, এগুলো শুধু রমজানের সঙ্গে খাস নয়, বরং প্রত্যেক দিন, প্রতিটি সময়ই আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত পাওয়া যেতে পারে। প্রতিটি মুহূর্তেই তাকওয়া অর্জন ও কুরআনের আদর্শে আদর্শবান হওয়া প্রয়োজন। তবে রমজান মাসে নেকির পরিমাণ খুব বৃদ্ধি করা হয়, নেকি ও এবাদতের সংখ্যা এতে বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমার রব যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন এবং যা ইচ্ছা নিজের জন্য তিনি মনোনিত করেন।” [কাসাস : ৬৭]

আমরা কি তাকওয়ার বাস্তবায়ন করেছি এবং মুত্তাকির সার্টিফিকেট নিয়ে রমজানকে বিদায় জানাচ্ছি?! আমরা কি রমজানে সব ধরণের জিহাদের উপর নিজেদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি?! আমরা কি আমাদের নফস ও প্রবৃত্তির সঙ্গে জিহাদ করে তাদের উপর জয়ী হতে পেরেছি, না পূর্বের বদঅভ্যাস এখনো আমাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে? আমরা কি রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস পেয়ে আমলের দিকে অগ্রগামী হতে পেরেছি? আমরা কি পেরেছি? পেরেছি আমরা?

এ রকম অনেক অনেক প্রশ্ন ও ভাবনা প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে উকিঁ দেয় এবং সে দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বলে: আমি রমজান থেকে কি উপকৃত হলাম ? নিশ্চয় রমজান একটি রূহানী মাদরাসা। পরবর্তী বছরের জন্য সম্বল অর্জন করার মাদরাসা, অবশিষ্ট্য জীবনের জন্য প্রেরণা সঞ্চয় করার মাদরাসা। যখন সে এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করবে, ভাববে তখন সে উপকৃত হবে, নিজের জীবনে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। নিশ্চয় রমজান পরিবর্তন হওয়ার মাদরাসা। আমরা এতে আমাদের আমল, চরিত্র, অভ্যাস ও আল্লাহর বিধান বিরোধী আখলাক বদলে দেব। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আল্লাহ কোন জাতির পরিবর্তণ ঘটান না, যতক্ষণ না তারা তাদের নিজের পরিবর্তন ঘটায়।” [রাদ : ১১]

দ্বিতীয় ধাপ : সে নারীর মত হয়ো না, যে শক্ত করে সূতো পাকানোর পর তা টুকরো টুকরো করে ফেলে :

প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা: আপনি যদি রমজানে তাকওয়া অর্জন করে থাকেন এবং যথাযথ রমজানের হক আদায়কারী একজন ভাগ্যবান হয়ে থাকেন, তবে আপনি সে নারীর মত হবেন না, যে সূতো মজবুত করে পাকানোর পর তা টুকরো টুকরো করে ফেলে। আপনি আপনার এ অর্জন ভূলিণ্ঠিত করবেন না। যে রমজানের পর গুনায় ফিরে গেল সে ঐ নারীর মত, যে কাপড় বুনে তা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। খুবই খারাপ জাতি তারা, যারা রমজান ছাড়া আল্লাহকে চিনে না।

প্রিয় পাঠক, রমজানের ওয়াদা ভঙ্গের অনেক আলামত রয়েছে : উদাহরণত :

  • রমজানের পর প্রথম দিনেই জামাতের সঙ্গে সালাত ত্যাগ করা। রমজানে তারাবির সালাতে মসজিদ ভরে যেত, অথচ তা ছিল সুন্নত। এখন ফরজ সালাতের সময় লক্ষ্য করছি লোকজন মসজিদে আসা ত্যাগ করে দিয়েছে, অথচ তা ফরজ, এর ত্যাগকারী কাফের।
  • গান-বাদ্য, অশ্লীল ছবি ও নগ্ন দেহে ঘর থেকে বের হওয়া এবং নারী-পুরুষ এক সঙ্গে বিনোদন ও অশ্লীল স্পটে জমায়েত হওয়া ইত্যাদি।
  • অনেকে আবার শুধু গুনা করার জন্য টুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করে। বিভিন্ন অমুসলিম দেশে সফর করে। এভাবেই কি আমরা আল্লাহর নিআমতের শুকরিয়া আদায় করব?! এটা কি আল্লাহর নিআমতের সঙ্গে না শুকরি নয়? এটা কি আমল কবুল হওয়ার আলামত? না, এটা আমল কবুল হওয়ার আলামত নয়। আমল কবুল হওয়ার আলামত হল, বান্দার অবস্থা আগের চেয়ে ভাল হয়ে যাবে। সে আগের তুলনায় আরো বেশি কল্যাণ মূলক কাজে আগ্রহী হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমার রব ঘোষণা দিয়েছেন যে, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, আমি তোমাদের বৃদ্ধি করে দেব।” [ইবরাহিম : ৭]

তৃতীয় ধাপ : মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর এবাদত করা :

বান্দার উপর ওয়াজিব সব সময় ও সব জায়গায় আল্লাহর এবাদতে নিমগ্ন থাকা। কী রমজান কী গায়রে রমজান সব সময় তার এবাদত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাকে যেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তুমি সেভাবে অটল থাক এবং তোমার সঙ্গে যারা তওবা করেছে।[হুদ : ১১২]

অন্যত্র বলেন: তার নিকট অবিচল থাক এবং তার নিকট ইস্তেগফার কর। [ফুসসিলাত : ৬]

রাসূল (সা.) বলেন: “বল, আমি আল্লাহ উপর ঈমান এনেছি। অতঃপর তুমি অটল থাক।“[মুসলিম]

যদি আমাদের থেকে রমজানের রোজা বিদায় নেয়, তবুও আমাদের সামনে অন্যান্য রোজা বিদ্যমান রয়েছে। যেমন শাওয়ালের রোজা, সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা এবং প্রতি মাসের ১২, ১৩ ও ১৪ তারিখের রোজা, আশুরা ও আরাফা ইত্যাদির রোজা। আরো অনেক কল্যাণমূলক কাজ রয়েছে, যা রমজানের সঙ্গে খাস নয়, যেমন ফরজ জাকাত, নফল সদকা, জিহাদ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি। এভাবে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর এবাদতে অটল থাকা। আর এভাবেই আল্লাহর সাক্ষাত প্রত্যাশা করা। আমরা বলতে পারি না, কখন আমাদের মৃত্যু চলে আসে।

চতুর্থ ধাপ : ঈদ প্রসঙ্গে

ঈদের দিনের কয়েকটি সুন্নত :

  • সালাতের পূর্বে সদকা ফিতর আদায় করা। ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা সবার পক্ষ থেকে সদকা ফিতর আদায় করা।
  • ঈদ গাহে যাওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া।
  • মুসলমানদের সঙ্গে জামাতে সালাত আদায় করা ও খুৎবায় অংশ গ্রহণ করা।
  • হাঁটতে হাঁটতে ঈদ গাহে যাওয়া এবং সালাতের আগ পর্যন্ত স্বশব্দে তাকবির বলা। পুরুষরা জোড়ে তাকবির বলবে।
  • গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুন্দর পোষাক-আশাক পরিধান করা। নারীদের নগ্ন দেহে বের না হওয়া।
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা, অন্তর পরিস্কার করা ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হওয়া।
  • ফকির-মিসকিন, এয়াতিমদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের অন্তরে খুশির সঞ্চার করার চেষ্টা করা।
  • ঈদের সুভেচ্ছা জানানো বৈধ।
  • ঈদের পর দ্রুত কাজা রোজা থাকলে তা আদায় করা অন্যথায় শাওয়ালের ছয় রোজ আদায় করা।

পরিশিষ্টি :

আমাদের কর্তব্য নেক ও কল্যাণ মূলক আমল করা। আমল কবুল না হওয়ার ভয় ও আমল কবুল হওয়ার আশা নিয়ে ঈদের দিন অতিবাহিত করা। আমরা আমাদের আমল কবুল হওয়ার আশা পোষণ করব এবং ঈদের দিনকে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মানের দিন জ্ঞান করব। জনৈক বুযর্গ কতক লোকদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন : যারা খেলতামাশায় মত্ত ছিল, তিনি তাদের দেখে বলেন : আল্লাহ তোমাদের আমল কবুল করে থাকলে এটা কোন শুকরিয়া আদায়কারীর কাজ হতে পারে না! আর যদি তোমাদের আমল কবুল না করে থাকেন, তবে এটা কোন আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের আমল হতে পারে না। আফসোস!যদি আমাদেরকে দেখতেন, কি বলতেন তিনি?

— সমাপ্ত

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

দুই ‘ঈদের স্বালাতে তাঁর-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- দেখানো আদর্শ

প্রশ্ন: 

আমি দুই ‘ঈদের সালাতে নবী -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর দেখানো আদর্শ সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর: 

তিনি -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- দুই ‘ঈদের স্বালাত ‘ঈদগাহে (মুস্বাল্লা) আদায় করতেন। তিনি -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ‘ঈদের স্বালাত মাসজিদে আদায় করেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইমাম আশ-শাফি‘ঈ ‘আল-উম্ম’- এ বলেছেনঃ “আমাদের কাছে এই বর্ণনা পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-দুই ‘ঈদের দিন মাদীনাহর ঈদগাহে যেতেন, তাঁর পরেও সবাই তাই করতেন যদি না তা না করার পেছনে কোন অজুহাত থাকত যেমন বৃষ্টি ইত্যাদি।অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীরাও তাই করতেন মক্কাবাসীরা ব্যাতীত।” তিনি তাঁর সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পড়ে (দুই ‘ঈদের স্বালাত আদায় করতেন) বের হতেন। তাঁর -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- একটি হুল্লাহ (এক বিশেষ পোশাক) পরে দুই ‘ঈদ এবং জুমু‘আহর স্বালাত আদায় করতে যেতেন। হুল্লাহ এক ধরণের দুই প্রস্থ কাপড় যা একই জাতীয় উপকরণে তৈরি।

তিনি ‘ঈদুল ফিত্বর-এর স্বালাত আদায় করতে যাওয়ার আগে খেজুর খেতেন এবং তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।। ইমাম আল- আনাস ইবনু মালিক-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ“রাসূল -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ‘ঈদুল ফিত্বর এর দিন সকালবেলা খেজুর না খেয়ে বের হতেন না, আর তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।” [বুখারী ৯৫৩]

ইবনু ক্বুদামাহ বলেছেনঃ “ ঈদুল ফিত্বর এর দিন তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে ফেলা যে মুস্তাহাব্ব, এ ব্যাপারে কোন ভিন্ন মত আছে কিনা আমাদের জানা নেই।” (‘ঈদুল ফিত্বরের দিনে) স্বালাত আদায়ের আগেই খেয়ে ফেলার পেছনে হিকমাহ হল কেউ যেন এটি না ভাবে যে স্বালাত আদায় করা পর্যন্ত না খেয়ে থাকা অপরিহার্য।

এটাও বলা হয়ে থাকে যে, (তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলার পেছনে হিকমাহ হল) স্বাওম ওয়াজিব হওয়ার পর ইফত্বার (স্বাওম ভঙ্গ করা) ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ-তা‘আলা-এর আদেশ পূর্ণাংগভাবে অনুসরণের জন্য তৎপর হওয়া। যদি একজন মুসলিম খেজুর না পায়, তাহলে সে অন্য কোন কিছু, এমনকি পানি দিয়ে হলেও ইফত্বার করবে যাতে  নীতিগতভাবে সুন্নাহ অনুসরণ করতে পারে আর তা হল ‘ঈদুল ফিত্বর-এর সালাতের আগে ইফত্বার করা (কিছু খাওয়া বা পান করা)।

আর ‘ঈদুল ’আদ্বহার (আযহার) দিন তিনি মুস্বাল্লা (ঈদগাহ) থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত কিছু খেতেন না, এরপর তিনি তাঁর উদ্বহিয়্যাহ (জবেহ করা পশুর গোশত) থেকে কিছু খেতেন। এবং তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি দুই ‘ঈদের দিনই গোসল করতেন। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেছেনঃ “এ সম্পর্কে দুইটি দ্বা‘ঈফ (দূর্বল) হাদীস রয়েছে তবে ইবনু‘উমার, (রা:) যিনি সুন্নাহ অনুসরণের ব্যাপারে অত্যন্ত তৎপর ছিলেন, তাঁর থেকে  প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি ‘ঈদের দিন বের হওয়ার আগে গোসল করতেন।”

আর তিনি-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ‘ঈদের স্বালাত আদায় করতে হেঁটে যেতেন এবং হেঁটেই ফিরে আসতেন। ইবনু ‘উমার, থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ “রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-‘ঈদের স্বালাত আদায় করতে হেঁটে যেতেন এবং হেঁটেই ফিরে আসতেন।”[ইবনু মাজাহ ১২৯৫][আল-আলবানী ‘সহীহ ইবনি মাজাহ’ তে একে হাসান বলে আখ্যায়িত করেছেন ] আর ইমাম‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ ‘ঈদের স্বালাত হেঁটে আদায় করতে যাওয়া সুন্নাহ ।”[আত-তিরমিযী ৫৩০] [আল-আলবানী ‘সহীহ আত-তিরমিযী’- তে একে হাসান বলে আখ্যায়িত করেছেন ]

ইমাম আত-তিরমিযী বলেছেনঃ“ অধিকাংশ ‘আলিমগণ এই হাদীস অনুসরণ করেছেন এবং ‘ঈদের দিনে হেঁটে (স্বালাত আদায়ের জন্য) বের হওয়াকে মুস্তাহাব্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কোন গ্রহণযোগ্য অজুহাত ছাড়া যানবাহন ব্যবহার না করা মুস্তাহাব্ব। তিনি যখন -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-মুস্বাল্লায় (‘ঈদগাহে) পৌঁছতেন, তখন কোন আযান বা ইক্বামাত বা ‘আস্ব-স্বালাতু জামি‘আহ’ (স্বালাত শুরু হতে যাচ্ছে) এরূপ না বলেই স্বালাত শুরু করতেন, এগুলোর কোনটি না করাই সুন্নাহ । এবং তিনি ঈদগাহে ঈদের আগে বা পরে আর কোন স্বালাত আদায় করতেন না। তিনি -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-খুত্ববাহর আগে স্বালাত দিয়ে শুরু করতেন। তিনি দুই রাকা‘আত সালাতের প্রথম রাকা‘আতে তাকবীরাতুল ইহরাম (তাকবীরে তাহরীমা) সহ পরপর সাতটি তাকবীর  দিতেন।

