সবর [ আপনার অন্তরের অবস্থা পরিবর্তন করুন ]

0
343

patience

লেখক: ড. খালিদ আবু শাদি | অনুবাদক: হাসান মাসরুর

১. আজকের আলোচ্য বিষয়ের ফায়দা

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সত্তরের অধিক স্থানে সবরের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সবরের বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:

  • আল্লাহ তাআলা দ্বীনের ইমামতকে সবর ও ইয়াকিনের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন।
  • আল্লাহ তাআলা কসম করে নিশ্চিত করে বলেছেন যে, কল্যাণ সবরের সাথেই সম্পৃক্ত।
  • আল্লাহ তাআলা সিয়াম পালনকারীর জন্য অনির্ধারিত প্রতিদান রেখেছেন।
  • আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিয়ে বলেছেন যে, তিনি ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন।
  • আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। ধৈর্যশীল ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গিত্ব অর্জন করবে।
  • আল্লাহ তাআলা সফলতাকে সবর ও তাকওয়ার সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন।
  • বিপদের সময় সবরকারীদের জন্য তিনটি পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন, যার প্রত্যেকটিই অনেক মূল্যবান—আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে শান্তি ও রহমত এবং তাদের সঠিক পথ পাওয়া।
  • তিনি সংবাদ দিয়েছেন যে, সবর ও তাকওয়া থাকলে তোমার শত্রু তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এবং তোমার ওপর চেপে বসতে পারবে না।
  • তিনি সংবাদ দিয়েছেন যে, জান্নাত লাভের সাফল্য এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি মিলবে সবরের মাধ্যমে।
  • আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তা-ফিকির করা এবং তা থেকে ফায়দা গ্রহণের বিষয়টিকে তিনি সবর ও শোকর আদায়কারীদের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন।
  • আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিয়েছেন যে, সবর হলো শ্রেষ্ঠ ও মহৎ বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত।

২. কুরআনের আলো

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।” [সুরা আল-বাকারা, ২ : ১৫৫]

‘যারা বিপদ আসলে বলে, “আমরা তো আল্লাহরই (বান্দা) এবং আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব।[সুরা আল-বাকারা, ২ : ১৫৬]

এদের সবর হলো পরিপূর্ণ সবর। কারণ, এই সবরে আল্লাহ তাআলার আদেশের প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়েছে। কারণ, তারা মুসিবতের সময় মনে করে যে, তারা আল্লাহ তাআলার গোলাম। তিনি তাদেরকে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করবেন। ফলে তারা মুসিবতে পতিত হলে হতাশ হয়ে পড়ে না। বরং তারা মনে করে যে, তারা আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে। আর তখন আল্লাহ তাআলা এর বিনিময় দান করবেন। আয়াতে যে কথা বলা হয়েছে, তা বিশ্বাসের সাথে মিল থাকতে হবে। এ কথা তখনই গ্রহণযোগ্য হবে, যখন অন্তরের সাথে কথার মিল থাকবে। যে ব্যক্তি ‘ইন্না লিল্লাহ’ পাঠ করল, কিন্তু অন্তরে এর প্রতি কোনো বিশ্বাস রাখল না, তার কোনো মর্যাদা নেই। সে হলো বধিরের ন্যায়, যে কানে শোনে না।

আর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অর্থপূর্ণ এই বাক্যটি শিখিয়ে দিয়েছেন; যেন মুসিবতের সময় এটিই তাদের নিদর্শন হয়। কারণ, বিশ্বাস শক্তিশালী হয় ঘোষণার মাধ্যমে । কারণ, ভেতরগত উপলব্ধিগুলো নিজের মাঝে উপস্থিত রাখার বিষয়টি অনেক দুর্বল, এটিকে ইন্দ্রিয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী করতে হয়। আর তারা এই ঘোষণার মাধ্যমে নিজেদের বিশ্বাস প্রকাশ করছে এবং মানুষকেও শিক্ষা দিচ্ছে।

৩. রাসুল (সা:) আমাদের আদর্শ

রাসুল (সা:) ক্ষুধা ও দারিদ্র্যে সবর করেছেন। এমনকি পেটে পাথরও বেঁধেছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের হারিয়ে সবর করেছেন। নিজ কওমের পক্ষ থেকে আসা গালি ও আঘাতের কষ্ট সহ্য করেছেন। নিজ জন্মভূমি থেকে বের করে দেওয়ার ওপর সবর করেছেন। নিজের চোখের সামনে সাথিদের লাশ ও (জিহাদের ময়দানে শত্রু কর্তৃক) তাঁদের চেহারা-বিকৃতিকরণ দেখে সবর করেছেন। তাঁর সম্মানে যখন মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে, তখনও সবর করেছেন। যখন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় স্ত্রী আয়িশা (রা:)-এর ব্যাপারে অপবাদ দেওয়া হয়েছে, তখনও তিনি সবর করেছেন। তিনি এসব ব্যাপারে নিজে সবর করেছেন এবং পরিত্যক্ত সম্পদ হিসেবে তা আমাদের জন্য রেখে গেছেন। এ ক্ষেত্রে যে তাঁর উত্তরাধিকারী হবে, সে তাঁর নৈকট্য অনুযায়ী এসবের সম্মুখীন হবে। বস্তুত আপনার সবরের পরিমাণ অনুযায়ী আপনার নৈকট্যের স্তর নির্ধারিত হবে।

