Home Blog Page 69

মুহাম্মাদ (সঃ) এর আয়েশা (র) প্রতি ভালবাসা

94

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে আয়েশা রাদিআল্লাহ আনহার  যে মহত্ব ও মর্যাদা ছিল, তা অন্য কোন স্ত্রীর জন্য ছিল না। তার প্রতি এ মহব্বত তিনি কারো থেকে গোপন পর্যন্ত করতে পারেননি, তিনি তাকে এমন ভালবাসতেন যে, আয়েশা (রাঃ) যেখান থেকে পানি পান করতেন, তিনিও সেখান থেকে পানি পান করতেন, আয়েশা (রাঃ) যেখান থেকে খেতেন, তিনিও সেখান থেকে খেতেন। অষ্টম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণকারী আমর ইব্নুল আস রাদিআল্লাহু আনহু তাকে জিজ্ঞাসা করেন :

“হে আল্লাহর রাসূল, আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় কে ?” তিনি বললেন : “আয়েশা”।  আমর (রাঃ)  জিজ্ঞাসা করলেন : পুরুষদের থেকে ? তিনি বললেন : “তার পিতা”। {বুখারি ও মুসলিম}

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে খেলা-ধুলা, হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করতেন। কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেন।

আয়েশা রাদিআল্লাহ আনহা আরো বর্ণনা করেন, যার দ্বারা তার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহ, মমতা ও আদর-সোহাগের প্রকাশ পায়, তিনি বলেন :

“আল্লাহর শপথ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি আমার ঘরের দরজায় দাঁড়াতেন, হাবশিরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা-ধুলা করত, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার চাদর দিয়ে ঢেকে নিতেন, যেন আমি তাদের খেলা উপভোগ করি তার কাঁধ ও কানের মধ্য দিয়ে। অতঃপর তিনি আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতেন, যতক্ষণ না আমিই প্রস্থান করতাম”। {আহমদ}

যেহেতু প্রসিদ্ধ ছিল আয়েশাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অন্য স্ত্রীদের তুলনায় বেশী প্রিয়, তাই সবাই অপেক্ষা করত আয়েশার ঘরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবে আসবেন, সে দিন  তাঁরা তাঁকে হাদিয়া ও উপহার সামগ্রী পেশ করতেন ।

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত :“মানুষ তাদের হাদিয়া পেশ করার জন্য আয়েশার পালার অপেক্ষায় থাকত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৫) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}

তার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বতের আরেকটি আলামত হচ্ছে, মৃত্যু শয্যায় তিনি আয়েশার নিকট থাকার জন্য অন্যান্য স্ত্রীদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন, যেন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাকে সেবা শুশ্রূষা প্রদান করেন।

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহার আরো একটি প্রসিদ্ধি ছিল যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে আত্মসম্মান বোধ করতেন, রাসূলের প্রতি যা তার অকৃত্রিম ও সত্যিকার মহব্বতের প্রমাণ ছিল। তিনি তা এভাবে ব্যক্ত করেন :

“কেন আমার মত একজন নারী, আপনার মত একজন পুরুষকে নিয়ে কেন আত্মসম্মান বোধ করবে না ?” {মুসলিম}

একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে অবস্থান করছিলেন, রাসূলের অপর স্ত্রী খানাসহ একটি পাত্র তার নিকট প্রেরণ করেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা পাত্রটি হাতে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা জমা করতে করতে বলতে ছিলেন :

“তোমাদের মা ঈর্ষা ও আত্মসম্মানে এসে গেছে”। {বুখারি}

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন নারীকে বিয়ে করতেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন, যদি কোন বিশেষত্ব বা বৈশিষ্টের কারণে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুকুল্য লাভ করে থাকে, তাহলে তিনিও তা অর্জন করার জন্য প্রতিযোগিতা করবেন। এ ঈর্ষা ও আত্মসম্মানের বিরাট একটি অংশ লাভ করেছেন খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহা, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে খুব স্মরণ করতেন।

কোন এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতুল বাকিতে (কবরস্থানে) গমন করেন, আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা ধারণা করেন, তিনি হয়তো কোন স্ত্রীর ঘরে যাবেন, তাকে ঈর্ষায় পেয়ে বসল, তিনি তার পিছনে রওয়ানা দিলেন গন্তব্য জানার জন্য, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তিরষ্কার করে বলেন :

“তুমি কি ধারণা করেছ যে, তোমার উপর আল্লাহ ও তার রাসূল অন্যায় আচরণ করবে ?” {মুসলিম}

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

“আমাকে তিন দিন স্বপ্নে দেখানো হয়েছে তোমাকে, রেশমের একটি পাত্রে তোমাকে নিয়ে এসে মালাক বলে এ হচ্ছে তোমার স্ত্রী, আমি তার চেহারা খুলে দেখি তুমিই সে নারী। অতঃপর আমি বলি, এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তবে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন হবে”। {মুসলিম- অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০২) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেন : তুমি কখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাক আর কখন গোস্বা কর আমি তা বুঝতে পারি। তিনি বলেন, আমি বললাম : কিভাবে আপনি তা বুঝেন ? তিনি বললেন : তুমি যখন আমার উপর সন্তুষ্ট থাক, তখন বল, এমন নয়- মুহাম্মদের রবের কসম, আর যখন আমার উপর গোস্বা কর, তখন বল, এমন নয়- ইবরাহিমের রবের কসম। তিনি বলেন, আমি বললাম : অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তবে আমি শুধু আপনার নামটাই ত্যাগ করি”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৩) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}

আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খেলনা দিয়ে খেলতেন। তিনি বলেন, আমার বান্ধবীরা আমার কাছে আসত, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (-কে দেখে তার) থেকে আড়ালে চলে যেত, তিনি তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন”। {মুসলিম, অষ্টম খণ্ড, পনেরতম অংশ, পৃষ্ঠা : (২০৪) দারু ইহইয়াউত তুরাসিল আরাবি, বইরুত, দ্বিতীয় মুদ্রণ, হি.১৩৯২, ই.১৯৭২}
ا
لبناتঅর্থ : ছোট পুতুল, যা দিয়ে মেয়েরা খেলাধুলা করে। ইমাম নববি তার ব্যাখ্যায় বলেন : কাযি ‘আয়ায বলেছেন এ হাদিসে পুতুল দ্বারা খেলার বৈধতা রয়েছে, যেসব পুতুলের আকৃতি নিষিদ্ধ।

فكن يَنْقَمِعْنَ من رسول الله صلى الله عليه وسلم অর্থ : ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন : তারা লজ্জা ও ভয়ে আড়ালে চলে যেতেন, কখনো ঘর বা অন্য কোথাও প্রবেশ করত- এ অর্থই অধিক সঠিক।

يُسَرِِّبُهُن إلي অর্থ : ইমাম নববি এর ব্যাখ্যায় বলেন : তাদেরকে তিনি আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া ও দাম্পত্য জীবনের একটি সুন্দর আচরণ।

 

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ১০

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

এই আর্টিকেল ইংলিশ ওয়েবসাইট SuhaibWeb থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।

ওযু

আমরা সবাই জানি, যথাযথ ভাবে ওযু করা নামাজের একটি পূর্বশর্ত। এ কারনে আমরা ওযুকে কেবল নামাজে দাঁড়ানোর আগের একটি প্রয়োজনীয় কাজ মনে করি। আমরা ভাবি, ঠিকভাবে ওযু না হলে নামাজে দাড়াতে পারব না, তাই আমরা এই নিয়তেই ওযু করি। কিন্তু ওযুর মহত্ত্ব এর চেয়ে অনেক বেশি। এটা দুঃখজনক যে আমরা ওযু থেকে কোনরকম উজ্জীবিত না হয়েই এতো বছর নামায পড়ে চলছি। ওযুর মধ্যেও কিছু গুপ্তধন আছে। কিন্তু এই গুপ্তধনের স্বাদ আস্বাদন করতে আগে আমাদের নিজেদেরকে একটু পরিবর্তন করতে হবে।

নিয়ত

আব্দুল্লাহ বিন মোবারক বলেছেন, “এমন কত কাজ আছে যা ছোট মনে করে করা হলেও তা হয় বেশি সম্মানিত; আবার এমন কত কাজ আছে যা অনেক বড় মনে করে করা হলেও তা হয়ে যায় সামান্য; নিয়তের কারনে।”

প্রথমে আমরা ওযুতে যে পরিবর্তন আনতে পারি তা হল এ থেকে প্রাপ্ত সওয়াবের পরিমান। কেউ কেউ বলতে পারে – ‘আমি তো ওযুর সমস্ত সুন্নাত পালন করি, পানির অপচয় করি না, শুরুতে শেষে দোয়া করি।’ তাহলে আর কিভাবে সওয়াব এর পরিমান বাড়ানো যাবে? লক্ষ্য করলে দেখবেন, ওযুতে আমরা যা যা করছি তা হল বাহ্যিক। যা বাকি রয়ে গেল তা হল – অন্তর। ইবনে আল কায়্যিম বলেছেন, যে বেক্তি অল্প আমল করল সে আল্লাহর নিকট বেশি আমলকারীর চেয়ে প্রিয় হতে পারে, যদি অল্প আমলকারীর অন্তর তার আমলে যুক্ত থাকে। এটা বোঝাতে তিনি একটি গল্প বর্ণনা করেন- এক লোক দেখল শয়তান মসজিদের দরজায় দাড়িয়ে আছে, ভেতরে ঢুকতে পারছে না। লোকটি ভেতরে তাকিয়ে দেখল, একজন লোক শুয়ে আছে আরেকজন দাড়িয়ে নামায পড়ছে। তখন সে শয়তান কে জিজ্ঞেস করল, যে লোকটি নামায পড়ছে তার কারনে কি তুমি মসজিদে ঢুকতে পারছনা? শয়তান উত্তর দিল- যে লোকটি শুয়ে আছে তার কারনে। কেন? তার মনের অবস্থার কারনে।

নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি যখন ওযু করছেন আপনার মনের উদ্দেশ্য বা নিয়ত টি কি? আমরা বেশির ভাগ বলব নিজেকে নামাজের জন্য প্রস্তুত করা। কিন্তু আমাদের অন্তর কে এখানে আরেকটু গভীরে প্রবেশ করাতে হবে এবং আরেকটি উদ্দেশ্য যোগ করতে হবে- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এটা অনেকটা কিছু দান করার মত। আপনি যখন বাড়ি ফেরার পথে ভিখারিকে কিছু টাকা দিলেন, আপনি হয়ত তা নিয়ে আর তেমন কোন চিন্তা ই করবেন না। কিন্তু যখন আপনি এই নিয়তে টাকাটা দিবেন, যে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একজন অভাবীকে সাহায্য করছেন, তখন আপনার মনে অন্যরকম এক অনুভূতি আসবে, আপনি আরও অনুপ্রাণিত বোধ করবেন। আপনি নিজেকে সৃষ্টিকর্তার আরও নিকটে বোধ করবেন, তা ৫ টাকা দিয়েই হোক অথবা ৫০ টাকা।

আরেকটি উদ্দেশ্য যোগ করুন, সেটি হল আমাদের প্রিয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সুন্নাহর অনুসরণ। আমাদের আরও নিখুঁতভাবে ওযু করার আগ্রহ জাগবে যখন আমরা চিন্তা করব আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কিভাবে ওযু করতেন। আমার মনে পড়ছে তখনকার কথা যখন আমি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুসরণের উদ্দেশ্যে ছোট একটি পাত্রে ওযুর পানি নেই, এটি আসলেই আমাকে আরও উদ্দিপ্ত করে এবং আমি বুঝতে পারি ওযু করতে আমাদের কতই না অল্প পানির প্রয়োজন হয়।

পরিশেষে আমরা আরেকটি মাত্রা যুক্ত করতে পারি যাতে ওযুর ব্যাপারে আমরা আন্তরিক হতে পারি এবং একে আল্লাহর কাছে পছন্দনীও করতে পারি। তা হল- আমাদের কিছু গুনাহ মুছে ফেলার নিয়ত। ওযু হল পবিত্রতা আনয়নকারী কারন এটি আমাদের ছোট গুনাহ গুলকে ধুয়ে ফেলে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন – ‘যে বেক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে তার শরীরের গুনাহগুলি ধুয়ে যাবে, এমনকি তার আঙ্গুলের নখের নীচ থেকেও।‘ [মুসলিম]

ওয়াসওয়াসা

অনেকে নিখুঁতভাবে তাদের ওযু এবং নামায করার সময় এক কঠিন সমস্যার মুখমুখি হয়- ওয়াসওয়াসা; যা একধরনের মনের ফিসফিসানি, এখানে এটি একধরনের সন্দেহবাতিক বোঝায়। উদাহরনস্বরূপ, এমন বেক্তি যে নিখুঁত করার জন্য সন্দেহবশতঃ একাধিকবার ওযু করে এবং ঠিক হল কি হল না এই সন্দেহে একাধিক বার নামায ও পড়তে চায়।

আপনার যদি এই সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তার সমাধান ও আছে ইনশাল্লাহ। অনেকে এটি প্রয়োগ করেছেন এবং বলেছেন তারা আল্লাহর রহমতে আরোগ্য লাভ করেছেন। আলেমরা বলেন, যারা এরকম তীব্র সন্দেহে ভগেন তারা যেন তাদের কাজগুলোর ব্যাপারে উত্তমটাই ধরে নেয়। যেমন কারো যদি সন্দেহ হয় আমার ওযু আছে কি নেই, তবে যেন তারা ধরে নেয় তাদের ওযু আছে। যদি কারো মনে হয় আমি কি তিন রাকাত পরলাম না চার রাকাত, সে যেন চার রাকাত ধরে নেয়। কেউ কেউ এতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। আসুন তাহলে এ ব্যাপারে মনে জাগা কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই। প্রথমত, আমরা কেন বারবার ওযু করব? আমাদের ভয় আমরা ঠিক মত ওযু করিনি বা আমাদের ওযু নেই এবং আল্লাহ হয়ত তা কবুল করবেন না। যেহেতু আপনি এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করছেন, জেনে রাখুন- আল্লাহ চান না আপনি বারংবার ওযু করবেন। কিভাবে বুঝবেন? মহানবী (সাঃ) বলেনঃ “কেউ যদি পেটের অস্বস্তিতে ভোগে এবং নিশ্চিত হতে না পারে যে সে বায়ু ত্যাগ করেছে কিনা, সে যেন মসজিদ ত্যাগ না করে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে শব্দ বা গন্ধ পায়।” [মুসলিম]

এভাবে সে যেন ১০০% নিশ্চিত হয়।ওযুর পরের কিছু দোয়াকিছু দোয়া আছে যা ওযুর করে পড়া উচিত। আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুল্লাহি ওয়া রাসুলুহ” (আমি সাক্ষ্য দিছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল।) তাহলে তাঁর জন্য বেহেস্তের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে এর যে কোন দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করতে পারবে।[মুসলিম]

আবার, “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা লা ইলাহা ইল্লা আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক” এটি তাঁর জন্য শ্রেষ্ঠতম কাগজে লিপিবদ্ধ করে সীলমোহর দিয়ে বন্ধ করে রাখা হবে, যা কেয়ামত দিবসের আগে খোলা হবে না। (সহিহ আল জামিই)

আল্লাহ আমাদের হৃদয় দিয়ে ওযু করার তৌফিক দিন।

আমীন!!

আগের পর্ব গুলো এই লিংক থেকে  পড়ুনঃ

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

বই – উলামার মতানৈক্য ও আমাদের কর্তব্য – ফ্রী ডাউনলোড

53

 

বই: উলামার মতানৈক্য ও আমাদের কর্তব্য

লেখক: আবদুল হামীদ ফাইযী , শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসইমীন (রহ.)

ভাষান্তরে: আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী

প্রকাশনায়: তাওহীদ পাবলিকেশন্স

পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২

সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: সাধারন অনেক মানুষের মনে প্রশ্ন, আমাদের আল্লাহ্‌ এক, নবী এক, কিতাব এক, কিবলাহ এক তবে মতভেদ কিসের এবং কেন? কেন উলামাগণ একমত নন? কেন এত মাযহাব ও ফির্কাহবন্দী তথা দলাদলি? এ সকল প্রশ্নের কিছু কিছু উত্তর দেওয়া হয়েছে অত্র পুস্তিকায়।

PDF ফাইল ওপেন করার জন্য ফ্রি Software/Application

Android – ezPDF Reader  |  PlayStore | Adobe Reader – PlayStore

Windows 7/8/10 – Adobe Reader

বই – উলামার মতানৈক্য ও আমাদের কর্তব্য – QA Server
বই – উলামার মতানৈক্য ও আমাদের কর্তব্য – QA Server

উলামার মতানৈক্য ও আমাদের কর্তব্য – Mediafire
উলামার মতানৈক্য ও আমাদের কর্তব্য – Mediafire

বইটি ভালো লাগলে অবশ্যই একটি Hard Copy সংগ্রহ করে অথবা লেখক বা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সৌজন্য মূল্য প্রদান করে সহযোগিতা করুন।

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ৯

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

বিশ্বাসের মাধুর্য

একটি প্রশ্ন: মনে করুন আপনি একজন অপরাধী, এবং আপনার অসংখ্য অপরাধের জন্য একজন বাদশাহ আপনাকে ৫০ বছরের কারাদন্ড দেবে। এবং আপনাকে বলা হল সেই ৫০ বছরের কারা ভোগের পর তিনি আপনাকে একটা প্রশ্ন করবেন। আপনি যদি সঠিক উত্তর দিতে পারেন, আপনাকে মুক্তি দেওয়া হবে। যদি সঠিক উত্তর দিতে না পারেন আপনাকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হবে। আপনাকে যখন সেই কারাগারে নেওয়া হবে, ৫০ বছর আপনি কি নিয়ে চিন্তা করবেন? আপনি কি এটা ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাবতে পারবেন যে – কি হতে পারে সেই প্রশ্ন?

এখন আরও একটু কল্পনা করুন যে, সেই কারাগারে আপনার সাথে আরও একজন বন্দি আছে যে বলল, আমি জানি বাদশাহ তোমাকে ঠিক কি প্রশ্নটি করবেন। আপনার তখন কেমন বোধ হবে? আপনি সেই প্রশ্নটি জানার জন্য আকুল হয়ে যাবেন। এবং জানার সাথে সাথে সঠিক উত্তরটি দেওয়ার জন্য যথা সাধ্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবেন।

বাস্তবে আমরা প্রত্যেকেই সেই কারাবন্দি মানুষ। কেয়ামত দিবসে সেই একটি বিশেষ প্রশ্ন আমাদের করা হবে, যার উত্তর আমরা যদি ঠিক মত দিতে পারি, তবে ইনশাল্লাহ আশা করা যায়, পরবর্তী সব কিছু সহজ হবে। আর যদি না দিতে পারি তবে তার পরিনতি ভয়াবহ। আজকে এখানে সেই প্রশ্নটি নিয়েই আলোচনা করা হবে যেটি জানার জন্য আমরা সবাই অধীর হয়ে আছি। এটি আমার কথা নয়, এটি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কথা: “আল্লাহর বান্দার কাছ থেকে কিয়ামাত দিবসে যে বিষয়টির হিসাব সবার প্রথমে নেওয়া হবে তা হল নামাজ। এই হিসাব যদি সন্তোষজনক হয় তাহলে তার পরবর্তী কাজ গুলো সহজ হবে। আর যদি তা অসন্তোষজনক হয় তাহলে তার পরবর্তী হিসাব হবে কঠিন।” [তিরমিজী, বায়হাকি, নাসায়ী]

আমরা হব পরবর্তীতে উল্লেখিত পাঁচ ধরনের মধ্যে যে কোন এক ধরনের ব্যক্তি যে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হব। আমরা তাহলে কোন ধরনের হতে চাই?