প্রতি দুই তাকবীরের মাঝে কিছু সময় বিরতি নিতেন। দুই তাকবীরের মাঝখানে বিশেষ কোন দু‘আ’ পড়েছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে এটা বর্ণিত হয়েছে যে ইবনু মাস’ঊদ বলেছেনঃ “তিনি আল্লাহর প্রশংসা করতেন, তাঁর সানা’হ পাঠ করতেন এবং নাবীর -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উপর স্বালাত পাঠ করতেন।”

ইবনু ‘উমার যিনি সুন্নাহ অনুসরণের ব্যাপারে অত্যন্ত তৎপর ছিলেন প্রতি তাকবীরের সাথে সাথে হাত উঠাতেন। তাকবীর  শেষ করার পর তিনি ক্বিরা‘আত আরম্ভ করতেন। তিনি সূরাহ আল ফাতিহাহ পাঠ করার পর তিনি দুই রাক‘আতের যে কোন এক রাক‘আতে “ক্বাফ ওয়াল ক্বুর’আনিল মাজীদ” (৫০ নং সূরাহ ক্বাফ) এবং অপর রাক‘আতে “ইক্বতারাবাতিস সা‘আতু ওয়ান শাক্বকাল ক্বামার” (৬৪ নং সূরাহ আল ক্বামার) পড়তেন। আবার কখনো “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ‘লা” (৮৭ নং সূরাহ আল আ‘লা) ও “হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ” (৮৮নং সূরাহ আল গাশিয়াহ) পড়তেন। এই দুটিই সহীহ বর্ণনাতে পাওয়া যায়। এছাড়া আর কোন সূরাহর কথা সহীহ বর্ণনায় পাওয়া যায়না। ক্বিরা‘আত শেষ করার পর তিনি তাকবীর  বলে রকূ‘ করতেন। এরপর সেই রাক্‘আত শেষ  করে সাজদাহ থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর পরপর পাঁচটি তাকবীর দিতেন। পাঁচবার তাকবীর দেয়া শেষ করার পর  আবার ক্বিরা‘আত আরম্ভ করতেন। সুতরাং তাকবীরই প্রথম জিনিস যা দ্বারা তিনি প্রত্যেক রাক‘আতে শুরু করতেন। ক্বিরা‘আত শেষ করার পর তিনি রুকূ‘ করতেন।

আত-তিরমিযী বর্ণনা করেছেন কাথীর ইবন ‘আব্দিল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আওফ থেকে তিনি তাঁর বাবা থেকে, তিনি তাঁর দাদা থেকে যে- “রাসূলুল্লাহ দুই ‘ঈদের স্বালাতে প্রথম রাক‘আতে ক্বিরা‘আতের আগে সাতবার তাকবীর দিতেন এবং অপর রাক‘আতে ক্বিরা‘আতের আগে পাঁচবার তাকবীর  দিতেন।”

ইমাম আত-তিরমিযী বলেছেনঃ “আমি মুহাম্মাদকে- অর্থাৎ  ইমাম আল বুখারী-কে এই হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেনঃ ‘এই বিষয়ে এর চেয়ে সহীহ আর কোন বর্ণনা নেই।’ এবং আমিও তাই মনে করি।” আর তিনি -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-যখন স্বালাত শেষ করতেন, তখন তিনি সরে গিয়ে সবার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আদেশ এবং নিষেধ সমূহ বলতেন। সবাই তখন কাতারে বসে থাকত। তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতেন, ওয়াসিয়্যাত করতেন, আদেশ করতেন ও নিষেধ করতেন, কোন মিশন পাঠাতে চাইলেত তা পাঠাতেন অথবা কাউকে কোন আদেশ করতে হলে আদেশ করতেন।

আর সেখানে কোন মিম্বার থাকত না যার উপর তিনি দাঁড়াতেন এবং মাদীনাহর মিম্বারও আনা হত না। বরং তিনি তাদেরকে মাটির উপর দাঁড়িয়েই খুত্ববাহ দিতেন। জাবির বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহর সাথে ‘ঈদের স্বালাতে উপস্থিত ছিলাম।তিনি খুত্ববাহর আগে কোন আযান এবং ইক্বামাত ছাড়াই স্বালাত শুরু করলেন। তারপর তিনি বিলালের কাঁধে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন। এরপর তিনি আল্লাহকে ভয় করার আদেশ দিলেন, আনুগত্য করার ব্যাপারে উৎসাহিত করলেন, মানুষদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন। এরপর তিনি মহিলাদের কাছে গেলেন, তাদেরকে আদেশ দিলেন ও তাদের স্মরণ করিয়ে দিলেন।” [বুখারী ও মুসলিম]

 

আবু সা‘ঈদ আল খুদরী -রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহ- বলেছেনঃ “নাবী ’ঈদুল ফিত্বর ও ‘ঈদুল ’আদ্বহা (আযহা)-এর দিন মুস্বাল্লায় (ঈদগাহে) যেতেন এরপর প্রথমেই স্বালাত দিয়ে শুরু করতেন তারপর তিনি উঠে গিয়ে লোকেদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন, সবাই তখন কাতারে বসে থাকত।” (এই হাদীসটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন) তিনি-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তাঁর সকল খুত্ববাহ আল্লাহর প্রশংসা দ্বারা শুরু করতেন। এমন একটি হাদীসও পাওয়া যায় না যেখানে বলা হয়েছে তিনি দুই ‘ঈদের দুই খুত্ববাহ তাকবীর  দিয়ে শুরু করতেন। বরং ইবনু মাজাহ তার সুনান গ্রন্থে (১২৮৭) সা‘দ আল-ক্বারাজ থেকে বর্ণনা করেছেন যে নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলেছেনঃ “নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-দুই খুত্ববাহর মাঝখানে তাকবীর পাঠ করতেন আর দুই ‘ঈদের খুত্ববাহতে বেশি বেশি করে তাকবীর পাঠ করতেন” [আল-আলবানী দ্বা‘ঈফ (দূর্বল) ইবনে মাজাহ’-তে একে দ্বা‘ঈফ(দূর্বল) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।]

এই হাদীসটি দ্বা‘ঈফ(দূর্বল), হলেও এতে এমন কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়না যে  তিনি-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- খুত্ববাহ ‘ঈদের তাকবীর  দিয়ে শুরু করতেন। এবং তিনি (আল আলবানী) ‘তামাম আল মিন্নাহ’ তে বলেছেনঃ “ যদিও এই হাদীস ইঙ্গিত করেনা যে খুত্ববাহ তাকবীর  দিয়ে শুরু করা শারী‘আহ সম্মত, তারপও এটার ইসনাদ দূর্বল এবং এতে এমন একজন ব্যক্তি (রাউয়ী)আছেন  যিনি দ্বা‘ঈফ(দূর্বল) এবং অপরজন যিনি অচেনা।তাই একে  খুত্ববাহ চলাকালীন সময়ে তাকবীর  বলা সুন্নাহ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা জা’ইয নয়।”

ইবনুল ক্বাইয়িম বলেছেন, “দুই ‘ঈদ ও ইসতিসক্বা’ (বৃষ্টি চেয়ে স্বালাত)-এর খুত্ববাহ কি দিয়ে শুরু হবে তা নিয়ে আলিমগণ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। কেউ বলেছেন উভয় (দুই ‘ঈদ ও ইস্তিসক্ব’) খুত্ববাহই তাকবীর  দিয়ে শুরু হবে এবং কেউ বলেছে্ন, ইসতিসক্বা’ (বৃষ্টি চেয়ে স্বালাত)-এর খুত্ববাহ ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) দিয়ে শুরু হবে ।আবার কেউ বলেছেন, উভয় (দুই ‘ঈদ ও ইসতিসক্বা’র) খুত্ববাহই প্রশংসা (আল্লাহর)দিয়ে শুরু হবে।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেছেনঃ ‘এটাই সঠিক মত’…আর তিনি -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তাঁর সব খুত্ববাহই আল্লাহর প্রশংসা দ্বারা শুরু করতেন।” যারা ঈদের স্বালাতে উপস্থিত হয়েছে, নাবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-তাদেরকে বসে খুত্ববাহ শোনা বা চলে যাওয়া দুই এরই অনুমতি দিয়েছেন।  ‘আবদুল্লাহ ইবন আস সা’ইব থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর সাথে ঈদের স্বালাতে উপস্থিত ছিলাম।তিনি স্বালাত আদায় শেষ করে বললেন, [আবূ দাঊদ ১১৫৫]

“আমরা এখন খুত্ববাহ প্রদান করছি, তাই যে চায় বসে খুত্ববাহ শুনতে পারে, আর যে চায় সে চলে যেতে পারে।” [আল-আলবানী একে ‘সাহীহ আবি দাঊদ’ তে  সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন ] রাসূল (সাঃ)ঈদের দিন পথ পরিবর্তন করতেন। তিনি এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, আরেক রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। জাবির ইবন ‘আবদিল্লাহ-রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা- থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ “নাবী -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ঈদের দিন রাস্তা পরিবর্তন করতেন।” [আল-বুখারী ৯৮৬]

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন –রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

ঈদে যে ভুলগুলো হয়

প্রশ্ন:

দুই ঈদে মুসলিমদের ভুল এবং খারাপ কাজগুলোর ব্যাপারে যে সমস্ত সতর্কবাণী দেয়া হয় সেগুলো কি কি? আমরা কিছু কাজ দেখি যেগুলো আমরা দোষ হিসেবে অভিযুক্ত করি যেমন – ঈদের সালাতের পরে কবর যিয়ারত করা এবং ঈদের রাতে রাত জেগে ইবাদাত করা।

উত্তর:

 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। ঈদ ও তার আনন্দ সমাগত হওয়ার সাথে সাথে আমরা কিছু জিনিসের ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে চাই যেগুলো মানুষ আল্লাহ’র শারী’আতে এবং রাসূলুল্লাহ’র (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) সুন্নাহকে না জেনে করে থাকে। যেমনঃ

১) ঈদের দিন সারা রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিক্রম করার বিধান আছে এরূপ বিশ্বাস পোষণ করা:

কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে, ঈদের  দিন সারারাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিক্রম করার বিধান আছে। এটা একধরণের নতুন প্রবর্তিত বিষয় (বিদ’আহ) যা কিনা রাসূলুল্লাহ (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) থেকে প্রমাণিত নয়। বরং এটা যঈফ (দুর্বল) হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যাতে বলা আছে, “যে ঈদের রাতে জেগে থাকবে, তার হৃদয় কখনো মারা যাবে না যেদিন সব হৃদয় মারা যাবে।” এই হাদীসটি সাহীহ নয়। এটা বর্ণিত হয়েছে দুইটি ইসনাদের মাধ্যমে, যার একটি হল মাউযূ (জাল) এবং অপরটি হল যাইফুন জিদ্দান (খুবই দুর্বল)। দেখুন [আল-আলবানীর ‘সিলসিলাত আল-আহাদীস আল-যঈফাহ ওয়া’ল-মাউযূ’আহ ’,(৫২০,৫২১)]

তাই অন্য রাতগুলোকে বাদ দিয়ে ঈদের  রাত্রিকে ক্বিয়ামের জন্য বাছাই করার কোন বিধান নেই, তবে সে ছাড়া যার ক্বিয়ামের অভ্যাস আছে, সেই ক্ষেত্রে ঈদের  রাতে ক্বিয়াম করায় কোন দোষ নেই।

২) দুই ঈদের  দিনে কবর যিয়ারত করা:

এটা ঈদের উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক, যা কিনা আনন্দ ও সুখের প্রকাশ, এবং তা রাসূল (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন)-এর শিক্ষা এবং পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবিঈগনের আচরনেরও (শিক্ষারও) বিরুদ্ধে যায়। সাধারণভাবে বলা যায় যে, কোন নির্দিষ্ট দিনে কবরস্থানে যাওয়া এবং তাকে একটি উৎসব বানিয়ে নেয়ার ব্যাপারে নাবীর নিষেদ্ধাজ্ঞা আছে, যেমনটি আলিমগণ বলেছেন। আর এটি রাসূলের কবরকে ঈদ হিসেবে গ্রহন না করার সাধারণ নিষেদ্ধাজ্ঞার আওতায় পড়ে, কারণ, বিশেষ কিছু সময়ে ও পরিচিত  কিছু মৌসুমে যদি কবর যিয়ারত করতে চাওয়া হয় যার অর্থ দাঁড়ায় কবরকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করা,যেভাবে আলিমগণ বলেছেন। [দেখুন আল-আলবানীর ‘আহকাম আল-জানা’ইয ওয়া বিদা‘উহা ’ (পৃঃ ২১৯,২৫৮)]

৩) জামা’আহ (জামা‘আতে স্বালাত) পরিত্যাগ করা এবং দেরিতে ঘুমানো ও  সালাত  না পাওয়া:

দুর্ভাগ্যক্রমে, আপনি দেখবেন যে কিছু মুসলিমের সালাত ছুটে যায় এবং জামা’আহ পরিত্যাগ করে। নাবী (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) বলেছেনঃ “আমাদের এবং তাদের মধ্যে চুক্তি হল সালাত , যে তা পরিত্যাগ করবে সে কুফরী করল।” [বর্ণিত হয়েছে আত-তিরমিযী হতে, (২৬২১);আন-নাসা’ঈ (৪৬৩) সাহীহ আত-তিরমিযী তে আল-আলবানী একে সাহীহ বলেছেন।]