৪. অমূল্য বাণী

> নবিজি (সা:) বলেন: সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোনো নিয়ামত কাউকে দেওয়া হয়নি।‘ [সহিহু মুসলিম: ১০৫৩]

> তিনি বলেন: কোনো ব্যক্তির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে সে যদি তাতে আমলের মাধ্যমে পৌঁছতে না পারে, তবে আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে তার দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানের (বিপদাপদের) মাধ্যমে পরীক্ষায় ফেলেন।’ [সুনানু আবি দাউদ: ৩০৯০ ]

> আবু মাসউদ (রা:) বলখিকে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদে আক্রান্ত হয়ে নিজের কাপড় ছিঁড়ে ফেলল অথবা বুকে আঘাত করল, সে যেন বর্শা নিয়ে তার ররের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইচ্ছা করল!!’

> শুরাইহ আল-কাজি বলেন, ‘আমি কোনো বিপদে আক্রান্ত হলে চার কারণে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করি। আমি আল্লাহর প্রশংসা করি, কারণ, (এক) বিপদটি এরচেয়ে বড় হয়নি। (দুই.) আল্লাহ আমাকে সবরের রিজিক দান করেছেন। (তিন.) আল্লাহ আমাকে “ইন্না লিল্লাহ” পাঠ করার তাওফিক দান করেছেন, যার মাধ্যমে সাওয়াবের আশা করি এবং (চার) এই বিপদটি আমার দ্বীনের ক্ষেত্রে আসেনি।’

আবু সাইদ খাররাজ (রা:) বলেন, ‘সুস্থতা পাপাচারী ও নেককার সকলকেই আচ্ছাদিত করে রেখেছে। আর যখন বিপদ আসে, তখন মানুষের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়।’

> ফুজাইল (রা:) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বিপদের মাধ্যমে মুমিনের দেহকে রক্ষণাবেক্ষণ করেন, যেমন মানুষ তার পরিবারের কল্যাণের ব্যাপারে দেখাশোনা করে।’

> শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রা:) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা নিজের কিতাবে আস-সবরুল জামিল (সুন্দর ধৈর্য), আস-সফহুল জামিল (সুন্দর মার্জনা) এবং আল-হাজরুল জামিল (সুন্দর পরিহার)-এর আলোচনা করেছেন।’

আস-সবরুল জামিল (সুন্দর ধৈর্য) বলা হয় এমন ধৈর্যকে, যার মাঝে পরে আর কোনো অভিযোগ থাকে না। আর আস-সফহুল জামিল (সুন্দর মার্জনা) বলা হয় এমন মার্জনাকে, যার সাথে ভর্ৎসনার মতো কোনো প্রতিশোধ থাকে না। আল-হাজরুল জামিল (সুন্দর পরিহার) বলা হয়, কাউকে এভাবে পরিহার করাকে যে, তাকে অতিরিক্ত কোনো কষ্ট দেওয়া হয় না।

> ইমাম গাজালি (রা:) বলেন, ‘সবরের হুকুম অনুযায়ী তা কয়েক প্রকার হয়ে থাকে : ফরজ, মুসতাহাব, মাকরুহ ও হারাম। হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবর করা ফরজ এবং মাকরুহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবর করা মুসতাহাব এবং নিষিদ্ধ বিষয় সংঘটিত হতে দেখে সবর করাও নিষিদ্ধ – যেমন: অন্য কেউ তার স্ত্রীকে হারামভাবে কামনা করছে; ফলে তার গাইরত জেগে উঠেছে; কিন্তু সে নিজের এ গাইরত প্রকাশের ক্ষেত্রে সবর করছে এবং তার পরিবারের সাথে যে মন্দকর্ম করা হচ্ছে, সে ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করছে। নিঃসন্দেহে এ ধরনের সবর হারাম সবরের অন্তর্ভুক্ত হবে।