মসজিদে খুশু নিয়ে নামাজ আদায়কারী

প্রথম ধরনের ব্যক্তি হবে সেই ব্যক্তি যে মযজিদে যায় এবং খুশু সহকারে জামাতে নামাজ আদায় করে অথবা সেই মহিলা যে আজান শেষ হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নামায আদায়ের জন্য খুশু নিয়ে দাঁড়ায়। এটি হল সর্বোত্তম অবস্থা এবং আপনি যদি এই অবস্থায় ইতিমধ্যে থেকে থাকেন তাহলে তা দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে রাখুন। আল্লাহ বলেন: “এবং সর্বোপরি যারা নিজেদের নামায হেফাজত করে, পরকালে এরাই আল্লাহর জান্নাতে মর্যাদা সহকারে প্রবেশ করবে।” [সুরা আল মারিজ ৩৪-৩৫]

আল্লাহ এদের ব্যাপারে আরও বলেন: “এ লোকগুলোই হচ্ছে মুলত জমিনে আমার যথার্থ উত্তরাধিকারী, জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারও এরা পাবে, এরা সেখানে চিরকাল থাকবে।” [সুরা আল মুমিনুন ১০-১১]

ফিরদাউস হল জান্নাতের সর্বউচ্চ স্তর।

মসজিদে নামায আদায়কারী কিন্তু খুশুর অভাব

এই ধরনের ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করার জন্য পুরস্কৃত হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন: “জামাতে নামায আদায়কারী একা নামায আদায়কারির চেয়ে ২৭ গুন বেশি সওয়াব পাবে।” তারপরও, খুশু না থাকা কোন হেলাফেলার বিষয় না। উমর (রাঃ) একদিন মসজিদের মিম্বরে দাড়িয়ে বলেন- এমনও আছে কোন লোক ইসলামের পথে চলতে চলতে বৃদ্ধ হয়ে গেল অথচ সে একটি নামাজের জন্য ও পুরস্কৃত হলনা। তখন তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি উত্তরে বললেন – খুশুর অভাবে। নামাজে পরিপূর্ণ খুশুর একটি উদাহরন দেখুন। একদিন সকালে আল কাসিম বিন মুহাম্মাদ (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) এর কাছে গেলেন। তিনি তাকে নামাজে একটি আয়াত পরতে দেখেলন: “আর এ কারনেই আজ আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপর এ সব নেয়ামত দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন, সর্বোপরি তিনি আমাদের জাহান্নামের গরম আগুনের শাস্তি থেকেও রক্ষা করেছেন।” [সুরা আত তূরঃ২৭]

উনি যখন এই আয়াতটি পড়ছিলেন, উনি কাঁদছিলেন এবং উনি আবার এই আয়াতটি পড়ছিলেন। এরকম তিনি এতবার করছিলেন যে আল কাসিম (রাঃ) বিরক্ত হয়ে বাজারে উনার দরকারি জিনিস কিনতে চলে গেলেন। সে যখন ফিরে আসলেন, দেখলেন আয়েশা (রাঃ) একই জায়গায় দাড়িয়ে তখনও সেই একই আয়াত পড়ছেন আর কাঁদছেন।

মুসলিম বিন ইয়াসার ও নামাজের নিষ্ঠার এমন আরেকটি উদাহরন। একদিন মসজিদের একটি অংশ ভেঙ্গে পড়ে গেল। লোকজন দৌড়ে সেখানে ছুটে আসলো কারন তারা জানত উনি এখানে নামায পড়ছিলেন। উনাকে সেখানে তখনও একভাবে নামাজে মগ্ন অবস্থায় দাড়িয়ে থাকতে পাওয়া গেল।

ঘরে নামায আদায়কারী

ঘরে নামায পড়া আর মসজিদে নামায পড়ার তফাত কি? প্রথমে আমাদের জানতে হবে মসজিদে নামায পড়ার বৈশিষ্ট কি। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেন: “যখন ইমাম নামাজে আমীন বলেন, তোমরাও একই সাথে আমীন বলবে। যদি এটি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তবে তোমাদের পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।” [বুখারি]

সাইয়িদ আল মুসায়িব বলেন- ৪০ বছরে এমন কখনও হয়নি, মুয়াজ্জিন আজান দিয়েছে অথচ আমি মসজিদে উপস্থিত ছিলাম না।আরেকটি চমৎকার ঘটনার উল্লেখ করছি। উবায়দাল্লাহ বিন উমার আল কাওারিরি বলেন- আমি কখনও মসজিদের ঈশার জামাত ছাড়তাম না। একদিন, আমার কাছে এক মেহমান আসলে তার সাথে কথায় কথায় সময় কেটে যায়। হটাৎ খেয়াল হল ঈশার জামাতের সময় তো চলে গেল। আমি বসরার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে এমন মসজিদ খুজতে লাগলাম যেখানে তখনও জামাত শুরু হয়ে যায়নি। কিন্তু এমন একটি মসজিদ ও পেলাম না। রাসুল (সাঃ) এর সেই কথাটি ভাবতে ভাবতে ঘরে ফিরলাম যে উনি বলেছেন একাকি নামাজের চেয়ে জামাতে নামায ২৭ গুন উত্তম। তখন আমি ঘরে ২৭ বার নামায পরলাম। ওই রাতে আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি ঘোড়ার পিঠে একদল লোকের সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করছি কিন্তু কিছুতেই তাদের ধরতে পারছিনা। তখন তাদের একজন বলল, তুমি কিছুতেই আমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। যখন আমি জিজ্ঞেশ করলাম -কেন, সে বলল কারন আমরা একত্রে নামজ পড়েছি, তুমি পড়নি। আমি অত্যন্ত কষ্ট নিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।

দেরীতে নামায আদায়কারী

আমরা যদি জানি যে আমাদের বিকাল ৪ টায় ফ্লাইট আছে, আমরা কি ৫ টায় পৌঁছব? না, কারন এখানে অনেক কিছু জড়িত, আমরা টাকা খরচ করে টিকেট কিনেছি, কেউ হয়ত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, অথবা আমাদের ছুটি দরকার। এই সমস্ত কিছুর চেয়েও নামায অনেক বেশি জরুরি। তাহলে আমরা কিভাবে ফজরের নামায কাজা করতে পারি আর তা বেলা ১০ টায় আদায় করতে পারি? অথবা জোহর ও আসর একত্রে পড়তে পারি? অথবা মাগরিব নামায পড়তে ঈশার আজান পর্যন্ত দেরি করতে পারি? আহমেদ বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘যে সবসময় সময় মত নামায আদায় করা চালিয়ে যায়, কিয়ামাতের দিন এই নামায তার জন্য হয়ে যাবে নুর, সাক্ষী এবং গুনাহ মাফের কারন। নতুবা তাকে দাড় করান হবে ফারাও, কারুন, হামান আর উবাই ইবনে খালাল এর সাথে।

যে নামায আদায় করে না

নামায পড়তে কতক্ষণ সময় প্রয়োজন? ৫ মিনিট? অথবা খুশু নিয়ে পড়লে ১০ মিনিট? তারপরও সারাদিনের আল্লার জন্য এই মাত্র ৫০ মিনিট আমাদের কাছে অনেক বেশী মনে হয়। এই হাদিসটি শুনুন: ‘একজন মানুষ ও একজন কাফিরের মধ্যে পার্থক্য কারী জিনিস হল নামায।‘ [মুসলিম, বুই-১, হাদিস-১৪৭]

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আপনি কোন প্রকারের মানুষের দলে পড়ছেন? আল্লাহ আমাদের সবাই কে যেন সেই প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত করেন।

আমীন!!

চলবে……

আগের পর্ব গুলো এই লিংক থেকে  পড়ুনঃ

পর্ব ১পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪পর্ব ৫পর্ব ৬পর্ব ৭পর্ব ৮পর্ব ৯পর্ব ১০পর্ব ১১পর্ব ১২পর্ব ১৩পর্ব ১৪পর্ব ১৫পর্ব ১৬পর্ব ১৭পর্ব ১৮পর্ব ১৯পর্ব ২০পর্ব ২১পর্ব ২২পর্ব ২৩পর্ব ২৪পর্ব ২৫পর্ব ২৬পর্ব ২৭পর্ব ২৮

কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান

লেখকঃ আবদুর রহিম গ্রীন

কুরআন হচ্ছে শেষ ওহী এবং একটি প্রমাণ, যা শুধু চৌদ্দশত বৎসর আগের আরবদের জন্য নয়, আজকের বিজ্ঞানীদের জন্যও। যারা বিংশ শতাব্দীতে বাস করছে-যা খুব শীগগিরই একবিংশ শতাব্দী হয়ে যাবে, তাদের জন্য কুরআনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হয়তোবা এটা যে, আধুনিক বিজ্ঞানের অধিকাংশ আবিষ্কার ও কুরআন পরস্পর সঙ্গতিপূর্ণ, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আগের ধারণাকৃত বহু বিষয় গত বিশ বৎসরে আবিষ্কৃত হয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রণী পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মরিস বুকাইলী, যিনি গভীর অধ্যয়নের ফলস্বরূপ ‘বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান’ নামক একটি বই লিখেছেন। এ বইয়ে তিনি প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ে প্রাপ্ত বাইবেল ও কুরআনের বক্তব্য তুলনা করেছেন। বিচার-বিশ্লেষণের পরে তাঁর সিদ্ধান্ত হচ্ছে:  “পূর্ববর্তী দুটি ঐশীবাণী অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিলের পর কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের বাণীসমূহ যে শুধুমাত্র স্ববিরোধিতা থেকেই মুক্ত তা নয়, বাইবেলের মত এতে মানুষের কোন হস্তক্ষেপের প্রমাণ নেই। কেউ যদি নিরপেক্ষভাবে এবং বৈজ্ঞানিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর বক্তব্যসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে চায়, তাহলে দেখতে পাবে যে তা আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তদুপরি বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বক্তব্য ও বাণী সেখানে রয়েছে। তারপরও এটা অচিন্তনীয় যে মুহাম্মাদের সময়ের একজন মানুষ এর রচয়িতা হতে পারে।

এতকাল যাবত যে সব আয়াতের বক্তব্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না, আধুনিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আমাদেরকে সে সবের অর্থ বোঝার ব্যাপারে সাহায্য করেছে। একই বিষয়ে বাইবেল ও কুরআনের বক্তব্যের তুলনা করলে কিছু মৌলিক পার্থক্য ধরা পড়ে। বাইবেলের বর্ণনা যেখানে বৈজ্ঞানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, সেখানে কুরআনের বর্ণনা আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রাপ্ত জ্ঞান ও তথ্যের আলোকে সঙ্গতিপূর্ণ। উদাহরণ হিসাবে সৃষ্টিতত্ত্ব মহাপ্লাবনের বিষয নেওয়া যেতে পারে। ইহুদীদের মিসর-ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় কুরআন বাইবেলের সম্পূরক। যেমন প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে দেখা গেছে, মূসার আমলকে চিহ্নিত করা যায় এমন সব নিদর্শন কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনার মিল প্রমাণ করছে। এছাড়া অন্য সব বিষয়ে এই দুই গ্রন্থের পার্থক্য বিরাট। যা আসলে এতদিন যাবত মুহাম্মাদ সম্পর্কে চলে আসা এই অভিযোগকেই খণ্ডন করছে যে তিনি কুরআন রচনা করেছেন বাইবেল থেকে নকল করে, কোন প্রমাণ দেওয়া ছাড়াই এসব অভিযোগ করা হতো।

মুহাম্মাদের আমলের জ্ঞানের উৎকর্ষতার আলোকে এটা ধারণাতীত যে কুরআনের বিজ্ঞান সম্পর্কিত বক্তব্য কোন মানুষের করা। সুতরাং এটা স্বীকার করে নেওয়া অত্যন্ত যথাযথ যে কুরআন শুধু অবতীর্ণ কিতাব নয়, বরং এর সঠিকত্বের নিশ্চয়তার জন্য এবং এতে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক তথ্যের জন্য একে বিশেষ মর্যাদার স্থান দেওয়া উচিত, কারণ কুরআনের অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা একথাই প্রমাণ করে যে এর কোন মানবিক ব্যাখ্যা অসম্ভব।”

আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত কিছু বক্তব্য

১) ভ্রূণসৃষ্টি ও এর বিকাশ সম্পর্কিত যথাযথ বর্ণনা:

নবী মুহাম্মাদের সময়ে এ সম্পর্কে বিরাজমান তত্ত্বের ভিতরে এরিস্টটলের এই ধারণা অন্তর্ভুক্ত ছিলো যে একটি শিশু রক্তের জমাট বাঁধা অবস্থা থেকে সৃষ্ট, যেভাবে পনীর তৈরী হয়। আঠারশ শতাব্দীতে হার্টসিকার দাবী করেন যে তিনি আদি মাইক্রোস্কোপ-এর সাহায্যে স্পার্ম এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে গঠিত মানুষ দেখতে পেয়েছেন। কুরআন এসব কিছুই বলছে না, বরং মানবের ভ্রূণাবস্থার বিকাশের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা দিচ্ছে: “আমি তো মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ আধারে স্থাপন করি, পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাট রক্তে, অতঃপর জমাট রক্তকে পরিণত করি পিণ্ডে এবং পিণ্ডকে পরিণত করি অস্থিপিঞ্জরে, অতঃপর অস্থিপিঞ্জরকে মাংস দ্বারা ঢেকে দিই, অবশেষে তাকে রূপ দান করি। সুনিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! এরপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।” [সূরা আল মু’মিনুন, ২৩, ১২-১৬]

নবী (সঃ) আরো ব্যাখ্যা করেন যে “নুতফা” পুরুষের শুক্রাণু ও নারীর ডিম্বাণু উভয়টিকেই বোঝায়। “আলাকা” শব্দটির তিনটি অর্থ আছে আরবীতে: (১) আঁকড়ে থাকা বস্তু, (২) জমাট রক্তবিন্দু, (৩) জোঁকের মত বস্তু। তিনটি অর্থই বিকাশমান ভ্রূণের প্রথম ধাপকে সঠিকভাবে বর্ণনা করে। নিষিক্ত ডিম্বাণু এমন হয় যে তা জরায়ূর দেওয়াল আঁকড়ে ধরে রাখে। তারপর আকার ও আচরণের দিক থেকে সেটা জোঁকের সাদৃশ্য অবলম্বন করে। জোঁক এবং ভ্রূণ উভয়েই রক্ত শোষণ করে। এটা জমাট রক্তবিন্দুর মতও হয়ে থাকে। পরবর্তী স্তরে এটা চিবানো-বস্তুর মত হয় দেখতে, এটাও সঠিক। এটাও সত্যি যে পেশী ও মাংসের পূর্বে অস্থি তৈরী হয়। রাসূলের হাদীসে এসেছে: “যখন বিয়াল্লিশ দিন পার হয়, আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠান যখন সে ভ্রূণকে আকার দান করে, এর কান, চোখ, চামড়া, মাংস এবং হাড় তৈরী করে। তারপর সে জানতে চায়, “হে রব, এটা কি পুরুষ অথবা নারী? এবং তোমাদের প্রভু স্থির করেন যা তিনি চান এবং তখন ফেরেশতারা তা লিখে নেয়।” (সহীহ মুসলিম; অধ্যায়ঃ কদর; হাদীস নংঃ ৬৩৯৩)

এই যথাযথ তথ্য বর্ণিত দিকগুলির বিকাশের সঠিক সময় জানাচ্ছে এবং ভ্রূণের লিঙ্গ ঠিক বিয়াল্লিশ দিনের পূর্বে সুনিশ্চিত ভাবে জানা সম্ভব নয়। মাত্র কয়েক দশক পূর্বেও শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কারের আগে এটা জানা সম্ভব ছিল না। শীর্ষস্থানীয় ভ্রূণতত্ত্ববিদগণের অন্যতম কিথ মুর, কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান, কুরআনের এই সমস্ত বক্তব্য ও সহীহ হাদীসের বক্তব্য সম্পর্কে বলেন, “উনিশ শতক পর্যন্ত, মানবীয় বিকাশের ধাপগুলি সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না। উনিশ শতকের শেষ দিকে বর্ণমালার প্রতীকের উপর ভিত্তি করে মানব ভ্রূণের বিকাশের বিভিন্ন ধাপ চিহ্নিত করা হয়। বিশ শতকে সংখ্যার সাহায্যে এর ২৩টি ধাপ বর্ণনা করা হয়। এই সংখ্যার সাহায্যে চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করা সহজ নয় এবং একটি ভালো পদ্ধতি হবে অঙ্গসংস্থান বিদ্যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা পদ্ধতি। সামপ্রতিককালে কুরআনের অধ্যয়নের ফলে ভ্রূণবিকাশের বিভিন্ন ধাপ চিহ্নিতকরণের আর একটি পদ্ধতি প্রকাশিত হয়েছে যা এর সহজবোধ্য আকৃতির পরিবর্তন ও নড়াচড়ার উপর ভিত্তি করে তৈরী। এখানে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আল্লাহ জিবরাইলের মাধ্যমে রাসূল (সঃ) কে জানিয়েছেন এবং তা কুরআনে লিপিবদ্ধ হয়েছে…. এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে এসব বক্তব্য নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছ থেকে মুহাম্মাদ (সঃ) এঁর কাছে এসেছে কারণ এই জ্ঞানের প্রায় সবটুকুই অবিষ্কৃত হয়েছে এর বহু শতক পরে। এটা আমার কাছে প্রমাণ করছে যে মুহাম্মাদ নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল।”

ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যান এবং ফিলাডেলফিয়ারটমাস জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল বাও ইনস্টিটিউটের পরিচালক মার্শাল জনসন বলেন, “বিজ্ঞানী হিসাবে আমি সেসব বস্তু নিয়ে কাজ করি যা আমি নির্দিষ্টভাবে দেখতে পারি। আমি ভ্রূণতত্ত্ব এবং ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বুঝতে পারি। আমি কুরআনে যে শব্দগুলি আমার কাছে অনুবাদ করে দেওয়া হয়েছে তা বুঝতে পারি। আমাকে যদি আমার আজকের জ্ঞান ও বর্ণনার যোগ্যতা সহকারে সেই যুগে স্থানান্তর করা হয়, আমি ব্যাপারগুলি যেভাবে বর্ণনা করা আছে সেভাবে বর্ণনা করতে পারব না। আমি এটা প্রত্যাখ্যানের কোন কারণ দেখি না যে মুহাম্মাদ এই তথ্য অন্য কোথাও থেকে পেয়েছেন, সুতরাং আমি এই ধারণার সাথেও সাংঘর্ষিক কিছু দেখতে পাই না যে তিনি যা বলেছেন তাতে ঐশী হস্তক্ষেপ রয়েছে।”

২) মহাকাশবিজ্ঞান:

অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম; এবং জীবন্ত সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?” [সূরা আল আম্বিয়া, ২১:৩০]