এবং তিনি বলেছেন: “মুনাফিক্বদের জন্য ‘ইশা’ এবং ‘ফাজর’ এর  সালাত  সবচেয়ে বোঝাস্বরূপ। তারা যদি জানত তার মধ্যে (কী কল্যান) আছে, তবে তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে (সেই দুই সালাতে) উপস্থিত হত। আর আমি চিন্তা করেছিলাম যে স্বালাতের আদেশ করব আর তা কায়েম করা হবে এবং একজন লোককে আদেশ করব যে লোকদের নিয়ে (ইমাম হিসেবে) সালাত  আদায় করবে, এরপর আমি আমার সাথে কিছু লোক নিয়ে যাবো যাদের সাথে কাঠের বোঝা থাকবে, সেই সমস্ত লোকদের কাছে যারা জামা‘আতের সালাতে উপস্থিত হয়নি , এরপর তাদের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিব।” [মুসলিম থেকে বর্ণিত(৬৫১)]

৪) সালাতের স্থানে, রাস্তাঘাট কিংবা অন্য কোন স্থানে পুরুষদের সাথে নারীদের একত্রিত হওয়া আর ঐ সব জায়গায় পুরুষদের সাথে তাদের ভিড় জমানো:

এতে আছে মহা ফিতনাহ ও বড় বিপদ। এ ব্যাপারে  ওয়াজিব হল নারী এবং পুরুষ উভয়কেই সতর্কবাণী দেয়া এবং যতটুকু সম্ভব প্রতিরোধের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়া। পুরুষ ও তরুনদের  পুরোপুরি চলে যাবার আগে নারীদের কখনোই সালাতের স্থান ত্যাগ করা উচিত নয়।

৫) কিছু নারীদের সুগন্ধি ও সাজগোজ করে পর্দা ছেড়ে বের হওয়া:

এই সমস্যাটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারটিকে খুব হালকাভাবে নেয়। এ ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য আমরা কামনা করি। কিছু নারী যখন তারা তারাউয়ীহ (তারাবীহ) , ঈদের সালাত  আদায় অথবা অন্য জায়গায় বের হয় তখন তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিধান করে এবং সবচেয়ে সুন্দর সুগন্ধি ব্যবহার করে আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথ দেখান। আর আল্লাহ’র রাসূল (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত  ও সালাম বর্ষণ করুন) বলেছেনঃ “যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং লোকজনের পাশ দিয়ে এমনভাবে যায় যাতে তারা তার সৌরভ উপলব্ধি করতে পারে সে একজন ব্যাভিচারিণী।” [বর্ণনা করেছেন আল-নাসা’ই (৫১২৬); আত-তিরমিযী (২৭৮৩); আল-আলবানী ‘সাহীহ আল-তারঘীব ওয়া আত-তারহীব’ (২০১৯) –এ একে  হাসান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।]

আবূ হুরাইরাহ (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হোন) থেকে বর্নিত  যে তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ’র রাসূল (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) বলেছেনঃ “জাহান্নামবাসী দুটো শ্রেণী আছে যাদেরকে আমি দেখি নি। তারা এমন মানুষ যাদের কাছে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকে যা দিয়ে তারা লোকদের মারে এবং এমন নারী যারা কাপড় পরা স্বত্তেও বিবস্ত্র থাকে, নিজেরাও পথভ্রষ্ট এবং অপরকেও বিপথে পরিচালনা করে, তাদের মাথা হেলে যাওয়া উটের কুঁজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এমনকি এর সৌরভও পাবে না, যদিও এর সৌরভ এই এই দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়।” [মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে (২১২৮)]

নারীদের অভিবাবকদের অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করা উচিত তাদের স্বার্থে যারা তাদের আশ্রয়ে আছে এবং আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করা এবং ভরণ-পোষণ করার জন্য যে দায়িত্ব ওয়াজিব করেছেন তা সম্পাদন করা, কারণ আল্লাহ বলেছেনঃ “পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।” [সুরা নিসা ৪:৩৪]

সুতরাং, তাদের (নারীদের অভিভাবকদের) তাদের (নারীদের) উচিত তাদেরকে অবশ্যই সঠিক পথে পরিচালিত করা এবং তাই দেখানো যা তাদের এই দুনিয়া ও আখিরাতে পরিত্রাণ ও নিরাপত্তার পথে পরিচালিত করবে, তাদেরকে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা থেকে দূরে রাখা এবং উৎসাহ যোগানো যাতে তারা আল্লাহ’র নিকটবর্তী হতে পারে।

৬) হারাম গান শোনা:

বর্তমানে মন্দ কাজগুলির মধ্যে যা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তা হচ্ছে গান বাজনা। এগুলো খুব ব‍্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং মানুষ এই ব্যাপারটিকে হালকাভাবে নিচ্ছে। এটা এখন টিভি, রেডিও, গাড়িতে, ঘরে এবং মার্কেটগুলোতে চালু আছে। কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই আল্লাহ ছাড়া এ সব থেকে ফিরানোর । এমনকি মোবাইল ফোনও এই খারাপ জিনিস থেকে মুক্ত না। অনেক কোম্পানী আছে যারা মোবাইল ফোনে সর্বাধুনিক মিউজিক টিউন দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করে এবং এর সাহায্যে সঙ্গীত এখন মসজিদে প্রবেশ করেছে, আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন এটা মহাবিপদ এবং খুবই মন্দ ব্যাপারগুলোর একটি যে আল্লাহ’র ঘরসমূহে (মাসজিদসমূহে) মিউজিক শুনতে পান। প্রশ্ন নং- 34217 দেখুন। এটা নাবী’র (আল্লাহ তাঁর উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন) কথার সত্যতা প্রমাণ করে: “আমার উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক এমন থাকবে যারা ব্যাভিচার, সিল্ক, আ্যলকোহল এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।” [আল-বুখারী থেকে বর্ণিত।] প্রশ্ন নং- 5000, 34432 দেখুন।

তাই একজন মুসলিমের আল্লাহকে ভয় করা উচিত এবং তার জানা উচিত তার উপর আল্লাহ’র যে নি‘আমাত (অনুগ্রহ) আছে তার জন্য তার শোকর করা কর্তব্য। এটা কখনোই নি‘আমাতের শোকর করা নয় যা একজন, মুসলিম তার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করবে যিনি তার উপর অসীম নি‘আমাত বর্ষণ করেছেন। একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যাক্তি কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা ঈদের আনন্দে মত্ত হয়ে গর্হিত কাজ করেছিল, তখন তাদেরকে তিনি বললেন: “যদি তোমরা রামাদ্বানে ইহসান (ভালো করে) থাকো তাহলে এটা সেই ইহসানের শোকর করার কোন পথ নয়। আর যদি তোমরা রামাদ্বানে খারাপ করে থাকো, তাহলে আর-রাহমানের (পরম দয়াময়ের) সাথে যে খারাপ ব্যবহার করল, সে এমন করতে পারে না।”

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

ঈদের বিধিবিধান

ভূমিকা: 

অবারিত আনন্দের বার্তা নিয়ে যখন ঈদের এক ফাঁলি চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে ভেসে উঠে তখন সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। শিশু-কিশোরগণ আনন্দে  উদ্বেলিত হয়ে প্রজাপতির মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। এই ঈদ আল্লাহর পক্ষ থেকে  একটি বড় নে’য়ামত। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আগমন করে দেখলেন, মদীনাবাসী খেলা-ধূলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কি? তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলী যুগে আমরা খেলা-ধুলার মধ্য দিয়ে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন: “আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, একটি হল, ঈদুল আযহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” [সুনান আবূদাঊদ, হাদীস নং ৯৫৯ সনদ-সহীহ, আলবানী] (রহঃ) ইসলামী দিক নির্দেশনা অনুযায়ী যদি আমরা  ঈদ ঊদ্যাপন করি তবে একদিকে যেমন ঈদের অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে আমাদের পার্থিব জীবন অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হবে আমাদের পরকালীন জিন্দেগী।

ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ছাড়া অন্য কোন ঈদ-উৎসব পালন করা: 

উপরোল্লিখিত হাদীস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইসলামী শরীয়তে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতিরেকে তৃতীয় কোন ঈদ বা উৎসব পালন করার সুযোগ নেই। অথচ আমাদের মুসলিম সমাজে বর্তমানে কত ধরণের ঈদ ও ঊৎসব  জমজমাট ভাবে পালন করা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যেমন, ঈদে মিলাদুন নবী বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম উৎসব। বরং এটাকে ‘সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ বলে জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। যা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীসের  সুস্পষ্ট বিরোধী। অনুরূপভাবে তথাকথিত পহেলা বৈশাখ, খৃষ্ট নববর্ষ, এপ্রিল ফুল, বড় দিন (Xmas Day), ইত্যাদি অগণিত  উৎসব আমদের মুসলানগণ অবলিলায় পালন করে যাচ্ছে কিন্তু একবারও চিন্তা করে দেখে না যে, আসলে এগুলোর উৎস কোথায়? এসব মূলত: হিন্দু ও খৃষ্টানদের থেকে আমদানিকৃত সংষ্কৃতি যার সাথে মুসলমানের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে গেছেন: “যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” [আবূদাউদ হাদীস নং ৩৫১২, সনদ-সহীহ, আলবানী]

 ইসলাম স্বীকৃত দুটি ঈদ ছাড়া অন্য কোন ঈদ বা উৎসব পালন করা, তাতে অংশগ্রহণ করা বা সে উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ইসলামের সরল-সোজা, সুন্দর ও আলোকময় পথ ধরে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন!

ঈদের প্রকৃত অর্থ কি?

শুধু দামী পোশাক, রঙ্গিন জামা, হরেক রকম সুস্বাদু  খাবার আর নানা ধরণের আনন্দ-উৎসবের নাম ঈদ নয়। ঈদের উদ্দেশ্য কি তা আল্লাহ তা’আলা নিন্মোক্ত আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন: ”আর যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্যে তোমরা আল্লাহর মমত্ব প্রকাশ কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা হও ।” [সূরা বাকারাঃ ১৮৫]

এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ঈদের উদ্দেশ্য হল দুটি:

  • আল্লাহর বড়ত্ব মমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা।
  •  আল্লাহ যে নেয়ামত দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা।

ঈদ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান

 নিন্মে আমরা অতি সংক্ষেপে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে ঈদ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে আমরা আমাদের ঈদ উদযাপন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

১) ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ: প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা এ দু দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।” [বুখারী হাদীস নং ১৮৫৫]

২) ঈদের রাত থেকে তাকবীর পাঠ করা: ঈদের রাতের সূর্য ডুবার পর থেকে আরম্ভ করে ঈদের নামায পড়া পর্যন্ত এ তাকবীর পড়তে হবে। পুরুষগণ মসজিদ, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট তথা সর্বত্র উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ঈদের আনন্দ প্রকাশ করা হয় অন্যদিকে আল্লাহর আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তাকবীর পড়ার নিয়ম হল, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।”

৩) ঈদ উপলক্ষে পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা: মুসলমানগণ পরস্পরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করাতে অসুবিধা নেই। কারণ সাহাবীগণ ঈদ উপলক্ষে তা করতেন। তারা এই বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতেন ”তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং আপনার (ইবাদত-বন্দেগী) কবুল করুন। [বায়হাকী (২/৩১৯)-সনদ হাসান]

৪) ভালো পোশাক ও ভালো খাবারের আয়োজন করা: ঈদ উপলক্ষে যথাসম্ভব পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো খাবার ও সুন্দর পোশাক দেয়ার ব্যবস্থা করা উত্তম। তবে অপচয় যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। অনুরূপভাবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা কর্তব্য। সেই সাথে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখতে হবে। দরিদ্রদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। যাতে ঈদের আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত না হয়।

৫) ঈদের নামাযের প্রতি যত্মশীল হওয়া: ঈদুল ফিতরের নামায বিলম্বে পড়া সুন্নত। যাতে ঈদের দিন সকালবেলা ফিতরা বণ্টন করার সময় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার নামায তাড়াতাড়ি পড়া সুন্নত।

৬) গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে। তারপর সুগন্ধি ব্যাবহার করে ও সাধ্যানুযায়ী সবচেয়ে সুন্দর কাপড় পরিধান করে ঈদগাহ অভিমুখে যাত্রা করবে। তবে কাপড় পরিধান করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেন পুরুষের কাপড় টাখনুর নিচে না যায়। কেননা, পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা হারাম। আর মহিলাকে তার সর্বাঙ্গ আবৃত করতে হবে এবং রূপ-সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা মহান আল্লাহ বলেন: “আর তারা (মহিলাগণ) তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না তাদের স্বামী, পিতা,স্বামীর পিতা ছাড়া অন্যের নিকট।” [সূরা নূর: ৩১]

৬) ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া: ঈদুল ফিতরে ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া সুন্নত। আনাস (রা:) বলেন: “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটা খেজুর না খেয়ে ঈদের মাঠে যেতেন না। আর তিনি তা বেজোড় সংখ্যায় খেতেন।” [বুখারী] ।পক্ষান্তরে ঈদুল আযহায় তিনি ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছুই খেতেন না। ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে নিজের কুরবানীর গোস্ত খেতেন।

৭) মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া: মহিলাদেরকে সাথে নিয়ে  ঈদের নামায পড়তে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন: “কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন কি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দু’আতে শরীক হবে।” [বুখারীঃ হাদীস নং ৯২৭]

এ সুন্নত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় আজো প্রচলিত আছে। সুতরাং যে সব এলাকায় তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের কর্তব্য হল, আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই আনন্দঘন পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসা। তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান করা জরুরী। মহিলাগণ যখন বাড়ি থেকে বের হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে অন্য মানুষের নিকট দিয়ে গমন করার ফলে তারা তার ঘ্রাণ পেল সে মহিলা ব্যভিচারিণী।” [নাসাঈঃ হাদীস নং ৫০৩৬]

৮) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা: পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা এবং ভিন্ন পথে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা সুন্নত। [বুখারীঃ হাদীস নং ৯৩৩]

ঈদের নামায:

ক. ঈদের নামাযে আযান ও একামত নেই: জাবের ইবনে সামুরা (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একবার নয় দুই বার নয় একাধিক বার ঈদের নামায পড়েছি তাতে আযান ও একামত ছিল না।” [সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ১৪৭০]

খ. ঈদের নামায: ঈদের নামাযের আগে বা পরে নফল নামায পড়া শরীয়ত সম্মত নয়।

গ. সর্বপ্রথম ঈদের নামায হবে তারপর খুতবা: আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের মাঠে গিয়ে সর্বপ্রথম নামায আদায় করতেন তারপর জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ওয়ায করতেন, কোন উপদেশ থাকলে উপদেশ দিতেন বা কোন নির্দেশ থাকলে নির্দেশ দিতেন। আর জনগণ নামাযের কাতারে বসে থাকতেন। কোথাও কোন বাহিনী প্রেরণের ইচ্ছা থাকলে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন অথবা অন্য কোন নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করলে তা জারী করতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯০৩]

ঘ. রাকাত সংখ্যা: ঈদের নামায দু রাকাত। [বুখারী, হাদীস নং ১৩৪১]

ঙ. ঈদের নামাযে কেরাআত: প্রখ্যাত সাহাবী নুমান ইব্ন বাশীর (রা:) হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদ ও জুমার নামাযে প্রথম রাকায়াতে ‘সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল আ’লা’ এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাসিয়াহ্’ পাঠ করতেন। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৫৫০ সনদ সহীহ-আলবানী]

সূরা ক্বাফ এবং সূরা ইক্বতারাবতিস্ সা’আহ্’ পড়ার কথাও হাদীস পাওয়া যায়। [নাসাঈঃ হাদীস নং ১৫৪৯, সনদ সহীহ-আলবানী]

চ.  ঈদের খুতবা শোনা: ঈদের খুতবা প্রসঙ্গে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে আর যে (খুতবা শোনার জন্য) বসতে চায়  সে বসতে পারে। [নাসাঈ হাদীস নং ১৫৫৩ সনদ সহীহ-আলবানী]

ঈদ ও সামাজিক জীবন 

ঈদের আনন্দ নির্মল, পবিত্র এবং অত্যন্ত মধুময়। ঈদ উপলক্ষে যখন নিজ নিজ গৃহে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব একে অপরকে দাওয়াত দেয়, পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, একে অপরকে উপহার সামগ্রী আদান-প্রদান করে তখন ঈদের আনন্দ আরও মধুময় হয়ে উঠে। সুদৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন। মনের মধ্যে জমে থাকা হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ ও তিক্ততা দূর হয়ে পারস্পারিক ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও সম্মানবোধ জাগ্রত হয়। জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বয়ে যায় শান্তির সুবাতাস যা প্রভাতের আলোর মতই স্বচ্ছ, নির্মল ও নিষ্কলুষ।

ঈদ ও পাপাচারিতা: ঈদের পবিত্রতা ম্লান হয়ে যায় যখন দেখা যায় ঈদ উৎসব ও ঈদ মেলার নামে অশ্লীলতা-বেহায়াপনার মেলা বসে। তরুণ-তরুণীরা নানারকম আপত্তিকর পোষাকে চলাফেরা করে। একশ্রেণীর উদ্ভট যুবক বাড়িতে, রাস্তার ধারে ও বিভিন্ন ক্লাবে বড় বড় ডেকসেটে অডিও সিডি চালু করে উচ্চ আওয়াজে গান বাজাতে থাকে। সরকারী-বেসরকারি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ অশ্লীল ফিল্ম সম্প্রচার করে। সিনেমা হলগুলোতে নতুন নতুন ছবি জাকজমকভাবে প্রদর্শিত হয়। মনে  হয় এরা যেন এ ধরণের একটি সময়েরই প্রতীক্ষায় ছিল এত দিন!দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা করার পর যে একটা ঈমানী পরিবেশ তৈরি হয়ে ছিল, কুরবানী করার মাধ্যমে যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রতিযোগিতার লিপ্ত হয়েছিল মুসলিম সমাজ তারা কি এসব ক্রিয়া-কাণ্ডের মাধ্যমে তার চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়? এসব অপসংস্কৃতিকে পরিত্যাগ করে আমরা যদি ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ধারণ করতে পারি তাহলে আমাদের সার্বিক জীবন সুন্দর ও পবিত্রতার আলোক রশ্মিতে ভাস্বর হয়ে উঠবে।

পরিশেষে, কামনা করি ঈদ আমাদের জীবনে রংধনুর মত রং ছড়িয়ে বার বার ফিরে আসুক। আর সে রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠুক আমাদের জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত। ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যাক সকল পাপ ও পঙ্কিলতা।

আমীন!!

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

রমজানকে বিদায় জানানো

এক সময় আমরা রমজানের অপেক্ষা করেছি, এখন আমরা রমজানকে বিদায় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এভাবেই আমাদের জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে। মানুষ বলতেই কয়েকটি দিনের সমষ্টি। একটি দিন অতিবাহিত হয় তার জীবনের একটি অংশ ঘষে পড়ে। এ রমজানও চলে যাবে, যেমন আসতে ছিল। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি রাত-দিন, মাস-বছর অতিবাহিত করেন। এতে রয়েছে মুত্তাকিদের নসিহত, উপদেশ গ্রহণকারীর জন্য উপদেশ।

এ রমজানও অন্যান্য বছরের ন্যায় চলে যাবে। সে তার আমল নামা বন্ধ করে ফেলবে, যা কিয়ামতের দিন ছাড়া খোলা হবে না। আমাগী রমজান পাব কিনা আমরাও তা জানি না। আল্লাহ সাহায্যকারী।

রমজানের জন্য কাঁদা উচিত। একজন মুমিন রমজানের জন্য কিভাবে না কাঁদবে, অথচ এ রমজানে জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করা হয়। একজন গোনাগার কি জন্য রমজানের জন্য আফসোস না করবে, অথচ রমজানে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়। কেন শয়তান রমজানের কারণে জ্বলেপুড়ে না মরবে, অথচ তাতে সে আবদ্ধ থাকে। হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা এতে কাদোঁ। হে মুত্তাকিগণ, তোমরা এতে উপার্জন কর।

রমজানে নেককারদের অবস্থা :

রমজানে তারা আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান থাকে, তার শাস্তিকে ভয় করে। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তারা আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজ রবের রহমত প্রত্যাশা করে।‘ [জুমার : ৯]

তারা আল্লাহর এবাদতে নিমগ্ন থাকে, দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাদের অন্তরে আল্লাহর চিন্তা ভিন্ন কোন চিন্তা বিরাজ করে না। তারা প্রকৃত পক্ষে দাউদ তায়ীর বাণীর অনুকরণ করে। একদিন তিনি আল্লাহর সঙ্গে কথপোকথনে বলতে ছিলেন: ‘তোমার চিন্তা আমার সমস্ত চিন্তা দূর করে দিয়েছে। তোমার চিন্তা আমার আনন্দ-বিনোদন শেষ করে দিয়েছে। তোমার সাক্ষাত ইচ্ছা আমার স্বাদ বিস্বাদ করে দিয়েছে এবং প্রবৃত্তির আড়াল হয়ে গেছে।‘ [লাতায়েফুল মাআরেফ : ৩৪৮]

এ হচ্ছে রোজাদেরর অবস্থা। তাদের স্থান মসজিদ ও লক্ষ নির্জনতা। তারা লম্বা কেরাত পড়ে, কুরআন তিলাওয়াত করে, আল্লাহর সামনে রোনাজারি করে। তারা আল্লাহ মুখি হওয়ার প্রতিজ্ঞা করে এবং রহমানের সঙ্গে মোনাজাত করে। অথচ অন্যরা তখন শয়তানের আসরে বসে থাকে, গোনাগারদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।

তারা কি জন্য আমল করে ?

তারা কেন আমল করে? কি তাদের উদ্দেশ? কেন তাদের এতো লম্বা কেরাত? কেন তাদের এতো রাত জাগা ও পরিশ্রম করা? উত্তর : তারা লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করে। যে রাত হাজার রাতের তুলনায় উত্তম। যদি মসজিদের মুখ থাকতো, সে বলে উঠত: হে লাইলাতুল কদর, তোমায় এবাদতকারীদের দেখে নাও। হে সালাত আদায়কারী, তুমি রুকু কর, সেজদা কর। হে প্রার্থনাকারী, এ রাতে তুমি খুব প্রার্থনা কর।‘ [লাতায়েফ : ৩৪৯]

এ রমজান চলে যাবে, তবে এর রাতসমূহ এতে ক্রন্দনকারী, তওবাকারী, ইস্তেগফাকারী, তিলাওয়াতকারী ও সদকাকারীদের চেনে নেবে। তারা আল্লাহর রহমত প্রত্যাশা করে, তারা জানে যে, আল্লাহ ক্ষমাকারী, তাই তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।

গোনাহগাররা যদি আল্লাহর মাগফেরাত সম্পর্কে না জানতো, তবে তাদের অন্তর জ্বলে যেত, তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যেত। কিন্ত তারা যখন আল্লাহর ক্ষমার কথা স্বরণ করে, তাদের অন্তর তৃপ্তিতে ভরে যায়। তাদের কেউ বলেছেন: ‘হে আল্লাহ, আমাদের গোনাহ অনেক, কিন্তু তোমার মাগফেরাত খুব বড়। হে আল্লাহ, আমার গোনাহ ও তোমার মাগফেরাতের মধ্যে তুলনা করে দেখ।‘ [লাতায়েফ : ৩৭০]

এ হচ্ছে নেককারদের দোয়া। তারা এভাবেই রমজান অতিবাহিত করেন। তাদেরই শোভা পায় এর সমাপ্তিতে ক্রন্দন করা। কারণ, এর মর্যাদা তারা বুঝে। এতদ সত্বেও তারা ভীত থাকে, কবুল না হওয়ার ভয়ে সঙ্কীত থাকে। তারা জানে আসল বিষয় হচ্ছে কবুল হওয়া, পরিশ্রম করা নয়। অন্তরের পবিত্রতাই আসল পবিত্রতা, শরীরের পবিত্রতা নয়।

মাহরুম কত রাত জাগরণকারী, মাহরুম কত ঘুমন্ত ব্যক্তি। কত ঘুমন্ত অন্তর আল্লাহর জিকিরে মশগুল, কত জাগ্রত অন্তর আল্লাহর অপরাধে লিপ্ত। কিন্তু বান্দাদের উচিত নেককাজের জন্য চেষ্টা করা এবং তার কবুলের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা। এটাই নেককারদের অভ্যাস।

ইয়াহইয়া ইবনে কাসির বলেছেন: ‘আল্লাহর কতক নেক বান্দাদের দোয়া ছিল, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে রমজানের নিকট সোপর্দ কর ও রমজানকে আমার নিকট সোপর্দ কর। এবং রমজানকে আমার কাছ থেকে কবুল করে নাও।‘ [হুলইয়াতুল আউলিয়া : ৩/৬৯]

ইবনে দিনার বলেন, ‘কবুল না হওয়ার ভয়, আমল করার চেয়েও বেশি কষ্টের।‘

আব্দুল আজিজ আবুদাউদ বলেন: ‘আমি তাদের খুব আমল করতে দেখেছি, তবুও আমল শেষে তারা কবুল না হওয়ার শঙ্কায় ভীত থাকত।‘ [লাতায়েফ : ৩৭৫]

আমল কবুল হওয়ার আলামত :

রমজানের পরেও ধারাবাহিক আমল করে যাওয়া আমল কবুল হওয়ার সব চেয়ে বড় আলামত। কেউ বলেছেন, ‘নেকির সওয়াব হচ্ছে, নেকির পর নেকি করা। এক নেক আমলের পর দ্বিতীয় নেক আমল করা, প্রথম আমলটি কবুল হওয়ার আলামত। যেমন নেক আমল করার পর গোনা করা, নেক আমল কবুল না হওয়ার আলামত।‘রমজান পেয়ে ও তাতে সিয়াম-কিয়াম করে, রমজানের পর গোনা করা, মূলত আল্লাহর নিয়ামতকে গোনাহের মোকাবেলায় দাঁড় করা। যদি কেউ রমজানেই রমজান পরিবর্তী গোনা করার ইচ্ছা করে থাকে, তবে তার রোজা তার ওপরই পতিত হবে এবং তওবা না করা পর্যন্ত তার জন্য রহমতের দরজা বন্ধ থাকবে।কত সুন্দর! গোনার পর নেকি করা, তাতে গোনা মিটে যায়, আর নেকির পর নেকি করা আরো সুন্দর! খুবই খারাপ নেকির পর গোনা করা, যার কারণে নেকি নষ্ট হয়ে যায়। তওবা করার পর একটি গোনা করা, তওবার পূর্বে সত্তুরটি গোনার চেয়েও খারাপ। তওবার করার পর তাওবা ভঙ্গ করা খুবই খারাপ। এবাদতের সম্মান লাভ করে গোনার অসম্মান মাথায় নেয়া বড়ই লজ্জাকর।

হে তওবাকারীরা, রমজানের পর তোমরা গোনাতে ফিরে যেয়ো না। তোমরা ঈমানের স্বাদের ওপর গোনার প্রবৃত্তি প্রধান্য দিয়ো না। তোমরা আল্লাহর জন্য ধৈর্য ধারণ কর। তিনি তোমাদের উত্তম জিনিস দান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘যদি আল্লাহ তোমাদের অন্তরে কোন কল্যাণ আছে বলে জানেন, তাহলে তোমাদের থেকে যা নেয়া হয়েছে, তার চেয়ে উত্তম কিছু দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।‘ [আনফাল : ৭০]

হে এবাদত গোজার বান্দারা, যে সব এবাদতের মাধ্যমে তোমরা রমজানে আল্লাহর এবাদত করেছো, সে এবাদত এখনো বিদ্যমান। রমজানের সঙ্গে সঙ্গে তা চলে যায়নি। হয়তো তোমরা তা পুরোপুরি করতে পারবে না, কিন্তু একেবারে ছেড়ে দিয়ো না। বিশর হাফিকে বলা হয়েছে, ‘কতক লোক রযেছে, যারা রমজানে খুব এবাদত ও পরিশ্রম করে। তিনি বলেন: তারা খুবই খারাপ, যারা রমজান ছাড়া আল্লাহকে চিনে না। নেককার সে ব্যক্তি যে সব সময় আল্লাহর এবাদত করে। [লাতায়েফ : ৩৯৬]

এ নীতিই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জারি করে গেছেন। তিনি বলেন: ‘কম হলেও, ধারাবাহিক আমল আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়।‘ [বুখারি : ৪৩, মুসলিম : ৭৮২]

আয়েশা রা. বলেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ধারাবাহিক আমলই বেশি প্রিয় ছিল।‘ [বুখারি : ৪৩]

রমজানের রব, সব মাসেরই রব, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুমিনের আমলের শেষ নেই। হাসান রহ. বলেন,

‘আল্লাহ তাআলা মৃত্যু ছাড়া মুমিনদের আমলের জন্য কোন সময় নির্ধারণ করেননি।‘ আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত তুমি তোমার রবের এবাদত কর।‘ [হিজর : ৯৯) লাতায়েফ : ৩৯৮]

তাদের কি লজ্জা হয় না, রমজানের সঙ্গে সঙ্গে তারা মসজিদ, কুরআন তিলাওয়াত ত্যাগ করে দেয় এবং পুনরায় গোনাতে লিপ্ত হয়। আল্লাহ, তোমার কাছে পানাহ চাই। আমাদেরকে তাদের অন্তরভুক্ত করো না। এ উপদেশ হচ্ছে তাদের জন্য যারা রমজানে রোজা রাখে ও এবাদত করে অতিবাহিত করেছে, কিন্তু যারা রমজান পেয়েও গান-বাদ্য এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় অতিবাহিত করেছে, তাদের জন্য কি বলব?