৫. একটি চমৎকার কাহিনি

সহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে, আবু তালহা (রা:)-এর এক পুত্র অসুস্থ হয়ে পড়ল। বর্ণনাকারী বলেন, তার মৃত্যু হলো। তখন আবু তালহা (রা:) বাড়ির বাইরে ছিলেন। তার স্ত্রী যখন দেখলেন যে, ছেলেটি মারা গেছে, তখন তিনি কিছু প্রস্তুতি নিলেন। ছেলেটিকে ঘরের এক কোণে রেখে দিলেন। আবু তালহা (রা:)  বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলের কী অবস্থা?’ স্ত্রী জবাব দিলেন, তাঁর আত্মা শান্ত হয়েছে এবং আশা করি সে এখন আরাম পাচ্ছে।’ আবু তালহা (রা:) ভাবলেন, তার স্ত্রী সত্য বলেছেন।

বর্ণনাকারী বলেন, ‘আবু তালহা (রা:) স্ত্রীর সাথে রাত যাপন করলেন এবং ভোরে গোসল করলেন। তিনি যখন বাইরে যেতে উদ্যত হলেন, স্ত্রী তাকে জানালেন, ছেলেটি মারা গেছে। সন্তানের মৃত্যুর খবর এভাবে গোপন রেখে রাত যাপন করায় স্ত্রীর প্রতি তিনি মনঃক্ষুণ্ণ হলেন) অতঃপর তিনি নবিজি (সা:)-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করে তাঁকে তাদের রাতের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করলেন। তখন রাসুল (সা:) ইরশাদ করলেন: আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ রাতে বরকত দান করবেন।’ [সহিহুল বুখারি: ১৩০১]

সুফইয়ান (রা:) বলেন, এক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আবু তালহা (রা:)-এর নয়জন সন্তান দেখেছি। তারা সবাই কুরআনের পাণ্ডিত্য অর্জন করেছে।’

  • যখন আব্বাস (রা:) ইনতিকাল করলেন, তখন লোকজন তাঁর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ করে তাঁর ছেলেকে শোক প্রকাশে বারণ করল। একপর্যায়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এক লোক এসে এই কবিতা আবৃত্তি করল: ‘তুমি ধৈর্য ধরো, তোমার মাধ্যমে আমরা ধৈর্যশীল হব। রাজা যখন সবর করে, তখন প্রজারাও সবর করে। আব্বাসের পর তোমার সবর আব্বাস থেকে উত্তম। আল্লাহর শপথ, আব্বাসের জন্য এটিই তোমার পক্ষ থেকে সর্বোত্তম।’

৬. রমাদানে সবর

ইবনুল কাইয়িম (রা:) বলেন, ‘সবরের সাথে সম্পৃক্ত লোকদের হিসেবে সবর তিন প্রকার: (এক.) আল্লাহর ইবাদত তথা আনুগত্য পালনে সবর করা। (দুই.) অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সবর করা। (তিন.) তাকদির ও আল্লাহর ফয়সালার ব্যাপারে সবর করা, যেন এর ফলে ক্রোধান্বিত না হয়।

রমাদান হলো সবরের মাস। রমাদানে সবরের তিন প্রকারই বিদ্যমান রয়েছে:

আনুগত্য পালনে সবর: যেমন, ফরজ সালাত ও নফল সালাত আদায়ে কষ্টের ওপর সবর করা। সিয়াম পালন, কুরআন তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদতে সবর করা।

অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সবর করা: যেমন হারাম কামনাবাসনার ব্যাপারে সবর করা, হারাম জিনিসের দিকে দৃষ্টি না দেওয়া এবং হারাম ভক্ষণ না করা এবং অন্যান্য আরও যত অবাধ্যতা আছে, তা থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমে সবর করা।

তাকদির ও আল্লাহর ফয়সালার ওপর সবর করা: যেমন ক্ষুধার যন্ত্রণা, তৃষ্ণা, গরম ও অন্যান্য কষ্টের ওপর সবর করা।

৭. সবরের সূর্য ডুবে গেছে

বর্তমানেআত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ আপনাদের সামনে আত্মহত্যার বিষয়ে মিশরের তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব তুলে ধরছি:

  • ২০০৫ সালে মিশরে ১১৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
  • ২০০৬ সালে এই সংখ্যা পৌঁছেছে ২৩৫৫ পর্যন্ত।
  • ২০০৭ সালে এই সংখ্যা পৌছেছে ৩৭০০ পর্যন্ত।
  • ২০০৮ সালে এই সংখ্যা পৌঁছেছে ৪২০০ পর্যন্ত।
  • এরপর সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে ২০০৯ সালে। সেই বৎসর ৫০০০ মানুষ আত্মহত্যা করেছে। গড়ে দৈনিক ১৪টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যা সারা বিশ্বে আত্মহত্যার সর্বোচ্চ গড়ের কাছাকাছি।