এই আয়াতটি বিশ্বের উৎপত্তির সাধারণ তত্ত্ব বর্ণনা করছে, যে সত্য আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যার সূচনার আগে আবিষ্কৃত হয়নি। এখানে যে পৃথক করার বলা হয়েছে তা বিজ্ঞানীদের কথিত “বিগ-ব্যাং” তত্ত্বের অনুরূপ। তাছাড়া, সমস্ত জীবিত প্রাণী প্রটোপ্লাজম দিয়ে তৈরী যার ৮০-৮৫% ভাগই পানি।

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আমার আদেশ পালনের জন্য ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় প্রস্তুত হও।’ তারা বলল, ‘আমরা তো অনুগত থাকতে পস্তুত আছি।” [সূরা আল ফুসসিলাত, ৪১:১১]

এখানে ধূম্রপুঞ্জ শব্দটি বিশ্বের আদিম অবস্থার সঠিক বর্ণনা দিচ্ছে, যা ছিল গরম গ্যাসের পিণ্ড যাতে বস্তুকণা দ্রুত ছোটাছুটি করছে, ধোঁয়ার মত। এ থেকে গ্রহ, নক্ষত্র ও পৃথিবী তৈরী হয়। “আমি আমার ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমিই একে সমপ্রসারিত করছি।” [সূরা আয যারিয়াত, ৫১:৪৭]

এটা একটা স্বীকৃত সত্য যে আমরা যে বিশ্বে বাস করছি তা সমপ্রসারণশীল। “আল্লাহই দিন এবং রাত তৈরী করেছেন, এবং চাঁদ ও সূর্য। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গতিতে কক্ষপথে সাঁতার কাটছে/ঘুরছে।”

নিজ গতিতে চলার জন্য যে আরবী শব্দ ব্যবহৃত হয় তা হচ্ছে সাবাহাহ্‌ (এই আয়াতে ইয়াসবিহুনা)। এটা এমন গতি নির্দেশ করছে যা বস্তুর নিজের। যদি এটা পানিতে ঘটত, তাহলে এটা হত সাঁতার কাটা; এটা সেই নড়াচড়া যা একজনের পায়ের মাধ্যমে হয়। মহাশূন্যে নড়াচড়ার সময় এটা হবে নিজের অক্ষের উপর ঘুরে যাওয়া। সূর্য নিজের কক্ষপথে পৃথিবীর চারপাশে নয়, বরং ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ঘোরে, সুতরাং এখানে কোন বৈপরীত্য নেই, কারণ কুরআন সূর্যের কক্ষপথ নির্দিষ্ট করেনি। “তুমি কি দেখ না আল্লাহ রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিবর্তন করেন?” [সূরা আল লুকমান, ৩১:২৯] “তিনি রাত্রি দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা।” [সূরা আয যুমার, ৩৯:৫]

পেঁচানো বা জড়ানো আরবী শব্দ কাওওয়াররার অনুবাদ। এর মূল অর্থ হচ্ছে মাথার চারপাশে পাগড়ী পেঁচিয়ে বাঁধা। অবিরত পেঁচানোর পদ্ধতি-যাতে এক অংশ আরেক অংশের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, কুরআনে এমনভাবে বলা হয়েছে যে মনে হয় সে সময়ে পৃথিবীর গোলাকৃতি হওয়ার ধারণার সাথে মানুষ পরিচিত ছিল, যা স্পষ্টতঃই সত্য নয়। “তিনিই সূর্যকে তেজষ্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার তিথি নির্দিষ্ট করেছেন…।” [সূরা ইউনুস, ১০:৫]

কুরআনে সূর্যকে “সিরাজ” হিসাবে বলা হয়েছে যার অর্থ হচ্ছে “মশাল” যা নিজের তাপ ও আলো উৎপন্ন করে যেখানে চন্দ্রকে “নূর” বা আলো হিসাবে বলা হয়েছে যার অর্থ অন্য উৎস থেকে নেয়া আলোর আভা।

৩) ভূতত্ত্ব:

আমি কি ভূমিকে বিছানা ও পর্বতকে কীলক সদৃশ করিনি?” [সূরা আন নাবা’, ৭৮:৬-৭]

আল্লাহই পৃথিবীতে পর্বতমালা স্থাপন করেছেন যাতে এ তোমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে।” [সূরা আল লুকমান, ৩১:১০]

সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে যে পর্বতমালার মূল ভূত্বকের ভিতরে চলে গেছে যা সাতটি টেকটোনিক প্লেট দিয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলির নড়াচড়াই ভূমিকম্পের কারণ। এটা ধারণা করা হচ্ছে যে এই মূল ও পর্বতের ওজন ভূত্বকের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪) প্রাণী ও উদ্ভিদ জগত:

কুরআনের ষষ্ঠতম পারায় বলা আছে যে মধু সংগ্রহকারী মৌমাছি হচ্ছে স্ত্রী মৌমাছি; যদিও এটা সাধারণ ধারণা যে মৌমাছিরা সৈনিক এবং তারা রাজার অধীন। কুরআনে আরো বলা আছে যে উদ্ভিদের মাঝেও স্ত্রীপুরুষ রয়েছে এবং বায়ুর সাহায্যেও উদ্ভিদের প্রজনন ঘটে থাকে। “আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু প্রেরণ করি।” [সূরা আল হিজর, ১৫:২২]

এগুলি সবই সামপ্রতিককালে আবিষ্কৃত হয়েছে।

৫) পরমাণু বিজ্ঞান:

গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (৪৬০-৩৬১ খৃ.পূ.) এই তত্ত্বের উদ্‌গাতা যে বস্তু ছোট অবিভাজ্য কণা দিয়ে তৈরী, যার নাম এটম। আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে এটম আছে, তবে তা বিভাজ্য। কুরআন বলছে: “তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে অণু-পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ কিছু যাঁর অগোচর নয়।” [সূরা সাবা, ৩৪:৩]

৬) ত্বক বিজ্ঞান:

মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারব না? বস্তুত আমি তার অঙ্গুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।” [সূরা আল ক্বিয়ামাহ, ৭৫:৩-৪]

কোন দুটি আঙ্গুলের ছাপ একরকম নয়। [সংকলক – দুইটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ এক রকম না হওয়ায়, এই বৈশিষ্ট্যকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকাশন নামে অন্যতম সিকিউরিটি অথেন্টিক্যাশেন মেথড হিসেবে বর্তমানে ব্যবহত হচ্ছে।] এই আয়াতে আমাদের পুনর্জীবিত করার আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে যা সবচেয়ে একক ও স্বতন্ত্র অঙ্গ পর্যন্ত করা হবে। “যারা আমার আয়াতকে অবিশ্বাস করে তাদের আগুনে দগ্ধ করবই। যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা আন নিসা, ৪:৫৬]

যেসব স্নায়ুপ্রান্ত বেদনা বোধ করে তা চামড়ায় রয়েছে। যখন চামড়া মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়, তখন স্নায়ুপ্রান্ত ধ্বংস হয়ে যায় ও বেদনা আর টের পাওয়া যায় না। জাহান্নামে আল্লাহ পুনরায় চামড়া সৃষ্টি করবেন যাতে তার অধিবাসীরা স্থায়ীভাবে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। “নিশ্চয়ই যাক্কুম বৃক্ষ হবে পাপীর খাদ্য; গলিত তাম্রের মত তা উদরে ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত পানির মত।’ ‘আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। তোমরা তো এ শাস্তি সম্পর্কে সন্দিহান ছিলে।” [সূরা আদ দুখান, ৪৪:৪৩-৫০]

…এবং যাদের পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়িভুড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।” [সূরা মুহাম্মাদ, ৪৭:১৫]

অন্ত্রে তাপ বহনকারী ধারক থাকে না। এটা জানা আছে যে, যদি নাড়িভুঁড়ি কেটে যায় তাহলে এর ভিতরের উপাদানসমূহ উচ্চ সংবেদনশীল পেরিটোনিয়া ক্যাভিটিতে চলে যায়, যেখানে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এটা বর্তমানের প্রচলিত জ্ঞান নয়, মুহাম্মাদের সময়ের তো নয়ই। সে যাই হোক, কুরআনের রচয়িতা এসব সত্যের সাথে সুপরিচিত!

৭) পানি চক্র:

কুরআনে সঠিকভাবে পানি চক্রের বর্ণনা দেওয়া আছে এবং ভূগর্ভের ঝরণার পানির উৎস হিসাবে বৃষ্টির পানিকে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক প্রতীয়মান হলেও গ্রীক দার্শনিকগণ এটা মনে করতেন না, তাঁরা ভাবতেন মাটির তলার ঝর্ণাধারা তৈরী হত সমুদ্রের পানির ধারা গুহায় জমে গিয়ে, যা বিরাট পাতালের সমুদ্রে গহ্বরের মাধ্যমে সরবরাহ হতো। আসলে অষ্টাদশ শতকের পূর্বে পানি চক্র সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ কুরআন এদিকে বলছে, “তুমি কি দেখনা, আল্লাহ আকাশ থেকে বারিবর্ষণ করেন, অতঃপর ভূমিতে স্রোতরূপে প্রবাহিত করেন?” [সূরা আয যুমার, ৩৯:২১]

সংক্ষিপ্ত রাখতে গিয়ে আমি শুধু কয়েকটি বক্তব্যের উল্লেখ করেছি এবং বিজ্ঞান বিষয়ক কুরআনের বক্তব্যের ও হাদীসের বর্ণনার সীমাবদ্ধ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছি। কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন ও ডেন্টিস্ট্রির এনাটমি বিভাগের প্রফেসর ও চেয়ারম্যানটি.ভি.এন পারসাদ বলেছেন, “মুহাম্মাদ একজন সাধারণ লোক ছিলেন, তিনি পড়তে জানতেন না, লিখতে পারতেন না, আসলে তিনি নিরক্ষর ছিলেন…আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করছি তা হল যে চৌদ্দশত বছর পূর্বে কিছু নিরক্ষর লোক গভীর কিছু উচ্চারণ করেছিল ও বক্তব্য দিয়েছিল যা বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক। আমি ব্যক্তিগতভাবে বুঝতে পারি না এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা কিভাবে হতে পারে, এতে অসংখ্য অত্যন্ত সঠিক ব্যাপার রয়েছে… আমার মনে কোন সংশয় নেই এই সত্য স্বীকার করতে যে কোন ঐশী প্রেরণা বা ওহী তাঁকে এই বক্তব্যগুলি দিতে নির্দেশ দিয়েছে। আমরা যেন ড. মরিস বুকাইলির কথাগুলি ভুলে না যাই যে এই সত্যগুলো “মানবীয়ভাবে ব্যাখ্যার ব্যাপারে একটি চ্যালেঞ্জ।”

এবং প্রফেসর পারসাদ এর বিবৃতি যে এটা হঠাৎ ঘটে যেতে পারে না, এখানে অসংখ্য সঠিক তথ্য রয়েছে! মুহাম্মাদের জন্য অনুমান করা এবং প্রতিটি সঠিক হওয়ার সম্ভাব্যতা আসলেই বিস্ময়কর। এ সমস্ত বিজ্ঞানীরা, যাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপরিচিত, সেই আরবদের মত যারা তাদের ভাষা পাণ্ডিত্য সহকারে আয়ত্ব করেছিল মুহাম্মাদের সময়ে, স্পষ্ট প্রমাণ চিনতে পারেন এবং কুরআনের প্রকৃতির অলৌকিকত্ব অনুধাবন করতে পারেন। “আমরা তাদেরকে আমাদের নিদর্শন দেখাবো দূর দিগন্তে এবং তাদের মধ্যে যতক্ষণ না তারা জানতে পারে যে এটাই সত্য।”

কুরআন বাহ্যিক বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং আভ্যন্তরীণের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ। অসঙ্গতি ও বৈপরীত্য রয়েছে আসলে মানুষের কাজের প্রকৃতিতে, তা তারা বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাধু অথবা সূফী যাই হোক না কেন। এটা ঐশী ওহীর জন্য সত্য হতে পারে না, যেমন কুরআন বলছে, “তারা কি সতর্কতার সাথে কুরআন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না, যদি এটা আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছ থেকে হতো, তারা এতে বহু অসামঞ্জস্য খুঁজে পেতো।

বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর – ফ্রী ডাউনলোড

তাফসীরুল উশরুল আখীর মিনাল কুরআনিল কারীম

আল-কুরআনুল কারীমের শেষ তিন পারার তাফসীর সাথে আছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আহকাম ও মাসায়েল

245

 

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ বিশুদ্ধ আকীদা নির্ভর এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই। এতে একজন মুসলিম দৈনন্দিন জীবনে কুরআন, তাফসীর, আকীদাহ, মাসআলা-মাসায়েল ও ফাযায়েল সংক্রান্ত যে সকল বিষয়াদির প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলো খুব সুন্দরভাবে আলোচিত হয়েছে। বইটি দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে স্থান পেয়েছে সূরা ফাতিহা সহ আল কুরআনুল কারীমের শেষ তিন পারা তথা সূরা মুজাদালা (৫৮ নং সূরা) থেকে সূরা নাস পর্যন্ত মোট ৪৭ টি সূরার সরল বাংলা অনুবাদ।
আর দ্বিতীয় ভাগে একজন মুসলিমের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিধি-বিধান আলোচিত হয়েছে। যেমন:

  • তাজবীদ তথা বিশুদ্ধ রূপে কুরআন পাঠের নিয়ম-কানুন।
  • আকীদা বিষয়ক অতি গুরুত্বপূর্ণ ৬২টি প্রশ্নোত্তর।
  • তাওহীদ বিষয়ক একটি অন্তরঙ্গ সংলাপ।
  • ’লা ইলাহা ইল্লালাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর সারগর্ভ ব্যাখ্যা।
  • পবিত্রতা তথা পানির বিধান, ওযু, গোসল, তায়াম্মুম, মোজার উপর মাসেহ, মহিলাদের হায়েজ, নেফাস, রক্তপ্রদর রোগ ইত্যাদি মাসায়েল।
  • বিভিন্ন প্রকার নামাযের বিস্তারিত বিধি-বিধান।
  • যাকাতের বিস্তারিত আলোচনা।
  • রোযার মাসায়েল।
  • হজ্জ ও উমরার প্রয়োজনীয় হুকুম-আহকাম।
  • বিবাহ, তালাক, ইদ্দত ইত্যাদি।
  • কসম ও কাফফারা ইত্যাদি।
  • মান্নত, যাদু-টোনা, ঝাড়-ফুঁক।
  • জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দুয়া ও জিকির (অর্থ সহ)।
  • ৬৯টি নিষিদ্ধ বা হারাম বিষয়ের আলোচনা।
  • আখেরাতের বিভিন্ন ধাপের একটি বিবরণ।
  • সর্বোপরি সচিত্র সহ ওযু ও নামায শিক্ষা।

 

মোটকথা, বইটি প্রতিটি মুসলমানের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ। বইটি আরবী ভাষায় প্রস্তুত করেছেন একদল অভিজ্ঞ আলেম এবং গবেষক। বাংলায় অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট দাঈ ও গবেষক শাইখ মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী। তাফসীরটি বাংলা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিশাল প্রকল্পটি পরিচালনা করছে: সউদী আরবের রিয়াদে অবস্থিত ওল্ড সানাইয়া দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৭৯

 

বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর – QA Server
বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর – QA Server

বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর – Mediafire
বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর – Mediafire

বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর – 4shared
বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর – 4shared

বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর English Version
বই – তাফসীরুল উশরুল আখীর English Version

Courtesy: www.Tafseer.info

 

সলাতে কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর গুরুত্ব

লেখকঃ শাহাদাত হুসাইন

সলাত পৃথিবীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। যেকোন অবস্থায় এটি ফারয। অসুস্থ হলেও এটি আদায় করতে হবে। এর কোন কাযা বা কাফফারা নেই। এর কাফফারা হলো যখন স্মরণ হবে তখনই পড়ে নিবে। বর্তমানে সলাত আদায়কারী যেমন কমে গেছে। তেমনি সলাত সঠিক ভাবে আদায় কারীও কমে গেছে। যেমন রুকু সাজদাহতে এখন আর পিঠ সোজা রাখা হচ্ছে না। অথছ হাদীসে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ এসেছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ,দারেমী, মিশকাত হা/৮১৮)

আত-তাহরীকে শ্রদ্ধেয় মুজাফফর বিন মুহসীন জাল হাদীসের কবলে সলাত নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশ করছেন। কিন্ত আমি লক্ষ্য করেছি যে, এমন কিছু নিয়ম আমাদের সমাজে মাজহাবের দোহাই দিয়ে রয়েছে যেগুলো কোন যইফ হাদীস কেন জাল হাদীসেও নেই। শুধুমাত্র অজ্ঞতা, অন্য মতের বিরোধিতা করেই এগুলো না করাই সুন্নাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এগুলোর বিপরীতে সহীহ হাদীস আছে যেগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ের। মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীস অমান্য করা কুফরির শামিল। (হাদীস চর্চ্চায় মহিলা সাহাবীদের অবদান, ড: মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ, পৃষ্ঠা ৬৭). যেমন সলাতে কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানো।  এ দুটি বিষয় নিয়েই আমি আজ আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

সলাত এমন একটি ইবাদাত যা দিনে পাঁচবার আমাদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ দেয়। এটি সৌহার্দ্য সৃষ্টি করে, একে অন্যের কাছাকাছি আনে। খোঁজখবর জানা যায়। যেমন আমি আগে যে মাসজিদে সলাত আদায় করতাম, একজন নিয়মিত মুসুল্লি ছিলেন। আমি লক্ষ্য করলাম তিনদিন হলো তবুও তাঁকে পেলাম না মনটা খচখচ করছিলো। পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম তিনি বাড়ী বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। তেমনি যখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো এবং আমি মেস ছেড়ে বাড়ি গিয়েছিলাম পরে আসার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি এতদিন বাড়িতে ছিলাম নাকি? কেমন দিনকাল গেলো? সত্যি বলতে কি তাঁর সাথে আমার আন্তরিকতা গড়ে উঠেছিলো। রাজশাহীতে এসে স্থানীয়দের মধ্যে যাদের সাথে আমার হৃদতা বা আন্তরিকত গড়ে উঠেছে তাদের সবার সাথে আমার যোগাযোগ শুরু হয়েছিলো মাসজিদে।

আমি মাদ্রাসায় পড়া ছাত্র না। যখন ইসলাম শিক্ষা পড়তাম তখন একটি প্রশ্ন বারবারই আসতো সেটা হলো, নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনা কর। এর উত্তর যা নোটে ও গাইডে পাওয়া যেত তাতে পয়েন্ট আকারে সামাজিক গুরুত্ব লেখা থাকতো । তাতে উল্লেখ থাকতো, সলাত সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে থাকে। সলাতের মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এখানে কোন ধনী গরীবের ব্যবধান থাকে না। কিন্ত সলাত আদায় করতে গিয়ে দেখেছি যে, ধনী গরীব এর ব্যবধান না থাকলেও মতের ব্যবধান আছেই।  সলাত আদায় করতে গিয়ে কাতার সোজা করা হয় না। পায়ের সাথে পা মিলালেই পা সটান করে সরিয়ে নেয়। এটা কিসের ইঙ্গিত! এটা কি হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্যতার ইঙ্গিত দেয় না। এখানে ব্যবধান কি? না ধর্মের না ঐশ্বর্যতার না অন্য কিছুর। কিছুই না এখানে বিরোধিতা অন্য মতকে বিরোধিতার।