এর চেয়ে ভাল কথা আর তাদের বলতে পারি না যে, তোমরা তোমাদের রবের নিকট তওবা কর। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘বল, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [জুমার : ৫৩]

তুমি রমজান নষ্ট করেছ, তাই তোমার পুরো জীবন তুমি নষ্ট কর না। তওবা কর, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করতে পারেন। কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।

আমরা কিভাবে রমজানকে বিদায় জানাবো?

ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. তার গভর্নদের লিখে পাঠান যে, তোমরা রমজান মাস ইস্তেগফার ও সদকার মাধ্যমে খতম কর। কারণ, সদকা রোজাদারের জন্য পবিত্রতা স্বরূপ আর ইস্তেগফার রোজার জন্য পবিত্রতা স্বরূপ। আর এ জন্য কেউ বলেছেন, ‘সদকাতুল ফিতর হচ্ছে সেজদায়ে সাহুর ন্যায়।‘ আব্দুল আজিজ তার পত্রে বলেন, ‘তোমরা আবু বকরের ন্যায় বল: তারা বলল, হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলক করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। [আরাফ :২৩]

  • আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। [হুদ : ৪৭]
  • আর যিনি আশা করি, বিচার বিদসে আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দেবেন। [শুআরা : ৮২]
  • হে আল্লাহ, আমি আমার ওপর যুলক করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর।‘ [কাসাস : ১৬]
  • আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম। [আম্বিয়া : ৮৭, লাতায়েফ : ৩৮৭]

ঈদের রাতের আমল :

রমজানের মাগফেরাত যেহেতু রোজা ও কিয়ামের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা রমজান শেষে তার শুকরিয়া আদায় ও তাকবির বলার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেন: ‘তার জন্য তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। [বাকারা : ১৮৫]

এর ব্যাখ্যায় ইবনে মাসউদ বলেন: আল্লাহর পরিপূর্ণ তাওয়া অর্জন করা। অর্থাৎ তার এবাদত করা গোনা না করা। তার স্বরণ করা তাকে না ভুলা এবং তার শুকরিয়া আদায় করা তার কুফরি না করা।‘  ঈদের দিনের সূর্যাস্ত থেকে ঈদের সালাত আদায় পর্যন্ত তাকবির বলা বিধেয়। পুরুষরা মসজিদে, বাজারে ও ঘরে জোড়ে জোড়ে তাকবির বলবে। [তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম : ২/৪৪৬]

ঈদের দিনের সুন্নত :

সালাতে যাওয়ার আগে ঈদের দিন খেজুর খাওয়া। বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া সুন্নত। আনাস রা. বলেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর না খেয়ে ঈদের সালাতের জন্য বের হতেন না, তিনি বিজোর সংখ্যায় খেজুর খেতেন।‘ [বুখারি : ৯৫৩]

নারীরাও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে ঈগগাহে যাবে। তারা সালাতে ও জিকিরে অংশ গ্রহণ করবে।আমাদের অনেকেই নিজ সন্তানদের পোষাক আশাকের ক্ষেত্রে উদাসীন থাকি, এটা মোটেও ঠিক নয়। বরং তাদের ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক পোশাক-আষাক পড়তে বাধ্য করা।আবার অনেককে দেখা যায়, ঈদ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বের হয়ে যায়, গান-বাদ্যতে রাত কাটিয়ে দেয়, এটা কখনো ঠিক নয়। বরং এবাদত, ইস্তেগফার ইত্যাদির মাধ্যম ঈদ অতিবাহিত করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তওফিক দান করুন।

সমাপ্ত

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

ঈদুল ফিতরের আনন্দ ও আমাদের করণীয়

লেখক: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

প্রতি বৎসর দু’দুটি ঈদ উৎসব মুসলমানদের জীবনে নিয়ে আসে আনন্দের ফল্গুধারা। এ দু’টি ঈদের মধ্যে ঈদুল ফিতরের ব্যপ্তি ও প্রভাব বহুদূর বিস্তৃত মুসলিম মানসে ও জীবনে। পূর্ণ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ উৎসব মুসলিম জাতির প্রতি সত্যিই মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বিরাট নিয়ামত ও পুরস্কার। মুসলিম উম্মার প্রত্যেক সদস্যের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা, মমতা ঈদের এ পবিত্র ও অনাবিল আনন্দ উৎসবে একাকার হয়ে যায়। ‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের এ জাতি একক একটি জাতি’’ মহান আল্লাহর এ ঘোষণার বাস্তবরূপটি চরমভাবে প্রকটিত হয় বিশ্বাবাসীর সামনে।

ঈদ মুসলমানদের জীবনে শুধুমাত্র আনন্দ-উৎসবই নয়, বরং এটি একটি মহান ইবাদাত যার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পায়, ধনী-গরীব, কলো-সাদা, ছোট-বড়, দেশী-বিদেশী সকল ভেদাভেদ ভুলে যায় এবং সর্বশ্রেণী ও সকল বয়সের নারী-পুরুষ ঈদের জামাতে শামিল হয়ে মহান প্রভুর শুকর আদায়ে নুয়ে পড়ে। ঈদের এ মহান উপলক্ষকে সামনে রেখে আজ আমাদের এ আত্মজিজ্ঞাসা উত্থাপিত হওয়া প্রয়োজন যে, সত্যিই আমাদের ঈদ কি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হবার কারণ হতে পেরেছে? যে মহান স্রষ্টা তাদেরকে এরকম বিশাল আনন্দ উৎসবের অনুমোদন দিয়েছেন, তারা তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বদা তাঁকে স্মরণ রেখেছে? যে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত হিসাবে তারা ঈদ পালন করছে, সে রাসূলের আর সকল সুন্নাতের অনুসরণ কি তারা করছে? আমার বিশ্বাস এসব প্রশ্নের সমাধানের মধ্য দিয়েই আমরা করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফিরিস্তি পেয়ে যাব।

পাশাপাশি কল্যাণ, বরকত ও আনন্দের এ শুভদিনে আমাদের সে সকল ভাই-বোনদের কথাও স্মরণ করা উচিৎ, মৃত্যু যাদেরকে এ জগত থেকে এমন এক জগতে নিয়ে গিয়েছে, যেখান থেকে ফেরার কোন উপায় নেই। সেখানে তারা পার্থিব জীবনে নিজেদের কৃতকর্মের ফলাফল ভোগ করছে। এ মহান দিবসে আমরা তাদেরকে ভুলে না গিয়ে আমাদের উচিৎ তাদের মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাদের পথে আমাদেরকেও একদিন পা বাড়াতে হবে – মনে সব সময় এ কথা জাগরুক রাখা।

ঈদ উৎসব পালনকালে সেই সব ভাই-বোনদের কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে, যারা কঠিন পীড়ায় অসুস্থ হয়ে বাড়ীতে কিংবা হাসপাতালে পড়ে আছে। ব্যথা, যন্ত্রণা ও মানসিক পীড়নে ঈদের আনন্দ তাদের মাটি হয়ে গিয়েছে। আমাদের উচিৎ প্রথমত: আল্লাহ যে সুস্থতা ও নিরাপত্তার অশেষ নিয়ামতের উপর আমাদেরকে রেখেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা এবং দ্বিতীয়ত: এ সবল রোগাক্রান্তদের আরোগ্য লাভের জন্যে দোয়া করা এবং সম্ভব হলে তাদের শুশ্রষা করা।

আজ আমাদের সে সব ভাই-বোনদের কথাও বিস্মৃত হলে চলবে না, যুদ্ধ যাদেরকে সর্বস্বান্ত করেছে, গৃহহীন করেছে, দেহের রক্ত-বন্যা প্রবাহিত করেছে, বহু নরীকে করেছে বিধবা এবং হাজারো শিশুকে করেছে পিতৃহীন-এতীম; এবং সেই বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকেও, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অমোঘ বিধানে যারা আজ সর্বহারা। আমরা আমাদের সাধ্যানুযায়ী আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে এদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারি এবং আল্লাহ যেন তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন সে দোয়াও করতে পারি।

প্রতি ঈদেই সবাই সাধ্যানুযায়ী নতুন নতুন মডেলের সুন্দর সুন্দর পোষাক ক্রয় করে থাকে। আমরা কি কখনো ভাবি সে-সব ভাই-বোনদের কথা দারিদ্রের কষাঘাতে যাদের জীবন জর্জরিত। নতুন পোষাক কেনা দূরে থাক, পুরানো কোন ভাল পোষাকই তাদের নেই। বরং প্রতিদিনের অন্নের প্রয়োজনীয় যোগানও তাদের নেই। আমরা যারা স্বচছল তারা কি সামান্যতম হাসিও এদের মুখে ফোটাতে পরি না? অথচ মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘নিজেদের কল্যাণের জন্য তোমরা যে উত্তম কাজ করে থাকো, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে পাবে।’’ [সূরা আল-বাকারাহ: ১১০]

এ মুবারক রামাদান মাসে আমাদের অনেককেই আল্লাহ সামর্থ্য দিয়েছেন সিয়াম-সাধনা, কিয়ামুল-লাইল পালন, দান-দাক্ষিণ্য ও কুরআন অধ্যায়নের মাধ্যমে তাঁর ইবাদাত পালনের। কিন্তু ইবাদাতের এ ভরা মৌসুমেও আমাদের এমন অনেক ভাই-বোন রয়েছেন পাপের সাগরে যারা আকন্ঠ নিমজ্জিত, স্রষ্টাদ্রোহী কাজে যারা লিপ্ত, পার্থিব জীবনের মরিচিকাসম খেল-তামাশায় মগ্ন হয়ে যারা জীবনের প্রকৃত কর্তব্য ভুলে গিয়েছে। আমরা কি এদেরকে স্রষ্টার সুন্দর সরল পথের দিকে আহবান করেছি? পাপ-সাগর থেকে তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি? তাদের সমানে সত্যের অনুপম আদর্শের গভীর সৌন্দর্যের সঠিক ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছি? মহান রাববুল আলামীন সমীপে এদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করেছি?

ঈদুল ফিতর এসব প্রশ্নের সুন্দর জবাব খুঁজে পেতে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। এবারের ঈদুল ফিতরকে তেমনই অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করার পাশাপাশি আমাদের উচিত হবে ঈদের সাথে সংশ্লিষ্ট শরয়ী বিধান মেনে চলা ও শিষ্টচারিতা রক্ষা করা। সংক্ষেপে ঈদের সে শরয়ী বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরছি।