৮. দুআ

  • হে আল্লাহ, মুসিবতে হতাশাগ্রস্ত এবং পরীক্ষার সময় ভীত হয়ে পড়া থেকে আমরা আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
  • হে আল্লাহ, আমাদের ভাগ্যে আপনার এতটুকু ভয় দান করুন, যার মাধ্যমে আমাদের ও আপনার অবাধ্যতার মাঝে পর্দা তৈরি হবে এবং আমরা আপনার আনুগত্য করতে পারব, যা আমাদেরকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেবে, এমন বিশ্বাস তৈরি হবে যার মাধ্যমে আমাদের দুনিয়াবি বিপদগুলো সহজ হয়ে যাবে। হে আল্লাহ, আমাদের কর্ণ, চক্ষু ও শক্তিকে আপনার প্রিয় জিনিস উপভোগে লাগিয়ে দিন এবং আমাদের উত্তরসূরি হিসেবে এগুলোই রেখে দেবেন।
  • হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে এমন পরীক্ষায় ফেলবেন না, যাতে পতিত হয়ে আমরা লাঞ্ছিত হব। আর যখন পরীক্ষায় ফেলবেন, তখন অবিচল রাখবেন।
  • হে আল্লাহ, প্রতিটি মুসিবতে আমাদেরকে প্রশান্তি দান করুন এবং আমাদের হৃদয়কে মজবুত করে দিন, যেমন আপনি মুসা (আঃ)-এর মায়ের হৃদয়কে মজবুত করে দিয়েছেন। আর আমরা যেন পূর্ণ মুমিন হতে পারি।

৯. স্বার্থপর হবেন না

  • কথাগুলো আপনার মসজিদের মুসল্লি ও আপনার সহপাঠী-সহকর্মীদের মাঝে আলোচনা করুন।
  • এই বইটি নিজে পাঠ করে অন্যদেরকেও পড়তে দিন; যেন তারা এর থেকে উপকৃত হতে পারে।
  • মসজিদের ইমামকেও বইটি হাদিয়া দিতে পারেন; যেন তিনি জুমআর খুতবা বা তারাবিহ-পরবর্তী আলোচনায় এর থেকে ফায়দা গ্রহণ করতে পারেন।

১০. যথেষ্ট কথা হয়েছে, এখন আমল দেখার বিষয়

  • মুসিবতে আক্রান্ত হলে আমরা অবশ্যই পাঠ করতে থাকব। কারণ, নবিজি (সা:) বলেন: ‘যেকোনো মুসলিম মুসিবতে পতিত হয়ে আল্লাহর নির্দেশিত দুআ পড়—অর্থাৎ “আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব)” [সুরা আল-বাকারা, ২ : ১৫৬] পড়ে- অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, আমাকে আমার মুসিবতে সাওয়াব দান করুন এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করুন) বলবে, আল্লাহ তাকে এরচেয়ে উত্তম বস্তু দান করবেন।’[সহিহু মুসলিম: ৯১৮]
  • আমরা বিভিন্নভাবে সবর করার চেষ্টা করব। সবর হলো বান্দার প্রশংসনীয় সকল গুণের সমষ্টির নাম।
  • সুতরাং মুসিবতের সময় নিজেকে হতাশা থেকে রক্ষা করাকেও সবর বলা হয়।
  • আর শত্রুর সাথে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সবর মানে বীরত্ব।
  • জবানকে সংযত রাখার ক্ষেত্রে সবর মানে গোপনীয়তা রক্ষা করা।
  • অতিরিক্ত বিলাসিতা থেকে সবর করা মানে দুনিয়াবিমুখতা।
  • লজ্জাস্থানের কামনার ক্ষেত্রে সবর মানে চারিত্রিক পবিত্ৰতা।
  • আর কষ্ট সহ্য করার ক্ষেত্রে সবর মানে সহনশীলতা।

সবর ফরজ বিধান। পক্ষান্তরে হতাশ হওয়া গুনাহ। সুতরাং আমরা প্রত্যেক হতাশা, বিপদ ও আল্লাহর তাকদিরের ব্যাপারে ক্রোধের সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব।

উৎস: রমাদান-আত্মশুদ্ধির বিপ্লব, পৃষ্ঠা: ১৪১ – ১৫০

Print Friendly, PDF & Email


'আপনিও হোন ইসলামের প্রচারক'
প্রবন্ধের লেখা অপরিবর্তন রেখে এবং উৎস উল্লেখ্য করে
আপনি Facebook, Whatsapp, Telegram, ব্লগ, আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন, মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। ইসলামি দা’ওয়াহ্‌র ৮০ টিরও বেশী উপায়! বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]

দ্বীনী খিদমায় অংশ নিন

আপনার মন্তব্য লিখুন