সহীহ হাদীসে কাতার সোজা করার ও পায়ের সাথে পা মিলানোর কথা বলা আছে। কিন্ত তা আমল করা হচ্ছে না। এটার বিরোধিতা করা হচ্ছে। প্রধানত হানাফী মাযহাবের মাসজিদগুলোতে এটা বেশী করা হচ্ছে। এটার প্রভাব এমন পড়েছে যে আহলে হাদীসের মাসজিদগুলোতে এমনকি আহলে হাদীসের সন্তানগুলোও আজ পায়ের সাথে পা মিলানো ভুলতে বসেছে। এটা না করানোটাই তাদের কাছে সুন্নাহ হয়েগেছে নাউযুবিল্লাহ।

আমি হানাফী মাযহাবের মুখতাসারুল কুদরী, হিদায়া পড়েছি কোথাও পায়নি যে, সলাতের সময় পায়ের সাথে পা মিলানো যাবে না। তবে এসব কিতাবে সলাত কাতার সোজা করার গুরুত্ব উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কাতার সোজা কিভাবে হবে তা বলা নেই। এর অর্থ হলো যে, সলাতে কাতার সোজা তখনই হবে যখন পায়ের সাথে মিলানো হবে। আল্লাহর  নাবী (সা) বলেছেন, সলাতে কাতার সোজা করতে হবে । কিন্তু কিভাবে করতে হবে বলেন নি, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। কিভাবে কাতার সোজা করতে হবে তাও বলেছেন, তিনি বলেছেন কাঁধে কাঁধ পায়ের সাথে পা মিলানো’র কথা বলেছেন। অথচ এ হাদীসের উপর আমল নেই। মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে পড়ানো মিশকাতের কাতার সোজা করার অধ্যায়-এ হাদীসগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত ব্যাখ্যা করার সময় একবারও পায়ের সাথে পা মিলানোর ব্যাখ্যা করেননি। একটা হাদীসও নেই তা জাল,যইফ হোক যে পায়ের সাথে পা মিলানো যাবে না। এটা কিভাবে আসলো ? এটা এসেছে আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করে। আহলে হাদীসরা পায়ের সাথে পা মিলায়। অতএব আমরা তো আহলে হাদীস না, আমরা হানাফী অতএব আমাদের জন্য পা ফাঁক করে দাড়ানো ও পা না মিলানোই সুন্নাত। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহর রাসূল (সা) কি আমাদের আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করতে বলেছেন নাকি ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের বিরোধিতা করতে বলেছেন। আহলে হাদীসদের বিরোধিতা করতে গিয়ে আপনার হিন্দু ধর্মের জাতপাতের ব্যবধানকে নিয়ে আসছেন। যেখানে এক জাতের ব্যক্তির অন্য জাতকে স্পর্শ করাও পাপ। একটু ভাববেন কি, আমরা যারা সলাতে পা ফাঁক করে দাড়াই এবং কেউ পা মিলালে সটান করে পা টান দিই। তাদের এই আচরণের সাথে হিন্দুদের আচরণের কি মিল নেই ? নাউযুবিল্লাহ আমরা সহীহ হাদীসের বিরোধিতা করতে গিয়ে বিধর্মীদের অনুসরণ করছি। ধিক্‌ ধিক্।

পায়ের সাথে পা না মিলানোর যুক্তি হিসেবে বলে থাকে যে হাদীসে আছে দুপায়ের ব্যবধানে শুধুমাত্র চার আঙ্গুল ব্যবধান রাখতে হবে। আমি জানতে চাই কোন হাদীসে আছে? এমন কথা যে দু পায়ের ব্যবধান চার আঙ্গুল রাখতে হবে। প্রকৃত পক্ষে কাতারে দাড়াতে হবে স্বাভাবিক ভাবে। সুনানে আবু দাউদে উল্লেখ রয়েছে, কেউ সলাত জুতা জোড়া উভয় পায়ের মাঝখানে রাখার কথা রয়েছে। একজোড়া জুতা রাখলে কি চার আঙ্গুল ব্যবধান হবে কি? এই চার আঙ্গুল ব্যবধান রাখার কথা বেশী বলে থাকে ইলিয়াসী তাবলীগীরা। এরাই আবার মজলিসে বসে বয়ান করলে আর হুয়াহু জিকর করলে বলে ফাকা হয়ে বসবেন না। মাঝে শয়তান প্রবেশ করবে। অথচ এই শয়তান প্রবেশ করার কথা তাদের সলাতের ক্ষেত্রে মনে থাকে না। অথচ হাদীসটি মজলিসের ক্ষেত্রে যতটা না উল্লেখ হয়েছে সলাতের ক্ষেত্রে অনেক বার  উল্লেখিত হয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে আমি এ সামান্য (?) ব্যাপার নিয়ে এত কথা লিখছি কেন। ব্যাপারটি সামান্য যে নয় নিম্নোক্ত হাদীসগুলো পড়লেই জানা যাবে। এখন আমি কাতার সোজা করা ও পায়ের সাথে পা মিলানোর হাদীসগুলো উল্লেখ করছি।

মিশকাত শরীফের বঙ্গানুবাদ থেকেই হাদীসগুলোর উদ্ধৃতি দিচ্ছি। মিশকাতুল মাসাবীহ’র “কাতার সোজা করা” নামক অধ্যায়ে যেসব হাদীস উল্লেখিত রয়েছে তা হলো-

হযরত নোমান ইবনে বশীর(রা:) হইতে বর্ণিত।তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সা:)আমাদের সারিসমূহ সোজা করতেন এমনভাবে যে উহার সহিত তিনি তীর সোজা করতেছেন।তিনি এরূপ করতেন যতক্ষণ না তিনি বুঝতে পারতেন যে আমরা বিষয়টি তাহার নিকট হতে পুরাপুরি বুঝতে পেরেছি।একদা তিনি ঘর হতে বাহির এয় আসলেন এবং নামাযে দাড়ালেন, তাকবীরে তাহরীমা বলিলেন, এমন সময় দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি সারি হতে সামনে সিনা বাড়িয়ে দাড়িয়েছে।তখন রাসূল (ষঅ:) বলিলেন, আল্লাহর বান্দাগণ!হয় তোমার তোমাদের সারি সোজা করে দাড়াবে নতুবা আল্লাহ তোমার মুখমন্ডলসমূহে অর্থ্যাত অন্তরসমূহে পার্থক্য করে দিবেন।” [মুসলিম (মিশকাত ২য় খন্ড-হাদীস নং-১০১৭,মাদ্রাসায় আলিম ক্লাসে পাঠ্য,মিশকাত শরীফ ৩য় খন্ড-এমদাদিয়া লাইব্রেরী,হাদীস নং-১০১৭]

নুমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃস্টি করে দিবেন।” [বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হা/৬৬২, প্রথম খন্ড]

দেখুন কতবড় হাদীস কি বড় কথা । মাঝে মাঝে এমন হাদীস এসে যায় যা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে যাই।

আরো বর্ণিত আছে, হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, “একদিন নামাযের ইকামত বলা হলো তখন, রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন  এবং বললেন, তোমরা কাতার সোজা কর এবং পরষ্পর মিলিত হয়ে দাড়াও। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে পিছনের দিকেও দেখতে পাই।” [বুখারী (মিশকাত হা/১০১৮)]

বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে,রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের ছফসমূহকেপূর্ণ কর।নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে আমার পিছন দিক হতেও দেখতে পাই।” [মিশকাত হা/১০১৮ শেষাংশ]

হযরত আনাস (রা:) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “তোমরা নামাযের সারিসমূহকে সোজা করিবে।কেননা সারি সোজা করা নামায প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীভুত।–বুখারী ও মুসলিম।আর মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, ছফ সোজা করা বা কাতার সোজা করা নামায পূর্ণ করারই অন্যতম কাজ।” [মিশকাত হা/১০১৯]

হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা)নামাযে (দাড়ালে) আমাদের বাহুমূলসমূহে হাত স্পর্শ করে পরষ্পর মিলিয়ে দিতেন এবং বলতেন তোমরা সোজা হয়ে দাড়াও, বিভিন্নরুপে দাড়িও না, তা হলে তোমাদের অন্তরসমূহও প্রভেদ হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা প্রবীণ ও বিজ্ঞ তারাই যেন আমার কাছাকাছি দাড়ায়।অত:পর যাহারা বয়স ও বিজ্ঞতায় তাদের কাছাকাছি তারা দাড়ায় অনুরুপভাবে বয়স ও জ্ঞান কম অনুসারে তার পরবর্তীগণ দাড়ায়।” [আবু মাসউদ (দু:খ করে) বলেন, আজ তোমরা এই ব্যাপারে অত্যন্ত বিভিন্নমুখী। (মুসলিম,মিশকাত হা/১০১৯)।]

আমি কেন কথাগুলোর গুরুত্ব দিয়েছি তাদের জওয়াব এই হাদীসটি।

হযরত আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। “তিনি বলেন, হযরত তোমরা সারিসমূহকে পরষ্পর মিশে দাড়াও।সারিগুলোকে কাছাকাছি রাখ এবং তোমাদের ঘাড়গুলিকে সমভাবে সোজা রাখ। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তার কসম, নিশ্চয় আমি কালো ভেড়ার বাচ্চার মত শয়তানকে দেখি,যে সারির ফাকে প্রবেশ করে।” [আবু দাউদ।(মিশকাত হা/১০২৫)।]

হযরত আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা প্রথমে সম্মুখের সারি পূর্ণ করবে। অত:পর তার সংলগ্ন পিছনের সারিকে পূর্ণ করবে। যদি কম্‌তি-ঘাটতি কিছু থাকে, তা থাকবে  সর্বশেষ সারিতে।

অথচ আমাদের সমাজে দেখা যায় আগের সারি পূর্ণই হয় নি। অথচ পরের কাতার অর্ধেক হয়ে গেছে। কিভাবে আমরা সুন্নাতে বরখেলাপ করছি!

হযরত নোমান ইবনে বাশীর (রাযি) হতে বর্ণিত। “যখন আমরা সলাতের উদ্দেশ্যে দাড়াতাম, রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের সারি সোজা করতেন। আর যখন আমরা সোজা হয়ে  যেতাম তখন তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলতেন।” [আবু দাউদ, মিশকাত হা/১০২৯।]

এই হাদীসেরও বিরোধিতা আমাদের সমাজে প্রচলিত। আমাদের ইমাম সাহেবরা এটা বিরোধিতা করে থাকেন। তারা কাতার সোজা করতে বলেন না। অথচ এটা সুন্নাত। কেউ কেউ কাতার সোজা করতে বলেন। আমি জিজ্ঞেস করি, সালাতে কি কাতার সোজা হবে আকাশ থেকে? নাকি পায়ের সাথে পা মিলাতে।

এজন্যই শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) তাঁর “সিফাতু সলাতিন নাবী” বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে সলাতে প্রচলিত ভুল গুলো উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সলাতের ইকামতের পর কাতার সোজা করার কথা না বলা একটি ভুল। কারণ বুখারী সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থগুলোতে এটার উপর আমল করার কথা রয়েছে। বুখারী শরীফে রয়েছে। সলাতের ইকামত বলার পর রাসূলুল্লাহ (সা) বলতেন, কাতার সোজা কর ও নিরবচ্ছিন্নভাবে দাড়াও। [রাসুলুল্লাহ এর নামায, অনুবাদ-এ এন এম সিরাজুল ইসলাম,বিশ্ব প্রকাশনী, পৃষ্ঠা-১৬৫-১৬৭]

অথচ আমাদের ইমাম সাহেবরা এই হাদীসের উপর কোন আমল করছেন না। তাই ইকামত শেষে কাতার সোজা করার কথা  ইমামকে বলতেই হবে বলে শায়খ আলবানী বলেছেন।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে, হযরত আবু উমামা বাহেলী (রাযি) হতে বর্ণিথ। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের) প্রথম সারির উপরে সলাত প্রেরণ করেন অর্থ্যাত অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের ) প্রথম সারির উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? রাসূলুল্লাহ (সা) আবারও বললেন,নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ও তার ফেরেশতাগণ (সলাতের ) প্রথম সারির উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সাহাবীগণ পুন: জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা)! দ্বিতীয় সারির উপরেও ? রাসূল বললেন, হ্যাঁ, দ্বিতীয় সারির উপরেও। অত:পর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমরা তোমাদের সারি সোজা করবে, তোমাদের বাহুমূলসমূহকে পরষ্পর সমান রাখবে এবং তোমাদের ভাইদের হাতে বাহুমূলকে নরম রাখবে। (অর্থ্যাত কেউ ধরে সোজা করতে চাইলে তাহার আনুগত্য করবে) এবং তোমাদের মধ্যকার ফাকঁসমূহকে ভরে ফেলবে। কেননা, শয়তান তোমাদের মধ্যে হাযফের মত ঢুকে পড়ে। হায্‌ফ হলো ছোট কাল ভেড়ার বাচ্চা।” [মিশকাত হা/১০৩৩]

আরও হাদীসে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা সারিসমূহকে পরষ্পরের সমান কর, সারির মধ্যে ফাঁকা জায়গা ভরে ফেল, তোমাদের ভাইদের হাত নরম থাকবে। এবং শয়তানের জন্য মাঝখানে ফাকা স্থান রাখবেন না। যেই ব্যক্তি  সারিকে মিলান, আল্লাহ তাআলাও তাহাকে (অনুগ্রহের সাথে) মিলান। আর যেই ব্যক্তি সারিকে বিচ্ছিন্ন করে, আল্লাহ তাআলাও তাকে ( নিজ অনুগ্রহ হতে) বিচ্ছিন্ন করেন।–আবু দাউদ, নাসায়ীতেও অনুরূপ এসেছে। (মিশকাত হা/১০৩৪ )।

আবুল ক্বাসিম আল-জাদালী সুত্রে বর্ণিত।তিনি বলেন, আমি নু’মান ইবনে বাশীর (রাযি) বলতে শুনেছি, “রাসূলুল্লাহ (সা) সমবেত লোকদেরকে দিকে ঘুরে দাড়িয়ে তিনবার বলিলেন: তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর।আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহকে সোজা করে দাড়াও। অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন। বর্ণনাকারী নুমান (রাযি) বলেন, অত:পর আমি এক লোককে দেখলাম, সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ, তার হাটুর সাতে নিজের হাটু এবং তার গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালি মিলিয়ে দাড়াচ্ছে।” [আবু দাউদ হা/৬৬২]

দেখুন সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ এ ব্যাপারে কত সতর্ক ছিলেন। বুখারী শরীফে পায়ের সাথে পা, কাধেঁর সাথে কাঁধ এবং গিটের সাথে গিটের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

আবু দাউদে কাতার সোজা করার কথা বলা হয়েছে তীরের মতো করে। [ আবু দাউদ হা/৬৬৩]

কাতার সোজা সম্পর্কে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস: আল-বারাআ ইবনে আযিব (রাযি) সূত্রে বর্ণিত। “তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কাতারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আমাদের বুক ও কাঁধ সোজা করে দিতেন।, আর বলতেন: তোমরা কাতারে বাঁকা হয়ে দাড়িও না। অন্যথায় তোমাদের অন্তরে বৈপরিত্য সৃষ্টি হবে। তিনি আরো বলতেন, নিশ্চয় প্রথম কাতারসমূহের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতাগণ দুআ করেন।” [আবু দাউদ হা/৬৬৫]

এ রকম অনেক হাদীস রয়েছে যা উল্লেখ করলে কলেবরই বৃদ্ধি হবে। এসব হাদীস থেকে আমাদের শিক্ষা:

  •  সলাতে ধনী গরীবের বা অন্য কোন মতের পার্থক্যে কোন বালাই নেই।
  •  সলাতে কাতার সোজা করতে হবে কেননা কাতার সলাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত।
  •  সলাতে কাধেঁ কাধঁ, পায়ের সাথে পা মিলাতে হবে।
  •  যারা মিলিয়ে দাড়ায় আল্লাহ তাদের উপর রহমত প্রদর্শন করেন।
  •  যারা মিলায় না তাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ হতে বিচ্ছিন্ন করেন।
  •  ঈমাম হিসেবে সলাত আদায় করলে কাতার সোজা করতে বলা ইমামের কর্তব্য ও এটা রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাত।
  •  সলাতে ফাঁক হয়ে দাড়ালে শয়তান ফাক জায়গায় বসে।
  •  কেউ কাতার সোজা করতে চাইলে তাকে সহযোগীতা করা অবশ্যই কর্তব্য।
  •  কাতার সোজা করা সলাতের সৌন্দর্য।

আল্লাহ আমাদের  কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর আমল করার তওফিক দিন।

বই – কতিপয় হারাম বস্তু যা অনেকে নগণ্য ভাবে, তা থেকে সতর্কতা অপরিহার্য

246

সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ সংক্ষিপ্ত এই পরিসরে এমন কতিপয় হারাম জিনিস লক্ষ্য করবেন, যার হারাম হওয়ার কথা শরীয়তে প্রমাণিত এবং কিতাব এবং সুন্নাহ থেকে এর হারাম হওয়ার  প্রমানে দলীলও বিদ্যমান পাবেন। এগুলো তুলে ধরার পিছনে লেখকের লক্ষ্য হল, এর হারাম হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে মুসলিম উম্মাহকে জানিয়ে দেওয়া এবং এ থেকে বাঁচতে নসীহত করা।

PDF ফাইল ওপেন করার জন্য ফ্রি Software/Application

Android – ezPDF Reader  |  PlayStore | Adobe Reader – PlayStore

Windows 7/8/10 – Adobe Reader

কতিপয় হারাম বস্তু যা অনেকে নগণ্য ভাবে – QA Server
কতিপয় হারাম বস্তু যা অনেকে নগণ্য ভাবে – QA Server

কতিপয় হারাম বস্তু যা অনেকে নগণ্য ভাবে – Mediafire
কতিপয় হারাম বস্তু যা অনেকে নগণ্য ভাবে – Mediafire

কুর’আন কিভাবে পড়বো ও বুঝবো – ৮

মূলঃ মেরিনার

[মূল লেখা: Jamaal al-Din M. Zarabozo-র]

…………..পূর্বে প্রকাশিত লেখার ধারাবাহিকতায়:

যারা কুর’আন জানতেন এবং কুর’আনকে জীবনে ধারণ করেছিলেন, কুর’আন সম্বন্ধে তাঁদের বক্তব্য