  • এক: ঈদের আগের দিন সূর্যাস্ত থেকে শুরু করে ঈদের সালাত আদায় করা পর্যন্ত তাকবীর তথা ‘আল্লাহু আকবর’’ বলতে থাকা। এ হচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যাপূর্ণ কর এবং তিনি যে তোমাদেরকে হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য ‘আল্লাহ মহান’ বলে ঘোষণা দাও এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’ [সূরা আল- বাকারাহঃ ১৮৫] তাকবীরের শব্দগুলো হল: ‘‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’’ পুরুষরা মসজিদে, বাজারে ও ঘরে এ তাকবীর ধ্বনি জোরে দিতে থাকবে। আর মহিলারা তাকবীর বলবে আস্তে।
  • দুই: যাকাতুল ফিতর প্রদান করা, রোযাদারের যে ভুল-বিভ্রান্তি ও পাপ হয়েছে তা মোচন করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্য যোগানের উদ্দেশ্যে যাকাতুল ফিতর দেয়ার বিধান দেয়া হয়েছে। যাকাতুল ফিতর ঈদের একদিন বা দুইদিন আগেও দেয়া যায়। তবে সালাতুল ঈদের পর পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না, আগেই আদায় করতে হবে।
  • তিন: ঈদের দিন সকালে গোসল করা ও সুন্দর পোষাক পরিধান করা এবং ঈদের সালাতে যাওয়ার প্রাক্কালে পুরুষদের খোশবু ব্যবহার করা উত্তম। মেয়েদের জন্যও সুন্নাত হলো পর্দার সাথে ও খোশবু ব্যবহার না করে ঈদগাহে এসে ঈদের আনন্দ ও সালাতে শরীক হওয়া।
  • চার: ঈদগাহে যাওয়ার আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুসরণ করে তিনটি বা পাঁচটি করে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া।
  • পাঁচ: ঈদের জামাতে শামিল হওয়া এবং পুরো খুতবা শোনা। ইমাম ইবনু তাইমিয়া সহ আরো অনেক মুহাক্কিক আলেমের মতে ঈদের সালাত ওয়াজিব, কোন ওজর ছাড়া ত্যাগ করা যাবে না। এমনকি হায়েযরতা মহিলাগণ পর্যন্ত ঈদগাহে আসবেন এবং সালাতে অংশ না নিয়ে একপ্রান্তে অবস্থান করবেন।
  • ছয়: রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ করে এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা।
  • সাত: ঈদের অভিভাদন জানাতে গিয়ে, ‘‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা’’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন’ বলা ভাল। এছাড়া সুন্দর সুন্দর দোয়ার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করাতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এতে পারস্পারিক সম্পর্ক অনেক মধুর হয়ে উঠে।
  • আট: ঈদ উৎসবকে উপলক্ষ করে সকল প্রকার পাপাচার ও অশ্লীলতায় নিমজ্জিত হওয়া থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করা।সর্বশেষে বলবো- সিয়াম সাধানার পবিত্র মাস রামাদানুল মুবারক ছিল মূলত: আমাদের জন্য তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ লাভের মাস, সর্বপ্রকার ইবাদাতে অভ্যস্থ হওয়ার মাস, ঈমান মযবুত করার মাস, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মহান চরিত্রে বিভূষিত হওয়ার মাস, কুরানের মর্ম উপলব্ধি করে জীবনের সর্বক্ষেত্রে কুরআনমুখী হওয়ার মাস, মুসলিম জাতির জেগে উঠার মাস এবং সকল প্রকার অনাহুত শক্তির বলয় থেকে মুক্ত হয়ে হক প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় করার মাস।একটি মাস ধরে আমরা যারা নিজেদেরকে এভাবে প্রস্তুত করেছি, মাসটি অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে যদি তা ভুলে যাই এবং আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য থেকে দুরে সরে যাই, তাহলে তা কুতটুকু সঙ্গত হবে? মূলত: যারা ভাবে যে, রমাদান মাসে ইবাদাত করাই যথেষ্ট, তাদের সে ভাবনা অসঙ্গত ও ভুল। এদিকে ইঙ্গিত করে এক মুসলিম মনিষী বলেছিলেন: ‘‘সে সকল ব্যক্তিবর্গ কতই না মন্দ, যারা রামাদান ছাড়া আল্লাহকে চেনে না।’’

তাছাড়া আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন: ‘‘মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার রবের ইবাদাত করতে থাক’’। [সূরা আল-হিজর:৯৯]

উপরোক্ত আলেচনার আলোকে আমরা যদি আমাদের কর্তব্য কাজে তৎপর হতে পারি তাহলেই আমার বিশ্বাস আমাদের ঈদুল ফিতরের এ মহোৎসব অর্থবহ ও সার্থক হবে।

লাইলাতুল কাদর- রমাদানের উপহার

সোর্স: তাফসীর ইবনে কাসীর, অষ্টাদশ খণ্ড

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সূরা কাদর

১. নিশ্চয়ই আমি এটা অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে;
২. তুমি কি জান সেই মহিমান্বিত রজনীটি কি ?
৩. মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম।
৪. ঐ রাত্রিতে ফেরেশতাগণ ও (তাদের সর্দার) ‘রুহ’ অবতীর্ণ হর প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের       অনুমতিক্রমে।
৫. শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার অভ্যুদয় পর্যন্ত।

ইমাম আবূ মুহাম্মদ ইবনে আবী হাতিম (র) এই সূরার তাফসীর প্রসঙ্গে একটি বিস্ময়কর রিওয়াইয়াত আনয়ন করেছেন। হযরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, সপ্তম আকাশের শেষ সীমায় জান্নাতের সাথে সংযুক্ত রয়েছে সিদরাতুল মুনতাহা, যা দুনিয়া ও আখিরাতের দূরত্বের উপর অবস্থিত। এর উচ্চতা জান্নাতে এবং এর শিকড় ও শাখা প্রশাখাগুলো কুরসীর নিচে প্রসারিত। তাতে এতো ফেরেশতা অবস্থান করেন যে, তাদের সংখ্যা নির্ণয় করা আল্লাহ পাক ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এমন কি চুল পরিমাণও জায়গা নেই যেখানে ফেরেশতা নেই। ঐ বৃক্ষের মধ্যভাগে হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম অবস্থান করেন।

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহি সালামকে ডাক দিয়ে বলা হয়, “হে জিবরাঈল (আ) কদরের রাত্রিতে সমস্ত ফেরেশতাকে নিয়ে পৃথিবীতে চলে যাও।” এই ফেরেশতাদের সবারই অন্তর স্নেহ ও দয়ায় ভরপুর। প্রত্যকে মুমিনের জন্যে তাঁদের মনে অনুগ্রহের প্রেরণা রয়েছে। সূর্যাস্তের সাথে সাথেই কদরের রাত্রিতে এসব ফেরেশতা হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম এর সাথে নেমে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন এবং সব জায়গায় সিজদায় পড়ে যান। তাঁরা সকল ঈমানদার নারী পুরুষের জন্য দুয়া করেন। কিন্তু তাঁরা গীর্জায় মন্দিরে, অগ্নিপূজার জায়গায়, মূর্তিপূজার জায়গায়, আবর্জনা ফেলার জায়গায়, নেশা খোরের অবস্থান স্থলে, নেশাজাত দ্রব্যাদি রাখার জায়গায়, মূর্তি রাখার জায়গায়, গান বাজনার সাজ সরঞ্জাম রাখার জায়গায় এবং প্রস্রাব পায়খানার জায়গায় গমন করেন না। বাকি সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে তাঁরা ঈমানদার নারী পুরুষের জন্যে দুয়া করে থাকেন। হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম সকল ঈমানদারের সাথে করমর্দন করেন। তাঁর করমর্দনের সময় মুমিন ব্যক্তির শরীরের লোমকূপ খাড়া হয়ে যায়, মন নরম হয় এবং অশ্রুধারা নেমে আসে। এসব নিদর্শন দেখা দিলে বুঝতে হবে তার হাত হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম এর হাতের মধ্যে রয়েছে।

হযরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, ঐ রাত্রে যে ব্যক্তি তিনবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে, তার প্রথমবারের পাঠের সাথে সাথেই সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়, দ্বিতীয়বার পড়ার সাথে সাথেই আগুন থেকে মুক্তি পেয়ে যায় এবং তৃতীয়বারের পাঠের সাথে সাথেই জান্নাতে প্রবেশ সুনিশ্চিত হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন; হে আবু ইসহাক (র) ! যে ব্যক্তি সত্য বিশ্বাসের সাথে এ কালেমা উচ্চারণ করে তার কি হয়? জবাবে তিনি বলেন; সত্য বিশ্বাসীর মুখ হতেই তো এ কালেমা উচ্চারিত হবে। যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ ! লায়লাতুল কাদর কাফির ও মুনাফিকদের উপর এতো ভারী বোধ হয় যে, যেন তাদের পিঠে পাহাড় পতিত হয়েছে। ফজর পর্যন্ত ফেরেশতারা এভাবে রাত্রি কাটিয়ে দেন।

তারপর হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম উপরের দিকে উঠে যান এবং অনেক উপরে উঠে স্বীয় পালক ছড়িয়ে দেন। অতঃপর তিনি সেই বিশেষ দুটি সবুজ পালক প্রসারিত করেন যা অন্য কোন সময় প্রসারিত করেন না। এর ফলে সূর্যের কিরণ মলিম ও স্তিমিত হয়ে যায়। তারপর তিনি সমস্ত ফেরেশতাকে ডাক দিয়ে নিয়ে যান। সব ফেরেশতা উপরে উঠে গেলে তাদের নূর এবং হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম এর পালকের নূর মিলিত হয়ে সূর্যের কিরণকে নিষ্প্রভ করে দেয়। ঐ দিন সূর্য অবাক হয়ে যায়। সমস্ত ফেরেশতা সেদিন আকাশ ও জমীনের মধ্যবর্তী স্থানের ঈমানদার নারী পুরুষের জন্য রহমত কামনা করে তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। তাঁরা ঐ সকল লোকের জন্যেও দুয়া করেন যারা সৎ নিয়তে রোযা রাখে এবং সুযোগ পেলে পরবর্তী রমযান মাসেও আল্লাহর ইবাদত করার মনোভাব পোষণ করে।

সন্ধ্যায় সবাই প্রথম আসমানে পৌঁছে যান। সেখানে অবস্থানকারী ফেরেশতারা এসে তখন পৃথিবীতে অবস্থানকারী ঈমানদারদের অমুকের পুত্র অমুক, অমুকের কন্যা অমুক, বলে বলে খবরাখবর জিজ্ঞেস করেন। নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর কোন কোন ব্যক্তি সম্পর্কে ফেরেশতারা বলেন; তাকে আমরা গত বছর ইবাদতে লিপ্ত দেখেছিলাম, কিন্তু এবার সে বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। আবার অমুককে গত বছর বিদআতে লিপ্ত দেখেছিলাম, কিন্তু এবার তাকে ইবাদতে লিপ্ত দেখে এসেছি।

প্রশ্নকারী ফেরেশতা তখন শেষোক্ত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত, রহমতের দুয়া করেন। ফেরেশতারা প্রশ্নকারী ফেরেশতাদেরকে আরো জানান যে, তাঁরা অমুক অমুককে আল্লাহর যিকর করতে দেখেছেন, অমুক অমুককে রুকূতে, অমুক অমুককে সিজদায় পেয়েছেন। এবং অমুক অমুককে কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখেছেন। একরাত একদিন প্রথম আসমানে কাটিয়ে তাঁরা দ্বিতীয় আসমানে গমন করেন। সেখানেই একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমনি করে তাঁরা নিজেদের জায়গা সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে পৌঁছেন। সিদরাতুল মুনতাহা তাঁদেরকে বলেঃ আমাতে অবস্থানকারী হিসেবে তোমাদের প্রতি আমাদের দাবী রয়েছে। আল্লাহকে যারা ভালোবাসে আমিও তাদেরকে ভালবাসি। আমাকে তাদের অবস্থার কথা একটু শোনাও, তাদের নাম শোনাও।

হযরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ফেরেশতারা তখন আল্লাহর পূণ্যবান বান্দাদের নাম ও পিতার নাম জানাতে শুরু করেন। তারপর জান্নাত সিদরাতুল মুনতাহাকে সম্বোধন করে বলে; তোমাতে অবস্থানকারীরা তোমাকে যে সব খবর শুনিয়েছে সেসব আমাকেও একটু শোনাও। তখন সিদরাতুল মুনতাহা জান্নাতকে সব কথা শুনিয়ে দেয়। শোনার পর জান্নাত বলে ; অমুক পুরুষ ও নারীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ ! অতি শীঘ্রই তাদেরকে আমার সাথে মিলিত করুন।

হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম সর্বপ্রথম নিজের জায়গায় পৌঁছে যান। তাঁর উপর তখন ইলহাম হয় এবং তিনি বলেন; হে আল্লাহ ! আমি আপনার অমুক অমুক বান্দাকে সিজদারত অবস্থায় দেখেছি। আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ তায়ালা তখন বলেনঃ আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম তখন আরশ বহনকারী ফেরেশতাদরকে এ কথা শুনিয়ে দেন। তখন ফেরেশতারা পরস্পর বলাবলি করেন যে, অমুক অমুক নারী পুরুষের উপর আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত হয়েছে। তারপর হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম বলেন; হে আল্লাহ ! গত বছর আমি অমুক অমুক ব্যক্তিতে সুন্নাতের উপর আমলকারী এবং আপনার ইবাদতকারী হিসেবে দেখেছি কিন্তু এবার সে বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে এবং আপনার বিধি বিধানের অবাধ্যতা করেছে। তখন আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা’য়ালা বলেনঃ হে জিবরাঈল (আ) ! সে যদি মৃত্যুর তিন মিনিট পূর্বেও তাওবা করে নেয় তাহলে আমি তাকে মাফ করে দেবো। হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম তখন হঠাৎ করে বলেনঃ হে আল্লাহ ! আপনারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা। আপনি সমস্ত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। হে আমার প্রতিপালক ! আপনি আপনার সৃষ্ট জীবের উপর সবচেয়ে বড় মেহেরবান। বান্দা তার নিজের উপর যেরূপ মেহেরবানী করে থাকে আপনার মেহেরবানী তাদের প্রতি তার চেয়েও অধিক। ঐ সময় আরশ এবং ওর চারপাশের পর্দাসমূহ এবং আকাশ ও র মধ্যস্থিত সবকিছুই কেঁপে ওঠে বলেঃ “করুণাময় আল্লাহর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা”। হযরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ যে ব্যক্তি রমযানের রোযা পূর্ণ করে রমযানের পরেও পাপমুক্ত জীবন যাপনের মনোভাব পোষণ করে সে বিনা প্রশ্নে ও বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত আছে যে, রমযান মাস এসে গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন: “(হে জনমণ্ডলী) তোমাদের উপর রমযান মাস এসে পড়েছে। এ মাস খুবই বরকতপূর্ণ বা কল্যাণময়। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর এ মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদেরকে বন্দী করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত্রি রয়েছে যে রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ মাসে কল্যাণ হতে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হয় সে প্রকৃতই হতভাগ্য।” [আহমাদ, নাসায়ী]

আবূ দাউদ তায়ালাসী (র) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “লায়লাতুল কাদর পরিষ্কার, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ এবং শীত গরম হতে মুক্ত রাত্রি। এ রাত্রি শেষে সূর্য স্নিগ্ধ আলোকআভায় রক্তিম বর্ণে উদিত হয়।”

হযরত আবূ আসিম নুবায়েল (র) স্বীয় সনদে হযরত জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার বলেছিলেন: “আমাকে লায়লাতুল কাদর দেখানো হয়েছে। তারপর ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। রমযান মাসের শেষ দশ রাত্রির মধ্যে এটা রয়েছে। এ রাত্রি খুবই শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। এ রাত্রে শীতও বেশি থাকে না এবং গরমও বেশি থাকে না। এ রাত্রি এতো বেশি রওশন ও উজ্জ্বল থাকে যে, মনে হয় যেন চাঁদ হাসছে। রৌদ্রের তাপ ছড়িয়ে পড়ার আগে সূর্যের সাথে শয়তান আত্মপ্রকাশ করে না।”

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু হতে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত্রিতে ইবাদত করে, তার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মার্জনা করে দেয়া হয়।” [বুখারী, মুসলিম]

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

লাইলাতুল কদর ও কিছু প্রশ্ন

লেখক: অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম | সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া

আলহামদুলিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাইন আম্মাবাদ

প্রশ্ন ১৩৯: 

লাইলাতুল কদরের মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও ফযীলাত জানতে চাই ?

উত্তর:

(১) এ রাতে আল্লাহ তা‘আলা পুরা কুরআন কারীমকে লাউহে মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে নাযিল করেন। তাছাড়া অন্য আরেকটি মত আছে যে, এ রাতেই কুরআন নাযিল শুরু হয়। পরবর্তী ২৩ বছরে বিভিন্ন সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র উপর অবতীর্ণ হয়।

(২) এ এক রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।

(৩) এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসে এবং তারা তখন দুনিয়ার কল্যাণ, বরকত ও রহমাতবর্ষণ করতে থাকে।

(৪) এটা শান্তি বর্ষণের রাত। এ রাতে ইবাদত গুজার বান্দাদেরকে ফেরেশতারা জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তির বাণী শুনায়।

(৫) এ রাতের ফাযীলত বর্ণনা করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল হয়। যার নাম সূরা কদর।

(৬) এ রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের অতীতের সগীরা গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করবে আল্লাহ তার ইতোপূর্বের সকল সগীরা (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করেদেন। [বুখারী]

প্রশ্ন ১৪০: কোন রাতটি লাইলাতুল কদর?

উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তর স্বরূপ হাদীসে নিুবর্ণিত বাণী রয়েছে:

[১] এ রাতটি রমযান মাসে। আর এ রাতের ফযীলত কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।

[২] এ রাতটি রমাযানের শেষ দশকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “রমাযানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।” [বুখারী]

[৩] আর এটি রমযানের বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :“তোমরা রমাযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর।” [বুখারী]

[৪] এ রাত রমযানের শেষ সাত দিনে হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) অন্বেষণ করতে চায়, সে যেন রমাযানের শেষ সাত রাতের মধ্য তা অন্বেষণ করে।”

[৫] রমাযানের ২৭ শে রজনী লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। হাদীসে আছে:উবাই ইবনে কাব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন যে, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হল রমাযানের ২৭ তম রাত। [মুসলিম]
আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমাযানের ২৭শে রজনীতে অনুসন্ধান করে। [আহমাদ]

[৬] কদরের রাত হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাবনার দিক থেকে পরবর্তী দ্বিতীয় সম্ভাবনা হল ২৫ তারিখ, তৃতীয় হল ২৯ তারিখে। চতুর্থ হল ২১ তারিখ। পঞ্চম হল ২৩ তারিখের রজনী।

[৭] সর্বশেষ আরেকটি মত হল- মহিমান্বিত এ রজনীটি স্থানান্তরশীল। অর্থাৎ প্রতি বৎসর একই তারিখে বা একই রজনীতে তা হয় না এবং শুধুমাত্র ২৭ তারিখেই এ রাতটি আসবে তা নির্ধারিত নয়। আল্লাহর হিকমত ও তাঁর ইচ্ছায় কোন বছর তা ২৫ তারিখে, কোন বছর ২৩ তারিখে, কোন বছর ২১ তারিখে, আবার কোন বছর ২৯ তারিখেও হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ১৪১: কেন এ রাতকে অস্পষ্ট করে গোপন রাখা হয়েছে। এটা স্পষ্ট করে নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি কেন?

উত্তর: এ রাতের পুরস্কার লাভের আশায় কে কত বেশী সক্রিয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং কত বেশী সচেষ্ট হয়, আর কে নাফরমান ও আলসে ঘুমিয়ে রাত কাটায় সম্ভবতঃ এটা পরখ করার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা এ রাতকে গোপন ও অস্পষ্ট করে রেখেছেন।

প্রশ্ন ১৪২: যে রাতটি লাইলাতুল কদর হবে সেটি বুঝার কি কোন আলামত আছে?

উত্তর: হাঁ,সে রাতের কিছু আলামত হাদীসে বর্ণিত আছে। সেগুলো হল :

(১) রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
(২) নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
(৩) মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
(৪) সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
(৫) কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
(৬) ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
(৭) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।
[সহীহ ইবনু খুযাইমাহ- ২১৯০, বুখারী০ ২০২১, মুসলিম- ৭৬২ নং হাদীস]

প্রশ্ন ১৪৩: রমাযানের শেষ দশ রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী ধরণের ইবাদত করতেন?

উত্তর: তাঁর ইবাদতের অবস্থা ছিল নিম্নরূপ:
(১) প্রথম ২০ রাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ রাত জাগরণ করতেন না। কিছু সময় ইবাদত করতেন, আর কিছু অংশ ঘুমিয়ে কাটাতেন। কিন্তু রমাযানের শেষ দশ রাতে তিনি বিছানায় একেবারেই যেতেন না। রাতের পুরো অংশটাই ইবাদত করে কাটাতেন। সে সময় তিনি কুরআন তিলাওয়াত, সলাত আদায় সদাকা প্রদান, যিকর, দু‘আ, আত্মসমালোচনা ও তাওবাহ করে কাটাতেন। আল্লাহর রহমাতের আশা ও তার গজবের ভয়ভীতি নিয়ে সম্পূর্ণ খুশুখুজু ও বিনম্রচিত্তে ইবাদতে মশগুল থাকতেন।

(২) হাদীসে এসেছে সে সময় তিনি শক্ত করে তার লুঙ্গি দ্বারা কোমর বেধে নিতেন। এর অর্থ হল, রাতগুলোতে। তাঁর সমস্ত শ্রম শুধু ইবাদতের মধ্যেই নিমগ্ন ছিল। নিজে যেমন অনিদ্রায় কাটাতেন তাঁর স্ত্রীদেরকেও তখন জাগিয়ে দিতেন ইবাদত করার জন্য।

(৩) কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। [মুসলিম- ১১৬৭]

প্রশ্ন ১৪৪: মহিমান্বিত লাইলাতুল কদরে আমরা কী কী ইবাদত করতে পারি?

উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে এ রাত কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করাই হবে আমাদের প্রধান টার্গেট। এ লক্ষ্যে আমাদের নিুবর্ণিত কাজগুলো করা আবশ্যক :
(ক) নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং নিজের অধীনস্ত ও অন্যান্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা

(খ) লম্বা সময় নিয়ে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়া। এসব সালাতে কিরাআত ও রুকু-সিজদা লম্বা করা। রুকু থেকে উঠে এবং দুই সিজদায় মধ্যে আরো একটু বেশী সময় অতিবাহিত করা, এসময় কিছু দু‘আ আছে সেগুলে পড়া।

(গ) সিজদার মধ্যে তাসবীহ পাঠ শেষে দু‘আ করা। কেননা সিজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দু‘আ কবুল হয়।

(ঘ) বেশী বেশী তাওবা করবে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বে। ছগীরা কবীরা গোনাহ থেকে মাফ চাইবে। বেশী করে শির্কী গোনাহ থেকে খালেছ ভাবে তাওবা করবে। কারণ ইতিপূর্বে কোন শির্ক করে থাকলে নেক আমল তো কবুল হবেই না, বরং অর্জিত অন্য ভাল আমলও বরবাদ হয়ে যাবে। ফলে হয়ে যাবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।

(ঙ) কুরআন তিলাওয়াত করবে। অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যয়নও করতে পারেন। তাসবীহ তাহলীল ও যিক্র-আযকার করবেন। তবে যিকর করবেন চুপিসারে, নিরবে ও একাকী এবং কোন প্রকার জোরে আওয়ায করা ছাড়া। এভাবে যিকর করার জন্যই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন: “সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার রবের যিকর কর মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে ভয়ভীতি সহকারে এবং জোরে আওয়াজ না করে। এবং কখনো তোমরা আল্লাহর যিকর ও স্মরণ থেকে উদাসীন হয়োনা।” [আরাফ : ২০৫] 
অতএব, দলবেধে সমস্বরে জোরে জোরে উচ্চ স্বরে যিক্র করা বৈধ নয়। এভাবে সম্মিলিত কোন যিকর করা কুরআনেও নিষেধ আছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা করেন নি। যিকরের শব্দগুলো হল: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি।

(চ) একাগ্রচিত্তে দু‘আ করা। বেশী বেশী ও বার বার দু‘আ করা। আর এসব দু‘আ হবে একাকী ও বিনম্র চিত্তে কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে। দু‘আ করবেন নিজের ও আপনজনদের জন্য. জীবিত ও মৃতদের জন্য, পাপমোচন ও রহমত লাভের জন্য, দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতে নিুের এ দু‘আটি বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহিত করেছেন: “হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমার আধার, আর ক্ষমা করাকে তুমি ভালবাস। কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। [ তিরমিযী ]

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

‘লাইলাতুল কদর’এ কি কি ইবাদত করবেন?

লেখক: শাইখ আব্দুর রকীব মাদানী

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ,

অনেক দ্বীনী ভাই আছেন যারা সহীহ নিয়মে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করতে ইচ্ছুক। তাই তারা প্রশ্ন করে থাকেন যে, লাইলাতুল কদরে আমরা কি কি ইবাদত করতে পারি? এই রকম ভাই এবং সকল মুসলিম ভাইদের জ্ঞাতার্থে সংক্ষিপ্তাকারে কিছু উল্লেখ করা হল। [ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ]

প্রথমত: আল্লাহ তাআ’লা আমাদের বলে দিয়েছেন যে: এই রাত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। অর্থাৎ এই এক রাতের ইবাদত এক হাজার মাসের থেকেও উত্তম। [আল্ মিসবাহ আল্ মুনীর/১৫২১] তাই এই রাতটি ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করাই হবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

দ্বিতীয়ত: জানা দরকার যে ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত হচ্ছে, প্রত্যেক এমন আন্তরিক ও বাহ্যিক কথা ও কাজ যা, আল্লাহ পছন্দ করেন এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকেন। [মাজমুউ ফাতাওয়া,১০/১৪৯]

উক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যেতে পারে যে ইবাদত বিশেষ এক-দুটি কাজে সীমাবদ্ধ নয়। তাই আমরা একাধিক ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতটি অতিবাহিত করতে পারি। নিম্নে কিছু উৎকৃষ্ট ইবাদত উল্লেখ করা হলঃ

১) ফরয নামায সমূহ ঠিক সময়ে জামাআ’তের সাথে আদায় করা: যেমন মাগরিব, ইশা এবং ফজরের নামায। তার সাথে সাথে সুন্নতে মুআক্কাদা, তাহিয়্যাতুল মসজিদ সহ অন্যান্য মাসনূন নামায আদায় করা।

২) কিয়ামে লাইলাতুল্ কদর করা: অর্থাৎ রাতে তারবীহর নামায আদায় করা। নবী (সা:) বলেনঃ “যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম করবে (নামায পড়বে) তার বিগত গুনাহ ক্ষমা করা হবে”। [ফাতহুল বারী,৪/২৯৪] এই নামায জামাআতের সাথে আদায় করা উত্তম। অন্যান্য রাতের তুলনায় এই রাতে ইমাম দীর্ঘ কিরাআতের মাধ্যমে নামায সম্পাদন করতে পারেন। ইশার পর প্রথম রাতে কিছু নামায পড়ে বাকী নামায শেষ রাতে পড়াতে পারেন। একা একা নামায আদায়কারী হলে সে তার ইচ্ছানুযায়ী দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়তে পারে।

৩) বেশী বেশী দুআ করা: তন্মধ্যে সেই দুআটি বেশী বেশী পাঠ করা যা নবী (সাঃ) মা আয়েশা (রাযিঃ) কে শিখিয়েছিলেন। মা আয়েশা নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল কদর লাভ করি, তাহলে কি দুআ করবো? তিনি (সাঃ) বলেনঃ বলবে, (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল্ আফওয়া ফা’ফু আন্নী”।  অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমা পছন্দ কর, তাই আমাকে ক্ষমা কর”। [আহমদ,৬/১৮২]

এছাড়া বান্দা পছন্দ মত দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যাবতীয় দুআ করবে। সে গুলো প্রমাণিত আরবী ভাষায় দুআ হোক কিংবা নিজ ভাষায় হোক। এ ক্ষেত্রে ইবাদতকারী একটি সুন্দর সহীহ দুআ সংকলিত দুআর বইয়ের সাহায্য নিতে পারে। সালাফে সালেহীনদের অনেকে এই রাতে অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে দুআ করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ এতে বান্দার মুক্ষাপেক্ষীতা, প্রয়োজনীয়তা ও বিনম্রতা প্রকাশ পায়, যা আল্লাহ পছন্দ করেন।

৪) যিকর আযকার ও তাসবীহ তাহলীল করা: অবশ্য এগুলো দুআরই অংশ বিশেষ। কিন্তু বিশেষ করে সেই শব্দ ও বাক্য সমূহকে যিকর বলে, যার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করা হয়। যেমন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, “আল্ হামদু ল্লিল্লাহ” “সুবহানাল্লাহ”, “আল্লাহুআকবার” “আস্তাগফিরুল্লাহ”, “লা হাওলা ওয়ালা কুউআতা ইল্লা বিল্লাহ”। ইত্যাদি।

৫) কুরআন তিলাওয়াত: কুরআন পাঠ একটি বাচনিক ইবাদত, যা দীর্ঘ সময় ধরে করা যেতে পারে। যার এক একটি অক্ষর পাঠে রয়েছে এক একটি নেকী। নবী (সা:) বলেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষর পড়বে, সে তার বিনিময়ে একটি নেকী পাবে… আমি একথা বলছি না যে, আলিফ,লাম ও মীম একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর”। [তিরমিযী, তিনি বর্ণনাটিকে হাসান সহীহ বলেন]

এছাড়া কুরআন যদি কিয়ামত দিবসে আপনার সুপারিশকারী হয়, তাহলে কতই না সৌভাগ্যের বিষয়! নবী (সাঃ) বলেনঃ “তোমরা কুরআন পড়; কারণ সে কিয়ামত দিবসে পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে”। [মুসলিম]

৬) সাধ্যমত আল্লাহর রাস্তায় কিছু দান-সাদকা করা: নবী (সা:) বলেনঃ “সাদাকা পাপকে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়”। [সহীহুত তারগবি]

শবে কদরের একটি রাতে এই রকম ইবাদতের মাধ্যমে আপনি ৮৩বছর ৪ মাসের সমান সওয়াব অর্জন করতে পারেন। ইবাদতের এই সুবর্ণ সুযোগ যেন হাত ছাড়া না হয়। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন!