কুর’আন সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত ধারণা লাভ করতে, এরপর তাঁদের কাছে যাওয়া উচিত যাঁরা কুর’আনকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং এর পথনির্দেশক আলোর মাঝে জীবন যাপন করেছিলেন। এই শ্রেণীর শীর্ষে থাকবেন রাসূল(সা.)-এঁর সাহাবীগণ – যাঁরা তাদের কুর’আন শিক্ষার সিংহভাগ সরাসরি রাসূল (সা.)-এঁর কাছ থেকে লাভ করেছিলেন। পবিত্র কুর’আন বলতে আসলে কি বোঝায়, তার সবচেয়ে সুন্দর ও যথার্থ বর্ণনার একটি এসেছে চতুর্থ খলীফা হযরত আলী বিন আবু তালিবের (রা.) কাছ থেকে। আলী (রা.) একদা বলেছিলেন :
“আল্লাহর কিতাবের সাথে লেগে থাকো, যা পূর্ববর্তীদের ও ভবিষ্যতে যারা আসবে তাদের কথা বলে এবং স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ভাষায় ঐ সমস্ত বিষয় সম্বন্ধে সত্য কথা বলে, যা নিয়ে তোমরা ভিন্নমত পোষণ কর। যে কেউ অহমিকাবশত এর অবহেলা করলো, আল্লাহ্ তাকে লাঞ্ছিত করবেন। আর যে কেউ অন্যত্র দিক নির্দেশনা খুঁজে বেড়ালো, আল্লাহ্ তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এটা হচ্ছে আল্লাহর সাথের যোগসূত্র, একমাত্র জ্ঞানগর্ভ বাণী এবং একমাত্র সঠিক পথ – যা কখনোই দুষ্ট চিত্ত দ্বারা বিকৃত হবে না অথবা দুষ্ট জিহ্বা দ্বারা পরিবর্তিত হবে না। এর রহস্য কখনোই অনাবৃত হবে না অথবা জ্ঞানীগুণীগণ এ থেকে জ্ঞানলাভ করে পরিতৃপ্ত হবে না। যে কেউ এর অনুযায়ী কথা বলে, সে সত্য কথা বললো ; যে কেউ এর অনুযায়ী কাজ করলো, সে পুরস্কৃত হবে ; যে এর দ্বারা শাসন করে, সে সুবিচার করলো ; এবং যে এর দিকে অন্যকে আহবান করে, সে সরল পথ দেখালো।” [আলবানীর মতে বক্তব্যটি আলী বিন আবু তালিবের (রাঃ)]

রাসূল (সা.)-এঁর সাহাবী এবং কুর’আন বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) একদা বলেন, “কুর’আন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা ছাড়া কাউকে তার নিজের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা উচিত নয়। কেউ যদি কুর’আনকে ভালবাসে, তবে সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে।” অপর সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, “কেউ যখন কুর’আন পড়ে, তখন ব্যাপারটা অনেকটা একরম যেন তার উপর নবুওয়্যত নাযিল হচ্ছে, কেবল এটুকু ছাড়া যে তার কাছে কোন ওহী আসছে না। আর কেউ যখন কুর’আন পড়ে এবং বিশ্বাস করে যে তার কাছে যা রয়েছে তার চেয়ে ভাল কিছু অন্যের কাছে রয়েছে, তখন সে এমন কিছুকে মাহাত্ম্য দান করলো যেটাকে আল্লাহ্ ক্ষুদ্রতা দান করেছেন এবং এমন কিছুকে সে তুচ্ছ জ্ঞান করলো যাকে আল্লাহ্ মর্যাদা দিয়েছেন।”(আবু ইসহাক আল হুয়াইনি)

সহীহ বুখারী এবং মুসলিমে যেমন বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবী, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন যেন তিনি লোকজনকে আল্লাহর কিতাব শিক্ষা দিতে পারেন। সেই ইবনে আব্বাস (রা.) পবিত্র কুর’আন সম্বন্ধে বলেছেন:
“ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত এবং তিনি যে তোমাদের কুর’আনের জনগোষ্ঠী বানিয়েছেন, তা হচ্ছে তোমাদের প্রতি তাঁর করুণা।”

বাস্তবিকই, আর-রাহমান নামক সূরা, যেখানে আল্লাহ্ মানুষকে দান করা তাঁর বহু নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন, সেই সূরার শুরুতে আল্লাহ্ বলেছেন :

“পরম দয়ালু আল্লাহ্(হে মানব তোমাদের) কুর’আন শিক্ষা দিয়েছেন (করুণাবশত)। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রাহমান, ৫৫:১-৩)

এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ্ তাঁর দয়ার বশবর্তী হয়ে করা কাজ হিসেবে মানবতার সৃষ্টির আগে, মানুষকে কুর’আনের শিক্ষা দেওয়ার কাজকে স্থান দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কোন কোন জ্ঞানীজনেরা বলে থাকেন যে, উপরোক্ত আয়াতে এই ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহর কুর’আন শিক্ষাদানের কাজ, তাঁর মানবকুল সৃষ্টির কাজের চেয়ে অধিকতর বড় দয়ার নিদর্শন। এই তাফসীর বা ব্যাখ্যা, উপরে উদ্ধৃত কুর’আন সম্বন্ধে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) উক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

উসমান ইবনে আফফান (রা.) এবং হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) দুজনেই বলে গেছেন :
“হৃদয় যখন পবিত্র হয়, তখন তা কুর’আন পড়তে গিয়ে তৃপ্তি লাভ করে ক্ষান্ত হতে পারে না।(অর্থাৎ সে আরো বেশী বেশী করে কুর’আন পড়তে চাইবে)” সুফিয়ান আস-সাওরী(রহ.), যিনি রাসূলের (সা.) সাহাবীদের শিষ্য ছিলেন – তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তিনি জিহাদ অথবা কুর’আন পড়া – কোনটিকে অগ্রাধিকার দেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে, তিনি কুর’আন পড়াকে অগ্রাধিকার দেন এবং তিনি তাঁর পছন্দের দলিল হিসেবে নিম্নলিখিত হাদীসটির উল্লেখ করেন যা আমরা আগেও উদ্ধৃত করেছি :
“তোমাদের ভিতর সেই শ্রেষ্ঠ যে কুর’আন শিক্ষা করে ও অন্যদের তা শিক্ষা দেয়।”(বুখারী)

এ ব্যাপারে সাইয়্যিদ সাঈদ আবদুল গণি, সুফিয়ানের দৃষ্টিভঙ্গী সমর্থন করে বলেন :
“সুফিয়ান আস-সাওরী যে জিহাদের উপর কুর’আনের তিলাওয়াতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কেননা এমন বহু মানুষ রয়েছে যারা জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারে, জিহাদে অংশগ্রহণ করার মত প্রয়োজনীয় গুণাবলী মুসলিম উম্মার অনেকের মাঝেই বিদ্যমান। কিন্তু যারা চমৎকার কুর’আন তিলাওয়াত করেন, যারা কুর’আনিক আইনের জ্ঞান রাখেন এবং যারা অন্য মুসলিমদের কুর’আন শিক্ষা দিতে পারেন – এমন ব্যক্তির সংখ্যা কম। সুতরাং তারা পিছনে থেকে মুসলিমদের আল্লাহর কিতাবের শিক্ষা দেবেন – এই ব্যাপারটা তাদের জিহাদে অংশগ্রহণের চেয়ে নিঃসন্দেহে শ্রেয়। বিশেষত যে ক্ষেত্রে জিহাদে যাওয়াটা সম্প্রদায়ভিত্তিক দায়িত্ব (ফরযে কিফায়া) এবং অন্যেরা সে দায়িত্ব পালন করছেন – সে ক্ষেত্রে কুর’আন শেখা ও অন্য মুসলিমকে তা শিক্ষা দেওয়ার কাজটাই এক ধরনের জিহাদ।”

(চলবে…..ইনশা’আল্লাহ্!)

কুর’আন কিভাবে পড়বো ও বুঝবো – ৭

মূলঃ মেরিনার

[মূল লেখা: Jamaal al-Din M. Zarabozo-র]

…………..পূর্বে প্রকাশিত লেখার ধারাবাহিকতায়:

কুর’আন সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহর (সা.) বক্তব্য

রাসূল (সা.) – যাঁর কাছে কুর’আনের বাণী সরাসরি নাযিল হয় এবং যিনি সেই অনুযায়ী তাঁর জীবন যাপন করে গেছেন – তিনিও আমাদের কুর’আনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলে গেছেন। নীচে, আমরা তাই তাঁর সেসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দৃষ্টি-খুলে-দেয়া বক্তব্যের একটা ক্ষুদ্র অংশ আপনাদের/পাঠকের অবগতির জন্য তুলে দিচ্ছি।

রাসূল (সা.) এ ব্যাপারটা স্পষ্ট করে গেছেন যে, এই কুর’আন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিরাট আশীর্বাদ ও অলৌকিক নিদর্শন। নিম্নলিখিত হাদীসে, রাসূল (সা.) পূর্ববর্তী নবীদের আল্লাহর তরফ থেকে দেয়া অলৌকিক নিদর্শনসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছেন। অন্যান্য নবীদের দ্বারা প্রদর্শিত অলৌকিক ব্যাপারসমূহ যদিও নিঃসন্দেহে মর্যাদাপূর্ণ ছিল, তবুও সেগুলোর সঙ্গে রাসূল (সা.)-এঁর সাথে সর্বদা বিরাজমান এই অলৌকিক নিদর্শনের কোন তুলনা হতে পারে না – এমনকি মূসা (আ.)-কে যে লাঠি দেয়া হয়েছিল – অথবা ঈসা (আ.)-কে মৃতকে জীবিত করার বা অন্ধকে দৃষ্টিদানের যে অলৌকিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল – সেগুলোকেও, কুর’আনের আঙ্গিকে নবী মুহাম্মাদ (সা.) যা লাভ করেছেন, তার সাথে তুলনা করা যায় না। আর এ জন্যই কিয়ামতের দিন, নবীদের মাঝে তাঁর নিজের অনুসারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হবে, এ ধরনের আশা করার পেছনে রাসূল (সা.)-এঁর যথাযথ কারণ ছিল। রাসূল (সা) বলেন :
“নবীদের মাঝে এমন কেউ ছিলেন না যাঁকে এমন কিছু না দেয়া হয়েছে, যা দেখে লোকে তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে। কিন্তু আমাকে কেবল এক ওহী দান করা হয়েছে, যা আল্লাহ্ আমার কাছে প্রেরণ করেছেন। তাই আমি আশা করি পুনরুত্থান দিবসে অন্য নবীদের চেয়ে আমার অনুসারীদের সংখ্যা বেশি হবে।” (বুখারী)

আল-কুর’আন অর্থাৎ আল্লাহর কথা ও বাণীর এই সংকলনের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে খানিকটা আলোকপাত করে, আরেকটি হাদীস রয়েছে যেখানে রাসূল (সা.) বলেন :
“সকল বাণীর উপর আল্লাহর বাণীর শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে তাঁর সৃষ্টির উপর আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের মতই ।”
(আত-তিরমিযী, আদ-দারিমী)

কেউ যখন এরকম করে কুর’আনের শ্রেষ্ঠত্বের প্রকৃতি অনুধাবন করতে পারবে, তখন সে নিশ্চয়ই তার সময়কে এই বাণী পড়ার কাজে নিয়োগ করতে পারবে। এবং একে অবজ্ঞা করতে পারবে না অথবা, দিক নির্দেশনার জন্য অন্য কোন উৎসের দিকে ফিরে তাকানোরও প্রয়োজন হবে না তার । রাসূল (সা.) কুর’আন সম্বন্ধে আরো বলেছেন :
“তোমাদের জন্য সুসংবাদ! নিশ্চয়ই এই কুর’আনের এক প্রান্ত আল্লাহর হাতে রয়েছে এবং অপর প্রান্ত তোমাদের হাতে। এর সাথে লেগে থাক, তাহলে তোমরা কখনো ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে না এবং তার পরে তোমরা কখনো বিপথগামীও হবে না।” (আত-তাবারানী – আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ)

অপর একটি হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন :
“হে লোকসকল, নিশ্চিতই আমি কেবলি একজন মানুষ এবং অচিরেই আমার প্রভুর কাছ থেকে একজন বার্তাবাহক আমার কাছে আসতে পারেন এবং আমি তার ডাকে সাড়া দেব (অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করবো)। আমি তোমাদের জন্য দুটি গুরুভার বস্তু রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। যার মাঝে রয়েছে দিক নির্দেশনা ও আলো। যে এর সাথে লেগে থাকবে এবং এর অনুসরণ করবে সে সঠিক পথের উপর থাকবে। যে এর সাথে লেগে থাকতে ব্যর্থ হবে সে বিপথগামী হবে। সুতরাং আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর এবং এর সাথে লেগে থাক। …” (আহমাদ)

আরেকটি হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন :
“ ‘নিশ্চিত এই মানবজাতির মাঝে, আল্লাহর বিশেষ জনগোষ্ঠী রয়েছে।’ তারা জিজ্ঞেস করলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল, তারা কারা?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘তারা হচ্ছে কুর’আনের জনগোষ্ঠী। তারা হচ্ছে আল্লাহর জনগোষ্ঠী এবং বিশেষভাবে তাঁর।’ ” (আহমাদ, ইবনে মাজা, নাসাঈ – আলবানীর মতে সহীহ)

রাসূল (সা.) আরো বলেছেন :
“তোমাদের মাঝে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ যে কুর’আন শিখে ও অন্যদের শিক্ষা দেয়।” (বুখারী)

কুর’আন সম্বন্ধে তিনি আরো বলেছেন :
“জ্ঞান আহরণের জন্য যে কেউ যখন কোন পথ অনুসরণ করবে, আল্লাহ্ সেজন্য, তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেবেন। এমন কোন জনসমষ্টি নেই, যারা আল্লাহর ঘরগুলির কোন একটিতে সমবেত হয়ে নিজেদের মাঝে কুর’আন পাঠ করে ও অধ্যয়ন করে, অথচ তাদের উপর প্রশান্তি নেমে আসে না, রহমত নেমে আসে না, ফেরেশতারা তাদের পাশে আসে না এবং আল্লাহ্, তাঁর কাছে উপস্থিতদের কাছে তাদের নাম উল্লেখ করেন না। কর্মফলের বিচারে যে পিছিয়ে পড়বে, বংশপরিচয়ের উৎকৃষ্টতা তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।” (মুসলিম)

আরেকটি বর্ণনায় আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন :
“কুর’আন তিলাওয়াতকারী মুমিনের উদাহরণ হচ্ছে সেই লেবুর মত যা স্বাদে ও গন্ধে উত্তম এবং সে, যে কুর’আন তিলাওয়াত করে না তার অবস্থা হচ্ছে ঐ খেজুরের মত যা স্বাদে উত্তম কিন্তু যার কোন গন্ধ নেই এবং যে মুনাফিক কুর’আন তিলাওয়াত করে, তার উদাহরণ হচ্ছে রাইহানা বৃক্ষের মত যার সুগন্ধ রয়েছে, কিন্তু স্বাদে যা তিক্ত। আর সেই মুনাফিক যে কুর’আন তিলাওয়াত করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে হানযালাহ্, যা স্বাদে তিক্ত এবং যার কোন গন্ধও নেই।” (বুখারী)

এই হাদীসে কুর’আনের মাহাত্ম্য ও উন্নত প্রকৃতি প্রকাশিত হয় – যা একজন মুনাফিকের মুখে উচ্চারিত হলেও তার সুগন্ধ পারিপার্শ্বিকতায় ছড়িয়ে পড়ে।

সবশেষে আমরা আরেকটি হাদীস উদ্ধৃত করবো যেখানে আল্লাহ কিতাবের গুরুত্ব যথাযথরূপে প্রকাশিত হয়েছে। এই হাদীসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন :
“পবিত্র কুর’আন হয় তোমার পক্ষে অথবা তোমার বিপক্ষে সুপারিশ করে।” (মুসলিম)

এখানে আল্লাহর রাসূল (সা.) স্পষ্টত বলছেন যে, কুর’আন হয় কারো পক্ষে অথবা তার বিপক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ হবে। এখানে কোন নিরপেক্ষ অবস্থান নেই। যে কাউকে দুটো দলের একটির অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। এই বক্তব্য পবিত্র কুর’আনে আল্লাহর নিম্নলিখিত বক্তব্যের সদৃশ :

“এবং আমরা এই কুর’আন নাযিল করেছি যা বিশ্বাসীদের জন্য শিফা ও রহমত। আর জালিমদের জন্য এটা তাদের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।” (সূরা ইসরা, ১৭:৮২)

কুর’আন কিভাবে পড়বো ও বুঝবো – ৬

মূলঃ মেরিনার

[মূল লেখা: Jamaal al-Din M. Zarabozo-র]

…………..পূর্বে প্রকাশিত লেখার ধারাবাহিকতায়

আল্লাহ্ কুর’আন সম্বন্ধে কি বলেন

কুর’আন সম্বন্ধে আল্লাহ্ আরো বলেন :

“(হে মানবকুল) অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য একটি কিতাব নাযিল করেছি যাতে তোমাদের জন্য রয়েছে সম্মান ও মর্যাদা (যারা তা অনুসরণ করবে তাদের জন্য)। তোমরা কি তাহলে তা বুঝবে না?” (সূরা আম্বিয়া, ২১:১০)

এই আয়াত প্রথমে কুরাইশী আরবদের উদ্দেশ্যে ছিল, যদিও এর মর্মার্থ সাধারণভাবে সকল বিশ্বাসী বা সকল মানুষের বেলায় প্রযোজ্য [রাসূল (সা.) এর সময়ের পর থেকে]। এটা আরবদের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ ছিল যে, কুর’আন তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছিল। তারপর তাদের মধ্য থেকে যারা এর সাথে লেগে থাকবে, তাদের সেই সম্মান ও মর্যাদা সহকারে স্মরণ করা হবে যা আল্লাহ্ তাদের দান করেছেন। তাছাড়াও অবশ্য সকল বিশ্বাসী ও সকল মানবকুলকে এই আয়াত একথাই জানান দিচ্ছে যে, কারো মান-মর্যাদা ও বিজয় আসলে সত্যিকার বিশ্বাসীতে পরিণত হয়ে এই কুর’আনকে আঁকড়ে ধরা এবং জীবনে সেটাকে প্রয়োগ করার মাঝেই নিহিত। আল্লাহ্ বলেন :

“..সম্মান হচ্ছে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের এবং বিশ্বাসীদের ; যদিও মুনাফিকরা তা জানে না।”
(সূরা মুনাফিকুন, ৬৩:৮)

এই বাস্তবতা আরবদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। কুর’আনকে অনুসরণ করার পূর্বে তারা পৃথিবীর কাছে পরিচিত ছিল না অথবা পৃথিবীর সম্মানিত কোন জাতিও ছিল না। পৃথিবীকে দেওয়ার মত তাদের এমন কিছু ছিল না। কিন্তু কুর’আন লাভ করার পর তারা পৃথিবীর কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে। সৈয়দ কুতুব যেমন বলেছেন: কুর’আনের বাণী ছিল পৃথিবীকে উপহার দেওয়ার মত তাদের একমাত্র ঐশ্বর্য। এ দ্বারা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা পূর্ব ও পশ্চিমব্যাপী নেতৃত্বের আসনে উন্নীত হয়।

সূরা আম্বিয়ার “একটি কিতাব…যাতে তোমাদের জন্য রয়েছে সম্মান ও মর্যাদা” এই অংশের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আল সাদী লিখেছেন :
“পরবর্তীতে যা সংঘটিত হয়েছে তা এই আয়াতেরই বাস্তবায়ন। সাহাবাগণ ও তার পরবর্তী প্রজন্মসমূহের যাঁরা রাসূল (দঃ)-এঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন এবং কুর’আন থেকে যাঁরা দিক নির্দেশনা নিয়েছিলেন – তাঁরা খ্যাতি, সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছিলেন এবং বিভিন্ন রাজসভায় সম্মানিত হয়েছিলেন – এটা সর্বজনবিদিত। একইভাবে যারা কুর’আন নিয়ে ভাবেনি এবং তা দ্বারা পরিচালিত হয়নি বা পরিশুদ্ধ হয়নি, তাদের পরিণতিও সবার জানা আছে। তারা অসম্মান, তাচ্ছিল্য ও অসুখী জীবন যাপন করেছিল। দুনিয়া এবং আখিরাতের শান্তি অর্জন করতে এই কিতাবখানি অনুসরণ করার কোন বিকল্প নেই।”