উল্লেখ থাকে যে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে বৈষয়িক কাজ-কর্মও ইবাদতে পরিণত হয়। যেমন রোযার উদ্দেশ্যে সাহরী খাওয়া, রাত জাগার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম সেরে নেওয়া। তাই লাইলাতুল কদরে ইবাদতের উদ্দেশ্যে বান্দা যেসব দুনিয়াবী কাজ করে সেগুলোও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।

আশা করি আপনাদের বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত কিছু আইডিয়া দিতে পেরেছি। ওয়ামা তাওফীক ইল্লা বিল্লাহ্

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য

রমজান মাসের শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। এগুলো হল:

(১) এ দশ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।

(২) নবী করিম (সাঃ) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহরি গ্রহণ করতেন।

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য রমজান মাসের শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। এগুলো হল :

(১) এ দশ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।

(২) নবী করিম (সাঃ) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহরি গ্রহণ করতেন।

(৩) রমজানের শেষ দশক আসলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। যেমন বোখারি ও মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে। তিনি এ দশদিনের রাতে মোটেই নিদ্রা যেতেন না। পরিবারের সকলকে তিনি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন’ কথাটির অর্থ হল তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন।

(৪) এ দশদিনের একটি বৈশিষ্ট্য হল, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ শেষ দশদিনে মসজিদে এতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে সকল রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর কালাম সম্পর্কে বলতে যেয়ে এরশাদ করেন: ‘আমি তো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনিতে। আমি তো সতর্ককারী। এ রজনিতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’ [সূরা আদ-দুখান : ৩-৪]

বরকতময় রজনি হল লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা একে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। বরকতের প্রধান কারণ হল এ রাতে আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য। এ রাতের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহ তাআলা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে। ‘নিশ্চয় আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এক মহিমান্বিত রজনিতে। আর মহিমান্বিত রজনি সম্পর্কে তুমি কী জান ? মহিমান্বিত রজনি সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতেই ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।

সূরা আল-কদর এ সুরাতে যে সকল বিষয় জানা গেল তা হল:

(১) এ রাত এমন এক রজনি যাতে মানবজাতির হেদায়াতের আলোকবর্তিকা মহা গ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

(২) এ রজনি হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তিরাশি বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি।

(৩) এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকে।

(৪) এ রজনি শান্তির রজনি। আল্লাহর বান্দারা এ রাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে শান্তি অর্জন করে থাকে।

(৫) সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। এ আয়াতগুলোতে অল্প সময়ে বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হল। যত সময় বেশি তত বেশি কাজ করতে হবে। সময় নষ্ট করা চলবে না।

(৬) গুনাহ ও পাপ থেকে ক্ষমা লাভ। এ রাতের এই ফজিলত সম্পর্কে বোখারি ও মুসলিম বর্ণিত হাদিসে এসেছে নবী করিম (সা:) বলেছেন: যে লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [বোখারি ও মুসলিম]

লাইলাতুল কদর কখন ?

আল-কোরআনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি লাইলাতুল কদর কোন রাত। তবে কুরআনের ভাষ্য হল লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কিয়ামত পর্যন্ত রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অব্যাহত থাকবে। এবং এ রজনি রমজানের শেষ দশকে হবে বলে সহি হাদিসে এসেছে। এবং তা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে হাদিসে এসেছে: ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।’ [বোখারি]

এবং রমজানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা অধিকতর। যেমন হাদিসে এসেছে: ‘যে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে চায় সে যেন শেষ সাত দিনে অন্বেষণ করে।’ [বোখারি ও মুসলিম]

অধিকতর সম্ভাবনার দিক দিয়ে প্রথম হল রমজান মাসের সাতাশ তারিখ। দ্বিতীয় হল পঁচিশ তারিখ। তৃতীয় হল ঊন ত্রিশ তারিখ। চতুর্থ হল একুশ তারিখ। পঞ্চম হল তেইশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের উপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে। লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয় হল বেশি করে দোয়া করা। আয়েশা (রাঃ) নবী করিম (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি? তিনি বললেন: ‘হে আল্লাহ ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ [ তিরমিজি ]

এতেকাফ: এতেকাফ হল সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। এটা হল সুন্নত। আয়েশা (রাঃ) বলেন: ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমজান মাসের শেষ দশকে মসজিদে এতেকাফ করতেন। যতদিন না আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেছেন ততদিন তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রী-গণ এতেকাফ করেছেন।’  [বোখারি ও মুসলিম]

এতেকাফের উদ্দেশ্য: মানুষের ঝামেলা থেকে দূরে থেকে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে একাগ্রচিত্তে নিয়োজিত হওয়া। এ লক্ষ্যে কোন মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর তরফ থেকে সওয়াব ও লাইলাতুল কদর লাভ করার আশা করা। এতেকাফকারীর কর্তব্য হল অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করে সালাত, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, ইস্তিগফার, দোয়া ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা। তবে পরিবার পরিজন বা অন্য কারো সাথে অতিপ্রয়োজনীয় কথা বলতে দোষ নেই। এতেকাফকারী নিজ অন্তরকে সর্বদা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করবে। নিজের অবস্থার দিকে খেয়াল করবে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের ব্যাপারে নিজের অলসতা ও অবহেলা করার কথা মনে করবে। নিজের পাপাচার সত্ত্বেও আল্লাহ যে কত নেয়ামত দিয়েছেন তা স্মরণ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। গভীরভাবে আল্লাহর কালাম অধ্যয়ন করবে। খাওয়া-দাওয়া, নিদ্রা ও গল্প গুজব কমিয়ে দেবে। কেননা এ সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণ থেকে অন্তরকে ফিরিয়ে রাখে। অনেকে এতেকাফকে অত্যধিক খাওয়া-দাওয়া ও সাথিদের সাথে গল্প-গুজব করে সময় কাটানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এতে এতেকাফের ক্ষতি হয় না বটে তবে আল্লাহর রাসূলের এতেকাফ ছিল অন্য রকম। এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস, চুম্বন, স্পর্শ নিষেধ। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: ‘তোমরা মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না।’ [সূরা আল-বাকারা : ১৮৭]

শরীরের কিছু অংশ যদি মসজিদ থেকে বের করা হয় তাতে দোষ নেই। নবী করিম (সাঃ) এতেকাফ অবস্থায় নিজ মাথা মসজিদ থেকে বের করতেন। তখন আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) তাঁর মাথার চুল বিন্যস্ত করে দিতেন।

এতেকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া ও তার বিধান: এতেকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ধরনের হতে পারে:—

এক. মানবীয় প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি আছে। যেমন পায়খানা, প্রস্রাবের জন্য, খাওয়া-দাওয়ার জন্য, পবিত্রতা অর্জনের জন্য। তবে শর্ত হল এ সকল বিষয় যদি মসজিদের গণ্ডির মাঝে সেরে নেয়া যায় তবে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না।

দুই. এমন সকল নেক আমল বা ইবাদত-বন্দেগির জন্য বের হওয়া যাবে না যা তার জন্য অপরিহার্য নয়। যেমন রোগীর সেবা করা, জানাজাতে অংশ নেয়া ইত্যাদি। তিন. এমন সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না যা এতেকাফের বিরোধী। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, চাষাবাদ ইত্যাদি। এতেকাফ অবস্থায় এ সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে এতেকাফ বাতিল হয়ে যায়।

সমাপ্ত

রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার ডাউনলোড করতে চাইলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন – রামাদান বিষয়ক সকল ফাইল – প্রবন্ধ, বই, অডিও/ভিডিও লেকচার

রমাদ্বানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের তালাশ

লেখক: উম্মে আব্দ মুনীব, শায়খ মুহাম্মদ বিন সাইদ কাহতানি (রহ) | সম্পাদনা: রাজিব হাসান

৭০৬ হিজরি। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ (রহ) তখন কায়রাের এক কারাগারে বন্দী ছিলেন। তখন তাকে লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

যাবতীয় হামদ ও সানা একমাত্র আল্লাহর জন্য। রমাদ্বানের শেষ দশ রজনীতে রয়েছে লাইলাত্বল কদর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে এরকম বর্ণনাই পাওয়া যায়। তিনি বলেন, “রমাদ্বানের শেষ দশরাতে তােমরা লাইলাতুল কদরের রাত তালাশ কর।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, “এতএব তােমরা শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতসমুহে তা খোঁজ করবে। [1]

তৎসত্ত্বেও বিজোড় রাত্রিগুলাে গণনা করতে হবে কতটুকু সময় গত হয়েছে তাঁর হিসাবে, যেমন, একুশে রাত্রিতে, তেইশে রাত্রিতে, পঁচিশে রাত্রিতে, সাতাশে রাত্রিতে এবং ঊনত্রিশতম রাত্রিতে। তবে অন্যভাবেও গণনা করা যেতে পারে, কতদিন বাকী আছে তাঁর উপরে হিসাব করে।যেমন,

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) , যখন নয় রাত্রি বাকী থাকে সেই রাত্রিতে, যখন সাত রাত্রি বাকী থাকে সেই রাত্রিতে, যখন পাঁচ রাত্রি বাকী থাকে সেই রাত্রিতে, যখন তিন রাত্রি বাকী থাকে সেই রাত্রিতে তালাশ করতে বলেছেন। [2]

অতএব মাস যদি ত্রিশদিনের হয়, তাহলে বিজোড় রাত্রিগুলােতে তালাশ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাইশতম রাত্রিতে নয় রাত্রি বাকী থাকে, চব্বিশতম রাত্রিতে সাত রাত্রি বাকী থাকে। আর আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এভাবেই তালাশ করেছেন। তবে যদি মাস ঊনত্রিশ দিনের হয় তাহলে গণনা করতে হবে কতদিন গত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে।

সুতরাং, এই হচ্ছে পদ্ধতি। তবে মুমিনের জন্য মানানসই হল শেষের দশ রাত্রির প্রতি রাত্রিতেই তালাশ করা। যেমনটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “শেষের দশ রাত্রিতে তালাশ কর।[3]

আর শেষের সাত রাত্রিতে এটি সংঘটিত হওয়ার ঘাের সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে সাতাশে রাত্রিতে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। যেমনটি উবাই বিন কা’ব (রা:) এর বর্ণনা থেকে জানা যায়। তিনি কসম খেয়ে বলেন, “আল্লাহর কসম আমি এ রাত (লাইলাতুল কদর) সম্পর্কে অধিক জানি। উনাকে যখন প্রশ্ন করা হল, আপনি কিভাবে জানলেন, তখন তিনি বলেছিলেন,“আমার অধিক জ্ঞান হলাে, এটি সে রাত যে রাতে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাদেরকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটি সাতাশ তারিখের রাত। বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে যে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের অবহিত করেছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উঠবে কিন্তু তাতে আলােক রশ্মি থাকবে না।[4]

অতএব, উবাই বিন কা’ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে একটি নির্দিষ্ট দিনের কথা উল্লেখ করেছেন। এবং সে রাতের পরের দিনের সূর্য উঠবে কিন্তু তাতে আলােক রশ্মি খুব একটা থাকবে না, একদম স্নান ও মলিন থাকবে, সূর্য তাঁর তেজস্বীরূপ হারাবে, সেদিনটি খুব গরম হবে না, বরং নাতিশীতােষ্ণ হবে। এই রাতের ব্যাপারে মহান আল্লাহ কাউকে কাউকে স্বপ্নযােগে অথবা জাগ্রত অবস্থায় কোন আলােকরশ্মির মাধ্যমে জানিয়েও দিতে পারেন। অথবা সে দেখবে কেউ তাঁকে বলে দিচ্ছে, “আজকে লাইলাতুল কদর। অথবা কারাে হৃদয় স্বাক্ষ্য দিবে যে, আজকেই সেই মহামান্বিত লাইলাতুল কদরের রাত। আর এ ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।

তথ্যসূত্রঃ মাজমুউল ফাতওয়া, ২৫/২৮৪-২৮৬), ইংরেজী অনুবাদ আবু তালহা দাউদ ইবন। রােনান্ড বারবাঙ্ক (রহ)।

উৎসঃ সালাফদের সিয়ামপৃষ্ঠা: ৯৮ – ৯৯


[1] বুখারীঃ ২০১৬, মুসলিমঃ ১১৬৭/২১৭, আনু সাঈদ খুদরী ও আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
[2] বুখারীঃ ২০২১, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত।
[3] বুখারীঃ ২০২০, মুসলিমঃ ১১৬৯, আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
[4] মুসলিমঃ ৭৬২

সাবস্ক্রাইব করুন

2,018,267FansLike
1,685FollowersFollow
1,150FollowersFollow
6,143FollowersFollow
4,600SubscribersSubscribe