সুখ-শান্তি ও সম্মান লাভের এই নীতিমালা সব সময়ের জন্যই প্রযোজ্য। আজো একজন বিশ্বাসী যদি সম্মানিত হতে চায়, অসম্মানজনক ও লজ্জাকর জীবন যাপন না করে যদি সম্মান ও মর্যাদা সহকারে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়, তবে তাকে কি করতে হবে, আল্লাহ্ তা বলে দিয়েছেন: তাদের কুর’আনের কাছে ফিরে আসতে হবে। তারা যদি কুর’আনের কাছে প্রত্যাবর্তন করে, তবে তা যে তাদের এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের সম্মান ও মর্যাদার উৎস হবে তাই নয়, বরং পরকালের চিরস্থায়ী জীবনেও তা তাদের সম্মান ও মর্যাদার উৎস হিসাবে কাজ করবে। ইসলাম সম্বন্ধে বলতে গিয়ে হযরত ওমর (রা.) বলেছেন, “আমরা ছিলাম সবচেয়ে ঘৃণিত এক জনগোষ্ঠী। আল্লাহ্ আমাদের সম্মান দেখালেন এবং ইসলামের মাধ্যমে ক্ষমতা দিলেন। আমরা যদি কখনো, আল্লাহ্ আমাদের যা দিয়ে সম্মানিত করেছেন, তা ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে সম্মানিত হতে চাই, তাহলে আল্লাহ্ তখন আমাদের লাঞ্ছিত করবেন।” (আল হাকিম)। ইসলামের মতই উপরোক্ত উদ্ধৃতি কুর’আনের বেলায়ও প্রযোজ্য।

আর রাসূল (সা.) কুর’আন সম্বন্ধে বলেছেন :
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কিছু জনগোষ্ঠীকে কুর’আন দ্বারা সম্মানিত করেন আর কিছু জনগোষ্ঠীকে তা দ্বারা অধঃপতিত করেন।” (সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ)

আমরা এখানে যে অল্পকয়টি আয়াত আলোচনা করেছি, তা থেকে যে কেউ কুর’আনের গুরুত্বের একটা ধারণা লাভ করবেন। এটা এমন একটি কিতাব, যাতে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা রয়েছে – একজন মানুষের জন্য এটা হচ্ছে রূহ্ – এটা হচ্ছে এমন এক আলো যা মানুষকে পথ দেখায় – আর সকল মুসলিমের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মান, মর্যাদা ও সুখ শান্তির সার্বিক উৎস হচ্ছে এই কুর’আন।

এ ছাড়া আল ফুরক্বান (ভুল ও শুদ্ধের পার্থক্যকারী), আল যিকর (স্মরণিকা), আল বুরহান (নিশ্চিত প্রমাণ) এমন বহু ভিন্ন ভিন্ন নামে আল্লাহ্ কুর’আনকে সম্বোধন করেছেন।

কুর’আনে এমন অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলো এর গুণাগুণ ও বিশেষত্ব সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান দান করে। আমাদের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এ সম্বন্ধে আমরা কুর’আন থেকে আর মাত্র দুটো উদ্ধৃতি উপস্থাপন করবো। এগুলোতে কুর’আনের বক্তা ও নাযিলকারী – যিনি একমাত্র সত্যিকার ভাবে কুর’আনকে জানেন, তিনিই কুর’আনকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, যাতে এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তাকারী কারো কাছে তা অভাবনীয় মনে না হয়ে পারে না। আল্লাহ্ বলেন :

“আমি যদি এই কুর’আনকে কোন পাহাড়ের উপর নাযিল করতাম, তবে নিশ্চয়ই তুমি দেখতে যে, ওটা আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমরা এসব দৃষ্টান্ত বর্ণনা করি মানুষের জন্য, যাতে তারা চিন্তা করে।”
(সূরা হাশর, ৫৯:২৯)

আল্লাহ্ আরো বলেন :

“যদি কোন কুর’আন এমন হতো যদ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেতো অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেতো অথবা মৃতকে কথা বলানো যেতো [এটিই হতো সেই কুর’আন], কিন্তু সমস্ত বিষয়ই আল্লাহর আদেশের অধীন।….” (সূরা রা’দ, ১৩:৩১)

চলবে…… ইনশাল্লাহ

কুর’আন কিভাবে পড়বো ও বুঝবো – ৫

মূলঃ মেরিনার

[মূল লেখা: Jamaal al-Din M. Zarabozo-র]

…………..পূর্বে প্রকাশিত লেখার ধারাবাহিকতায়

আল্লাহ্ কুর’আন সম্বন্ধে কি বলেন

…………..পবিত্র কুর’আনকে আল্লাহ্ রূহ্ বা আত্মা বলে সম্বোধন করে বলেন,

وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا
“এভাবে আমি আমার আদেশের এক রূহ্ তোমার কাছে প্রেরণ করেছি…..”
(সূরা শূরা, ৪২:৫২)

এই আয়াতের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বিশিষ্ট ইসলামী ‘আলেম ড. সালিহ আল ফাওযান বলেছেন যে, রূহ্ হচ্ছে এমন একটা ব্যাপার যা হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চার করে। যেমনভাবে শারীরিক হৃদপিণ্ডের জীবন সরাসরি এক রূহের সাথে সম্পৃক্ত, তেমনিভাবে আধ্যাত্মিক জীবনও তার প্রাণ স্পন্দনের জন্য সরাসরি একটি রূহের উপর নির্ভরশীল – আর সেই রূহ্ হচ্ছে পবিত্র কুর’আন। এই কুর’আনই হচ্ছে আধ্যাত্মিক হৃদয়ের প্রাণের উৎস। কারো হৃদয় যদি কুর’আন বিবর্জিত হয়, তাহলে সে হৃদয়ের আধ্যাত্মিক মৃত্যু ঘটে – পার্থিব বিচারে তা যতই জীবন্ত হোক না কেন।

মানুষের হৃদয় তখনই সত্যিকার জীবন লাভ করে, যখন তা কুর’আনের সাথে মিলিত হয়। কুর’আনের শিক্ষা থেকেই আমাদের হৃদয় তার প্রভুর পরিচয় লাভ করে এবং কিভাবে তাঁর উপাসনা করতে হবে সেই জ্ঞানও লাভ করে। এমতাবস্থায় আমাদের হৃদয় আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, আল্লাহর প্রতি ভয়, তাঁর প্রতি সম্ভ্রম ও তাঁর কাছে প্রত্যাশা দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। একটা সুস্থ হৃদয়ের জন্য এগুলো হচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান। শারীরিক হৃদস্পন্দনের জন্য যেমন শারীরিক রূহ্ প্রয়োজন – তেমনি এই আধ্যাত্মিক হৃদয়ের স্পন্দনের জন্য কুর’আনের প্রয়োজন।

রূহ্ হরণের ফলে যে পার্থিব মৃত্যু ঘটে, তার সাথে কুর’আনের অনুপস্থিতিতে আধ্যাত্মিক হৃদয়ের মৃত্যুর তুলনা চলে না। শারীরিক মৃত্যু বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী, দুষ্টলোক এবং এমনকি জন্তুজানোয়ার সবার বেলায় প্রযোজ্য – যা হচ্ছে এই পার্থিব জীবন থেকে বিদায়। আধ্যাত্মিক মৃত্যু হচ্ছে এমনই এক অভিজ্ঞতা, অবিশ্বাসীরা প্রতিনিয়ত যার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে এবং যার ফলশ্র“তিতে আখিরাতে চিরতরে তারা জাহান্নামের আগুনে পতিত হবে।

মুহাম্মাদ আল রাওয়ী বলেন যে, শরীর থেকে যখন শারীরিক রূহ্ বিচ্ছিন্ন হয়, তখন সবাই স্পষ্টতই তা বুঝতে পারে – মানুষজন সেই প্রাণহীন শরীরকে নিয়ে গিয়ে সমাহিত করে, কেননা রূহের তিরোধানের পরে সেই দেহ আর কোন কাজ করতে পারে না। বলা যায় সেই দেহ একরকম অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। অথচ, একজন মানুষের উপর যখন কুর’আনের আর কোন প্রভাব থাকে না, তখন সে অবস্থাটাকে সনাক্ত করতে মানুষ প্রায়ই ব্যর্থ হয়। যখন কারো জীবন থেকে কুর’আন স্বরূপ রূহ্ হারিয়ে যায়, জীবন ও আখিরাতের নিরিখে আলোচ্য ব্যক্তির কি ক্ষতি সাধিত হয়, তা তারা দেখে না। তার চারপাশের সকলের কাছে তাকে জীবিত মনে হলেও, ঐ রূহ্ ছাড়া সত্যিকার অর্থে সে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে মৃত এক ব্যক্তিতে পরিণত হয়। সে মৃত, কেননা সে এমনকি তার জীবনের উদ্দেশ্য কি, তাও বুঝতে অক্ষম।সে এমন একটা জীবন যাপন করে, যে জীবন তার সঠিক গন্তব্যের দিকে পরিচালিত নয়। আর তাই এক্ষেত্রে তার শারীরিক মৃত্যু সংঘটিত হলেও আসলে কিছু আসে যায় না।

উপরে উদ্ধৃত আয়াতে এবং কুর’আনের অন্যান্য আয়াতেও আল্লাহ্ পবিত্র কুর’আনকে এক আলো (নূর) হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। আল্লাহ্ বলেন,

وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِنْ أَمْرِنَا مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيمَانُ وَلَكِنْ جَعَلْنَاهُ نُورًا نَهْدِي بِهِ مَنْ نَشَاءُ مِنْ عِبَادِنَا وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
“এভাবে আমি আমার আদেশের এক রূহ্ তোমার কাছে প্রেরণ করেছি। কিতাব কি অথবা ঈমান কি তা তুমি জানতে না। কিন্তু আমি একে (এই কুর’আনকে) আলো বানিয়ে দিয়েছি, যা দ্বারা আমার দাসদের যাকে ইচ্ছা তাকে আমি দিক নির্দেশনা দিই। নিশ্চয়ই তুমি (মানবকুলকে) সঠিক পথের দিক-নির্দেশনা দাও।”
(সূরা শূরা, ৪২:৫২)

আলো কোন ব্যক্তিকে তার সামনের পথ দেখায়। আলো দিয়ে সে তার চলার পথের বিপজ্জনক বস্তুসমূহ এড়িয়ে চলে এবং সে তার জন্য সবচেয়ে লাভজনক রাস্তা অনুসরণ করে গন্তব্যের দিকে যায়। যাহোক, আল ফাওযান বলছেন যে, কুর’আন যে ধরনের ‘আলো’ বা ‘নূর’ – তা আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা যে আলো অনুভব করি, তার চেয়ে ভিন্ন। এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিক আলো। এ আলো দিয়ে আমরা পার্থিব ও ধর্মীয় জগতের কি কি আমাদের জন্য লাভজনক তা সনাক্ত করতে পারি। এ আলোর সাহায্যে কেউ সত্যি থেকে মিথ্যাকে আলাদা করতে পারবে এবং জান্নাতমুখী পথ অনুসরণ করতে পারবে।

এই আলো মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকীম বা সরল পথ এবং আল্লাহর দয়া ও করুণার পথ দেখায়। আমাদের এই প্রচেষ্টায় যেমন প্রায়ই এ প্রসঙ্গ আসতে থাকবে – লক্ষ্যণীয় যে, এই আলো কেবল তাদের জন্যই লাভজনক যারা সেটাকে অনুসরণ করবে। আল্লাহ্ বলেন :

يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا (174) فَأَمَّا الَّذِينَ آَمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا
“হে মানবকুল! অবশ্যই তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে তোমাদের কাছে নিশ্চিত প্রমাণ অবতীর্ণ হয়েছে এবং আমি তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট আলো নাযিল করেছি (এই কুর’আন), তাই যারা আল্লাহয় বিশ্বাস করেছে এবং একে (এই কুর’আনকে) আঁকড়ে ধরেছে, তিনি তাদের তাঁর করুণা ও দয়ার আশ্রয় দেবেন এবং তাদের এক সরলপথের মাধ্যমে তাঁর দিকে নিয়ে যাবেন।”
(সূরা নিসা, ৪:১৭৪-১৭৫)

উপরের আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বাসীদের জীবনের সত্যিকার চাবিকাঠিই হচ্ছে কুর’আন। কুর’আন ছাড়া একজন মানুষ তাই আধ্যাত্মিক মৃত্যু ও অন্ধকারের মাঝে পতিত। আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের যেভাবে তাঁর নাযিলকৃত পথ-নির্দেশনা দ্বারা আশীর্বাদ করেন, সে সম্বন্ধে তিনি বলছেন :

أَوَمَنْ كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَنْ مَثَلُهُ فِي الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِنْهَا
“যে মৃত ছিল এবং যাকে আমি জীবন দিলাম ও এমন এক আলো দান করলাম যার সাহায্যে সে মানুষের মাঝে চলাচল করতে পারে, সে কি ঐ ব্যক্তির মত, যে গভীর অন্ধকারে ডুবে আছে – যা থেকে সে কখনোই বেরিয়ে আসতে পারবে না? ..”
(সূরা আন্‘আম, ৬:১২২)

(চলবে ………….ইনশা’আল্লাহ্!)

কুর’আন কিভাবে পড়বো ও বুঝবো – ৪


কুর’আনের বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতি আমাদের কর্তব্য

কোন মুসলিমই সম্ভবত কখনো এই সত্যটা ভুলে যান না যে, কুর’আন হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর বাণী যা তিনি তাঁর শেষ রাসূল মুহাম্মাদ (সা.)-এঁর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, একজন মুসলিম এই সত্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পূর্ণরূপে নাও বুঝতে পারেন। কুর’আনে আল্লাহ্ যেসব চমৎকার বিষয়াবলী বর্ণনা করেছেন, তার কিয়দংশ তিনি ভুলে থাকতে পারেন – অথবা রাসূল (সা.) কুর’আন সম্বন্ধে যা বলেছেন, সে ব্যাপারটাকেও হয়তো তিনি অবহেলা করে থাকতে পারেন। এই অধ্যায়ে তাই আমরা প্রথমে চেষ্টা করবো কুর’আন আসলে কি, তা পাঠককে মনে করিয়ে দিতে। নিঃসন্দেহে একজন বিশ্বাসী কুর’আন সম্বন্ধে যত জানবেন – কুর’আনের কাছ থেকে তিনি তত বেশি নিতে চাইবেন। কোন ব্যক্তি কুর’আনকে যত বেশি উপলব্ধি করবেন, তত বেশি তিনি সেটাকে তার হৃদয় ও মনের কাছাকাছি রাখতে চাইবেন। অবশ্যই যিনি কুর’আনকে সবচেয়ে ভাল জানেন, তিনি হচ্ছেন এর বক্তা – স্বয়ং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। তাই প্রথমে আমরা কুর’আনের কিছু নির্বাচিত আয়াত আলোচনা করবো, যেসব আয়াতে কুর’আন নিজের সম্বন্ধে কথা বলে। কুর’আনের উপলব্ধিতে যাঁর স্থান দ্বিতীয়, তিনি হচ্ছেন নবী মুহাম্মাদ (সা.), যাঁর কাছে এই কুর’আনের বাণী প্রেরণ করা হয়েছিল। আমরা তাই কুর’আন সম্পর্কে তাঁর কিছু নির্বাচিত বাণী আলোচনা করবো। এরপর আসছে ঐ সব মহান ব্যক্তিদের কথা, যাঁরা আল্লাহর রাসূলের (সা.) কাছ থেকে সরাসরি কুর’আন শিখেছিলেন এবং জীবনে তা প্রয়োগ করেছিলেন। আমরা কুর’আনের ব্যাপারে সাহাবীদের বক্তব্য তাই উপস্থাপন করব। এই বষিয়ে আলোচনার শেষের দিকে এই মহান গ্রন্থের প্রতি একজন মুসলিমের কর্তব্য কি – আমরা তা নিয়ে এক সাধারণ আলোচনা করব, ইনশা’আল্লাহ্!

আল্লাহ্ কুর’আন সম্বন্ধে কি বলেন

সূরা বাক্বারার শুরুতেই আল্লাহ্ বলেন: “এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা আল্লাহ্্কে যারা ভয় করে তাদের জন্য এক পথ-নির্দেশক।” [সূরা বাক্বারা, ২:২]

গতানুগতিক অনুবাদে কারো মনে হতে পারে যে, এই আয়াতে কুর’আন সম্বন্ধে এমন বিশেষ কিছু বলা হয়নি। যদিও বাস্তবে আল্লাহ্ এই একটি আয়াতে কুর’আন সম্বন্ধে অনেক কয়টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এই বর্ণনায় লক্ষ্য করার ম।

প্রথম, বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, আল্লাহ্ কুর’আনকে ‘নির্দেশক সর্বনাম’ ذَلِكَ সহকারে নির্দেশ করেছেন – সাধারণভাবে যার অনুবাদ হবে ‘ঐটা’ (কিন্তু ‘এটা’ নয়)। এখানে ‘এটা’র পরিবর্তে ‘ঐটা’ ব্যবহার করার কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। আবদুল হামিদ সিদ্দিকী তাঁর কুর’আনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় এ সম্বন্ধে বলেছেন: “নির্দেশক সর্বনাম’ ذَلِكَ (that) অবস্থানের দূরত্ব নির্দেশ করে, কিন্তু সময় বিশেষে কোন বস্তুর প্রতি সম্মান ও সম্ভ্রম/সমীহ প্রদর্শন করতেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে, যেমনটি আমরা কুর’আনে হতে দেখি।”

দ্বিতীয়ত, বাক্যাংশটি অনেকটা “এই সেই কিতাব” এমন একটা অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। যার নিহিতার্থ হচ্ছে এরকম যে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ এবং আর কোন গ্রন্থকেই, কুর’আনকে যেভাবে একটি ‘গ্রন্থ’ বলা যায় সেই বিচারে গ্রন্থ বলা যাবে না। এই গ্রন্থ হচ্ছে সেই বাস্তব গ্রন্থ, যা এমন সব বিষয়বস্তু ধারণ করে যা পূর্ববর্তী কোন কিতাবে ছিল না। অন্য কথায়, আল্লাহ্ এই কিতাবের পূর্ণতা ও নির্ভুলতার দিকে ইঙ্গিত করে, অন্য সকল কিতাবের উপর এর শ্রেষ্ঠত্বের দিকে ইঙ্গিত করছেন।

তৃতীয়ত, আল্লাহ্ বলছেন যে, এটা এমন একখানি গ্রন্থ যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। অথচ অনেক অবিশ্বাসী বা সন্দেহবাদী কিতাবখানিকে সন্দেহের চোখে দেখে। আমাদের তাই বুঝতে হবে যে, আলোচ্য আয়াতে কেউ কখনো কুর’আনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে না এমন কথা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, কুর’আন যে আল্লাহর তরফ থেকে নাযিলকৃত একখানা সত্য ও নির্ভুল গ্রন্থ, তার পক্ষে সাক্ষ্যাপ্রমাণ এতই বিশাল ও স্পষ্ট যে, এই গ্রন্থে কারো সন্দেহ পোষণ করার কোন কারণ বা অবকাশ নেই। এই কথাটা গোটা কিতাব এবং এর দিক নির্দেশনার প্রতিটি অংশবিশেষের বেলায়ও একই রকম প্রযোজ্য। এই বইয়ে আল্লাহ্ যা বলেছেন, তার কোন কিছু সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আবদুর রহমান আল সাদী যেমন বলেন যে, আলোচ্য আয়াতে কোন সন্দেহ নেই বলে এটাই বোঝানো হচ্ছে যে, একজন বিশ্বাসীর এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক যে, এই কিতাবে বর্ণিত সবকিছু সত্য।

চতুর্থত, আল্লাহ্ এই কিতাবকে এক দিক নির্দেশনা(বা হুদা) বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ কিসের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা সে কথাটা উল্লেখ করা হয়নি – ফলে একটা সাধারণ দিক নির্দেশনার ধারণা এখানে বলবৎ রয়েছে। দুনিয়া ও আখিরাতের সকল প্রয়োজন ও সকল লাভের ব্যাপারেই কুর’আন হচ্ছে এক পথ-প্রদর্শক। অত্যাবশ্যকীয় মৌলিক অথবা স্বল্প আবশ্যকীয় গৌণ – সকল বিষয়েই কুর’আন হচ্ছে মানুষের জন্য পথ নির্দেশকারী। তা সত্যকে মিথ্যা থেকে আলাদা করে দেখায় – আর পূর্ণতাকে অসম্পূর্ণতা থেকে স্পষ্টত আলাদা করে দেখায়। এছাড়া মানুষের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত, উভয় জীবনের জন্য লাভজনক একটা পথ ধরে কিভাবে চলতে হবে – তাও এই কিতাব পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দেয়।

এই আয়াত তাই আমাদের বলে দিচ্ছে যে, কুর’আন হচ্ছে সর্বোপরি পথ-নির্দেশনার একখানি গ্রন্থ। সবশেষে এই আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন, যারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে সচেতন, তাদের জন্য কিতাবখানি হচ্ছে পথ-নির্দেশনা। কুর’আনের অন্যত্র আল্লাহ্ বলেছেন: 
…মানবজাতির জন্য এক পথ-নির্দেশনা ও যাচাইয়ের (সত্য-মিথ্যা) জন্য এক স্পষ্ট প্রমাণ…।” [সূরা বাক্বারা, ২:১৮৫]

কুর’আনের এই দুইটি আয়াত (২:২, ২:১৮৫) আমাদের বলে দিচ্ছে যে, কুর’আনের দিক-নির্দেশনা ও তা থেকে লাভবান হবার সম্ভাবনা সবার জন্য উন্মুক্ত।অথচ, সবাই এই চমৎকার দিক নির্দেশনা থেকে লাভবান হবে না। কেবল মাত্র তারা, যারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করে কুর’আনকে মেনে চলার ও জীবনে প্রয়োগ করার ইচ্ছা নিয়ে এর নিকটবর্তী হবে, তারাই এ থেকে সত্যিকার অর্থে লাভবান হবে।

(চলবে …………..ইনশা’আল্লাহ্!)

কুর’আন কিভাবে পড়বো ও বুঝবো – ৩

[মূল লেখা: Jamaal al-Din M. Zarabozo-র]



 

এই সিরিজের আলোচ্য বিষয়াবলী

পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ্ বলেন:

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِمَّا كُنْتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ (15) يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

“হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে আমাদের রাসূল এসেছেন, তোমরা কিতাবের যা কিছু লুকিয়ে রাখতে তা প্রকাশ করতে এবং যা কিছু অপ্রয়োজনীয় তা বাদ দিতে। আল্লাহর কাছ থেকে তোমাদের কাছে এক (নতুন) আলো এবং হেদায়েত দানকারী গ্রন্থ এসেছে। যা দিয়ে আল্লাহ্ তাদের সকলকে পথ নিদের্শনা দেন, যারা শান্তি ও নিরাপত্তার পথে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং তাদের, তাঁর ইচ্ছামত অন্ধকার থেকে সেই আলোতে বের করে নিয়ে এসে সেই পথে পরিচালিত করেন – যা সরল।” (সূরা মায়িদা, ৫:১৫-১৬)

الر كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
“আলিফ-লাম-রা, একখানি কিতাব, যা আমরা তোমার কাছে নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে নিয়ে আসতে পারো – তাঁর পথে যিনি পরাক্রমশালী, সকল প্রশংসার দাবীদার।”
(সূরা ইব্রাহিম, ১৪:১)

আল্লাহ্ আরো বলেন,

إِنَّ هَذَا الْقُرْآَنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا
“নিশ্চয়ই এই কুর’আন যা সবচেয়ে সঠিক তার দিকেই পরিচালিত করে……”
(সূরা ইসরা, ১৭:৯)

কুর’আনের এই বাণীগুলো পড়ে যখন কোন অবিশ্বাসী কাফির বা সন্দেহবাদী আজকের পৃথিবীর মুসলিমদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক অবস্থার দিকে তাকিয়ে দেখবে, তখন সে প্রশ্ন করতে পারে :কুর’আনের এই কথাগুলো কি বাস্তবিকই সত্যি? যারা কুর’আনের এই কথাগুলোকে বিশ্বাস করে বলে ও জীবনে প্রয়োগ করে বলে দাবী করে, তাদের জীবনে এসবের প্রভাব ও প্রতিফলন কোথায়? কেউ কি মুসলিমদের সত্যি আলোর জগতে বসবাস করতে দেখে, নাকি স্বভাবতই তাদের এক অন্ধকার জগতের বাসিন্দা বলে মনে হয়?

স্পষ্টতই, কুর’আনে লিপিবদ্ধ আল্লাহর এই কথাগুলো সত্য। এ কথাগুলোর ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আসলে কেউ যখন কুর’আনের ইতিহাস পড়ে দেখবেন এবং অতীতে যারা কুর’আন বিশ্বাস করেছিলেন, তাদের উপর কুর’আনের কি প্রভাব পড়েছিল সে সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করবেন – তখন যে কেউ অনুধাবন করবেন যে, কুর’আনের উপরোক্ত আয়াতগুলোতে বর্ণিত কথাগুলো তাঁদের জীবনে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এক বাস্তবতা যে, মুসলিমরা দিকনির্দেশনা সম্বলিত এই মহান কিতাবখানির অধিকারী হলেও, বর্তমানে তাদের জীবনে এর শিক্ষার আশীর্বাদ বা দিকনির্দেশনার কোন প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় না। এই বাস্তবতা কারো কারো কাছে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। মুসলিমরা বর্তমানে যে অবস্থায় পতিত হয়েছে – কি করে সেই পরিণতিতে তারা পৌঁছতে পারে – কারো জন্য তা অনুধাবন করা কষ্টকর হতে পারে। মুসলিমরা কিভাবে কুর’আনকে গ্রহণ করছে এবং আত্মস্থ করছে – এর মাঝেই সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। সম্ভবত, কুর’আনের প্রতি তাদের আচরণে কোথাও কোন সমস্যা রয়েছে। এ থেকে এমন একটা অবস্থার উদ্ভব হয় যে, কোন একটা বিষয়ে কুর’আনে দিকনির্দেশনা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানবতার উপর তার যে প্রভাব প্রতিফলিত হবার কথা ছিল – তা হচ্ছে না।

আমাদের এই প্রচেষ্টায় আমরা তাই, আজকের দিনের অনেক মুসলিম কুর’আনের সাথে কি ধরনের আচরণ করছেন – সেদিকে আলোকপাত করব। তারপর আমরা চেষ্টা করবো, সঠিক আচরণটা কি – তা ভেবে দেখতে। সবশেষে পবিত্র কুর’আনকে সঠিক ভাবে বোঝার ও ব্যাখ্যা করার পন্থা কি হতে পারে, তা নিয়েও আমরা আলোচনা করব ইনশা’আল্লাহ্!

কুর’আন তার অনুসারীদের জন্য কি ধরনের জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং বাস্তবে আজকের মুসলিমদের জীবনযাত্রার শোচনীয় অবস্থার মাঝে যে দুস্তর ব্যবধান, তার কারণসমূহ বুঝবার এই প্রচেষ্টায় আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবো ইনশা’আল্লাহ্:

১. আলোচ্য বিষয়াবলী
২. কুর’আনের বৈশিষ্ট্য এবং এর প্রতি আমাদের কর্তব্য
৩. কুর’আনিক প্রজন্ম
৪. কুর’আনের প্রতি সমকালীন মুসলিমদের আচরণ
৫. কুর’আনের মুখ্য উদ্দেশ্য
৬. কুর’আনের নিকটবর্তী হবার পন্থা ও করণীয়
৭. কুর’আন ব্যাখ্যার (তাফসীরের) সঠিক পন্থা
৮. কুর’আনের কাছে প্রত্যাবর্তনের আবশ্যকতা
৯. উপসংহার বা শেষ কথা।

আমরা আশা করছি যে, আমাদের এই প্রচেষ্টায় সংযোজিত বা আলোচিত বিষয়াবলী বিচার-বিশ্লেষণের পরে, কুর’আন বোঝার ব্যাপারে আমাদের দুর্বলতা ও দীনতা অনেকাংশেই দূর হবে ইনশা’আল্লাহ্। আমাদের এই প্রচেষ্টার মূলে রয়েছে এই অপূর্ব সুন্দর ও অলৌকিক কুর’আন থেকে বাংলাভাষী মুসলিমরা যাতে যথাসম্ভব বেশি উপকৃত হতে পারেন, সে ব্যাপারে তাদের সহায়তা করা। যেভাবে কুর’আনের নিকটবর্তী হওয়া উচিত, সেভাবে কুর’আনের কাছে যেতে পারলেই তাদের উপর কুর’আনের সেই কাঙ্খিত প্রভাব অনুভূত ও প্রতিফলিত হবে। তখন, কুর’আন মুসলিমদের আল্লাহর আরো কাছাকাছি নিয়ে যাবে, এবং ইসলাম সম্বন্ধে তাদের জ্ঞানকে আরো পরিপূর্ণ করে দেবে। তারা তখন এই পৃথিবীতে তাদের সত্যিকার ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারবেন। সবশেষে আমরা আশা করবো, কুর’আনের সঠিক জ্ঞান আখিরাতে তাদের জান্নাতের পথে নিয়ে যাবে – কুর’আনের সঠিক জ্ঞান ও প্রয়োগ আখিরাতে তাদের পক্ষে এক প্রমাণ ও মধ্যস্থতাকারী স্বরূপ কাজ করবে – আর আল্লাহ্ তাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবেন, ইনশা’আল্লাহ্!।

(চলবে ……ইনশা’আল্লাহ!)

মুলঃ মেরিনার

কুর’আন কিভাবে পড়বো ও বুঝবো – ২

আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা পবিত্র কুর’আনে বলেছেন: “যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” [সূরা হাশর, ৫৯:২১]

অথচ কই, যাদের জন্য ও যাদের কাছে এই কুর’আন নাযিল হয়েছে, তাদের মাঝে তো কুর’আন শ্রবণকালে সেই বিনয়, শ্রদ্ধাবোধ বা সমীহভাব জেগে ওঠে না! ইমাম আনোয়ার আল আওলাকি তাঁর এক খুৎবায় বলেন যে, ইসরাইলী রাষ্ট্রীয় রেডিও থেকে নাকি আরবদের জন্য কুর’আন তিলাওয়াত (প্রচলিত অর্থে) সম্প্রচার করা হয়, কারণ ইহুদীরা জানে যে, উদ্দিষ্ট আরবরা কুর’আন বুঝে না বিধায় তাদের উপর কুর’আন কোন প্রভাব বিস্তার করবে না – আর তাই তা সম্প্রচার করা একেবারেই নিরাপদ। আমাদের দেশের অবস্থা আরও করুণ!! আপনি দেখবেন কোন বাজারে দিনের শুরুতে দোকানদার, বারাক্বার (অর্থাৎ বরকতের) জন্য পবিত্র কুর’আনের তিলাওয়াতের একটা ক্যাসেট ছেড়ে দিয়ে অনায়াসে বিকিকিনি চালিয়ে যাচ্ছে – এমনকি ভিডিও সিডির দোকানেও। কিছুদিন আগে দৌলতদিয়া ঘাটের বেশ্যা পুনর্বাসন আন্দোলনের সভা নাকি শুরু হয়েছিল যথারীতি কুর’আন তিলাওয়াত দিয়ে।

এই পর্যায়ে আমার একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে share করতে চাই। এই তো কিছুদিন আগে সিলেটে আমার দেশের বাড়ীতে যাবার সময় আমরা সদ্য চালু হওয়া বহুল প্রশংসিত আধুনিক এক কোম্পানীর বাসে চড়েছিলাম – আত্মীয় স্বজনের মুখে আরমদায়ক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য যাত্রার অনেক সুনাম শুনে ঐ বাসে যাওয়া। যাত্রা শুরু হলো সূরা ইয়াসীনের বাংলা তর্জমা সহকারে তিলাওয়াত দিয়ে। একসময় তিলাওয়াত শেষে টিভি সেটে হিন্দি গান ইত্যাদির ভিডিও শুরু হলো। অনেকদিন ধরে আমার ঘরে টিভি চলেনা বলে এবং বিনোদন জগতের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই বলে আমি প্রায় ভুলেই বসেছিলাম যে, “আ মরি বাংলা ভাষা” বলে মায়াকান্না কাঁদা বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের কাছে হিন্দি ও হিন্দু সংস্কৃতির উপাদান, প্রায় শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের মতই অত্যাবশ্যক – যা বিহনে সাড়ে ৪ ঘন্টার ঐ ‘বি-শা-ল’ (!!)সময় অতিক্রান্ত হওয়া বুঝি এক অকল্পনীয় একটা ব্যাপার !!!

তাই বুঝি অধীর আগ্রহে অনেকে অপেক্ষা করে ছিলেন যে, কখন ঐ অর্থহীন ও বৈচিত্রহীন একঘেঁয়ে বাক্যালাপ শেষ হয়। গান বাজনা শুরু হতে বাসে যেন প্রাণের স্পন্দন ফিরে এলো – এমনকি হিজাব পরতে সচেষ্ট এক মা, তার বয়ঃসন্ধিতে উপনীত পুত্রের সাথে চটকদার অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে আলাপ করতে করতে হাসতে হাসতে যে ভাবে ওগুলো গিললেন, তাতে বোঝা গেলো বাড়ীতেও তারা ‘সপরিবারে’ ওসব উপভোগ করে থাকেন। ঐ একই পরিবারের সাফারী স্যুট পরা (সুন্দর ভাবে ছাঁটা) দাড়ি ওয়ালা আধুনিক ইসলামপন্থী সদৃশ বাবা, সামনের সারিতে একেবারে ঝুলন্ত টিভি সেটটির নীচেই বসেছিলেন তার আত্মজাকে নিয়ে – তার মুখেও কোন অস্বস্তির চিহ্ন দেখেছি বলে মনে করতে পারিনা। সমাজতন্ত্রী কুফরপন্থীরা যে ইসলামপন্থীদের প্রতিক্রিয়াশীল বলে গাল দেয় – সেই অপবাদ বুঝি এতদিনে ঘুচ্লো। আমার সিলেট ভ্রমণের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়ে রইলো এমন কিছু রিমেক হিন্দি গানের দৃশ্য, যা দেখে আমি বুঝলাম যে, মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে – নাস্তিক ও কাফিরদের নেতৃত্বাধীন পৃথিবীর সর্ব সাম্প্রতিক যৌন বিকৃতি pedophilia-র উপাদান, আমাদের এই “উদারপন্থী মুসলিম দেশের” মুসলিম ভাই-বোনদের মগজে ইতোমধ্যেই চাঞ্চল্যকর আবেদনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে – ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!!

মধ্যবয়সে উপনীত হয়ে পবিত্র কুর’আন যখন প্রথমবারের মত অর্থসহ পড়ে শেষ করলাম, তখন এই ভেবে পুলকিত বোধ করেছিলাম যে, একটা অনস্বীকার্য কর্তব্য বুঝি দেরীতে হলেও এতদিনে সমাধা করা গেলো। পরে যখন কোন বিশ্বমাপের ‘আলেমের বর্ণনায় কোন একটা আয়াতের ব্যাখ্যা শুনে মনে হয়েছে যে, ঐ ধরনের বক্তব্য এই প্রথমবারের মত শুনলাম – তখন বুঝলাম যে অর্থসহ কুর’আন পড়া, আর কুর’আনের অর্থ অনুধাবন করা এক ব্যাপার নয়। কিন্তু আমরা যারা দ্বীন শিক্ষায় শিক্ষিত নই, অথচ যে কোন ‘হুজুরের’ উপর যারা আস্থা রাখতে পারিনা, তারা তাহলে কোথায় যাবো? এছাড়া আমরা যারা নিজ চেষ্টায় বহু কষ্টে ইসলাম শিখার ও জানার চেষ্টা করছি, তারা যখন কোন আত্মীয় বা সুহৃদকে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে কোন একটা খারাপ বা পরিত্যাজ্য বিষয় থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে কোন আদেশ বা নিষেধ করছি – তখন সেই আত্মীয় বা সুহৃদ অনায়াসে জাতীয় পর্যায়ের এমন একজন ‘আলেম পেয়ে যাচ্ছেন, যিনি তার সকল কর্মকান্ডকে জায়েজ করে দিয়ে, তার মনের অপরাধবোধ নিমেষেই দূর করে দিচ্ছেন। এভাবেই তাহলে দৌলতদিয়া ঘাটের বেশ্যাদের আন্দোলনের সভায় কুর’আন তিলাওয়াত ও দোয়া করার জন্য ‘হুজুর’ পাওয়া যাচ্ছে, আর এভাবেই তাহলে আত্মস্বীকৃত কাফির হুমায়ুন আজাদের জানাজা পড়ানোর জন্যও লোকের অভাব হয়নি আমাদের এই ‘উদারপন্থী মুসলিম দেশে’ – এভাবেই তাহলে চিত্র-নায়ক ও চিত্র-নায়িকাদের সমন্বয়ে চিত্রায়িত ‘ইসলামী নাটক’কে জায়েজ মনে করেছেন এক শ্রেণীর ‘আলেমরা। আর এভাবেই তাহলে Indian idol বা হিন্দুস্থানী মূর্তির পূজার আয়োজনে “নীরবতা সম্মতির লক্ষণ” – এই সূত্র অনুযায়ী, সায় দিয়েছিলেন, বিলাসিতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া বিজ্ঞ ইসলাম বিশারদরা।

এরকম একটা সংশয়ের ভিতর, বোধশক্তির যখন অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় একটা অবস্থা – তখন আমি ধর্মান্তরিত মুসলিম, ভাই Jamaal al-Din M. Zarabozo-র লেখা How to Approach and Understand the Quran বইখানি পড়তে শুরু করি। এসময় আমি আরো জানি যে: এক সময় ওমর (রা.) ভাবছিলেন যে একই নবী এবং একই কিবলা থাকা সত্ত্বেও কেন মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হবে। তিনি ইবনে আব্বাসের (রা.) কাছে লোক পাঠালেন এবং এ সম্বন্ধে জানতে চাইলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, “হে আমীরুল মু’মিনীন, আমাদের মাঝে কুর’আন নাযিল হয়েছিল ও আমরা তা আবৃত্তি করি এবং আমরা জানি যে, কি নাযিল হয়েছিল। আমাদের পরে এমন মানুষজন আসবে, যারা কুর’আন আবৃত্তি করবে, কিন্তু যারা জানবে না যে কোন পটভূমিতে তা নাযিল হয়েছিল। সুতরাং তারা তাদের মতামত ব্যবহার করবে (কুর’আন ব্যাখ্যার ব্যাপারে)। আর তারা যখন তাদের মতামতের শরণাপন্ন হবে, তখনই তারা মতপার্থক্য পোষণ করবে এবং একে অপরের সাথে যুদ্ধ করবে।”

আজ বুঝি আমরা সেই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি – যখন সবাই সবার মতবাদ ব্যাখ্যা করতে বা নিজ মতামতকে যথাযথ প্রমাণ করতে, নিজ মনগড়া উপায়ে কুর’আনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

কুর’আনের কাছে যাবার, কুর’আনের ভাষা ও বক্তব্য বুঝবার, কুর’আনের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা গ্রহণ করবার এবং কুর’আনের কাছ থেকে উপকৃত হবার সঠিক পন্থাসমূহ কি কি – সে সম্বন্ধে অমূল্য তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ এই বইখানি পড়া থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান, বাংলাভাষী দ্বীনী ভাই-বোনদের সাথে ভাগাভাগি করার অদম্য ইচ্ছা থেকেই মূলত এই কাজে হাত দেয়া।

(চলবে ….ইনশা’আল্লাহ্!)

সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনবেন কোন প্রকাশনীর (Review)

247

এই আর্টিকেলটি একজন guest writer আমাদের কাছে সাবমিট করেছেন। আপনি আপনার লেখা আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে  সাবমিট করতে পারেন, এই লিংকক্লিক করে।

আমাদের দেশে ইসলামী ইলম চর্চার ইতিহাস অনেক পুরোনো । কুরআন ও হাদীসের বঙ্গানুবাদও হয়েছে প্রায় দু’শো বছর । আমাদের দেশে অনেক গুলো প্রকাশনী সিয়াহ সিত্তাহ সহ আরো অনেক হাদীস সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করেছে । কিন্তু সব প্রকাশনীর প্রকাশনার মান এক রকম নয় । তাই আপনারা সব থেকে সেরা হাদীস গ্রন্থ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কোন প্রকাশনী থেকে কিনবেন তার একটা পরামর্শ আপনাদের দিতে চাই ।

আমি সহীহুল বুখারীর খন্ড গুলি মোট তিনটি প্রকাশনী থেকে সংগ্রহ করেছি । এগুলো হচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , আধুনিক প্রকাশনী ও তাওহীদ পাবলিকেশন্স ।এ তিনটির প্রকাশনার ভেতরে আমার তুলনামূলক তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর প্রকাশনা বেশি ভাল লেগেছে । তাই আমি আপনাদের ওই প্রকাশনীর সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করবো । তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর প্রকাশনার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি এর ভূমিকা থেকে কিছু অংশ আমি এখানে তুলে ধরছিঃ

“আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় হাদীস অনুবাদের কাজ যদিও বহু পূর্বেই শুরু হয়েছে তবুও বাংলা ভাষায় হাদীস চর্চায় আমরা পিছিয়ে । ফলে এখনও আমরা সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে হাদীসের ব্যাপারে অশিক্ষিত অনভিজ্ঞ নামধারী কতিপয় আলিমদের মনগড়া ফাতাওয়ার উপর আমল করতে গিয়ে আমাদের আমলের ক্ষতি সাধন করছি । আর সাথে সাথে সহীহ হাদীস থেকে দূরে সরে গিয়ে আমরা তাকলীদের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি ।

আমাদের দেশে যারা এ সকল সহীহ হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করছেন তাদের অনেকেই আবার হাদীসের অনুবাদে সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অনুবাদে গড়মিল ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন ।নমুনা স্বরুপ মূল বুখারীতে ইমাম বুখারী কিতাবুস সাওমের পরে কিতাবুত তারাবীহ নামক একটি পর্ব রচনা করেছেন । অথচ ভারতীয় মূদ্রণের মধ্যে …………… (?) কিতাবুত তারাবীহ কথাটি মুছে দিয়ে সেখানে কিয়ামুল লাইল বসানো হয়েছে । অবশ্য প্রকাশক পৃষ্ঠার একপাশে কিতাবুত তারাবীহ লিখে রেখেছেন । ….. (আরবী) ।     সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে , এ অধ্যায় দ্বারা সলাতুত তারাবীহ উদ্দেশ্য । আর মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য হতে প্রকাশিত সকল বুখারীতে কিতাবুত তারাবীহ বহাল তবিয়তে আছে , যা ছিল ইমাম বুখারীর সংকলিত মূল বুখারীতে ।

আর একটি প্রকাশনী জানি না ইচ্ছাকৃত ভাবে না অনিচ্ছাকৃত ভাবে এই কিতাবুত তারাবীহ নামটি ছেড়ে দিয়ে তৎসংশ্লিষ্ট হাদীস গুলোকে কিতাবুস সাওমে ঢুকিয়ে দিয়েছেন । অনেক স্থানে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল অনুবাদ করেছেন । অনেক স্থানে অধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ফেলেছেন । কোথাও বা মূল হাদীসকে অনুচ্ছেদে ঢুকিয়ে দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন যে , এটা হাদীসের মূল সংকলকের ব্যক্তিগত কথা বা মত । কোথাও বা সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মাসআলা সম্বলিত লম্বা লম্বা টিকা লিখে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন । এতে করে সাধারণরা পড়ে গিয়েছেন বিভ্রান্তির মধ্যে । কারণ টিকা গুলো এমনভাবে লেখা হয়েছে যে , সাধারণ পাঠক মনে করবেন টিকাতে যা লেখা হয়েছে সেটাই ঠিক ; আসল তথ্য উদঘাটন করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন । আরেক একজন শাইখুল হাদীসের বুখারীর অনুবাদের কথাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না । তিনি বুখারীর অনুবাদ করেছেন না প্রতিবাদ করেছেন তা আমাদের বুঝে আসেনা । কারণ তিনি অনুবাদের চেয়ে প্রতিবাদমূলক টিকা লিখাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন , যা মূল কিতাবের সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন । যে কোন হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ করার অধিকার সবার জন্য উন্মুক্ত । কিন্তু সহীহ হাদীসের বিপরীতে অনুবাদে , ব্যাখ্যায় হাদীস বিরোধী কথা বলা জঘন্য অপরাধ ।

এই প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাদীস নম্বর ও অন্যান্য বহুবিধ বৈশিষ্ট্যসহ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হল । শুধু তাই নয় , বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই প্রকাশনার মধ্যে যা এ পর্যন্ত প্রকাশিত সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদে পাওয়া যাবে না । এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো :

. আল-মু’জামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল হাদীস হচ্ছে একটি বিষ্ময়কর হাদীস – অভিধান গ্রন্থ । গ্রন্থটিতে আরবি বর্ণমালার ধারা অনুযায়ী কুতুবুত ‍তিস’আহ ( বুখারী , মুসলিম , তিরমিযী , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনু মাজাহ , মুসনাদ আহমাদ , মুওয়াত্তা ইমাম মালিক , দারেমী ) নয়টি হাদীস গ্রন্থের শব্দ আনা হয়েছে । যে কোন শব্দের পাশে সেটি কোন কোন হাদীস গ্রন্থে এবং কোন পর্বে বা কোন অধ্যায়ে আছে তা উল্লেখ রয়েছে ।

আমাদের দেশে এ গ্রন্থটি অতটা পরিচিতি লাভ না করলেও বিজ্ঞ আলিমগণ এটির সাথে খুবই পরিচিত । বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের ছাত্র শিক্ষক সবার নিকট বেশ সমাদৃত । অত্র গ্রন্থের হাদীস গুলো আল মু’জামুল মুফাহরাসের ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে । যার ফলে অন্যান্য প্রকাশনার হাদীসের নম্বরের সাথে এর নম্বরের মিল পাওয়া যাবে না । আর এর সর্বমোট হাদীস সংখ্যা হবে ৭৫৬৩ টি । আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৭০৪২ টি । আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৬৯৪০ টি ।

. যে সব হাদীস একাধিকবার উল্লেখ হয়েছে অথবা হাদীসের অংশ বিশেষের সংগে মিল রয়েছে সেগুলোর প্রতিটি হাদীসের শেষে পূর্বোল্লিখিত ও পরোল্লিখিত হাদীসের নম্বর যোগ করা হয়েছে । যার ফলে একটি হাদীস বুখারীর কত জায়গায় উল্লেখ আছে বা সে বিষয়ের হাদীস কত জায়গায় রয়েছে তা সহজেই জানা যাবে । আর একই বিষয়ের উপর যাঁরা হাদীস অনুসন্ধান করবেন তাঁরা খুব সহজেই বিষয়ভিত্তিক হাদীস গুলো বের করতে পারবেন । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে :  ( ১০০২ , ১০০৩ , ১৩০০ , ২৮০১ , ২৮১৪ , ৩৯৬৪ , ৩১৭০ , ৪০৮৮ , ৪০৮৯ , ৪০৯০ , ৪০৯১ , ৪০৯২ ,৪০৯৪ , ৪০৯৫ , ৪০৯৬ , ৬৩৯৪ , ৭৩৪১ ) বন্ধনীর হাদীস নম্বর গুলোর মধ্যে ১০০১ নং হাদীসে উল্লিখিত বিষয়ে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ আলোচনা পাওয়া যাবে ।

৩. বুখারীর কোন হাদীসের সঙ্গে সহীহ মুসলিমের কোন হাদীসের মিল থাকলে মুসলিমের পর্ব অধ্যায় ও হাদীস নম্বর প্রতিটি হাদীসের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( মুসলিম ৫/৫৪ হা/৬৭৭ ) অর্থাৎ পর্ব নং ৫ , অধ্যায় নং ৫৪ , হাদীস নং ৬৭৭   সহীহ মুসলিমের হাদীসের যে নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে তা মু’জামুল মুফাহরাসের নম্বর তথা ফুয়াদ আব্দুল বাকী নির্ণিত নম্বরের সঙ্গে মিলবে ।

৪. বুখারীর কোন হাদীস যদি মুসনাদ আহমাদের সঙ্গে মিলে তাহলে মুসনাদ আহমাদের হাদীস নম্বর সেই হাদীসের শেষে যোগ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( আহমাদ ১৩৬০২ ) এটির নম্বর এহইয়াউত তুরাস আল-ইসলামীর নম্বরের সঙ্গে মিলবে ।

৫. আমাদের দেশে মুদ্রিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আধুনিক প্রকাশনীর হাদীসের ক্রমিক নম্বরে অমিল রয়েছে । তাই প্রতিটি হাদীসের শেষে বন্ধনীর মাধ্যমে সে দুটি প্রকাশনার হাদীস নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( আ.প্র.৯৪২ ই.ফা.৯৪৭ ) অর্থাৎ আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস নং ৯৪২ , আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস নং ৯৪৭ ।

. প্রতিটি অধ্যায়ের ( অনুচ্ছেদ ) ক্রমিক নং এর সঙ্গে কিতারে ( পর্ব ) নম্বরও যুক্ত থাকবে যার ফলে সহজেই বোঝা যাবে এটি কত নম্বর কিতাবের কত নম্বর অধ্যায় । যেমন ১০০১ নং হাদীসের পূর্বে একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে যার নম্বর ১৪/৭ অধ্যায় : অর্থাৎ ১৪ নং পর্বের ৭ নং অধ্যায় ।

৭. যারা সহীহ বুখারীর অনুবাদ করতে গিয়ে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে যঈফ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য বা মাযহাবী অন্ধ তাকলীদের কারণে লম্বা লম্বা টিকা লিখেছেন তাদের সে টিকার দলীল ভিত্তিক জবাব দেয়া হয়েছে ।

. আরবী নামের বিকৃত বাংলা উচ্চারণ রোধকল্পে প্রায় প্রতিটি আরবী শব্দের বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের চেষ্টা করা হয়েছে । যেমন : আয়েশা এর পরিবর্তে ‘আয়িশাহ্ , জুম্মা এর পরিবর্তে জুমু‘আহ্ , নবী এর পরিবর্তে নাবী , রাসূল এর পরিবর্তে রসূল , ম্ক্কা এর পরিবর্তে মাক্কাহ , ইবনে এর পরিবর্তে ইবনু , উম্মে সালমা এর পরিবর্তে উম্মু সালামাহ্ , নামায এর পরিবর্তে সলাত ইত্যাদি ইত্যাদি প্রচলিত বানানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে ।

. সাধারণের পাশাপাশি আলিমগণও যেন এর থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্য অধ্যায় ভিত্তিক বাংলা সূচি নির্দেশিকার পাশাপাশি আরবী সূচি উল্লেখ করা হয়েছে ।

১০. বুখারীর কত জায়গায় কুরআনের আয়াত এসেছে এমনকি আয়াতের একটি শব্দ আসলেও সেটির সূরার নাম , আয়াত নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ।

১১. ইনশাআল্লাহ সমৃদ্ধ অধ্যায় ভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা সহ প্রতিটি খন্ডে থাকবে সংক্ষিপ্ত পর্বভিত্তিক বিশেষ সূচি নির্দেশিকা । এতে কোন পর্বে কতটি অধ্যায় ও কতটি হাদীস রয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে জানা যাবে ।

১২. হাদীসে কুদসী চিহ্নিত করে হাদীসের নম্বর উল্লেখ ।

১৩. মুতাওয়াতির ১৪. মারফু’ ১৫. মাওকুফ ও ১৬. মাকতু হাদীস নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে । ফলে সে হাদীস গুলোকে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে ।

১৭. প্রতিটি খন্ডের শেষে পরবর্তি খন্ডের কিতাব/পর্বভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা উল্লেখ করা হয়েছে ।”

শুধু সহীহ বুখারী নয় যে কোন হাদীস গ্রন্থই তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে কেনার জন্য আমার সু-পরামর্শ থাকলো । কারণ বুখারী মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীস গন্থে কিছু কিছু জাল ও যঈফ হাদীসও রয়েছে । যেগুলোর উপর আমল করা নিষিদ্ধ । একমাত্র তাওহীদ পাবলিকেশন্সই বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর তাহক্বীক্ব করা হাদীস গন্থ এর অনুবাদ প্রকাশ করেছে । যার উদাহরণ আপনারা যারা তাহক্বীক্ব রিয়াদুস সালেহীন ডাউনলোড করেছেন QuranerAlo.com থেকে তারা বুঝতে পারবেন ।আশা করি কুরআনের আলো .কম তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ এবং সহীহ আক্বীদা এবং আমলের গ্রন্থও ভবিষ্যতে উপহার দিবে ।

আল্লাহ আমাদের যঈফ ও জাল হাদীস থেকে বাঁচার এবং সহীহ হাদীসের উপর সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন – আমীন ।

তাওহীদ প্রেস এন্ড  পাবলিকেশন্স
৯০, হাজী আবদুল্লাহ সরকার লেন, বংশাল, ঢাকা- ১১০০
ফোনঃ ০২৭১১২৭৬২, ০১১৯০৩৬৮২৭২, ০১৭১১৬৪৬৩৯৬, ০১৬১১৬৪৬৩৯৬

N.B: ইনশাআল্লাহ্‌ আমাদের ওয়েবসাইট থেকেও আপনি খুব শিগ্রই তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত “বুখারি শরীফ’ ডাউনলোড করতে পারবেন।

বাংলা ভাষাতে সহিহ বুখারী অনুবাদ [সকল অংশ] – ফ্রি ডাউনলোড

159

তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর সাহিহুল বুখারী (নতুন)

তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর সাহিহুল বুখারীর উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন 

QuranerAlo  সার্ভার থেকে ডাউনলোড করুন

১ম খন্ড | ২য় খন্ড | ৩য় খন্ড | ৪র্থ খন্ড | ৫ম খন্ড | ৬ষ্ঠ খন্ড 

ডাউনলোড (১-৬ খন্ড একত্রে) (136 MB)

 

বুখারি শরীফের বাংলা অনুবাদ – (১ থেকে ১০ খণ্ড)

Interactive link means CONTENTS pages are linked with their appropriate pages, and vise-versa. So, when the user clicks a topic from the CONTENTS page, it will automatically direct to the relevant page. Similarly, when the user wants to go back to the CONTENTS page, he/she can click the TOPIC HEADING, which will automatically redirect to the CONTENTS page.

Author: Abu Abdullah Muhammad Ibn Ismail al-Bukhari Al-Jufi (Rahmatullah)

Agargao, Sher-E-Bangla Nagar, Dhaka 1207
You will need Adobe Readerto read the hadith book. You can download this free software from here http://get.adobe.com/reader/

Download from QuranerAlo Server:

Part 1 | Part 2 Part 3 | Part 4 Part 5 Part 6 Part 7 Part 8 Part 9 | Part 10 

সব খণ্ড একসাথে  ডাউনলোড করুন – Bukhari Sharif.zip [135 MB]

Download from Mediafire:

Part 1 | Part 2 | Part 3 | Part 4 | Part 5 | Part 6 | Part 7 | Part 8 | Part 9 | Part 10

 

Bangla Islam, Bangla/Bengali Islamic Website, বাংলা ইসলাম, ইসলামিক ওয়েবসাইট, ইসলামী বই, কুরআন বাংলা, হাদিস

0

bangla islam, bangla/bengali islamic website, বাংলা ইসলাম, বাংলা ইসলামিক ওয়েবসাইট, ইসলামী বই, কুরআন বাংলা, হাদিস, FREE Bangla / Bengali Islamic/Islami Books-Boi-Kitab, Quran/Qur’an/Qoran/ Kuran/Koran Qerats, Dars/Waj/Speeches, Tafsir/Tafseer, Hadith/Hadees/Hadis, bangla, hamd, naat, nasheed, kitab, banglakitab, bangla, hamd, naat, nasheed, kitab, banglakitab, maariful, tafsir, mariful, Islam, Bangla Books, Bangla Qerat, Bangla Tafseer, Bangla Speeches, FREE Bangla Book, Bangla MP3 Qerat, Bangla Tafsir, Bangla Speech, FREE MP3 Quran, MP3 Nazrul Hamd Naat, MP3 Speech, Quran Translation Explanation, Book, banglakitab, bangla kitab, Quraneralo.com, motiur rahman madani, bangla audio lecture, ইসলামিক লেকচার, বাংলা ওয়াজ, বাংলা বায়ান, ইসলামিক প্রশ্ন ও উত্তর

আসসালামু আলাইকুম

কুরআনের আলো ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম।

হোমপেজ দেখার জন্য এইখানে ক্লিক করুন। 

সাবস্ক্রাইব করুন

2,018,267FansLike
1,685FollowersFollow
1,150FollowersFollow
6,143FollowersFollow
4,600SubscribersSubscribe